১০. দিন অতীত হয়ে যাচ্ছে

দিন অতীত হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আসল কাজের তো কিছুই হল না। একে একে গ্রিসের সকল বীর মারা গেলেন। একদিন ওদেসিজ বালির মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এমন সময়ে একজন যুবককে দেখতে পেলেন। নিকটে যেয়ে জিজ্ঞেস করলেন–তুমি কে?

যুবক বললেন–আমি রাজার ছেলে।

ওদেসিজ–এখানে কী কচ্ছ?

যুবক–মনের আনন্দে মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছি।

তার পর সে ওদেসিজকে জিজ্ঞেস করলে–তুমি কে?

ওদেসিজ বললেন–আমি ওদেসিজ, তোমাদের শত্রু।

যুবক–এ জগতে আমার শত্রু কেউ নেই। তুমি কী করে আমার শত্রু হলে?

ওদেসিজ আশ্চর্য হয়ে বললেন–আচ্ছা, আচ্ছা, শত্রু নয়–মিত্র।

যুবক–মিত্র? বেশ। তোমরা এখানে কী করছো?

ওদেসিজ–তোমাদের জয় নগর দখল করা আমাদের উদ্দেশ্য?

যুবক–সে হবার যো নেই।

ওদেসিজ–কেন?

যুবক-নগরের মাঝখানে একটা উপাসনার ঘর আছে। সেখানে বছর বছর একটা বড় ষাঁড় কোরবানি হয়ে থাকে। সেই কোরবানির ষাঁড় যেদিন চুরি যাবে সেই দিন ত্রয়নগর বিদেশীদের হাতে পড়বে, এ আমাদের ধর্ম-শাস্ত্রের কথা।

এই কথাগুলো বলতে বলতে পাগল যুবকটি আপন মনে গান করতে করতে চলে গেল! সে ভেবেছিল, নগরের মাঝখান থেকে কোনো কালে কারো সাধ্য হবে না যে ষাঁড়কে চুরি করে; তাই সে শত্রুর কানে দিতে কিছুমাত্র সংকোচ বোধ করে নি। তার মাথাও কিছু খারাপ ছিল।

যাই হোক, তখন ওদেসিজ ফিরলেন। সমস্ত রাত্রি তিনি অনিদ্রায় কাটালেন। পরের দিন যুদ্ধ স্থগিত রইল।

তার পরের দিন সন্ধ্যাকালে নির্জনে দায়োমিদাসকে ডেকে ওদেসিজ সকল কথা খুলে বললেন। দায়োমিদাস বললেন–এ আর কঠিন কাজ কী? সাহস না করলে এ জগতে কোনো কাজই হবে না। সাহস করে আজ সন্ধ্যায় বেরিয়ে পড়ি। যায় প্রাণ যাবে–হয় হেলেনকে উদ্ধার, নতুবা এখানেই মরবো। অন্যায়কে জয়যুক্ত দেখে জীবন-ধারণ করবো না।

ওদেসিজ ভেবে ভেবে ঠিক করতে পারছিলো না যে, কী করে এত বড় একটা ষাঁড় নগরের ভিতর থেকে এত পাহারাওয়ালার চোখের সম্মুখ দিয়ে চুরি করে আনা যেতে পারে! দায়োমিদাসের কথায় তার মনে উৎসাহ এলো।

সত্যই তো, সাহসী যে সে-ই জগতে জয়লাভ করে–কাপুরুষ কোনো কালে বড় কাজ করতে পারে না। ওদেসিজ বললেন–তা হলে এ কথা আর কাউকে বলা হবে না। মনের মতলব অনেককে বললে তর্কের বন্যায় আসল কাজ মোটেই হয় না। ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। কিন্তু একটা কৌশল করে ভিতরে প্রবেশ করতে হবে। নগরের বড় পথে যে পাহারাওয়ালা রয়েছে তার চোখে ধূলো দেওয়া চাই। কিছু খেয়ে দুই বন্ধু এক নির্জন স্থানে যেয়ে ফকিরের বেশ পরলেন–মুখে মাখলেন ধুলো, ছাই আর বালি। দায়োমিদাস পরলেন হাজার জায়গায় ছেঁড়া এক আলখেল্লা। তার পর নিতান্ত দরিদ্র ভিক্ষুকের মতো কণ্ঠস্বরকে পরিবর্তন করে নগর দুয়ারে যেয়ে ভিক্ষার জন্যে হাত বাড়িয়ে বাড়িয়ে এগুতে লাগলেন।

কেউ তাদেরকে বাধা দিল না। ভিতরে প্রবেশ করে ওদেসিজ চুপি চুপি বন্ধুকে বললেন–কোন্ গতিকে ভিতরে প্রবেশ করেছি, এখন কী করে সে জায়গায় যাই?

অনেক নর-নারী রাস্তা দিয়ে যাওয়া-আসা করছিল, কেউ তাদেরকে গ্রাহ্য করলে না। কেউ হয়তো দয়া করে তাদের হাতে দু-একটা পয়সা দিলে।

অনেক রাত্রি পর্যন্ত তারা ঘুরে ঘুরে বেড়ালেন, শেষে ক্লান্ত হয়ে এক গাছ তলায় বসলেন। সহসা ওদেসিজ দেখতে পেলেন এক নারীকে।

এ নারী আর কেউ নয় হেলেন। যার জন্যে গ্রিক ও ত্রয় বাসীদের মধ্যে ভীষণ আগুন জ্বলে উঠেছে। ওদেসিজ শিউরে উঠলেন। হেলেন উপাসনা করে ঘরে ফিরছিলেন।

কারো কাছেই মিথ্যা বেশ ধরা পড়ে নি, কিন্তু হেলেনের চোখ ওদেসিজকে চিনে ফেললে। হেলেন ওদেসিজকে দেখেই শিউরে উঠলেন। হেলেন নিকটে এস ভীতি-মাখা কণ্ঠে বললেন–ওদেসিজ, কি ভয়ানক কাজই না করছো! এ শত্ৰুপুরীতে কেন এলে? হায়, এ কালমুখীর জন্যে কত গ্রিক বীর এই অচেনা দেশে প্রাণ দিয়েছে। শেষকালে তোমার মৃত্যুও কি দেখতে হবে? ওদেসিজ দেখতে লাগলেন অবাক হয়ে হেলেনকে–হেলেন তেমনি রূপবতী আছেন। দুঃখ ও চিন্তা তার সৌন্দর্যকে একটু নষ্ট করে নি। ওদেসিজের। মুখ দিয়ে কথা বের হল না।

ওদেসিজ মৃদু স্বরে বললেন–হেলেন, তোমাকে উদ্ধার করবার জন্যে বহু বীর প্রাণ দিয়েছে। আমরাও দিতে এসেছি।

হেলেন সজল নয়নে বললেন-হে বীর, এই পাপিনীকে তোমরা ভুলে যেতে পারলে? কে পরের জন্যে প্রাণ দেয়? বিশেষ করে, নারীর জন্যে রাজার কি পত্নীর অভাব?

ওদেসিজ–হেলেন, তুমি যে আমাদের দেশের মেয়ে, গ্রিকবাসীর রক্ত যে তোমার বুকে! মেনেলাসের একমাত্র পত্নী তুমি। আর কোনো পত্নী তার ছিল না, ভবিষ্যতে আর হবেও না।

হেলেন–আমার স্বামী কি আমাকে গ্রহণ করবেন?-আমি যে কুলত্যাগিনী। আমাকে তিনি খুন করে ফেলবেন না?

ওদেসিজ–নারী ভুল করেছিল বলে কি তার ক্ষমা হবে না?

হেলেন–আবার আমি আমার দেশের মুখ দেখবো? আমার স্বামীকে নিয়ে তেমনি করে ঘর কুরবো? স্বামী আমাকে ঘৃণা করবেন না?

ওদেসিজ–চরিত্রহীন পুরুষকে নারী ঘৃণা করে না। ভুলের জন্যে অনুতাপই শ্রেষ্ঠ শাস্তি।

অতঃপর ওদেসিজ তাদের নগর প্রবেশের কারণ বললেন। হেলেন আঁখিজলে ভেসে বললেন, ত্রয় নগর ধ্বংস হোক আমিই তার ব্যবস্থা করে দেবো। এই বলে হেলেন গভীর নিশার কালো বুক উজ্জ্বল করে ছদ্মবেশী দুই বীরকে নিয়ে শহরের মাঝখানে সেই ষাঁড়ের কাছে এলেন, তার পর বললেন, ওদেসিজ, প্রার্থনা করি খোদা তোমাদেরকে রক্ষা করুন, আমার চোখের পানি যেন ফেলতে না হয়; আমি আর দেরি করতে পাচ্ছি নেপাছে কেউ সন্দেহ করে। এই কথা বলে হেলেন সে স্থান ত্যাগ করলেন।

