১৪. হিন্দু দর্শন

ডেট্রয়েট ফ্রী প্রেস, ১৬ ফেব্রুআরী, ১৮৯৪

মানরা যখন জেরুজালেম ধ্বংস করে, তখন বহু সহস্র য়াহুদী ভারতবর্ষে আসিয়া বসবাস করে। আরবগণ কর্তৃক স্বদেশ হইতে বিতাড়িত হইয়া বহু সহস্র পারসীকও ভারতে আশ্রয় পায়, কেহই নিপীড়িত হয় নাই। হিন্দুরা বিশ্বাস করে—সকল ধর্মই সত্য। তবে তাহাদের ধর্ম অপর ধর্মসমূহ অপেক্ষা প্রাচীনতর। ইংরেজ মিশনরীদের প্রথম দলটিকে ইংরেজ সরকার যখন জাহাজ হইতে ভারতে নামিতে বাধা দেন, তখন একজন হিন্দুই তাঁহাদের হইয়া দরবার করিয়া তাঁহাদিগকে নামিতে সাহায্য করেন। যাহা সব কিছু মানিয়া লয়, তাহাই তো ধর্মবিশ্বাস। বক্তা অন্ধের হস্তী দর্শনের সহিত ধর্মমতের তুলনা করেন। এক একজন অন্ধ হাতীর দেহের এক একটি অংশ স্পর্শ দ্বারা অনুভব করিয়া হাতী কি রকম, তাহার সিদ্ধান্ত করিয়া বসিয়াছিল। নিজের অভিজ্ঞতার দিক্ দিয়া প্রত্যেকের উক্তিই সত্য হইলেও হাতীর সামগ্রিক বর্ণনা তো কোনটি হইতেই পাওয়া যায় নাই। হিন্দু দার্শনিকরা বলেন, ‘সত্য হইতে সত্যে, নিম্নতর সত্য হইতে উচ্চতর সত্যে।’ সব মানুষ কোন এক সময় একই রীতিতে চিন্তা করিবে, ইহা যাঁহারা আশা করেন তাঁহারা অলস স্বপ্ন দেখিতেছেন মাত্র। এরূপ অবস্থা উপস্থিত হইলে ধর্মের মৃত্যু ঘটিবে। প্রত্যেক ধর্মই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হইয়া পড়ে, আর প্রত্যেকটি দল দাবী করে যে, উহাই সত্য এবং অপরেরা ভ্রান্ত। বৌদ্ধধর্মে অপর মতাবলম্বীদের উপর নিপীড়ন অবিদিত। বৌদ্ধধর্মই প্রথম নানা দেশে প্রচারক পাঠায় এবং বলিতে পারে যে, লক্ষ লক্ষ লোককে এক বিন্দু রক্তপাত না করিয়া স্বমতে আনিয়াছে। নানা দোষ এবং কুসংস্কার সত্ত্বেও হিন্দুরা কখনও অন্যের উপর অত্যাচার করে নাই। বক্তা জানিতে চান, নানা খ্রীষ্টান দেশের সর্বত্র যে-সর্ব অসাম্য রহিয়াছে, খ্রীষ্টধর্মাবলম্বীরা ঐগুলি অনুমোদন করেন কিভাবে?