২০. সৌদাস রাজার উপাখ্যান

গঙ্গা হেতু গেল ষাটি হাজার বৎসর।
পুনর্ব্বার গেল রাজা অযোধ্যা-নগর।।
রাজা হৈয়া করিলেন প্রজার পালন।
হইল সৌদাস নামে তাঁহার নন্দন।।
অযোধ্যাতে করিলেন রাত্ব সৌদাস।
ভগীরথ করিলেন গঙ্গাতীরে বাস।।
কিছুকাল ভগীরথ ভাগীরথী-তটে।
থাকি হইলেন মুক্ত সংসার সঙ্কটে।।
করিল রাজার শ্রাদ্ধ তর্পণ সৌদাস।
ব্রাহ্মণেরে দিল ধন যার যত আশ।।
মন দিয়া শুন রাজা সৌদাস-চরিত্র।
শুনিলে যে পাপক্ষয় শরীর পবিত্র।।
একদিন গেল রাজা মৃগয়া করিতে।
মৃগ চাহি ফিরে রাজা বনেতে বনেতে।।
আইল রাক্ষস এক সঙ্গে লয়ে জায়া।
সৌদাসের কাছে উত্তরিল সে আসিয়া।।
ছাড়িয়া রাক্ষসরূপ ব্যাঘ্ররূপ ধরে।
দুইজনে কেলি করে প্রভাসের তীরে।।
হেনকালে সৌদাস সে ব্যাঘ্রকে দেখিয়া।
শৃঙ্গারের কালে তারে মারিল বিন্ধিয়া।।
এইকালে রাক্ষসী রাজার প্রতি বলে।
বিনা দোষে স্বামী মার শৃঙ্গারের কালে।।
পরিণামে জানিবা হইবে যত পাপ।
মহাপাপ ভুঞ্জিবে, হইবে ব্রহ্মশাপ।।
এতেক বলিয়া সে রাক্ষসী গেল বন।
মনোদুঃখে গৃহে রাজা করিল গমন।।
পাত্র মিত্রগণে রাজা করিল আহ্বান।
বশিষ্ঠ মুনিরে আগে করিল সম্মান।।
মুনিরে কহিল রাজা সব বিবরণ।
এই পাপ কেমনে হইবে বিমোচন।।
পুরোহিত বশিষ্ঠের অনুজ্ঞা প্রমাণে।
অশ্বমেধ করিলেন শাস্ত্রের বিধানে।।
যজ্ঞ পূর্ণ দিল রাজা যজ্ঞের দক্ষিণা।
বিদায় হইয়া যবে গেল সর্ব্বজনা।।
হেনকালে সে রাক্ষসী ভাবে মনে মন।
মম বাক্য ব্যর্থ হবে জানিল কারণ।।
আপন রাক্ষসীরূপ দূরে তেয়াগিয়া।
বশিষ্ঠ মুনির রূপ ধরিল আসিয়া।।
সৌদাস রাজার কাছে কহিল বচন।
মোরে মাংস ভোজন করাহ যশোধন।।
রাজা বলে অশ্বমাংস করি আহরণ।
সেই মাংস খাইবারে গেল তব মন।।
করিলাম উপহাস শুনিয়া গুরুরে।
গুরু বলে ব্রহ্মদৈত্য হও অতঃপরে।।
যখন গঙ্গার জল পাবে দরশন।
তখন পাইবে মুক্তি ব্রাহ্মণ-নন্দন।।
সৌদাস বলেন, মিত্র চেতাইলা মোরে।
তেঁই সে গঙ্গার তত্ত্ব দুই জনে করে।।
গঙ্গাস্নান করি যান সে ভার্গব ঋষি।
মাথায় করিয়া গঙ্গাজলের কলসী।।
হেনকালে দোঁহে বলে আগুলিয়া তাঁরে।
এক বিন্দু গঙ্গাজল দেহ দোঁহাকারে।।
লাগিলেন বলিতে ভার্গব তপোধন।
অগ্রভাগ শিবের তা দিব হে কেমন।।
দোঁহে বলে মুনি তোর নাহি বিদ্যালেশ।
গঙ্গাজল নাহি হয় শেষ অবশেষ।।
জানিলেন তখন ভার্গব তপোধন।
মহাজন বটে ভগীরথের নন্দন।।
কুশাগ্র করিয়া গঙ্গা দিল তার গায়।
ব্রহ্মহত্যা আদি পাপ এড়িয়া পলায়।।
ছিলেন সৌদাস ব্রহ্মরাক্ষস হইয়া।
বৈকুণ্ঠে চলিয়া গেল গঙ্গাজল পাইয়া।।
ব্রহ্মদৈত্য আর ব্রহ্মরাক্ষস সত্বরে।
দুই জনে মুক্ত হৈয়া গেল নিজ ঘরে।।
গঙ্গার মহিমা এই কি বলিতে জানি।
আদিকাণ্ডে রচে কৃত্তিবাসী মহাগুণী।।