২৮. সত্য এবং ছায়া

দেশ, কাল ও নিমিত্ত এক বস্তু হইতে অপর বস্তুর পার্থক্য নির্ণয় করে। পার্থক্য আকারেই বিদ্যমান, বস্তুতে নয়। রূপ (আকার) বিনষ্ট হইলে উহা চিরতরে লোপ পায়; কিন্তু বস্তু একরূপই থাকে। বস্তুকে কখনও ধ্বংস করিতে পারে না। প্রকৃতির মধ্যেই ক্রম-বিবর্তন, আত্মায় নয়—প্রকৃতির ক্রমবিবর্তন, আত্মার প্রকাশ।

সাধারণতঃ যেরূপ ব্যাখ্যা করা হইয়া থাকে, মায়া সেরূপ ভ্রম নয়। মায়া সৎ, আবার সৎ নয়। মায়া সৎ, কারণ উহার পশ্চাতে প্রকৃত সত্তা বিদ্যমান, উহাই মায়াকে প্রকৃত সত্তার আভাস প্রদান করে। মায়ার মধ্যে যাহা সৎ, তাহা হইল মায়ার মধ্যে ওতপ্রোতভাবে বিদ্যমান প্রকৃত সত্তা। তথাপি ঐ প্রকৃত সত্তা কখনও দৃষ্ট হয় না; সুতরাং যাহা দৃষ্ট হয়, তাহা অসৎ, এবং উহার প্রকৃত স্বতন্ত্র সত্তা নাই, প্রকৃত সত্তার উপরেই উহার অস্তিত্ব নির্ভর করে।

অতএব মায়া হইল কূটাভাস—সৎ অথচ সৎ নয়, ভ্রম অথচ ভ্রম নয়। যিনি প্রকৃত সত্তাকে (সৎস্বরূপকে) জানিয়াছেন, তিনি মায়াকে ভ্রম বলিয়া দেখেন না, সত্য বলিয়াই দেখেন। যিনি সৎস্বরূপ জ্ঞাত নন, তাঁহার নিকট মায়া ভ্রম এবং উহাকেই তিনি সত্য বলিয়া জ্ঞান করিয়া থাকেন।