৪৩. ভরত, লক্ষ্মণ ও শত্রুঘ্নের জন্ম-বিবরণ

এক অংশে জন্ম লইলেন নারায়ণ।
শুনিয়া দুঃখিত বড় কৈকেয়ীর মন।।
আজ হৈতে কৌশল্যা যে বাড়িল সোহাগে।
মোরে পুত্র কেন বিধি নাহি দিল আগে।।
জ্যেষ্ঠপুত্র রাজা হয় সর্ব্বশাস্ত্রে বলে।
মোরে পুত্র বিধি আগে কেন নাহি দিলে।।
বলিতে বলিতে হৈল গর্ভের বেদন।
কৈকেয়ী বলেন কুব্জী গা করে কেমন।।
ছিলেন মায়ের গর্ভে করি পদ্মসন।
শুভক্ষণে জন্মিলেন প্রভু নারায়ণ।।
কৌশল্যা রাণীর পুত্র যেরূপ লাবণ্য।
সেই নাক সেই মুখ কিছু নহে ভিন্ন।।
কুব্জী গিয়া জানাইয়া ভূপতির ঘরে।
হইল তোমার পুত্র কৈকেয়ী-উদরে।।
শুনি দশরথ রাজা আপনা পাসরে।
পুত্রমুখ দেখে গিয়া কৈকেয়ীর ঘরে।।
পুত্রমুখ দেখে রাজা অতি হৃষ্টমতি।
ধন বিতরণেতে দিলেন অনুমতি।।
সুমিত্রার হইলেক গর্ভের বেদন।
যমজ উভয় পুত্র প্রসবে তখন।।
গৌরবর্ণ হৈল দোঁহে বিষ্ণু-অবতার।
সুমিত্রা প্রসব হৈল যমজ কুমার।।
যখন যমজ পুত্র প্রসবে সুন্দরী।
জয় জয় হুলাহুলি দিল সব নারী।।
দাসী গিয়া দশরথে কহিল গৌরবে।
আর দুই পুত্র রাজা সুমিত্রা প্রসবে।।
শুনিয়া হইল তাঁর আনন্দ অপার।
ব্রাহ্মণেরে লুটাইল সকল ভাণ্ডার।।
চলিলেন দশরথ পরম কৌতুক।
তিন ঘরে দেখিলেন চারি পুত্রমুখ।।
তিন দণ্ড বেলা হৈল গণকের মেলা।
খড়িতে গণিয়া দেখে শুভক্ষণ বেলা।।
সূর্য্যবংশে আছে বহু রাজার সুকীর্ত্তি।
সবা হৈতে এই পুত্র রাজচক্রবর্ত্তী।।
ইহার কোষ্ঠীর কিবা করিব গণন।
এমন লক্ষণে বুঝি প্রভু নারায়ণ।।
যেই জন শুনে প্রভু রামের জনম।
ধন পুত্র লক্ষ্মী হয়, ভয় পায় যম।।
অযোধ্যায় হইল আনন্দ কোলাহল।
ক্ষত্র বৈশ্য শূদ্র সবে করিল মঙ্গল।।
গণকে তুষিল রাজা দিয়া নানা ধন।
আদিকাণ্ড গান কৃত্তিবাস বিচক্ষণ।।