৪২. আমি যে আমিই

[১৯০০ খ্রীঃ ২০ মার্চ, সান্‌ ফ্রান্সিস্কোতে প্রদত্ত বক্তৃতার সারাংশ।]

আজ সন্ধ্যায় বক্তৃতার বিষয় ‘মানুষ’—প্রকৃতির সহিত বৈষম্যে মানুষ। দীর্ঘকাল ‘প্রকৃতি’ শব্দ বাহ্য প্রকৃতিকে বুঝাইবার জন্য প্রায় স্বতন্ত্রভাবে ব্যবহৃত হইত। এই-সব বাহ্য প্রকৃতিকে সুশৃঙ্খলভাবে আচরণ করিতে দেখা যাইত; এবং ইহারা প্রায়ই পুনরাবৃত্ত হইত—পূর্বে যাহা ঘটিয়াছে, তাহা আবার ঘটিয়াছে, কিছুই শুধু একবার ঘটে নাই। এইভাবে সিদ্ধান্ত করা হইল যে, প্রকৃতি সর্বত্র ও সর্বকালে একরূপ। প্রকৃতির ধারণার সহিত একরূপতা ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত; ইহা ছাড়া বাহ্যপ্রকৃতি বুঝিতে পারা যায় না। আমরা যাহাকে ‘বিধি’ বলি, তাহার ভিত্তি এই একরূপতা।

ক্রমশঃ ‘প্রকৃতি’ শব্দ ও একরূপতার ধারণা অন্তঃপ্রকৃতি, জীবন ও মনের প্রকৃতি বুঝাইতেও প্রযুক্ত হইতে লাগিল। যাহা কিছু পৃথক্‌ করা যায়, তাহাই প্রকৃতি। চারাগাছ, প্রাণী ও মানুষের গুণকে প্রকৃতি বলে। মানুষের জীবন নির্দিষ্ট প্রণালীতে আচরিত হয়; তাহার মনও সেইরূপ করে। চিন্তারাজির যখন তখন উৎপত্তি হয় না, উহাদের উৎপত্তি স্থিতি ও লয়ের একটু নির্দিষ্ট প্রণালী আছে। অন্য কথায় বলিতে গেলে বলিতে হয়, বাহ্য প্রকৃতিগুলি যেমন প্রণালীবদ্ধ, অন্তঃপ্রকৃতি অর্থাৎ মানুষের জীবন এবং মনও তেমনি বিধিবদ্ধ।

যখন আমরা মানুষের মন ও অস্তিত্ব সম্পর্কে বিধির কথা বিবেচনা করি, তখন ইহা স্পষ্টই প্রতীত হয় যে, স্বাধীন ইচ্ছা ও স্বাধীন অস্তিত্ব বলিয়া কোন কিছু থাকিতে পারে না। কিভাবে পাশব প্রকৃতি বিধি দ্বারা সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রিত হয়, তাহা আমরা জানি। মানুষের সম্বন্ধেও এ কথা খাটে; মানব-প্রকৃতিও বিধিবদ্ধ। মানব-মনের বৃত্তিগুলি যে বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তাহাকে কর্মের প্রণালী বলে।

কিছু-না হইতে কিছুর উৎপত্তি কেহ কখনও দেখে নাই; মনে যদি কিছু জাগে, তাহাও কোন কিছু হইতে অবশ্য উদ্ভূত হইয়াছে। আমরা যখন স্বাধীন ইচ্ছার কথা বলি, ইহার অর্থ এই যে, ইচ্ছা কোন কিছু দ্বারা উদ্ভূত হয় নাই। কিন্তু ইহা সত্য হইতে পারে না; ইচ্ছা জাত হইয়াছে; এবং যেহেতু ইহা জাত হইয়াছে, ইহা স্বাধীন হইতে পারে না—ইহা বিধিবদ্ধ। আমি যে আপনার সঙ্গে কথা বলিতে ইচ্ছুক এবং আপনি আমার কথা শুনিতে আসিয়াছেন, ইহাও একটি বিধি। আমি যাহা কিছু করি বা ভাবি বা অনুভব করি, আমার প্রত্যেক আচরণ বা ব্যবহার, আমার প্রত্যেক গতিবিধি—সবই উৎপন্ন বা জাত হয়, সুতরাং স্বাধীন নয়। আমাদের জীবনও মনের এই নিয়ন্ত্রণকেই কর্মের বিধি বা প্রণালী বলে।

যদি প্রাচীনকালে পাশ্চাত্য সমাজে এরূপ তত্ত্ব প্রবর্তিত হইত, তাহা হইলে তুমুল হইচই পড়িয়া যাইত। পাশ্চাত্যের মানুষ ভাবিতে চায় না যে, তাহার মন বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ভারতের প্রাচীনতম দর্শন যখন এই বিধি প্রবর্তন করে, তখনই ভারতবাসী উহা গ্রহণ করিয়াছিল। মনের স্বাধীনতা বলিয়া কিছু নাই, ইহা হইতে পারে না। এই শিক্ষা ভারতীয় মনে কোন উত্তেজনা সৃষ্টি করিল না কেন? ভারত ইহা শান্তভাবে গ্রহণ করিল; ইহাই ভারতীয় মনীষা বা চিন্তার বৈশিষ্ট্য; এখানেই ভারতীয় ভাবধারা জগতের অন্যান্য ভাবধারা হইতে পৃথক্‌।

বাহ্য ও অন্তঃপ্রকৃতি দুইটি স্বতন্ত্র বস্তু নয়; ইহারা প্রকৃতপক্ষে এক। প্রকৃতি সকল বাহ্য দৃশ্যের সমষ্টি। যাহা কিছু আছে, যাহা কিছু চলমান, তাহারই অর্থ ‘প্রকৃতি’। বস্তু ও মনের মধ্যে আমরা প্রচণ্ড বৈষম্য করি, আমরা ভাবি মন বস্তু হইতে একেবারে পৃথক্‌। প্রকৃতপক্ষে ইহারা একই প্রকৃতি, ইহার এক অর্ধ অপরার্ধের উপর ক্রিয়াশীল। নানাপ্রকার উত্তেজনার আকারে বস্তু মনের উপর চাপ দিতেছে। এই উত্তেজনাগুলি শক্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। বাহিরের উত্তেজনা ভিতরের উত্তেজনার উদ্দীপক। বাহিরের শক্তিতে সায় দেওয়ার অথবা বাহিরের শক্তি হইতে দূরে থাকার ইচ্ছাকে আমরা চিন্তা বলি, তাহা হইতেই ভিতরের শক্তি হয়।

বস্তু ও মন দুই-ই শক্তি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে আর কিছু নয় এবং যদি তোমরা এ-দুটিকে ভালভাবে বিশ্লেষণ কর, তাহা হইলে দেখিতে পাইবে যে, মূলতঃ উহারা এক। বাহিরের শক্তিকে কোন প্রকারে উদ্দীপিত করিতে পারে—ইহাতেই বুঝা যায় যে, কোন স্থানে ইহারা পরস্পর মিলিত হয়—ইহারা অবশ্যই অবিচ্ছিন্ন হইবে, সুতরাং উহারা মূলতঃ একই শক্তি। যখন তোমরা বস্তুগুলির মূলে গিয়া পৌঁছাও, তখন উহারা সরল ও সাধারণ হয়। যেহেতু একই শক্তি এক আকারে বস্তুরূপে এবং অন্য আকারে মনরূপে আবির্ভূত হয়, তখন বস্তু ও মনকে পৃথক্‌ চিন্তা করিবার কোন কারণ নাই। মন বস্তুতে রূপান্তরিত হয়, বস্তু মনে রূপান্তরিত হয়। চিন্তাশক্তি স্নায়ু ও পেশীশক্তি হয়; পেশী ও স্নায়ুশক্তি চিন্তাশক্তি হয়। বস্তু অথবা মন যেরূপেই প্রকাশিত হউক না কেন, প্রকৃতি এইসব শক্তি।

সূক্ষ্মতম মন ও স্থূলতম বস্তুর মধ্যে পার্থক্য শুধু পরিমাণের। অতএব সমগ্র বিশ্বকে মন অথবা বস্তু বলা যাইতে পারে, কোন্‌টা—তাহাতে কিছু আসে যায় না। তোমরা মনকে বিশুদ্ধ বস্তু, অথবা শরীরকে, স্থূল বা বাস্তব মন বলিতে পার, কোন্‌টাকে কি নামে ডাক তাহাতে সামান্য পার্থক্যই পরিলক্ষিত হয়। জড়বাদ ও অধ্যাত্মবাদের মধ্যে বিরোধজনিত যে-সকল অসুবিধার সৃষ্টি হইয়াছে, সেগুলির কারণ ভুল চিন্তা। প্রকৃতপক্ষে এই দুই-এর মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। আমার ও নিম্নতম শূকরশাবকের মধ্যে পার্থক্য শুধু পরিমাণের। শূকরশাবকের মধ্যে শক্তির প্রকাশ কম, আর আমার মধ্যে শক্তির প্রকাশ বেশী। কখনও আমি নিকৃষ্ট, কখনও শূকরশাবক উৎকৃষ্ট।

মন অথবা বস্তু—কোন্‌টি প্রথমে আসে, ইহার আলোচনা করিয়া কোন লাভ নাই। মনই কি প্রথম—যাহা হইতে বস্তু আসিয়াছে? অথবা বস্তুই কি প্রথম—যাহা হইতে মন আসিয়াছে? এ-সকল অর্থহীন প্রশ্ন হইতে দার্শনিক যুক্তির অনেকগুলি উদ্ভূত হইয়াছে। ইহা অনেকটা ‘ডিম আগে না মুরগী আগে?’—এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিবার মত। দুই-ই প্রথম এবং দুই-ই শেষ—মন ও বস্তু, বস্তু ও মন। যদি আমি বলি, বস্তুর অস্তিত্ব প্রথমে এবং বস্তু ক্রমশঃ সূক্ষ্ম হইতে সূক্ষ্মতর হইয়া মন হয়, তাহা হইলে আমি অবশ্যই স্বীকার করিব যে, বস্তুর পূর্বে মনের অস্তিত্ব নিশ্চয়ই থাকিবে। যদি না থাকিত, বস্তু কোথা হইতে উদ্ভূত হইয়াছে? মনের পূর্বে বস্তুর অস্তিত্ব, বস্তুর পূর্বে মনের অস্তিত্ব আছে। ইহা আগাগোড়া ‘মুরগী ও ডিমের’ প্রশ্নের মত।

সমগ্র প্রকৃতি নিমিত্তের বিধি দ্বারা সীমাবদ্ধ এবং দেশ-কালের অন্তর্গত। দেশের বাহিরে আমরা কিছু দেখিতে পারি না, তথাপি আমরা দেশ জানি না। কালের বাহিরে আমরা কিছু অনুভব করিতে পারি না, তথাপি আমরা কাল জানি না। কার্য-কারণের ভাষায় না বলিলে আমরা কিছু বুঝিতে পারি না, তথাপি কার্যকারণ কি তাহা আমরা জানি না। দেশ কাল নিমিত্ত—এই তিনটি প্রত্যেক দৃশ্যবস্তুর মধ্যে অনুস্যূত আছে, কিন্তু উহারা দৃশ্যবস্তু নয়। বুঝিতে পারিবার পূর্বে ইহারা যেন বিভিন্ন আকার বা ছাঁচ, যেগুলিতে ইহাদিগের প্রত্যেকটিকে অবশ্যই ঢালিতে হইবে। দেশ-কাল-নিমিত্তের সমবায়ে বস্তু একটি সত্ত্ব। দেশ-কাল-নিমিত্তের সমবায়ে মন একটি সত্ত্ব।

এই তত্ত্বটি অন্যভাবে প্রকাশ করা যাইতে পারে। প্রত্যেক বস্তুই সত্ত্ব—নাম ও রূপের সমবায়ে। নাম ও রূপ আসে এবং যায়, কিন্তু সত্ত্ব চিরদিন একই থাকে। সত্ত্ব, নাম ও রূপ এই জলপাত্রটিকে গড়ে। ভাঙিয়া গেলে ইহাকে আর ‘পাত্র’ নামে অভিহিত কর না, অথবা ইহার পাত্র-রূপ দেখ না। ইহার নাম ও রূপ থাকে না, কিন্তু ইহার সত্ত্ব থাকে। নাম ও রূপের দ্বারা বস্তুর যাবতীয় পার্থক্য হয়। এগুলি যথার্থ নয়, কারণ ইহাদের অস্তিত্ব থাকে না। আমরা যাহাকে প্রকৃতি বলি, তাহা অবিনাশী ও বিকারহীন সত্ত্ব নয়। দেশ কাল ও নিমিত্তই প্রকৃতি। নাম ও রূপই প্রকৃতি। প্রকৃতিই মায়া। যে নাম ও রূপে প্রত্যেক বস্তুকে ঢালা হয়, তাহাকে ‘মায়া’ বলে। মায়া সত্য নয়, মিথ্যা। মায়া সত্য হইলে ইহাকে আমরা বিনাশ অথবা পরিবর্তন করিতে পারিতাম না। সত্ত্ব হইতেছে অজ্ঞাত ও বস্তুজগতের গুণাগুণশূন্য এবং শুধু বুদ্ধি দ্বারা অধিগম্য বিষয়, আর মায়া হইতেছে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তু বা প্রপঞ্চ। প্রকৃত ‘আমি’কে কিছুই বিনাশ করিতে পারে না। কাঁচা বা পরিদৃশ্যমান ‘আমি’ সতত পরিবর্তনশীল ও নশ্বর।

আসল কথা এই—পার্থিব বস্তু মাত্রেরই দুইটা দিক্‌ আছে। একটা দিক্‌ নিত্য, বিকারহীন ও অবিনাশী; অপর দিক্‌ অনিত্য, পরিবর্তনশীল ও নশ্বর। মানুষ স্বরূপতঃ সত্ত্ব, আত্মা। এই আত্মা—এই সত্ত্ব বিকারহীন অবিনাশী। কিন্তু ইহা নামরূপান্তক বলিয়া প্রতীয়মান হয়। এই নাম ও রূপ বিকারহীন বা অবিনাশী নয়; ইহারা চিরপরিবর্তনশীল ও নশ্বর। তথাপি মানুষ এই পরিবর্তনশীল দেহ ও মনে নির্বোধের মত অমরত্ব খোঁজে—শাশ্বত একটি দেহ পাইতে চায়। আমি সেরূপ অমৃতত্ব চাই না।

প্রকৃতি ও আমার মধ্যে কি সম্বন্ধ? প্রকৃতি নাম ও রূপ অথবা দেশ কাল ও নিমিত্তের প্রতীক; আমি প্রকৃতির অংশ নই, কারণ আমি মুক্ত, অমৃত, অপরিণামী ও অনন্ত। আমার স্বাধীন ইচ্ছা আছে কি নাই—এই প্রশ্ন আসে না। আমি যে-কোন ইচ্ছারই অতীত। যেখানেই ইচ্ছা, উহা কখনও স্বাধীন নয়। ইচ্ছার কোনই স্বাধীনতা নাই। নাম ও রূপ ইচ্ছাকে ধরিয়া দাস করিলেও ইহার স্বাধীনতা বজায় থাকে। সেই সত্ত্ব—আত্মা যেন নিজেকে নামরূপের ছাঁচে ঢালিয়া গড়িয়া তুলেন এবং অচিরে বদ্ধ হন, অথচ পূর্বেই তিনি মুক্ত বা স্বাধীন ছিলেন। তথাপি ইহার মূল স্বভাব থাকিয়াই যায়। এজন্যই শাস্ত্র বলেন, ‘আমি মুক্ত; এ-সব বন্ধন সত্ত্বেও আমি মুক্ত’। এবং ইহা কখনই এ-কথা বিস্মৃত হয় না।

কিন্তু যখন আত্মার ইচ্ছা হইয়াছে, ইহা আর প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন বা মুক্ত নয়। প্রকৃতি শিকল ধরিয়া টানে, এবং প্রকৃতি যেমনই নাচাইতে চায়, তেমনই ইহাকে নাচিতে হয়। এভাবে তুমি ও আমি বর্ষ-বর্ষ নাচিয়াছি। আমরা যাহা কিছু দেখি, করি, অনুভব করি ও জানি, আমাদের সকল চিন্তা ও কার্য প্রকৃতির নির্দেশানুয়াযী নৃত্য ছাড়া আর কিছুই নয়। কোন কিছুতেই ইহার কোন স্বাধীনতা ছিল না এবং নাই। নিম্নতম হইতে উচ্চতম সকল চিন্তা ও কার্য প্রণালীবদ্ধ, এবং এগুলির কোনটিই আমাদের প্রকৃতস্বরূপগত নয়।

আমার যথার্থ স্বরূপ সকল বিধির বাহিরে। দাসত্ব ও প্রকৃতির সহিত সমভাবাপন্ন হও, এবং তুমি নিয়মানুগ হইয়া চল, নিয়মের বশবর্তী হইয়াই তুমি সুখী হইবে। কিন্তু যতই তুমি প্রকৃতি ও উহার নির্দেশকে মানিয়া চলিবে, ততই বদ্ধ হইবে। যতই তুমি অজ্ঞতার সহিত সঙ্গতি রাখিয়া চলিবে, ততই তুমি বিশ্বের সব কিছুর অধীন হইবে। প্রকৃতির সহিত এই সামঞ্জস্য, এই নিয়মানুগামিতাই কি মানুষের যথার্থ স্বরূপ ও নিয়তির সহিত সঙ্গতিসম্পন্ন? কোন খনিজ পদার্থ কখনও বিধি বা নিয়মের সহিত বিবাদ করিয়াছে? কোন বৃক্ষ অথবা চারাগাছ কখনও কোন নিয়ম লঙ্ঘন করিয়াছে? এই টেবিলটি প্রকৃতি ও নিয়ম মানিয়া চলে; কিন্তু ইহা সর্বদা টেবিলই থাকিয়া যায়, ইহা অপেক্ষা ভাল হয় না। মানুষ প্রকৃতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিতে আরম্ভ করে। সে অনেক ভুল করে, অনেক কষ্ট পায়। কিন্তু পরিণামে সে প্রকৃতিকে জয় করে এবং নিজের মুক্তি উপলব্ধি করে। যখন সে মুক্ত হয়, তখন প্রকৃতি তাহার দাস হয়।

বন্ধন সম্বন্ধে আত্মার সচেতন এবং শক্তিপ্রকাশে সচেষ্ট হওয়াকেই ‘জীবন’ বলে। এই সংগ্রামে সফলতাকেই বলে ক্রমবিকাশ। সর্বপ্রকার দাসত্ব দূর করিয়া পরিণামে জয়লাভ করাকেই ‘মুক্তি’, ‘মোক্ষ’ বা ‘নির্বাণ’ বলে। বিশ্বে সবই মুক্তির জন্য সংগ্রাম করিতেছে। যখন আমি প্রকৃতি, নাম-রূপ ও দেশ-কাল-নিমিত্ত দ্বারা বদ্ধ, তখন আমার যথার্থ স্বরূপ জানি না। কিন্তু এই দাসত্বেও আমার যথার্থ স্বরূপ সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয় না। আমি বন্ধনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করি; বন্ধনগুলি একে একে ভাঙিয়া যায়, এবং আমার স্বাভাবিক মহত্ত্ব সম্বন্ধে সচেতন হই। তারপরই আসে পূর্ণ মুক্তি। আমার স্বরূপ সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ও পরিপূর্ণ চৈতন্য লাভ করি—জানি যে, আমি অনন্ত আত্মা, প্রকৃতির প্রভু, কিন্তু প্রকৃতির দাস নই। সকল ভেদ ও সমবায়ের অতীত, দেশ কাল ও নিমিত্তের অতীত ‘আমি সেই আত্মা, আমি সেই ব্রহ্ম।’