২৯. মামির মিডলাইফ ক্রাইসিস

২৯. মামির মিডলাইফ ক্রাইসিস

জীবনে এমন কিছু কিছু উদ্ভট ঘটনা ঘটে যার কোনও ব্যাখ্যা নেই। অতৃপ্ত, অসুখী যৌনজীবন বা শরীর বিষয়ে কৌতূহলীপ্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে দেখা হলে অনেক সময় সহজেই তারা বুঝে নিতে পারে তাদের ভাষা। তারা অপরিচিত। পরিচিত হতে কোনও সময় নেয় না। কারণ তাদের মূল প্রসঙ্গ শরীর। শরীর, যা কথা বলিয়ে ছাড়ে। রোমাঞ্চ বা বিকৃত যৌনরুচি–কামের গন্ধকে ওরা ঠিক ঠিক চিনে নিতে ভুল করে না।

গ্রামে আমার এক মামি ছিল। সে ছিল সাধারণ মেয়েদের থেকে একটু ভিন্ন। ধরনের। মামা, সেও সুদর্শন এবং বুদ্ধিমান। তবে মামির মতো নয়। মামা, শারীরিক দিক থেকে ততটা সুস্থ ছিল না। তার ছিল বহুমূত্র রোগ এবং কিডনির সমস্যা। আমি তখন ক্লাস নাইনের ছাত্রী। পাবনা থেকে মামি বেড়াতে এলো মামাসহ। ঠিক তখনি এলো আমার সেজো বোনের বিয়ের সম্পর্ক। ছেলেটি এম.এ. পাস। শ্যামলা রঙ আর। কোকড়া চুল। ছেলেটিকে দেখে কেন জানি না আমার প্রথম থেকেই পছন্দ হলো না। মনে হলো লোকটা আনস্মার্ট, মেকি, ন্যাকা, ভদ্রতার ভণ্ডামি … ইত্যাদি। কিন্তু ছেলেটির সাথে আমার মামির সহসাই একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো। দু’জনে সুযোগ পেলেই বেশ রসিয়ে বসে গল্প করে। এমনি করতে করতে বিয়ের বদলে বরং লোকটা মামিকে নিয়েই বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

মেয়ে দেখতে এসে ওরা দু’দিন থাকবে। পরদিন সকালে ওদের প্রাতরাশ খাওয়ানোর দায়িত্ব পড়লো মামির ওপর। মামি ভালো রাধুনী। বেশ সেজেগুঁজে রান্নাঘরে এলেন। রান্না হলো লুচি, ছোট গোল আলুর তরকারি। গোল বেগুন ভাজা। সঙ্গে মুক্তাগাছার মণ্ডা এবং শেরপুরের ছানার পায়েস। একটা গোলমেলে কিছু টের পাচ্ছিলাম। মামি খেতে দিলো নিজ হাতে। আমি পাশে বসে দেখি মামির কাণ্ড। আমার মামি, তিন সন্তানের মা, দুপুরবেলাতেও বেঁধেবেড়ে লাঞ্চের সময় হলে সেজেগুঁজে ছেলেটিকে খেতে দিলো মাছের পেটি, মুড়িঘণ্ট, কালিয়া। আমার কৌতূহলী মন। আমি লক্ষ্য করি, অন্যেরা যা দেখে না।

বিকেলবেলা। এপাশে কদমতলার ঘরে কেউ নেই। সব যার যার মতো ওপাশে। মামি আর লোকটাকে দেখলাম বাড়ির শেষ মাথায় ছোট ঘরটায়, কদম গাছের ঠিক নিচে, ওখানে গিয়ে ওরা দু’জন নিবিড় হয়ে বসলো গল্প করতে। চৌকিটা ছোট এবং তাতে একটা পুরোনো তোশক বিছানো। বাড়িতে কারো চোখেই ধরা পড়লো না, দু’জনের মধ্যে একটা অস্থিরতা একা হওয়ার। ওরা ঘরে ঢুকে দরজা অর্ধেক চাপিয়ে দিল। আর আমি হামাগুড়ি দিয়ে অন্য দরজা খুলে লুকিয়ে গেলাম চৌকির নিচে। নিশ্বাস নিতে থাকলাম খুব আস্তে আস্তে। কান রইলো খাড়া। শুনলাম ওদের পর্নালাপ।

লোকটাকে মামি অবলীলায় বলছে মামার অসুস্থতার কথা। কি-কি কারণে তার জীবন সুখের নয়। বলছিল তার ঋতুর কথা। তার গর্ভাবস্থা। তার রাত্রিবেলার দুর্ভোগ। তার মিডলাইফ ক্রাইসিস। তার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত স্বামীর রাত্রিবেলার কঠিন স্নায়ু যুদ্ধ, যৌনজীবনের সঙ্গে। বললো স্বামীর শিথিল অঙ্গের কথা। লোকটিও জানালো তার অনুভূতি। তার অভিজ্ঞতা, গ্রামের দুই নারীর সঙ্গে। যাদের একজন বয়স্ক বিধবা, তারপর শুরু হলো দু’জনের মৃদু শারীরিক আদান-প্রদান। দরজার খিল লাগানো। এলো চুম্বনের শব্দ। প্রথমে ধীরে-সুস্থে পরে সজোরে। আমি যতই শুনি ততই অস্থির হতে থাকি। চুম্বনের শব্দে হৃৎপিণ্ড উত্তেজিত হয়। অজান্তেই শরীরের কোথাও কোনও স্পন্দিত আলোড়ন হয়। আমার পাজামা ভেজে, নাইকুণ্ডলীর নিচের ঢেকে-টুকে রাখা কোনও এক বিশেষ জায়গা থেকে। আর বসে থাকতে না পেরে দৌড় দিতে গিয়ে কিছুটা ভয়ে, কিছুটা উত্তেজনায় পেচ্ছাব করে দিলাম ওদের সামনে। সেই থেকে মামির চোখমুখ বিষণ্ণ। মামি জানে আমি ডানপিটে মেয়ে। সব বলে দেবো, জানে সে। রাতেই বোচকা বাঁধতে শুরু করলো চলে যেতে। এ নিয়ে অবশ্য আমি কাউকেই কিছু বলিনি। শুধু বাবাকে বললাম, এই ছেলের সঙ্গে দিদির বিয়া দিলে আমি বাড়ি ছাইরা যামুগা। বাবা বললেন, মনে হয় না এই বিয়া হইবো। ছেলেটা মনে হয় অলস। আমারও বিশেষ ভালো লাগে নাই, বললেন বাবা। বাবা বললেন এক কারণে আর আমি, সম্পূর্ণ অন্য কারণে। কিন্তু দু’জনেরই বটম লাইন-এক। অর্থাৎ, ছেলেটা ভালো নয়। শুধু কেউ কারোটা জানলো না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *