২৬. দশরথের সহিত কৈকেয়ীর বিবাহ

গিরিরাজ নগরেতে কেকয়ের ঘর।
সুখে রাজ্য করে রাজা অনেক বৎসর।।
কৈকেয়ী নামেতে কন্যা পরমা সুন্দরী।
তাঁর রূপে আলো করে সেই রাজপুরী।।
স্বয়ম্বর হবে কন্যা হেন আছে মন।
পৃথিবীর রাজারে করিল নিমন্ত্রণ।।
দূত যায় দশরথে আনিতে সত্বর।
শীঘ্রগতি গেল দূত অযোধ্যা-নগর।।
ব্রাহ্মণে দেখিয়া রাজা প্রণাম করিল।
আশিস্ করিয়া দ্বিজ কহিতে লাগিল।।
গিরিরাজ নগরেতে আমার বসতি।
রাজকন্যা স্বয়ম্বরা হবে নরপতি।।
রাজগণ আসিয়াছে তথায় প্রচুর।
চল শীঘ্র রাজা তুমি গিরিরাজ-পুর।।
স্বয়ম্বর-স্থান যে করিল সুশোভন।
সংবাদ পাইয়া রাজা চলিল তখন।।
রথযোগে দশরথ গেল সভাস্থানে।
সভা করে রাজগণ বসেছে সেখানে।।
স্বয়ম্বর-স্থানে এল কৈকেয়ী সুন্দরী।
তাঁর রূপে আলো করে গিরিরাজ-পুরী।।
কৈকেয়ীরে দেখি সবে করে অনুমান।
আইল কি বিদ্যাধরী স্বয়ম্বর-স্থান।।
কিম্বা রম্ভা ঊর্ব্বশী আইল তিলোত্তমা।
ত্রিভুবনে নিরুপমা কি দিব উপমা।।
পূর্ব্বে রাজকন্যা যেন ছিল ইন্দুমতী।
সেই যেন বরিলেক অজ মহামতি।।
তাঁহার রূপের কথা গেল দেশে দেশে।
বিবাহার্থ রাজগণ এলেন হরিষে।।
ইন্দুমতী বরিলেক অজ মহারাজে।
সব রাজা গেল দেশে পড়িয়া সে লাজে।।
পরম সুন্দর রাজা রাজ-চক্রবর্ত্তী।
দশরথ তুল্য নাহি ভূমিতে ভূপতি।।
দশরথ থাকিতে বরিবে কোন্ জনে।
এই যুক্তি অধোমুখে করে রাজগণে।।
প্রত্যেক দেখিল কন্যা সব রাজগণে।
সবারে ভুলিল দশরথ দরশনে।।
ধন পাইয়া তুষ্ট যেন দরিদ্রের মতি।
গলে মাল্য দিয়া বলে তুমি মম পতি।।
দশরথ ভূপতির গলে মাল্য দোলে।
লজ্জায় ভূপতিগণ মাথা নাহি তোলে।।
রাজগণ বলে কন্যা বড় বিচক্ষণা।
দশরথ থাকিতে বরিবে কোন্ জনা।।
রাজগণ পরস্পর করিয়া সম্মান।
বিদায় হইয়া গেল নিজ নিজ স্থান।।
কন্যাদান করে রাজা পরম কৌতুকে।
মন্থরা নামেতে চেড়ী দিলেন যৌতুকে।।
পৃষ্ঠে ভার কুঁজের, নড়িতে নারে বুড়ী।
ক্ষতি করে তার, যার কাছে থাকে চেড়ী।।
মাণিক মুকুতা রাজা পাইল বিস্তর।
অশ্বযোগে নিজ দেশে চলিল সত্বর।।
কৈকেয়ী লইয়া রাজা আসে নিজ দেশে।
আদিকাণ্ড রচিল পণ্ডিত কৃত্তিবাসে।।