এদিকে ওদেসিজ ও দায়োমিদাস সহসা অতর্কিতভাবে মন্দির রক্ষীকে আক্রমণ করলেন। দুই বীরের আক্রমণ সে সহ্য করতে পারলো না, দু-এক মিনিটের মধ্যেই সে প্রাণ হারালো।

তার পর দুই বীর ষাঁড়ের গলার রশি ধরে পথ চলা আরম্ভ করলেন। রাস্তাগুলো জনমানবশূন্য, যতগুলো পাহারাওয়ালা তাদের সামনে পড়লো, সবগুলোকেই তারা মেরে ফেললেন। সদর দরজার কাছে সবাই ঘুমিয়েছিল, সুতরাং সহজেই তারা বিনা বাধায় নগর পার হয়ে এলেন।

পরের দিন বিপুল আনন্দে গ্রিক সৈন্যরা বিপুল বেগে আবার যুদ্ধক্ষেত্রে এসে দাঁড়ালেন। দুই দলে ভীষণ যুদ্ধ হল কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ঘিকেরা কোনই সুবিধা করতে পারলে না।

শেষে একদিন সমস্ত গ্রিক সৈন্য ও গ্রিক বীরদিগকে এক সঙ্গে করে ওদেসিজ বললেন, ভাইগণ, যুদ্ধ করতে করতে একেবারে শেষ হয়ে চলোম, কিন্তু তবুও তো আমাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধির কোনো আশা দেখি না। আমি এক মতলব করেছি, কোনো বিশেষ কৌশল করে যদি জয়লাভ করতে পারি, নইলে আর কোনো আশা নেই। সকলে জিজ্ঞাসা করলে, কী মতলব?

ওদেসিজ বললেন, আমাদেরকে প্রকাণ্ড একটা কাঠের ঘোড়া তৈরি করতে হবে–এতবড় ঘোড়া যার পেটের মধ্যে দু’শো সাহসী বীর লুকিয়ে থাকতে পারে। ঘোড়া তৈরি হলে আমাদের দুশো সৈনিক সেই ঘোড়ার পেটের মধ্যে লুকিয়ে থাকবে। আর একটি লোককে হাতপা বেঁধে ঘোড়ার পায়ের কাছে রেখে দিতে হবে। তার পর সমস্ত তাঁবুতে আগুন ধরিয়ে বাকি সকলে জাহাজ ছেড়ে চলে যাবে। এমন ভাব দেখাতে হবে যেন আমরা ত্রয় অধিকার কবার আশা ত্যাগ করে যাচ্ছি।

তার পর যখন ত্রয়বাসীরা আমাদেরকে পালিয়ে যেতে দেখে উল্লাসে বেরিয়ে আসবে তখন দেখবে এই প্রকাণ্ড ঘোড়াটিকে, কৌতূহলী হয়ে তারা এই আজব জীবটাকে শহরের মধ্যে নিয়ে যাবে।

যে লোকটির হাত-পা বেঁধে ছেড়ে যাওয়া হবে–তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে বলবে সে একজন বিদেশী, দুষ্ট গ্রিক সৈন্যেরা তাকে কোরবানি দেবার জন্যে হাত-পা বেঁধেছিল; সে কোনো রকমে ফাঁকি দিয়ে পালিয়েছিল। ত্রয়বাসীরা নিশ্চয়ই এই কথা শুনে লোকটির বাঁধন খুলে দেবে।

তারপর তারা যখন ঘোড়াটিকে শহরে নিয়ে যাবে, সে সৈনিকটিও সঙ্গে যাবে! সময় বুঝে সৈনিকটা কোনো সঙ্কেত করবে, আর সঙ্গে সঙ্গে ঘোড়ার পেট চিরে আগুনের বেগে সেই দুশো সৈন্য বের হয়ে পড়বে–শহরের ভিতরে একবার প্রবেশ করতে পারলে কি আর রক্ষা আছে! তার পর ত্রয়বাসী ও তাদের মধ্যে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ লেগে যাবে। এদিকে সেই পরিত্যক্ত সৈনিকটাও পাহাড়ের উপরে একটা ভয়ঙ্কর আগুন তৈরি করবে, যা দেখে যারা জাহাজ নিয়ে সমুদ্রের মাঝে অদৃশ্য হয়েছিল তারা অবিলম্বে ফিরে এসে নগর আক্রমণ করবে, ব্যস! এইরূপে আমারা ত্রয় দখল করবো।

ওদেসিজের এই প্রস্তাব সকলেই পছন্দ করলেন। মিস্ত্রি দিয়ে অবিলম্বে একটা প্রকাণ্ড কাঠের ঘোড়া তৈরি করা হল।

ঘোড়া তৈরি হল দুশো জন সাহসী শক্তিশালী বীর অস্ত্র নিয়ে তার পেটের মধ্যে প্রবেশ করলেন। পেটের মধ্যে দুশো লোক ধরে এমন একটা ঘোড়া যে কতবড় তা বুঝতেই পাচ্ছ। আট দশটা হাতি এক সঙ্গে করলে যত বড় হয় ঠিক তত বড়।

তার পর হৈ-হৈ রৈরৈ করে সমস্ত তাঁবু ও অন্যান্য জিনিসপত্র আগুন ধরিয়ে দেওয়া হল-একটা লোককে হাত-পা বেঁধে ও শরীরে কাদা মাখিয়ে বালির ওপর ফেলে রাখা হল। এদিকে ত্রয়বাসীরা গ্রিক সৈন্যের ভেতরে এই অদ্ভুত অগ্নিকাণ্ড দেখে ভারি আশ্চর্য হল। তারা আরও দেখলো–গ্রিকেরা পোঁটলা পুঁটলি বেঁধে জাহাজ ছেড়ে ত্রয় নগর ত্যাগ করছে।

এই দেখে তাদের মধ্যে আনন্দের ঢেউ খেলে যেতে লাগলো। দলে দলে তারা পলাতক শত্রুর পলায়ন-যাত্রা দেখবার জন্যে সমুদ্রকূলে এসে দাঁড়ালো।

একটা লোককে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় দেখে বিস্ময়ে তারা জিজ্ঞাসা করলে তোমার কী হয়েছে?

লোকটি কেঁদে কেঁদে বললে-শয়তানেরা আমার হাত-পা বেঁধে কোরবানি করতে চেয়েছিল, আমি কোনো রকমে রাত্রির অন্ধকারে পালিয়ে প্রাণে বেঁচেছি। এখন তোমরা আমার হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দাও, ব্যথায় মরে যাচ্ছি। সকলে তাড়াতাড়ি তার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিলে।

সেই প্রকাও ঘোড়াটি দেখে অবাক হয়ে তারা জিজ্ঞাসা করলে–এটা কী?

লোকটি বললে–এটা হচ্ছে প্রকাণ্ড ঘোড়া। ত্রয় নগর জয় করে জয়ের স্মৃতিচিহ্নস্বরূপ। ওটাকে তারা নগর দুয়ারে খাড়া করে রাখতে চেয়েছিল–এত বড় তাদের দুরাশা!

ত্রয় বাসীরা বললে–বটে! আচ্ছা তা হলে গ্রিকদের পরাজয়ের স্মৃতিস্বরূপ ওটাকে আমরা নগর দুয়ারে রাখবো, অনন্তকাল ধরে তাদের কলঙ্ক এই ঘোড়া বুকে করে রাখবে।

যখন তারা নগর-দুয়ারে পৌঁছল, তখন নগরবাসীরা বললে–গ্রিকদের পালায়নের এই কলঙ্কচিহ্নটি প্রথমে শহরে সকল নর-নারীকে দেখিয়ে নিয়ে বেড়াও। তার পর ওখানে এনে রাখা যাবে। উত্তম কথা বলে তারা সকলে মিলে প্রকাণ্ড জানোয়ারটিকে টানা আরম্ভ করলে। শহরের প্রায় মাঝখানে তারা ঘোড়াটাকে টেনে আনলে, তখন সকলে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।

সহসা ঘোড়ার পেটের কাছে একটা শব্দ হল। আর কি রক্ষা আছে? গ্রিকবীরেরা হঠাৎ ঘোড়ার পেটের ভেতর থেকে হুড় হুড় করে বেরিয়ে পড়লো। ত্রয়বাসীরা প্রথমে তো অবাক। শেষ কালে তারা গ্রিকদের চালাকি বুঝতে পারলো, কিন্তু তখন আর উপায় ছিল না।

গ্রিকেরা ভয়ানক রকমে তাদেরকে আক্রমণ করলো। একে ক্লান্ত শরীর, তার ওপর গ্রিকবীরগণের এই অতর্কিত আক্রমণে ত্রয়বাসীরা একেবারে নিরুপায় হয়ে পড়লো। শহরের নারী ও শিশুদের মাঝে একটা ভয়ানক আতঙ্কের সঞ্চার হল–যেদিকে পারলো, পালিয়ে যেতে লাগলো।

এদিকে সেই হাত-পা বাঁধা লোকটি দিলে পাহাড়ের চূড়ায় আগুন ধরিয়ে। দুপুর রোদের খরতাপে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো।

সমুদ্রের মাঝে জাহাজের উপর গ্রিক সৈন্যগণ এই সঙ্কেতের জন্যেই অপেক্ষা করছিল, সঙ্কেত পেয়েই তারা ছোট ছোট নৌকায় তীরবেগে কূলের দিকে ছুটে এলো।

প্রায় আধ ঘণ্টার মধ্যেই তারা ত্রয় শহরের প্রবেশ দুয়ার আক্রমণ করলো। ভেতর বাহির দুই দিক থেকেই গ্রিকদের আক্রমণ ভয়ানক রকমে চলতে লাগলো।

পেরিস হেলেনকে ফেলে ঢাল তলোয়ার নিয়ে নিচে নেমে এলো। কিন্তু তখন শহরের সকলেই প্রাণভয়ে পলায়ন শুরু করেছে। সৈন্যরাও অস্ত্র ছেড়ে অলি গলিতে ঢুকে পড়েছে। পেরিসের গায়ের রক্ত হিম হয়ে এসেছে–কী ভীষণ পাপ সে করেছে এই কথা মনে করে তার চোখ ফেটে পানি এলো। হায় কেন সে রূপের নেশায় পাগল হয়েছিলো–হায়, তার পরিণাম কী হল–দেশ, রাজ্য, মান-সম্মান, আত্মীয়-স্বজন, অর্থ-সম্পদ সব ধ্বংস হল।

প্রাসাদ দুয়ারে দাঁড়িয়ে পেরিস এই কথা ভাবছে, এমন সময় একটা তীর এসে তার কলিজায় বিদ্ধ হল। সঙ্গে সঙ্গে গ্রিক সৈন্যেরা রাজার বাড়ির মধ্যে জয়ধ্বনি করতে করতে প্রবেশ করলে।

মেনেলাস যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে হেলেনের সন্ধানে ছুটলেন। হেলেন দারুণ আতঙ্কে ওপরে দাঁড়িয়ে ছিলেন–স্বামীকে দেখেই তিনি পালিয়ে যাচ্ছিলেন; মেনেলাস ধনুক উঠিয়ে বললেন–এক পা এগুবে না।

হেলেন চুপ করে দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগলেন। মেনেলাস ইচ্ছা করেছিলেন–হেলেনকে মেরে ফেলতে, কিন্তু পারলেন না! হাত তার অবশ হয়ে গেল।

হেলেন বললেন–অপরাধীকে ক্ষমা কর। মরতে আমরা দুঃখ নেই, কিন্তু আমি যে। পাপ করেছি তার ক্ষমা চাই। মেনেলাস হাত ধরে পত্নীকে নামিয়ে আনলেন।

.

এইভাবে রানী হেলেন উদ্ধার হল। মেনেলাস স্পার্থা শহরে পত্নীকে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন। এর পর বহু বছর তারা সুখে বাস করেছিলেন।

বাড়ির পথে ওদেসিজকে অনেক বিপদে পড়তে হয়েছিল। বহু বৎসর ধরে তিনি পথে পথে ঘুরেছিলেন–কন্যার হত্যার জন্যে এগামেমনকে তাঁর পত্নী বিষ খাইয়েছিলেন, এইসব এবং রানী পানীলোপীর কথা আর এক দিন শুনাবো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *