১৭. কাণ্ডার মুনির অস্থি গঙ্গায় পতনে বৈকুণ্ঠে গমন

যোড়হাতে ভগীরথ করেন স্তবন।
তুমি ব্রহ্মা তুমি বিষ্ণু তুমি ত্রিলোচন।।
তোমার মহিমা গুণ জানে কোন্ জন।
মনুষ্য-শরীরে তব কি জানি স্তবন।।
সগর রাজার ষাটি হাজার তনয়।
কপিলের শাপেতে হইল ভস্মময়।।
তোমার উদরেতে গঙ্গার অবতার।
আমার বংশের কিসে হইবে উদ্ধার।।
ব্রাহ্মণের কোপ নাহি থাকয়ে কখন।
কৃপাতে বলেন তারে জহ্নু তপোধন।।
মুখ হৈতে বাহির করিলে গঙ্গাজল।
উচ্ছিষ্ট বলিয়া তবে ঘুষিবে সকল।।
চিরিল দক্ষিণ জানু সেইক্ষণে মুনি।
জানু দিয়া বাহির হইল সুরধুনী।।
ছিলেন কিঞ্চিৎ কাল জহ্নুর উদরে।
জাহ্নরী বলিয়া নাম হইল সংসারে।।
শাপদুষ্ট যেইখানে গঙ্গামাতা শুনি।
সেইখানে হৈয়া যান উত্তর বাহিনী।।
কাণ্ডার নামেতে মুনি ছিল এক জন।
তার তুল্য পাপী নাহি এ তিন ভুবন।।
জন্মাবধি সেই মুনি বেশ্যা-সেবা করে।
তার বশীভূতা হৈয়া থাকে তারি ঘরে।।
কাষ্ঠ কাটিবারে গিয়াছিল সে কানন।
ব্যাঘ্রেতে ধরিয়া তার বধিল জীবন।।
যমদূত আসি তাকে করিয়া বন্ধন।
লইয়া চলিল তারে যমের ভবন।।
ব্যাঘ্রেতে সকল মাংস গেল ত খাইয়া।
বনের মধ্যেতে অস্থি রহিল পড়িয়া।।
কাকেতে লইয়া যায় গঙ্গা-মধ্য দিয়া।
হেনকালে সঞ্চান সে কাকেরে দেখিয়া।।
মহাবেগে যায় পক্ষী কাকে খেদাড়িয়া।
গঙ্গা দিয়া যায় কাক ভয়ে পলাইয়া।।
দুইজনে তারা তথা জড়াজড়ি করে।
দৈবযোগে সেই অস্থি পড়ে গঙ্গানীরে।।
যখন করিল অস্থি গঙ্গা পরশন।
চতুর্ভুজ হইয়া সে চলিল ব্রাহ্মণ।।
হেনকালে নারায়ণ বৈকুণ্ঠে থাকিয়া।
কাড়িয়া নিলেন যমদূতেরে মারিয়া।।
কান্দিতে কান্দিতে সব যমের কিঙ্কর।
জিজ্ঞাসা করিতে গেল যমের গোচর।।
বিষয় ছাড়িনু প্রভু আর নাহি কাজ।
আজি বড় যমরাজ পাইলাম লাজ।।
কাণ্ডার নামেতে পাপী ত্রিভুবনে জানে।
তাহারে বৈকুণ্ঠে হরি নিলেন কি গুণে।।
শুনিয়া দূতের কথা যমরাজ রোষে।
জিজ্ঞাসা করিতে গেল শ্রীহরির পাশে।।
কান্দিতে লাগিল যম ধরি প্রভু পায়।
বিষয় ছাড়িনু, বিষয়ের নাহি দায়।।
পাপীর উপরেতে আমার অধিকার।
আজি কেন হইল তাহাতে অবিচার।।
কাণ্ডার ব্রাহ্মণ পাপী ত্রিভুবনে জানে।
তাহারে বৈকুণ্ঠে আনিলেন কোন্ গুণে।।
শুনিয়া যমের কথা হরি হাসি কয়।
গঙ্গা যথা, তথা কভু পাপ নাহি রয়।।
গঙ্গার মহিমা কত কি বলিতে জানি।
মন দিয়া শুন তবে কহি দণ্ডপাণি।।
যতদূরে যাইবেক গঙ্গার বাতাস।
আমার দোহাই যদি যাও তার পাশ।।
পুড়ে মরে অস্থি লৈয়া ফেলে গঙ্গানীরে।
চতুর্ভুজ হৈয়া আসিবে স্বর্গপুরে।।
গঙ্গাতীরে থাকি গঙ্গাজল করে পান।
সে শরীর জান তুমি আমার সমান।।
নিষেধ করহ গিয়া যত দূতগণে।
আমার দোহাই যদি আন সেই জনে।।
শুনিয়া প্রভুর কথা শমনের ত্রাস।
আদিকাণ্ড রচিল পণ্ডিত কৃত্তিবাস।।