২. পীড়িতের সেবা

পীড়িতের সেবা
পরিচ্ছন্নতা ঔষধপত্র

১ম বন্ধু–বন্ধু, পীড়িতের সেবা সম্বন্ধে কিছু বলো।

২য়–পরিবারে যদি কারো অসুখ হয় তবে তাকে একা একা অবহেলিত অবস্থায় ফেলে রাখা যারপরনাই অন্যায়। ভদ্র পরিবারের এটি নিয়মই নয়। ছোট হোক, বড় হোক, বুড়ো হোক, যুবক হোক-পীড়িত হলে বাড়ির আর সকলের উচিত–তার কাছে যেয়ে বসে সহানুভূতি জানানো, কথা বলে তার বেদনার উপশমের চেষ্টা করা। রোগী যদি কথা না বলে, অবস্থা যদি বিশেষ খারাপ হয়, তবে তার কাছে একজন না একজন চুপ করে বসে থাকা উচিত। রোগীকে একা একা ফেলে রেখে–যে যার মতো হাসি ঠাট্টা বা সাংসারিক কার্যে ব্যস্ত থাকা ঠিক নয়। ২/১ জনের উপর সেবার ভার পড়লে তার কষ্ট হতে পারে, পরিবারে পালা করে পীড়িতের সেবার ভার গ্রহণ করবে।

১ম–রোগীর যত্ন সম্বন্ধে আরো কিছু বলল।

২য়–এ সম্বন্ধে সমস্ত কথা এখানে বলা অসম্ভব। তবে যেগুলি প্রত্যেক যুবক-যুবতীর জন্য দরকার তাই বলছি। নোংরা বিছানাপত্র, চাঁদর, বালিশের ওয়াড় নিতান্ত অশান্তিজনক পরনের বস্ত্র কোনোমতে মলিন থাকা ঠিক নয়। গায়ে ময়লা, মাথায় চুলগুলি জড়ানো গোছের ময়লা, এলো-মেলো এসব বড়ই মন্দ।

১ম–ভালো সুস্থ লোকেরাও তো এসব গ্রাহ্য করেন না।

২য়–পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা প্রত্যেকেরই উচিত। এলোমেলো বিছানা-পত্র, ধুলা বালিতে ভরা ঘর, ময়লা কাপড়, বালিশ বর্জন করতে হবে। চুল আঁচড়ালে অনেক বুড়া তোক বিরক্ত হয়। ফচকে এবং অসভ্য বলে। কিন্তু যারা এরূপ বলে তারা অন্যায় করেই বলে। চুলগুলি পরিষ্কার করলে, পোশাক-পরিচ্ছদ আধুনিক সভ্যতা অনুযায়ী করলে অসভ্যতার পরিচয় দেওয়া হয়–এরূপ মনে করা অন্যায়। নোংরা ময়লা পোশাকে থেকেও অনেকে পাপ চিন্তা পোষণ করে। নোংরা থাকাতেই মনুষ্যত্ব সূচিত হয় না। হ্যাঁ, যা বলছিলাম রোগীদের কথা। কোনো কোনো লোকের ধারণা ব্যাধি আপনা আপনি সেরে যাবে–এজন্য অনেক সময় রোগীদের প্রতি অবহেলা হয়ে থাকে। তারা এভাবে ভুগে ভুগে বেঁচে উঠবে। কিন্তু দুর্বলের প্রতি নিছক অত্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়। চিকিৎসার অবহেলায় মানুষ মারা যায়। ঔষধ আল্লাহর দান। সুতরাং সেগুলি উপযুক্ত সময়ে ব্যবহার

করলে আলাহ্র দানের সদ্ব্যবহার করা হয় না। কোনো কোনো কৃপণ পীড়িতের জন্য টাকা খরচের বেলায় অতিশয় সাধ হয়ে বলেন–”খোদা আয়ু দিলে কে রোগীকে মারে?” আহারের যেমন শরীর রক্ষার ক্ষমতা আছে, ঔষধেরও তেমনি শরীরকে বাঁচিয়ে রাখবার ক্ষমতা আছে। মূর্খেরাই ঔষধকে অবহেলা করে, অসময়ে স্বাস্থ্য হারায়। ত্রিশ বৎসরের পর থেকে অর্থাৎ বিবাহিতদের শরীর অটুট স্থাস্থ্যসম্পন্ন বলতে হলে এবং যাদের স্বাস্থ্য অক্ষুণ্ণ আছে তাদেরও শরীরে ক্ষয় নিবারণের জন্য বিশেষ বিশেষ পুষ্টিকর কবিরাজী ও হেকিমী ঔষধ সেবন আবশ্যক–এতদ্ভিন্ন নারী উভয়ের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য সেবন, বিজ্ঞ বৈদ্যের সুপরামর্শ সত্বরই আবশ্যক। একটা লঙ্কা মরিচ, পচা ডাল, একটু টক দিয়ে কাজ সেরে নেবার অভ্যাস মেয়েদের আছে। এর ফল অতিশয় খারাপ–একথা প্রত্যেক বুদ্ধিমান লোকের ধারণা বোঝা উচিত। এতে শরীর দুর্বল হয়, শরীরের অবশ্য সৌন্দর্য নষ্ট হয়। আরও গুরুতর কথা দুর্বল স্বাস্থ্য-শক্তিহীনা নারীর গর্ভে সন্তানেরা কখনও বলশালী ও স্বাস্থ্যবান হয় না।

১ম–বধূরা, অনেক সময় শাশুড়ীদের কোনো যত্ন নেন না। রোগ-ব্যামো হলে ফিরে তাকান না।

২য়–হ্যাঁ ঠিক, বধূ ও পুত্রবধূতে অনেক পরিবারে একটা বিরোধ লেগে থাকে। এটা বড়ই অন্যায়। বন্ধুদের মনে রাখা উচিত, এই দুর্ব্যবহারের ফলে পরিবারে এমন একটা আবহাওয়া গড়ে উঠবে, যে আবহাওয়ায় নূতন বধূরা এসে তারা যখন বুড়ো হবেন তাদের সঙ্গে ঠিক তারা ঐরূপ ব্যবহার করবেন। যে পরিবারের বা মেয়েরা পরস্পরে প্রেম-পূৰ্ণ ব্যবহার করে, নূতন কোনো লোক ভর্তি হলে, তার ব্যবহার ও রুচি ঠিক ঐ পরিবারের মতো হয়; কোনো মন্দ পরিবারে ভালো লোক এসেও মন্দ হয়ে যায়।

শাশুড়ীদের সঙ্গে বধূদের বিলক্ষণ বন্ধুত্ব হওয়া চাই–পরস্পরে প্রীতি ভালোবাসার সুনিবিড় বন্ধন গড়ে চাই। যখন ছেলেরা বড় হয়ে ওঠে তখন বুড়া মাতার সঙ্গীহীন জীবনের বেদনা বন্ধুদের কলহাসি, তাদের প্রেম ও শ্রদ্ধা, সহানুভূতি ও সরল ব্যবহারে বহু পরিমাণে লাঘব হবে। বুদ্ধিমতী বধূদের এটি বিশেষ করে মনে রাখা চাই। যখন জীবন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে সংসারে আকর্ষণ কিছু নাই–ছেলেরা সংসারের কাজে যেখানে সেখানে ছুটে আসে না–তখন তাদের জীবনকে সরস ও মধুর করে তুলতেই হবে–এটি প্রত্যেক বধূর অবশ্য কর্তব্য। শুধু স্বামী ও নিজের ছেলেমেয়ে নিয়ে মত্ত থাকলে চলবে না।

১ম–কোনো কোনো শাশুড়ী নিজের মেয়েদেরকে ভালোবাসেন–পরের মেয়ে অর্থাৎ বধূদেরকে দুই চোখে দেখতে পারে না।

২য়–সেটিও ভালো নয়। তবে বধূদের বিশেষ করে স্মরণ রাখতে হবে যেন তাদের দোষে শাশুড়ীর সঙ্গে কোনো বিরোধ না হয়। গুরুজনের কাছে বিনয় স্বীকার করা। উত্তম-শাশুড়ীর কোনো দোষ-ত্রুটি নিয়ে ভাবা, গোস্বা করা বা আন্দোলন করা ভদ্ৰমেয়েদের কাজ নয়। শাশুড়ী ও বধূদের মধ্যে বিরোধের একটি কারণ হচ্ছে অভাবী। অভাব চিরদিন থাকে না–অভাবে যারা অসহিষ্ণু হয়, সহিষ্ণু হয়ে উন্নতির চেষ্টা করে না–তাদের মধ্যেই ঝগড়া ফ্যাসাদ দেখা দেয়। পরের মেয়েকে নিয়ে চিরদিন ঘর করতে হয়–সুতরাং তাদেরকে অবিশ্বাস করা ভালো নয়। তারা তো অতিথি বৌ নয়-শাশুড়ী যদি তাদেরকে বুকে করে না রাখেন, তবে তারা কীসের বলে টিকে থাকবে?

.

দেশলাই-এর আগুন

২য় বন্ধু কহিলেন–সময়ের পূর্বে ক্রুদ্ধ হয়ো না, কারো সঙ্গে বিবাদ বাঁধিও না। শক্তিহীনের ক্রোধের শেষ ফল মৃত্যু-সর্বস্বান্ত হওয়া। সংসারে কাজ করতে হলে লোকের সঙ্গে ঝগড়া হবেই–তবে কখনও সীমা অতিক্রম করো না। নিজের অবস্থা ও শক্তি বুঝে লোকের সঙ্গে বিবাদ করো–অযথা আস্ফালন করে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনা ঠিক নয়। শক্তিমান ও ক্ষমতাশালী হয়ে দুর্বলের উপর অত্যাচার করতে হবে তা বলছি না, তবে তখন দুর্বত্তের সঙ্গে, শয়তানের সঙ্গে বোঝাঁপড়া করবার যোগ্যতা জন্মে? সহিষ্ণু হওয়া উত্তম-ধীরে ধীরে কাজ করতে থাক্‌ শক্তি সঞ্চয় করে, যে আজ দা নিয়ে তোমার মাথা কাটতে এসেছে, তোমাকে ব্যথিত ও অপমানিত করছে, দশ বৎসর পরে সে শক্তিহীন ও দুর্বল হয়ে তোমার চরণে এসে আশ্রয় নেবে। তখন প্রতিশোধের আনন্দে তাকে চেয়ে দেখো না–ক্ষমা প্রেমে তাকে আশ্রয় দিও–তারই নাম মহত্ত্ব। মনে মনে বহু বৎসর ধরে ক্রোধ করে রাখা ঠিক নয় ক্রোধকে দমন করা কঠিন। কিন্তু তবু বলি ক্রোধ দমন কর। মানুষের মূল্য কেউ চাপা দিয়ে রাখতে পারবে না। কেউ যদি তোমাকে উপহাস করে বা শালা’ বলে গালা-গালি দেয় নীরবে চুপ করে থাক।-তোমার কোনো মূল্য যদি থাকে তবে শীঘ্রই তোমার আসন উচ্চ হবে, মানুষ তোমাকে সমাদর করবেই। কেউ কেউ তোমার গুণ সম্বন্ধে অন্ধ হতে পারে। জগতের মানুষ তোমার গুণ, কার্য শক্তি, সহিষ্ণুতা ও পরিশ্রমের মূল্য দেবেই। যারা তোমাকে নীচু ছোট বলে উপহাস করেছিল তারাই তোমার কৃপার ভিখারি হবে।

.

ভূঁইফোড় মানুষ

১ম বন্ধু কহিলেন–বন্ধু, কোনো কোনো ইতর ভূঁইফোড় লোকের কথা শুনে মনে বড় রাগ হয়। কাল যাকে হাতে ধরে মানুষ করলাম, যাকে নেংটা হয়ে খেলা করতে দেখলাম, তার বেয়াদবি এবং দাম্ভিক ব্যবহার অসহ্য মনে হয়। ইচ্ছা হয় শাস্তি দি, কড়া কথাই শুনাই।

২য় বন্ধু–তা ঠিক নয়। মানুষ যৌবনে পদার্পণ করে, যখন সবে ছেলেবয়স অতিক্রম করে মানুষ হয়ে ওঠে–তখন সে জগৎকে, মানুষকে তৃণ জ্ঞান করে। অধিকাংশ লোকেরই এরূপ ভুল হয়-এমনকি, যারা শিক্ষিত ও বিশিষ্ট লোক তারাও জ্ঞানের প্রথম উন্মেষে অতিশয় মতসর্বস্ব হন। কারও কথা সহ্য করতে পারেন না। এই তো গেল সাধারণ লোকের অবস্থা-এ হচ্ছে মানুষের স্বভাব। এদের ভুল-ত্রুটি দোষ বা এদের সঙ্গে ব্যবহার করতে যেয়ে বুদ্ধিমান লোকের কখনও বিরক্ত হন না। মানুষের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করে যেতে হয়। সংসারে বহু মানুষের সঙ্গে না মিশলে, অনেক অভিজ্ঞতা ও আঘাত-বেদনা না পেলে মানুষও হয় না–নিজের দোষ ও দৈন্য বুঝতে পারে না। অল্প বয়সে বা যুবক বয়সে অজ্ঞাতসারে অনেক দোষ করেন, যা বুঝতে পারেন অনেক বিলম্বে।

‘ভূঁইফোড়’ অর্থাৎ হঠাৎ বেড়ে ওঠে, তাদের ব্যবহার অনেক সময় খুব অপ্রীতিকর হয়–কিন্তু তাই বলে, প্রকাশ্যে কাউকে ভূঁইফোঁড়, ছোটলোক বা ইতর–এসব বলতে নেই। যে যেমন আছে, তা মনে মনে অনুভব করতে হয়। বাইরে সকলের সঙ্গেই ভদ্র ব্যবহার করা নিয়ম, কাউকে ছোটলোক বা ইতর–এসব বলতে নেই। বাইরে সকলের সঙ্গেই ভদ্র ব্যবহার করা নিয়ম, কাউকে ছোটলোক, কমজাত বলে মুখের উপর গালি দেওয়া কোনোমতে দ্ৰতা নয়। এরূপ করলে মানব সমাজের বড়ই ক্ষতি হয়। প্রেমের দ্বারা জগতের কল্যাণ ও মানুষের মঙ্গল সম্ভব। একটি উদ্ধত যুবক বা কোনো ভূঁইফোড় যদি নিজেকে মহামান্য মনে করে বা অসত্যের মতো ব্যব রি তবে, তার সংস্রব পরিহার করে চলতে পারে, কিন্তু কোনোমতে তার সঙ্গে অভদ্র ও নিষ্ঠুর ব্যবহার করে না, কারণ মনুষ্যত্বের ধর্ম তা নয়। বয়স্ক লোকদের স্বভাব তা নয়। একটু থামিয়া কহিলেন, কোনো কোনো সময় মানুষ সালাম না করলে মনে রাগ হয়। সালাম না করলে কারোর উপর ক্রুদ্ধ হয়ো না বরং তার সঙ্গে অধিক অধিক প্রেমের সঙ্গে কথা বলে। তবে একথা সত্য যে, সালাম কাজটি ভালো, বিশেষ প্রবীণ আত্মীয়ের কদমবুসি করাও উত্তম। ধনী দেখে সম্মানের জন্য ব্যস্ত হওয়া, আর.দরিদ্রকে উপেক্ষা করা ঠিক নয় বরং দরিদ্র ভদ্রলোককেই অধিক সম্মান কর। মন যদি কাউকে সম্মান করতে না চায়, লোক দেখাদেখি করে সম্মান করো না। . জমিদার, ধনী, রাজকর্মচারী অপেক্ষা মানব-প্রেমিক, দেশ-সেবক, সাহিত্যিক, পণ্ডিতকে সব সময় অধিক সম্মান করো। কখনও চাটুকার নীচ ব্যক্তিদের মতো স্বার্থের গন্ধে কারো খোশামোদ করো না–বাইরে চাকচিক্য দেখে জিনিসকে অবজ্ঞা করো না।

