০৯. সগরবংশ-উপাখ্যান

অতঃপরে হইলে রুহিদাস রাজা।
পুত্র তুল্য পালন করেন সব প্রজা।।
তাঁহার নন্দন সে সগর নাম ধরে।
সগর হইল রাজা অযোধ্যা নগরে।।
মন দিয়া শুন সগরের বিবরণ।
যে কথা শুনিলে হয় পাপ বিমোচন।।
অপুত্রক রাজা রাজ্য করে মনোদুঃখ।
প্রাতে নাহি দেখে লোক অপুত্রের মুখ।।
দুঃখেতে সগর বনে করিল গমন।
বহুকাল করিল শিবের আরাধন।।
সন্তুষ্ট হইয়া শিব বলেন সগরে।
বর মাগি লহ রাজা যা চাহ অন্তরে।।
সগর বলেন পুত্র বিনা বড় দুঃখ।
বর দেহ দেখি আমি বহু পুত্রমুখ।।
হাসিয়া দিলেন বর ভোলা মহেশ্বর।
পুত্র ষাটি হাজার হইবে তব ঘর।।
বর পাইয়া আইল সগর নৃপতি।
শিব-বরে দুই নারী হৈল গর্ভবতী।।
কেশিনী সুমতি তার দুই স্ত্রীর নাম।
দিনে দিনে গর্ভ দোঁহা বাড়ে অনুপম।।
দশমাস গর্ভ হৈল প্রসব সময়।
কেশিনী প্রসব কৈল সুন্দর তনয়।।
তনয়ে দেখিল যেন অভিনব কাম।
অসমঞ্জ বলিয়া থুইল তার নাম।।
সুমতির গর্ভ-ব্যথা হইল যখন।
চর্ম্মের অলাবু এক প্রসবে তখন।।
দেখিয়া অলাবু রাজা কুপিল অন্তরে।
ভাঙ্গড় বলিয়া গালি দিলেন শিবেরে।।
কোপে লাউ ভাঙ্গিয়া করিল খান খান।
ষাটি হাজার পুত্র হৈল তিলেক প্রমাণ।।
উষিমিষি করে সব দেখিতে রূপস।
ষাটি হাজার আনে রাজা দুগ্ধের কলস।।
খাইতে খাইতে দুগ্ধ নবরূপ ধরে।
ষাটি হাজার পুত্রেরে সগর হাঁকারে।।
ষাটি হাজার পুত্রে শাপ দিলেন বিশাই।
অচিরে মরিবি তোরা নহিবি চিরাই।।

দিনে দিনে বাড়ে সেই সগর-নন্দন।
ছয় মাস বয়স্ক হইল পুত্রগণ।।
যখন সগর রাজা হাতে মারে তুড়ি।
ষাটি হাজার কোলে আসে দিয়া হামাগুড়ি।।
যখন হইল তারা দ্বাদশ বৎসর।
সকলের বিবাহ দিলেন শ্রীসগর।।
ষাটি হাজারের ষাইট হাজার নারী।
সুখে রাজ্য করে রাজা অযোধ্যা নগরী।।
জ্যেষ্ঠ পুত্র অসমঞ্জ ধর্ম্ম-পরায়ণ।
অংশুমান নামে তার হইল নন্দন।।
ষাটি হাজার তনয় একমাত্র নাতি।
দেখিয়া সগর রাজা আনন্দিত অতি।।
অসমঞ্জ সদাই ভাবেন মনে মন।
সংসার অসার, সত্য দেব নারায়ণ।।
অসার সংসারে কেন বদ্ধ হয়ে মরি।
নিভৃতে বসিয়া আমি ভজিব শ্রীহরি।।
ভাবিল সংসারে আমি না থাকিব আর।
অনুচিত কর্ম্ম সব করে দুরাচার।।
যতেক বালক খেলা খেলায় নগরে।
হাতে গলে বান্ধি সকলেরে ফেলে নীরে।
যত নারীগণ জলে ভরিবার আসি।
আছাড়িয়া ভাঙে সব জলের কলসী।।
অগ্নি দিয়া পোড়ায় সকল প্রজা-ঘর।
কহিল সকল প্রজা রাজার গোচর।।
পুত্রের চরিত্র শুনি লাগিল তরাস।
অসমঞ্জ পুত্রে রাজা দিল বনবাস।।
বনে গিয়া অসমঞ্জ হরষিত মন।
সংসারের বন্ধন ছেদিল নারায়ণ।।
অসমঞ্জে পাঠাইল বনের ভিতরে।
অপর সন্তান লয়ে সুখে রাজ্য করে।।
কৃত্তিবাস পণ্ডিতের মুখে সরস্বতী।
অমৃত সমান কৈল আদিকাণ্ড পুঁথি।।