১০. সগরের অশ্বমেধ যজ্ঞারম্ভ ও বংশনামের বিবরণ

একদিন সগর ভাবিয়া মনে মনে।
অশ্বমেধ-যজ্ঞ করে অযোধ্যা-ভবনে।।
কত পুত্রে রাখে রাজা স্বর্গের উপর।
কতেক রাখিল লয়ে পাতাল ভিতর।।
পৃথিবীর রাজা যত মম নামে কাঁপে।
মম বংশজাত যত তিনলোকে ব্যাপে।।
এতেক ভাবিয়া যজ্ঞ কৈল আরম্ভণ।
তুরঙ্গ রাখিতে দিল যতেক নন্দন।।
বাপের আগেতে তারা করিল উত্তর।
ঘোড়া সহ যাব ষাটি হাজার সোদর।।
পুত্র-বাক্য শুনিয়া সগর বলে তায়।
আনিতে পারিলে ঘোড়া যজ্ঞ হবে সায়।।
ইন্দ্রের সহিত মোর হইল বিবাদ।
এই যজ্ঞে কত শত হইবে প্রমাদ।।
যজ্ঞাশ্ব রাখিতে যায় সগর-নন্দন।
শুনিয়া হইল ইন্দ্র বড় ভীত মন।
বলেন বাসব, ব্রহ্মা কোন্ যুক্তি করি।
বিরিঞ্চি বলেন, তুমি ঘোড়া কর চুরি।।
দিনে দুই প্রহরে হইল নিশাপ্রায়।
ঘোড়া চুরি করি ইন্দ্র পাতালে পলায়।।
তপস্যা করেন মুনি কপিল যেখানে।
ঘোড়া লৈয়া রাখিল তাঁহার বিদ্যমানে।।
যোগেতে আছেন মুনি কেহ নাহি কাছে।
ইন্দ্র ঘোড়া বান্ধিয়া গেলেন তাঁর পাছে।।
অন্ধকার বৃষ্টি সব ঘুচিল যখন।
ঘোড়া হারাইল বলে সগর-নন্দন।।
চাহিয়া না পাইলেক পৃথিবী-মণ্ডলে।
পৃথিবী খুঁজিয়া তারা চলিল পাতালে।।
ভাই ষাটি হাজার কোদালি হাতে ধরে।
চারি ক্রোশ একেক কোদালি পরিসরে।।
ক্রোধ করি যেই ধরে কোদালির মুষ্টে।
এক চোটে ভেজায় পাতাল কূর্ম্মপৃষ্ঠে।।
চারিদণ্ডে খুঁজিলেক সে চারি সাগর।
সাগর খুঁজিয়া গেল পাতাল ভিতর।।
পূর্ব্ব ও দক্ষিণ দিক্ তার মধ্যখানে।
ঘোড়া বান্ধা দেখিল কপিল বিদ্যমানে।।
ডাকাডাকি করিয়া কহিল সব ভাই।
ঘোড়াচোরে দেখিতে পাইনু এই ঠাঁই।।
মুনির গায়েতে মারে কোদাশীর পাশী।
ধ্যান ভঙ্গ হইয়া চাহেন মহাঋষি।।
ক্রোধেতে নয়নে অগ্নি ঝরে রাশি রাশি।
পুড়ে ষাটি হাজার হইল ভস্মরাশি।।
এককালে ক্ষয় হৈল সগর-নন্দন।
আদিকাণ্ড গান কৃত্তিবাস বিচক্ষণ।।