২৩. মতিলাল দলবল সমেত সোনাগাজিতে আসিয়া একজন গুরুমহাশয়কে তাড়ান, বাবুয়ানা বাড়াবাড়ি হয়, পরে সৌদাগরি করিয়া দেনার ভয়ে প্রস্থান করেন।

সোনাগাজির দরগায় কুনী বুনী বাসা করিয়াছিল —চারি দিক্‌ শেওলা ও বোনাজে পরিপূর্ণ —স্থানে স্থানে কাকের ও শালিকের বাসা –বাড়িতে আবার আনিয়া দিতেছে –পিলে চিঁ চিঁ করিতেছে –কোনোখানেই এক ফোঁটা চুন পড়ে নাই –রাত্রি হইলে কেবল শেয়াল-কুকুরের ডাক শোনা যাইত ও সকল স্থানে সন্ধ্যা দিত কি-না তাহা সন্দেহ। নিকটে একজন গুরুমহাশয় কতকগুলি ফরগল গলায় বাঁধা ছেলে লইয়া পড়াইতেন –ছেলেদিগের লেখাপড়া যত হউক বা না হউক, বেতের শব্দে ত্রাসে তাহাদিগের প্রাণ উড়িয়া যাইত –যদি কোনো ছেলে একবার ঘাড় তুলিত অথবা কোঁচড় থেকে এক গাল জলপান খাইত তবে তৎক্ষণাৎ তাহার পিঠে চট্‌ চট্‌ চাপড় পড়িত। মানব-স্বভাব এই যে কোনো বিষয়ে কর্তৃত্ব থাকিলে যে কর্তৃত্বটি নানারূপে প্রকাশ চাই তাহা না হইলে আপন গৌরবের লাঘব হয় –এই জন্য গুরুমহাশয় আপন প্রভুত্ব ব্যক্ত করণার্থ রাস্তার লোক জড়ো করিতেন ও লোক জড়ো হইলে তাঁহার সরদারি অশেষ বিশেষ রকমে বৃদ্ধি হইত, এ কারণ বালকদিগের যে লঘু পাপে গুরু দণ্ড হইত তাহার আশ্চার্য কি ? গুরুমহাশয়ের পাঠশালাটি প্রায় যমালয়ের ন্যায় –সর্বদাই চটাপট্‌, পটাপট্‌, গেলুম রে, মলুম রে, ও ‘গুরুমহাশয়, গুরুমহাশয় তোমার পড়ো হাজির’ এই শব্দই হইত আর কাহার নাকখত –কাহার কানমলা –কেহ ইটেখাড়া –কাহার হাতছড়ি –কাহাকেও কপিকলে লট্‌কানো –কাহার জলবিচাটি, একটা না একটা প্রকার দণ্ড অনবরতই হইত। সোনাগাজির গুমর কেবল গুরুমহাশয়ের দ্বারাই রাখা হইয়াছিল। কিঞ্চিৎ প্রান্তভাগে দুই-একজন বাউল থাকিত —তাহারা সমস্ত দিন ভিক্ষা করিত। সন্ধ্যার পর পরিশ্রমে অক্লান্ত হইয়া শুয়ে শুয়ে মৃদুস্বরে গান করিত। সোনাগাজির এইরূপ অবস্থা ছিল। মতিলালের শুভাগমনাবধি সোনাগাজির কপাল ফিরিয়া গেল। একেবারে ‘ঘোড়ার চিঁ হিঁ, তবলার চাঁটি, লুচি পুরির খচাখচ’, উল্লাসের কড়াংধুম রাতদিন হইতে লাগিল আর মণ্ডা-মিঠাই, গোলাপ ফুলের আতর ও চরস, গাঁজা, মদের ছড়াছড়ি দেখিয়া অনেকেই গড়াগড়ি দিতে আরম্ভ করিল। কলিকাতার লোক চেনা ভার —অনেকেই বর্ণচোরা আঁব। তাহাদিগের প্রথম এক রকম মূর্তি দেখা যায় পরে আর এক মুর্তি প্রকাশ হয়। ইহার মূল টাকা –টাকার খাতিরেই অনেক ফেরফার হয়। মনুষ্যের দুর্বল স্বভাব হেতুই ধনকে অসাধারণরূপে পূজা করে। যদি লোকে শুনে যে অমুকের এত টাকা আছে তবে কি প্রকারে তাহার অনুগ্রহের পাত্র হইবে এই চেষ্টা কায়মনোবাক্যে করে ও তজ্জন্য যাহা বলিতে বা করিতে হয় তাহাতে কিছুমাত্র ক্রটি করে না। এই কারণে মতিলালের নিকট নানা রকম লোক আসিতে আরম্ভ করিল। কেহ কেহ উলার ব্রাহ্মণের ন্যায় মুখপোড়া রকমে আপনার অভিপ্রায় একেবারে ব্যক্ত করে –কেহ-বা কৃষ্ণনগরীয়দিগের ন্যায় ঝাড় বুটা কাটিয়া মুন্‌শিয়ানা খরচ করে –আসল কথা অনেক বিলম্বে অতি সূক্ষ্ণরূপে প্রকাশ হয় –কেহ বা পূর্বদেশীয় বঙ্গভায়াদিগের মতো কেনিয়ে কেনিয়ে চলেন –প্রথম প্রথম আপনাকে নিষ্প্রয়াস ও নির্লোভ দেখান –আসল মতলব তৎকালে দ্বৈপায়নহ্রদে ডুবাইয়া রাখেন –দীর্ঘকালে সময়বিশেষে প্রকাশ হইলে বোধ হয় তাহার গমনাগমনের তাৎপর্য কেবল “যৎকিঞ্চিৎ কাঞ্চনমূল্য”।

মতিলালের নিকট যে ব্যক্তি আইসে সেই হাই তুলিলে তুড়ি দেয় –হাঁচিলে “জীব” বলে। ওরে বলিলেই “ওরে ওরে” করে চীৎকার করে ও ভালোমন্দ সকল কথারই উত্তরে –”আজ্ঞা আপনি যা বলেছেন তাই বটে” এই প্রকার বলে। প্রাতঃকালাবধি রাত্রি দুই প্রহর পর্যন্ত মতিলালের নিকট লোক গস্‌গস্‌ করিতে লাগিল –ক্ষণ নাই –মুহুর্ত নাই –নিমেষ নাই –সর্বদাই নানা প্রকার লোক আসিতেছে –বসিতেছে –যাইতেছে। তাহাদিগের জুতার ফটাং ফটাং শব্দে বৈঠকখানায় সিঁড়ি কম্পমান –তামাক মুহুর্মুহুঃ আসিতেছে –ধুঁয়া কলের জাহাজের ন্যায় নির্গত হইতেছে। চাকরেরা আর তামাক সাজিতে পারে না –পালাই পালাই ডাক ছাড়িতেছে। দিবারাত্রি নৃত্য, গীত, বাদ্য, হাসিখুশি, বড়ফট্টাই, ভাঁড়ামো, নকল, ঠাট্টা, বটকেরা, ভাবের গালাগালি, আমাদের ঠেলাঠেলি –চড়ুইভাতি, বনভোজন, নেশা একাদিক্রমে চলিতেছে। যেন রাতারাতি মতিলাল হঠাৎ বাবু হইয়া উঠিয়াছেন।
এই গোলে গুরুমহাশয়ের গুরুত্ব একেবারে লঘু হইয়া গেল –তিনি পূর্বে বৃহৎ পক্ষী ছিলেন এক্ষণে দুর্গা-টুনটুনি হইয়া পড়িলেন। মধ্যে মধ্যে ছেলেদের ঘোষাইবার একটু একটু গোল হইত –তাহা শুনিয়া মতিলাল বলিলেন, এ বেটা এখানে কেন মেও মেও করে –গুরুমশায়ের যন্ত্রণা হইতে আমি বালকাকালেই মুক্ত হইয়াছি আবার গুরুমহাশয় নিকটে কেন? –ওটাকে ‘রায় বিসর্জন দাও। এই কথা শুনিবামাত্র নববাবুরা দুই-এক দিনের মধ্যেই ইট পাটকেলের দ্বারা গুরুমহশয়কে অন্তর্ধান করাইলেন সুতরাং পাঠশালা ভাঙ্গিয়া গেল। বালকেরা বাঁচলুম বলিয়া তাড়ি পাত তুলিয়া গুরুমহশয়কে ভেংচুতে ভেংচুতে ও কলা দেখাইতে দেখাইতে চোঁচা দৌড়ে ঘরে গেল।

এদিকে জান সাহেব হৌস খুলিলেন –নাম হৈল জান কোম্পানি। মতিলাল মুৎসুদ্দি, বাঞ্ছারাম ও ঠকচাচা কর্মকর্তা। সাহেব টাকার খাতিরে মুৎসুদ্দিকে তোয়াজ করেন ও মুৎসুদ্দি আপন সঙ্গীদিগকে লইয়া দুই প্রহর তিনটা চারিটার সময় পান চিবুতে চিবুতে রাঙা চকে এক একবার কুঠি যাইয়া দাঁদুড়ে বেড়াইয়া ঘরে আইসেন। সাহেবের এক পয়সার সঙ্গতি ছিল না –বটলর সাহেবের অন্নদাস হইয়া থাকিতেন এক্ষণে চৌরুঙ্গিতে এক বাটী ভাড়া করিয়া নানা প্রকার আসবাব ও তসবির খরিদ করিয়া বাটী সাজাইলেন ও ভালো ভালো গাড়ি, ঘোড়া ও কুকুর ধারে কিনিয়া আনিলেন এবং ঘোড়দৌড়ের ঘোড়া তৈয়ার করিয়া বাজির খেলা খেলিতে লাগিলেন। কিছু দিন পরে সাহেবের বিবাহ হইল, সোনার ওয়াচগার্ড পরিয়া ও হীরার আঙ্গুটি হাতে দিয়া সাহেব ভদ্র সমাজে ফিরিতে লাগিলেন। এই সকল ভড়ং দেখিয়া অনেকেরই সংস্কার হইল জান সাহেব ধনী হইয়াছেন, এই জন্য তাঁহার সহিত লেনদেন করণে অনেকে কিছুমাত্র সন্দেহ করিল না কিন্তু দুই-একজন বুদ্ধিমান লোক তাঁহার নিগূঢ় তত্ত্ব জানিয়া আল্‌গা আল্‌গা রকমে থাকিতে –কখনই মাখামাখি করিতে না।

কলিকাতার অনেক সৌদাগর আড়তদারিতেই অর্থ উপার্জন করে –হয়তো জাহাজের ভাড়া বিলি করে অথবা কোম্পানির কাগজ কিংবা জিনিসপত্র খরিদ বা বিক্রয় করে ও তাহার উপর ফি শতকরায় কতক টাকা আড়তদারি খরচা লয়। অন্যান্য অনেকে আপন আপন টাকায় এখানকার ও অন্য স্থানের বাজার বুঝিয়া সৌদাগরি করে কিন্তু যাহারা ঐ কর্ম করে তাহাদিগকে অগ্রে সৌদাগরি কর্ম শিখিতে হয় তা না হইলে কর্ম ভালো হইতে পারে না।

জান সাহেবের কিছুমাত্র বোধশোধ ছিল না, জিনিস খরিদ করিয়া পাঠাইলেই মুনাফা হইবে এই তাঁহার সংস্কার ছিল, ফলতঃ আসল মতলব এই পরের স্কন্ধে ভোগ করিয়া রাতারাতি বড়মানুষ হইব। তিনি এই ভাবিতেন যে সৌদাগরি সেস্ত করিয়া – দশটা গুলী মারিতে মারিতে কোনোটা না কোনোটা গুলীতে অবশ্যই শিকার পাওয়া যাইবে। যেমন সাহেব ততোধিক তাহার মুৎসুদ্দি – তিনি গণ্ডমূর্খ – না তাঁহার লেখাপড়াই বোধশোধ আছে –না বিষয়কর্মই বুঝিতে-শুঝিতে পারেন সুতরাং তাহাকে দিয়া কোনো কর্ম করানো কেবল গো-বধ করা মাত্র। মহাজন, দালাল ও সরকারেরা সর্বদাই তাঁহার নিকট জিনিসপত্রের নমুনা লইয়া আসিত ও দর-দামের ঘাটতি-বাড়তি এবং বাজারের খবর বলিত। তিনি বিষয়কর্মের কথার সময়ে ঘোর বিপদে পড়িয়া ফেল্‌ ফেল্‌ করিয়া চাহিয়া থাকিতেন – সকল প্রশ্নের উত্তর দিতেন না – কি জানি কথা কহিলে পাছে নিজের বিদ্যা প্রকাশ হয়, কেবল এইমাত্র বলিতেন যে, বাঞ্ছারাম বাবু ও ঠকচাচার নিকট যাও।

আপিসে দুই-একজন কেরানী ছিল, তাহারা ইংরেজীতে সকল হিসাব রাখিত। একদিন মতিলালের ইচ্ছা হইল যে ইংরাজী ক্যাশবহি বোঝা ভালো, এজন্য কেরানীর নিকট হইতে চাহিয়া আনাইয়া একবার এদিক-ওদিক দেখিয়া বহিখানি এক পাশে রাখিয়া দিলেন। মতিলাল আপীসের নীচের ঘরে বসিতেন – ঘরটি কিছু সেতঁসেতেঁ – ক্যাশবহি সেখানে মাসাবধি থাকাতে সর্দিতে খারাব হইয়া গেল ও নববাবুরা তাহা হইতে কাগজ চিরিয়া লইয়া সলতের ন্যায় পাকাইয়া প্রতিদিন কান চুলকাইতে আরম্ভ করিলেন – অল্প দিনের মধ্যেই বহির যাবতীয় কাগজ ফুরাইয়া গেল কেবল মিলাটটি পড়িয়া রহিল। অনন্তর ক্যাশবহির অন্বেষণ হওয়াতে দৃষ্ট হইল যে, তাহার ঠাটখানা আছে, অস্থি ও চর্ম পরহিতার্থে প্রদত্ত হইয়াছে। জান সাহেব হা ক্যাশবহি জো ক্যাশবহি বলিয়া বিলাপ করত মনের খেদ মনেই রাখিলেন।

জান সাহেব বেধড়ক ও দুচকোব্রত জিনিসপত্র খরিদ করিয়া বিলাতে ও অন্যান্য দেশে পাঠাইতে আরম্ভ করিলেন –জিনিসের কি পরতা হইল ও কাটতি কি রূপ হইবে তাহার কিছুমাত্র খোঁজ-খবর করিতেন না। এই সুযোগ পাইয়া বাঞ্ছারাম ও ঠকচাচা চিলের ন্যায় ছোবল মারিতে লাগিলেন, তাহাতে তাহাদিগের পেট মোটা হইল –অল্পে তৃষ্ণা মেটে না –রাতদিন খাই-খাই শব্দ ও আজ হাতীশালার হাতী খাব, কাল ঘোড়াশালার ঘোড়া খাব, দুইজনে নির্জনে বসিয়া কেবল এই মতলব করিতেন। তাঁহারা ভালো জানিতেন যে তাঁহাদিগের এমন দিন আর হইবে না –লাভের বসন্ত অস্ত হইয়া অলাভের হেমন্ত শীঘ্রই উদয় হইবে অতএব নে থোরই সময় এই।

দুই-এক বৎসরের মধ্যেই জিনিসপত্রের বিক্রির বড়ো মন্দ খবর আইল –সকল জিনিসেতেই লোকসান বই লাভ নাই। জান সাহেব দেখিলেন যে লোকসান প্রায় লক্ষ টাকা হইবে –এই সংবাদে বুকদাবা পাইয়া তাঁহার একেবারে চক্ষুস্থির হইয়া গেল আর তিনি মাসে মাসে প্রায় এক হাজার টাকা করিয়া খরচ করিয়াছেন, তদ্ব্যতিরেকে বেঙ্কে ও মহাজনের নিকটও অনেক দেনা –আপিস কয়েক মাসাবধি তলগড় ও ঢালসুমরে চলিতেছিল এক্ষণে বাহিরে সম্ভ্রমের নৌকা একেবারে ধুপুস্‌ করিয়া ডুবে গেল, প্রচার হইল যে জান কোম্পানী ফেল হইল। সাহেব বিবি লইয়া চন্দননগরে প্রস্তান করিলেন। ঐ শহর ফরাসীদিগের অধীন –অদ্যাবধি দেনাদার ফৌজদারি মামলার আসামীরা কয়েদের ভয়ে ঐ স্থানে যাইয়া পলাইয়া থাকে।

এদিকে মহাজন ও অন্যান্য পাওনাওয়ালারা আসিয়া মতিলালকে ঘেরিয়া বসিল। মতিলাল চারিদিক শূন্য দেখিতে লাগিলেন –এক পয়সাও হাতে নাই –উট্‌নাওয়ালাদিগের নিকট হইতে উট্‌না লইয়া তাঁহার খাওয়া-দাওয়া চলিতেছিল এক্ষণে কি বলবেন ও কি করিবেন কিছুই ঠাওরাইয়া পান না, মধ্যে মধ্যে ঘাড় উঁচু করিয়া দেখেন বাঞ্ছারামবাবু ও ঠকচাচা আইলেন কি-না, কিন্তু দাদার ভরসায় বাঁইয়ে ছুরি, ঐ দুই অবতার তুলতামালের অগ্রেই চম্পট দিয়াছেন। তাহাদিগের নাম উল্লেখ হইলে পাওনাওয়ালারা বলিল যে চিঠিপত্র মতিবাবুর নামে, তাহাদিগের সহিত আমাদিগের কোনো এলেকা নাই, তাহারা কেবল কারপরদাজ বই তো নয়।

এইরূপ গোলযোগ হওয়াতে মতিলাল দলবল সহিত ছদ্মবেশে রাত্রিযোগে বৈদ্যবাটীতে পালাইয়া গেলেন। সেখানকার যাবতীয় লোক তাঁহার বিষয়কর্মের সাত কাণ্ড শুনিয়া খুব হয়েছে খুব হয়েছে বলিয়া হাততালি দিতে লাগিল ও বলিল –আজও রাতদিন হচ্ছে –যে ব্যক্তি এমতো অসৎ –যে আপনার মাকে ভাইকে ভগিনীকে বঞ্চনা করিয়াছে –পাপকর্মে কখনই বিরত হয় নাই, তাহার যদি এরূপ না হবে তবে আর ধর্মাধর্ম কি ?

কর্মক্রমে প্রেমনারায়ণ মজুমদার পরদিন বৈদ্যবাটীর ঘাটে স্নান করিতেছিল –তর্কসিদ্ধান্তকে দেখিয়া বলিল –মহাশয় শুনেছেন –বিট্‌কেলরা সর্বস্ব খুয়াইয়া ওয়ারিণের ভয়ে আবার এখানে পালিয়ে আসিয়াছে –কালামুখ দেখাইতে লজ্জা হয় না ! বাবুরাম ভালো মুষলং কুলনাশনং রাখিয়া গিয়াছেন। তর্কসিদ্ধান্ত কহিলেন –ছোড়াদের না থাকতে গ্রামটা জুড়িয়ে ছিল –আবার ফিরে এল? আহা ! মা গঙ্গা একটু কৃপা করলে যে আমরা বেঁচে যাইতাম। অন্যান্য অনেক ব্রাহ্মণ স্নান করিতেছিলেন –নববাবুদিগের প্রত্যাগমনের সংবাদ শুনিয়া তাঁহাদিগের দাঁতে দাঁতে লেগে গেল, ভাবিতে লাগিলেন যে আমাদিগের স্নান-আহ্ণিক বুঝি অদ্যাবধি শ্রীকৃষ্ণায় অর্পণ করিতে হইবে। দোকানী পসারীরা ঘাটের দিকে দেখিয়া বলিল –কই গো। আমরা শুনিয়াছিলাম যে মতিবাবু সাত সুলুক ধন লইয়া দামামা বাজিয়ে উঠিবেন –এমন সুলুক দূরে যাউক একখানা জেলে ডিঙিও যে দেখতে পাই না। প্রেমনারায়ণ বলিল –তোমরা ব্যস্ত হইও না –মতিবাবু কমলে কামিনীর মুশকিলের দরুন দক্ষিণ মশান প্রাপ্ত হইয়াছেন –বাবু অতি ধর্মশীল –ভগবতীর বরপুত্র –ডিঙে সুলুক ও জাহাজ ত্বরায় দেখা দিবে আর তোমরা মুড়ি কড়াই ভাজিতে ভাজিতেই দামামার শব্দ শুনিবে !

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *