০২. হরিদাস সামন্ত অতঃপর

হরিদাস সামন্ত অতঃপর বলতে শুরু করলেন তাঁর কাহিনী।

থিয়েটারে নতুন নতুন সব ছেলেছোকরা অভিনেতাদের আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই হরিদাস সামন্তদের মত বয়স্ক অভিনেতাদের চাহিদা কমতে শুরু করেছিল।  

তার অবিশ্যি আর একটা কারণও ছিল। নতুন অভিনেতারা সব নতুন ঢঙে অভিনয় করে যা আগের দিনের অভিনেতাদের সঙ্গে আদৌ মেলে না।  

পাবলিকও চায় নতুন ধরনের অভিনয় আজকাল।

অবিশ্যি হরিদাস সামন্তর ডিমান্ড কমে যাওয়ার আরও একটা কারণ ছিল। অতিরিক্ত মদ্যপান ও আনুষঙ্গিক অত্যাচারে শরীরটা যেন কেমন তাঁর ভেঙে শুকিয়ে গিয়েছিল, বয়সের আন্দাজে বেশ বুড়োই মনে হত তাঁকে।

বয়সের জন্যই তাঁকে হিয়োর রোল থেকে আগেই সরে আসতে হয়েছিল। শেষে ক্যারেক্টার রোল থেকেও ক্রমশঃ তাঁকে সরে দাঁড়াতে হয়েছিল।

 এবং শেষ পর্যন্ত একদিন যখন হরিদাস বুঝতে পারলেন মঞ্চের প্রয়োজন তাঁর জন্য ক্রমশঃ সঙ্কুচিত হয়ে আসছে—এবং হয়ত শীঘ্রই একদিন নোটিশ পেতে হবে-হরিদাস সামন্ত নিজেই স্টেজ থেকে সরে গেলেন।

একটা সুযোগও তখন এসে গিয়েছিল।

নিউ অপেরা যাত্রাপার্টি থেকে তাঁর ডাক এল। মাইনেটাও মোটা রকমের। হরিদাস সামন্ত সঙ্গে সঙ্গে আগত লক্ষ্মীকে সাদরে বরণ করে নিলেন।

ঐ সময়টায় যাত্রার দলগুলো আবার নতুন করে বাঁচবার চেষ্টা করছিল। মঞ্চের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের তারা দলে মোটা মাইনে দিয়ে টানতে শুরু করেছিল। অনেকে সেজন্য যাত্রার দলে নাম লেখাতে শুরু করেছিল। সেখানেই অভিনেত্রী সুভদ্রার সঙ্গে পরিচয়।

অভিনেত্রী বললে ভুল হবে, কারণ সুভদ্রা তখন মাত্র মাস আষ্টেক ঐ যাত্রার দলে যোগ দিয়েছে। নয়া রিক্রুট। রেফিউজী কলোনীর মেয়ে ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়াশুনা। সুভদ্রার বয়স তখন কুড়ি-একুশের বেশী নয়। পাতলা দোহারা, গায়ের বর্ণ শ্যাম কিন্তু চোখ-মুখের ও দেহের গড়নটি ভারি চমৎকার। যৌবন যেন সারা দেহে উপচে পড়ছে।

ওকে দেখে ও ভাবভঙ্গি দেখে ঝানু অভিনেতা হরিদাস সামন্ত বুঝতে পেরেছিলেন—মেয়েটির মধ্যে পার্টস আছে। ঠিকমত তালিম দিয়ে খেটেখুটে তৈরী করতে পারলে মেয়েটির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।

দলের প্রোপ্রাইটার রাধারমণ পাল মশাইকে কথাটা বললেন হরিদাস সামন্ত।

পাল মশাই বললেন, বেশ তো, দেখুন না চেষ্টা করে সামন্ত মশাই।

তাহলে ওকে আমার হাতে ছেড়ে দিন, আমি তৈরী করে দেব।

বেশ, করুন।

একটা বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন হরিদাস সামন্ত এবং তাঁর অনুমান যে মিথ্যা নয় সেটা প্রমাণিত হয়ে গেল। সুভদ্রার নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। তার অভিনয়ের দ্যুতি ঝিলমিল করে উঠল।  

অভিনয়ের তালিম দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও একটা ব্যাপার যে তলে তলে ঘটে যাচ্ছিল সেটা আর কেউ দলের না বুঝলেও রাধারমণ পাল মশাই সেটা বুঝতে পারছিলেন। কিন্তু সেদিকে নজর দেওয়ার প্রয়োজন তিনি বোধ করেননি। কারণ যাত্রার দলে ঐ ধরণের ব্যাপার ঘটেই থাকে। এক-একজন অভিনেতার সঙ্গে এক-একজন অভিনেত্রী কেমন যেন জোট বেঁধে যায়। ক্রমশঃ হরিদাস তাঁর বাড়িঘরের সঙ্গে সম্পর্কই প্রায় তুলে দিলেন।

বাড়িতে স্ত্রী চিররুগ্না।  

দুটি ছেলে। বড়টি তেইশ-চব্বিশ বৎসরের, একটি ফ্যাক্টরিতে মেকানিক—সুশান্ত। কুড়ি-একুশ বৎসরের ছোটটি প্রশান্ত পাড়ায় মস্তানী করে বেড়ায়।  

প্রৌঢ় বয়সে কোন পুরুষের চোখে যদি কোন নারী পড়ে, তখন তার সাধারণ লাজ-লজ্জার বালাইটাও বোধ হয় থাকে না। প্রৌঢ় হরিদাসেরও সুভদ্রার প্রতি নেশাটা যেন তাঁকে একেবারে বেপরোয়া করে তুলেছিল। যাত্রার দলে তিনি বেশ ভাল মাইনেই পেতেন এবং প্রোপ্রাইটার পাল মশাইয়েরও বোধ হয় হরিদাসের প্রতি একটা দুর্বলতা ছিল। সেই কারণেই হরিদাস সুভদ্রাকে নিয়ে ঘর বাঁধলেন।

হরিদাস নেবুতলায় একটা বাসা ভাড়া নিলেন, সুভদ্রা তাঁর সঙ্গে সেখানেই থাকতে লাগল।

ক্রমশঃ দলের মধ্যে সমস্ত ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে গেল।

কেউ কেউ আড়ালে মুখ টিপে হেসেছিল প্রৌঢ় হরিদাস ও যুবতী সুভদ্রার ব্যাপার-স্যাপার দেখে। বছর দুয়েক হরিদাসের বেশ আনন্দেই কেটে গেল। তারপরই হরিদাস সামন্তর ভাগ্যাকাশে যেন ধূমকেতুর উদয় হল।

তরুণ অভিনেতা, বছর ছাব্বিশ হবে বয়েস, শ্যামলকুমার এসে দলে যোগ দিল। শ্যামলকুমার দেখতে শুনতেও যেমন চমৎকার তেমনি কণ্ঠস্বরটিও ভরাট মাধুর্যপূর্ণ। অভিনয়েও পটু। পাল মশাই শ্যামলকুমারকে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাকে যেন লুফে নিলেন।

কিছুদিন পরে নতুন বই খোলা হল। শ্যামলকুমার নায়ক—সুভদ্রা নায়িকা। পালা দারুণ জমে গেল।

শ্যামলকুমার আসার কিছু আগে থাকতেই হরিদাস আর নায়কেররোল করতেন না। ক্যারেকটার বোলগুলো করতেন। দলের অন্য একটি ছেলে নায়কের রোল করত।  

শ্যামলকুমারের কিন্তু দলে এসেই সুভদ্রার প্রতি নজর পড়েছিল। সুভদ্রার যৌবন তাকে আকৃষ্ট করেছিল—এবং দেখা গেল সুভদ্রাও পিছিয়ে নেই। যোগাযোগটা স্বাভাবিকই।  

হরিদাস সামন্ত তখনও কিছু বুঝতে পারেননি। বুঝতে পারেননি যে, সুভদ্রার মনটা ধীরে ধীরে শ্যামলকুমারের দিকে ঝুঁকছে। বুঝতে যখন পারলেন তখন নাটক অনেকখানি গড়িয়ে গিয়েছে।

স্ত্রী সুধাময়ীর অসুখটা হঠাৎ বাড়াবাড়ি হওয়ায় হরিদাস সামন্ত কটা দিন নেবুতলার বাসায় যেতে পারেননি। তারপর স্ত্রী মারা গেল। শ্রাদ্ধ-শান্তি চুকবার পর এক রাত্রে আটটা নাগাদ হরিদাস নেবুতলার বাসায় গিয়ে দরজায় ধাক্কা দিলেন।

ভিতরে থেকে একটু পরে সুভদ্রার সাড়া এল, কে?

আমি হরিদাস-দরজা খোল।

আজ আমার শরীরটা ভাল নেই। তুমি বাড়ি যাও, কাল এস।

তা দরজাটা খুলছ না কেন? দরজাটা খোল।

বলছি তো শরীরটা খারাপ। জবাব এল সুভদ্রার ভিতর থেকে।

হরিদাসের মনে কেমন সন্দেহ জাগে। ইদানীং কিছুদিন ধরে সুভদ্রার ব্যবহারটাও যেন কেমন ঠেকছিল। তাই তিনি বললেন, দরজা খোল সুভদ্রা—

দরজা অতঃপর খুলে গেল। কিন্তু খোলা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সুভদ্রা নয়-শ্যামলকুমার।

কয়েকটা মুহূর্ত হরিদাসের বানিষ্পত্তি হয় না। তিনি যেন বোবা। পাথর।

শ্যামলকুমার পাশ কাটিয়ে বেরুবার উপক্রম করতেই সামন্ত বললেন, দাঁড়াও শ্যামল—

শ্যামলকুমার দাঁড়াল।

তুমি এত রাত্রে এখানে কি করছিলে?

কেন বলুন তো?

শ্যামলকুমারের গলার স্বরটা যেন ধক্ করে হরিদাসের কানে বাজে।

এটা আমার বাসাবাড়ি, জান?

জানি বইকি। আর কিছু আপনার বলবার আছে?

তোমার এতদূর স্পর্ধা!

সামন্ত মশাই, ভুলে যাবেন না, আমি আপনার মাইনে করা ভৃত্য নই। কথাটা বলেই আর শ্যামলকুমার দাঁড়াল না, একপ্রকার যেন হরিদাসকে ধাক্কা দিয়েই ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

অন্ধকারে দাঁড়িয়ে ছিল সুভদ্রা। শ্যামলকুমারের ঠিক পিছনেই।

হরিদাস সামন্ত এবার ডাকলেন, সুভদ্রা–

কি?

সুভদ্রা অন্ধকার থেকে এগিয়ে এল হরিদাসের সামনে।

এসবের মানে কি?

মানে আবার কি? দেখতেই তো পাচ্ছ। সুভদ্রার স্পষ্ট জবাব, বলায় কোন দ্বিধা বা সংকোচ নেই। লজ্জা বা কোন অনুতাপের লেশমাত্রও নেই যেন।

তাহলে যা কানাঘুষায় শুনছিলাম তা মিথ্যে নয়?

মাঝরাত্রে চেঁচিয়ো না।

কি বললি হারামজাদী, চেঁচাব না? একশবার চেঁচাব—হাজারবার চেঁচাব। আমারই ভাড়াবাড়িতে বসে আমারই খাবি, আমারই পরবি–

কিন্তু হরিদাস সামন্তকে কথাটা শেষ করতে দিল না সুভদ্রা, বললে, আমি তোমার বিয়ে-করা সাতপাকের ইস্তিরী নই হরিদাসবাবু। অত চোখ রাঙারাঙি কিসের?  

কি হল হরিদাসের—দপ করে যেন মাথার মধ্যে আগুন জ্বলে উঠল। বাঘের মতই সুভদ্রার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এলোপাথাড়ি সুভদ্রাকে কিল চড় ঘুষি লাথি চালাতে লাগলেন হরিদাস।

সুভদ্রা মাটিতে পড়ে ককিয়ে কাঁদতে লাগল।

হরিদাস সামন্ত ঐ পর্ষন্ত বলে থামলেন।

.

তারপর? কিরীটী জিজ্ঞাসা করলে।

পায়ে ধরে ক্ষমা চাইলে তারপর বললেন হরিদাস সামন্ত।

তাহলে বলুন ব্যাপারটা মিটে গেল?

মিটল আর কোথায় রায় মশাই! আমিও ভেবেছিলাম বুঝি প্রথমটায় মিটে গেল। কিন্তু তারপর দিন পনেরো না যেতেই বুঝলাম–

কি বুঝলেন?

সুভদ্রা বাইরে শান্ত ও চুপ করে থাকলেও গোপনে ওদের দেখাসাক্ষাৎ বন্ধ হয়নি। আবার একদিন ধরা পড়েও গেল—আবার ধোলাই দিলাম।

আবার মারধোর করলেন?

করব না?

কি বলছেন আপনি রায় মশাই—এত বড় বিশ্বাসঘাতকতা! কিন্তু যেন সমস্ত ব্যাপারটা অন্যদিকে বইতে শুরু করল।

কি রকম?

বুঝলাম ওরা দুজনে তলে তলে আমাকে সরিয়ে দেবার জন্য বদ্ধপরিকর। কিন্তু মুখে অন্য রকম।

তাই নাকি?

হ্যাঁ।

তারপর একটু থেমে হরিদাস সামন্ত বললেন, একটা কথা আপনাকে বলা হয়নি—শ্যামলকুমার যে নাটক লিখতে জানে জানতাম না। হঠাৎ একদিন ঐ ঘটনার দিন পনেরো পরে পাল মশাই আমাকে ডেকে বললেন- সামন্ত মশাই, একটা চমৎকার পালা হাতে এসেছে।

তাই নাকি? জিজ্ঞাসা করলাম।

হ্যাঁ। নতুন লেখক—আর কে জানেন?

কে?

আমাদেরই দলের একজনের লেখা।

কার লেখা?

কে আবার আমাদের দলের নাটক লিখল?

বলুন তো কে? অনুমান করুন তো?

মশাই, পারলাম না।

পারলেন না তো! শ্যামলকুমার।

বলেন কি!

হ্যাঁ। ছেলেটার মধ্যে সত্যিই একটা পার্টস আছে। পালাটা সত্যি চমৎকার হয়েছে। এক কামুক-প্রৌঢ়ের পাটটা দারুণ। ঠিক করেছি সেই প্রৌঢ়ের রোলটাই আপনি করবেন। নায়িকা হবে সুভদ্রা আর নায়ক শ্যামলকুমার। কাল থেকেই রিহার্শেল শুরু করছি। গল্পটি মোটামুটি হচ্ছে প্রৌঢ়ের কাছেই থাকত সুভদ্রা। পরে সেখানে এল গল্পের নায়ক জ্যোর্তিময় বলে ছোকরাটি—তারপর আসল ও সত্যিকারের নাটকের শুরু। একেবারে জমজমাট। আপনি শ্যামলকুমার আর সুভদ্রা যদি তিনটে রোল নেন তো দেখতে হবে না—একেবারে বাজিমাত।

তারপর? কিরীটী শুধাল।

আমি কি তখন জানি নাটকের বিষয়বস্তুটা কি এবং কতখানি। বললাম, বেশ তো, নাটকটা যদি ভাল হয়—

ভাল কি বলছেন মশাই, একেবারে সত্যিকারের একখানি নাটক। এখন বলুন কাল থেকে রিহার্শেল শুরু করবেন তো? সামনের রথযাত্রার দিন থেকেই মহলা শুরু করা যাক। কি বলেন?

বেশ তো।

হরিদাস সামন্ত বলতে লাগলেন, নাটকের মহলা শুরু হল। নাটকের নাম কি জানেন রায় মশাই?

কি? কিরীটী প্রশ্ন করল।

সুভদ্রা হরণ।

তাই নাকি?

হ্যাঁ। সামাজিক পালার ঐ ধরনের নাম কখনও শুনেছেন? তার চাইতেও বড় কি জানেন রায় মশাই?

কি?

নাটকের বিষয়বস্তু অবিকল আমার ও সুভদ্রার মধ্যে যেমন শ্যামলকুমারের আবিভাব ঠিক তেমনি। তবে অত্যন্ত কুৎসিত ভাবে।

কি রকম?

রাখালকে করা হয়েছে নাটকে সুভদ্রার পালিত বাপ—যে বাপ শেষ পর্যন্ত মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হল। ভাবতে পারেন কি জঘন্য মনোবৃত্তি! পাল মশাইকে আমি বলেছিলাম ঐ ধরনের বিশ্রী ব্যাপার পালায় আদৌ থাকা উচিত নয়। কিন্তু পাল মশাই হেসেই উড়িয়ে দিলেন আমার কথাটা। বললেন—আধুনিকতা আছে ব্যাপারটার মধ্যে।

নাটকের শেষ কি?

নাটকের শেষ দৃশ্যে রাখাল বিষপান করবে—ঘৃণায়, অপমানে। কাল বাদে পরশু সেই পালার প্রথম অভিনয় রজনী—চন্দননগরে।

তা এ ব্যাপারে আপনার দিক থেকে বিপদের বা আশঙ্কার কি আছে?

রায় মশাই, আমি বুঝতে পারছি–

কি?

ওরা আমাকে শেষ পর্যন্ত নিশ্চয়ই হত্যা করার মতলব করছে।

হত্যা করবে? বলেন কি? কিরীটী বললে।

হ্যাঁ। কেন যেন আমার মনে হচ্ছে, ঐ যে নাটকের মধ্যে বিষপ্রয়োগের ব্যাপারটা আছে—আমার কেন যেন মনে হচ্ছে ঠিক ঐ থেকেই সত্যিসত্যিই আমাকে ওরা হত্যা করার–

না, না —তা কখনও সম্ভব?

সম্ভব। ওদের পক্ষে সবই এখন সম্ভব। ওরা মরীয়া হয়ে উঠেছে।

তা এতই যদি আপনার ভয়, দল ছেড়ে দিন না।

ছাড়তে চাইলেও ছাড়া পাব না, কারণ বেশ কিছু টাকা ধারি পাল মশাইয়ের কাছে আমি। অথচ পুলিসকে একথা বললে তারা হেসেই উড়িয়ে দেবে। তাই আপনার শরণাপন্ন হয়েছি রায় মশাই। আমাকে আপনি বাঁচান।  

কিরীটী কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর বললে, সুভদ্রার মনোভাব এখন আপনার প্রতি কেমন? সে এখনও আপনার সঙ্গেই আছে তো?  

তা আছে। কিন্তু ওর চোখের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, তলে তলে ও ছুরি শানাচ্ছে।

সামন্ত মশাই, কিছু যদি মনে করেন তো একটা কথা বলব?

কি বলুন?

সুভদ্রাকে আপনি ছেড়ে দিন না—

সুভদ্রাকে ছাড়াও যা মৃত্যুবরণ করাও তা। তা যদি পারতাম তবে আর আপনার শরণাপন্ন হব কেন?

কথাগুলো বলতে বলতে সামন্ত পকেট থেকে দশ টাকার দশখানা নোট বের করে এগিয়ে ধরলেন।–গরীব অভিনেতা আমি রায়মশাই, আপনার যোগ্য পারিশ্রমিক দেবার সাধ্য বা ক্ষমতা কোনটাই আমার নেই। আপাততঃ এটা—

টাকা থাক সামন্ত মশাই। কারণ আমি নিজেই এখনও বুঝতে পারছি না কিভাবে আপনাকে আমি সাহায্য করতে পারি। আচ্ছা পরশু তো চনন্দনগরে আপনাদের অভিনয়?

হ্যাঁ—প্রথম গাওনা।

আমি যাব। আপনাদের গ্রীনরুমের আশেপাশেই থাকব। তবে—

তবে?

আমাকে হয়ত চিনে ফেলবে শ্যামলকুমার আর সুভদ্রা। তাই ভাবছি—

বলুন?

এক প্রৌঢ়র ছদ্মবেশে—আপনার বন্ধুর পরিচয়ে যাব।

বেশ। খুব ভাল প্রস্তাব।

তাহলে সেই কথাই রইল। আমার নাম বলবেন ধূর্জটি রায়। এককালে অভিনয় করতাম। আপনার পুরাতন বন্ধু।

ঠিক আছে, তাই হবে।

অতঃপর হরিদাস সামন্ত বিদায় নিলেন।