২৪. দশরথের রাজা হওন বিবরণ

এক বর্ষ বয়ষ্ক যখন দশরথ।
পুত্রে শোয়াইয়া দোঁহে সাধে মনোরথ।।
পুষ্পবনে ক্রীড়া করে হাস্য পরিহাসে।
নারদ চলিয়া যান উপর আকাশে।।
পারিজাত মালা ছিল তাঁহার বীণায়।
বাতাসে উড়িয়া পড়ে ইন্দুতী গায়।।
পারিজাত যখন হইল পরশন।
ইন্দুমতী ছাড়িলেন তখনি জীবন।।
প্রাণ ছাড়ি ইন্দুমতী গেল স্বর্গপুরে।
কাঁদে অজ, লোচন ভরিল তাঁর নীরে।।
কোথা গেলে প্রেমময়ী ত্যজিয়ে আমায়।
কেমনে রহিব আমি একাকী হেথায়।।
তুমি নয়নের মণি মম কণ্ঠহার।
ব্যাকুলিত প্রিয়ে আমি বিহনে তোমার।।
কত বা কহিব সেই রাজার বিলাপ।
না পারে সহিতে ইন্দুমতীর সন্তাপ।।
সেই পারিজাত মারে আপনার গায়।
দুইজন মুক্ত হয়ে স্বর্গপুরে যায়।।
নর্ত্তক নর্ত্তকী ছিল দোঁহে স্বর্গপুরে।
শাপভ্রষ্ট জন্মিয়াছিলেন ভূমি পরে।।
দুই জন যখন গেলেন স্বর্গপথ।
এক বর্ষ বয়স্ক তখন দশরথ।।
অল্পকালে পিতা মাতা মরিল দুজন।
দেখিয়া চিন্তিত যে বশিষ্ঠ তপোধন।।
সেই পুত্র লৈয়া গেল ঘরে আপনার।
পড়াইল নানা শাস্ত্র শাস্ত্র-অনুসার।।
হইলেন পঞ্চবর্ষ বয়স্ক যখন।
লইলেন আপনি পৈত্রিক সিংহাসন।।
ভৃগুরাম মুনি তাঁরে অস্ত্র দিল দান।
যত্ন করি শিখাইল শব্দভেদী বাণ।।
রাজ্য করে দশরথ যেন পুরন্দর।
পুত্রতুল্য পালে প্রজা মহাধনুর্দ্ধর।।
রাজার বয়স হৈল পনর বৎসর।
আদিকাণ্ড রচে কৃত্তিবাস কবিবর।।