৩৫. দশরথ পুত্রের জন্য ঋষ্যশৃঙ্গকে আনিয়া যজ্ঞকরণের পরামর্শ ও উক্ত মুনির উৎপত্তি কাহিনী

রাজ্য করে দশরথ অনেক বৎসর।
একছত্র মহারাজ যেন পুরন্দর।।
পাত্র মিত্র ভাই বন্ধু সবাকারে আনি।
বশিষ্ঠাদি আনাইল যত মুনি জ্ঞানী।।
সভা করি বসে রাজা অমাত্য-সহিতে।
অতি খেদ করি রাজা লাগিল কহিতে।।
ইহকালে না হইল আমার সন্তুতি।
পরকালে কিরূপে পাইব অব্যাহতি।।
সন্ততি থাকিলে করে শ্রাদ্ধাদি তর্পণ।
আমার মরণে বংশে নাহি একজন।।
নবম হাজার বর্ষ বয়স হইল।
এতকাল আমার সন্তান না জন্মিল।।
অপুত্রক আমি পাই মনে বড় দুঃখ।
প্রভাতে না দেখে লোক অপুত্রের মুখ।।
তর্পণের কালে আমি পিতৃলোক আনি।
অঞ্জলি করিয়া দিই তর্পনের পানি।।
শীত জল উষ্ণ হয় নাকের নিশ্বাসে।
আমা হৈতে গেল বংশ জল দিবে কে সে।।
বর দিয়াছেন শ্রীঅন্ধক মহামুনি।
যজ্ঞ কর তুমি ঋষ্যশৃঙ্গ মুনি আনি।।
ঋষ্যশৃঙ্গ মুনিবর কোন্ দেশে বৈসে।
কার্য্যসিদ্ধি হয় যদি সেই মুনি আসে।।
কহিতে লাগিলা যে বশিষ্ঠ মহামুনি।
শুন ঋষ্যশৃঙ্গের যে উৎপত্তি কাহিনী।।
বিভাণ্ডক-মুনি-ভয়ে সর্ব্বলোক কাঁপে।
ত্রিভুবন ভস্ম হয় যদি মুনি শাপে।।
তাঁহার তপস্যা দেখি ইন্দ্র ভাবে মনে।
পাঠাইয়া দিল ইন্দ্র দেবতা পবনে।।
মুনির নিকটে বায়ু লুকাইয়া থাকে।
বৃক্ষফল খায় মুনি পবন তা দেখে।।
ফলেতে অমৃত মাখি রাখিল পবন।
ফলযোগে সুধা মুনি করিল ভক্ষণ।।
ফলের সহিত সুধা খেয়ে মহামুনি।
বলবান অতিশয় হইল তখনি।।
শুদ্ধ দেহ খেয়ে সুধা মহাবলবান।
তপস্যা করেন বনে চারিদিকে চান।।
তপস্যা করেন মুনি নর্ম্মদার জলে।
উর্ব্বশী চলিয়া যায় গগন-মণ্ডলে।।
অঙ্গের বসন তার বাতাসেতে উড়ে।
দৈবযোগে তাঁর দৃষ্টি তারে গিয়া পড়ে।।
তাহাকে দেখিয়া মুনি কামে অচেতন।
মুনির হইল রেতঃস্খলন তখন।।
আস্তে ব্যস্তে মুনি তাহা ধরে বাম হাতে।
জলে না ফেলিয়া রেতঃ ফেলায় কূলেতে।।
পুনর্ব্বার মহামুনি করি আচমন।
তপস্যা করেন বিভাণ্ডক তপোধন।।
বিধির লিখন কভু না হয় খণ্ডন।
তৃষ্ণায় হরিণী জল খায় সেইক্ষণ।।
জল খেয়ে হরিণী কূলেতে ঘাস চাটে।
ঘাসের সহিত রেতঃ সান্ধাইল পেটে।।
দৈবযোগে হরিণী আছিল ঋতুমতী।
মুনিবীর্য্য খাইয়া হইল গর্ভবতী।।
দিনে দিনে গর্ভ তার উদরে বাড়িল।
ছয়মাসে পশুবৎ প্রসব হইল।।
মনুষ্য আকারে হৈল হরিণী-বদন।
দেখিয়া হরিণী পুত্র ভাবিল তখন।।
মনুষ্যের ডরে আমি ভ্রমি বনে বনে।
আমার গর্ভেতে হৈল শত্রুর জনম।।
পুত্র ফেলাইয়া সে হরিণী গেল বন।
অঙ্গুলি চুষিয়া শিশু যুড়িল ক্রন্দন।।
তপস্যা করিয়া বিভাণ্ডকের গমন।
কাননে পড়িয়া শিশু করিছে রোদন।।
বালক দেখিয়া মুনি ভাবে মনে মন।
মনুষ্য আকার দেখি হরিণী-বদন।।
ধ্যানে জানিলেন বিভাণ্ডক তপোধন।
হরিণীর গর্ভে হৈল আমার নন্দন।।
পুত্র কোলে করিয়া গেলেন নিজ ঘরে।
পুষ্পমধু দিয়া মুনি পোষেন তাহারে।।
নবীন কুশের মূলে করায় শয়ন।
দিনে দিনে বাড়ে বিভাণ্ডকের নন্দন।।
পরম সুন্দর সে বিভাণ্ডকের বেটা।
শাস্ত্রবেত্তা হয় সে কপালে শৃঙ্গ ফোঁটা।।
কিছুদিন পরে শৃঙ্গ উঠিল কপালে।
ঋষ্যশৃঙ্গ বলি নাম থুইল সকলে।।
যারে বর শাপ দেন, কভু নহে আন।
তাঁর আশীর্ব্বাদে রাজা হবে পুত্রবান।।
কৃত্তিবাস কৃত কাব্য অমৃত সমান।
রামকথা বিনা যার মুখে নাহি আন।।