বন্ধু, বাইরের কোনো বিধান, পুস্তকের কোনো বাক্য মানুষকে কী কৰ্তব্য কী অকর্তব্য, তা বলে দিতে পারে না। সমস্ত সময় মনকে জিজ্ঞাসা কর, কারণ মন আল্লাহর আসন–এখানে তার বাক্যের ধ্বনি জাগে।

.

পত্নীর আত্মীয়-স্বজন

১ম বন্ধু কহিলেন–একটা যুবকের কথা জানি, সে তার শ্বশুরকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিল এবং পত্নীকে বাপের বাড়ি যেতে দেয় না।

১ম বন্ধু–সে বড় অন্যায় কথা। পত্নীর পিতা এবং তার আত্মীয়স্বজন মাত্রকেই সম্মান করা উচিত। যিনি তা করেন না, তিনি বড়ই অন্যায় করেন। যারা তোমার পত্নীকে বাল্যকালে ভালোবেসেছে; সোহাগ করেছে, তার মঙ্গল কামনা করেছে, তাদের অসম্মান করা ভদ্রতা নয়। কোনো কারণে জামাই আপন শ্বশুরের উপর বিরক্ত হতে পারেন; কিন্তু তাই বলে অজ্ঞতার পরিচয় দেওয়া কোনোমতে উচিত নয়। পত্নীকে আটক করে রাখা, অশ্লীল ভাষায় গালি দেওয়া কখনও ভদ্রলোকের কাজ নয়–সেটা দেখতে বড়ই অশোভন। শ্বশুরের উপর বিরক্ত হবার কারণ হলে, তাদের বাড়ি না যেতে পারে। পত্নীর পিতা বা আত্মীয়স্বজনকে শ্রদ্ধা করতে যদি লজ্জা হয়, তবে বুঝতে হবে, তোমার পত্নী নির্বাচন ঠিক হয় নাই–সে বিবাহে খুব সম্ভব তোমার কখনও সুখ হবে না।

কতকগুলি লোকের স্বভাব এই যে, তারা আত্মীয়স্বজন দেখলে বিরক্ত হয়–তাদেরকে এড়িয়ে চলতে পারলে ছাড়ে না। জীবনে যদি অতিথি-কুটুম্ব দেখে ঘরে দরজা দিতে হয়। তার চাইতে মরণ ভালো। এটা বিলাত নয়, এদেশের নিয়ম, মানুষ মানুষের বাড়ী যায়। আত্মীয়তা করে। অবশ্য নিতান্ত আত্মীয় না হলে কারো বাড়ি যেয়ে কষ্ট না দেওয়া ভালো, কিন্তু নিতান্ত আপনার জনকে আদর-যত্ন করতেই হবে।

১ম বন্ধু–আত্মীয়-স্বজনকে কীভাবে আদর-যত্ন করতে হবে?

২য় বন্ধু–নিজের অবস্থা অনুযায়ী আত্মীয়স্বজনকে আদর করতে হবে। ক্ষমতার অতিরিক্ত করে কুটুম্বকে ভক্তি জানাবার দরকার নেই। পরম আত্মীয় যারা, তারা খাবার দাবার আয়োজনের চাইতে অনাত্মীয়ের সঙ্গসুখ ভালবাসেন। অতিরিক্ত কষ্টস্বীকার ভদ্রতা ও সৌজন্যের ফল পরস্পরের প্রতি বিরক্তি। ক্ষমতাশালী শ্বশুর বা কোনো বিশিষ্ট আত্মীয় যারা কৃচিৎ আসেন তাদের প্রতি একটু বেশি রকম শ্রদ্ধা দেখানোই উচিত। কিন্তু ক্ষমতার অতিরিক্ত কোনো কিছু করা প্রয়োজন নাই।

১ম বন্ধু–জামাই-এর আত্মীয়-স্বজনকে কন্যাপক্ষকে কিরূপ খাতির তোয়াজ করা উচিত? শুনেছি এক বাড়িতে জামাতার বাবা এলেন, দাবি দিয়ে তাকে আনা দুই পয়সা দিতে বলা হলো, কিন্তু কিনে খান গিয়ে, বাড়ীর কোনো লোক এসে তার সংবর্ধনা করলেন না। বুড়া বেগতিক দেখে ছেলেকে দোয়া করতে বাড়ি এলেন।

২য় বন্ধু–কলকাতায় এরূপ গল্প শুনতে পাই বটে, তবে এসব অতি কৃচিৎ ঘটে। পাশ্চাত্যসভ্যতার নামে কোনো কোনো যুবক অতিমাত্রায় অসভ্য হয়ে ওঠে–এ যে ইংরেজি শিক্ষার ফল–তা নয়। শিক্ষার নামে তারা কোনো কোনো সময় অজ্ঞাতসারে বড় অসভ্য হয়ে ওঠে–ইংরেজ জাতি পত্নীকে অতিশয় সমাদর করেন–পত্নীর বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে তারা অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠেন–কিন্তু একথা ঠিক যে, বিলাতি মেয়েরা ধর্ম জলাঞ্জলি দিয়ে কখনও কর্তব্যভ্রষ্টা হন না। কোনো কোনো শ্বশুরের ধারণা উচ্চশিক্ষিত জামাতা পত্নীকে নয়নতারা মনে করেন, জগৎ ত্যাগ করেন, পত্নীকে ত্যাগ করেন না–এই সাহসে তার, এমন কি জামাতার পিতাকে পর্যন্ত অপমান করেন। মূর্খ অসভ্য ছেলেরা বাস্তবিক পরী-প্রেমে নিজের আত্মীয়স্বজনের অপমান অকাতরে সহ্য করে-এ বড় লজ্জার কথা। পত্নী অতিশয় ভালোবাসা দোষের নয়। কিন্তু পত্নীর ভালবাসায় নিজের পিতামাতা, আত্মীয়স্বজনের অপমান সহ্য করা কাপুরুষের কাজ। এরূপ-শ্বশুর-শাশুড়ীর সঙ্গে কোনো সম্বন্ধ না রাখাই উচিত।

.

আত্মীয়তা-লৌকিকতা

২য় বন্ধু–বন্ধু, আজ আত্মীয়তা সম্বন্ধে কিছু বলতে চাই।

১ম বন্ধু–হ্যাঁ বল। এখন কোনো বাধাবিঘ্ন নাই, এ ঘরের রাজা আমরা।

২য় বন্ধু–ভালো, পত্নীর কাছে কোনো চিঠিপত্র লিখেছ?

১ম বন্ধু–না, কোনো ইচ্ছাও নাই।

২য় বন্ধু–সে কী কথা! খোকা কেমন আছে–তারা কেমন আছে, এসব জানা দরকার।

১ম বন্ধু–আমি কেমন থাকি, সে কথা কি সে জিজ্ঞাসা করে?

২য় বন্ধু–নারী পরাধীনা, দুর্বল দাসী। যে স্বাধীন, বন্ধু প্রিয়তম এবং মুরুব্বী সেই কুশল জিজ্ঞাসা করতে পারে, জান না, গোলাম সালাম করতেও ভাবে-এতেও বুঝি প্রভু রাগবেন। জান না, পরমুখাপেক্ষী দাসের অবস্থা কী ভয়ানক। নারী তো দাসী–সে আবার -তোমার কী কুশল জিজ্ঞাসা করবে?

১ম বন্ধু–কালই পত্র লিখব।

২য় বন্ধু–হ্যাঁ লিখে দাও–খোকা কেমন আছে? আশ্বিন মাসে তুমি তাকে আনতে যাবে।

১ম বন্ধু–ওসব ঝঞ্ঝাট দিয়ে আর কী প্রয়োজন?

২য় বন্ধু–বিবাহ করেছ, কিন্তু দাম্পত্য ধর্ম কী তা জান না!

১ম বন্ধু–আচ্ছা কালই লিখব। এখন তোমার কথা বল।

২য় বন্ধু–আত্মীয়তা জিনিসটা করাই চাইহিংসা, ক্রোধ, কিংবা খরচের ভয়ে চোখ কান খুঁজে থাকা ভদ্রলোকের শোভা পায় না-ভগ্নিকে বিয়ে দিয়ে বনবাসে দেওয়ার মতো তার কোনো খোঁজ না রাখা, বড় অন্যায়। কোনো কোনো পিতা থাকেন–মনে করলাম, ও মেয়ে মেরে গেছে-বাঁকা হয়ে থাক। এও বড় খারাপ কাজ। কোনো কারণে মেয়ের বাড়ী যাবার কোনো বাধা থাকলে, অন্ততঃ পুত্রদিগকে হামেশা মেয়ের খোঁজ নেবার জন্যে অনুরোধ করা নিতান্ত দরকার। মেয়েকে পুনঃপুনঃ নিজের বাড়িতে আনবার জন্যে পীড়াপীড়ি করা ভালো না–কিন্তু তার সংবাদ গ্রহণ করতেই হবে। নিতান্ত দরিদ্র হলেও জিনিসপত্র উপহার জামাতার বাড়ীতে পাঠাতে ত্রুটি করতে নেই। কিন্তু ক্ষমতার অতিরিক্ত কিছুই করো না। জামাইকে খাতির করা, তাকে সঙ্গতি অনুসারে উপহার দেওয়া উত্তম।

তবে জামাই-এর শ্বশুর বাড়ির কোনো উপহারের প্রতি লোভ করা ঠিক না। এ দাও, ও দাও, এরূপ কোনো কথা বলে নিজের মর্যাদা বা গুরুত্ব নষ্ট করো না।

মাতা ও পিতার পুরাতন ছোট-বড় আত্মীয়ের সংবাদ রাখা, তাদের সঙ্গে যোগ রাখা, ভদ্রলোকের পক্ষে নিতান্ত দরকার। যে সকল বড়লোক আত্মীয়ের কাছে তাঁদের নাম করা এবং দরিদ্রদেরকে ঘৃণা করা কোনোমতে ঠিক নয়।

অত্যধিক আত্মীয়-প্রীতির ফলে অপরিচিত ব্যক্তি বা অন্যের উপর অত্যাচার করবার স্বভাব কোনো কোনো লোকের আছে–এটা সম্পূর্ণ ইসলামের খেলাপ। তোমার উপর সকলেরই দাবি আছে। নিতান্ত অপরিচিত যে–সেও মনুষ্যরূপে তোমার আত্মীয়-স্বজন যুগ যুগ ধরে তোমার বিপদে ও সুখে সহানুভূতি জানিয়েছে–তোমার জয়ে আনন্দ করেছে–তোমার লাঞ্ছনায় দুঃখে পেয়েছে তাদেরকে ত্যাগ করো না-ভুলো না।

দিবারাত্রি টাকার লোভে পথে পথে ঘুরে বেড়ান–শুধু কাজ আর কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকা–কারো সঙ্গে কথা বলবারও সময় না পাওয়া মানুষের জীবন নয়, প্রতিদিন কিছু সময় এবাদত বন্দেগীর জন্য ব্যয় করা, অর্থাৎ আল্লাহ সম্বন্ধে, আত্মার অসত্যে, ধ্যান করা, পত্নীর সঙ্গে কিছু সময় আলাপ করা মায়ের সঙ্গে, পরিবারবর্গের সঙ্গে কথা বলা বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে হাসি ঠাট্টা বা গল্প আলাপ করা … মাঝে মাঝে, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করা নিতান্তই দরকার। আত্মীয়তা-লৌকিকতা, এসবও জীবনে দরকার।

পত্নী ও মাতার জীবনকে কাজের টানে নিঃসঙ্গ করে তোলা বড়ই অন্যায়। পত্নী ও মাতার জীবনে যত সময় একটা কঠিন অভাব থাকে সেটি আর কোনো কিছু দিয়ে পূরণ করা হয় না। ব্যস্ততা, কাজ, এর মধ্যে স্মরণ করতেই হবে। পরিবারস্থ ব্যক্তিগণের সঙ্গেও কিছু সময় ব্যয় করতে হবে।

কোনো কোনো অন্তঃসারশূন্য ব্যক্তির আলাপে ও ভদ্রতায় কোনো প্রাণ নাই। এরা কাজের মতই লৌকিকতা পালন করেন–এঁরা যে কত বড় অমানুষ!

বাড়ির বৈঠকখানা অপরিষ্কার রেখে কখনও বাড়ির মধ্যে সেজে থেকো না, পাছে লোকে ডাক দেয়, পাছে বাড়ির অতিথি আসে–এই ভেবে বাহির বাড়িতে দেখা দিতে ভয় করো না। জেনো, যে অতিথি দেখে ভয় করে–সে নিজেকেও অন্ন দিতে সমর্থ হবে না। যদি কিছু দিনের জন্য অবস্থা খারাপ হয়–সবিনয়ে অতিথির কাছে ক্ষমা চাও-বন্ধু-বান্ধবকে চা বিস্কুট না দিয়ে শ্যামল তৃণবনে এক সঙ্গে অন্তত কিছুক্ষণ গল্প কর-এতে পয়সা খরচ হবে না। মনুষ্য চা-বিস্কুট খেতে চায় না-মনুষ্য চায় প্রাণ, সরল আলাপ, সহানুভূতি। এগুলি বিনামূল্যের দান–এ দিতেও যদি কৃপণতা করতরে বৃথা তোমার জীবন।

সুখ-দুঃখ চক্রের মতো মানুষের জীবনে ঘুরতে থাকে। চিরদিনই যে মানুষ দুঃখী থাকবে, এমন কোনো কথা হতে পারে না। বৈধ যে কোনোভাবে পয়সা অর্জন ক। নিজে খাও, পরিবারগণকে খেতে দাও, সুখী কর-প্রতিবেশীকে দান কর। দরিদ্র থেকো না–দরিদ্র থাকা অন্যায়। মানুষের ভয়ে লোক লজ্জায় সম্মান হারাবার ভয়ে দরিদ্র থেকো না।

নিজের ধূমপানের অভ্যাস না থাকলেও বন্ধু-বান্ধবের জন্য সে ব্যবস্থা করতে হয়। কখনও অতিথি বন্ধু-বান্ধবের সমেনে ধূমপানের অপকারিতা সম্বন্ধে কোনো বক্তৃতা দিও না। সেজন্য সভাগৃহ আছে। পান সবাই খান–সুতরাং পানের দ্বারা বন্ধু-বান্ধবের সংবর্ধনা উত্তম। এ সম্বন্ধে অনেক অবস্থাপন্ন লোকও কৃপণতা করে–সেটি ভালো নয়। অবস্থায় যদি না কুলায়, তবে পান প্রয়োজন নাই। কেউ কেউ বাড়িতে পানের গাছ লাগিয়ে থাকেন, এটি মন্দ কাজ নয়। যখন তখন কাজ চলতে পারে।

খাতির-সম্রম করা ভালো–কিন্তু অত্যাধিক ভালো নয়।

.

পত্নীর-সঙ্গে

২য় বন্ধু কহিলেন–বন্ধু এদেশীয়, লোকদের একটা নিয়ম আছে, তারা অন্যকে চরিত্র বল ও দাম্পত্য ধর্ম অপেক্ষা অধিক মূল্যবান মনে করে। যারা বড় লোক তাদের বউ-এর সঙ্গে বাস করবার অধিকার আছে, বাকি লোকগুলো নামে বিয়ে করবে; কিন্তু তাদের দাম্পত্য ধর্ম পালনের কোনো অধিকার নাই। নামে মাত্র বিয়ে করে পত্নীকে বাড়িতে রেখে বাবু কলকাতায়-বনিতার ঘরে ভাত খায়, চাকরি করে, officiating পত্নী দিয়ে কাজ চালায়, বাড়ীতে এসে দিব্যি তেড়ী কাটা, শাদা-কাপড় পরে। Wrapper গায়ে দিয়ে ভদ্রলোক হয়। অবশ্য হিন্দু সমাজেই এরূপ দেখেছি।

বিবাহের পর নিঃসঙ্গ জীবন-যাপন করা, কোনোমতেই ঠিক নয়। সে দীন মজুর হোক বা রাজা হোক, স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে যদি সংসারের দুঃখ ভাগ করে নেওয়া যায়, তাহলে জীবন এত দুঃখময় ও ভার বলে মনে হয় না। সংসারের সমস্ত উদ্বেগ যাতনা পুরুষ নিজের ঘাড়ে নেন বলে সংসারের এত দুঃখময় ও ভার বলে মনে হয় না। সংসারের সমস্ত উদ্বেগ যাতনা পুরুষ নিজের ঘাড়ে নেন বলে সংসার এত অশান্তির ও শূন্যময় মনে হয়। এ দায় গোলাম জাতির, নারী-পুরুষ উভয়কে গোলাম হতে হবে। যারা বাদশাহ ও শূন্যময় মনে হয়। এ দায় গোলাম জাতির নারী-পুরুষ উভয়কে গোলাম হতে হবে। যারা বাদশাহ বা নবাব তাদের বৌ বাক্সবন্দী হয়ে জড়-বিবি। বলতে কি মানব মাত্রেই গোলাম ও দাস–এখানে বাদশাহ বা নবাব হবার কোনোমতে অধিকার করো না। হাত, যেমন, অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যেমন–শরীরের ভার নয়-পত্নীও তেমনি স্বামীর পক্ষে ভার নয়,–ওটি শরীরের সঙ্গে প্রয়োজনীয় জিনিস ওটিকে সঙ্গে রাখতেই হবে-যেখানেই থাক, মাঠে-প্রান্তরে উন্মুক্ত আকাশতলে, পথে, গাছে, জঙ্গলে সর্বত্র স্বামী এবং পত্নী, একসঙ্গে থাক। কোনো ভয় নেই। তবে যেখানে তোমার হাত, সেইখানে যেয়ে দাঁড়িও না–দুঃখ পাবে বলতে কি, দুঃখ। কোনো-কোথাও নেই–নারী-পুরুষ যেখানে একসঙ্গে হাত ধরে দাঁড়ায়, সেখানে মঙ্গল। এবং কল্যাণ আসবেই। পরস্পর হাত ধরে দাড়িও, এই আমার অনুরোধ কোনো সময় একজন আর একজনের হাত ছেড় না। এক মুহূর্তের জন্যে নয়।

২য় বন্ধু–চরিত্রহীন হয়ে, নারী-জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ দাবিকে অস্বীকার করে বড় লোক হয়ে লাভ কী? একটা মৌলবীকে জানি, সে বাড়িতে পত্নীকে রেখে বৎসরের পর বৎসর বিদেশে কাটিয়ে দিত-সেখানে সে শুভ বিবাহ করে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতো। সে যদি বাড়ি চলে যেত এবং ইসলাম প্রচার না করতো, তাহলে ভালো ছিল। ইসলাম প্রচার মানে, মানুষকে কলেমা পড়ান নয়। ইসলাম প্রচার মানে–মানুষকে ন্যায়বান হতে বলা।

একটা পীর সাহেবকে জানি,–সে নামাজ পড়তো না–ইসলামের জন্য তার ভয়ানক লাফালাফি, চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ে! রাত্রিতে ঘুম হয় না!–তিনি ছোট বড় সুন্দর বালকদের সঙ্গে কুকার্য করেন।এ আমার চোখে দেখা। তার ঘরে একটা যুবতী পত্নী আছে–দশ বৎসর বাড়ি যান না, আবার আর একটি বিয়ে করবার জন্য ঘটকের সন্ধানে আছেন।

১ম বন্ধু–কী সর্বনাশ!

২য় বন্ধু–হা, সর্বনাশই বটে! জগতের ভিতরটা আলগা করে দেখতে গেলে ঘৃণায় মন বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। জগতের পাপের জন্য সাধু আত্মাদের আন্তরিক প্রার্থনা চাই-নইলে বহু পাপপূর্ণ পৃথিবীর কী হবে তা জানি না। জগতে চিরকালই পাপ আছে-হয়ত সাধু-আত্মাদের প্রার্থনাতেই জগৎ টিকে আছে। কোনো কোনো নারী স্বামীকে বিশ্বাস করে না। বাপ এবং ভাই এ মাকেই তারা পরম আত্মীয় মনে করে। এরূপ মনে করা নারী-জীবনের গুরুতর অপরাধ। স্বামীকে অবিশ্বাস করো না–তার চেয়ে হাত টেনে ধর-কখনও ছেড় না–এই বিশ্বাসের বলেই তোমার স্বামীর দেহে শক্তি জেগে উঠবে-বরকত আসবে।

কোনো না কোনো শিল্পকাজ নারীর শেখাই চাই। সংসারের কখন কী অবস্থা হয়, তা তো বলা যায় না। নিজের ভার এমন কি স্বামীর ভার তার সাবিত্রীর মতো নিজেকেও বহন। করতে হবে। স্বামীর ঘাড়ের উপর বৎসর বৎসর নূতন নূতন পুত্র বা কন্যার চাপান এবং তার মেরুদণ্ড দুমুড়ে দেওয়াই পত্নীর জীবনের সাধনা নয়। নারী কি নারী ধর্ম-নারী নিজের জীবনের সার্থকতা ও বিশেষত যেদিন অনুভব করবে ”সেদিন বড় আনন্দেন দিন”।

পীড়িত স্বামী ২য় বন্ধু কহিলেন–একটি নারী সুখের সময় স্বামীর পরম বন্ধু ছিলেন-তারপর স্বামী যখন পীড়িত হলেন, তখন তিনি নাকে কাপড় দিয়ে সরে গেলেন। তার মলমূত্র দেখে তার ভারি ঘেন্না বোধ হতে লাগল। চিরদিনের বিধবা কোনো ভ্রাতার দুঃখে পানি ফেললেন–প্রাণপণে দিবারাত্র ভ্রাতার সেবা করলেন।

স্বামীর মৃত্যুর পর সেই নারী স্বামীর সম্পত্তি নিয়ে আনন্দে আর এক ব্যক্তির অঙ্কশায়িনী হলেন। যে সমস্ত নারী স্বামীর সুখের বন্ধু, লাভের সময় কোর্টে (Court) নিজের স্বামী বলে দাবি করেন। পীড়ার সময় স্বামীতে ত্যাগ করেন–হয়তো আল্লাহর কাছে তার বিচার হবে–মনুষ্য সমাজে তাদের বিচার না হোক।

“দুঃখেই প্রেমের পরীক্ষা হয়। দুঃখে প্রেমিকের সমস্ত ঘুমন্ত প্রেম উথলিয়ে উঠে। দুঃখের সময় যে প্রেমের পরিচয় পাওয়া যায় না, যে প্রেম চুপ করে থাকে–সে প্রেমকে বিশ্বাস নেই। সে প্রেমের কোনো মূল্য নেই।”

“নারী সমস্ত প্রাণ দিয়ে আপন স্বামীকে প্রেম করুক–তাকে সমস্ত প্রাণ দিয়ে পূজা করুক। এর দ্বারাই স্বামী ও পত্নীর সম্বন্ধে–স্বামী-স্ত্রীর সম্বন্ধে মাংসের ক্ষুধার উপর নির্ভর করে না। যেখানে মাংসের ক্ষুধা নারী-পুরুষকে মিলিত করে না থায় কোনো শান্তি নেই,–তা কতকটা অপবিত্র মিলন।

অপরের জন্য ত্যাগ স্বীকার, দুঃখবরণ, এটি অবোধ পশুভাবে আচ্ছন্ন আত্মার দ্বারা সম্ভব নয়। কোনো কোনো উচ্চ বংশীয়া নারী, শিক্ষা ছাড়াও আপন আপন বংশের প্রভাব অনুসারে কতকগুলি সদগুণ লাভ করেন–সেগুলি দয়া, মহত্ব, প্রেম, সহানুভূতি, বিনয়, ক্ষমা। বহু শিক্ষালাভ করেও সে গুণগুলি আপন আপন স্বভাবে পরিস্ফুট করে ভোলা কঠিন সেজন্যে উচ্চবংশীয়া নারীকে পত্নীরূপে পাওয়া খুব সুবিধার কথা। প্রেম মানুষকে ত্যাগী এবং দুঃখবরণ করতে শিক্ষা দেয়–দুঃখের বিষয়, প্রেম জিনিসটা নারীচিত্তে জন্মাবার কোনো সুবিধা এদেশে দেওয়া হয় না–সেটা নারী জীবনে ভয়ানক অসভ্যতা ও ধর্মহীনতা বলে সবাই মনে করে না। পুরুষের মন সম্বন্ধেও এই কথা সত্য। কোনো নারীর প্রতি ভালোভাবে কোনো পুরুষের মন আকৃষ্ট হলেও লোকে তাকে শয়তান ও অসভ্য বলে থাকে। আমাদের এই দেশে দম্পতি বন্ধনে কোনো প্রাণ নেই–প্রেমের স্বাধীন সহজ প্রকাশ নেই।-একটা নীরস কঠিন জীবনের ধারা। নর-নারীর মনের উপর একটা অন্যায় অত্যাচারই চলেছে।

.

কৃপণতা

২য় বন্ধু, কহিলেন-বন্ধু, কোনো কোনো মানুষ এত কৃপণ যে তারা কারো পাতায় ভাত দিতে হলে হিসাব করে–এই ভাতগুলির দাম দুই আনা। যারা দরিদ্র তাদের মনে এই ধরনের হিসাব জন্মান সম্ভব হতে পারে, কিন্তু যারা ধনী, তাদের এই প্রকারের আচরণে খুবই ঘৃণা হয়।

১ম বন্ধু–এরূপ ম্লেচ্ছ না হলে কি টাকা হয়?

২য় বন্ধু–মানুষকে অন্নবস্ত্র দেবার জন্যে, মানুষকে সমাদর করবার জন্যেই টাকা। টাকা হয়ে যদি মানুষ এমন ইতর হয়, তবে তার দরিদ্র থাকা উত্তম। প্রত্যেক কাজেরই সীমা আছে-অতিরিক্ত দানশীলতা বা পয়সার অপব্যয় করা ভালো নয়।

–তাতে কেউ অসন্তুষ্ট হয়ে না। যার ঘরে অন্ন নেই, তার পক্ষে কোনো অর্থশালী আত্মীয়কে বস্ত্র উপহার দেওয়া উচিত–এ কথা আমি কখনও বলি না। কিন্তু যা সঙ্গতি আছে, সে যদি প্রয়োজনের সময় চোখ কান ঝুঁজে সরে যায় সেটা দেখতে ভালো দেখায় না।

মানুষের স্বভাব যার আছে তাকেই দেওয়া। এই নীতির উল্টা করাই ভালো। লোকের ধারণা যার নাই, তাকে দিলে কোনো লাভ হবে না। এ কথায় কিন্তু সত্য থাকলেও লাভ অলাভের চিন্তা বর্জন করেই মানুষকে দিতে হবে। পথিককে পথ দেখিয়ে দেওয়া না স্থান জেনে না বলা-বড়ই অভদ্রতা। মনুষ্য দেখে কখনও বিরক্তি বোধ করো না–সঙ্গতি থাকলে ক্ষুধিত মানুষকে অন্ন দিতেও কুণ্ঠিত হয়ো না। একটা ক্ষুধিত অতিথি দেখে বিরক্তি রোধ করা এবং বাপের মৃত্যুতে হাজার টকা খরচ করে গোশত ভাত দিয়ে বড় লোকদের ভরা পেটে অজীর্ণ রোগ বুদ্ধ করা–এ দুটিই ভুল। বিনা কারণে ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও। কোনো ভদ্রলোকের বাড়িতে যেয়ে উপস্থিত হওয়া ভদ্রলোকের কাজ নয়।

কোনো লোককে কখনও ভাতের খোটা দিতে নেই।

.

হসব-নসব

২য় বন্ধু কহিলেন-বন্ধু, ‘হসব’ ‘নসব’ বলে একটা কথা আছে–ঐ সম্বন্ধে কিছু বলতে চাই।

১ম বন্ধু–হ্যাঁ বল, তোমার সমস্ত কথাই মনোযোগের সঙ্গে শুনছি।

২য় বন্ধু—’হসব’ ‘নসব’ মানে ভদ্র ঘরের কন্যাকে নিজের পরিবারে সরবরাহ করা। যে উদ্দেশ্যে এই কথাটি সমাজ অবলম্বন করেছিল–সেই উদ্দেশ্যেটি এখন সবাই ভুলে গেছে। এখন শুধু সম্মান লাভের আশায় ভদ্র ঘরের সঙ্গে লোক বিবাহ সম্বন্ধ করে-এর ফলে অনেক ভদ্রকন্যার জীবনে বহু কষ্ট হয়, তার জীবনে সুখলাভ হয় না। বিবাহ হবার পর তাদের জীবনের কোনো পরিবার বা স্বামী স্বীকার করে না। তাদের নিজস্ব বংশীর রূঢ়তা, বর্বরতা মেয়েটির জীবন বিষময় করে।

১ম–বন্ধু। কী উদ্দেশ্যে সমাজ ভদ্রকন্যাদের সঙ্গে সম্বন্ধ করতো?

২য় বন্ধু–পরিবারের চরিত্র গঠনের কাজ মেয়েদের। মেয়েদের স্বভাব অনুসারেই ছেলে-মেয়েদের স্বভাব তৈরি হয়। এজন্য বুদ্ধিমান লোকেরা পরিবারের মধ্যে বুদ্ধিমতী, বিচক্ষণ-উত্তম স্বভাবা, সুরুচিসম্পন্ন মেয়ে সরবরাহ করতেন; কিন্তু এভাব পোষণ করে কেউ আর আজকাল মেয়ে সংগ্রহ করেন না, টাকা পয়সা খরচ করে ভদ্র ঘরে বিয়ে করলে ভদ্রলোক হওয়া যায়-এই ইচ্ছায় অশিক্ষিত লোকেরা অনেক টাকা খরচ করে। এই শ্রেণীর লোক মনুষ্যত্ব, চরিত্রবল, দয়া-ধর্মের কোনো ধার ধারে না–শুধু বিয়ে করেই এরা জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ এবং জীবনের কর্তব্য সম্পাদন করে।

১ম বন্ধু–বড়ই লজ্জার কথা।

২য় বন্ধু–হ্যাঁ, লজ্জার কথা বৈকি! তারপর টাকার লোভে কতকগুলি বনিয়াদী বংশ নিম্ন হতে নিম্নতর স্থানে যেয়ে উপস্থিত হয়েছে।

১ম বন্ধু–কী রকম?

২য় বন্ধু–ঐ যে বললাম, কতকগুলি লোক কিয়ে করে ভদ্রলোক হতে চায়, আবার কতকগুলি তোক বিয়ে দিয়ে ভদ্রলোক হতে চায়। অভাগা ভদ্র বংশের ছেলেরা অপেক্ষাকৃত নিম্ন ঘরের কন্যা বিয়ে করে অনেক টাকা যৌতুক পায়–নিম্ন ঘরের শ্বশুর-শাশুড়ীর জীবন-জন্ম সার্থক করে দেয়। এইভাবে কয়েক বৎসর চলতে থাকলে, কলিকাতার বৈঠকখানা বাজারের দুপুর খেলার দুধের মতোই যে বংশ অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়ে তা বলাই বাহুল্য।

১ম বন্ধু–বংশমর্যাদার মূল কী?

২য় বন্ধু–বংশ মর্যাদার মূল শিক্ষা। শিক্ষা, জ্ঞানের অভাব ব্যতীত কোনো বংশই ধ্বংস হতে রক্ষা পাবে না। কোনো সময় দেখা যায়, শিক্ষা দ্বারাও কোনো কোনো লোকের স্বভাবের পরিবর্তন হয় না-কিন্তু এতে নিরাশার কোনো কারণ নেই। শিক্ষা ধীরে ধীরে কাজ করে আত্মার আলো ধীরে ধীরে জ্বলে মনুষ্য-স্বভাবের পরিবর্তন ধীরে ধীরে হয়। একমাত্র শিক্ষাই মঙ্গল কল্যাণ এবং বংশমর্যাদার কারণ।

১ম বন্ধু–ভদ্র বংশের সহিত সম্বন্ধ করা কি খারাপ?

২য় বন্ধু–না, না, খারাপ কেন হবে? তবে এই দিকেই ঝোঁক না দিয়ে বিদ্যা অর্জনের দিকে মন দিতে হবে। শুধু সম্বন্ধ করলেই কেউ স্বর্গে যাবে না, পরিবারের মর্যাদা বাড়বে না। টাকার লোভে অশিক্ষিত বংশের মেয়ে আমদানী করলে বংশের সর্বনাশ হয়-এ কথাও অস্বীকার করা যায় না।

১ম বন্ধু–কিরূপ ঘরে বিবাহ করা উচিত?

২য় বন্ধু–বিবাহ ব্যাপারে প্রবীণ অভিভাবক, বন্ধু-বান্ধবদের মতামত নিয়ে কাজ করা উচিত–কারণ মোহ অনেক সময় আমাদেরকে অন্ধ করে। মোহান্ধ হয়ে পত্নী নির্বাচনে ভুল করলে অতি শীঘ্র তার ফলভোগ করতে হয়। তখন প্রতিকারের কোনো পথ থাকে না। রূপ ছাড়া বংশমর্যাদা, স্বভাব শিক্ষা, আত্মার সৌন্দর্য এসব বিষয় দেখতে হবে।

.

প্রেমের পরশ

২য় বন্ধু কহিলেন-যে জীবনে প্রেমের আশীর্বাদ হতে বঞ্চিত রইল, তা নিরর্থক, অর্থশূন্য। আল্লাহ্ এত প্রীত নন। জবরদস্তি করে কোনো মেয়েকে বৌ করা, বা শুধু কামুকতার টানে কোনো নারীকে পত্নী করা ঠিক নয়। কোনো স্বামীকে অনিচ্ছায় বা প্রেমহীনা কোনো বালিকার ঘাড়ে চেপে দেওয়া মহাপাপ। এ পাপ যেন কখনও কেউ না করে।

১ম বন্ধু–এ পাপ সবাই করছে–এটি যে অন্যায় তা আমি বুঝি।

২য় বন্ধু–কামুকতার মোহ অতি অল্পদিন থাকে–সেই মোহ যখন কেটে যায়, তখন জীবন বিড়ম্বনাময় মনে হয়–একজন আর একজনের সঙ্গে ক্লান্ত হয়ে ওঠে। সংসারের নিত্য কলহ, অশান্তি, পরস্পরের নিন্দা, প্রচার ইত্যাদি শয়তানী দেখা দেয়। যেখানে প্রেম অনুরাগ থাকে সেখানে একজন আর একজনকে শোনায়, আনন্দের পুলকের আলোকের দেখে–দিনগুলি সুমধুর উপভোগ্য হয়। জীবন ও জগৎ আল্লাহর অমৃত দান বলে বোধ হয়। সে যে কি সুখ, তা ভাষায় করা সম্ভব নয়। এরূপ প্রেমহীন বন্ধন অবৈধ-ব্যভিচার নামান্তর মাত্র। দেখা নাই-শূন্য নাই–পরস্পরের শ্রদ্ধা নাই–কেউ কারো পরিচয় জানে না, একজনের উপর আর একজনের দোষ দাবি নাই, হঠাৎ কী করে বন্ধু হবে? একজন আর একজনের জীবন-মরণের সঙ্গী হল কি করে? এটা কল্পনা করতেও বিরক্তি বোধ হয়। এরূপ বিবাহের এক মাত্র দাবি কামুকতা।

১ম বন্ধু–মেয়ে দেখবার অধিকার কি আমাদের আছে?

২য় বন্ধু–হ্যাঁ, এটা ছুন্নত-শুধু ছুন্নত নয়-এটা ফরজ, অসম্মতিতে বিয়ে হলে সে বিয়ে জায়েজ হয় না–তা হারাম।

১ম বন্ধু–সম্মতি হয় বই কি?

২য় বন্ধু–যার ‘না’ বলার কোনো অধিকার নাই–তার অসম্মতির কোনো মূল্য নাই। তাকে জিজ্ঞাসা করা একটা প্রহসন মাত্র। আল্লাহর বিধানের সঙ্গে চালাকী!

১ম বন্ধু–তা ঠিক।

২য় বন্ধু–আসল কথা মেয়ের বাপের চালাকী। কোনো রকমে ঢেকেঢুকে গোপন করে গরু পার করা গোছের। মেয়ের সৌন্দর্য ও গুণ সম্বন্ধে তাদের নিজেদেরই সঙ্গেই থাকে, কোনো রকমে ফাঁক দিয়ে একটা দলিলের দাবিতে আটকে ফেলা, তার পর বন্ধন যখন খুলবার উপায় নেই, খুব কঠিন হয়েছে, তখন মেয়ে দেখা যেতে পারে।

ছেলেদের উচিত তারা যেন কখনও দূরদেশে বিয়ে না করে–আপন আপন গ্রামে জানা-শোনা, দেখা মেয়েকে বিয়ে করে–নইলে প্রতারিত হবার বিলক্ষণ সম্ভাবনা; কিংবা নিজের মামাতো বোন নিজের আত্মীয়-স্বজনের দেখা-শুনা মেয়েকে বিবাহ করা উচিত-অন্যথায় জীবনে বিয়ে না করাই ঠিক। অনর্থক জীবনকে ব্যর্থ ও অর্থশূন্য করে লাভ নেই। জগতে ভূতের বেগার খাটার লাভ নেই। জীবনটি অতিশয় দীর্ঘ-এটিকে সহজে ফাঁকি দিয়ে কাটিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়–বিবাহ ব্যপারে এই যে ফাঁকি, প্রবঞ্চনা চলেছে–এতে উভয় পক্ষেরই ক্ষতি–অথচ কেউ তা অনুভব করে না। কী করে যে তরুণ প্রাণের উপর অভিভাবকেরা এত বড় গুরুতর অত্যাচার করেন তা ঠিক বুঝতে পারা যায় না। বলছিলাম, বিবাহ ব্যাপারে যে প্রবঞ্চনা চলেছে–তাতে উভয় পক্ষেরই দারুণ ক্ষতি। কোনো মেয়ের বিয়ে এ জগতে কোনোদিন আটকায় নি, আটকাবেও না। কারো না কারো চোখে সে সুন্দর দেখাবেই।বুঝতে হবে, সেই তার স্বামী। চোখে যদি না লাগে, ও রুচিতে যদি মন তুষ্ট হয় তাহলে সৌন্দর্যের মূল্য এক পয়সাও নয়। কখনও দুজনার। আত্মীয়তা বন্ধন হবে না-একজনের কথা আর একজনের কাছে কখনও ভালো লাগে না। প্রাণের টানে কেউ কারো সেবা কবে না; ভালবাসবে না–পত্নী পীড়িত স্বামীর শিয়রে বসে রাত্রির পর রাত্রি কাটিয়ে দিবেন, রাস্তায় পরের স্বামীকে দেখবার জন্যে জানালার ফাঁকে গিয়ে উঁকি মারবে না–গোপনে গোপনে একজন আর একজনের অমঙ্গল চাবে না।

১ম বন্ধু–পরস্পরের প্রেমের সঞ্চার হয়ে বিয়ে হয়েছে–তারপর তারা ব্যভিচার। করেছে। এরূপ দেখা যায় নাকি?

২য় বন্ধু–হ্যাঁ, এরূপও হয়। এই ক্ষেত্রেই তাদেরকে অপরাধী বলে ধরা যাবে। কিন্তু যেখানে জবরদস্তি বিয়ে, সেখানে কেউ যদি কোনো অপরাধ করে, গোপনে চিঠি লিখি লেখে, তাকে বিশেষ দোষ দেওয়া যায় না। তবে মানুষের মধ্যে শয়তান ও শয়তানী আছে-তাদের সম্বন্ধে সুরুচি বিধি-ব্যবস্থা, ধর্ম-ভয়, আইন-কানুন কোনো কাজে আসে না।

.

মা

২য় বন্ধু কহিলেন-মা-মাকে প্রশংসা করে অনেকেই অনেক কথা লেখেন ও বলেন, তা তাদের অন্তরের কথা কি না জানি না। মাকে মনুষ্য ঠিক চেনে না, জানে না।

মায়ের প্রাণ, মায়ের সুগভীর ভালবাসা কেউ অনুভব করতে পারে না। মা সন্তানকে যেরূপভাবে প্রেম করেন, তা ভাষায় প্রকাশ করবার ক্ষমতা আমার নেই। তা অতি আশ্চর্য ও বিস্ময় উৎপাদক, মাতা যদি মস্তকে জুতো দিয়ে আঘাত করেন কোনো কথা বলো না–যেহেতু, সন্তানের প্রতি প্রেম সত্য এবং অপরিসীম। পত্নী যদি তোমার মাতা সম্বন্ধে নিন্দা করেন, পত্নীর উপর বিরূপ হয়ো না, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে মায়ের প্রেমে কখনও সন্দেহ করো না। এইভাবে মাতা-পুত্রে বিচ্ছেদ আসে। মায়ের সত্য নিবিড় গভীর প্রেমে অবিশ্বাস জন্মে। এইভাবে সন্তান মায়ের কাছে অপরিসীম পাপ করে। যে পাপ করে–তার তুলনা নাই। জীবনের কোনো পুণ্য তা ঢাকতে পারে কি না জানি না।

সমস্ত বিশ্ব একদিকে, মায়ের কাছে সন্তান আর একদিকে। আবার বলি, মাতা সন্তানকে কি চক্ষে দেখে, তা কল্পনাও করতে পারে না।

মা যদি বেশ্যা, শয়তানী, মানুষ, হত্যকারিণী হয়, তবুও মাতৃরূপে সন্তানের কাছে তিনি মহামাননীয়া। নারী যদি পিশাচিনী হয়, তার মাতৃমূর্তিকে অশ্রদ্ধা করতে চাই না।

অনেক সময় বড় হলে, ছেলেপিলের বাপ হলে লোকে মাকে বলে–”চুপ করে থাক, কথা বলো না।”

মা পাগল হলেও কখনও তাকে কঠিন কথা বলো না। নিজে যদি ধনী, সম্মান হও, তাহলে মাকে বেশি করে সম্মান করবে–কি জানি, মা যদি সন্দেহ করে ছেলে অহঙ্কারী হয়েছে, তাহলে ছেলের পক্ষে বড়ই লজ্জার কথা হবে; বরং তার সঙ্গে এমনভাবে চলবে, যেন তিনি তোমাকে ভর্ৎসনা করতে ভয় বা সঙ্কোচ না করেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *