১২. দূর থেকে দেখেই খোকা দৌড়ে এলো

দূর থেকে দেখেই খোকা দৌড়ে এলো। হাঁফাতে হাঁফাতে বলল, এই, এই, আম্মা ডাকছে। তাহমিনা প্রায় হাঁটু গেড়ে বসে বলল, এই কিরে বাবু? এই কি? আপা বলতে পারিস না! দাঁড়াও তোমার আম্মার কাছে বলে দিচ্ছি।

আশরাফের ছোট্ট ছেলে খোকা এবার লজ্জিত হলো। ছাড়িয়ে যেতে চাইল তাহমিনার আদর বাহুবন্ধনকে। সে উঠে দাঁড়িয়ে সুন্দর গ্রীবাভঙ্গি করে শুধালো, যাবে নাকি?

যাবে? চল।  

বিকেলে বেরিয়েছিল ফারুক আর তাহমিনা। বাংলোর সমুখ দিয়ে যে পথ গেছে সেই পথ। ধরে। আধমাইলটাক গেলে পর হাট পড়ে। সেই হাটে যাবে।

পড়তি দুপুর বেলায় যখন ফারুক পেছনের বারান্দা দিয়ে যাচ্ছিল তখন তাহমিনার সাথে দেখা। একটু গড়িয়ে মুখে চোখে পানি দিয়ে ফিরছিল ও। পিঠের ওপর এলিয়ে দেয়া চুল চিকচিক করছে একটু। শাড়ির আঁচল সারা গায়ে আঁট জড়ানো। ও বলেছে, হাট দেখতে যাবে নাকি? বলছিলে যে তখন।

চল না, বেশ হয় তাহলে। কখন?

আর একটু পরে। তৈরি হও তুমি।

তাহমিনা পড়ল রূপোলি তারা বসানো সাদা শাড়ি–রূপোলি বর্ডার দেয়া। আর ফারুক পরল তার সবচে হালকা পোশাক—-গলা খোলা পাঞ্জাবি আর পাজামা। জরির কাজ করা স্যান্ডেল জোড়া পায়ে গলিয়ে বেরিয়ে এলো। তাহমিনা বলল, যাই বলো, চিরকাল তুমি সৌখিন মানুষ।

নাকি?

ফারুক হাসলো। তারপর কেমন ধীরে ধীরে দুজনে ধরল পায়ে চলা পথ। কিছুক্ষণ হাঁটবার পর ফারুক বলল, এক মধুপুরের গড় ছাড়া অরণ্য আমি কোনোদিন দেখিনি।

সুন্দরবন তোমার ভালো লাগবে। তোমার মনের মত জায়গা।

কেন বলো তো? ফারুক শুধালো।

তাহমিনা ভ্রূ নাচিয়ে উত্তর করল, অরণ্যের প্রতি তোমার আশ্চর্য দুর্বলতা আছে। মনে পড়ে কবিতা লিখেছিলে?

হাসল ফারুক। বলল, ভুলিনি। একটা মজার কথা মনে পড়ল। হালি একবার কি লিখেছিলেন জানো? ওয়ার্ডম্বার্থকে যদি ঘন ট্রপিক্যাল ফরেস্টে ছেড়ে দেয়া হতো, তাহলে তার কাব্যিপনাও নিমেষে শিকেয় উঠে যেত।

প্রত্যুত্তরে তাহমিনা মৃদু হাসি ছড়ালো সারা মুখে।

আরো কিছুক্ষণ চলবার পর ফারুক বলল, কাল রাতে আমার মন কেমন করছিল।

কখন?

শুতে এসে।

কী হয়েছিল?

কেউ যদি জেনে ফেলত?

তাহমিনার গতি শ্লথ হয়ে এলো। একটু পরে সোজাসুজি তাকিয়ে কোমল স্বরে শুধালো, তুমি অনুতপ্ত?

না, তাহমিনা।

তারপর নীরব হয়ে গেল দুজনেই। আরো কিছুক্ষণ চলবার পর তাহমিনা বলল, ওখানে না গেলেই নয়?

