১১. কপিল মুনি কর্ত্তৃক সগরবংশ উদ্ধারের উপায় কথন

এক বর্ষ না হইল যজ্ঞ অবেশেষ।
তুরঙ্গ লইয়া পুত্র না আইল দেশ।।
শ্রীঅসমঞ্জের পুত্র নাম অংশুমান।
পুত্রেরে করিতে তত্ত্ব তাহারে পাঠান।।
রাজ-আজ্ঞা পাইয়া চড়িয়া নিজ রথে।
একে একে পৃথিবীকে লাগিল দেখিতে।।
যে পথে প্রবেশে হয় দেখে সেই স্থান।
সেই পথ দিয়া তবে পাতালে সান্ধান।।
আগেতে দেখিল পূর্ব্বদিকের সাগর।
দেখে নীলবর্ণ হস্তী পরম সুন্দর।।
ধরিয়াছে পৃথিবী সে দশন উপরে।
প্রণাম করিয়া তারে বলির সত্বরে।।
হস্তী বলে, এই পথে যাহ অংশুমান।
ঘোড়াচোর নিকটে হইবে সাবধান।।
পূর্ব্ব হৈতে চলিলেন উত্তর সাগর।
শ্বেতবর্ণ এক হস্তী দেখিল সুন্দর।।
অংশুমান তাহারে লাগিল সুধাইতে।
দেখিয়াছ সগর-সন্তান এই পথে।।
শুনিয়া তাহার কথা লাগিল সুধাইতে।
দেখিয়াছ সগর-সন্তান এই পথে।।
শুনিয়া তাহার কথা লাগিল কহিতে।
পাইবেক ঘোড়া তবে যাহ এই পথে।।
তথা যদি না পাইল ঘোড়ার দর্শন।
পশ্চিম সাগরে গিয়া দিল দরশন।।
রক্তবর্ণ এক হস্তী দেখিল সুন্দর।
মেদিনী ধরিয়া আছে দশন উপর।।
সে সব হস্তীর ভাই শুন কহি কথা।
ভূমি কম্পমান, যবে তারা নাড়ে মাথা।।
পূর্ব্ব ও দক্ষিণ দিক্ তার মধ্যখানে।
ঘোড়া বান্ধা দেখিল কপিল বিদ্যমানে।।
দণ্ডবৎ হৈয়া তাঁরে লাগিল কহিতে।
সগরের পুত্রগণে দেখেছ এ পথে।।
কহিতে লাগিলা সে কপিল মহাঋষি।
মম কোপানলে পড়ে হৈল ভস্মরাশি।।
শুনিয়া ত অংশুমান যুড়িল স্তবন।
সেই বংশ তপোধন আমার জনম।।
অসমঞ্জ-পুত্র আমি সগরের নাতি।
তোমার মহিমা বলে, কাহার শকতি।।
অংশুমান বলিলেন শুন মহামতি।
কেমনে হইবে মম বংশের সদগতি।।
ব্রাহ্মণের কোপ নাহি থাকে এক তিল।
প্রসন্ন হইয়া তারে কহেন কপিল।।
মর্ত্ত্যলোকে যদি বহে প্রবাহ গঙ্গার।
তবে যে তোমার বংশ হইবে উদ্ধার।।
জিজ্ঞাসিতে লাগিলেন সগরের নীতি।
কেমনে জন্মিল গঙ্গা, কোথা অবস্থিতি।।
কোথা গেলে পাইব গঙ্গার দরশন।
কহ দেখি মুনি শুনি গঙ্গার জনম।।
গঙ্গার জন্মের কথা করেন প্রকাশ।
আদিকাণ্ড রচিল পণ্ডিত কৃত্তিবাস।।