তারাবাঈ ১৯ পরিচ্ছেদ

আজ বৈশাখী শুল্কপরে চর্তুদর্শী। অমল ধবল শশীর মনোহর কৌমুদী জালে গগনমন্ডল ও ভূতল কি সুন্দর ও শোভন দৃশ্য ধারণ করিয়াছে! রায়গড়ে শিবাজীর বাটী আজ বিশেষরূপে ধ্বজপতাকা এবং আলোকমালায় সুসজ্জিত! বিরাট সভামন্ডপে অসংখ্য আলোকের সমাবেশ! রাজবাড়ীর ফটকে ফটকে নহবতে নহবতে মধুর সুরে শাহানা বাজিতেছে! সৈনিকেরা উৎকৃষ্ট বেশভূষায় সজ্জিত হইয়া নিতান্ত জাঁকজমকের সহিত রাস্তার দুই পার্শ্বে শ্রেণীবদ্ধভাবে দন্ডায়মান রহিয়াছে। বহুসংখ্যক নারী বিচিত্র পরিচ্ছেদ পরিধান করিয়া ইতস্ততঃ পরিভ্রমণ করিতেছে। ফলতঃ শিবাজীর রাজপুরী আজ উজ্জ্বলিত নাট্যশালার ন্যায় মনোহারিণী শোভা ধারণ করিয়াছে।

একটু রাত্রি হইতেই “বর আসিতেছে, বর আসিতেছে” বলিয়া সর্বত্রই একটা ধুম পড়িয়া গেল। সুর্বণখচিত মনোহর পরিচ্ছদ পরিহিত দুইশত অশ্বারোহী রৌপ্য-নির্মিত বর্শাফলকে রক্তবর্ণ রেশমী পতাকা বিধুনন করিয়া সকলের অগ্রে নমুদার হইল। অতঃপর পঞ্চাশটি হস্তী স্বর্ণাস্তরণে আস্তৃত এবং স্বর্ণমুকুট পরিহিতাবস্থায় অগ্রসর হইল। অতঃপর নানা শ্রেণীর তুরী, ভেরী, বাঁশী, স্বরুদ, রুদ, কুপচাপ, সেতার, সারেঙ্গী, বীণ, রবান, বেহালা প্রভৃতি কোমল সুরের বাদ্যের ঐক্যতান বাজাইতে বাজাইতে বাদ্যকরণ অগ্রসর হইল।

তৎপর খাসগেলাফ, আসাসোটা, অসংখ্য প্রকার ফুলের ঝাড় সহ বাহকগণ অগ্রসর হইল। তৎপর সুবর্ণ তাঞ্জামে চড়িয়া বীরকুঞ্জর, রূপসাগর, বর নাগর আফজাল খাঁ আগমন করিলেন। তাঁহার পশ্চাতে বিজাপুরের কতিপয় অমাত্য সর্দার ও সামস্ত উৎকৃষ্ট অশ্বারোহণে নিতান্ত জাকজমকের সহিত আগমন করিলেন। অতঃপর সোলতানী “তবলখানা,” নানাজাতীয় বিগল, কর্ণাল, ভেরী, দফ, তবল, নাকারা প্রভৃতি নানা প্রকার বাদ্যে শুরু-গম্ভীরভাবে উৎসবের বাজনা বাজাইতে বাজাইতে অগ্রসর হইল।

তৎপর সাধারণ সৈনিক, অন্যান্য লোক এবং রাস্তার জনতা অগ্রসর হইল। ক্রমশঃ বরযাত্রীদল শিবাজীর দীর্ঘ প্রাসাদের সম্মুখে যাইয়া দন্ডায়মান হইলেন। শিবাজী এবং তাঁহার পিতা শাহজী, মালোজী, গুরু রামদাস স্বামী, বলবন্তরাও এবং অন্যান্য কর্মচারীগণ পরম যত্নে সকলকে আদর অভ্যর্থনা এবং সাদর সম্ভাষণে প্রীত এবং সন্তুষ্ট করিয়া যথাযোগ্য আহার ও আবাসস্থান প্রদান করিলেন।

আফজাল খাঁ আনীত নানাপ্রকারের উৎকৃষ্ট মিষ্টান্ন, মোরব্বা, হালুয়া এবং ফলমূল সমস্ত প্রকান্ড প্রকান্ড চুপড়িতে করিয়া অন্তঃপুরে নীত হইল।

আফজাল খাঁ এবং তাঁহার সঙ্গীয় কতিপয় বিশিষ্ট লোককে প্রাচীর বেষ্টিত একটি উদ্যানবাটিকার মধ্যস্থ সুন্দর গৃহে স্থান দেওয়া হইয়াছিল। শিবাজী সেইখানে আসিয়া আফজাল খাঁ এবং অমাত্যবর্গকে বিশেষভাবে অভ্যর্থনা এবং সম্বর্ধনা করিলেন। শিবাজীর বিনয়নম্র ব্যবহার, মধুর সাদর সম্ভাষণ ও সশ্রদ্ধ যত্নে সকলেই পরশ পরিতোষ লাভ করিলেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *