৬৬. ইন্দ্রিয়-অগ্রাহ্য কিরূপে ইন্দ্রিয়-গ্রাহ্য হইবে?

আঘাতের মাত্রা অনুসারেই উত্তেজনা-প্রবাহের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটিয়া থাকে। এরূপ অনেক ঘটনা ঘটিয়াছে যাহা আমাদের ইন্দ্রিয়েরও অগ্রাহ্য। আলো যখন ক্ষীণ হইতে ক্ষীণতর হয় তখন দৃশ্য অদৃশ্যে মিলিয়া যায়। তখনও চক্ষু আলোক দ্বারা আহত হইতেছে সত্য, কিন্তু অতি ক্ষীণ উত্তেজনা-প্রবাহ স্নায়ুসূত্র দিয়া অধিক দূর যাইতে না পারিয়া নিদ্রিত অনুভূতি-শক্তিকে জাগাইতে পারে না। ইন্দ্রিয়-অগ্রাহ্য কি কোনোদিন ইন্দ্রিয়-গ্রাহ্য হইবে? ক্ষণিকের জন্য একদিন যাহার সন্ধান পাইয়াছিলাম তাহা তো আর দেখিতে পাইতেছি না! কি করিয়া তবে দৃষ্টি প্রখর হইবে, অনুভূতিশক্তি বৃদ্ধি পাইবে?
অন্য দিকে বাহিরের ভীষণ আঘাত অনুভূতি- শক্তি বেদনায় মুহ্যমান, সেই যন্ত্রণাদায়ক প্রবাহ কিরূপে প্রশমিত হইবে? হে ভীরু, যদিও তুমি একদিন মরিবে তথাপি অকাল-শঙ্কা-হেতু শত শত বার মৃত্যুযাতনা ভোগ করিতেছ। যদিও বহির্জগতের আঘাত তুমি নিবারণ করিতে অসমর্থ, তথাপি অন্তর্জগতের তুমিই একমাত্র অধিপতি। যে পথ দিয়া বাহিরের সংবাদ তোমার নিকট পৌঁছিয়া থাকে, কোনোদিন কি সেই পথ তোমার আজ্ঞায় এক সময়ে প্রসারিত এবং অন্য সময়ে একেবারে রুদ্ধ হইবে?
কখনও কখনও উক্তরূপ ঘটনা ঘটিতে দেখা গিয়াছে। মনের বিক্ষিপ্ত অবস্থায় যাহা দেখি নাই কিংবা শুনি নাই, চিত্তসংযম করিয়া তাহা দেখিয়াছি অথবা শুনিয়াছি। ইহাতে মনে হয়, ইচ্ছানুক্রমে এবং বহুদিনের অভ্যাসবলে অনুভূতি-শক্তি বৃদ্ধি পাইয়া থাকে। যখন স্নায়ুসূত্র দিয়াই বাহিরের খবর ভিতরে পৌঁছায় তখন স্নায়ুসূত্রের কি পরিবর্তনে অর্ধ-উন্মুক্ত দ্বার একেবারে খুলিয়া যায়? অন্য উপায়ও হয়তো আছে, যাহাতে খোলা দ্বার একেবারে বন্ধ হইয়া যায়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *