২৪. শুদ্ধ চিত্তের কথা, ঠকচাচার জালকরণ জন্য গেরেপ্তারি –বরদাবাবুর দুঃখ, মতিলালের ভয়; বেচারাম ও বাঞ্ছারাম উভয়ের সাক্ষাৎ ও কথোপকথন।

প্রাতঃকালে মন্দ মন্দ বায়ু বহিতেছে, –চম্পক, শেফালিকা ও মল্লিকার সৌগন্ধ ছুটিয়াছে। পক্ষিসকল চকুবুহ চকুবুহ করিতেছে –ঘটকের দরুনবাটীতে বেণীবাবু বরদাবাবুকে লইয়া কথাবার্তা কহিতেছেন। দক্ষিণ দিক থেকে কতকগুলো কুকুর ডাকিয়া উঠিল ও রাস্তার ছোঁড়ারা হো হো করিয়া হাসিতে লাগিল –গোল একটু নরম হইলে “দূঁর দূঁর” ও “গোপীদের বাড়ি যেও না করি রে মানা” এই খোনা স্বরের আনন্দলহরী কর্ণগোচর হইতে লাগিল। বেণীবাবু ও বরদাবাবু উঠিয়া দেখেন যে বহুবাজারের বেচারামবাবু আসিতেছেন –গানে মত্ত, ক্রমাগত তুড়ি দিতেছেন। কুকুরগুলো ঘেউ ঘেউ করিতেছে –ছোঁড়ারা হো হো করিতেছে, বহুবাজারনিবাসী বিরক্ত হইয়া দূঁর দূঁর করিতেছেন। নিকটে আসিলে বেণীবাবু ও বারদাবাবু উঠিয়া সম্মানপূর্বক অভ্যর্থনা করিয়া তাঁহাকে বসাইলেন। পরস্পর কুশলবার্তা জিজ্ঞাসানন্তর বেচারামবাবু বারদাবাবুর গায়ে হাত দিয়া বলিলেন –ভাই হে। বাল্যাবধি অনেক প্রকার লোক দেখিলাম –অনেকেরই অনেক গুণ আছে বটে কিন্তু তাহাদিগকে দোষে-গুণে ভালো বালি –সে যাহা হউক, নম্রতা, সরলতা, ধর্ম বিষয়ে সাহস ও পর সম্পর্কীয় শুদ্ধচিত্ত তোমার যেমন আছে এমন কাহারও দেখিতে পাই না। আমি নিজে নম্রভাবে বলি বটে কিন্তু সময়বিশেষ অন্যের অহংকার দেখিলে আমার অহংকার উদয় হয় –অহংকার উদয় হইলেই রাগ উপস্থিত হয়, রাগে অহংকার বেড়ে উঠে। আমি কাহাকেও রেয়াত করি না –যখন যাহা মনে উদয় হয় তখন তাহাই মুখে বলি কিন্তু আমার নিজের দোষে তত সরলতা থাকে না –আপনি কোনো মন্দ কর্ম করিলে সেটি স্পষ্ট স্বীকার করিতে ইচ্ছা হয় না, তখন এই মনে হয় এ কথাটি ব্যক্ত করিলে অন্যের নিকট আপনাকে খাটো হইতে হইবে। ধর্ম বিষয়ে আমার সাহস অতি অল্প –মনে ভালো জানি অমুক কর্ম করা কর্তব্য কিন্তু আপন সংস্কার অনুসারে সর্বদা চলাতে সাহসের অভাব হয়। অন্য সম্বন্ধে শুদ্ধচিত্ত রাখা বড়ো কঠিন –আমি জানি বটে যে মনুষ্যদেহ ধারণ করিলে মনুষ্যের ভালো বই মন্দ কখনই চেষ্টা পাওয়া উচিত নহে কিন্তু এটি কর্মেতে দেখানো বড় দুষ্কর। যদি কেহ একটু কটু কথা বলে তবে তাহার প্রতি আর মন থাকে না –তাহাকে একেবারে মন্দ মনুষ্য বোধ হয় –তোমার কেহ অপকার করিলেও তাহার প্রতি তোমার মন শুদ্ধ থাকে –অর্থাৎ তাহার উপকার ভিন্ন অপকার করণে তোমার মন যায় না এবং যদি অন্যে তোমার নিন্দা করে তাহাতেও তুমি বিরক্ত হও না –এ কি কম গুণ ?

বরদা। যে যাহাকে ভালবাসে সে তাহার সব ভালো দেখে আর যে যাহাকে দেখিতে পারে না সে তাহার চলনও বাঁকা দেখে। আপনি যাহা বলিলেন সে সকল অনুগ্রহের কথা –সে সকল আপনার ভালবাসার দরুন –আমার নিজ গুণের দরুন নহে। সকল সময়ে –সকল বিষয়ে –সকল লোকের প্রতি মন শুদ্ধ রাখা মনুষ্যের প্রায় অসাধ্য। আমাদিগের মনে রাগ, দ্বেষ, হিংসা ও অহংকারে ভরা –এ সকল সংযম কি সহজে হয় ? চিত্তকে শুদ্ধ করিতে গেলে অগ্রে নম্রতা আবশ্যক –কাহার কাহার কপট নম্রতা দেখা যায় –কেহ কেহ ভয়প্রযুক্ত নম্র হয় –কেহ কেহ ক্লেশ অথবা বিপদে পড়িলে নম্র হইয়া থাকে –সে প্রকার নম্রতা ক্ষণিক, নম্রতার স্থায়িত্বের জন্য আমাদিগের মনে এই দৃঢ় সংস্কার হওয়া উচিত যিনি সৃষ্টিকর্তা তিনিই মহৎ -তিনিই জ্ঞানময় –তিনিই নিষ্কলঙ্ক ও নির্মল, আমরা আজ আছি –কাল নাই, আমাদিগের বলই বা কি, আর বুদ্ধিই বা কি –আমাদিগের ভ্রম, কুমতি ও কুকর্ম দণ্ডে দণ্ডে হইতেছে তবে অহংকারের কারণ কি ? এরূপ নম্রতা মনে জন্মিলে রাগ, দ্বেষ, হিংসা ও অহংকারের খর্বতা হইয়া আসে, তখন অন্য সমন্ধে শুদ্ধচিত্ত হয় –তখন আপন বিদ্যা, বুদ্ধি, ঐশ্বর্য ও পদের অহংকার প্রকাশ করত পরকে বিরক্ত করিতে ইচ্ছা যায় না –তখন পরের সম্পদ দেখিয়া হিংসা হয় না –তখন পরনিন্দা করিতে ও অন্যকে মন্দ ভাবিতে ইচ্ছা হয় না –তখন অন্যদ্বারা অপকৃত হইলেও তাহার প্রতি রাগ বা দ্বেষ উপস্থিত হয় না –তখন কেবল আপন চিত্ত শোধনে ও পরহিত সাধনে মন রত হয়, কিন্তু এরূপ হওয়া ভারি অভ্যাস ভিন্ন হয় না –এক্ষণে অল্প জ্ঞানযোগ হইলেই বিজাতীয় মাৎসর্য জন্মে –আমি যা বলি –আমি যা করি কেবল তাহাই সর্বোত্তম –অন্যে যা বলে বা করে তাহা অগ্রাহ্য।

বেচারাম। ভাই হে ! কথাগুলা শুনে প্রাণ জুড়ায় –আমার সতত ইচ্ছা তোমার সহিত কথোপকথন করি।

এইরূপ কথাবার্তা হইতেছে ইতিমধ্যে প্রেমানারায়ণ মজুমদার তাড়াতারি করিয়া আসিয়া সম্বাদ দিল কলিকাতার পুলিসের লোকেরা এক জাল তহমতের মামলার দরুন ঠকচাচাকে গ্রেপ্তার করিয়া লইয়া যাইতেছে। বেচারামবাবু এই কথা শুনিয়া খুব হয়েছে খুব হয়েছে বলিয়া হর্ষিত হইয়া উঠিলেন। বরদাবাবু স্তব্ধ হইয়া ভাবিতে লাগিলেন।

বেচারাম। আবার যে ভাবছ ? –অমন অসৎ লোক পুলিপলান গেলা দেশটা জুড়ায়।
বরদা। দুঃখ এই যে লোকটা আজন্মকাল অসৎ কর্ম বই সৎ কর্ম করিল না –এক্ষণে যদি জিঞ্জির যায় তাহার পরিবারগুলা অনাহারে মারা যাবে।

বেচারাম। ভাই হে ! তোমার এত গুণ না হইলে লোকে তোমাকে কেন পূজা করে। তোমার প্রতিহিংসা ও অপকার করিতে ঠকচাচা কসুর করে নাই –অনবরত নিন্দা ও গ্লানি করিতে –তোমার উপর গুমখুনি নালিশ করিয়াছিল –ও জাল হপ্তম করিবার বিশেষ চেষ্টা পাইয়াছিল –তাহাতেও তোমার মনে তাহার প্রতি কিছুমাত্র রাগ অথবা দ্বেষ নাই ও প্রত্যুপকার কাহাকে বলে তুমি জানো না –তুমি এই প্রত্যুপকার করিতে যে, সে ব্যক্তি ও তাহার পরিবার পীড়ত হইলে ঔষধ দিয়া ও আনাগোনা করিয়া আরোগ্য করিত। এক্ষণেও তাহার পরিবারের ভাবনা ভাবিতেছ –ভাই হে ! তুমি জেতে কায়স্থ বটে কিন্তু ইচ্ছা করে যে এমন কায়স্থের পায়ের ধুলা লইয়া মাথায় দিই।

বরদা। মহাশয় ! আমাকে এত বলিবেন না –জনগণের মধ্যে আমি অতি হেয় ও অকিঞ্চন। আমি আপনার প্রশাংসার যোগ্য নহি –মহাশয় এরূপ পুনঃ পুনঃ বলিলে আমার অহংকার ক্রমে বৃদ্ধি হইতে পারে।

এদিকে বৈদ্যবাটীতে পুলিসের সারজন্‌, পেয়াদা ও দারোগা ঠকচাচাকে পিচ্‌মোড়া করিয়া বাঁধিয়া চল্‌ বলিয়া হিড় হিড় করিয়া লইয়া আসিতেছে। রাস্তায় লোকারণ্য –কেহ বলে, যেমন কর্ম তেমনি ফল –কেহ বলে, বেটা জাহাজে না উঠলে বিশ্বাস নাই –কেহ বলে, আমার এই ভয় পাছে ঢোঁড়া হয়। ঠকচাচা অধোবদনে চলিতেছে –দাড়ি বাতাসে ফুর ফুর করিয়া উড়িতেছে –দুটি চক্ষু কট্‌মট্‌ করিতেছে –বাঁধন খুলিবার জন্য সারজন্‌কে একটা আদুলি আস্তে আস্তে দিতেছে, সারজনের বড়ো পেট, এমনি আদুলি ঠিকুরে ফেলিয়া দিতেছে। ঠকচাচা বলে –মোকে একবার মতিবাবুর নজদিগে লিয়ে চলো –তেনার জামিন লিয়ে মোকে এজ খালস দেও –মুই কেল হাজির হব। সারজন্‌ বলছে –তোম বহুৎ বক্তা –ফের বাত কহেগা তো এক থাপ্পড় দেগা। তখন ঠকচাচা সারজনের নিকট হাতজোড় করিয়া কাকুতি মিনতি করিতে লাগিল। সারজন কোনো কথায় কান না দিয়ে ঠকচাচাকে নৌকায় উঠাইয়া বেলা দুই প্রহর চারি ঘণ্টার সময় পুলিসে আনিয়া হাজির করিল –পুলিসের সাহেবেরা উঠিয়া গিয়াছে সুতরাং ঠকচাচাকে রাত্রিতে বেনিগারদে বিহার করিতে হইল।

ওদিকে ঠকচাচার দুর্গতি শুনিয়া মতিলালের ভেবা-চাকা লেগে গেল। তাহার এই আশঙ্কা হইল এ বজ্রাঘাত পাছে এ পর্যন্ত পড়ে –যখন ঠক বাঁধা গেল তখন আমিও বাঁধা পড়িব তাহাতে সন্দেহ নাই –বোধ হয় এ ব্যাপার জান কোম্পানির ঘটিত, সে যাহা হউক, সাবধান হওয়া উচিত, এই স্থির করিয়া মতিলাল বাটীর সদর দরওয়াজা খুব কষে বন্ধ করিল। রামগোবিন্দ বলিল –বড়োবাবু ! ঠকচাচা জাল এত্‌তাহামে গেরেপ্তার হইয়াছে –তোমার উপর, গেরেপ্তারি থাকিলে বাটীঘর অনেকক্ষণ ঘেরা হইত, তুমি মিছে মিছে কেন ভয় পাও ? মতিলাল বলিল –তোমরা বুঝ না হে ! দুঃসময়ে পোড়া শোল মাছটাও হাত থেকে পালিয়ে যায়। আজকের দিনটা যো সো করিয়া কাটাইতে পারিলে কাল প্রাতে যশোহরের তালুকে প্রস্থান করি। বাটীতে আর তিষ্ঠনো ভার –নানা উৎপাত –নানা ব্যাঘাত –নানা আশঙ্কা –নানা উপদ্রব, আর এদিকে হাত খাঁকতি হইয়াছে। এই কথা শেষ হইবামাত্রেই দ্বারে টিপ্‌ টিপ্‌ করিয়া ঘা পড়িতে লাগিল –”দ্বার খোলো গো –কে আছে গো” এই শব্দ হইতে লাগিল। মতিলাল আস্তে আস্তে বলিল –চুপ করো –যাহা ভাবিয়াছিলাম তাহাই ঘটিল। মানগোবিন্দ উপর থেকে উঁকি মারিয়া দেখিল একজন পেয়াদা দ্বার ঠেলিতেছে –অমনি টিপেটিপে আসিয়া বলিল –বড়োবাবু ! এই বেলা প্রস্থান করো, বোধ হয় ঠকচাচা দরুন বাসী গেরেপ্তারি উপস্থিত –আগুনের ফিনকি শেষ হয় নাই। যদি নির্জন স্থান না পাও তবে খিড়কির পানা পুষ্করিণীতে দুর্যোধনের ন্যায় জলস্তম্ভ করে থাকো। দোলগোবিন্দ বলিল –তোমরা ঢেউ দেখে লা ডুবাও কেন ? আগে বিষয়টা তলিয়ে বুঝ, বোসো আমি জিজ্ঞাসা করি –কেমন হে পেয়াদাবাবু তুমি কোন্‌ আদালত হইতে আসিয়াছ ? পেয়াদা বলিল –এজ্ঞে মুই জান সাহেবের চিঠি লিয়ে এসেছি –চিঠি এই লেও –বলিয়া ধাঁ করিয়া উপরে ফেলিয়া দিল। রাম বাঁচলুম ! এতক্ষণে ধরে প্রাণ এল –সকলে বলিয়া উঠিল। অমনি পেছন দিক থেকে হলধর ও গদাধর “ভবে ত্রাণ করো” ধরিয়া উঠিল, নববাবুদের শরতের মেঘের ন্যায় –এই বৃষ্টি –এই রৌদ্র –এই গর্মি –এই খুশি। মতিলাল বলিল, একটু থামো –চিঠিখানা পড়িতে দেও –বোধ করি কর্মকাজের আবার সুযোগ হইবে। মতিলাল চিঠি খুলিলে পরে নববাবুরা সকলে হুমড়ি খাইয়া পড়িল –অনেকগুলো মাথা জড়ো হইল বটে কিন্তু কাহারো পেটে কালির অক্ষর নাই, চিঠি পড়া ভারি বিপত্তি হইল। অনেকক্ষণ পরে নিকটস্থ দে-দের বাটীর একজনকে ডাকাইয়া চিঠির মর্ম এই জানা হইল যে, জান সাহেবের প্রায় অনাহারে দিন যাইতেছে –তাহার টাকার বড়ো দরকার। মানগোবিন্দ বলিল –বেটা বড়ো বেহায়া –তাহার জন্যে এত টাকা গর্ভস্রাবে গেল তবু ছিড়েন নাই, আবার কোন মুখে টাকা চায় ? দোলগোবিন্দ বলিল –ইংরাজকে হাতে রাখা ভালো –ওদের পাতা চাপা কপাল –সময় বিশেষে মাটি মুটটা ধরিলে সোনা মুটটা হইয়া পড়ে। মতিলাল বলিল –তোমরা বকাবকি কেন করো আমাকে কাটিলেও রক্ত নাই –কুটিলেও মাংস নাই।

এখানে বালি হইতে বেচারামবাবু পার হইয়া বৈকালে ছক্‌ড়া গাড়িতে ছড়র ছড়র শব্দে “সেই যে ভস্মমাখা জটে –যত দেখো ঘটে পটে সকল জটের মুটে” এই গান গাইতে গাইতে উত্তরমুখো চলিয়াছেন –দক্ষিণ দিক থেকে বাঞ্ছারাম বগি হাঁকাইয়া আসিতেছেন –দুইজনে নেক্‌টা-নেক্‌টি হওয়াতে ইনি ওঁকে ও উনি একে হুমড়ি খাইয়া দেখিলেন –বাঞ্ছারাম বেচারামের আবছায়া দেখিবা মাত্রেই ঘোড়াকে সপাসপ্‌ চাবুক কষিয়া দিলেন –বেচারাম অমনি তাড়াতাড়ি আপন গাড়ির ডল্‌কা দ্বার হাত দিয়া কষে ধরিয়া ও মাথা বাহির করিয়া “ওহে বাঞ্ছারাম ! ওহে বাঞ্ছারাম !” বলিয়া চিৎকার করিতে লাগিলেন। এই ডাকাডাকি, হাঁকাহাঁকিতে বগি খাড়া হইল ও ছক্‌ড়া ছননন্‌ ছননন্‌ করিয়া নিকটে গেল। বেচারামবাবু বলিলেন –বাঞ্ছারাম ! কপালে পুরুষ –তোমার লাভের খুলি রাবণের চুলির মতো জ্বলছে –এক দফা তো সৌদাগরি কর্ম চৌচাপটে করলে –এক্ষণে তোমার ঠকচাচা যায় –বোধ হয় তাহাতেও আবার একটা মুড়ি পট্‌তে পারে –কেবল উকিলি ফন্দিতে অধঃপাতে গেলে –মরিতে যে হবে –সেটা একবারও ভাবলে না ?

বাঞ্ছারাম বিরক্ত হইয়া মুখখানা গোঁজ করিলে পর গোঁপ জোড়াটা ফর ফর করিয়া ঘোড়ার পিটের উপর আপনার গায়ের জ্বালা প্রকাশ করিতে করিতে গড়্‌ গড়্‌ করিয়া চলিয়া গেলেন।

1 Comment
Collapse Comments

প্রিয় গান

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *