০৬. পরের দিনও ভয়ানক যুদ্ধ হল

পরের দিনও ভয়ানক যুদ্ধ হল। ত্রয়-সৈন্যরা গ্রিক সৈন্যদেরকে একেবারে সমুদ্রতীরে তাড়িয়ে নিয়ে গেল। নেস্তর, ওদেসিজ প্রভৃতি বীরগণ বড় অস্থির ও ব্যস্ত হয়ে উঠলেন।

এয়বাসীরা সারা রাত্রি ধরে ময়দানে বসে আগুন জালিয়ে কাটাল, পরদিন গ্রিকদিগকে একেবারে সাফ করে ফেলবে, এই তাদের উদ্দেশ্য। জয়ের আনন্দ তাদিগকে একেবারে পাগল করে তুলেছিল।

এদিকে গ্রিকেরা রাত্রিকালে এক সভা করলেন। অবস্থা তো খুবই শোচনীয়, কাল কী ভাবে শত্রুদলকে বাধা দিতে হবে, তারই জল্পনা-কল্পনা চালাতে লাগল।

নেস্তর বললেন–শত্রুরা এখন কী করছে, তার সংবাদ নেওয়া দরকার। কিন্তু কে প্রাণ হাতে করে এই দুঃসাহসের কাজ করবে? শক্রদলের কাছ দিয়ে যাতায়াত করলে হয়তো জীবন দিতে হবে।

দায়োমিদাস বললেন–এ কাজ আমি করব, কিন্তু আমার সঙ্গে আরও একটি লোক চাই!

দায়োমিদাসের কথা শুনে কয়েকজন বললে–আমরা যাবো। এদের মধ্যে ওদেসিজও ছিলেন। দায়োমিদাস ওদেসিজকেও সঙ্গে নিতে ইচ্ছা করলেন কারণ ওদেসিজ যেমন বীর তেমনি তার বুদ্ধি বেশি।

তার পর দুই বন্ধু অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শত্ৰুদলের দিকে আস্তে আস্তে পা ফেলে অন্ধকারে বেরিয়ে পড়লেন।

শক্রদলের নিকটবর্তী হলে তাঁরা দেখতে পেলেন, একটি লোক অন্ধকারে হেঁটে আসছে। দায়োমিদাস ওদেসিজের গা চেপে মৃদুকণ্ঠে বললেন–দেখতে পাচ্ছ লোকটিকে?

ওদেসিজ–হ্যাঁ আস্তে–ও আমাদের সৈন্য-দলের দিকে যাচ্ছে–নিশ্চয়ই ও হেরের গুপ্তচর। দায়ে এখন কী করা যায়? তীর ছুঁড়বো?

ওদে–না, সবুর কর। মারাবার আগে ওর কাছ। থকে কিছু আদায় করতে হবে। চল, ওর পিছনে পিছনে যাওয়া যাক, আমাদের সীমানার মধ্যে গেলেই ওকে পাকড়াও করবো, আর তার পর যা করবার আছে, করবো।

লোকটি নিঃসন্দেহে অগ্রসর হচ্ছিল, চোরের উপর যে বাটপাড়ি হচ্ছে, তা সে বুঝতে পারে নি।

গ্রিক সীমানায় পা দেওয়া মাত্র কে বজ্রগম্ভীর জিজ্ঞাসা করলেন–কে?

লোকটি ভীত-চকিত হয়ে এদিক ওদিক চাইতেই ব্যাঘ্র যেমন মেষকে ধরে তেমনি করে দুই বীর লাফিয়ে এসে লোকটির গলা চেপে ধরলেন। সে বাধা দেবার বিন্দুমাত্র সময় পেলো না।

কাদ কাদ হয়ে সে বললে–আমাকে দয়া করে প্রাণে মারবেন না। আমার কোনো দোষ নেই। হেক্‌তর অনেক টাকা ঘুষ দিয়ে আমাকে এই কাজ করতে পাঠিয়েছেন।

ওদেসিজ তার ঘাড়ে একটা নাড়া দিয়া বললেন–ঠিক ঠিক উত্তর দাও, তা হলে বেঁচে যাবে। শত্রুরা কোথায় কি ভাবে আছে সব বল। কেন এখানে এসেছ? লোকটি বললে নিতান্ত বেসামাল হয়ে তারা নাক ডাকিয়ে ঘুমুচ্ছে। আপনারা যদি এখন তাদেরকে আক্রমণ করেন, তা হলে তারা কুকুরের মতো পালাবে। একটা প্রকাণ্ড আগুনের কুণ্ডুর দিকে হাত উঠিয়ে বললে, ঐ ওখানে হেত্তর শুয়ে আছে। থেবসের রাজা এসেছে, সেও সেখানে আছে। তার সোনার সাজপরা ঘোড়াগুলিও বাইরে বাধা আছে। ওদেসিজ বললেন–দুর্বৃত্ত, প্রাণের মায়ায় স্বজাতির সর্বনাশ করতে অগ্রসর হয়েছ? তোমার জীবনের জন্য সহস্র লোকের মৃত্যু কামনা করছ। ধর, তোমার উপযুক্ত শাস্তি গ্রহণ কর। এই কথা বলে ওদেসিজ হতভাগ্যের গলায় তলোয়ার বসিয়ে দিলেন। স্থানটি রক্তে রক্তময় হয়ে গেল।

তার পর তাঁরা ধীরে ধীরে খুব সতর্ক ভাবে পা ফেলে থেবসের রাজা আর সেই সোনার সাজপরা ঘোড়াগুলো দাঁড়িয়েছিল সেখানে উপস্থিত হলেন। অঘোরে মহাসুখে তারা নিদ্রা যাচ্ছিল। প্রহরীরাও ঘুমে কাতর হয়ে মাথা ঢুলোচ্ছিল।

ওদেসীজ বললেন–এই দুটি প্রহরীকে আগে শেষ করে ফেলি। এই কথা বলেই একটুও দেরি না করেই ওদেসিজ তাদের ঘাড়ের উপরে পড়ে দেহ হতে মাথা ছিঁড়ে ফেললেন।

দায়োমিদাসও প্রায় বার জন লোককে মেরে ফেললেন।

দায়োমিদাস বললেন–ওদেসিজ এইবার সরে পড়া যাক। এখনও কেউ জাগে নি, জাগলে সর্বনাশ হবে। আস্তে আস্তে ঘোড়াগুলিকে সরিয়ে ফেল।

ওদেসিজ আর দেরি করলেন না। গোড়াগুলো লাগাম ধরে বের করে আনলেন। তারপর দুজনে দুটির পিঠে চড়ে ঘোড়াগুলো নিয়ে দিলেন ছুট।

প্রাতঃকালে নেস্তর তাঁর তাঁবুর সামনে দেখলেন–ওদেসিজ, দায়োমিদাস আর একপাল ঘোড়া। নেস্তর বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন–এ কী? এ ঘোড়া তো জীবনে দেখি নি! কোথা হতে এগুলি এনেছ? জীবনে বেঁচে এসেছ, তাই কত–এর ওপর ঘোড়াগুলি কোথা থেকে এল? এ ঘোড়া তো যেখানে সেখানে পাওয়া যায় না?

ওদেসিজ বললেন-থেবসের লোকেরা প্রিয়াম রাজার সঙ্গে যোগ দিয়েছে, যুদ্ধে স্বয়ং তাদের রাজা এসেছেন। এসব তাঁরই ঘোড়া, আমরা অনেক রাত্রে তাদের অনেক লোককে মেরে ফেলে ঘোড়া নিয়ে পালিয়ে এসেছি।

নেস্তর আনন্দে বললেন–ধন্যবাদ তোমাদেরকে।

দায়োমিদাস বললেন–বিপক্ষেরা এখনই যুদ্ধে নামবে, এ শয়তানী তারা সহ্য করবে। অতএব আনন্দ করবার সময় নেই, যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও।

এগামেমনন ও আর আর বীরগণ ওদেসিজ ও দায়োমিদাসকে সাদর সংবর্ধনা করলেন, অতঃপর বিশ্রামের পর সিঙ্গা, ঢোল ও অন্যান্য বাদ্য বাজিয়ে তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলেন।

অসংখ্য গ্রিক সৈন্য কাতারে দাঁড়িয়ে সমুদ্রকূল হতে সম্মুখ দিকে অগ্রসর হতে লাগল। ওদিক থেকে ত্রয়-সৈন্যও এগিয়ে এল। তার পর ভীষণ যুদ্ধ আরম্ভ হল।

তীর, বর্শা ও তলোয়ারের হানাহানি সমানে চলতে লাগল-ধীরে ধীরে সৈন্যে সৈন্যে মারামারি কাটাকাটি শুরু হল। বাপরে, সে কী ভয়ানক ব্যাপার! কত কাটা মাথা মাটিতে গড়িয়ে পড়ল, কার ঘোড়া মাটিতে শুয়ে পড়ল, কত সওয়ার তীরের আঘাতে প্রাণ দিল।

আজ এগামেমনন ভয়ঙ্কর বীরত্বের পরিচয় দিচ্ছেন। শত শত মানুষকে তিনি কেটে ফেলে দিলেন, তবুও তার লড়াইয়ের তৃপ্তি মিটছে না। অনবরত আগুনের তুবড়ীর মতো যুদ্ধক্ষেত্রে এদিক ওদিক ছুটে বেড়াতে লাগলেন। শেষকালে হঠাৎ তীর এসে তার পাশে লাগল, রক্তাক্ত দেহে তিনি ময়দান হতে ফিরে যেতে বাধ্য হলেন।

এইবার হেক্টর বীর-বিক্রমে গ্রিক সৈন্যের সম্মুখীন হলেন। সারারাত্রি জেগে দায়োমিদাস ও ওদেসিজ খুব শ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন তবুও তারা ভয়ানকভাবে যুদ্ধ করছিলেন।

দায়োমিদাস হেৰ্তরের মাথায় এমন একটা ভয়ানক আঘাত করলেন যে, হেকতর চোখে সরষে ফুল দেখলেন। দাঁড়িয়ে থাকা তার পক্ষে কষ্টকর হল। এমন সময় পেরিস। দায়োমিদাসের হাতখানা গুলতি ছুঁড়ে ভেঙ্গে দিলেন। দায়োমিদাস বেদনায় অস্থির হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করলেন। বীরদের মধ্যে একা ওদেসিজ রইলেন।

একা ওদেসিজের পক্ষে এত গুলি শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করা খুব শক্তকথা। হরিণকে শিকারী কুকুরেরা যেমন করে ঘিরে ফেলে, ত্রয় সৈন্যরাও তেমনি করে ওদেসিজকে ঘিরে ফেলল। যুঝতে যুঝতে তিনিও জখম হলেন। ঊরু হতে দর দর করে রক্ত পড়তে লাগলো। বহুদূরে বড় আজাক ও মেনেলাস ছিলেন–ওদেসিজ চীৎকার করে ডেকে বললেন–একবার এদিকে এস, একা আর পারছি নে, আমার শরীর অবসন্ন হয়ে আসছে। মেনেলাস আর আজাক তীরবেগে ছুটে এসে ওদেসিজের লুণ্ঠিত দেহ কাঁধে নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্র হতে দৌড়ে পালিয়ে গেলেন। পরাজিত গ্রিক সৈন্যশ্রেণীও ক্রমশ হটে আসছিল–শেষে যে যেমন পারল, যুদ্ধক্ষেত্র হতে পালিয়ে সমুদ্রকূলে শিরিরের দিকে ছুটতে লাগল।

তোমাদের মনে আছে, আগোমেমনন কর্তৃক আপমানিত হয়ে বীর এচিলীস ভয়ানক মনঃকষ্টে যুদ্ধ ক্ষান্ত দিয়ে জাহাজে বসেছিলেন। জাহাজের মাস্তুলের উপর বসে রোজই তিনি যুদ্ধ দেখতেন। আজও দেখছিলেন। গ্রিক সৈন্য প্রাণ ভয়ে ত্রয় সৈন্য শ্রেণীর সম্মুখ হতে পলায়ন করছে, সমস্ত বীর আহত হয়ে এক এক করে যুদ্ধময়দান ত্যাগ করছে–এ সবই আজ তিনি দেখছেন। জন্মভূমির এই দারুণ অপমানে মন তাঁর ভেঙ্গে যাচ্ছিল। এগামেমননের দুর্ব্যবহারের কথা মনে হয়ে তার মনে আরো দুঃখ হচ্ছিল। তিনি আপন মনে বলতে লাগলেন–এগামেমনন, তোমার অহঙ্কারের জন্যেই গ্রিকবাসীদের আজ এই অপমান সহ্য করতে হচ্ছে। নিশ্চয়ই খোদার অভিশাপ তোমাদের উপর পড়েছে, নইলে যা কখনও হয় নি তাই আজ হল। এ পর্যন্ত কোনো যুদ্ধে গ্রিক সৈন্য পিঠ দেখায় নি। যাক আমার কী? তোমরা তো আমায় বাদ দিয়েছ, আমি তোমাদের কেউ নই।

কিন্তু তবুও তার মন মানল না। সৈন্যদের অবস্থা জানবার জন্যে বন্ধু আজিজকে নিচে পাঠিয়ে দিয়ে বললেন–কে কেমন আছে, যুদ্ধের অবস্থা কিরূপ ভালো করে শুনে এস।

আজিজ এসে দেখলেন–নেস্তর পেঁয়াজ গোস্ত খাচ্ছেন। তার পার্শ্বে গ্রিক সৈন্যদের চিকিৎসক আহত হয়ে পড়ে আছেন। নেস্তর আজিজকে জিজ্ঞাসা করলেন, কী খবর?

আজিজ বললেন–আপনাদের অবস্থা জানবার জন্যে এচিলীস আমাকে পাঠিয়ে দিলেন।

নেস্তের বললেন–আমরা মরি আর বাঁচি তাতে এচিলীসের কী? এচিলীস আপন মনে রাগ করে বসে আছেন। আমাদের জন্যে কি তার মমতা আছে?–কথাগুলি নেস্তর খুব দুঃখের সঙ্গেই বললেন।

নেস্তর আবার বললেন–ইদীয়মেনাস, ওদেসিজ, এগামেমনন, সবাই আহত হয়েছে। চিকিৎসক স্বয়ং তীরের আঘাতে মৃতপ্রায়। এখন বল, কী করি? ত্ৰয় সৈন্য ক্রমশ তাড়া করে জাহাজের দিকে আসছে। এখনও গড় পার হয় নি–সে চেষ্টাও তারা করবে। তুমি দৌড়ে গিয়ে এচিলীসকে আমাদের শোচনীয় অবস্থার কথা বল। তিনি যদি যুদ্ধে না নামেন, তবে অন্তত তার লোহার পোশাকটি যেন দেন। তুমি সেই পোশাক পরে যদি হয় সৈন্যের সামনে দাঁড়াও তাহলে তারা ভয়ে পালাবে, গ্রিক সৈন্যদের বুকের যথেষ্ট বল আসবে।

আজিজ দেরি না করে সকল কথা জানাবার জন্যে বন্ধুর জাহাজের দিকে গেলেন।

এদিকে গ্রিকদের তৈরি গড়ের ধারে সারি সারি ত্রয় সৈন্য দাঁড়াল, গড় পার হবার চেষ্টা তারা করছিল। হেকতর সৈন্যদেরকে বললেন–বীরগণ, একদিন তো মরতে হবেই, আজ মানুষের মতো মর। অসম্মানের জীবন নিয়ে বেঁচে থেকে লাভ কী?

অবিলম্বে ত্রয় সৈন্য লাফিয়ে সাঁতরিয়ে গড় পার হতে লাগলো। গড়ের এ ধারে দাঁড়িয়ে গ্রীক সৈন্যেরা অনবরত তীর নিক্ষেপ করছিলো, কিন্তু তাতে কোনো ফল হল না। ত্রয় সৈন্য

অসীম উৎসাহে গড় পার হয়ে একেবারে জাহাজ শ্রেণীর পাশে প্রাচীরের গায়ের কাছে এসে উপস্থিত হল। হেক্‌তর হুঙ্কার দিয়ে বললেন–ভাঙ্গ প্রাচীর, লাগাও আগুন, মার গ্রিক।

গ্রিক-সৈন্য আরও হটে যেতে বাধ্য হল! প্রাচীরের ওধারে তারা অনবরত কুড়োল দিয়ে শত্রুসৈন্যদের মাথা কাটতে আরম্ভ করলো। কিন্তু তবুও তাদেরকে ঠেকিয়ে রাখা গেল না।

ক্রয় সৈন্য প্রাচীর ভেঙ্গে এইবার একেবারে জাহাজের নিকেটে এসে উপস্থিত হল। গ্রিকেরা শৃগালের মতো দৌড়ে একেবারে জাহাজে উঠে পড়লো।

হের উচ্চৈঃস্বরে গ্রিকদিগকে বললে–হে শৃগালের দল, পৃথিবীর আলো ছেড়ে এইবার গর্তের মধ্যে পালাচ্ছ। তার পরে নিজের সৈন্যদলকে বল্লেন–তোমরা ক্ষান্ত হয়ো না। গর্ত হতে তাদের লেজ ধরে টেনে বের কর, জ্যান্ত জ্বালিয়ে মারতে হবে।

হেক্টর ভীষণ আগুন তৈরি করবার জন্যে হুকুম দিলেন।

এচিলীস এখনও নিশ্চেষ্ট ছিলেন। তিনি দেখতে লাগলেন, জাহাজে আগুন ধরবার জন্যে হেক্ক্তর সৈন্যদের হুকুম দিচ্ছেন।

এই সময় আজিজ এচিলীসকে হাত জোড় করে বল্লেন–বীরবর, এখনও কি রাগ মেটে নি? সবই যে ধ্বংস হয়ে গেল!

এচিলীস বল্লেন–হোক সব ধ্বংস তাতে আমার কী? তুমি নিশ্চিত থাক আমার জাহাজের কাছে কেউ আসবে না, আমার নির্বিবাদে পাল তুলে বাড়ি ফিরে যেতে পারব।

আজিজ–তুমি নিজে না কর, তোমার পোশাকটি আমায় দাও।আমি একবার দেখি।

এচিলীস–এই দুঃখের ভিতরেও আমাকে হাসালে! আচ্ছা, যাও আমার পোশাক নিয়ে। যদি পার, তবে ত্রয় সৈন্যগণকে তাড়িয়ে দাও; কিন্তু খবরদার নিচে নেমে তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করো না।

এদিকে বীরবর আজাক শেষ পর্যন্ত হয় সৈন্যগণকে বাধা দিচ্ছিলেন কিন্তু আর সম্ভব হচ্ছিল না, তার শিথিল মুষ্টি হতে তলোয়ার খসে পড়ছিল।

এমন সময় আজিজ এচিলীসের লোহার পোশাকটি পরে সেখানে উপস্থিত হলেন। এর মধ্যে সৈন্যরা একখানা জাহাজে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন। আজিজের পোশাক হতে সূর্যের রশ্মি বের হচ্ছিল, ত্রয় বাসীরা সহসা থমকে দাঁড়ালো। গ্রিক সৈন্যরাও বিপুল সাহসে এগিয়ে গেল। আজিজ অসি চালনে শত্রুর আক্রমণ ব্যর্থ করে দিতে লাগলেন–বন্ধুর পোশাক পরে আজিজের গায়ে কোথা হতে যেন দৈত্যের বল এলো। হের শঙ্কিত হলেন; কারণ তাঁর বিশ্বাস, এচিলীসের সামনে টিকে থাকা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। মার মার কাট কাট শব্দে গ্রিক বীরেরা ত্রয় সৈন্যগণের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। ত্রয় সৈন্যগণ তেজ-বীরত্বে গড় ও পাঁচিল পার হয়ে এসেছিল, এইবার কাপুরুষের মতো দ্রুত পেছনে হটতে লাগল। হেক্‌তর এক প্রাচীরের ওধারে যেয়ে গড়ের ভিতর নেমে পড়লেন। এচিলীসের বন্ধু যাকে সামনে পাচ্ছিলেন তাকেই যমের বাড়ি পাঠাচ্ছিলেন। হেরকে পালাতে দেখে তার দিকে ছুটলেন, কিন্তু তাকে ধরা গেল না। রক্ত আর মরা মানুষের স্থূপে আজিজের পথ রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। ঝড়ের বাতাসের মতো গ্রিক সৈন্য ত্রয়-সৈন্যশ্রেণীর উপর যেয়ে পড়তে লাগলো। বড় গাছের উপর আঘাত করলে যেমন শব্দ হয় অথবা পাথরের উপর শাবলের কোপ দিলে যেমন আওয়াজ শোনা যায়, শত্রুশ্রেণীর লোহার আবরণের উপর তেমনি শব্দ করে গ্রিকেরা অস্ত্র চালাতে লাগলো। ত্রয় সৈন্যগণ সে তেজ সহ্য করতে পারল না–তাদের অসংখ্য সিপাই মারা গেল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *