২৩. প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

১. প্রকৃতি এমন একটা পুস্তক খণ্ড যার সম্পাদক এবং প্রকাশক স্বয়ং বিধাতা।

ডব্লিউ. হেনলি

২. বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গে ভাব করার একটা মস্ত সুবিধা এই যে, সে আনন্দ দেয় কিন্তু কিছু দাবি করে না, সে তার বন্ধুত্বকে ফাঁসের মতো বেঁধে ফেলতে চেষ্টা করে না, সে মানুষকে মুক্তি দেয়, তাকে দখল করে নিতে চায় না।

–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

৩. তোমাতে আমাতে আছে মিল এই মাত্র
ঠকিতে যদিও শিখি, শিখিনি ঠকামি।
জীবনে জ্যাঠামি আর সাহিত্যে ন্যাকামি।
দেখে শুধু, জ্বলে যায় আমাদের গাত্র,
কারো গুরু নই, মোরা, প্রকৃতির ছাত্র,
আজো তাই কাঁচা আছি, শিখিনি পাকামি।

–প্রমথ চৌধুরী

৪. সুন্দর তুমি কতভাবে রূপে প্রকাশিছ আপনারে,
আকাশের নীল সাগরের জলে শ্যামল শস্যভারে।

–আ. ন. ম. বজলুর রশীদ

৫. আষাঢ় আকাশে আঁধার ঘনিয়ে আসে
জহুরী চাপায় সুরভী হাওয়ায় ভাসে,
আজি আমি নাই শুধু আমার প্রিয়ার পাশে।

করুণানিধি বন্দ্যোপাধ্যায়

৬. বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ
খুঁজিতে যাই না আর; অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে
চেয়ে দেখি ছাতার মতন বড়ো পাতাটির নিচে বসে আছে
ভোরের দোয়েল পাখি। চারিদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ
জাম বট কাঁঠালের হিজলের-অশ্বথেরা করে আছে চুপ;
ফণীমনসার ঝোপে শটিবনে তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে;
মধুকর ডিঙা থেকে না জানি সে কবে চাঁদ চম্পার কাছে
এমনই হিজল–বট–তমালের নীল ছায়া বাংলার অনুরূপ রূপ দেখেছিলো;

জীবনানন্দ দাশ

৭. ঝড়কে আমরা সবাই ভয় পাই কিন্তু আমাদের মনে রাখা উচিত–ঝড় আছে। বলেই শক্তিকে আমরা সম্যকভাবে উপলব্ধি করতে পারি।

টমাস ক্যাম্পবেল

৮. কচি লেবুপাতার মতো নরম সবুজ আলোয়
পৃথিবী ভরে গিয়েছে এই ভোরের ভেলা;
কাঁচা বাতাবীর মতো সবুজ ঘাস–তেমনি সুঘ্রাণ
হরিণের দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে নিচ্ছে।
আমারো ইচ্ছা করে এই ঘাসের এই ঘ্রাণ হরিৎ মদের মতো
গেলাসে-গেলাসে পান করি,
এই ঘাসের পাখনায় আমার পালক,
এই ঘাসের শরীর ছানি–চোখে চোখ ঘষি,
ঘাসের পাখনায় আমার পালক,
ঘাসের ভিতর ঘাস হয়ে জন্মাই কোনো এক নিবিড় ঘাস-মাতার
শরীরের সুস্বাদ অন্ধকার থেকে নেমে।

জীবনানন্দ দাশ

৯. বরষার ভরা নদী জল থই থই
নদী তীরে একা বসে শুধু চেয়ে রই
কলকল অবিরল
কোথা যায় এত জল
খরতর ধারা ছুটে–দেখে ভীত হই।
ঢেউগুলো নাচে তার দুই কিনারায়
বৈকালী রোদ লেগে রূপ ঝলকায়
ওই দিক সীমানায়
যত দূর চোখ যায়
জল বিনে আর কিছু চোখে পড়ে কই?

বি. সি. রায়

১০. আমার ঘরের আশেপাশে যেসব আমার বোবা-বন্ধু আলোর প্রেমে মত্ত হয়ে আকাশের দিকে হাত বাড়িয়ে আছে তাদের ডাক আমার মনের মধ্যে পৌঁছাল। তাদের ভাষা হচ্ছে জীবজন্তুর আদি ভাষা, তার ইশারা গিয়ে পৌঁছায় প্রাণের স্তরে, হাজার হাজার বৎসরের ভুলে যাওয়া ইতিহাসকে নাড়া দেয়; মনের মধ্যে যে নাড়া ওঠে সেও এই গাছের ভাষায়–তার কোনো স্পষ্ট মানে নেই অথচ তার মধ্যে বহু যুগ-যুগান্তর গুনগুনিয়ে ওঠে।

–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

১১. পলে পলে আলোকে পুলকে;
ভরি উঠে গোলাপ ঊষার,
স্ফুরিত পাপড়ি, দিকে দিকে,
কচি ঠোঁটে কি বলিতে চায়?

–সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

১২. চৈত্র যে যায় পত্র ঝরা,
গাছের তলায় আঁচল বিছায়
ক্লান্তি অলস বসুন্ধরা।

–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

১৩. শিউলি ফুলের নিশ্বাস বয়
ভিজে ঘাসের ‘পরে,
তপস্বিনী উষার পরা পুজোর চেলির
গন্ধ যেন
আশ্বিনের এই প্রথম দিনে।

–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

১৪. মাটি যে আমাদের কত বড় আশ্রয়স্থল সমুদ্রের উপর অসহায়ভাবে ভাসমান না হলে হৃদয়ঙ্গম হয় না। সমুদ্রের কুলে বসে সমুদ্রকে দেখে এক মহান ভাবে আপুত হই; কিন্তু দিনের পর দিন যখন দশ দিকের নয় দিক কেবল সমুদ্রই দেখি আর দশম দিকে দেখি সমুদ্র দিগ্বলয়িত আকাশ তখন ভয়ে প্রাণ যায়।

অন্নদাশঙ্কর রায়

১৫. সাগরের প্রশংসা করো, কিন্তু স্থলে অবস্থান করো

হার্বার্ট

১৬. দিনান্তের মৌন সাজে নিষ্প্রভ সবিতা
সহসা মিশিল কোন অস্ত পারাবারে।
বিষাদে আবরে মুখ গাঢ় অন্ধকারে
সন্ধ্যারানী বক্ষে তার জ্বলে রক্ত চিতা।

কে. এম. শমসের আলী

১৭. হে মোর সন্ধ্যা, যাহা কিছু ছিল সাথে
রাখিনু তোমার অঞ্চল-তলে ঢাকি।
আঁধারের সাথী, তোমার করুণ হাতে
বাঁধিয়া দিলাম আমার হাতের রাখি।

–প্রবোধকুমার সান্যাল

১৮. দিনের আলোক রেখা মিলিয়ে দূরে।

নেমে আসে সন্ধ্যা ধীরে ধরণীর পুরে। তিমির ফেলেছে ছায়া, ঘিরে আসে কালোমায়া, প্রান্তর-কানন গিরি পল্লী মাঠঘাট একাকার হয়ে আসে আকাশ বিরাট।

শাহাদাত হোসেন

১৯. আকাশে সোনার মেঘ
কত ছবি আঁকে আপনার নাম তবু লিখে নাহি রাখে।

–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

২০. মাটিকে ভালোবাসো, মাটি তোমাকে ভালোবাসবে।

ইবনে আহমদ

২১. রবি কিরণের চুম্বনে আনে ক্ষমা–
পাখির কাকলি দিয়ে আনন্দ জমা।
বাগিচার মাঝে স্রষ্টার নৈকট্য যত।
ধরণীতে আর বুঝি কোথা নেই তত।

ডরোথি ফ্রান্সিস গালি

২২. তারি সঙ্গে মনে পড়ে
মেঘলা দিনের গান
“বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
নদেয় এল বান।”

–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

২৩. রাত্র ফোঁটায় তারা আর নারীকে আরও উজ্জ্বলতায়।

বায়রন

২৪. রাত আমাদের সমস্যাগুলোকে না মিটিয়ে বরং আরও উজ্জ্বল করে তোলে।

–সেনেকা

২৫. রাত–যখন মিলিয়ে যায় শব্দ আর জ্যান্ত হয়ে ওঠে বস্তু। যখন সম্পন্ন হয় দিনের ধ্বংসাত্মক বিশ্লেষণ, আর যা-কিছু সত্যি সত্যি গুরুত্বপূর্ণ, হয়ে যায় ফের পূর্ণ এবং সমর্থ। যখন মানুষ জোড়া দেয় নিজের টুকরো-টাকরাগুলোকে, আর বেড়ে ওঠে গাছের মতো শান্ত।

সাঁ এক্সপেরি

২৬. কোনো মুসলমান কোনো ফসলের গাছ বা বাগিচা লাগাইলে বা ক্ষেতে শস্যের বীজ বপন করিলে তাহা হইতে যদি কোনো মানুষ বা পশুপাখি খায়, এমনকি যদি চোর চুরি করিয়াও নিয়া যায় তবে ঐ বাগানওয়ালা এবং ক্ষেত্রওয়ালা ছদগার সওয়াব পাইবে।

–আল-হাদিস

২৭. ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে
ডালে ডালে ফুলে ফলে পাতায় পাতায় রে,
আড়ালে আড়ালে কোণে কোণে।

–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

২৮. আমি বর্ষা, আসিলাম গ্রীষ্মের প্রদাহ শেষ করি,
মায়ার কাজল চোখে, মমতায় বর্মপুট ভরি।

–বেগম সুফিয়া কামাল

২৯. ওগো ও কর্ণফুলী!
তোমার সলিলে পড়েছিল কবে কার কানফুল খুলি;
তোমার স্রোতের উজান ঠেলিয়া কোন তরুণী কে জানে,
সাম্পান নায়ে ফিরেছিল তার দয়িতের সন্ধানে।
আনমনা তার খুলে গেল খোঁপা, কানফুল গেল খুলি,
সে ফুল যতনে পড়িয়া কর্ণে হলে কি কর্ণফুলী?

কাজী নজরুল ইসলাম

৩০. গাছগুলি যে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ওদের মধ্যে যেন একটা না-জানা ভাব আছে। সেই ভাবনায় বর্ষার মেঘের ছায়ায় নিবিড় হয়ে শীতের সকালের রৌদ্রে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সেই না-জানা ভাবনার ভাষায় কচি পাতায় ওদের ডালে বকুনি জাগে, গান ওঠে ফুলের মঞ্জুরিতে।

–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

৩১. ভিজে হয়ে আসে মেঘে এ দুপুর–চিল একা নদীটির পাশে
জারুল গাছের ডালে বসে বসে চেয়ে থাকে ওপারের দিকে;
পায়রা গিয়েছে উড়ে তবু চরে, খোপ তার; শসালতাটিকে
ছেড়ে গিয়ে মৌমাছি;–কালো মেঘ জমিয়াছে মাঘের আকাশে,
মরা প্রজাপতিটির পাখার নরম রেণু ফেলে দিয়ে ঘাসে
পিঁপড়েরা চলে যায়,দুই দণ্ড আম গাছে শালিখে শালিখে
ঝুটোপুটি, কোলাহলবউ কথা কও আর রাঙা বউটিকে
ডাকে নাকো–হলুদ পাখনা তার কোন যেন কাঁঠাল পলাশে।

জীবনানন্দ দাশ

৩২. এই মাঠে–এই ঘাসেফলসা এ ক্ষীরুয়ে যে গন্ধ লেগে আছে
আজো তার; যখন তুলিতে যাই টেকিশাক দুপুরের রোদে
শস্যের ক্ষেতের দিকে চেয়ে থাকি-অঘ্রানে যে ধান ঝরিয়াছে
তাহার দু’এক গুচ্ছ তুলে নেই, চেয়ে দেখি নির্জন আমোদে
পৃথিবীর রাঙা রোদ–চড়িতেছে আকাক্ষার চিনিচাপা গাছে—
জানি সে আমার কাছে আছে আজো–আজো সে আমার কাছে আছে।

জীবনানন্দ দাশ

৩৩. ঝরনা তোমার স্ফটিক জলের
স্বচ্ছ ধারা,
তাহারি মাঝারে দেখে আপনারে সূর্য তারা।

–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

৩৪. আমার গোধূলি স্বপ্নে আজ তুমি অযুত বৎসর,
নিঃসঙ্গ সন্ধ্যার তারা জেগে আরো নিভৃত একাকী।

ফররুখ আহমদ

৩৫. নদী প্রাণের টানে বয়ে যায়, তাই তার কোনো ক্লান্তি নেই। এই বয়ে যাওয়াতেই তার আনন্দ।

–এইচ, এস, মেরিম্যান

৩৬. প্রকৃতির ভাষা সর্বজনীন।

রিচার্ড জেফারিজ

৩৭. শান্ত নদী চাই না, যে নদী ভাঙতেও জানে, যার গতি আছে, সুর আছে, গান আছে সমুদ্রের সাথে, আকাশের সাথে যার চিরদিনের যোগ–আমরা চাই সেই নদী।

–গোলাম মোস্তফা

৩৮. প্রকৃতি যে-দরজা খুলে দিয়েছে, এ ছাড়া আর কোনো দরজা নেই জ্ঞানরাজ্যে পৌঁছুবার; প্রকৃতিতে যে-সত্য খুঁজে পাওয়া যায়, এর বাইরে আর কোনো সত্য নেই।

লুথার বারব্যাঙ্ক

৩৯. প্রকৃতি তার গোপন কথা একদিন বলবেই।

–এমিলি ডিকেন্স

৪০. বাতাস শুধায়, বলো তো কমল,
তব রহস্য কী যে।
কমল কহিল, ‘আমার মাঝারে
আমি রহস্য নিজে।’

–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

৪১. ফুল হচ্ছে পৃথিবীর হাসি। এই হাসির উৎকর্ষবিধানের জন্য সকলের চেষ্টা করা উচিত।

–ইমারসন

৪২. উফুল্লতা আছে কেবল মোরগের; যত তুচ্ছ জিনিসই সে দেখুক না কেন, তার আনন্দ ঘোষণা করবে বিচিত্র আর সপ্রাণ দেহভঙ্গিমায়।

লিওনার্দো দা ভিঞ্চি

৪৩. প্রকৃতি সবার কাছে মুক্ত এবং তার কোনো শত্রু নেই।

জেমস হ্যামন্ড

৪৪. প্রকৃতি আমাদের ইশারা করে অনেক কিছু বলতে চায়। কিন্তু প্রকৃতির ইশারা আমরা বুঝি না। বুঝতে পারলে আমরা অনেক উপকৃত হতে পারতাম।

জর্জ হার্বার্ট

৪৫. প্রকৃতি সবার কাছে মুক্ত এবং তার কোনো শত্রু নেই।

–জেমস হ্যামন্ড

৪৬. যে-মানুষ ঝরনার নয়নভোলা মনোহর রূপ দেখে মুগ্ধ হয় না, মুগ্ধ হয়ে অপরূপ বলে ওঠে না, জীবনকে বেশি করে ভালোবাসতে শেখে না, প্রেমিকাকে কাছে পেতে চায় না–সে বোঝে না ঝরনার কুলুকুলু ধ্বনির মর্ম। সে বোঝে না প্রকৃতির প্রকৃত সৌন্দর্য। জীবনের রহস্যও সে উপলব্ধি করতে পারে না।

৪৭. প্রতিটি সামাজিক ব্যবস্থাই প্রকৃতির বিরুদ্ধে যায়, আর প্রতিটি মুহূর্তেই প্রকৃতি তার অধিকার ফিরে পাবার চেষ্টা করছে।

–পল্‌ ভালেরি

৪৮. প্যাঁচা, ধনাত্মক নামের এই পাখি, শীতকালীন ভাষণের জন্যে পালক মুড়ে আলগা করে রেখে দেয়া এক পৌনঃপুনিক প্রশ্ন।

হ্যাল বোরল্যান্ড

৪৯. বুনোহাঁসেরা উত্তরে আসে মুক্তি আর অভিযানের বাণী নিয়ে। বৃহৎ আর দূরপিপাসু পাখিরও সে বেশি; মর্ম সে ভ্রমণলিপ্সা, অশেষ দিগন্ত আর সুদূর পর্যটনের। নিজেই সে ব্যাকুলতা আর স্বপ্ন, অন্বেষা আর বিস্ময়, শেকলহীন পা আর বাতাসপ্রেমী ডানা।

হ্যাল বোরল্যান্ড

৫০. বৃষ্টি! এর নরম স্থাপত্যবিদের হাতের আছে পাথর কাটার সামর্থ্য, আর আছে ছেনি যা পর্বতকেও দিতে পারে মোহনীয় গড়ন।

–হেনরি ওয়ার্ড বিচার

৫১. ভালো বৃষ্টি, খারাপ যাজকের মতোই, জানে না কখন চলে যেতে হয়।

ইমারসন

৫২. বৃষ্টি তৃণের জন্যে ভালো, আর ভালো প্রাণীর জন্যে যারা তৃণ খায়, আর ভালো প্রাণীর জন্যে যারা ওইসব প্রাণী খায়।

স্যামুয়েল জনসন

৫৩. বজ্র মানিক দিয়ে গাঁথা
আষাঢ় তোমার মালা
তোমার শ্যামল শোভার বুকে–
বিদ্যুতেরই জ্বালা।

–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

৫৪. বিকেলের ঝড়ে কি হবে? কি হবে?
ঝড়কে রুখেছে কখন কে কবে?
দু’চারটে গাছ দু’একটা ঘর
পড়বে হয়তো, তবু তারপর
নামবে হয়তো, তবু তারপর
নামবে বৃষ্টি অঝোর ধারায়
ক্ষেত ও খামারে পাড়ায় পাড়ায়।

–আবদুর রশীদ খান

৫৫. শীত রাত ঢের দূরে, অস্থি তবু কেঁপে ওঠে শীতে।

জীবনানন্দ দাশ

৫৬. শীতকাল স্বর্গীয় জল আর মানুষের হৃদয়কে করে পাথর।

ভিক্টর হুগো

৫৭. আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে–এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয়–হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে;
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল ছায়ায়;
হয়তো বা হস হবো কিশোরীর ঘুঙুর রহিবে লাল পায়
সারাদিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধভরা জলে ভেসে-ভেসে;
আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে।

জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এ সবুজ করুণ ডাঙায়;

জীবনানন্দ দাশ

৫৮. বসন্তকে আমি উপভোগ করি ফুলের পরে ফুলে, প্রত্যেকটিকেই মনে হয় আমার জন্যে শেষ উপহার।

আঁদ্রে জিদ

৫৯. শীতের হাওয়ায় লাগলো নাচন
আমলকীর ওই ডালে ডালে।

–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

৬০. শীতকালে প্রতিটি মাইলই দ্বিগুণ।

জজ হাবার্ট

৬১. ফুল নেয়া ভাল নয় মেয়ে
ফুল নিলে ফুল দিতে হয়,
ফুলের মতন প্রাণ দিতে হয়।

জসীম উদ্দীন

৬২. আয়রে বসন্ত তোর ও
কিরণ মাখা পাখা তুলে।
নিয়ে আয় তোর কোকিল পাখীর
গানের পাতা গানের ফুলে।

–দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

৬৩. প্রকৃতির কিছু-কিছু শাসন আছে যা আমাদের প্রত্যেককে মানতে হবে।

বেকন

৬৪. প্রকৃতি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, তবুও মানুষ অগ্রগতির দিকে ধাবিত হয়।

রবার্ট ব্রাউনিং

৬৫. রূপে গন্ধে মানি তুমি জগতে অতুল,
পূজায় লাগ’ না কিন্তু, অনার্য গোলাপ
দেমাকে দেবতাসনে কর না আলাপ–
ফুলের নবাব তুমি, নবাবের ফুল।

–প্রমথ চৌধুরী

৬৬. বসন্তকাল একমাত্র মানুষ ব্যতীত অন্য সব জিনিসকেই যৌবন দান করে।

–জন পল রিচার্ড

৬৭. যেখানে ফুল বিলুপ্ত হতে থাকে, মানুষ সেখানে বাস করতে পারে না।

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট

৬৮. কুসুমের শোভা
কুসুমের অবসানে
মধুরস হয়ে
লুকায় ফুলের প্রাণে।

–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

৬৯. বুড়ো বটগাছ–
দ্বাপর হইতে কলির অবধি আজ
মাঠের সীমায় ঠায় দাঁড়াইয়া শূন্যে নজর তুলি
যেখানে ধরিতে চাহে হেলায় অঙ্গুলি।

বন্দে আলী মিয়া

৭০. আপনি কি মানুষকে বলবেন না যে ক্ষুদ্র এক খণ্ড ভূমিতে ফুলের চাষ করো? দেহের পক্ষে যেমন খাদ্যের আবশ্যক, আত্মার পক্ষেও তো রঙ ও সৌন্দর্যের প্রয়োজন তেমনি।

আগাথ হ্যারিসন

৭১. গোলাপের আকারে আয়তনে, তার সুষমায়, তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গের পরস্পর সামঞ্জস্য বিশেষভাবে নির্দেশ করে দিচ্ছে তার সমগ্রের মধ্যে পরিব্যাপ্ত এককে, সেইজন্য গোলাপ আমাদের কাছে কেবল একটি তথ্যমাত্র নয়, সে সুন্দর।

–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

৭২. যতদিন বেঁচে আছি আকাশ চলিয়া গেছে কোথায় আকাশে
অপরাজিতার মতো নীল হয়ে আরো নীল–আরো নীল হয়ে
আমি যে দেখিতে চাই,–সে আকাশ পাখনায় নিঙড়ায়ে লয়ে
কোথায় ভোরে বক মাছরাঙা উড়ে যায় আশ্বিনের মাসে,
আমি যে দেখিতে চাই,–আমি যে বসিতে চাই বাংলার ঘাসে,

জীবনানন্দ দাশ

৭৩. ঈশ্বরকে খোঁজার সবচেয়ে ভালো জায়গা হচ্ছে বাগানের মধ্যে তাঁকে খোঁজা। তুমি সেখানে তার জন্য মাটি খুঁড়ে তাঁকে খুঁজতে পার।

জর্জ বার্নার্ড শ

৭৪. বসন্তের হাওয়া সবে আরণ্য মাতায়
নৃত্য উঠে পাতায় পাতায়
এই নৃত্যের সুন্দরকে অর্ঘ্য দেয় তার,
“ধন্য তুমি” বলে বার বার।

–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

৭৫. বেড়াল বেশ অভিজাত প্রাণী, আর বিচিত্র সব অসুখেও তারা ভোগে। কিন্তু এমন কোনো বেড়ালের দেখা আমি পাইনি যে নিদ্রাহীনতায় ভুগছে।

যোসেফ উড ক্রাচ

৭৬. বেড়ালেরা মানুষেরই মতো স্তাবক।

–ওয়াল্টার স্যাভেজ ল্যাওর

৭৭, এমন কোনো বিশ্বাস নেই যা ভেঙে পড়ে না একমাত্র বিশ্বস্ত কুকুরেরটা ছাড়া।

কনরাড জেড লরেঞ্জ

৭৮. রজনী শাওন ঘন, ঘন দেয়া গরজন
রিমি ঝিমি শব্দে বরিষে,
পালঙ্কে শয়ান রঙ্গে, বিগলিত চীর অঙ্গে,
নিদ্রা যাই মনের হরিষে।

জ্ঞানদাস

৭৯. বর্ষা ঋতুটা মোটের উপরে শহরে মনুষ্যসমাজের পক্ষে তেমন সুখকর নয়– ওটা আরণ্য প্রকৃতির বিশেষ উপযোগী।

–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

৮০. খেলোয়াড়, অভিনেত্রী এবং নর্তকীর জীবনে মাত্র একটি ঋতুই আছে। তার নাম বসন্ত ঋতু।

শংকর

৮১. একি গরজত তোর, আজি এলোকেশ,
হাসির ফলকে নাচে তরিত চপলা,
গুরু গুরু তোপধ্বনি যেন রণবেশ,
আকাশ পাতাল ভয়ে হয়েছে উতলা।

সিরাজউদ্দিন চৌধুরী

৮২. কুকুরের সেরা বন্ধু তার নিরক্ষরতা।

অগডেন ন্যাশ

৮৩. প্রাণীরা আমাদের ভাইবন্ধু কিছু নয়; ওদের জাত আলাদা, আমরা কেবল জীবন আর সময়ের জালে ওদের আটকে ফেলেছি।

হেনরি বেস্টন

৮৪. শারদ পূর্ণিমা নিরমল রাতি
উজল সকল বন।
মল্লিকা মালতী বিকশিত তিথি
মাতাল ভ্রমরাগণ।

দ্বিজ চণ্ডীদাস

৮৫. সকল কাজল করুণ নয়ন অধরে মধুর হাসি,
মলিন বসনা সন্ধ্যা দাঁড়ায় গগন কিনারে আসি।

–বেগম সুফিয়া কামাল

৮৬. ধান কাটা হয়ে গেছে কবে যেন–ক্ষেতে মাঠে পড়ে আছে খড়
পাতা কুটো ভাঙা ডিম–সাপের খোলস নীড় শীত।
এইসব উত্রায়ে ঐখানে মাঠের ভিতর
ঘুমাতেছে কয়েকটি পরিচিত লোক আজকেমন নিবিড়।

জীবনানন্দ দাশ

৮৭. হাজার বছর শুধু খেলা করে অন্ধকারে জোনাকির মতো :
চারিদিকে চিরদিন রাত্রির নিধান;
বালির উপরে জ্যোৎস্না–দেবদারু ছায়া ইতস্তত
বিচূর্ণ থামের মতো : দ্বারকার; দাঁড়ায়ে রয়েছে মৃত্যু ম্লান।
শরীরে ঘুমের ঘ্রাণ আমাদের–ঘুচে গেছে জীবনের সব লেনদেন;
মনে আছে? শুধাল সে–শুধালাম আমি শুধু ‘বনলতা সেন?’

–জীবনানন্দ দাশ

৮৮. সমুদ্রের বিশেষ মহিমা এই যে, মানুষের কাজ সে করিয়া দেয়, কিন্তু দাসত্বের চিহ্ন সে গলায় পরে না।

–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

৮৯. হে সিন্ধু, হে বন্ধু মোর, হে চির-বিরহী
হে অতৃপ্ত! রহি রহি
কোন বেদনায়
উদ্বেলিয়া ওঠ তুমি কানায় কানায়?

কাজী নজরুল ইসলাম

৯০. আমিও তোমার মতো নিঃসন্তান হয়েছি এখন।
তীর নেই, শস্য নেই, পল্লী কুটির, কানন।
শুধু ঢেউ, চাঞ্চল্য, ফুলে ওঠা দীর্ঘশ্বাস,
আর সকল দিগন্ত জুড়ে ক্ষমাহীন ক্ষুধার বিস্তার।

বুদ্ধদেব বসু

৯১. কুকুরের মধ্যে সংহতির চেয়ে প্রেমের ভাগটা বেশি। আমাদের প্রতি ওরা খুবই সৎ। কিন্তু নিজেদের প্রতি একদমই সৎ নয়।

ক্লারেন্স ডে

৯২. জন্তু-জানোয়াররা বড়োই নিবেদিত বন্ধু–কখনো প্রশ্ন করে না, সমালোচনাও করে না।

জর্জ এলিয়ট

৯৩. জীবজন্তুদের সৃজনশীলতায় আমরা পরিয়ে দিয়েছি শেকল, তা ছাড়া আমাদের এসব দূরসম্পর্কীয় ভাইবোনদের পালক আর পশমও বড় নৃশংসভাবে আমরা ব্যবহার করেছি। ওরা যদি কোনো ধর্ম বানাতে পারত তা হলে নিঃসন্দেহে শয়তানের চেহারা হত মানুষের মতো।

উইলিয়াম র‍্যালফ ইঙ্গ

৯৪. শরতের রংটি প্রাণের রং। অর্থাৎ তাহা কাঁচা, বড়ো নরম। রৌদ্রটি কচি সোনা, সবুজটি কচি, নীলটি তাজা।

–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

৯৫. মেঘ যদি না থাকত, তবে আমরা সূর্যকে এমনভাবে উপভোগ করতে পারতাম না।

জন রে

৯৬. অনেকের ধারণা–আরে দূর! সরকারি বাড়ি–গাছ লাগিয়ে কী হবে…দুদিন বাদে যেতেই হবে…। আর একটু ভাবুন, দুদিন বাদে কবরে যেতে হবে–তবে লাভ কী বিরাট বাড়ি করে, ক্ষণস্থায়ী দেহটাকে ঘিরে রাখা সিল্কের পোশাকে! এ-মনোভাব দুর্বলের, সুন্দর মানুষের নয়।

–এন. এম. হাসানুজ্জামান

৯৭. কুলায় কাঁপিছে কাতর কপোত,
দাদুরী ডাকিছে সঘনে
গুরু গুরু মেঘ গুমরি গুমরি
গরজে গগনে গগনে।

–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

৯৮. জোটে যদি মোটে একটি পয়সা
খাদ্য কিনিও ক্ষুধার লাগি,
দুটি যদি জোটে তবে অর্ধেকে
ফুল কিনে নিও হে অনুরাগী।

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

৯৯. মানুষ বা পশুর মতো ফুলের চেহারায়ও রয়েছে ভাবের অভিব্যক্তি। কতকগুলোকে দেখে মনে হয় যেন হাসছে, কতকগুলোর রয়েছে বিষণ্ণ মুখভাব, কতকগুলো যেন চিন্তাক্লিষ্ট এবং সংশয়ী, এ ছাড়া প্রশস্ত আনন, সূর্যমুখী আর হালিহকের মতো অন্যগুলো অনাড়ম্বর, সরল এবং ঋজু।

–হেনরি ওয়ার্ড বিশার

১০০. আমার আসবে যবে জীবনের সন্ধ্যা,
দিবসের আলো যবে ক্রমে হবে ঘোর,
কানেতে পশিবে নাকো পৃথিবীর শোর,
মোর পাশে ফুটো তুমি, হে রজনীগন্ধা।

–প্রমথ চৌধুরী

১০১. প্রকৃতি বিধাতার অমূল্য দান।

টমাস

১০২. জন্মান্তরে শতবার সে নির্জন তীরে
গোপনে হৃদয় মোর আসিত বাহিরে–
আরবার সেই তীরে সে সন্ধ্যাবেলায়
হবে নাকি দেখা-শুনা তোমায় আমায়?

–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

১০৩. দূর দেশে তোরে বহুদিন ছিনু ভুলে পদ্মা মোর।
আবার শাওনে তোর কূলে কূলে
ভাঙনে লেগেছে জোর
নেমেছে বর্ষা ঘোর।

–হুমায়ুন কবীর

১০৪. এখানে সূর্য ছাড়ায় অকৃপণ
দু’হাতে তীব্র সোনার মতন মদ,
যে সোনার মদ পান করে ধানক্ষেত
দিকে দিকে তার গড়ে তোলে জনপদ।
ভারতী। তোমার লাবণ্য দেহ ঢাকে
রৌদ্র সোনায় পরায় সোনার হার,
সূর্য তোমার শুকায় সবুজ চুল
প্রেয়সী, তোমার কতো না অহংকার।

সুকান্ত ভট্টাচার্য

১০৫. ঝর্ণা! ঝর্ণা সুন্দরী ঝর্ণা!
তরলিত চন্দ্রিকা! চন্দন বর্ণা
অঞ্চল সিঞ্চিত গৈরিকে স্বর্ণে
গিরি-মল্লিকা দোলে কুন্তলে কর্ণে
তনু তরী যৌবন, তাপসী অপর্ণা!

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

১০৬. শীতের হাওয়া ছুঁয়ে গেল ফুলের বনে,
শিউলি বকুল উদাস হল ক্ষণে ক্ষণে,
ধূলি-ওড়া পথের পারে,
বনের পাতা শীতের ঝড়ে
যায় ভেসে ক্ষীণ মলিন হেসে আপন মনে।

–সুকান্ত ভট্টাচার্য

১০৭. নিশি অবসান, ওই পুরাতন
বর্ষা হয় গত।
আমি আজি ধূলিতলে এ জীর্ণ জীবন।
করিলাম নত।
বন্ধু হও, শক্র হও, যেখানে যে কেহ রও
ক্ষমা করো আজিকার মতো
পুরাতন বয়সের সাথে
পুরাতন অপরাধ যত।

–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

১০৮. পদ্মা! বাংলাদেশের আদুরী সলীল-কন্যা পদ্মা। আমি তোমায় ভালবাসি। অনন্তযৌবনা চিরকৌতুকময়ী এ কোন্ দুরন্ত মেয়ে তুমি! বিচিত্র তোমার রূপ, অদ্ভুত তোমার প্রকৃতি! কখনো শান্ত, কখনো চঞ্চল, কখনো লাস্যময়ী, কখনো অশ্রুময়ী, কখনো সবল, কখনো অভিমানিনী, কখনো বা কল্যাণময়ী, কখনো বা ভয়ংকরী। ঋতুচক্রের আবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় তোমার মন, বদলে যায় তোমার রূপ।

–গোলাম মোস্তফা

১০৯. যে প্রকৃতির কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে, তার চলার পথ শান্তিপূর্ণ হয়।

–জন কেবল

১১০. যন্ত্রণাকাতর মানুষকে প্রকৃতি আনন্দ দান করে।

হুড

১১১. আদর গরগর
বাদর দরদর
এ তনু ডরডর
কাঁপছে থরথর।
নয়ন ঢলঢল
কাজল কালোজল
ঝরে লো ঝরঝর।

কাজী নজরুল ইসলাম

১১২. আবার বসন্ত রাত্রি আমাদের দুয়ারে দিল হানা,
উন্মনা ছিলাম আমি তবু সে আমারে ভুলিল না।

–বেগম সুফিয়া কামাল

১১৩. যে বাগান ভালোবাসে, সে গৃহের সজীবতাকেও ভালোবাসে।

কুপার

১১৪. ঘাসের বুকের থেকে কবে আমি পেয়েছি যে আমার শরীর–
সবুজ ঘাসের থেকে; তাই রোদ ভালো লাগে–তাই নীলাকাশ
মৃদু ভিজে সকরুণ মনে হয়–পথে-পথে তাই এই ঘাস
জলের মতন স্নিগ্ধ মনে হয়–মউমাছিদের যেন নীড়
এই ঘাস–যত দূর যাই আমি আরো যত দূর পৃথিবীর
নরম পায়ের তলে যেন কতো কুমারীর বুকের নিঃশ্বাস
কথা কয়–তাহাদের শান্ত হাত খেলা করে তাদের খোঁপায় এলো ফাঁস
খুলে যায়–ধূসর শাড়ির গন্ধে আসে তারা অনেক নিবিড়।

–জীবনানন্দ দাশ

১১৫. সন্ধ্যা হয়–চারিদিকে শান্ত নীরবতা,
খড় মুখে নিয়ে এক শালিখ যেতেছে উড়ে চুপে;
গোরুর গাড়িটি যায় মেঠো পথ বেয়ে ধীরে-ধীরে;
আঙিনা ভরিয়া আছে সোনালি খড়ের ঘন স্তূপে;
–পৃথিবীর সব ঘুঘু ডাকিতেছে হিজলের বনে;
পৃথিবীর সব প্রেম আমাদের দু’জনার মনে;
আকাশ ছড়ায়ে আছে শান্তি হয়ে আকাশে আকাশে।

জীবনানন্দ দাশ

১১৬. বৃক্ষের ছায়া কত সাধকের জীবন সার্থক করেছে, বৃক্ষের শোভা কত শিল্পী ও কবির জীবনে প্রেরণা যোগাচ্ছে। গাছপালার যদি ইচ্ছামতো চলাফেরার শক্তি থাকত, তবে তারা এদেশ থেকে হিজরত করে যেখানে তাদের প্রতি যত্ন নেওয়া হয়, সেখানে চলে যেত।

–কাশতকার

১১৭. মৃত্যুর পর আমার শবদেহ যেন মাটিতে পুঁতে রাখা হয় যাতে ওটা পচে সারে পরিণত হয়ে সেখানকার গাছগুলোর উপকারে আসে।

স্যার জন রাসেরো

১১৮. কৃষ্ণ বসন পরিহিতা ওগো এলায়িত বেণী সন্ধ্যা,
মলয় পবন-সঙ্গিনী ওগো হৃদয়-অলকনন্দা– মায়ার যষ্টি করে,
আঁখি-আবরণী ‘পরে,
ছুঁয়ে দাও আসি সুপ্তি জড়ানো, ফুটিছে রজনীগন্ধা,
ক্লান্ত দেহের শান্তিদায়িনী, চিত্ততোষণী সন্ধ্যা।

জসীম উদ্দীন

১১৯. কালোমেঘ আকাশে তারাদের ডেকে
মনে ভাবে, জিত হল তার
মেঘ কোথা মিলে যায় চিহ্ন নাহি রেখে,
তারাগুলি রহে নির্বিকার।

–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

১২০. মালার ফুল বাসি হলেও মর্যাদা কমে না।

–মার্ক টোয়েন

১২১. আবার আসিল বরষা
অশ্রু-সলিল সরসা।
ঘনাইয়া এল কাজল-মায়া
তরু-পল্লব-পরশা।

–গোলাম মোস্তফা

১২২. আমাকে জীবিত অপবাদ দিও না এবং মরণের পর কবরে ফুল দিও না।

–কার্ল স্যান্ডবার্গ

১২৩. শিশুদের হাতে গাছের চারা লাগানো একটি খুশির কাজ। শিশুর কচি হাতের পবিত্র পরশে যে-গাছের জন্ম হল, সেই গাছই হয়তো পঞ্চাশ বছর পরে বৃদ্ধ পিতামাতাকে স্মরণ করিয়ে দেয় অতীতের মধুর পরিবেশের কথা। বৃদ্ধ পিতামাতার হাত দিয়ে ফলের গাছ লাগিয়ে রাখা সন্তানের লাভ। ফটোগ্রাফ মলিন হয়, কিন্তু স্মৃতির ভার নিয়ে গাছ দাঁড়িয়ে থাকে বহুঁকাল।

–হামিদউদ্দিন আহমদ

১২৪. পরিশ্রমী কৃষক এমন সব বৃক্ষও রোপণ করে থাকে, যার ফল সে নিজে কোনোদিন দেখতে পারে না।

সিসেরো

১২৫. আরক্ত সন্ধ্যার মুখে টেনে দিল রাত্রির নেকাব
মৃত্যুঘন অন্ধকার। এখন যায় না দেখা তার
তারুণ্যের স্বর্ণ বিভা, চিবুক নিটোল শুভ্রতার
মর্মরে খোদিত মুখ। প্রশ্ন আর পায় না জওয়াব।

ফররুখ আহমদ

১২৬. সাঁঝের আঁধার ঘিরল যখন শাল-পিয়ালের বন,
তারই আভাস দিল আমায় হঠাৎ সমীরণ।
কুটির ছেড়ে বাইরে এসে দেখি,
আকাশ কোণে তারার লেখালেখি
শুরু হয়ে গেছে বহুক্ষণ।

সুকান্ত ভট্টাচার্য

১২৭. ধীরে সুমেরুর সুরে আসে সন্ধ্যারানী
সুনীল দুকুলে ঢাকি ফুলতনুখানি।
তরল গুণ্ঠন আড়ে
মুখশশী উঁকি মারে,
কম্পিত কষ্টুলী-ধীরে হৃদয়ের বাণী।

–অক্ষয়কুমার বড়াল

১২৮. এসো শীতকে ভালোবাসি, কেননা প্রতিভাবানদের এটিই বসন্তকাল।

–পিয়েত্রো আরেতিনো

১২৯. এল ফেব্রুয়ারি, অনুরাগের পয়লা চিরকুট হাতে এক কিশোরী, হাওয়ায় ওড়া চুলে লাল বাঁধন, ঠোঁটে স্থির হয়ে আছে চুমু, মুখের হাসিটির পেছনে লুকোনো খেয়ালি খিটিমিটির ঘোর।

হ্যাল বোরল্যান্ড

১৩০. মার্ট এলোমেলো চুলের এক গেছোমেয়ে, মুখে ঠাট্টার হাসি, চপ্পলে মাখামাখি কাদা, আর কণ্ঠস্বরে খুশির আমেজ।

হ্যাল বোরল্যান্ড

১৩১. অক্টোবর হল ঝরা পাতা, আরও স্পষ্টভাবে দেখা ছড়িয়ে পড়া দিগন্তও এটি। এ হল আর একবার দেখতে পাওয়া দূরের পাহাড়, তার মাথার ওপর আরও একবার তারাপুঞ্জের ঝলমল করে ওঠা।

–হ্যাল বোরল্যান্ড

১৩২. কি ফুল ফোঁটাবে তুমি হে বৈশাখ তোমার শাখায়
সে কথা তুমিই জানো, হয়তো যা তুমিও জানো না
তোমার প্রথম দিনে। বিধাতার মৌন অনুরোধ
পারে না হেলিতে, তাই ঘুরে ঘুরে আসে বারে বারে
প্রত্যেক চৈত্রের শেষে।

–অজিতকৃষ্ণ বসু

১৩৩. প্রকৃতির ভালোবাসাই একমাত্র ভালোবাসা, যা মানবিক আশা-আকাঙ্ক্ষাকে প্রতারিত করে না।

বালজাক

১৩৪. সকাল থেকেই বৃষ্টির পালা শুরু,
আকাশ হারানো আঁধার জড়ানো দিন।
আজকেই, যেন শ্রাবণ করেছে পণ,
শোধ করে দেবে বৈশাখী সব ঋণ।

–বুদ্ধদেব বসু

১৩৫. সর্বশক্তিমান ঈশ্বর সর্বপ্রথমে একটি বাগান স্থাপন করেন। আর বস্তুতপক্ষে বাগানই হচ্ছে মানবিক আনন্দের সবচেয়ে পবিত্র উৎস।

বেকন

১৩৬. সমস্ত নদীই সমুদ্রবক্ষে পতিত হয়, কিন্তু তবু সমুদ্র পূর্ণ হয় না।

–ডব্লিউ. ই. হেনলি

১৩৭. ফুলের আয়ু কত স্বল্প, কিন্তু সেই স্বল্প জীবনপরিধিই কত মহিমাময়।

–টমাস উইলসন

১৩৮. ঝম্ ঝম্ ঝম্ নামে বরষা
ধরণী উছসি জাগে শ্যাম সরসা!
উছলিত ভরা নদী জাগে কলোলে
তীরে বন মল্লিকা কেতকী দোলে।

–শাহাদাৎ হোসেন।

১৩৯. প্রকৃতি প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরেরই সাকার মূর্তি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে লুকিয়ে আছে তার নিরাবয়ব রূপ প্রকৃতি।

বি. সি. রায়

১৪০. ঐ দেখ গো আজকে আবার পাগলি জেগেছে,
ছাইমাখা তার মাথার জটায় আকাশ ঢেকেছে;
মলিন হাতে ছুঁয়েছে সে ছুঁয়েছে সব ঠাঁই,
পাগলি মেয়ের জ্বালায় পরিচ্ছন্ন কিছুই নাই।

–সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

১৪১. শয়ন শিয়রে ভোরের পাখির রবে
তন্ত্ৰা টুটিল যবে।
দেখিলাম আমি খোলা বাতায়নে
তুমি আনমনা কুসুম চয়নে
অন্তর মোর ভরে গেল সৌরভে।

সুকান্ত ভট্টাচার্য

১৪২. আমি চারটি দেয়াল এবং একটি ছাদের অত্যাচারে ক্লান্ত। আমি সবুজ ঘাসে পা ডুবিয়ে বুক ভরে নিশ্বাস নিতে চাই।

–জন ম্যাসফিল্ড

১৪৩. ধরা তব আদরিণী মেয়ে
তাহারে দেখিতে তুমি আস মেঘ বেয়ে
হেসে ওঠে তৃণে শস্যে দুলালী তোমার,
কালো চোখ বেয়ে ঝরে হিমকণা আনন্দাশ্রুভরা
জলধারা হয়ে নামো, দাও কত রঙিন যৌতুক।

কাজী নজরুল ইসলাম

১৪৪. প্রকৃতি বিদ্রোহ করে কিন্তু তাতে মানুষের জয়যাত্রা ব্যহত হয় না বরং নব উদ্যমে এগিয়ে চলে।

–জেমস বি. কেনিয়ন

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *