০২. ভয়ঙ্কর চারটি কালো ছিদ্র

ভয়ঙ্কর চারটি কালো ছিদ্র

শঙ্কর সেন কিরীটীর কলেজের বন্ধু, একই কলেজ থেকে ওরা বি.এস্-সি. পাস করেছিল।

রসায়নে এম. এস্-সি পাস করে শঙ্কর মামার বন্ধুর কলিয়ারীতে কাজ নিয়ে চলে যায়। সেও দীর্ঘ পাঁচ বছরের কথা। কিরীটী তার আগেই রহস্যভেদের জালে পাক খেতে খেতে এগিয়ে গেছে অনেকটা। বছর-দুই আগে কলকাতায় দুজনের একবার ইস্টারের ছুটিতে দেখা হয়েছিল।

তারপর কেউ কারও সংবাদ পায়নি। হঠাৎ শঙ্করের চিঠি পেয়ে কিরীটী বেশ খুশীই হল।

জংলীকে ডেকে সব গোছগাছ করতে বলে দিল।

পরের দিন তুফান মেলে যাবে সব ঠিক, এমন সময় সুব্রত এসে সব লণ্ডভণ্ড করে দিল।

একতলার ঘরে জংলীকে সব গোছগাছ করতে দেখে প্রশ্ন করলে, ব্যাপার কি জংলী?

বাবু কাতরাসগড় চলেছেন।

হঠাৎ?

কী জানি বাবু! আপনাদের কয় বন্ধুর কি মাথার ঠিক আছে? বর্মা, লঙ্কা, হিল্লী-দিল্লীতে আপনারা লাফালাফি করতেই আছেন।

সুব্রত হাসতে হাসতে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল। কিরীটী তার বসবার ঘরে একটা সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বুজে চুরুট টানছিল। সুব্রতর পায়ের শব্দে মুদ্রিত চোখেই বললে:

কিবা প্রয়োজনে
এ অকিঞ্চনে
করিলে স্মরণ?

সুব্রত হাসতে হাসতে জবাব দিল :

আসি নাই সন্ধি হেতু,
ফাটাফাটি রক্তারক্তি
খুনোখুনি,
যাহা হয় কিছু!
পোঁটলাপুঁটলি বাঁধি;
জংলীরে সাথে লয়ে
কোথায় চলেছ;
দিয়ে অভাগা আমারে ফাঁকি?

কিরীটী বললে:

করিয়াছি মন
সুদূর কাতরাসগড়।
বারেক আসিব ঘুরি

নে নে, থামা বাবা তোর কবিতা! সত্যি হঠাৎ কাতরাসগড় চলেছিস কেন?

কিরীটী সোফার ওপরে সোজা হয়ে বসে, হাতের প্রায়-নিভন্ত সিগারেটটা অ্যাসট্রেতে ফেলে বললে, হৈ-হৈ ব্যাপার, রৈরৈ কাণ্ড!

অর্থাৎ?

শোন। কাতরাসগড় ও তেঁতুলিয়া হল্টের মাঝামাঝি একটা কোল্‌ফিল্ড আছে। সেটার মালিক পূর্ববঙ্গের কোন এক যুবক জমিদার-নন্দন।

তারপর?

কলিয়ারী স্টার্ট করা হয়েছে; অর্থাৎ তোমার কলিয়ারীর গোড়াপত্তন আরম্ভ করা হয়েছে মাস-দুই হল।

থামছিস কেন, বল না!

কিন্তু মাস-দুয়েকের মধ্যে তিন তিনটে ম্যানেজার খুন হয়েছেন।

তার মানে?

আরে সেই মানেই তো solve করতে হবে।

বুঝলাম। তা কী করে ম্যানেজার তিনজন মারা গেলেন?

ময়না-তদন্তে জানা গেছে তাঁদের গলা টিপে মারা হয়েছে এবং গলার পিছন দিকে মারাত্মক রকমের চারটি করে ছিদ্র দেখতে পাওয়া গেছে। তাছাড়া অন্য কোন দাগ বা কোন ক্ষত পর্যন্ত নেই।

শরীরের অন্য কোন জায়গায়ও না?

না, তাও নেই।

আশ্চর্য!

তা আশ্চর্যই বটে! সত্যিই আশ্চর্য সেই চারটি কালো ছিদ্র! এবারকার নতুন ম্যানেজার হচ্ছে আমারই কলেজ-ফ্রেণ্ড শঙ্কর সেন। সেও তোমার মতই গোঁইয়ার-গোবিন্দ ও একজন পাকা অ্যাথলেট। সে সমস্ত ব্যাপার জানিয়ে আমায় সেখানে যেতে লিখেছে।

দেখ কিরীটী, সুব্রত বললে, একটা মতলব আমার মাথায় এসেছে!

যথা?

এবারকার রহস্যের কিনারার ভারটা আমার ওপরে ছেড়ে দে। এতদিন তোমার সাকরেদি করলাম, দেখি পারি কিংবা হারি-হরি।

বেশ তো। আমার সঙ্গেই চল না।

না, তা হবে না। পুরোপুরি আমার হাতেই সব কিছু ছেড়ে দিতে হবে। এর মধ্যে তুই মাথা দিতে পারবি না!

পুরাতন কলেজ-ফ্রেণ্ড, যদি অসন্তুষ্ট হয়?

কেন, অসন্তুষ্ট হবে কেন? আমি হালে পানি না পাই, তবে না-হয় তুই অবতীর্ণ হবি!

কিন্তু তখন যদি সময় আর না থাকে, বিশেষ করে একজনের জীবনমরণ যেখানে নির্ভর করছে!

সব বুঝি কিরীটী। তার নিয়তি যদি ঐ কলিয়ারীতেই থাকে তবে কেউ তা রোধ করতে পারবে না। তুই আমি তো কোন্ কথা, স্বয়ং ভগবানও পারবে না।

তা বটে। তা বেশ, তুই তাহলে কাল রওনা হয়ে হ্যাঁ। শঙ্করকে একটা চিঠি ড্রপ করে দেব সমস্ত ব্যাপার খুলে লিখে।

হ্যাঁ, তাই দে। ভয় নেই কিরীটী, সুব্রত রায়কে তুই এটুকু বিশ্বাস করতে পারিস, বুদ্ধির খেলায় না পারি দেহের সবটুকু শক্তি দিয়েও তাকে প্রাণপণে আগলাবই।

দেহের শক্তিতে সেও কম যায় না সুব্রত। একটু গোলমাল ঠেকলেই কিন্তু তুই আমায় খবর দিস ভাই। অবিশ্যি চিঠি থেকে যতটুকু ধরতে পেরেছি তাতে ব্যাপারটা যে খুব জটিল তা মনে হয় না। এক কাজ করিস তুই, বরং প্রত্যেক দিন কতদূর এগুলি বিশদভাবে আমায় চিঠি লিখে জানাস, কেমন?

বেশ, সেই কথাই রইল।