কী এমন।

তাহলে থাক। আরো অনেকটা হাঁটতে হবে। এরচে একটু বসিগে কোথাও।

কোথায় বসবে? ফিরতে হবে কিছুদূর, ফেলে এসেছি পেছনে।

একটা চেনা জায়গা আছে আমার। চল।

কাজ নেই তাহলে।

আবার ওরা ফিরতি পথ ধরলো। হাটমুখে চলেছে দুএকজন লোক। কাঁধে তাদের হাটের পশরা। একজনের কাঁধে বাঁকের দুধারে সাবানের বাক্স ঝোলানো। ফারুক জানে মনোহারি জিনিসে এটা সেটায় ভর্তি বাক্স দুটি। চার পয়সা দামের, গোল আয়না থেকে শুরু করে ছআনা দামের বিরহ–মিলন পত্রাবলী অবধি। কাঁচা ঝিয়াড়ীর মনকাড়া কাঁচের চুড়ি আর শস্তা সুগন্ধ। গ্রামের হাটে বিক্রি হতে চলেছে। লোক কজন তাহমিনাকে দেখে সালাম করল। তাহমিনা দিল তার প্রত্যুত্তর মিষ্টি হেসে। একজনকে শুধালো, ভালো আছো?

ফারুক বলল, তোমাকে ওরা চেনে দেখছি।

বাঃ চিনবে না। তারপর বলল, ভারী সরল মানুষ ওরা। তোমরা শহরে লোক তা ধারণাও করতে পারবে না।

পথ থেকে নেমে ডান হাতে কিছুদূর এগিয়ে এলে—-এদিকে খুব বেশি কেউ যাতায়াত করে না—- একটা ফাঁকা জায়গা চোখে পড়ে। একটা নিচু জমিতে জমেছে পানি। তারি খাড়াইয়ে একটা বিরাট বুনো গাছ। আর তারি ছায়ায় বসলো দুজনে।

একটা ছোট্ট মেঠো ফুলের গাছ তুলে ফেলতে ফেলতে ফারুক শুধালো, এর পরে কী করবে তুমি?

আমাকে কেন সে কথা জিগ্যেস করো।

তবুও।

আর তবুও না ফারুক।

এতটুকু আবেগ নেই তাহমিনার বলনে। অত্যন্ত একটা সাধারণ কথা যেন বলছে এমনি তার সুর। ফারুক তার মুখের দিকে তাকাল। তাহমিনা বলল, আর কোনো প্রশ্ন ওঠে না।

ফারুক কোনো উত্তর করল না।

তোমার ভয় করছে ফারুক?

না।

তুমি সব শুনেছ। সব তোমাকে বলেছি। জোয়ার যখন আসে তখন ভয় করলে চলে না। আমি তুলে দিইছি আমার সবকিছু তোমার হাতে। তুমি আমাকে বাঁচাও। আমাকে ভালোবাসা দাও।

আমি ভালবাসি তাহমিনা।

চল আমরা চলে যাই।

কোথায়? 

যেখানে খুশি। ঢাকায়।

তাহমিনা!

আমাকে তুমি নিয়ে যাও। না কোরো না। তোমাকে পেয়ে আমি বাঁচতে চাই।

ফারুক এতদূর ভাবে নি। তাহমিনা যে তার সাথে যেতে চাইবে, তা সে ভাবতেও পারেনি। কিন্তু তাহলেও সে ফিরতে পারত না। এখন ফেরবার আর পথ নেই। একেলা সে ফিরে যেতে পারবে না। আর কী করেই বা যাবে? তাহমিনার কষ্ট হোক, তাহমিনা তিলে তিলে মরে যাক, সে সহ্য করতে পারবে না। তাছাড়া যদি কিছু হয়? তাহলে?

আর তাহমিনা শুধু তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। সে কিছুই ভাবতে পারল না। এমন জীবন সে চায়নি। আবিদের কথা একবারও তার মনে হোলো না। যেন কোন দিন তাকে সে চিনতো না। ফারুক কিছুতেই উপেক্ষা করতে পারে না। সে দেবে না। সে তার ভয় ছিনিয়ে নেবে।

দূরে কারা হেঁটে গেল। তাদের স্বর শোনা গেল। হয়ত হাট থেকে ফিরছে মানুষেরা। ফারুক ভাবলো, না সে তাকে ফেলে যাবে না এই দেয়ালের দেশে। কিন্তু কী করে ফিরে যাবে ঢাকায়? তার মা, মা রয়েছেন। কোথায় উঠবে তার? মালেকাবাণু, জাকি, লাবলু, ওদের কথা না হয় ছেড়ে দিল। তার নিজের মাকে সে গিয়ে কি বলবে? ফারুক আস্তে আস্তে বলল, আবিদ আবিদ যদি কিছু করে।

তাহমিনা উত্তরে বলল, তুমি পাগল। আবিদকে আমি চিনি।

ঢাকায় কোথায় উঠবো আমরা?

এতবড় শহরে এতটুকু জায়গা হবে না? হবে চল ফারুক, আর দেরি করো না। তাহলে কোনদিনই আর হবে না। তারপর একটু থেমে ধীরে ধীরে উচ্চারণ করল, কাল সকালেই আমরা যাব।

কাল?

হা কাল।

নিস্তব্ধতা।

আমাকে সাহস দাও ফারুক।

ফারুক ওর শুভ্র কপোলে সংক্ষিপ্ত ঠোঁট ছুঁইয়ে গাঢ় স্বরে বলল, হ্যাঁ আমরা কালই যাবো।

.

বারান্দাতেই দাঁড়িয়ে ছিল আফিয়া। খোকা একদৌড়ে তার কাছে গিয়ে বলল, এসেছে আম্মা।

ধরে আনলি, না? তারপর ওদের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে বলল, না ডাকলে আসতে নেই বুঝি? এদিক দিয়েই তো যাচ্ছিলে।

আসব না কেন? আসতুম। জানেন থোকা আমাকে গিয়ে এই এই বলে ডাকছিল।

খোকা লজ্জায় পালিয়ে গেল। আফিয়া সেদিকে তাকিয়ে বলল, দুষ্ট। তারপর ফারুকের দিকে তাকিয়ে, বেড়াতে বেরিয়েছিলো বুঝি?

জি। আপনাদের এদিককার হাট দেখবার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু পা রাজি হোলো না খানিক দূর গিয়ে।

তাই বুঝি ফিরে যাচ্ছিলেন? শহুরে মানুষের কিন্তু ওই এক দোষ, হাঁটতে পারে না। ওমা, দাঁড়িয়ে রইলেন কেন? ভেতরে আসুন।

ফারুক ভেতরে যেতে যেতে বলল, এ অনুযোগ আপনার মিথ্যে। আমি না হয় শহুরে মানুষ, আপনারা তো নন। ওরো তো একই অবস্থা।

দ্যাখ দিকি, মেয়ে মানুষ কি হেঁটে অভ্যেস?

ফারুক আর আফিয়া এবার হেসে উঠলো। তারপর হঠাৎ আফিয়া উঠে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, যাই একটু চা বলে আসিগে।

উঁহু। ফারুক বলল, খেয়ে এসেছি।

তাহমিনাও কি তাই বলবে নাকি?

আপনি শুধু শুধু কষ্ট করছেন।

ভারী তো কষ্ট। দরদ থাকে কষ্টের ভাগ নাও না?

আফিয়া বলতে বলতে হেসে ফেললেন। হাসতে গিয়ে গালে টোল পড়ল। তাহমিনাও হেসে বলল, অত দরদ আমার নেই। যান, চট করে আসুন।

ফারুক বলল, অবাক হই, এই পাড়াগাঁয়ে জঙ্গলের ভিতরে এত চার জোগাড় কী করে করেন। আশ্চর্য কিন্তু।

আশ্চর্য আবার কী! আর এটা বুঝি বুনো পাড়াগা?

তাছাড়া কী?

বেশ, বেশ। ঢাকায় আছে নাকি আপনাদের তাহমিনাদের মত বাংলো। মেলাই তো সব দালান কোঠা শুনি!

তা নেই।

তবে?

তাহমিনা আফিয়া যখন যাচ্ছিল তখন বলল, খোকাকে নিয়ে আসবেন ধরে। ডেকে এনে পালিয়ে বেড়াচ্ছে এমন দুষ্ট ছেলে।

একটু পরেই ফিরে এলো আফিয়া। সারা মুখে গৃহিনী সুলভ একটা তৃপ্তির ছায়া ছড়ানো। ঘরের কোণ থেকে নিচু টেবিল মাঝখানে সরিয়ে আনতে আনতে বলল, খোকা তোমার এলো না। লজ্জা পেয়েছে।

তাই বুঝি? দাঁড়ান আমি নিয়ে আসছি। কই ও?

ওইতো বাইরে

তাহমিনা বেরিয়ে গেল। ফারুক তাকিয়ে রইলো চলে যাওয়া তার দিকে। একটুখন পরে খোকাকে প্রায় কোলে করে ফিরে এলো সে। বলল, কই কেমন লজ্জা করছে দেখি। কিরে? আপা বলবিনে।

খোকা মুখ ফিরিয়ে নিল।

চায়ে চুমুক দিতে দিতে গল্প করল ওরা এটা সেটা। আফিয়া অনুযোগ করল, আর একটু পুডিং নিক না ফারুক। তাকে নিতেই হলো। তাহমিনা প্রায় কিছুই নিল না। শুধু চা। পুডিং সবটা দিল খোকাকে।

একসময়ে আফিয়া তাহমিনাকে শুধালেন, সদর থেকে আর কোন খবর পেলে ওর?

তাহমিনা একমুহূর্ত নীরব থাকল। তারপর হাত থেকে পেয়ালা নামিয়ে বলল, পেয়েছি।

কেমন আছে এখন?

আফিয়ার উদ্বিগ্ন প্রশ্নের উত্তরে সে বলল, ভালোই! কাল সকালে আমাকে যেতে হবে।

আফিয়া কিছুই বলল না, শুধু সেই উদ্বিগ্নতা আঁকা রইল সারামুখে। আর ফারুকের হৃদস্পন্দন যেন হঠাৎ থেমে আবার শুরু হলো। মনে পড়ল একটু আগে তাদের দুজনার কথা, কাল তারা পালিয়ে যাবে সেই কথা। তাহমিনা মিছে কথা বলল, কিন্তু স্বর তার কাপল না এতটুকুও। এত তাড়াতাড়ি এত সহজে অমন সোজা একটা পথ যে বেরিয়ে যাবে তা ওর ধারণাতীত। কাল সকালেই যে কী করে ওরা বেরুবে, সেটাই ওর একটু আগে ছিল ভাবনা। এখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সে। আফিয়া শুধালো, কাল সকালেই যাচ্ছো?

হ্যাঁ।

আর উনি?

ফারুকের দিকে চকিত চোখ তুলে আফিয়া শুধালো, ও-ও আমার সংগে যাচ্ছে। ঢাকা যাবে।

তাই নাকি? এদিকে আমি কিছুই জানিনে। শুনেছিলুম, কিছু দিন নাকি থাকবেন।

না, কালকেই যাচ্ছেন।

ফারুককে শুধালো, তাই নাকি?

হ্যাঁ তাই। আবার এসে কিছুদিন থেকে যাবো।

আফিয়া সহসা গম্ভীর হয়ে গেল। একটু আগেই হেসে হেসে কথা বলছিল, এখন মন তার ভারী হয়ে এলো। তিনজনেই চুপ করে রইল খানিকক্ষণ। এমন কি খোকাও। তারপর তাহমিনা বলল, এবারে যেয়ে ফিরতে দেরি হবে ভাবী। ওকে হয়ত সাথে নিয়েই ফিরব তাই।

ও।

তাহমিনা আঁচল থেকে ছোট্ট একটা চাবির ছড়া খুলল। বলল, এটা আপনার কাছে রইল। খোকার বাবা কাল পরশু ফিরতে পারেন। হয়ত কাগজপত্রের ঘর খুলতে হবে।

তাই বলে—-

আপনার কাছেই থাক। আর কাব কাছে দিয়ে যাব? যদি একদিন দেরি হয় তখন? সে ভয়ানক অসুবিধে হবে। তারচে থাক।

আফিয়া চাবির ছড়াটা হাতে নিলেন। বলল, কেন জানি, মন কেমন করছে আমার। ভালোয় ভালোয় ওকে নিয়ে ফিরে এসো।

তাহমিনা বলল, আবদুল এসে আপনার এখানে থাকুক উনি না আসা অবধি। বাংলোয় আরো সকলে থাকবে, কিছু হবে না। আমি আসি তাহলে ভাবী।

তাহমিনা উঠে দাঁড়ালো। ফারুকও। বিদায় নিল সে আফিয়ার কাছ থেকে। আফিয়া আবার তাকে আসতে বলল। তাহমিনা বেরিয়ে এসে খোকার পাশে ঝুঁকে পড়ে ফিসফিস করে বলল, কিরে আপা বললিনে? একবার বলত আপা।

একটু পরে খোকা তার কানের কাছে মুখ রেখে বলল, আপা। সাথে সাথে তাহমিনা ওকে প্রায় জড়িয়ে ধরে আদর চুমু দিল। তারপর বেরিয়ে এলো।

পথে এসে অনেকক্ষণ পরে যখন আশরাফদের কুঠি আর দেখা গেল না তখন তাহমিনা বলল, শেষ সম্পর্ক চুকিয়ে এলাম।

তালা লাগাবে কী করে?

সব টিপ-তালা। বাংলোর চাবি আবদুলের কাছেই থাকবে। বড় বিশ্বাসী লোক। ফারুক একটু পর শুধালো, সেফড্রয়ার, আয়রন চেস্টের চাবি?

সেগুলো কি নিয়ে যাবো ভেবেছ? তাহমিনা উত্তর করল, তোষকের তলায় রেখে গেলেই ও পাবে।

.

সেদিন সারারাত দুজনের কারুরই ঘুম এলো না চোখে! শুধু অরণ্যের বিচিত্র শব্দ আর স্রোত বয়ে যাওয়ার একটানা ধ্বনি। আকাশ পাতাল ভাবল দুজনে দুকামরায় শুয়ে থেকে এপাশ ওপাশ করে। তাহমিনা আবদুলকে সন্ধ্যেয় ইয়াসিন মাঝিকে খবর দিয়ে রাখতে বলেছে। সকালে সে যেন আসে। ফারুক গুছিয়ে রেখেছে তার জিনিসপত্র। অনেকরাত অবধি বাতি জ্বলেছে তাহমিনার ঘরে। মাঝখানে ঘরে রাখা কাঁচের কুঁজো থেকে দুবার পানি গড়িয়ে খেয়েছে ফারুক। তারপর আবার শুতে গেছে বাতি ছোট করে। কিন্তু ঘুম আসে নি। কারা যেন কী ষড়যন্ত্র করছে কোথায়, ফিসফিস করে কথা কইছে–ফারুকের মনে হতে লাগল রাত্রির মিলিত ধ্বনি এমনি রহস্যময়। কান পেতে সে শুনেছে কেবলি।

অবশেষে একসময়ে কিছুই যখন তার ভালো লাগল না, যখন শুধু ইচ্ছেটুকু রইলো তখন সে আস্তে আস্তে উঠে এলো। তারপর তাহমিনার উষ্ণতাকে নরোম বলের মত বুকে তুলে ঘুমিয়ে পড়ল ফারুক।

.

ঘুম যখন ভাঙলো তখন ভোর রাত। আকাশে শেষ রাতের শেষ তারা। পুব আকাশে কালচে লাল প্রহর। ইয়াসিন এলো। আবদুল উঠল একটু পরেই। বেশি কিছু কথা বললো না কেউই। তালা লাগিয়ে তাহমিনা মুখ ফিরিয়ে বলল, সাবধানে থাকিস আবদুল? রাতে খোকাদের ওখানে থাকবি।

আচ্ছা। কবে ফিরবেন?

কয়েকদিন পরে।

বলতে গিয়ে কেমন গলা কেঁপে উঠল তার। তাড়াতাড়ি সে বাড়ালো। বলল, ওগুলো হাতে নে আবদুল, ওরা যাক। তারপর ফারুকের দিকে ফিরে বলল, চল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *