২. ভোরে উঠে দেখে প্ল্যাটফরমে

ভোরে উঠে দেখে প্ল্যাটফরমে আট বেহারার পালকি দাঁড়িয়ে আছে। জামাতে নামাজ আদায় করে নাশতা করে নিল ওরা। হাজি সাহেব বললেন, কুড়িগ্রাম পৌঁছে যাবো বিকেল চারটে নাগাদ। পতিদহে পৌঁছতে রাত দুপুর হয়ে যাবে।

ইদ্রিস শুনেছিল পতিদহ অনেক দূরে। ব্যাকওয়ার্ড প্রেস যাকে হাজি সাহেব বলেছিলেন। এখন তা হাড়ে হাড়ে টের পেল সে।

স্টেশনের ওপাশে এসে সে দেখল লাইট রেলওয়ের যাত্রীরা জটলা করছে। খেলনার মতো খোলা বগি আর এই এতটুকুন ইঞ্জিনটা দাঁড়িয়ে আছে।

এ গাড়ি কোথায় যায়?

কুড়িগ্রাম।

অবাক হলো ইদ্রিস। কুড়িগ্রাম যায়! তবে যে হাজি সাহেব পালকি আনিয়েছেন! ব্যাপারটাই কেমন গোলমেল মনে হলো তার। একজন যাত্রীকে আবার শুধালো, কুড়িগ্রাম যায় এ গাড়ি?

হা।

জিগ্যেস করে জানতে পারলো, যাত্রী আর কিছু হলেই গাড়ি ছাড়বে। কুড়িগ্রাম পৌঁছে যাবে দুপুর নাগাদ।

দ্রুত পায়ে হাজি সাহেবের কাছে এসে ইদ্রিস বলল, আমরা ট্রেনে যাচ্ছি না কেন?

কোন্ ট্রেন? ঐ যে খোলা বগি, ওতে?

অবজ্ঞা এবং অনুকম্পা মেশানো গলায় হাজি সাহেব পাল্টা প্রশ্ন করলেন।

জি। ওরা বলছে এ গাড়ি নাকি দুপুর নাগাদ কুড়িগ্রাম পৌঁছে যাবে।

তা যেতে পারে।

তাহলে পালকিতে খামোকা দেরি করে লাভ কী?

হেসে ফেললেন হাজি সাহেব। বললেন, ডাক্তার, সময়টাই শুধু দেখলেন, আর কিছু চোখে পড়ল না আপনার?

অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল ইদ্রিস।

হাজি সাহেব উত্তেজিত হয়ে উঠলেন হঠাৎ? বললেন, ঐ খোলা গাড়িতে যেতে বলেন আমাকে?

কেন, দোষ কী?

কী, বলছেন কী আপনি?

নিজেকে সংযত করে ফেললেন পতিদহের বড় তরফ হাজি জয়েনউদ্দীন, ভাইসরয় কাউন্সিলের মেয়র। আবার হাসলেন। পিঠে একটা মৃদু থাবড়া বসিয়ে দিলেন ইদ্রিসের। বললেন, সবার পক্ষে ও গাড়িতে সোয়ার হওয়া সাজে না। হলোই বা দু ঘণ্টায় পৌঁছে যাবো। তাতে কী? খোলা বগিতে কাঠের বেঞ্চে বসে সাধারণ মানুষের সাথে গা ডলতে ডলতে তাড়াতাড়ি পৌঁছুনোর বদলে পালকিতে তিনদিন লাগলেও তা ভালো। বুঝেছেন ডাক্তার? 

যুক্তিটা কিছুতেই বুঝতে পারল না ইদ্রিস। কোথায় যেন খটকা লাগছে তার। কলকাতায় মানুষটাকে যেমন মনে হয়েছিল ঠিক তেমনটি মনে হলো না এখন। কৃষক নেতা ফজলুল হকের সঙ্গে ওঠবোস করেন, গায়ের লোকের সুবিধের জন্যে দাঁতব্য ডিস্পেন্সারি খুলেছেন, তার মুখে এ কথা শুনতে হবে এ আশা করেনি ইদ্রিস।

ইদ্রিসের একরোখা স্বভাবটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। সে বলল, তাই বলে সুবিধের কথা ভাববেন না?

কিসের সুবিধে?

