০৫. হরিদাস সামন্তর সাজঘরে

হরিদাস সামন্তর সাজঘরে ঢুকে থমকে দাঁড়াল কিরীটী।

সেখানে তখন যাত্রাদলের আট-দশজন জমায়েত হয়েছে, পাল মশাইও উপস্থিত। শ্যামলকুমার ও সুভদ্রাও পৌঁছে গিয়েছে সে ঘরে।

একটা চাপা গুঞ্জন ঘরের মধ্যে যেন বোবা একটা আতঙ্কের মত থমথম করছে। ভিড় ঠেলে সামনের দিকে দুপা এগুতেই দৃশ্যটা চোখে পড়ল কিরীটীর।

সামন্ত মশাই চেয়ারের উপর বসে আছেন। পরনে তাঁর অভিনয়েরই সাজপোশাক। মাথাটা বুকের উপর ঝুলে পড়েছে ঘাড়টা ভেঙে যেন।

 দুটো হাত অসহায় ভাবে চেয়ারের দুপাশে ঝুলছে। পায়ের সামনে একটা কাচের গ্লাস।

কি ব্যাপার? কিরীটীই প্রশ্ন করে।

বুঝতে পারছি না রায় মশাই, অধিকারী রাধারমণ পাল বললেন, ঘরে ঢুকে দেখি ঐ দৃশ্য। ডেকেও সাড়া না পেয়ে আপনার বন্ধুর—

কিরীটী এগিয়ে গেল। ঝুলে-পড়া হরিদাস সামন্তর মুখটা তোলবার চেষ্টা করল। কিন্তু সেটা আবার ঝুলে পড়ল বুকের উপরে।

মুখটা নীলচে। ঠোঁট দুটিও নীলচে। কশের কাছে সামান্য রক্তাক্ত ফেনা।

হাতটা তুলে নাড়ি পরীক্ষা করল কিরীটী। তারপর রাধারমণ পালের দিকে তাকিয়ে মৃদুকণ্ঠে

বললে, উনি বেঁচে নেই।

বেঁচে নেই? সে কি?

একটা চাপা আর্তনাদের মতই যেন রাধারমণ পালের কণ্ঠ হতে কথাগুলো উচ্চারিত হল।

হ্যাঁ, মারা গেছেন। কিরীটী আবার কথাটা উচ্চারণ করল।

মারা গেছেন?

কিরীটী ঐ সময় মাটি থেকে গ্লাসটা তুলে একবার নাকের কাছে নিয়ে শুকল।

তারপর সেটা পাশের একটা টুলের উপরে নামিয়ে রেখে বললে, মনে হচ্ছে কোন তীব্র বিষের ক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে।

বিষ!

কথাটা কিছুটা বিস্ময়ের সঙ্গে যেন উচ্চারিত হল শ্যামলকুমারের মুখ থেকে।  

কিরীটী শ্যামলকুমারের মুখের দিকে তাকাল। শ্যামলকুমারের সমস্ত মুখে যেন একটা বিব্রত ভয়ের কালো ছায়া।

আমার তাই মনে হচ্ছে, কিরীটী বললে, পুলিসে এখুনি একটা খবর দেওয়া দরকার।

পুলিস! পুলিস কি করবে? রাধারমণ একটা ঢোক গিলে কথাটা বললেন।

স্বাভাবিক মৃত্যু নয় যখন তখন পুলিসে একটা সংবাদ দিতে হবে বৈকি।

ঘরের মধ্যে যাত্রাদলের সবাই তখন ভিড় করেছে, সবার কানেই বোধ করি সংবাদটা পৌঁছে গিয়েছিল।

জনা ষোল-সতেরো মেয়ে-পুরুষ যাত্রার দলে।

ইতিমধ্যে বোধ করি বাড়ির কর্তা রমণীমোহন কুণ্ডুর কানেও সংবাদটা পৌঁছে গিয়েছিল। ভদ্রলোক হন্তদন্ত হয়ে এসে ঘরে ঢুকলেন।

কি হয়েছে পাল মশাই? ব্যাপার কি?

রমণীমোহনের বয়স খুব বেশী নয়—পঞ্চাশ-একান্নর মধ্যেই। বেশ স্বাস্থবান দেহ। পোশাক-পরিচ্ছদ দেখলে বোঝা যায় ভদ্রলোক রীতিমত শৌখিন। পরনে কাঁচির কোঁচানো ধুতি, চওড়া কালোপাড়, সাদা গিলে-করা আদ্দির পাঞ্জাবি, পায়ে বিদ্যাসাগরী চটি।

আপনি? কিরীটী প্রশ্ন করে রমণীমোহনের দিকে তাকিয়ে।

আমি এ বাড়ির মালিক–রমণীমোহন কুণ্ডু।

ওঃ, ইনি সামন্ত মশায়ের বন্ধু। রাধারমণ বললেন।

শুনলাম সামন্ত মশাইয়ের নাকি কি হয়েছে?

রাধারমণ পাল চুপ করে ছিলেন। কিরীটীই প্রশ্নটার জবাব দিল, মারা গেছেন। মনে হচ্ছে কোন তীব্র বিষের ক্রিয়ায় মৃত্যু ঘটেছে।

সর্বনাশ! পয়জনিং?

হ্যাঁ।

এখন উপায়?

থানায় একটা সংবাদ পাঠাতে হবে।

হ্যাঁ, এখুনি পাঠাচ্ছি। হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে গেলেন রমণীমোহন কুণ্ডু।

কিরীটী আবার পাল মশাইয়ের দিকে তাকাল। ভদ্রলোকের মুখটা যেন এর মধ্যেই কেমন শুকিয়ে গিয়েছে। মধ্যে মধ্যে পুরু ঠোঁটটা জিভ দিয়ে চেটে ভিজিয়ে নিচ্ছেন।

পাল মশাই!

আজ্ঞে?

আপনাদের দলের সর্বশেষ আজ রাত্রে কার সঙ্গে সামন্ত মশাইয়ের দেখা হয়েছিল, সেকথা জানতে পারলে হত!

পাল মশাই একটা ঢোঁক গিলে বললেন, আমার সঙ্গে—মানে পালা শুরু হবার পর থেকে আমি এখানে আসিইনি।

তাহলে আপনার সঙ্গে পালা শুরু হবার পর আর সামন্ত মশাইয়ের দেখা হয়নি?

না।

হুঁ। আপনারা? কিরীটী পর্যায়ক্রমে সকলের দিকে তাকাল।

তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি পর্যায়ক্রমে একে একে সকলের মুখের উপরই ঘুরে এলো।

চিত্রার্পিতের মত যেন সব দাঁড়িয়ে। কারও মুখে কথা নেই।

কেউ আপনাদের মধ্যে আজ পালা শুরু হবার পর এখানে আসেননি? কিরীটী আবার প্রশ্ন করে।

রোগা মত এক ব্যক্তি এগিয়ে এল। বয়স বত্রিশ-পঁয়ত্রিশের মধ্যে হবে বলে মনে হয়।

 কিরীটী পুনরায় তাকে প্রশ্ন করে, আপনি এসেছিলেন?

না। তবে তৃতীয় অঙ্ক শুরু হবার পর একবার আমি এখানে শ্যামলকুমারকে আসতে দেখেছি। আর তৃতীয় অঙ্কের মাঝামাঝি-সামন্ত মশাই তখন আসরে, সুভদ্রা দেবীকে এই ঘর থেকে বের হয়ে যেতে দেখেছিলাম।

কিরীটী বক্তার মুখের দিকে তাকাল।

রোগা পাকানো চেহারা। চোখের কোল বসা। ভাঙা গাল। নাকটা খাঁড়ার মত উঁচু। মাথায় একমাথা ঢেউ-খেলানো বাবরি চুল। মুখে প্রসাধনের চিহ্ন। পরনে তখনও অভিনয়ের পোশাক।  

কিরীটীর মনে পড়ল, লোকটি ভাল অভিনেতা। বর্তমান নাটকে ভিলেনের পার্ট করছিল। পালায় নায়িকার অন্যতম প্রেমিক। হতাশায় সে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠেছিল।

কি নাম আপনার?

আজ্ঞে সুজিতকুমার মিত্র।

এই দলে আপনি কতদিন আছেন?

কতদিন—মানে, ধরুন গে বছর ছয়েক তো হবেই। আগে তো আমিই এ দলে হিরোর রোল করতাম। রোগে রোগে চেহারাটা ভেঙে যাওয়ায় পাল মশাই আর আমাকে হিরোর পার্ট দেন না, ভিলেনের পার্ট করি।

হুঁ। তা আপনি দেখেছেন শ্যামলকুমার আর সুভদ্রা দেবীকে এই ঘরে আসতে?

আজ্ঞে বললাম তো এইমাত্র, শ্যামলকুমারকে আমি ঢুকতে দেখেছি, কিন্তু বের হয়ে যেতে দেখিনি। আর, সুভদ্রা দেবীকে বেরোতে দেখেছি কিন্তু ঢুকতে দেখিনি।

শ্যামলকুমার ভিড়ের মধ্যে এক পাশে দাঁড়িয়েছিল। কিরীটী শ্যামলকুমারের মুখের দিকে তাকাল।

শ্যামলবাবু, তৃতীয় অঙ্কের গোড়ায়—কিরীটী প্রশ্ন করল, আপনি এসেছিলেন এ ঘরে?

হ্যাঁ। সামন্ত মশাই ডেকে পাঠিয়েছিলেন—একটা চিরকুট দিয়ে।

চিরকুট!

হ্যাঁ।

বলতে বলতে পকেটে হাত চালিয়ে ছোট একটুকরো কাগজ বের করল শ্যামলকুমার।

দেখি—কিরীটী চিরকুটটা হাতে নিল।

ছোট একটুকরো প্রোগ্রাম-ছেঁড়া কাগজ—তাতে পেনসিলে লেখা,শ্যামল, একবার আমার ঘরে এস।

নীচে কোন নামসই নেই।

এতে তো দেখছি কারুর নামসই নেই। তা এটা যে সামন্তরই পাঠানো, বুঝলেন কি করে?

আজ্ঞে দলের চাকর ভোলা আমাকে চিরকুটটা দেয়।

 ভোলা? কোথায় সে?

ভোলা ভিড়ের মধ্যে সবার আড়ালে পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল, এগিয়ে এল।

কালো বেঁটে নাদুস-নুদুস চেহারা। পরনে একটা ধুতি ও গায়ে গেঞ্জি। বয়স বছর ত্রিশেক হবে। চোখের দৃষ্টিতে বেশ যেন একটা সতর্কতা।

তোমার নাম ভোলা? কিরীটী শুধাল।

আজ্ঞে।

বাবুকে তুমি ঐ চিরকুটটা দিয়েছিলে?

আজ্ঞে।

সামন্ত মশাই তোমাকে দিতে দিয়েছিলেন?

আজ্ঞে নিজের হাতে দেননি—

তবে! চিরকুটটা তুমি কোথায় পেলে?

রাধারাণী দিদিমণি চিরকুটটা আমায় দিয়েছিলেন।

তিনি কে?

এবার একটি বছর ত্রিশ বয়সের রমণী এগিয়ে এল।

আমার নাম রাধারাণী।

আপনি দিয়েছিলেন ওকে চিরকুটটা? কিরীটী প্রশ্ন করল।

হ্যাঁ।

আপনাকে সামন্ত মশাই দিয়েছিলেন?  

না। দ্বিতীয় অঙ্কের শেষের দিকে আমি যখন আসর থেকে সাজঘরের দিকে যাচ্ছি, কে যেন আমাকে চিরকুটটা দিয়ে বললে, এটা ভোলাকে দিয়ে বলবেন শ্যামলবাবুকে দিয়ে যেন বলে সামন্ত মশাই তাঁকে এ ঘরে ডেকেছেন।

কে সে?

প্যাসেজে ভাল আলো ছিল না আর আমারও তাড়াতাড়ি ছিল, ভাল করে চেয়ে দেখিনি, নজরও দিইনি।

তার গলাও চেনেননি?

না। ঠিক তাড়াতাড়িতে—

হুঁ, তারপর?

ভোলা আমাদের সাজঘরের বাইরেই ছিল—তাকে চিরকুটটা দিয়ে বলি শ্যামলবাবুকে দিয়ে আসতে, সামন্ত মশাই দিয়েছেন। শ্যামলবাবুর সাজঘরটা আমাদের পাশের ঘরেই।

ঐ সময় হঠাৎ দণ্ডায়মান অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের মধ্য থেকে মধ্যবয়সী কালো গাঁট্টাগোট্টা এক ভদ্রলোক, যিনি সুভদ্রা হরণ পালায় সুভদ্রার মামার পার্ট করেছিলেন—তিনি এগিয়ে এসে বেশ যেন একটু রুক্ষ কর্কশ গলাতেই বললেন, কিন্তু মশাই, আপনার পরিচয় জানতে পারি কি? আপনি কে? পুলিসের মত আমাদের এই জেরা করছেন কেন? আপনি কে? আপনি তো বাইরের লোক। পুলিসকে আসতে দিন, তাদের কাজ তারাই করবে।

রাধারমণ পাল তাড়াতাড়ি বলে ওঠেন, দোলগোবিন্দবাবু, উনি সামন্ত মশাইয়ের বন্ধু।

বন্ধু তো হয়েছে কি?

ঠিক সেই সময় স্থানীয় থানার অফিসার-ইন-চার্জ মণীশ চক্রবর্তী হন্তদন্ত হয়ে এসে ঘরে ঢুকলেন। তাঁর পিছনে পিছনে রমণীমোহন কুণ্ডু।  

মণীশ চক্রবর্তীর বয়স চল্লিশের কিছু ঊর্ধ্বে বলেই মনে হয়। রীতিমত পালোয়ানের মত চেহারা। পাকানো একজোড়া গোঁফ। থুতনিতে নূর দাড়ি। পরনে পুসির ইউনিফর্ম।

কোথায় কোথায় ডেড় বডি?

ঐ যে—বললে কিরীটী।

মণীশ চক্রবর্তী এগিয়ে গিয়ে ডেড় বডির সামনে দাঁড়ালেন। নানা ভঙ্গিতে দেখলেন দূর থেকে, সামনে থেকে, কখনও ঝুঁকে পড়ে, কখনও সামান্য একটু হেলে দাঁড়িয়ে।

কখন মারা গিয়েছে? I mean কখন ব্যাপারটা আপনারা জানতে পেরেছেন?

কথাগুলো বলে পর্যায়ক্রমে মণীশ চক্রবর্তী ঘরের মধ্যে উপস্থিত দণ্ডায়মান সকলের দিকেই তাকালেন।

সবাই চুপ, কারও মুখে কোন কথা নেই।

কি হল? সবাই আপনারা ডে অ্যান্ড ডাম্ব স্কুলের ছাত্র হয়ে গেলেন নাকি? শুনতে পাচ্ছেন না কথাটা আমার, না জবাব দিতে পারছেন না?

তবু কারও মুখে কোন শব্দ নেই। পূর্ববৎ সবাই যেন বোবা—সবাই পুতুলের মত দাঁড়িয়ে।

ঐভাবে ধমক দিয়ে কি ওদের কারও মুখে কোন কথা বের করতে পারবেন অফিসার? এক এক করে আলাদা আলাদা করে জিজ্ঞাসা করুন। কিরীটী মৃদু গলায় বললে, দেখছেন তো ঘটনার আকস্মিকতায় ওঁরা সব ঘাবড়ে গিয়েছেন।  

কিরীটীর দিকে তাকালেন মণীশ চক্রবর্তী। বার কয়েক যেন তাঁর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে কিরীটীকে জরীপ করলেন। তারপর বললেন, আপনি?

রাধারমণ পাল বললেন, সামন্ত মশাইয়ের উনি বন্ধু।

বন্ধু?

আজ্ঞে।

তা উনিও কি যাত্রাদলের! কিরীটীর বেশভূষা লক্ষ্য করেই মণীশ চক্রবর্তী কথাটা বললেন।

না–উনি এসেছিলেন ওঁর বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে। তারপর পালা শুনছিলেন।

অফিসার, আপনার সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিল। ঐ সময় কিরীটী বললে।

কি কথা?

আগে সকলকে ঘর থেকে একটু বেরুতে বলুন, তারপর বলছি।

মণীশ চক্রবর্তী জ কুঁচকে যেন কি ভাবলেন মুহূর্তকাল, তারপর সকলের দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনারা একটু বাইরে যান।

সকলে যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচল।

ঘর থেকে বের হয়ে গেল সবাই। ঘর খালি হয়ে গেল।

কি বলছিলেন বলুন?

কিছু বলবার আগে বলতে চাই, আজকের ব্যাপারটার একটা উপক্রমণিকা আছে মিঃ চক্রবর্তী।

উপক্রমণিকা! সে আবার কি?

কিরীটী তখন তাঁর কাছে হরিদাস সামন্তর যাওয়া থেকে আজকের সমস্ত ঘটনা সংক্ষেপে বলে গেল, তারপর বললে, মানুষগুলোকে স্বচক্ষে দেখবার জন্য ও বোঝবার জন্যই আমি আজ এখানে এসেছিলাম। একবারও ভাবতে পারিনি সত্যিই এমন একটা দুর্ঘটনা ঘটবে।

কিন্তু এখনও আপনার আসল পরিচয়টা তো পেলাম না?

কিরীটী মৃদু গলায় নিজের নামটা উচ্চারণ করল।

মণীশ চক্রবর্তী যেন আর একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কিরীটীকে জরীপ করলেন।

তারপর বললেন, ও, আপনিই সেই বেসরকারী গোয়েন্দা কিরীটী রায়! হ্যাঁ, নামটা আপনার শুনেছি দু-একবার।

আজ্ঞে তবে গোয়েন্দা ঠিক নয়—

তবে? রহস্যের সন্ধান করে আমি বিশেষ আনন্দ পাই। বলতে পারেন ওটা আমার একটা নেশা।

নেশাটা দেখছি বড় জব্বর নেশা! তা আপনি এ ব্যাপারে কি মনে করেন?  

মণীশ চক্রবর্তীর কথা বলার ভঙ্গি ও কথাগুলোর মধ্যে স্পষ্টই যেন একটা তাচ্ছিল্যের ভাব প্রকাশ পায়।

কিরীটী সেটা বুঝতে পেরেই মৃদু হেসে বলে, আমি আর কি বলব মিঃ চক্রবর্তী? আপনিই যখন এসে পড়েছেন—আপনার কি আর কিছু জানতে বা বুঝতে বাকি থাকবে?

 কিরীটীর তোষামোদে মণীশ চক্রবর্তী একটু যেন প্রসন্ন হলেন।

নেহাত লোকটা অবাচীন নয় বোধ হয়, মনে হয় তাঁর।

তবু আপনি তো প্রথম থেকেই এখানে উপস্থিত ছিলেন, তা সত্যিই কি আপনার ব্যাপারটা একটা মার্ডার বলেই মনে হয়? সত্যিই লোকটাকে বিষ দিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে আপনি মনে করেন কিরীটীবাবু?  

এত তাড়াতাড়ি কি কিছু বলা যায়? আপনিই বলুন না মিঃ চক্রবর্তী, আপনার তো এই লাইনে প্রচুর অভিজ্ঞতা আছে!  

তা ঠিক, তবে জবানবন্দি না নিয়ে কিছু বলতে পারছি না; তবে এটা ঠিক—ওঁকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করাই হয়েছে। আর ঐ শ্যামলকুমার আর

 তারপরই একটু থেমে বললেন, কি নাম যেন মেয়েটির বললেন?

সুভদ্রা।  

হ্যাঁ, সুভদ্রা—ওরা দুজনেই এর মধ্যে আছে। বুঝলেন মিঃ রায়, আপনার সব কথা শোনবার পর মনে হচ্ছে, ব্যাপারটা সম্পূর্ণ স্ত্রীলোক-ঘটিত ঈষা। আর সেই ঈর্ষা থেকেই হত্যা।

অসম্ভব নয় কিছু।