১৪. কালসাপ

১৪. কালসাপ

রূপালি,

ভালো আছিস আশা করছি। আমিও আছি। আমাদের তো ভালো থাকতেই হয়। নয় কী? নইলে জগৎ সংসারের এই ঘানি টানবে কে? সেদিন জানতে চেয়েছিলি রাজ আর আমার ব্যাপারে। জিজ্ঞেস করেছিলি, এসব কি শুনছি! তোদের নাকি ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে! তুই-ই বল, জীবনের মতো সূক্ষ্ম এতো গুরুত্ববহ ব্যাপারগুলোর উত্তর কি এত দ্রুত কোনও চাইনিজে বা কোনও ক্যাফেতে বসে চা খেতে খেতে দেয়া যায়? যায় না রে! রাগ করিস না, সেদিন তোর প্রশ্নের জবাব দিইনি বলে। বিচ্ছেদ, কখনোই সুখের নয়। তুই দেশে এসেছিলি বহু বছর পরে। তাই সেদিন আমার বিচ্ছেদের কথা বলে, তোকে বিষণ্ণ করতে চাইনি। তুই তো জানিস আমার এমন কোনও কথা নেই যা তোকে আমি বলতে পারি না।

তোকে যা বলতে পারি, শুধু তোকেই পারি। অপেক্ষা ছিল সময়ের। সময়টা ঠিকঠাক না হওয়া অবধি, লিখতে বসতে পারিনি। যা বলার, গুছিয়ে, আজ মনে হলো এই সাত সকালের বৃষ্টি ঝরা বিষণ্ণ আকাশের দিকে চেয়ে, হ্যাঁ! আজই লেখার সময়।

সময়, মন আর জীবন। এই তিনটে শব্দ গত দু’বছরে আমাকে সম্পূর্ণ নড়িয়ে দিয়েছে। আমার ভালো-মন্দ, দুঃখ-সুখ, ঘটনা-দুর্ঘটনা তিনরঙা ত্রিবেণীর জলের মতো সময়-মন আর জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে, বিচিত্র এক রঙ ধারণ করেছে, যেখানে আমি, রাজ এবং অসীম অনবরত একই আবর্তে পাক খেয়ে চলেছি।

রাজীবের সঙ্গে আমার সম্পর্ক এখন কতটা মন্দ তার চেয়ে বড়, রাজের সঙ্গে আমার অতীতের সুন্দর দিনগুলো। রাজের মতো স্বামী দুর্লভ। ওর থেকে আমি কি পাইনি? তা সত্ত্বেও, পরবর্তী সময়ে একটা প্রশ্ন এসে উপস্থিত হলো। প্রশ্নটা হলো সময়ের সঙ্গে মানুষের মনের পরিবর্তন। আমি বিশ্বাস করি সময় মানুষের জীবনকে ধারণ করে। মানুষ, সময়কে ধারণ করে না। কিন্তু প্রথাভিত্তিক অধিকাংশ মানুষই ভাবে তার উল্টো। ফলে আমরা পিছলে পড়ি না শুধু, পিছিয়েও পড়ি। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমারও মধ্যে যে পরিবর্তন এসেছে তাকে আমি একেবারেই অস্বীকার করিনি। এবং করিনি বলেই, সেদিনের সেই আমি, আর আজকের এই আমি, এক নই। আমি সময়ের পরিবর্তনে বিশ্বাসী। এবং রাজের সঙ্গে শুধু নয়, পৃথিবীর সব প্রথাভিত্তিক মানুষের সঙ্গে আমার মূল ক্রাইসিস, এখানেই।

আমি এই সমস্যার নাম দিয়েছি, সময়ের কালসাপ। যা সময়ের ব্যবধানে অনেক রকম খেলা দেখায়। কেউ কেউ তা বোঝে, অধিকাংশই বোঝে না। আমার মধ্যে এক শিল্পীর সম্ভাবনা যা এত কাল সুপ্তই ছিল, অনিলের সঙ্গে পরিচয়ের পর তা প্রথম আবিষ্কার করলাম। এক অন্য আমি। যেন নিজেকে দেখে নিজেই চমকে উঠি। ভাবি একি সত্যিই আমি! নাকি আমার প্রেতাত্মা। জীবনে এরকম অনেক আচমকা ঘটনা ঘটে যায়। তবে আমরা তা চিনতে ভুল করি। রাজ আমার এই হঠাৎ পরিবর্তনে চমকে ওঠে। আমার সঙ্গে ওর একান্ত পৃথিবীতে অনিলের উপস্থিতি ওকে ঈর্ষান্বিত করে তোলে। এবং রাজের এই চমকে ওঠাই স্বাভাবিক। এটা ওর দম্ভের রাজত্বে কুঠারাঘাত। আমাকে নিয়ে ওর একার রাজত্ব। একচ্ছত্র। কিন্তু তা সত্ত্বেও, প্রশ্ন থেকে যায়। প্রশ্ন, রাজের মধ্যে কেন এই সঙ্কীর্ণতা? ওতো আমার সঙ্গেই কাটিয়েছে, জীবনের অনেকটা সময়। তাহলে কেন এই, প্রথার বাড়াবাড়ি! এখন বুঝি সব মানুষের বোধ এবং ধারণ ক্ষমতা এক নয়। যদি হতো তাহলে সংসারে কেন এত বিচ্ছেদ, এই শান্তি হীনতা!

রাজ একাধারে আমার জীবনে অনিলের উপস্থিতি এবং আমার সৃজনশীলতা দুটোকেই প্রত্যাখ্যান করলো। সেজন্যে দায়ী, রাজ। সেজন্যেই আমি আর অনিল আজ এক সমান্তরালে দাঁড়িয়ে। অনিল আর আমার একমাত্র ভাষা, এবং আমাদের একটি মাত্র ভাষা এবং তাহলো, শিল্প।

অনিলের স্ত্রী অপর্ণা, পক্ষাঘাতে অসুস্থ। ভীষণ খিটখিটে, দজ্জাল এক মহিলা। দীর্ঘদিনের অসুস্থতায় অনিলের জীবনটাকে সে এক আস্ত নরকে পরিণত করেছে। কিন্তু অসুস্থ বলে ইচ্ছে সত্ত্বেও ওর প্রতি কোনওরকম অমানবিকতাও অনিল দেখাতে পারে না। অপর্ণা বিশ্বাস করে অনিল ভুল পথে চলেছে। তাকে সে দেখতে চায় গৃহস্থ স্বামীর চরিত্রে। অপর্ণার সঙ্গে যন্ত্রণার জীবন অনিলের বৌদ্ধিক যন্ত্রণাকে তীব্র করেছে বলেই সে এতদিন উল্লেখযোগ্য কোনও কাজ করতে পারেনি। সুতরাং একথাই কি সত্য নয় যে সংসার সবার জন্যে নয়? তাহলে একথাই কি সত্য নয় যে সৃষ্টিশীল মানুষদের সংসারে জড়াতে নেই! কারণ সংসার, সময়কে ধরতে দেয় না। বুঝতেও দেয় না। সময়, দিনের আলো পরিবর্তনের মতো এসে মিলিয়ে যায়। সময়ের সঙ্গে সংসার শুধু বৃদ্ধি পায়। আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা ওসব স্বীকার করতে শিখিনি। তার কারণ, সংসার যা তার নিজের সময় অনুযায়ী জীবনের সঠিক সময়কে ফেলে চলে যায়। সমুদ্রে জোয়ার আর তার তরঙ্গ যেমন, নির্ভর করে আকাশের চন্দ্র সূর্যের ক্ষণের ওপর, জীবনের তরঙ্গ তেমন নির্ভর করে, সময়ের জোয়ারের ওপর। সময়, দেয়। সময়, নেয়ও। সময় যেমন মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ। তেমনি সবচেয়ে বড় অভিশাপও। সবচেয়ে বেশি সুন্দর, সর্বাধিক নরকও।

পারিবারিক জীবন বলে একটা কথা আছে। একটা নির্দিষ্ট সময়ে এই জীবনেরও একটা প্রয়োজন রয়েছে। এই সময়টুকুতে ওরা যৌথভাবে সৃষ্টি করে, সংসার এবং সন্তান। একসঙ্গে তারা উপভোগ করে তাদের এই সৃষ্টিকে। একসঙ্গে এই হেঁটে যাওয়ার সময়টা বড়জোর জীবনের পনেরো থেকে কুড়ি বছর, তবে অজস্র ফুল আর কাঁটা বিছানো পথ ধরে। যখন তাদের সন্তান-সন্ততিরা বড় হয়। তখন তাদের কিছু সামাজিকতা পালন করতে হয়। তখন তাদেরকে একে অপরের পরিপূরক স্বামী-স্ত্রী হতে হয়। তবে এখানে কিছু প্রথার নষ্টামো, কিছু ভণ্ডামো, কিছু-অতিরঞ্জিত ব্যাপার স্যাপারও থাকতে পারে, থাকবেও। বিয়ের প্রথম কুড়ি বছর পরেও গৃহস্থ প্রথাগত মানুষের বিশ্বাস করতে থাকে যে, আগামী কুড়ি বছরও একই সমতলে থাকবে। মানুষ যে বদলে যেতে পারে একথা তারা বুঝতেই চায় না। প্রকৃত সমস্যা এখানেই। বার্ধক্যে তার কৈশোর, থাকবে কি করে? আর ভরা বার্ধক্যে, যৌবন? সেও ভাবলো সাধারণ সবাই যা ভাবে।

তারপরেও সংসারী মানুষগুলো কি সুখে আছে? দিনরাত তাদের হা-পিত্যেশের কি শেষ আছে? এই হলো না, সেই হলো না। এ অসুখ, সে অসুখ। টাকা নেই–দুঃখ আছে। সুখ নেই, টাকা আছে। কত রকমভাবে মানুষ যে সংসারে অসুখী, তার কি কোনও শেষ আছে! সংসারে অসুখী মানুষের যেমন শেষ নেই, তেমনই শেষ নেই তাদের চাহিদার। চাহিদা আর অসুখী মানুষেরা পাশাপাশি হাঁটে।

শুধু চেয়ে চেয়েই এরা গরিব হয়। এবং এই চাওয়ার সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে এরা শত পেলেও যা পায়নি তারই খোঁজে আজীবন ভাসতে থাকে। কূল দেখা যায়। কিনারা দেখা যায়। তবু অসুখী মানুষেরা কূল-কিনারা পাওয়ার সুখ না নিয়ে, দুঃখ পেতে অকূলে ফিরে ফিরে আসে। ওদের চাওয়া, ওদের অসুখীপনার কোনও শেষ নেই। যেমন ছিল না রাজের। ওকে আমি সংসার দিয়েছি–সন্তান দিয়েছি। সামাজিকতা দিয়েছি, কুড়ি বছর একটানা। কিন্তু ওর মনে তবুও সুখ হলো না। যা দিয়েছি তা নয়। যা দিইনি বা দিতে পারিনি তার জন্য সারাক্ষণ সে অসুখী। অথচ যা আছে যতটুকু আছে তা কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় প্রচুর। তারপরেও যা নেই, সেটুকুর জন্যেই–ওর কাঙালপনা। সংসার থেকে আমার কিছুটা বিরতি ওকে করে তুলেছে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পৃথিবীর সবকিছুই আপেক্ষিক। সবকিছুই অস্থায়ী। রাজ আর আমার সম্পর্ক হয়ে গেল স্থায়ী থেকে অস্থায়ী। আমার বাবা-মায়ের সম্পর্ক ছিল স্থায়ী। কিন্তু বাবা যেদিন মাকে ছেড়ে চলে গেল, সেদিন ওদের সম্পর্কটা হয়ে গেল অস্থায়ী। বাবাকে হারিয়ে মা একা হলো। ছেলেমেয়েরা তখন কেউ কাছে নেই। মাকে এভাবে দেখে মনে হলো মানুষ কত অসহায়! বিয়ের মাধ্যমে মেয়েরা সংসার গড়ে তোলে, সন্তান সৃষ্টি করে, বহুজনকে ঘিরে যে রকম গড়ে ওঠে সে তেমনি, তাকে ঘিরে গড়ে ওঠে বহুজন। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে, সেই মানুষই, যেমন আমার মা, আবার একা হয়ে ফিরে যায়, কুমারী জীবনের একাকিত্বে। যখন বাবা ছিল না। আমরা ছিলাম। যখন সংসার ছিল না। সময় বৃত্তাকারে ঘোরে। তাহলে বল, কেন এই দুঃখ পাওয়া! চলে তো একজন যাবেই প্রথমে। হয় রাজীব! না হয়, আমি! যদি সঙ্গেই না গেলাম, তবে সাময়িক এই হারানোর জন্য কেন এই দুঃখ পাওয়া!

জীবন যখন সাময়িক, তাহলে দুয়ে দুয়ে মিলে যদি চার হয়, দুয়ে দুয়ে বিয়োগ দিলে তো শূন্যও হয়। সংসারে দুয়ে দুয়ে কেন সবসময় যোগ দিতে হবে। যদি মেলাতেই হয় তাহলে দুয়ে দুয়ে বিয়োগ দিলেও তো মিলে যায়। অধিকাংশ মানুষ দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে সুখী। এবং এই চার যখন মিলে যায় তখন চাহিদা আরো বেড়ে যায়। কোটিপতি দাশবাবুর তেতলা প্রাসাদের আঙিনায় এখন গরু ঘাস খায়। মিত্র বাড়িতে আলোর বদলে আলেয়া জ্বলে। চৌধুরী বাড়িটা এখন মদ্যপদের স্বর্গ। তাহলে এত কিছু করে শেষ পর্যন্ত কি হলো! ‘চার’ না ‘শূন্য’। আমি তো দেখি শুধু শূন্যতা। সংসারে শূন্য মেলানো খুব সহজ! এবং তাতে শান্তি আসে। তা, না বুঝলো অনিল না বুঝলে রাজ। না বুঝেছিল আমার বাবা। মারা যাওয়ার মাত্র দু’বছর আগে মাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন অন্য নারীর কাছে ‘৪’ মেলাতে। কিন্তু ‘৪’ তো আর মেলেইনি বরং উল্টো ‘শূন্য’ ঘরে এসে, মাকে হারিয়ে এক মহা শূন্যতায় নিমজ্জিত বাবা, অবশেষে গলায় কলস বেঁধে গাঙিনার জলে ডুবে মরে যায়।

রূপালি তোকে আমি বোঝাতে পারবো না যে সমমনা সঙ্গী না হলে বিয়েটা কতবড় ব্যর্থতা! সমমনা না হলে প্রেম জাগে না। আর প্রেম না জাগলে শরীর জাগে না। অন্ধত্ব যে কারণে কষ্ট পাচ্ছে রাজ, পাচ্ছে অনিলের স্ত্রী। রাজের কষ্ট আমি বুঝি। দোষ রাজের নয়, দোষ আমারও নয়। দোষ, সময়ের। আসলে কি জানিস, সৃষ্টিশীল মানুষের সংসারে জড়াতে নেই। এই অনন্য মানুষগুলোর জন্যে সংসার একটি ভুল চৌরাস্তার মোড় যেখানে এসে সে কষ্ট দেয় নিজেকে, তার চারপাশের মানুষদেরকে। কুলিয়ে উঠতে না পেরে কত প্রতিভাই তো নষ্ট হয়ে গ্যাছে! কত সৃষ্টিই তো বৃথায় পর্যবসিত হয়েছে। ঘুম থেকে উঠে একজন অনন্য মানুষকে যখন অন্য দশটা মানুষের। অন্ন জোগানোর জন্য কাজে যেতে হয় তখনই সেই মানুষটির সর্বনাশের আর বাকি থাকে কি? তার প্রয়োজন নিরঙ্কুশ-অব্যাহত সময় এবং মন। দাম্পত্যে, গৃহস্থে পেলেও তা যথেষ্ট নয়।

যাই হোক, একটা সময় ছিল প্রথম যৌবনে, যখন ভাবাবেগ স্থান পেয়েছিল সবার ঊর্ধ্বে। সময়োচিত তখন তার সবটুকু করেছি। আমি আজ আমার নিজের জন্যে সময় ব্যয় করতে চাই। সেখানেই বিরোধ এবং সেজন্যেই আমাদের জীবনের মোড় ঘোরানোর সিদ্ধান্ত। কারণ আমি গতানুগতিক মেয়েদের মতো হতে পারি না, ভাবতে পারি না, চাইও না। যেমন আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না আমাদের মেয়েদের সময়। অপচয়ের মাত্রা! শিক্ষিত মাস্টার্স ডিগ্রি পাস মেয়েগুলো যখন কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় শাড়ি-গয়না-রান্না-সিনেমা-রেস্টুরেন্ট-ফ্যাশনের। মতো আষাঢ়ে সব গল্পে মেতে ওঠে। নিজের সব সময়গুলোকে অপচয় করে সন্তানের জন্য। আর যখন এই মেয়েগুলো স্কুল থেকে ঘরে ফিরে সংসারের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তখন শিক্ষিত মেয়েদের পুরুষগুলো সব অফিস করছে। তখন আমার মনে প্রশ্ন জাগে-কেন ওদের সন্তান হয়? কেন সংসার হয়? মনে হয়, মরে যাক সেই ‘জরায়ু’। চুলোয় যাক ওদের ‘চুলো’। আবার ভাবি, ওরা তো নির্বোধ! কিন্তু নির্বোধই যদি হবে। তবে, ভার্সিটি পাস ওরা করলো কি করে! জানিস, আমি সত্যিই বিভ্রান্ত!

মৃত্যুকেও কৌশলে ফেরানো যায়, সময়কে নয়। সময় ক্ষমাহীন এবং নিষ্ঠুর। যারা পরিবর্তন বুঝতে পারে, পেরে তাকে স্বাগত জানায় বৌদ্ধিক অর্থে তারা জীবিত। বাকিরা, মৃত।

আমি এই মৃতদের দলে থাকবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যা শুনেছিস ঠিকই শুনেছিস। মনে রাখিস জীবন একটি সাময়িক পত্রিকার মতো। যতক্ষণ ছাপা হরফে চোখের সামনে থাকে, মানুষ পড়ে এবং যতক্ষণ চোখের সামনে থাকে, মনে রাখে। ভাঙা-গড়ার জোয়ারে জীবনের এই সাময়িক যাত্রাও ঠিক তাই। এতকাল তো কেবল গড়েইছি। না হয় এবার ভাঙলাম! দেখি না কি হয়। ভাঙায় যদি কিছু মেলে। শূন্য না হলে পূর্ণ হবো কি করে। জায়গা লাগবে তো! জীবন বৈচিত্র্য চায়। জীবন–সুধা চায়। মাধুরী–স্বর্ণলতা, চায়। জীবন, এমনি করে করেই তার বৈচিত্র্য, খুঁজে পায়। তার প্রকৃত ঠিকানা খুঁজে পায়। সন্ধান পায় সত্যের। যে সত্যের জন্যে তার জন্ম। সময় খুঁজে পায় তার পরিবর্তনের গতি, আরেক ধাপ বিবর্তনের। মধ্য বয়সে, যৌবন আর বার্ধক্যের সন্ধিক্ষণে এখন আমি এই বিবর্তনের মধ্য দিয়ে চলেছি। আশা করি তোর উত্তর মিলবে।

আদরের, তোরই মৌ

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *