৩৮. ঋষ্যশৃঙ্গের অদর্শনে বিভাণ্ডক মুনির খেদ

সুমন্ত্র বলেন শুন রাজা দশরথ।
লোমপাদ নিকটে বুড়ীর বাক্য যত।।
বুড়ী বলে লোমপাদ শুনহ বচন।
ভুলাইয়া আনিয়াছি মুনির নন্দন।।
যদি শাপ দেন কোপে বিভাণ্ডক ঋষি।
রাজ্যসহ আপনি হইবা ভস্মরাশি।।
তাঁর ঠাঁই যদি তুমি পাবে পরিত্রাণ।
পথেতে করিয়া রাখ বিহিত বিধান।।
স্থানে স্থানে মহিষ গো রাখহ সত্বর।
গীত বাদ্য নৃতোৎসব হউক বিস্তর।।
গীত বাদ্য দেখিয়া তখনি তপোধন।
যত ক্রোধ জন্মে থাকে হবে পাসরণ।।
বুড়ীর বচন রাজা না করিল আন।
পথে পথে করে গ্রাম বড় বড় স্থান।।
শ্রীঋষ্যশৃঙ্গের গ্রাম বলি তার নাম।
সর্ব্বশস্যযুতী পুরী দিব্য দিব্য গ্রাম।।
ঋষ্যশৃঙ্গ রহিলেন লোমপাদ-ঘরে।
বিভাণ্ডক তপ করি গেলেন কুটীরে।।
আর দিন দূর হৈতে শুনে বেদধ্বনি।
সে দিন না শুনে শব্দ ব্যস্ত হৈল মুনি।।
আকুল হইয়া মুনি দাণ্ডাইল তথা।
কান্দিয়া বলেন বাছা ঋষ্যশৃঙ্গ কোথা।।
তপস্যাতে শ্রান্ত হয়ে আইলাম ঘরে।
হেথা আসি কহ কথা, দুঃখ যাক্ দূরে।।
বলিতে বলিতে গেল কুটীরের দ্বারে।
পুত্র পুত্র বলি ডাকে পুত্র নাই ঘরে।।
কমণ্ডলু আছাড়িয়া ফেলে ভূমিতলে।
অজ্ঞান হইয়া মুনি পড়ে বৃক্ষমূলে।।
ক্ষণেক রহিয়া জ্ঞান পাইলেক মুনি।
কোথা ঋষ্যশৃঙ্গ বলি ডাকয়ে অমনি।।
অপত্যের স্নেহ সম নাহিক সংসারে।
যাহাকে দেখেন মুনি জিজ্ঞাসেন তারে।।
মুনি বলে আছ বনে যত তরুলতা।
দেখেছ তোমরা মম পুত্র গেল কোথা।।
মৃগ পশু পক্ষীরে লাগিল সুধাইতে।
তোমরা দেখেছ ঋষ্যশৃঙ্গেরে যাইতে।।
কান্দিয়া কান্দিয়া যান বিভাণ্ডক মুনি।
কতদূরে গিয়া পান গ্রাম একখানি।।
সকল লোকেরে মুনি শোকেতে সুধান।
কাহার এ গ্রামখানি কহ বিদ্যমান।।
যোড়হাত করি প্রজাগণ কহে বাণী।
ঋষ্যশৃঙ্গ মুনিবর ইথে রাজা তিনি।।
লোমপাদ তাঁরে কন্যা দিয়াছে কৌতুকে।
গ্রাম পশু অশ্ব গজ দিয়াছে যৌতুকে।।
এই কথা কহিলেক যত প্রজাগণ।
ক্রোধমন গেল মুনি অতি হৃষ্টমন।।
সংসার করিতে পুত্র করিয়াছে সাধ।
পুত্রের কুশল শুনি খণ্ডিল বিষাদ।।
মুনি ভাবে অপুত্রক অজের নন্দন।
ঋষ্যশৃঙ্গ করিবেন যজ্ঞ আরম্ভণ।।
নিমন্ত্রণ হইবেক মম সে যজ্ঞেতে।
সেইকালে হবে দেখা পুত্রের সহিতে।।
এতেক ভাবিয়া মুনি গেল নিজ বাস।
আদিকাণ্ড রচিল পণ্ডিত কৃত্তিবাস।।