২৩. স্বার্থ-বিলোপই ধর্ম

বিশ্বের অধিকারসমূহ কেহ বণ্টন করিতে পারে না। ‘অধিকার’ শব্দটিই ক্ষমতার সীমা-নির্দেশক। ‘অধিকার’ নয়, পরন্তু দায়িত্ব। জগতের কোথাও কোন অনিষ্ট সাধিত হইলে আমরা প্রত্যেকে তাহার জন্য দায়ী। কেহই নিজেকে তাহার ভ্রাতা হইতে বিচ্ছিন্ন করিতে পারে না। যাহা ভূমার সহিত সংযোগ স্থাপন করে, তাহাই পুণ্য; এবং যাহা উহা হইতে আমাদিগকে বিচ্যুত করে, তাহাই পাপ। তুমি অনন্তের একটি অংশ, উহাই তোমার স্বরূপ। সেই অর্থে ‘তুমি তোমার ভ্রাতার রক্ষক’।

জীবনের প্রথম উদ্দেশ্য জ্ঞানলাভ, দ্বিতীয় উদ্দেশ্য আনন্দলাভ; জ্ঞান ও আনন্দ মুক্তির পথে পরিচালিত করে। কিন্তু যে পর্যন্ত না জগতের প্রত্যেকটি প্রাণী—পিপীলিকা বা কুকুর পর্যন্ত মুক্ত না হয়, ততক্ষণ কেহই মুক্তিলাভ করিতে পারে না। সকলে সুখী না হওয়া পর্যন্ত কেহই সুখী হইতে পারে না। যেহেতু তুমি ও তোমার ভ্রাতা মূলতঃ এক, অন্যকে আঘাত করিলে নিজেকেই আঘাত করা হয়। যিনি সর্বভূতে আত্মাকে ও আত্মাতে সর্বভূত প্রত্যক্ষ করেন, তিনিই প্রকৃত যোগী। আত্মপ্রতিষ্ঠা নয়, আত্মোৎসর্গই বিশ্বের উচ্চতম বিধান।

‘অন্যায়ের প্রতিরোধ করিও না’—যীশুর এই উপদেশ কার্যে পরিণত না করাতেই জগতে এত অন্যায় পরিলক্ষিত হয়। একমাত্র নিঃস্বার্থতাই এই সমস্যার সমাধানে সক্ষম। প্রচণ্ড আত্মোৎসর্গের দ্বারা ধর্ম সাধিত হয়। নিজের জন্য কোন বাসনা রাখিও না। তোমার সকল কর্ম অপরের জন্য অনুষ্ঠিত হউক। এইভাবে জীবন যাপন করিয়া ঈশ্বরে স্বীয় অস্তিত্ব উপলব্ধি কর।