তাড়াতাড়ি পৌঁছুচ্ছেন। তাছাড়া মিটার গেজ ব্রড গেজের গাড়িতে তো চড়েন না এমন নয়। লাইট রেলওয়েতে আপার ক্লাশ নেই দেখছেন না।

ঘাড় বাঁকা করে দাঁড়িয়ে রইল ইদ্রিস

হাজি সাহেব বললেন, কী তৰ্কই করবেন, না পালকিতে উঠবেন? অনেকটা পথ যেতে হবে। ইদ্রিস ভাবলো, কাজটা বোধ হয় সে ভালো করছে না। যার চাকরি করতে যাচ্ছে তার সঙ্গে তর্ক করাটা অন্যায় হচ্ছে। কী দরকার তার এ নিয়ে মাথা ঘামিয়ে। সে যখন পতিদহে যাবে বলেই কলকাতা থেকে পা বাড়িয়েছে, তখন আর পালকি বা লাইট রেলওয়ের প্রশ্ন তোলা কেন? তার পৌঁছুনো দিয়ে কথা।

তবু মনের মধ্যে কেমন খচখচ করতে লাগল। হাজি সাহেবও গম্ভীর হয়ে গেছেন। তার দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে দেখল মুখটা থমথম করছে বোশেখ মাসের হঠাৎ মেঘের মতো। হাজি সাহেবের পেছন পেছন সেও পালকিতে গিয়ে উঠল। পালকিতে চড়ার অভ্যেস নেই। উঠতে গিয়েই মাথায় একটা ঠোকাঠুকি হয়ে গেল দরোজার সঙ্গে। কপালে হাত বুলোতে বুলোতে ইদ্রিস এক পাশে পা ভাঁজ করে বসলো।

দুলে উঠল পালকিটা। তারপর আট বেহারার হুমহাম কোরাসের তালে তালে চলতে লাগল কুড়িগ্রামের দিকে।

এই ইঞ্জিনের পানি খাবার কল পেরুলো . সিগন্যাল পেরুলো। চৌবাচ্চার পাশ দিয়ে প্রাইমারি স্কুলের সমুখ দিয়ে, গায়ের ভেতর দিয়ে পাকি গিয়ে মাঠে পড়ল।

ভোরের রাঙা আলো আস্তে আস্তে সোনার মতো হয়ে গেল। উজ্জ্বল সূর্যালোকে খেতখামার যেন হাসতে লেগেছে। ঘাসের ওপর, ফসলের ডগায়, পথের পাশে বুনো ফুল আর কন্টিকারির ঝোঁপের মাথায় শিশির দেখা যাচ্ছে এখনো। একটু পরে আর থাকবে না। রোদ টেনে নেবে সব সিক্ততা। ইদ্রিসের মনে পল এই তো সেদিনও গাঁয়ের বাড়িতে শিশির ভেজা মাঠে খালি পায়ে হেঁটেছে সে। খালি পায়ে ভোরের শিশির লাগলে স্বাস্থ্য ভালো হয়। মনটা প্রসন্ন হয়ে এলো ইদ্রিসের। একটু আগে হাজি সাহেবের সঙ্গে তর্ক করে মনটা অস্বস্তিতে ভরে ছিল। শিশিরের মতোই সে অস্বস্তিটুকু একেবারে উবে যাচ্ছে আস্তে আস্তে।

ইদ্রিস বলল, চমৎকার দেশ।

হাজি সাহেব গলা সাফ করে বললেন, পছন্দ হয়েছে?

জি, হ্যাঁ।

জীবনে কত দেশ ঘুরলাম ডাক্তার, রংপুরের কাছে কোনটাই লাগে না। বিশেষ করে তিস্তা থেকে এই রাস্তাটা। পতিদহে গেলে আর ফিরে আসতে চাইবেন না আপনি।

পরিবেশ-শোভন হাসি ফুটে উঠল ইদ্রিসের ঠোঁটে।

হ্যাঁ, দেখে নেবেন। আমার জন্মভূমি বলে বলছি না, দেশ বিদেশ থেকে কতজন পতিদহে আমার গরিবখানায় এসেছেন। যাবার সময় সবাই বলে গেছেন, পতিদহের তুলনা হয় না।

সেই হাসিটা বিলম্বিত হলো ইদ্রিসের ঠোঁটে। সে ভাবলো তার নিজের গায়ের কথা। মাঠের কথা। বিরাট বিলের কথা। কালো অতল পানি তার। আড়াআড়ি পাড়ি দিতে সাহস হয়নি কোনো দিন কারো। একবার সে কয়েক বন্ধুর সঙ্গে কী করে যেন গিয়ে পড়েছিল মাঝ বিলে। লোকে বলেছিল, জ্বীনে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। মা কত দোয়া পড়ে ঝাড়ফুঁক করে দিয়েছিলেন।

ঝমঝম একটা শব্দে চমক ভাঙ্গলো ইদ্রিসের। বাইরে তাকিয়ে দেখে ধোঁয়া উড়িয়ে সাপের মতো এঁকেবেঁকে মার্টিন কোম্পানির গাড়ি চলেছে কুড়িগ্রামের দিকে। খোলা বগিতে সার সার কালো মাথা দেখা যাচ্ছে। ছবির মতো মনে হচ্ছে। পৃথিবীতে কত সুন্দর দৃশ্য আছে দেখার, তার কিছুই সে দেখেনি।

পর মুহূর্তেই সচকিত হয়ে উঠল ইদ্রিস। এই ভোলা গাড়ি আবার সেই তর্কের তিক্ত স্মৃতিটা ফিরিয়ে এনেছে। আড়চোখে সে তাকাল হাজি সাহেবের দিকে।

হাজি সাহেব বললেন, ডাক্তার, এবার দিল্লিতে গিয়ে কথা প্রায় পাকা করে এসেছি।

জিজ্ঞাসু চোখে তাকাল ইদ্রিস।

হাসলেন হাজি সাহেব। বললেন, এ লাইট রেলওয়ে আর বেশি দিন নেই। মিটার গেজ বসলো বলে। তখন তিস্তা কুড়িগ্রাম করবেন ট্রেনে দুবেলা। খোদ ভাইসরয়ের কানে তুলে। দিয়েছি। জানেন তো ইংরেজের জাত সে এক আজব চীজ। কথা মনে ধরল তো কাজের হুকুম সঙ্গে সঙ্গে। হুকুম হলো তো কাজ হয়ে গেল চোখের পলক ফেলতে না ফেলতে। এই জন্যেই সান নেভার সেটস ইন ব্রিটিশ এম্পায়ার। আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে ইংরেজের কাছ থেকে।

আপন মনে কথা বলে চলেছেন হাজি জয়েনউদ্দিন। তার কিছু কানে যাচ্ছে ইদ্রিসের, কিছু যাচ্ছে না। সে ভাবছে তার ভবিষ্যতের কথা। কোথায় চলেছে, কী হবে, এই সব সাত সতেরো। ছেলেবেলা থেকেই মনের মধ্যে বড় হওয়ার সাধ, কিন্তু কী করলে বড় হওয়া যায় শুধু সেইটাই জানা নেই।

পাশ করবার পর গ্রামে ফিরে যাবার সময় প্রিন্সিপ্যাল সাহেব বলেছিলেন, কলকাতায় থাকলেই বড় হওয়া যায় না। যে বড় হবার গায়ে থেকেও হতে পারে।

 কথাটা নতুন করে মনে পড়ল ইদ্রিসের। প্রিন্সিপ্যাল সাহেব নিজে যখন তাকে পতিদহে পাঠাচ্ছেন তখন তার আর দ্বিধা করবার কী আছে? দেখাই যাক না, ভাগ্য তাকে আর কতদূরে নিয়ে যায়, আর কত ভেলকি দেখাতে পারে ভাগ্য সেইটে এবার পরখ করবে ইদ্রিস।

 ঢুলুনিতে সর্বাঙ্গ অবশ হয়ে আসছিল। এক সময়ে ঘুমিয়ে পড়ল ইদ্রিস। হাজি সাহেব তার অনেক আগেই কান্ হয়ে পড়েছেন। মিহি সুরে নাক ডাকছে তার এক পয়সার বাঁশির মতো। ইদ্রিসের আর এখন রাগ হয় না, হাসি পায়। ট্রেন ফেলে পালকি চড়াটা পরম একটা পরিহাসের বিষয় মনে হয় তার। একটু যেন করুণাও হয় তার। সেই করুণা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সে।

ঘুম ভাংগে রাজার হাটের কাছে এসে। ঈদগাঁর পাশে বড় বড় কটা কদম গাছ। তারই ছায়ায় পালকি নামানো হয়েছে। বিশ্রাম নিচ্ছে বেহায়ারা। রান্না চড়েছে।

অনেকক্ষণ পালকিতে বসে থেকে পা ধরে গিয়েছিল। হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর পর্যন্ত বেড়িয়ে এলো সে। ঈদগা পেরিয়ে টিনের চালায় মাদ্রাসা। মাদ্রাসার পেছনে আম বন। আম বনের তলা দিয়ে ছায়াঢাকা পথ গাঁয়ের দিকে চলে গেছে। পথের পাশে মুদি দোকান। বাতাসা কিনছে পেট বড় ন্যাংটো কয়েকটা ছেলে। একজনের হাতে একটা শালুক ধরা। শালুকটা নেতিয়ে পড়েছে।

এই ছেলে তোর নাম কী?

ছেলেটা চমকে ড্যাবড্যাবে চোখ মেলে তার দিকে তাকায়। তারপর ঝেড়ে দৌড় দেয় গায়ের দিকে। চিৎকার করে ডাকে—- চাচা গো। হা হা করে হাসে ইদ্রিস।

ম্যালেরিয়ায় ভুগে ভুগে ছেলেটার হয়েছে কী?

আরো খানিকটা এগোয়। দেখে জলার ওপরে মেলা শালুক ফুটে রয়েছে। ছেলেরা মাছ ধরছে গামছা পেতে। খিলখিল করে হাসছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় কালো কালো মোটা কতগুলো শোল হুটোপাটি করছে জলায়।

অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের মাছধরা দেখল ইদ্রিস। মাছধরা তো নয় এ যেন পানি ছোঁড়াছুঁড়ির মহোৎসব। আহা, ভারী ঠাণ্ডা নিশ্চয়ই জলার পানি। সবুজ লালা ঘাসে হেলে দুলে নাচছে গলা পর্যন্ত সে পানিতে ডুবে। ইদ্রিস যদি গোসল করতে পারত, ভারী ভালো লাগত। হুস হুস হুস হুস শব্দ ওঠে। ছেলেরা কান খাড়া করে দাঁড়ায়। হাতের গামছা হাতে থেকে যায় তাদের। তারপর একসঙ্গে ছুটতে থাকে সবাই একদিকে।

ঐ তো মার্টিন কোম্পানির ট্রেন দেখা যাচ্ছে। কুড়িগ্রাম থেকে ফিরে এলো যাত্রী নিয়ে। হাসি পায় ইদ্রিসের। দ্যাখো কাণ্ড, তারা এখনো রাজার হাটই ছাড়াতে পারল না, আর ওরা কুড়িগ্রাম ছুঁয়ে ফের তিস্তায় চলেছে। হাজি জয়েনউদ্দিনের মাথায় বোধ করি ছিট আছে।

কতদিন এ রকম প্রশান্ত স্বচ্ছন্দ মন নিয়ে ইদ্রিস মাঠে ঘাটে ঘুরে বেড়াতে পারে নি। আজ এত ভালো লাগছে যে ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে না। মনে হচ্ছে এইখানে জলার ধারে হেলে পড়া বাবলার ছায়ায় সারাজীবন বসে থাকে সে।

কিন্তু বড্ড দেরি হয়ে যাবে। তাকে আবাখোঁজাখুঁজি করতে লোক বেরুবে। পা চালিয়ে ফিরতি পথ ধরে ইদ্রিস।

মাঠের পারে গাঁয়ের পথ যেখানে আরেক গাঁয়ের দিকে এঁকেবেঁকে চলে গেছে সেখানে একটা জটলা চোখে পড়ে ইদ্রিসের। কান্নার শব্দও যেন শোনা যায়। ব্যাপার কি?

কাছে এসে দেখে কচি বৌ নিয়ে ঝাঁকড়া চুল বর দাঁড়িয়ে আছে মাথা হেঁট করে। তাদের ঘিরে বুড়োবুড়ি আত্মীয়স্বজন মরা কান্না করছে। বড় দূরে বিয়ে দিলে বুঝি?

না গো না। ঐ যে দুটো অশ্বথ গাছ ঐ হোথায় দেখা যায়। তারপরে পাথার। পাথারের পরে শিমূলকলি গ্রাম। সেই গ্রামে মেয়ে বিক্রি করে কপাল চাপড়াচ্ছি।

মেয়ে বিক্রি কী রকম? চোখ কপালে তোলে ইদ্রিস। তাও জানো না। এ দেশে মেয়ের বিয়েকে মেয়ে বিক্রি করা বলে। মাইয়া বেচেয়া খাইছং। অদ্ভুত তো। গাঁয়ের পিঠে গায়ে বিয়ে দিয়েছ, এত কাঁদতে আছে? বলেন কী। গাঁয়ের পিঠে গাঁ বই কী! ভিন্ গাঁ মানেই বিদেশ। বৈদ্যাশে মাইয়া চলি যায়, বুক ফেটে কান্না আসে না?

অবাক হয়ে যায় ইদ্রিস। দুক্রোশ দূরও হবে না, একে বলে দূর বিদেশ। আসলে বোধ হয় বাপ মার এক মেয়ে গোয় না তাও না। আর পাঁচ মাইয়া আছে ঘরৎ।

হাজি সাহেব তাকে দেখেই বললেন, খুব ঘুরে বেড়াচ্ছে! কেমন ঠিক বলি নি, রংপুরের মতো দেশ হয় না।

জি, তাই দেখছি। খুব ভালো লাগছে।

এই যে এলেন এদেশে, আর যেতে মন চাইবে না।

 দেখি!

আমি বলি, দুদিন পরে পরিবার নিয়ে আসুন, মাকে নিয়ে আসুন। আমি জমি করে দেব, ঘর তুলে দেব, রংপুরের লোক আপনাকে মাথায় করে রাখবে।

ইদ্রিসের মন রঙিন হয়ে উঠে মুহূর্তে। তার নিজের বাড়ি হবে, সংসার হবে। এই রকম জলার পারে শালুক ফুটে থাকবে। কদমের মিষ্টি ঘ্রাণে বাতাস মম করবে। খুব ভালো হয়। একটা বাইসাইকেল কিনবে ইদ্রিস। দূর দূরান্তে রোগী দেখতে যাবে। কলকাতায় বাইসাইকেল দেখত আর তৃষিতের মতো চেয়ে থাকত ইদ্রিস। আহা, অমন যদি তার একখানা থাকত! ছেলেবেলায় চৌবাড়িতে কে একজন বাইসাইকেল চড়ে এসেছিল। সে কী কাণ্ড! দল বেঁধে ক্লাশ ভেঙে ছেলের দল গিয়েছিল অদ্ভুত সেই দুই চাকার যন্ত্র দেখতে। মানুষটা কী যাদু জানে? এমনি দাঁড় করিয়ে রাখো, কাৎ হয়ে ধপাস করে পড়ে যাবে। মানুষটা উঠলো কী তেজি একটা খরগোশের মতে বাই বাই করে ছুটতে লাগল। তাজ্জবই বটে। ছেলেরা গবেষণা করে, বাই বাই করে ছোটে বলেই বাইসাইকেল নাম। কে একজন বলে, ধ্যাৎ, সাইকেলে আবার শব্দ হয় নাকি। আসলে এটা বাইছাগল। দেখছিস না ছাগলের মতো দুটো শিং। ইদ্রিসের মনে পড়ে হ্যাঁণ্ডেলের কালো দুটো গ্রীপ দেখে সেদিন তারও বিশ্বাস হয়েছিল এ নিশ্চয়ই কলের ছাগল।

খেয়ে দেয়ে জোহরের নামাজ পড়ে আবার পালকিতে উঠল ওরা। হুমহাম কোরাসের তালে তালে পালকি চলল রাজার হাট ছাড়িয়ে। এই যায় পলাশবারী, এই গেল শিমুলকলি, এই এলাম কালীরবাজার। হুমহাম হুমহাম। জোরে চলো ভাই জোরে চলো। পা চালিয়ে চলা। বেলাবেলি কুড়িগ্রামে পৌঁছুতে হবে। নইলে খেয়া বন্ধ হয়ে যাবে।

ইদ্রিস বলল, আজ এক ঘটনা দেখলাম হাজি সাহেব।

কী ডাক্তার?

রাজারহাটে মেয়ে বিদায় দিতে এসে বাপ মা আর আত্মীয়স্বজনের মরা কান্নার কথা বলল ইদ্রিস।

এই ব্যাপার?

পিঠেপিঠি গাঁ। এত কান্নার কী আছে?

হাজি সাহেবের গলাটা হঠাৎ ভারী নরোম শোনাল। তিনি বললেন, আমার এখানকার মানুষগুলো ভারী সরল ডাক্তার। নিজের গাঁ ছাড়া কিছু বোঝে না। গাঁয়ের বাইরে এক পা ফেলে না। গাঁয়ের বাইরে জীবনে দুচার বারের বেশি এরা যায় না। বুঝলেন?

ইদ্রিসের বিস্ময় তবু যায় না। এ যুগে এরকম মানুষও হয় নাকি। হাজি সাহেব বলে চললেন, সারা বাংলায় এমন সরল এমন ঘরকুনো মানুষ আপনি পাবেন না ডাক্তার। বিদেশীকেও ভারী ভয় করে ওরা। এই যে দক্ষিণ থেকে এলেন আপনি, আপনাকে ওরা বলবে ভাটির মানুষ——–ভাটিয়া। ভাটিয়াকে বড় ভয় করে রংপুরের লোক। ভাবে, তাদের ঠকিয়ে–লুটপাট করতে এসেছি ভাটি থেকে। আমার মনে হয় কী জানেন, এককালে দক্ষিণ থেকে ডাকাতের দল আসতো এ দেশে। এখানকার ফসল ভালো। বীজ বুনলেই সোনা ফলে। দক্ষিণের মতো কষ্ট করে ফসল ফলাতে হয় না। তাই দক্ষিণের মানুষ যে লোভ করবে এতে আর আশ্চর্য কী?

 হুঁ তাতো বটেই।

ভালো কথা মনে পড়ল। হাজি সাহেব একটু ঘন হয়ে বসলেন। গলা নামিয়ে বললেন, আপনাকে একটু সাবধানে চলতে হবে।

মানে?

না, না, সাবধান মানে প্রাণের ভয়ে সাবধান হতে বলছি না। ঐ যে বললাম ভাটির মানুষকে এরা ভয় করে, অবিশ্বাস করে। আপনাকে একটু বুঝে সমঝে চলতে হবে। ভয়টা ভাঙ্গাতে হবে। অবিশ্বাস দূর করতে হবে। ওদের মন জয় করতে হবে। একবার যদি ওদের মনের নাগাল পেয়ে যান, একবার যদি আপনাকে ওরা নিজদের বলে ভাবতে পারে, তাহলে দেখবেন আপনার জন্য সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে ওরা গররাজি হবে না।

ইদ্রিস চিন্তান্বিত হয়ে পড়ে। এতক্ষণ মন বড় চঞ্চল হয়েছিল পতিদহে পৌঁছুনোর জন্যে। মনে মনে সে ছবি দেখছিল কেমন হবে তার ডিস্পেন্সারী, কী ভাবে সাজাবে। সে দেখছিল, ঐতো রোগীরা ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে, সে ওষুধ দিচ্ছে, ঐতো সে ব্যাগ ঝুলিয়ে দূরে যাচ্ছে রোগী দেখতে। এখন, হাজি সাহেবের এই কথার পর, ছবিটা যেন মুছে গেল। একটা উদ্বেগ এসে সব ঢেকে দিয়ে গেল। মনের মধ্যে কেমন শিরশির করতে লাগল তার। মনে হলো, হঠাৎ তার কাঁধে এক গুরুভার চেপে বসেছে। সে বাইরের চলমান দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে আনমনা হয়ে বসে রইল।

তার সে ভাব গোপন রইলো না হাজি সাহেবের কাছে। তিনি হেসে বললেন, আরে ডাক্তার যে একেবারে ভয় পেয়ে গেলেন।

ম্লান হাসলে ইদ্রিস। বলল, কই না।

ঘাবড়াবার কিছু নেই। আমি রয়েছি কী করতে! ভাটির লোক হলেই যে বাঘ ভালুক হবে তা নয়। ওরা হচ্ছে শিশুর মতো। একটু আদর চায়, আন্তরিকতা চায়। ব্যাস, দেখবেন আপনার পায়ে পায়ে ঘুরছে পতিদহের মানুষ।

হাজি সাহেব যথাসম্ভব চেষ্টা করেন ইদ্রিসের মনের মেঘ দূর করতে। বলেন, দোষ এদেশের লোকেরই বা কী দেব। তাহলে এক গল্প বলি শুনুন।

ইদ্রিস বাইরের দৃশ্য থেকে চোখ ফিরিয়ে আনে।

হাজি সাহেব বলতে থাকেন, শুনুন তাহলে। নাম ধাম বলব না। দুদিন বাদে নিজেই বুঝতে পারবেন কার কথা বলছি। যার কথা হচ্ছে সে এদেশেই আছে। বিরাট জমিজমা সহায়। সম্পত্তি, টাউনে চার পাঁচখানা পাকা বাড়ির মালিক। বাড়ি ঢাকায়। আজ থেকে বছর তিরিশেক আগে এসে পড়ে কুড়িগ্রামে। লোকটা ম্যাজিক জানতো কিছু কিছু। দলবল কিছুই নেই। একাই খেলা দেখায়। খেলা দেখাতে এলো এ অঞ্চলে। হাটে হাটে যায়, ম্যাজিক দেখায়। লোকে হাঁ করে দেখে আর ভাবে না জানি কত বড় দৈবশক্তি আছে তার। বলছিলাম না, আমার দেশের মানুষের মতো সরল মানুষ আর হয় না। সেই ভদ্রলোক ম্যাজিক দেখিয়ে নিরীহ লোকজনের ওপর এমন প্রভাব করে ফেলল যে, দুদিন বাদে তারা সব তার কথায় ওঠবোস করতে লাগল। এই করে, বলব কী ডাক্তার, পাঁচ টাকা বিঘে দরেও জমি হাতাতে লাগল সে। অপুত্রক যারা তারা জমি লিখে দিয়ে যেতে লাগল সেই ম্যাজিশিয়ানের নামে। ম্যাজিশিয়ানই বটে! ইদ্রিস বলল। নইলে লোকজন এত বোকাও হয়! কিছু বুঝতে পারে না?

এই হচ্ছে আমার দেশের মানুষ। হাজি সাহেব খেদের সঙ্গে উচ্চারণ করলেন। তারপর শুনুন। বছর পাঁচেকের মধ্যে এ অঞ্চলের মধ্যে কেউকেটা হয়ে পড়ল লোকটা। এখন পাটের কারবার করে। গঙ্গার পাড়ে নিজের গুদাম করেছে কয়েকটা। লাখপতি। আর যাদের জমি যাদের টাকা ঠকিয়ে নিয়েছিল তারা না খেয়ে মরছে। বলুন, এরপরও ভাটির মানুষকে বিশ্বাস। করবে এরা? এতো একটা শুনলেন। এ রকম কত ঘটনা হয়েছে খাস রংপুরে, গাইবান্ধায়, নীলফামারীতে।

হঠাৎ ইদ্রিস প্রশ্ন করে বসল, আমিও তো ভাটির লোক। আমাকে বিশ্বাস করলেন কী করে? হাতের পাঁচ আঙুল কি আর সমান হয় ডাক্তার?

সমান না হলেও পাঁচটাই আঙুল তো বটে। আমিও যে ওরকম হবে না তার গ্যারান্টি কী? হাজি সাহেব ঐ কুঞ্চিত করে বসে রইলেন খানিকক্ষণ। তারপর বললেন, না, মানুষের গ্যারান্টি কেউ দিতে পারে না। এ কী আর ওয়েস্ট এণ্ড কোম্পানির ঘড়ি?

বলেই হা হা করে হেসে উঠলেন হাজি জয়েনউদ্দিন। সে হাসির সঙ্গে অস্বস্তি বোধ করল ইদ্রিস। হাজি সাহেব বললেন, প্রিন্সিপ্যাল খান তোক চিনতে ভুল করেন না। তিনি যখন আপনার নাম করেছেন, তখনি জানি মনের মত লোক পেয়েছি আমি। প্রিন্সিপ্যাল সাহেব বাংলার গৌরব, মুসলমান সমাজের জন্যে তার যে দান তা আজ কারো চোখে না পড়ুক কাল পড়বে।

বেলা পড়ে আসছে। আরো জোরে পা চালাও ভাই। টোগরাইহাটের শ্মশান দেখা যায়। শ্মশান বাঁয়ে রেখে আবার বড় সড়কে উঠল পালকি।

ইদ্রিস লক্ষ্য করছিল লাইট রেলওয়ে আর ডিস্ট্রিকট বোর্ডের এই রাস্তা যেন জড়াজড়ি করে পড়ে আছে। এই একটা আরেকটাকে কেটে সরে যাচ্ছে, আবার কাছে আসছে, বেশ খানিকটা সমান্তরালে গেছে, এক সময়ে আর দেখা গেল না, আবার দেখা গেল। কত রং বেরংয়ের পাখি, গাছ–গাছালি। বড় বড় আমের ছায়ায় ঢাকা ডিস্ট্রিকট বোর্ডের পথ। কোথাও বুঝি হাটবার আজ। দলে দলে হাটুরেরা ঘাড়ে পিঠে বাকে করে শাক–সবজি চাল–ডাল তেলের কলসি দুধের ভাড় নিয়ে চলেছে। তফাৎ যাও, তফাৎ যাও, রাস্তা ছাড়া রাস্তা দাও।  

বেহারারা সুর করে বলে আর তালে তালে পা ফেলে এগোয়।

ঐ যে দূরে কুড়িগ্রামের ডাক–বাংলো দেখা যায়। লাল টিনের ছাদে অপরাজিতা লতিয়ে উঠেছে।

বেলাবেলিই পৌঁছুনো গেছে। ধরলার পাড়ে মসজিদ। সেখানে মাগরেবের নামাজ পড়ল ওরা। নামাজিরা অনেকেই হাজি জয়েনউদ্দীনকে সালাম দিল, কুশল জিজ্ঞেস করল।

কোত্থেকে আসছেন?

কলকাতা থেকে। ডাক্তার নিয়ে যাচ্ছি আমার ডিস্পেন্সারীর জন্যে। এই যে ডাক্তার। ইদ্রিসের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেন তিনি। ইদ্রিসকে তারা গভীর চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে।

বাড়ি কোথায় আপনার?

সিরাজগঞ্জ।

ইদ্রিস যেন দেখতে পায় সন্দেহের কালো ছায়ায় আঁধার হয়ে আসে প্রশ্নকর্তার চোখ। হাজি সাহেব বলছিলেন ভাটির মানুষকে এরা ভয় করে। কথাটা বোধ হয় মিথ্যে নয়।

একজন হাজি সাহেবকে জিজ্ঞেস করে, রেললাইন কদ্দুর? নতুন ইটিশন কবে হবে?

এই হলো বলে। সামনের মাসে দিল্লি যাচ্ছি আবার।

হবে তো?

হবে না মানে? যে বুদ্ধি দিয়েছি! বলেছি নতুন করে সড়ক বাঁধতে হবে না লাইনের জন্য। এখন যে ডিস্ট্রিকটু বোর্ডের রাস্তা আছে তার ওপরই লাইন বসানোর পরামর্শ দিয়ে এসেছি।

লাইনটা দিতে পারলে হাজি সাহেব আপনার একটা নাম থেকে যাবে।

হাজি জয়েনউদ্দীন হাসেন ছোট্ট করে। নিজের প্রশংসা শোনতে অভ্যস্ত তিনি। ইদ্রিস লক্ষ্য করে, প্রশংসা গ্রহণ করেন এমন সুন্দরভাবে যে নিলজ্জিত মনে হয় না তাকে। প্রসঙ্গ বদলানোর জন্যে হাজি সাহেব বলেন, ডাক্তার পছন্দ হয়েছে?

ভালোই তো। দশ বিশ ক্রোসের ভেতরে ডাক্তার নাই। গরিব আমরা দোয়া করি আপনাকে।

ধরলা পার হতে বেশিক্ষণ লাগল না! অদ্ভুত এই নদী। এখন পড়ে আছে সুতোর মতো চিকন চাকন। বর্ষায় ফুলে ওঠে, বাদামি রংয়ের পানি টগবগ টগবগ করতে থাকে, একেকদিনে বিশ তিরিশ হাত পাড় ধ্বসিয়ে খলখল করে হাসতে হাসতে ছোটে।

ওপারে ঘোড়া এসেছে হাজি সাহেবের। মনিবকে দেখে ঘোড়া মাটিতে পা ঠুকতে থাকে। হাজি সাহেব ঘোড়ার পিঠে উঠে বসলেন। বললেন, ডাক্তার আমি যাচ্ছি। ওরে তোরা দেরি করিসনে বাবা। জোর পায়ে পালকি দিয়ে আসবি।

অন্ধকারের ভেতরে এক নিমিষে হারিয়ে গেলেন ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়ে পতিদহের বড় তরফ। ইদ্রিস দাঁড়িয়ে রইল পালকির সামনে। কুলকুল করে বয়ে যাচ্ছে নদী। দূরে বিন্দুর মতো চলমান এক ফোঁটা আলো দেখা যাচ্ছে। এক গা থেকে আরেক গায়ে যাচ্ছে কেউ। কয়েকজন লোক খেয়ার আশায় বসে ছিল, তারা উঠে গেল নৌকোয়। চারদিকে নিস্তব্ধ, শান্ত, স্থির। আকাশে ঝকঝক করছে তারা, যেন কেউ একটা বিরাট সুজনী পেতে রেখেছে।

এতক্ষণ হাজি সাহেব সঙ্গে ছিলেন, সে ছিল একরকম। এখন একা, সে আরেক রকম। দুর দুর করতে লাগল বুকের ভেতরটা। আল্লাহ যা করেন তা মানুষের মঙ্গলের জন্যই। ইদ্রিসের মনে পড়ল কোরানের সেই আয়াতটা ওঠ হে বাচ্ছাদিত মানব, তোমার প্রভু তোমাকে পরিত্যাগ করেন নাই। তিনি কি তোমাকে এতিম হিসেবে পান নাই? এবং সেখান থেকে বর্তমান অবস্থায় উন্নীত করেন নাই?

মনটা দৃঢ় সংযত হয়ে এলো তার। আপনা থেকেই নুয়ে পড়া মাথা খাড়া হয়ে উঠলো। এই বরং ভালো হয়েছে। নতুন করে সে শুরু করবে জীবন, স্কুলে যাবে অতীত। এ মাটিকে সে আপন করে নেবে। এখানে সে তার স্বপ্ন রচনা করবে। এই যে মানুষগুলো তার চারদিকে ছায়ার মতো দাঁড়িয়ে আছে, এদের মুখ সারাজীবন ধরে পরিচিত হয়ে থাকবে তার। তাই নতুন করে আবার সে সবার দিকে তাকিয়ে দেখল। তারপর পালকিতে বসে বলল, বেরিয়ে পড় ভাই।

পালকি চলল অন্ধকার মাঠঘাট পেরিয়ে। টানটান হয়ে শুয়ে পড়ল ইদ্রিস। মায়ের কথা মনে হলো। মা তার নাম ধরে ডাকছেন। কতদূর থেকে মিহি হয়ে ভেসে আসছে তার গলার আওয়াজ। ই–দ্র–ই–স।

মা এখন কী করছেন? হয়ত হাঁস–মুরগির খোপ বন্ধ করে ডিবে হাতে এ দুয়োর সে দুয়োর ঘুরে বেড়াচ্ছেন। হাতে হাতে তুলছেন উঠোনে কী পড়ে আছে না আছে। একটু পরে নামাজ পড়তে বসবেন মা। নামাজ শেষে বার বাড়িতে বাবার কবর জিয়ারত করতে আসবেন। পায়ের কাছে ভাঙা ইটের উপর ডিবেটা জ্বলতে থাকবে, কাঁপতে থাকবে বাতাসের দাপটে। ইদ্রিসের একেক সময় মনে হয় মা বোধ হয় সারাদিন পরে এই সময়টাতে বাবার কবরের কাছে আসেন কথা বলতে। ঠিক যেমন বাবা বেঁচে থাকতে মা রাতে পানের বাটা নিয়ে বসতেন বাবার পায়ের কাছে। রাত হবে আরো। রমজান চৌকিদার জাগো হো হাঁক দিয়ে দাওয়ায় চেপে বসে এক টুকরো আগুনের আবদার করবে। আগুন আছে তো তামাকও দাও। তামাক টানবে আর বলবে, আপনার কোনো ভয় নাই মা জননী। দুয়োরে ঝাঁপ দিয়া শুইয়া থাকেন গা।

মার সঙ্গে আবার কবে দেখা হবে কে জানে? কাল একটা চিঠি লিখবে ইদ্রিস।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *