1 of 2

৩৩. নবীন ও প্রবীণ

বিশ্বমানবের জ্ঞানের পরিধিকে বিস্তৃত করিতে ভারতবর্ষ যাহা নিবেদন করিয়াছে, তাহার এক বিশিষ্টতা দেখা যায় এই যে, উহা সকল সময়ে ক্ষুদ্র ছাড়িয়া বৃহতের সন্ধান করিয়াছে। অন্য দেশে জ্ঞানরাজ্য এত বিভিন্নভাবে বিভক্ত হইয়াছে যে, তথায় সমগ্রকে এক করিয়া জানিবার চেষ্টা লুপ্তপ্রায় হইয়াছে। ভারতবর্ষের চিন্তাপ্রণালী অন্যরূপ। তাই তাহার কাব্য, তাহার সাহিত্য, জ্ঞানের অন্তর্নিহিত এই মহান সত্য ব্যক্ত করিবার চেষ্টা করিয়াছে। জ্ঞানের অন্বেষণে আকাশে ভাসমান ক্ষুদ্র ধূলিকণা, বিশ্বের অগণিত জীব ও ব্রহ্মাণ্ডের কোটি সূর্যের মধ্যে সেই একতার সন্ধান করিয়াছে। তাই বোধ হয়, আপনারা জ্ঞান ও সাহিত্যকে একে অন্যের অঙ্গ মনে করিয়া দুই বৎসর পূর্বে একজন বিজ্ঞানসেবীকে তাঁহার অজ্ঞাতে এই সাহিত্য-পরিষদের সভাপতিত্বে নিযুক্ত করেন।
বিজ্ঞান সম্বন্ধে যাহা বলিবার আছে তাহা অন্য দিন বলিব। তৎপূর্বে পরিষদের ভবিষ্যৎ উন্নতিকল্পে কয়েকটি কথা আজ উত্থাপন করিব। যখন আপনারা আমাকে সভাপতিত্বে নিয়োগ করেন তখন এ সম্বন্ধে আমার আপত্তি জানাইয়াছিলাম। এক দিকে সময়াভাব ও ভগ্ন স্বাস্থ্য, অন্য দিকে পরিষদে কোনো কার্য করা সম্ভব হইবে কি না, এই সম্বন্ধে আশঙ্কা ছিল। শুনিয়াছিলাম, এখানে দলাদলি এত প্রবল এবং আর্থিক অবস্থা এরূপ শোচনীয় যে, ইচ্ছা সত্ত্বেও কেহ কিছু করিয়া উঠিতে পারেন না। এ জন্য অস্বীকার করিয়া লিখি। তাহা সত্ত্বেও যখন আপনারা আমাকে মুক্তি দেন নাই তখন স্থির করিলাম, সাহিত্য-পরিষদের জন্য যথাসাধ্য কার্য করিব এবং ইহার পূর্ণশক্তি বিকাশের জন্য চেষ্টিত হইব। যে মুমূর্ষ সে-ই মৃত বস্তু লইয়া আগলাইয়া থাকে; যে জীবিত তাহার জীবনের উচ্ছ্বাস চতুর্দিকে ব্যাপ্ত হয়। আমি দেখিতে পাইয়াছি যে, বর্তমান যুগে সমস্ত ভারতের জীবন প্রবাহিত করিয়া একটা উচ্ছ্বাস ছুটিয়াছে, যাহা মৃত্যুঞ্জয়ী হইবে। আমাদের সাহিত্য কেবলমাত্র পুরাতন গ্রন্থ প্রকাশ লইয়া থাকিবে না; বর্তমান যুগের নব নব সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, বিজ্ঞান প্রভৃতিকে একত্র করিয়া একটি জীবন্ত সাহিত্য গঠিত করিয়া তুলিবে। ইহাই আমি সাহিত্য-পরিষদের সর্বপ্রধান উদ্দেশ্য মনে করি। এই উদ্দেশ্যকে কার্যে পরিণত করিবার পথে যে বাধা, যে অন্তরায় আছে তাহা দূর করিতে হইবে। তাহার পর দেশের চিন্তাশীল মনীষীদিগের বিক্ষিপ্ত চেষ্টা যাহাতে একত্রীভূত করিতে পারা যায় তজ্জন্য যত্নবান হইতে হইবে।
আরও ভাবিবার বিষয় আছে। যে দলাদলি হইতে পরিষদের উন্নতি পঙ্গুপ্রায় হইয়া উঠিতেছে, সেই দলাদলি হইতে পরিষদকে কিরূপে রক্ষা করা যায় এবং এই সব বাধা দূরীভূত করিয়া পরিষদের মুখ্য উদ্দেশ্য– সাহিত্যের সর্বাঙ্গীন বিকাশ কিরূপে সাধিত হইতে পারে?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *