1 of 2

৩০. স্বতঃস্পন্দন

জীবদেহে অংশ বিশেষ একটি আশ্চর্য ঘটনা ঘটিতে দেখা যায়। মানুষ এবং অন্যান্য জীবে এরূপ পেশী আছে যাহা আপনা-আপনি স্পন্দিত হয়। যত কাল জীবন থাকে তত কাল হৃদয় অহরহ স্পন্দিত হইতেছে। কোনো ঘটনাই বিনা কারণে ঘটে না। কিন্তু জীবস্পন্দন কি করিয়া স্বতঃসিদ্ধ হইল? এ প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর এ পর্যন্ত পাওয়া যায় নাই।
তবে উদ্ভিদেও এইরূপ স্বতঃস্পন্দন দেখা যায়। তাহার অনুসন্ধানফলে সম্ভবত জীবস্পন্দন-রহস্যের কারণ প্রকাশিত হইবে।
শরীরতত্ত্ববিদেরা মানুষের হৃদয় জানিতে যাইয়া ভেক ও কচ্ছপের হৃদয় খেলা করেন। হৃদয় জানা কথাটি শারীরিক অর্থে ব্যবহার করিতেছি, কবিতার অর্থে নহে। সমস্ত ব্যাঙটিকে লইয়া পরীক্ষা সুবিধাজনক নহে; এজন্য তাঁহারা হৃদয়টিকে কাটিয়া বাহির করেন, পরীক্ষা করেন কি কি অবস্থায় হৃদয়-গতির হ্রাস-বৃদ্ধি হয়।
হৃদয় কাটিয়া বাহির করিলে তাহার স্বাভাবিক স্পন্দন বন্ধ হইবার উপক্রম হয়। তখন সূক্ষ্ম নল দ্বারা হৃদয়ে রক্তের চাপ দিলেই স্পন্দন ক্রিয়া বহুক্ষণ ধরিয়া অক্ষুণ্ণ গতিতে চলিতে থাকে। এ সময়ে উত্তাপিত করিলে হৃদয়স্পন্দন অতি দ্রুতবেগে সম্পাদিত হয়; কিন্তু ঢেউগুলি খর্বকায় হয়। শৈত্যের ফল ইহার বিপরীত। নানাবিধ ভৈষজ্য দ্বারা হৃদয়ের স্বাভাবিক তাল বিভিন্ন রূপে পরিবর্তিত হয়। ইথার প্রয়োগে ক্ষণিকের জন্য হৃদয়স্পন্দন স্থগিত হয়, হাওয়া করিলে সেই অচৈতন্য অবস্থা চলিয়া যায়। ক্লোরোফরমের প্রয়োগ অপেক্ষাকৃত সাংঘাতিক। মাত্রাধিক্য হইলেই হৃদয়ক্রিয়া একেবারে বন্ধ হইয়া যায়। এতদ্ব্যতীত বিবিধ বিষপ্রয়োগে হৃদয়স্পন্দন বন্ধ হয়। কিন্তু এ সম্বন্ধে এক আশ্চর্য রহস্য এই যে কোনো বিষে হৃদয়স্পন্দন সংকুচিত অবস্থায়, অন্য বিষে ফুল্ল অবস্থায় নিস্পন্দিত হয়। এইরূপ পরস্পরবিরোধী এক বিষ দ্বারা অন্য বিষের ক্রিয়া ক্ষয় হইতে পারে।
জীবের স্বতঃস্পন্দন সম্বন্ধে সংক্ষেপে এই কয়টি প্রধান ঘটনা বর্ণনা করিলাম। গাছেও কি এই সমস্ত আশ্চর্য ঘটনা ঘটিতে দেখা যায়? নানাবিধ পরীক্ষা করিয়া কোনো কোনো উদ্ভিদ-পেশীও যে স্পন্দনশীল তাহার বহুবিধ প্রমাণ পাইয়াছি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *