ম্যানহাটানে মুনস্টোন – ০৯

নয়

আমরা বাড়ি পৌঁছিলাম প্রায় ন’টা নাগাদ। অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে দেখি টেলিফোন অ্যানসারিং মেশিনের মেসেজ লাইটটা জ্বলছে আর নিবছে, অর্থাৎ কেউ ফোন করে মেসেজ রেখেছে। মেসেজ-এর বোতামটা টিপতেই প্রমথর গলা রেকর্ডিং-এ শুনলাম – ‘সোয়া ন’টায় ফিরব। রান্না করিস না, একসঙ্গে পিৎসা খেতে যাব।’
একেনবাবুকে মেসেজটা দিয়ে আমি নোংরা জামাকাপড়গুলো ওয়াশিং মেশিনে চাপাতে নীচে বেসমেন্টে গেলাম। ফিরে এসে দেখি একেনবাবু নিবিষ্ট মনে একটা চিঠি পড়িছেন। আমাকে দেখে চিঠিটা এগিয়ে দিয়ে বললেন, “ভেরি ইন্টারেস্টিং স্যার।”
সংক্ষিপ্ত চিঠি। নামধাম সম্বোধন কিছুরই বালাই নেই। টাইপ রাইটারে ছাপা :

Mary owns one nice stone
Sounds music to my ear!
I must have it, else Mary dies.

এ আবার কি ধরণের হেঁয়ালি?
“কোথায় পেলেন এটা?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।
“মিস্টার প্যাটেলের মেলবক্সে ছিল। খামটার ওপর শুধু অ্যাপার্টমেন্ট নম্বরটা দেখে কৌতুহল জেগেছিল স্যার, তাই নিয়ে এসেছিলাম।”
“আমি তো এর মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না। হু ইজ মেরি?”
“আমিও প্রথমে সেটাই চিন্তা করছিলাম স্যার। এখন মনে হচ্ছে মেরির কোনও অস্তিত্বই নেই। মেরি সম্ভবত মিস্টার প্যাটেল।”
“সেটা কি করে বুঝলেন?”
“মেরির কাছে একটা পাথর আছে, চিঠিটা যে লিখেছে তাকে ওই পাথরটা পেতেই হবে। যদি না পায়, তাহলে মেরির মৃত্যু হবে। আর চিঠিটা ছিল মিস্টার প্যাটেলের মেলবক্সে। সুতরাং …”
“ও মাই গড! মিস্টার প্যাটেল যখন ডায়মন্ড মার্চেন্ট ছিলেন, স্টোন মানে নিশ্চয় একটা হিরে।”
“তাই তো মনে হয় স্যার। প্রশ্ন হচ্ছে, কোন হিরের কথা চিঠিতে বলা হচ্ছে। আরও একটা ক্লু মনে হয় এখানে আছে?”
“কি সেটা?”
“প্রথম লাইনের প্রত্যেকটা ওয়ার্ডের প্রথম লেটারগুলো পড়ুন স্যার।”
“এম ও ও এন… মুন। তারমানে মুনস্টোন?”
“এক্স্যাক্টলি স্যার। মিস্টার প্যাটেলের কাছে নিশ্চয় একটা দামি মুনস্টোন ছিল, আর সেটারই কারোর খুব দরকার হয়ে পড়েছিল।”
চিঠিটার আসল মানে যাই হোক না কেন, মানতে হবে একেনবাবুর কল্পনা করার ক্ষমতা আছে। কিন্তু একেনবাবুর অ্যানালিসিস যদি ঠিক হয়, তাহলে আই মাস্ট হ্যাভ ইট…এলস মেরি ডাইজ, সর্বনাশ! তার মানে তো মিস্টার প্যাটেলের মৃত্যুর সঙ্গে এই চিঠির একটা যোগও থাকতে পারে! কিন্তু তা কি কিরে হয়? না, সেটা অসম্ভব – মিস্টার প্যাটেল তো করেছেন আত্মহত্যা! তবু কেন জানি আমার বুকটা ছ্যাৎ করে উঠল।
“আপনার কি মনে হচ্ছে, মিস্টার প্যাটেলের মৃত্যুর সঙ্গে এই চিঠির কি কোনও যোগ আছে?” একেনবাবুকে জিজ্ঞেস করলাম।
একেনবাবু আমার প্রশ্নের উত্তর করলেন না। “আচ্ছে স্যার, আপনার কাছে বাইনোকুলার আছে কি?”
একেনবাবুর কথার পারম্পর্য নিয়ে আগে কখনও মাথা ঘামাই নি। পাগলে কিনা বলে ছাগলে কিনা খায়! কিন্তু আজ সন্ধ্যা থেকে একেনবাবুর গোয়েন্দাগিরির বহর দেখে হঠাৎ একটা শ্রদ্ধাভাব এসে গিয়েছিল। এই প্রশ্নে সেটা একটু চিড় খেল।
“আছে, কেন বলুন তো?”
এমন সময় বাইরের দরজায় বেল বাজল। একেনবাবু হঠাৎ আমাকে অবাক করে বললেন, “স্যার, আজকে মিস্টার প্যটেলের বাড়ি যাওয়ার ব্যাপারে কারোর সঙ্গে আলোচনা করবেন না। এমন কি প্রমথবাবুর সঙ্গেও নয়, প্লিজ।”
একেনবাবুর এই সতর্কবাণীর কোনও অর্থ আমি পেলাম না। কিন্তু এখন প্রশ্ন তোলার সময় নেই। বললাম, “ঠিক আছে।”
বেল বাজাচ্ছিল প্রমথ। ঢুকেই তাড়া লাগাল,”চল, চল, খিদেতে পেট জ্বলছে। খেতে খেতে তোদের একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার বলব।”

আমাদের রাস্তার মোড়ে টমির পিৎসা পার্লার। সেখানে একটা কর্নার টেবিল ম্যানেজ করে দুটো বড় পিৎসার অর্ডার দিলাম।
প্রমথ বলল, সন্ধ্যার সময় মিস্টার প্যাটেলের একটা ফোন এসেছিল।”
“কার কাছ থেকে?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।
“নাম বলল, স্যাম ফ্রম লং আইল্যান্ড।”
“তারপর?”
“মিস্টার প্যাটেল মারা গেছেন শুনেও ব্যাটা মানতে চায় না। বলল, ‘আমি কিরিট প্যাটেলের কথা বলছি, তাঁকে ফোনটা দিন। ‘ আমি বললাম, ‘আমিও তাঁর কথা বলছি।’ এই শুনে একটা কথা না বলে লাইন ছেড়ে দিল।”
“ইন্টারেস্টিং। মিস্টার প্যাটেল তোকে বলেছিলেন খবরটা কাউকে না জানাতে, কিন্তু লোকটা অবভিয়াসলি জানত, মিস্টার প্যাটেলকে তোর নম্বরে পাওয়া যাবে।”
“মিস্টার প্যাটেলই নিশ্চয় নম্বরটা দিয়েছিলেন, কিংবা ব্রিজ শাহ-র কাছ থেকে পেয়েছে – কে জানে!” প্রমথ বলল।
“আচ্ছা স্যার, শৈলেন সাঁপুই যদি আগে থেকেই জানতেন, আমি কি ভাবব বা বলব, তাহলে আপনি যখন মিস্টার প্যাটেলের মৃত্যুর খবর দিলেন, তখন উনি আশ্চর্য হলেন কেন? সেটাও তো ওঁর জানা উচিত ছিল।”
প্রমথ ব্যাপারটা জানত না বলে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল।
আমি একেনবাবুকে বললাম, “আপনার ভক্তিতে একটু চোট লেগেছে মনে হচ্ছে। প্রশ্নটা এখন আমাকে না করে ওঁকে করলেই পারতেন।”
“তখন খেয়াল হয় নি স্যার।”
প্রমথ জিজ্ঞেস করল, “কেসটা কি ?”
তখন শৈলেন সাঁপুইয়ের গল্পটা করলাম।
“তোরা বুঝি ওখানেই কাটালি সন্ধ্যেটা?” প্রমথ জিজ্ঞেস করল।
বলা উচিত ছিল, ‘না’। কিন্তু একেনবাবুর অনুরোধ রাখতে কিরিট প্যাটেলের অ্যাপার্টমেন্টে-অভিযানটা চেপে গেলাম – যদিও ‘হ্যাঁ’ বলতে নিজেকে খুব অপরাধী লাগল।

খাওয়াদাওয়ার পর বাড়ি ফিরে সোফায় বসতেই বুঝলাম, কি ভীষণ টায়ার্ড হয়ে আছি! প্রমথ আজকেও উপরে শোবে বলে চলে এল। সোফায় শোবার প্ল্যান করছিল, কিন্তু একেনবাবু শুনলেন না। জোর করে নিজের ঘরে প্রমথকে পাঠিয়ে আমার কাছ থেকে বাইনোকুলারটা নিয়ে নীচে প্রমথর অ্যাপার্টমেন্টে শুতে গেলেন। আমি কিছুক্ষণ বই পড়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে বিছানায় চিৎপাত হলাম।
পরদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি প্রমথ নেই। নিশ্চয় সাত-সকালে এক্সপেরিমেন্ট ছিল, স্কুলে গেছে। হাতমুখ ধুয়ে একেনবাবুকে ফোন করতে যাচ্ছি, এরমধ্যেই একেনবাবু সশরীরে উপস্থিত।
“আপনি নিশ্চয় টেলিপ্যাথি জানেন, এক্ষুণি আপনাকে ফোন করতে যাচ্ছিলাম।”
একেনবাবু হাসি হাসি মুখে বললেন, কাঠের বাড়িতে এটাই স্যার সুবিধা, ওপরের তলায় কি হচ্ছে না হচ্ছে নীচের তলা থেকে দিব্বি বোঝা যায়। আপনি ঘুম থেক উঠে মুখ ধুয়ে বাইরের ঘরে এলেন, আর আমিও চলে এলাম।”
“ভালো করেছেন। কিন্তু আজলে আপনাকে একটু উৎফুল্ল মনে হচ্ছে।”
“মর্নিং-এ আমি সব সময়েই ফ্রেশ থাকি স্যার, তবে আজকে একটা বিশেষ কারণও আছে।” একেনবাবু ঘাড় চুলকোতে চুলকোতে বললেন।
“কারণটা কি জানতে পারি, না সেটা গোপনীয়?”
“কি যে বলেন স্যার, নিশ্চয় পারেন। নীচে চলুন, দেখাচ্ছি।”
“এই সক্কাল বেলা কি আবিষ্কার করলেন?”
“আসুন না স্যার।”
নীচে যেতেই একেনবাবু আমার হাতে বাইনোকুলারটা ধরিয়ে দিয়ে কিচেনের জানলার সামনে নিয়ে গেলেন।
“সামনের বাড়ির জানলার একটু নীচে বাঁ দিকে তাকিয়ে দেখুন তো স্যার, কিছু দেখতে পাচ্ছেন কিনা।”
আমি বাইনোকুলারে চোখ রাখলাম। দূরের জানলাটা খুব কাছে এসে গেল। দেওয়ালের রঙটা হালকা খয়েরি। জানলার ঠিক নীচে সম্ভবত বৃষ্টির জলের জন্যে কিছুটা অংশ কালচে হয়ে গেছে। সেই কালচে অংশের এক পাশে মনে হল একটা ফুটোর মত কিছু। তাছাড়া আর কিছু চোখে পড়ল না।
“কিছুই তো দেখলাম না, কি দেখব?” আমি বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম।
একেনবাবু আমার পর্যবেক্ষণের ক্ষমতা দেখে বোধহয় হতাশ হলেন।
“নাঃ, আপনি একদম খেয়াল করছেন না! যাইহোক একটা মই জোগাড় করতে পারেন স্যার?”
“মই! মই দিয়ে কি করবেন?”
“কাছে গিয়ে একটু পরীক্ষা করতাম স্যার।”
“আপনি কি মশাই ক্ষেপে গেকেন! এই শীতে মই বেয়ে উঠতে গিয়ে কি হাত-পা ভাঙতে চান?”
“স্যার, আপনি ঠিক বুঝছেন নয়া, ইট ইজ ভেরি ইমপর্টেন্ট।”
“কি এতো ইমপর্টেন্ট?” আমি বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
“আগে মইটা জোগাড় করুন স্যার, প্লিজ ‘না’ করবেন না।”
“আপনি তো মহা ঝামেলা পাকালেন, কোথায় পাব এখন মই!”
গজগজ করলাম বটে, কিন্তু লোকটা যে পুরোপুরি ক্ষ্যাপা নয়, সেটা এতদিনে বুঝে গেছি। একতলায় অ্যাপার্টমেন্ট ম্যানেজারের কাছে একটা মই ছিল। সে সবে ঘুম থেকে উঠে কফি খাচ্ছিল। প্রথমে দিতে চাচ্ছিল না। ওর ভয় পড়ে গিয়ে হাত পা ভাঙলে ওর বিরুদ্ধে মামলা ঠুকবো। অনেক তুইয়ে বুইয়ে শেষ পর্যন্ত ম্যানেজ করা গেল। অ্যালুমিনিয়ামের হালকা মই। একেনবাবু নিজেই কাঁধে করে নিয়ে পাশের বাড়ির জানলার ধারে লাগালেন। ভাগ্যিস ঐ বাড়িতে কোনও ভাড়াটে নেই, নইলে মই লাগিয়ে জানলার দিকে কেউ উঠে আসছে দেখলে থানা-পুলিশ হত। আমি নীচ থেকে পরিষ্কার সবকিছু দেখতে পাচ্ছিলাম না, তবে মনে হল একেনবাবু পকেট থেকে কিছু একটা বার করে দেয়ালে খোঁচাখুঁচি করছেন।
এদিকে আমার ধৈর্যচ্যুতি হচ্ছে। বললাম, “কি, আপনার গবেষণা শেষ হল?”
“কাজ খতম স্যার,” যেটা দিয়ে খোঁচাচ্ছিলেন, সেটা পকেটে ঢুকিয়ে হাসিহাসি মুখে উনি নেমে এলেন।
“কি আবিষ্কার করলেন ওখানে?”
“মইটা ফেরৎ দিয়ে আসুন স্যার, বলছি।”
আর যে কোথাও ওঠার প্ল্যান করছেন না, তাতেই আমি খুশি। দ্বিরুক্তি না করে আমি অদৃশ্য হলাম।
মই জমা দিয়ে যখন ঘরে এলাম তখন দেখি একেনবাবু খাবার টেবিলে রাখা একটা রুমালের দিকে নিবিষ্ট মনে তাকিয়ে আছেন। দূর থেকে বুঝি নি, সামনে এসে দেখি রুমালের ওপর একটা বুলেট।
“এটা কোত্থেকে এল?” আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
“ও-বাড়ির দেওয়াল থেকে।”
“ও-বাড়ি মানে যেখানে মই দিয়ে উঠলেন?”
“হ্যাঁ স্যার। আর আমি প্রায় ডেফিনিট এই গুলিটা মিস্টার প্যাটেলের রিভলবার থেকেই বেরিয়েছিল।”
“সেটা কি করে বুঝলেন?”
“আপাতত বলব স্যার, সেটাই লজিক্যাল পসিবিলিটি। শিওর হতে গেলে ব্যালিস্টিক টেস্ট করতে হবে।”
আমি গুলিটাকে আরেকবার ভালো করে দেখলাম। তারপর বললাম, “লজিকটা ভালো করে বোঝাবেন কি?”
একেনবাবু মাথাটা একটু চুলকে বললেন, “তিনটে পয়েন্ট স্যার। এক নম্বর, এটা টয়েন্টিটু ক্যালিবারের বুলেট। মিস্টার প্যাটেলের হাতে যে রিভলবারটা ছিল, সেটাও টোয়েণ্টিটু ক্যালিবারের। দু’ নম্বর হল, গুলিটা বার করতে গিয়ে দেখলাম ওটা একেবারে হরাইজেন্টালি দেওয়ালে ঢুকেছে। সেটা একমাত্র সম্ভব, কেউ যদি প্রমথবাবুর অ্যাপার্টমেন্ট থেকে গুলিটা ছোঁড়ে। ফাইন্যালি স্যার, গর্তের মুখটা একেবারে পরিষ্কার। অর্থাৎ গর্তটা অনেকদিনের নয়, নইলে এতদিনে সেখানে ধুলোবালি জমে যেত। এখন আমরা জানি, প্রমথবাবুর রিভলবার নেই, সুতরাং ওঁর পক্ষে …।”
একেনবাবু বক্তৃতা থামিয়ে আমি বললাম, “বুঝলাম, গুলিটা মিস্টার প্যাটেলই ছুঁড়েছিলেন। একটা নয়, দুটো গুলিই তিনি ছুঁড়েছিলেন। কিন্তু তাতে হাতিঘোড়া হলটা কি?”
“বিগ ডিফারেন্স স্যার, ভের বিগ ডিফারেন্স! চিন্তা করুন মিস্টার প্যাটেল কি ভাবে নিজেকে মারার চেষ্টা করেছিলেন?”
“অফ কোর্স রিভলবার চালিয়ে, উই অল নো দ্যাট।”
“রাইট স্যার। রিভলবারটা কি ধরণের মনে আছে আপনার, মানে ব্যারেলের সাইজটা?”
“থাকবে না কেন, অর্ডিনারি ব্যারেল – ইঞ্চি চারেক লম্বা।”
“রাইট এগেইন স্যার। এবার বলুন, গুলিটা কোথায় লেগেছিল?”
“রগের পাশে।”
“ঠিকই মনে আছে আপনার। লাস্ট কোয়েশ্চেন স্যার, রিভলবারের ট্রিগারে কোন আঙ্গুলের প্রিন্ট পাওয়া গেছে?”
“সে তো আপনাদের কাছেই শুনলাম, ইনডেক্স ফিঙ্গারের।”
“তথ্যে কোনও ভুল নেই স্যার, আমি নিজের কানে শুনেছি ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্টের কাছ থেকে, আর সেখানেই হচ্ছে পাজল।”
“পাজল!”
“হ্যাঁ স্যার।“
“আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। এতে পাজলের কি আছে?”
“বলছি স্যার। নর্মালি আমরা ইনডেক্স ফিঙ্গারটাই ট্রিগারের ওপর রাখি। কিন্তু এই সিচুয়েশনটা ডিফারেন্ট। মনে করুন রিভলবারের নলটা খাড়া ভাবে রগের ওপর বসিয়ে আঙুল দিয়ে ট্রিগার টিপছেন।”
ডেমনেস্ট্রেট করার জন্যে একেনবাবু আমার কোনুইটা তুলে কব্জিটা একটু বেঁকিয়ে ধরলেন।
“মনে রাখবেন স্যার, ব্যারেলটা চার ইঞ্চি লম্বা, ফায়ার করতে গেলে ট্রিগারে যথেষ্ট চাপ দেওয়া দরকার। কোনুইটা আরেকটু উপরে তুলুন, আর একটুখানি – ব্যস। এবার কব্জিটা আর একটু বেঁকান, জাস্ট রাইট, একদম কারেক্ট পজিশন। এবার বলুন স্যার, কি মনে হচ্ছে?”
“ঊঃ,” আমি স্বীকার করলাম। “মাসলে ভীষণ টান পড়ছে!”
“রাইট স্যার। আর আপনি তো নর্ম্যাল হেলদি ইন্ডিভিজুয়াল। আপনারই যদি এই অবস্থা হয় , তাহলে ভেবে দেখুন আর্থ্রাইটিসের রোগী মিস্টার প্যাটেলের কি অবস্থা হবে!”
“ওঁর আর্থ্রাইটিস ছিল, সেটা আবার কে বলল?”
“পিওর স্পেকুলেশন স্যার। দেখলেন না ওঁর বাড়িতে অ্যাসপিরিন, টাইলানল – ব্যথা কমানোর ওষুধের কি ছড়াছড়ি!”
“ওয়েট এ মিনিট, আপনি কি বলতে চান এভাবে নিজের রগে গুলি চালিয়ে কেউ আত্মহত্যা করতে পারে না?”
“তা তো বলিনি স্যার। স্বচ্ছন্দেই সেটা পারা যায়; কিন্তু সেক্ষেত্রে একটা নয়, দুটো হাত লাগে। ফর এ রাইট হ্যান্ডেড পার্সন, বাঁ হাতে রিভলবারের ব্যারেলটা ধরে ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে ট্রিগারে চাপ দিলে সেটা পারা যায়।”
আমি একেনবাবুর কথা মত দুটো হাত ওপরে তুলে বুঝতে পারলাম নিঃসন্দেহে সেটাই সবচেয়ে স্বাভাবিক পজিশন।
“যে কথা বলছিলাম স্যার। আমরা জানি, যে ফিঙ্গার-প্রিন্ট পাওয়া গেছে, সেটা বুড়ো আঙ্গুলের নয়। কিন্তু মোস্ট ইম্পরটেন্ট ঘটনা হল, ওঁর হাতে গান পাঊয়ার পাওয়া গেছে। এটা একমাত্র সম্ভব কেউ যদি নিজের হাতে গুলি ছোঁড়ে।”
এবার আমি বুঝতে পারলাম একেনবাবু কোনদিকে এগোচ্ছেন। বললাম, “বুঝতে পেরেছি। অর্থাৎ, মিস্টার প্যাটেলকে খুন করার পরে, আততায়ী ওঁর হাতে রিভলবারটা ধরিয়ে ইনডেক্স ফিঙ্গারটা ট্রিগারের ওপর রেখে তাতে চাপ দিয়ে আরেকটা গুলি চালিয়েছে, যাতে গান পাউডার হাতে লেগে থাকে এবং ট্রিগারেও ফিঙ্গার প্রিন্ট পাওয়া যায়।”
“কারেক্ট স্যার। কিন্তু শুধু তাই নয়’ গুলিটা যাতে কারোর চোখে না পড়ে, সে-ব্যবস্থাটা করা দরকার। সবচেয়ে সহজ উপায় হল জানলাটা খুলে তার ফাঁক দিয়ে গুলি চালানো। তাহলে গুলিটা বাইরে চলে যাবে। অন্য কোনও দেয়ালে লাগলেও সেটা লাগবে বাইরে। সেদিনের ঝড় বৃষ্টি বজ্র বিদ্যুতের মাঝে কারও কিছু খেয়াল হবে না।”
একেনবাবুর কথাগুলো মোটেই উপেক্ষা করার মত নয়। পুরো ব্যাপারটা হৃদয়ঙ্গম করার পর আমি জিজ্ঞেস করলাম, “বাট হু কুড হ্যাভ মার্ডারড হিম?”
প্রশ্নটা করার সময় আমার মনে একটা ক্ষীণ আশা ছিল একেনবাবু দু-একজন সাসপেক্টকে এরমধ্যেই আইডেন্টিফাই করে ফেলেছেন।
একেনবাবু মাথা নাড়লেন, “সেটাই স্যার সমস্যা। আই হ্যাভ নো ক্লু।”