১৭. এককথায় যাকে বলে ভুরিভোজ

এককথায় যাকে বলে ভুরিভোজ তাই হলো। সবাই দল বেঁধে ড্রইংরুমে এলেন পোস্ট-ডিনার আড্ডার জন্য।

আচ্ছা ভাবিজী, আমার জন্য তো এমন ভুরিভোজের আয়োজন কোনোদিন হয়নি।

ভাবিজী তরুণের কথার জবাব না দিয়ে বন্দনাকে বললেন, দেখেছ তোমার দাদার কি হীন মনোবৃত্তি? কোথায় বোন-ভগ্নীপতিকে খাইয়েছি বলে খুশি হবে, তার বদলে কিনা হিংসা করছে।

বন্দনা হাসে, বিকাশ হাসে, মিঃ ট্যান্ডনও হাসেন। কেউ কোনো কথা বলেন না।

মিসেস ট্যাভন আবার শুরু করলেন, বিয়ের পর ছেলেমেয়েদের ইজ্জতই আলাদা। বিয়ের পর তুমিও এমনি ইজ্জত, আদর-আপ্যায়ন পাবে।

বন্দনা কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেল। শুধু একবার চুরি করে বিকাশের দিকে তাকাল, একটু হাসল।

বিয়ে না করলে ভালো-মন্দ খেতেও পাব না? অবাক হয়ে তরুণ প্রশ্ন করে।

ভাবিজীর স্পষ্ট জবাব, না।

সুড আই ম্যারি টুমরো?

এবার ভাবিজী হঠাৎ সীরিয়াস হলেন। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, আই উইশ ইউ কুড, তরুণ!

ভাবিজীর ভাবান্তরে, ওই ছোট্ট একটা দীর্ঘনিশ্বাসে সমস্ত ঘরের আবহাওয়াটাই পাল্টে গেল। অটামের বার্লিনের আকাশ হঠাৎ মেঘে ছেয়ে গেল।

জানো বন্দনা, আমার আর ভালো লাগে না। সত্যি ভালো লাগে না। নিজের ছেলে-মেয়ে আত্মীয়স্বজন কতদুরে পড়ে রয়েছে। এদের নিয়েই তো আমার সংসার।

মিঃ ট্যান্ডন, তরুণ, বিকাশ চুপটি করে মুখ ঘুরিয়ে বসেছিল। বন্দনা বলল, তা তো বটেই।

আবার একটা দীর্ঘনিশ্বাস। আর এদেরই মুখে যদি হাসি না দেখি, তাহলে কেমন লাগে বলো তো?

আর এগুতে পারলেন না ভাবিজী। গলার স্বর আটকে এল। ঠিক তাকিয়ে না দেখলেও সবাই বুঝল, মিসেস ট্যান্ডনের চোখের কোণায় জল এসে গেছে।

সিচুয়েশনটা সেভ করার চেষ্টা করলেন স্বয়ং ট্যান্ডন। আঃ, এখন আর দুঃখ করছ কেন? ইন্দ্রাণী উইল বি উইথ আস ভেরি সুন।

মিসেস ট্যান্ডন দপ করে জ্বলে উঠলেন। বাজে বকো না তো! ভেরি সুন ভেরি সুন করতে করতে তো তুমি রিটায়ার করতে চলেছ!

প্রথম দিনের পরিচয়, ব্যবহারেই ভাবিজীকে দেখে স্তম্ভিত, মুগ্ধ হয় বন্দনা, বিকাশ। দাদাকে ওঁরা এত ভালোবাসেন?

হ্যাঁ।

ফেয়ারলি প্লেসে বা রাইটার্স বিল্ডিং-এ সারা জীবন কাটাতে হয় অনেককেই। পাশাপাশি বসে সারাজীবন কাজ করতে করতে তিক্ততা আসে বৈকি! কিন্তু যাদের জীবনে সে স্থায়িত্ব কোনোদিনই আসবে না, আসতে পারে না, তাদের সবার মন ঠিক বিষাক্ত হতে পারে না। হবার অবকাশ নেই। বিষ একটু এগুতে না এগুতেই ট্রান্সফার! কানাডা থেকে আলজিরিয়া, লন্ডন থেকে কলম্বো, পিকিং থেকে প্যারিস। আট-দশ-বারো বছর পর যখন আবার দেখা হয়, তখন সে বিষের চিহ্ন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায় না।

অতীত দিনের এই তিক্ততা যদি কেউ মনে করে রাখত তবে কি ওবেরয় আজও ফরেন-সার্ভিসে থাকতে পারত?

রাত্রে ফিরে এসে এইসব গল্পই হচ্ছিল তিনজনে মিলে। বড় কৌচটায় দাদার পাশে বসে ওবেরয়ের কথা শুনছিল বন্দনা। বিকাশ সামনের কৌচে বসেছিল।

ওবেরয় তখন আফ্রিকার সীমান্ত রাজ্য মরোক্কোতে পোস্টেড। চুয়াল্লিশ বছর ফরাসি শাসনে থাকার পর মরোক্কো স্বাধীন হয়েছে। সারা দেশের মানুষ আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠল। মারাক্কেশ স্কোয়ারে সারা দিনরাত্রি হৈ-হুঁল্লোড় চলত। ওবেরয় ঘুরে ঘুরে সেসব দেখত।

রাবাতে ইন্ডিয়ান মিশন খোলা হলেও ফুল টাইম অ্যাম্বাসেডর তখনো আসেনি। ওবেরয় ও আর দু তিনজন মিলেই সব কাজ করত। ভারত মরোক্কো থেকে কিছু ফসফেট কিনলেও আর বিশেষ কোনো ব্যবসা-বাণিজ্যের লেন-দেন ছিল না দু দেশের মধ্যে। কমার্শিয়াল কাউন্সিলারের, পদও মঞ্জুর করা হয়নি। ওবেরয়কেই এক্সপোর্ট-ইমপোর্টের টুকটাক খোঁজখবর ঘুরে ফিরে জোগাড় করতে হতো। ঘুরত ক্যাসাব্লাঙ্কা, মারাক্কেশ, ফেজ, তাঞ্জিয়ার।

তরুণ একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল, ওই ঘোরাঘুরিই হলো ওর কাল।

বড় বড় হোটেলে যাতায়াত শুরু হলো ঘন ঘন। গ্রানাদায় হোটেল ট্যুর হাসানে, কখনও কনসুলাত-এ। শুরু হলো নাচ-গান খানা-পিনা।

সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে তরুণ বলল, মরোক্কোর নাইট ক্লাবগুলো সস্তা হয়ে আরো সর্বনাশ হল।

বিকাশ ছোট্ট একটা প্রশ্ন করে, সস্তা মানে?

জবাব দেয় বন্দনা, কেন তুমি যাবে নাকি?

তরুণ শাসন করে, আঃ বন্দনা! তারপর আবার বলে, রিয়েলি দে আর ভেরি চিপ। দু ডলার দিলেই বড় বড় নাইট ক্লাবে যাওয়া যায়।

…দু বছর পরে সেই ওবেরয় যখন বেইরুটে ট্রান্সফার হলো, তখন সর্বনাশের পথে নামতে আর দেরি হল না। মেডিটারিয়ানে মাতাল হাওয়া ওকে উড়িয়ে নিয়ে গেল। বন্ধু-বান্ধবরা ঠাট্টা করে ওর নাম দিল, ইভস্ অ্যাম্বাসেডর।

লেবাননের রাজনৈতিক গুরুত্বের চাইতে ওখানকার নাইট ক্লাবের প্রাধান্য বেশি। কিন্তু তবুও বেইরুটে আমাদের একটা বিরাট চান্সেরী আছে। ফরেন সার্ভিসের ক্লাস ওয়ান অ্যাম্বাসেডর পাঠান হয় এই মধ্যপ্রাচ্যের প্যারিসে! ডজন ডজন ডিপ্লোম্যাট আর শতাধিক কর্মচারী আছেন এই চান্সেরীতে। এছাড়া পূর্ব-পশ্চিম যাতায়াতের পথে বেইরুটে রাত কাটান না, এমন ইন্ডিয়ান ডিপ্লোম্যাট নেইই।

এদের সবাইকে ঠকিয়েছে ওবেরয়। কাউকে দশ-বিশ পাউন্ড কাউকে আবার সত্তর-আশি একশো পাউন্ড!

কয়েক বছর পরের কথা। ওবেরয় তখন জেনেভায়। বোম্বে থেকে খবর এলো মার ক্যান্সার। অতীত দিনের পাপের প্রায়শ্চিত্তের জন্য অর্ধেক মাইনেটাও পেত না বেচারী। কারুর কাছে হাত পাতারও সাহস ছিল না। প্রয়োজন ও ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বোম্বে যাবার কথা ভাবতে পারল না।

সিগারেটে শেষ টান দিয়ে তরুণ বললে, উই হ্যাভ লিটল ডিপ্লোম্যাসি উইথ আওয়ার ডিপ্লোম্যাট কলিগ। ওবেরয় কিছু টের পেল না, কিন্তু খবরটা ছড়িয়ে পড়ল চারিদিকে।

বন্দনার মুখ দিয়ে হঠাৎ বেরিয়ে পড়ল, আচ্ছা।

খবরটা শুধু ছড়িয়েই পড়ল না টপ সিক্রেট কনসালটেশন হল ইউরোপের পাঁচ-সাতটা ইন্ডিয়ান মিশনের পনের-বিশ জন ডিপ্লোম্যাটের মধ্যে। ঠিক হলো ওবেরয়কে না পাঠিয়ে ওর মাকে জেনেভায় আনান হোক চিকিৎসার জন্য। ডিসিসনের সঙ্গে সঙ্গেই অ্যাকশান! এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডন অফিসে পনের-বিশটা চেক পৌঁছে গেল। দিল্লি থেকে বোম্বেতে খবর পৌঁছে গেল ওবেরয়ের একমাত্র বোন ও ভগ্নিপতির কাছে, কনটাক্ট এয়ার ইন্ডিয়া ইমিডিয়েটলি ফর। ইওর মাদার্স জার্নি টু জেনেভা ফর ইমিডিয়েট ট্রিটমেন্ট!

তরুণ সে সব কথা বলতে গিয়ে হেসে ফেলল। ওবেরয় এয়ার ইন্ডিয়ার কাছ থেকে মার আসার খবর পেয়ে চমকে গিয়েছিল।

বিকাশ জানতে চাইল, ভদ্রমহিলা সেরে গেলেন কি?

না!

অতীত দিনের তিক্ততার কথা ফরেন সার্ভিসের কেউ মনে রাখেন না। রাখতে পারেন না। ওটা ওঁদের ধর্ম নয়, কর্ম নয়। অতীত দিনের কথা মনে রাখলে কি ডিপ্লোম্যাসি করা যায়? অসম্ভব।

ওবেরয়কে যারা এমন করে ভালোবাসতে পারেন, তারা তরুণের জন্য ভাবলেন না?

একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে তরুণ বলে, এদের মতো কিছু মানুষ না থাকলে হয়তো আমি পাগল হয়ে যেতাম। এই পৃথিবীতে একলা থাকার মতো অভিশাপ আর নেই।

ঘরের পরিবেশটা থমথমে হয়ে গেল। বিকাশ একবার বন্দনার দিকে তাকাল, বন্দনা বিকাশকে দেখে নিল।

তুমি একলা কোথায়? আমরা কি তোমার কেউ নই দাদা? বন্দনা যে একটু আহত মন নিয়ে কথাটা বলল।

ডান হাত দিয়ে বন্দনার মাথাটা টেনে কাঁধের উপর রেখে আদর করতে করতে তরুণ বলল, আমি কি তাই, বলেছি? তোমাদের চাইতে আপন আমার আর কে আছে?

বিকাশ তরুণকে ভয় না করলেও বেশ সমীহ করে চলে। আজ যেন একটু সাহস পেল। ওকে এত বেশি আদর করবেন না দাদা।

বন্দনা মাথাটা তুলে ভ্রু কুঁচকে বিকাশের দিকে তাকাল।

তরুণ জানতে চাইল, কেন?

একটু চাপা হাসি হাসতে হাসতে বিকাশ জবাব দেয়, আপনি ওকে ভালোবাসেন বলে ওর বড় বেশি অহংকার আর আমাকে ভীষণ কথা শোনায়।

সে কি বন্দনা? আমার জন্যে ওকে কথা শোনাও?

না দাদা, ও সব মিথ্যে কথা বলেছে।

ইভন ইফ দে আর মিথ্যে, আই ডোন্ট লাইক টু হিয়ার সা সিরিয়াস অ্যান্ড ডামেজিং অ্যালিগেশন।

স্বামীকে আর বেশি অপদস্থ করতে চায় না বন্দনা। দাদা, কফি খাবে?

কফি খেতে ভীষণ ভালোবাসে তরুণ। ওর বহুঁকালের স্বপ্ন ডিনারের পর এক কাপ ঘন ব্ল্যাক কফি নিয়ে গল্প করবে ইন্দ্রাণীর সঙ্গে, বন্দনা-বিকাশের সঙ্গে।

কফি? হোয়াট এ ওয়ান্ডারফুল আইডিয়া।

বন্দনা বিকাশকে জিজ্ঞাসা করল, তুমি খাবে?

হাতের ঘড়িটা দেখে নিয়ে বিকাশ বলল, না না, একটা বেজে গেছে, আমি আর খাব না।

তরুণ হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে উঠল। সত্যিই তো অনেক রাত হয়ে গেছে। থাক থাক বন্দনা, আর কফি করতে হবে না। তোমরা বরং শুতে যাও।

বন্দনা বলে, আমি এখন শুচ্ছি না।

যাও বিকাশ তুমি শুয়ে পড়।

বিকাশ একটু আপত্তি করছিল, কিন্তু বন্দনার কথায় আর দেরি করল না। বিয়ের পর এই তো প্রথম ভাইয়ের কাছে এলাম। তুমি যাও তো, আমাদের একটু প্রাইভেট কথাবার্তা বলতে দাও।

তরুণ আবার শাসন করে, আঃ বন্দনা!

বন্দনা প্রায় ধাক্কা দিয়ে ঠেলেঠুলেই বিকাশকে শোবার ঘরে পাঠিয়ে দিল।

দু কাপ ব্ল্যাক কফি শেষ হবার পরও কত কথা হলো দু ভাইবোনের।

আচ্ছা দাদা, তুমি রেগুলার চিঠিপত্র দাও না কেন বল তো?

চিঠি লিখতে ভালো লাগে না। তাছাড়া চিঠিপত্র লিখে কি মন ভরে? তরুণ নিজেই নিজের প্রশ্নের উত্তর দেয়, আমাদের কাছে পেতেই ভালো লাগে।

ডান হাতের উপর মুখটা রেখে বন্দনা মুগ্ধ হয়ে দাদার কথা শোনে।

আচ্ছা বন্দনা, আমি যদি লন্ডনে ট্রান্সফার হই, তাহলে বেশ একসঙ্গে থাকা যাবে-তাই না?

লন্ডন যাবার কথা শুনেই বন্দনা চঞ্চল হয়ে ওঠে, তুমি লন্ডনে আসছ?

না। তবে গেলে মজা হতো।

এসো না দাদা। আমরা একটা বড় ফ্যাট নেব।

ঘড়ি দেখে তরুণ চমকে উঠল, মাই গড! সওয়া তিনটে বাজে।

তাই নাকি? বন্দনার কাছে যেন তেমন রাত হয়নি।

যাও, যাও, শিগগির শুতে যাও।

বন্দনা তরুণের বিছানার বেডকভার তুলে ব্ল্যাঙ্কেটগুলো ঠিক করে নিজের শোবার ঘরে চলে গেল।

ছোট্ট নাইট ল্যাম্পটা জ্বেলে বিকাশের স্যুটটা ঠিক করে ওয়ার্ডরবে তুলে রাখল। নিজে মিররের সামনে দাঁড়িয়ে খোঁপা খুলে চুল আঁচড়ে নিল। তারপর কাপড়-চোপড় ছেড়ে নাইটি পরে সুইচ অফ করে লেপের তলায় ঢুকে পড়ল।

একটু এদিক-ওদিক নাড়াচাড়া করে শুতে গিয়েই বিকাশ জেগে গেল!

তুমি ঘুমাওনি? বন্দনা জানতে চাইল।

ঘুমোব না কেন? তুমিই তো ঘুম ভাঙিয়ে দিলে।

উঃ কি মিথ্যে কথা তুমি বলতে পার।

মিথ্যে কথা? তুমি রোজ আমার ঘুম ভাঙাও না?

কখখনো না। তুমিই জেগে জেগে গুণ্ডামি করো।

গুণ্ডামি নয়, বলল কর্তব্য। মাই সেকরে ডিউটি টু মাই বিলাভে অ্যান্ড একসাইটিং ওয়াইফ

অন্ধকারের মধ্যেও যেন দুজনে দুজনকে দেখতে পেল, দেখতে পেল হাসি হাসি মুখ।

বন্দনা যেন গাম্ভীর্যের সঙ্গেই হুঁশিয়ার করে, যতই ফ্লাটারি করো, আজ সুবিধে হচ্ছে না।

আই অ্যাম নট কনসার্নড় উইথ মাই সুবিধে, বাট ইওর অসুবিধে।

আজ দেখছি তোমার মাথায় ভূত চেপেছে, বাট ফর গডস্ সে ডোন্ট ডিসটার্ব মী।

বন্দনা একটু পরেই আবার বলে, জান কটা বাজে?

কটা?

চারটে বেজে গেছে।

সো হোয়াট?

কাল সকালে দেরি করে উঠলে দাদার কাছে মুখ দেখানো যাবে না। ভাববে…!

কিছু ভাববেন না, বরং জানবেন বেশ সুখেই আছে।…

সত্যি সত্যি পরদিন সকালে উঠতে অনেক দেরি হয়ে গেল। তরুণ অফিস যাবার জন্য তৈরি হয়ে গেছে। প্যান্ট্রিতে চা-ব্রেকফাস্টের উদ্যোগ আয়োজন করে লিভিংরুমে বসে বসে কয়েকটা পিরিওডিক্যাল উল্টে দেখছে।

ওদিকে ওরা দুজনে উঠে কেউই আগে বেরুতে চাইছিল না। অনেক ঠেলাঠেলির পর দুজনেই একসঙ্গে বেরিয়ে এলো।

কি, ঘুম হলো? তরুণ জানতে চাইল।

মুহূর্তের জন্য বন্দনা-বিকাশের সলজ্জ দৃষ্টি-বিনিময় হলো। তারপর বন্দনা বলল, এখনও জানতে চাইছ ঘুম হলো কিনা?

কাল তোমরা বেশ টায়ার্ড ছিলে। অত রাত করে শুতে যাওয়া ঠিক হয়নি।

বিকাশ কোনোমতে বলল, অফিস যাবার চাপ না থাকলে ঘুম যেন ভাঙতে চায় না।

নিশ্চয়ই ঘুমোবে। খাবে-দাবে ঘুমোবে বৈকি! কদিন রিল্যাক্স করে নাও।

দাদা, তুমি চা খেয়েছ?

রোজই তো একলা খাই। তোমরা আসার পরও একলা একলা খাব?

বন্দনা চটপট চা-টা নিয়ে এলো। চা-টা খেয়ে উঠবার সময় তরুণ বলল, বুঝলে বিকাশ, বন্দনা যতদিন আছে ততদিন আমি আর কিছু কাজকর্ম করব না।

বিকাশ বেশ জোরের সঙ্গে বলল, নিশ্চয়ই করবেন না।

মাছ-মাংস সব কেনা আছে। দেখেছ তো?

বন্দনা বলে, কালকেই দেখেছি।

খুব ভালো করে খাবার-দাবার বানাও। আমি কিন্তু রোজ লাঞ্চ খেতে আসব। হাসতে হাসতে তরুণ বলে।

বন্দনা হাসতে হাসতে বলে, না আসবার কি কথা আছে দাদা?

তরুণ একবার হাতের ঘড়িটা দেখে বলল, ও। বড্ড দেরি হয়ে গেল।

বেরুবার আগে তরুণ একবার অফিসে কন্সাল জেনারেলকে টেলিফোন করল, স্যর, আমি এক্ষুনি আসছি।

ট্যান্ডন সাহেব জবাব দিলেন, কে তোমাকে আসতে বলেছে? বি হ্যাপি উইথ ইওর সিস্টার অ্যান্ড বিকাশ।

থ্যাংক ইউ ভেরি ম্যাচ স্যার! আই অ্যাম কামিং উইদিন হাফ অ্যান আওয়ার।

ট্যাভন সাহেব আর তরুণের সঙ্গে কথা বলতে চান না। একবার বন্দনাকে দাও তো। গুডমর্নিং।

গুডমর্নিং। কেমন আছ বন্দনা?

খুব ভালো।

কাল রাত্তিরে খুব জমেছিল তো?

হ্যাঁ, তা বেশ জমেছিল।

তোমার দাদাকে অফিসে আসতে দিচ্ছ কেন?

অফিসে না গেলেও চলবে?

একশো বার।

বন্দনা টেলিফোন নামিয়ে রেখে দেখল দাদা হাসছে।

 তোমাকে অফিস যেতে হবে না।

তাই কি হয়? ট্যান্ডন সাহেব অমনি বলেন।

কিছুক্ষণ ধরে ভাইবোনে অনুরোধ-উপরোধের পালা চলল। শেষে সমস্যার সমাধান করল বিকাশ।

ঠিক আছে, চল আমরাও দাদার সঙ্গে অফিস যাই। কিছুক্ষণ থেকে সবাই আবার একসঙ্গে চলে আসব।

বন্দনা দুটো হাতে তালি বাজিয়ে বলল, দি আইডিয়া!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *