১১. ঘরে পা দিয়ে থমকে দাঁড়ায় সর্বাণী

ঘরে পা দিয়ে কিন্তু থমকে দাঁড়ায় সর্বাণী।

ঘরটা অন্ধকার। আলো নেভানো।

একটু ইতস্তত করে সর্বাণী, অন্ধকার ঘরের মধ্যে দাঁড়ায় মুহূর্তের জন্য। তারপরই মৃদুকণ্ঠে ডাকে, শমিতা!

কিন্তু কোন সাড়া আসে না অন্ধকারে।

হাত বাড়িয়ে সর্বাণী সুইচটা টিপে ঘরের আলোটা জ্বেলে দিল। ঘরের আলোটা জ্বলে উঠতেই ওর নজরে পড়ল বড় সোফাটার উপরে পা তুলে চোখ বুজে শুয়ে আছে শমিতা। মনে হল ঘুমোচ্ছে।

একটু ইতস্তত করল সর্বাণী। তারপর মৃদুকণ্ঠে ডাকল, শমিতা, এই শমিতা?

কিন্তু সর্বাণীর ডাকে শমিতা চোখও খুলল না, সাড়াও দিল না।

এই শমিতা? ঘুমিয়ে পড়লি নাকি? বেশ মেয়ে তো! এই শমিতা, ওহ!

তথাপি শমিতার কোন সাড়া পাওয়া যায় না।

সর্বাণী তথাপি কিছুক্ষণ শায়িতা শমিতার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর এক সময় ঘরের আলোটা আবার নিভিয়ে ঘরের বাইরে এসে দরজাটা ভিতর থেকে টেনে দিল।

কি হল? শিশিরাংশু জিজ্ঞাসা করে।

ঘুমিয়ে পড়েছে। সর্বাণী বললে।

ঘুমিয়ে পড়েছে! কোথায়?

সোফাটার উপরই শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।

ছিঃ ছিঃ, দেখ তো কি ভেবেছেন!

কি আবার ভাববে? আর ভাবে ভাবুক। চল, তোমাকে খেতে দিই। বলতে বলতে সবণিী কিচেনে গিয়ে ঢুকল।

শিশিরাংশুকে খাবার পরিবেশন করে দিল, অথচ সর্বাণী বসল না টেবিলে।

শিশিরাংশু জিজ্ঞাসা করে, তুমি খাবে না?

ক্ষিধে নেই–তুমি খাও।

খেতে খেতে শিশিরাংশু একসময় বলে, কাজটা ভাল হল না সবি!

কেন?

তা নয় তো কি! একটা রাতের জন্য ভদ্রমহিলা আমাদের বাড়িতে এলেন–তাছাড়া ঐভাবে কেউ ঘুমোতে পারে নাকি! এদিকে যা মশা–

তা আমি তো আর সোফায় শুয়ে রাত কাটাতে বলিনি।

স্ত্রীর মুখের দিকে তাকাল শিশিরাংশু, সর্বাণী!

কি?

মনে হচ্ছে তুমি যেন হঠাৎ উনি এভাবে তোমার বাড়িতে আসায় ঠিক সন্তুষ্ট হওনি।

নিশ্চয়ই হইনি। কিন্তু কেন?

ওর সব কথা তুমি জান না, ইদানীং ও যেভাবে উচ্ছঙ্খল জীবনযাপন করছিল—

কথাটা তোমার আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না সর্বাণী।

পরে বলব, এখন খেয়ে নাও।

কিন্তু—

আচ্ছা, তুমি কি কিছুই টের পাওনি?

কি টের পাব?

কেন, কোন গন্ধ পাওনি ওর মুখে?

কিসের গন্ধ?

ওর মুখ থেকে ভড়ভড় করে মদের গন্ধ বেরুচ্ছিল যখন ও কথা বলছিল! গন্ধ পাওনি তুমি?

সে কি! কই, আমি তো—

আশ্চর্য! তোমার নাকে গন্ধ গেল না? সি ইজ ড্রাঙ্ক! আমার সারাটা গা এখনও বমি–বমি করছে। স্নান না করে আমি শুতে পারব না।

শিশিরাংশু আর কোন কথা বলে না।

একসময় তারপর পাশের ঘরের আলো নিভে গেল। সর্বাণী ও তার স্বামীর কথা আর শোনা যায় না। আরও কিছু পরে শমিতা উঠে বসল সোফাটার ওপরে অন্ধকারে ধীরে ধীরে।

এতক্ষণ ধরে অন্ধকারে মশার কামড়ে চোখ-মুখ জ্বালা করছিল শমিতার। বাকি রাতটুকু ঘুম হবে না। মশার কামড়ের জ্বালা না থাকলেও অবিশ্যি ঘুম আসত না শমিতার চোখে।

দাদা যে তাকে অমন স্পষ্টাস্পষ্টি মুখের উপরেই বলে দিতে পারে তার বাড়িতে আর শমিতার স্থান হবে না ভাবতে পারেনি ও। কাল সকালেই যেখানে হোক একটা ব্যবস্থা থাকার করে নিতেই হবে তাকে। কিন্তু কোথায়? সেটাই ভেবে কোন কূল-কিনারা পায় না শমিতা।

সর্বাগ্রে তাকে একবার সমরেশের সঙ্গে দেখা করতে হবে।

কিন্তু সমরেশের কথা মনে পড়তেই মনটা যেন কেমন একটা বিতৃষ্ণায় ভরে ওঠে শমিতার। তার প্রতি সমরেশের মনোভাবটা জানতে শমিতার বাকি নেই।

আজ যদি সমরেশের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়, সমরেশ তার দুর্বলতার সুযোগটা পুরোপুরিই নেবে। সমরেশের বাহুবন্ধনে তাকে ধরা দিতেই হবে। অথচ মনের দিক থেকে এতটুকু সাড়া না মিললেও, সমরেশ ছাড়া এই মুহূর্তে আর কারো কথাই তার মনে পড়ছে না যে আজ তাকে বাঁচাতে পারে।

আর একজন অবিশ্যি পারত, কিন্তু তার নাগাল আর পাওয়ার তার কোন উপায় নেই।

না, অসম্ভব মশা। বসবারও উপায় নেই। শমিতা উঠে দাঁড়াল। ঘরের মধ্যে অন্ধকারেই পায়চারি শুরু করল।

.

সর্বাণী সারাটা রাত ঘুমোতে পারেনি। শমিতার কথাই ভেবেছে। শমিতা এক সময় তার ঘনিষ্ঠতম বান্ধবী ছিল। কিন্তু আজ যেন শমিতাকে সে কিছুতেই সহ্য করতে পারছিল না।

আশ্চর্য! শমিতার প্রতি এমন যে একটা বিতৃষ্ণা তার মনের মধ্যে জমা হয়ে উঠেছে কখনও সে জানতেও পারেনি। কিছুতেই যেন সর্বাণী মন থেকে শমিতাকে ক্ষমা করতে পারছিল না। এমনিই বিচিত্র মানুষের মন বটে! যাকে একদিন সর্বতোভাবে সমস্ত মন দিয়ে কামনা করেছে, আজ তারই প্রতি বিতৃষ্ণায় মনটা যেন শক্ত কঠিন হয়ে উঠেছে।

বাকি রাতটুকু শয্যায় ছটফট করে–ভোরের আলো একটু জানালাপথে দেখা দিতেই সর্বাণী উঠে পড়ল শয্যা ছেড়ে।

হাত মুখ ধুয়েই চায়ের জল চাপাল। এক কাপ চা তৈরি করে বাইরের ঘরের ভেজানো দরজাটা ঠেলে ভিতরে পা দিয়েই সর্বাণী থমকে দাঁড়াল। ঘর শূন্য। শমিতা নেই–তার সুটকেসটাও নেই। বাইরের দরজাটা ভেজানো। বুঝতে দেরি হয় না সর্বাণীর, শমিতা চলে গিয়েছে।

হঠাৎ দৃষ্টি পড়ল সামনের সেন্টার–টেবিলটার ওপরে। একটা কাগজ ভাঁজ করা রয়েছে, একটা বই দিয়ে চাপা দেওয়া। এগিয়ে গিয়ে ভাঁজ–করা কাগজটা তুলে নিল সর্বাণী।

যা ভেবেছিল তাই। শমিতা চিঠি লিখে রেখে গেছে একটা। ঘরের মধ্যে তখনও ঝাঁপসা–ঝাঁপসা অন্ধকার।

আলোটা জ্বেলে চিঠিটা পড়তে থাকে সর্বাণী।

সর্বাণী,

চলে যাচ্ছি ভাই। কাল রাত্রে এসে তোকে যে এতখানি বিব্রত করব ঠিক বুঝতে পারিনি, বুঝলে নিশ্চয়ই আসতাম না। আমাদের পুরনো দিনের বন্ধুত্বটার যে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই বুঝতে পারি নি রে। যাওয়ার সময় তোকে মুখে বলে যেতে পারলাম না বলে আমাকে ক্ষমা করিস। তোকে কাল রাত্রে বলতে পারিনি, দাদা আমাকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলায়ই অত রাত্রে কোথায় যাই ভাবতে গিয়ে তোর কথাটাই সর্বাগ্রে মনে পড়ায় তোর কাছেই এসেছিলাম। তোর স্বামীকে এ চিঠিটা দেখাস না–ছিড়ে ফেলিস। আর হয়ত জীবনে দেখা হবে না।

ইতি—শমিতা

.

বড় রাস্তায় পড়ে কিছুটা হাঁটবার পরই একটা ট্যাক্সি পেয়ে গিয়েছিল শমিতা।

ট্যাক্সিতে বসে-বসেই মনে পড়ল আজ অনেক দিন পরে আবার স্বামী অমলেন্দুর কথা।

বছর দুই আগে এক শীতের রাত্রে সেই যে একবস্ত্রে বের হয়ে এসেছিল শমিতা অমলেন্দুর বাড়ি থেকে, তারপর আর কখনও অমলেন্দুর কথা মনে পড়েনি।

অমলেন্দুও আর কোন খোঁজ করেনি তার–সেও করেনি অমলেন্দুর। অমলেন্দু-পর্বটা যেন সে জীবনের পাতা থেকে একেবারে মুছেই দিয়েছিল।

কিন্তু অমলেন্দু কোন খোঁজখবর না নিলেও, অমলেন্দুর খবর মধ্যে মধ্যে ও কিন্তু পেত। তাদের ডিভোর্স হয়ে যাবার কিছুদিন পরেই অমলেন্দুর বাবা মারা যান, তার মাস কয়েক পরেই ভায়ে ভায়ে অমলেন্দুরা আলাদা হয়ে যায়।

পৈতৃক গৃহ ছেড়ে অমলেন্দু মিডলটন স্ট্রীটে একটা বিরাট ফ্ল্যাট-বাড়ির একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে উঠে এসেছে, সংবাদটা পেয়েছিল শমিতা সমরেশের কাছেই। সমরেশ একদিন অমলেন্দুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। অধ্যাপনার সঙ্গে সঙ্গে অমলেন্দু বইয়ের ব্যবসা শুরু করেছিল।

অমলেন্দু যে আর দ্বিতীয়বার বিবাহ করেনি সে খবরটাও পেয়েছিল শমিতা। চলমান ট্যাক্সিতে বসে অমলেন্দুর কথা হঠাৎ মনে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার মনে হয় অমলেন্দুর কাছে গেলে কেমন হয়! কোন হোটেলে গিয়ে উঠবার মতো টাকা তার হাতে নেই। একটা কোন বোর্ডিংই তাকে খুঁজে নিতে হবে, কিন্তু সেও সময়ের প্রয়োজন।

একবার মনে হয়, অমলেন্দু কিছু ভাববে না তো! মনে মনে হাসবে না তো! কিন্তু অমলেন্দু সে প্রকৃতির মানুষ নয়। মনে মনে সে যাই ভাবুক তার স্বাভাবিক শিষ্ঠাচারবোধ মুখে তাকে কিছু প্রকাশ করতে দেবে না।

তাছাড়া সেও আর চিরকালের জন্য কিছু সেখানে থাকতে যাচ্ছে না। তার বর্তমান সঙ্কটের সময় কিছুদিনের জন্য একটা আশ্রয় চায় মাত্র সে তার কাছে।

বিশেষ করে কিরীটী রায়ের শ্যেনদৃষ্টির সামনে থেকে সে আপাততঃ কিছুদিন দূরে দূরে থাকতে চায়, গগনবিহারীর ব্যাপারটা যতদিন না মিটে যায়, সে একটা নিভৃত কোটর চায় যেখানে সে নিজেকে আত্মগোপন করে রাখতে পারে নিশ্চিন্তে।

হ্যাঁ, আজ সে আত্মগোপন করতেই চায়।

কথাটা মনে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কেমন যেন একটা ভয়ের অনুভূতি তাকে অক্টোপাশের মত আঁকড়ে ধরবার চেষ্টা করে। বুকটার মধ্যে যেন কেমন করতে থাকে।

কিরীটী কি তাকে সন্দেহ করেছে। তার চোখের সেই তীক্ষ্ণ অন্তর্ভেদী দৃষ্টি চোখের সামনে ভেসে উঠে যেন তাকে তীক্ষ্ণ শলাকার মত বিদ্ধ করছিল। আচ্ছা, সত্যিই গগনবিহারী উইল করেছিল নাকি?

আশ্চর্য, মানুষের কি লোভ! কামুক লম্পট গগনবিহারী ভেবেছিল তার অর্থ দিয়েই শমিতাকে। করায়ত্ত করতে পারবে। আর সেই–সেই কারণেই হয়ত তাকে টেলিফোনে ডেকে পাঠিয়েছিল ঐ রাত্রে।

কিন্তু আশ্চর্য, এসব পাগলের মত আবোলতাবোল কি সব সে ভাবছে।

কিধার যায়গা মাঈজী?

ট্যাক্সি–ড্রাইভারের ডাকে হঠাৎ যেন শমিতা চমকে ওঠে।

গাড়ি তখন গড়িয়াহাটা ব্রিজটা ক্রস করছে, নীচ দিয়ে একটা ইলেকট্রিক ট্রেন চলে যাচ্ছে–তার শব্দ ওর কানে আসে। ওর সমস্ত স্নায়ু যেন ঝিমঝিম করে ওঠে।

শমিতা তাড়াতাড়ি বলে, মিডলটন স্ট্রীট চল।

ড্রাইভার আর কোন কথা বলে না–যেমন গাড়ি চালাচ্ছিল তেমনিই চালাতে থাকে।

সবে প্রত্যুষের আলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। রাস্তার আলোগুলো এখনও নেভেনি। রাস্তা একপ্রকার খালি বললেই হয়।

মধ্যে মধ্যে পাশ দিয়ে এক-আধটা খালি বাস, মিল্ক ভ্যান বা প্রাইভেট গাড়ি চলে যাচ্ছে। দু’একজন পথিক চোখে পড়ে। শমিতার যেন কেমন শীত–শীত করে।

গাড়ি ক্রমে রামকৃষ্ণ কালচারাল মিশনগোলপার্ক পার হয়ে ট্রাম রাস্তার দিকে চলেছে।

হঠাৎ কি যেন আবার মনে হয় শমিতার। ঘাড় ফিরিয়ে পিছনের দিকে তাকাল। কেউ কোন গাড়ি তাকে অনুসরণ করছে না তো? পিছনে পিছনে একটা গাড়ি আসছে না?

কার গাড়ি? তার ট্যাক্সিটাকেই ফলো করছে নাকি?

নাঃ, শমিতা কি পাগল হয়ে যাবে নাকি! এসব কি সে ভাবছে! এসব কিসের প্রতিক্রিয়া? ভয়? কিরীটী রায়ের সেই দুটো চোখের দৃষ্টি! তীক্ষ্ণ শলাকার মত অন্তর্ভেদী!

পাশ দিয়ে একটা খালি ট্রাম চলে গেল পার্ক সাকার্সের দিকে। বলবে কি শমিতা ট্যাক্সি–ড্রাইভারকে মিডলটন স্ট্রীট নয়, অন্য কোথাও সে চলুক! কিন্তু কোথায়?

কেন, সোজা হাওড়া স্টেশনে। তারপর সেখান থেকে ট্রেনে চেপে দূরে–অনেক দূরে–আসানসোল, ধানবাদ, গোমো, গয়া, মোগলসরাই, বেনারস ছাড়িয়ে আরও দূরে!

কিন্তু তারপর?

সমস্ত শহরটা এরকম আশ্চর্যরকম ফাঁকা ফাঁকা কেন? শহরের এত লোকজন কোথায় গেল? আচ্ছা ট্যাক্সি-ড্রাইভারটা কিছু ভাবছে না তো! ট্যাক্সি ড্রাইভারটা যদি বলে দেয়!

শমিতা আবার একটু নড়েচড়ে বসল। কপাল বুকের কাছে পিঠে ঘাম জমছে। হাত দুটো কেমন যেন অবশ। হাত তুলে একবার নিজের মুখে হাতটা বুলিয়ে নিল শমিতা। কোন সাড় নেই মুখে।

হাওয়ায় কয়েকগাছি চূর্ণকুন্তল চোখে-মুখে এসে পড়ছে। হাত দিয়ে ওড়া চুলগুলো ঠিক। করে দেবার চেষ্টা করল শমিতা, কিন্তু পারল না–হাতের আঙুলগুলোও যেন কেমন অবশ হয়ে গিয়েছে।

কেমন যেন অনড় হয়ে বসে থাকে শমিতা। একসময় ট্যাক্সিটা ক্যামাক স্ট্রীট দিয়ে মিডলটন। স্ট্রীটে এসে ঢুকল।

কেতনা নাম্বার মাঈজী?

ইধারই রোখ।

ড্রাইভার ট্যাক্সি থামাল। শমিতা ট্যাক্সি থেকে নামল সুটকেসটা নিয়ে। হাতের ব্যাগ খুলে ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে দিল। ট্যাক্সিটা মিটার তুলে সোজা বের হয়ে গেল চৌরঙ্গীর দিকে।

কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল শমিতা। তারপর এদিক–ওদিক তাকাতে তাকাতে এগিয়ে চলল।

নতুন একটা সাততলা বিরাট ম্যানসন। গেটটা খোলাই। মনে পড়ল শমিতার, কে যেন বলেছিল নতুন একটা ম্যানসনের কোন একটা ফ্ল্যাট নিয়েছে অমলেন্দু।

কোটইয়ার্ড দিয়ে এগুতেই একজন দারোয়ানকে নজরে পড়ল। দারোয়ানকেই ও শুধায়, ইধার মিঃ এ. মল্লিক কোন ফ্ল্যাটমে রহতা হ্যাঁয় দারোয়ানজী?

মিঃ মল্লিক!

হ্যাঁ।

চারতলা–আঠার নাম্বার ফ্ল্যাট।

সিঁড়ি কিধার হ্যাঁয়?

সিধা যাইয়ে বাঁয়ে তরফ–লিফট সিঁড়ি দুই হ্যাঁয়।

শমিতা আর দারোয়ানের দিকে তাকাল না। সুটকেসটা হাতে এগিয়ে গেল।

অটোমেটিক লিট। একজন সুট–পরিহিত ভদ্রলোক লিস্ট দিয়ে নেমে এল। শমিতা লিফটে ঢুকে থার্ড ফ্লোরের বোতামটা টিপে দিল। দরজা বন্ধ হয়ে গেল, আপনা হতেই লিফট উঠতে লাগল।

চারতলায় এসে লিস্ট থামল। দরজা আপনা হতেই খুলে যেতে শমিতা করিডরে পা দিল।