• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • লেখক
  • My Account
  • লেখক
  • My Account
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা PDF ডাউনলোড

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

১৩. বরদাপ্রসাদবাবুর উপদেশ দেওন –তাঁহার বিজ্ঞতা ও ধর্মনিষ্ঠা এবং সুশিক্ষার প্রণালী। তাঁহার নিকট রামলালের উপদেশ, তজ্জন্য তাঁহার পিতার ভাবনা ও ঠকচাচার সহিত পরামর্শ। রামলালের গুণ বিষয়ে মনান্তর ও তাঁহার বড়ো ভগিনীর পীড়া ও বিয়োগ।

লাইব্রেরি » টেকচাঁদ ঠাকুর (প্যারীচাঁদ মিত্র) » আলালের ঘরের দুলাল » ১৩. বরদাপ্রসাদবাবুর উপদেশ দেওন –তাঁহার বিজ্ঞতা ও ধর্মনিষ্ঠা এবং সুশিক্ষার প্রণালী। তাঁহার নিকট রামলালের উপদেশ, তজ্জন্য তাঁহার পিতার ভাবনা ও ঠকচাচার সহিত পরামর্শ। রামলালের গুণ বিষয়ে মনান্তর ও তাঁহার বড়ো ভগিনীর পীড়া ও বিয়োগ।

বরদাপ্রসাদবাবুর বিদ্যাশিক্ষা বিষয় বিজাতীয় বিচক্ষণতা ছিল। তিনি মানব স্বভাব ভালো জানিতেন। মনের কি কি শক্তি কি কি ভাব এবং কি কি প্রকারে ঐ সকল শক্তি ও ভাবের চালনা হইলে মনুষ্য বুদ্ধিমান ও ধার্মিক হইতে পারে তদ্বিষয়ে তাঁহার বিশেষ বিজ্ঞতা ছিল। শিক্ষকের কর্মটি বড়ো সহজ নহে। অনেকে যৎকিঞ্চিৎ ফুলতোলা রকম শিখিয়া অন্য কর্ম-কাজ না জুটিলে শিক্ষক হইয়া বলেন –এমতো সকল লোকের দ্বারা ভালো শিক্ষা হইতে পারে না। প্রকৃত শিক্ষক হইতে গেলে মনের গতি ও ভাব সকলকে ভালো রূপে জানিতে হয় এবং কি প্রকারে শিক্ষা দিলে কর্মে আসিতে পারে তাহা সুস্থির হইয়া দেখিতে হয় ও শুনিতে হয় ও শিখিতে হয়। এ সকল না করিয়া তাড়াহুড়া রকমে শিক্ষা দিলে কেবল পাথরে কোপ মারা হয় –একশত বার কোদাল পড়িলেও এক মুঠা মাটি কাটা হয় না, বরদাপ্রসাদ বাবু বহুদর্শী ছিলেন –অনেক কালাবধি শিক্ষার বিষয়ে মনোযোগী থাকাতে শিক্ষা দেওয়ার প্রণালী ভালো জানিতেন, তিনি যে প্রকারে শিক্ষা করাইতেন তাহাতে সার শিক্ষা হইত। এক্ষণে সরকারী বিদ্যালয়ে যে প্রকার শিক্ষা হয় তাহাতে শিক্ষার আসল অভিপ্রায় সিদ্ধ হয় না, কারণ মনের শক্তি ও মনের ভাবাদির সুন্দর রূপ চালনা হয় না, ছাত্রেরা কেবল মুখস্থ করিতে শিখে। তাতে কেবল স্মরণশক্তি জাগরিত –বিবেচনাশক্তি প্রায় নিদ্রিত থাকে, মনের ভাবাদির চলনার তো কথাই নাই। শিক্ষার প্রধান তাৎপর্য এই যে ছাত্রদিগের বয়ঃক্রম অনুসারে মনের শক্তি ও ভাব সকল সমানরূপে চালিত হইবেক। এক শক্তির অধিক চালনা ও অন্য শক্তির অল্প চালনা করা কর্তব্য হয় না। যেমন শরীরের সকল অঙ্গকে মজবুত করিলে শরীরটি নিরেট হয় তেমনি মনের সকল শক্তিকে সমানরূপে চালনা করিলে আসল বুদ্ধি হয়। মনে সদ্ভাবাদিরও চালনা সমানরূপে করা আবশ্যক। একটি সদ্ভাবের চালনা করিলেই সকল সদ্ভাবের চালনা হয় না। সত্যের প্রতি শ্রদ্ধা জন্মিলেও দয়ার লেশ না থাকিতে পারে –দয়ার ভাগ অধিক থাকিয়া দেনা-পাওনা বিষয়ে কাণ্ডজ্ঞান না থাকা অসম্ভব নহে –দেনা-পাওনা বিষয়ে খাড়া থাকিয়াও পিতা-মাতা স্ত্রী-পুত্রের উপর অযত্ন ও নিস্নেহ হইবার সম্ভাবনা –পিতা-মাতা-স্ত্রী-পুত্রের প্রতি স্নেহ থাকিতে পারে অথচ সরলতা কিছু মাত্র না থাকা অসম্ভব নহে। ফলেও বরদাপ্রসাদ বাবু ভালো জানিতেন যে মনের ভাবাদির চালনার মূল পরমেশ্বরের প্রতি ভক্তি –ঐ ভক্তির যেমন বৃদ্ধি হইবে তেমনি মনের সকল ভাবের চালনা হইতে থাকিবে, তাহা না হইলে ঐ কর্মটি জলের উপরে আঁক কাটার প্রায় হইয়া পড়ে।

রামলাল ভাগ্যক্রমে বরদাবাবুর শিষ্য হইয়াছিল। রামলালের মনের সকল শক্তি ও ভাবের চালনা সুন্দররূপে হইতে লাগিল। মনের ভাবের চালনা সৎ লোকের সহবাসে যেমন হয়, তেমন শিক্ষা দ্বারা হয় না। যেমন কলমের দ্বারা জাম গাছের ডাল আঁব গাছের ডাল হয়, তেমন সহবাসের দ্বারা এক রকম মন অন্য আর এক রকম হইয়া পড়ে। সৎমনের এমন মহাত্ম্য যে –তাহার ছায়া অধম মনের উপর পড়িলে, অধম রূপ ক্রমে ক্রমে সেই ছায়ার স্বরূপ হইয়া বসে।

বরদাবাবুর সহবাসে রামলালের মনের ঢাঁচা প্রায় তাহার মনের মতো হইয়া উঠিল। রামলাল প্রাতঃকালে উঠিয়া শরীরকে বলিষ্ঠ করিবার জন্য ফর্দা জায়গায় ভ্রমণ ও বায়ু সেবন করেন –তাঁর দৃঢ় সংস্কার হইল যে, শরীরে জোর না হইলে মনের জোর হয় না। তাহার পরে বাটীতে আসিয়া উপাসনা ও আত্মবিচার করেন এবং যে সকল বহি পড়িলে ও যে-যে লোকের সহিত আলাপ করিলে বুদ্ধি ও মনের সদ্ভাব বৃদ্ধি হয় কেবল সেই সকল বহি পড়েন ও সেই সকল লোকের সাহিত আলাপ করেন। সৎ লোকের নাম শুনিলেই তাঁহার নিকট গমনাগমন করেন –তাঁহার জাতি অথবা অবস্থার বিষয় কিছুমাত্র অনুসন্ধান করেন না। রামলালের বোধশোধ এমতো পরিষ্কার হইল যে, যাহার সঙ্গে আলাপ করেন তাহার সহিত কেবল কেজো কথাই কহেন –ফাল্‌তো কথা কিছুই কহেন না, অন্য লোক ফাল্‌তো কথা কহিলে আপন বুদ্ধির জোরে কুরুনির ন্যায় সার সার কথা বাহির করিয়া লয়েন। তিনি মনের মধ্যে সর্বদাই ভাবেন পরমেশ্বরের প্রতি ভক্তি, নীতিজ্ঞান ও সদ্‌বুদ্ধি যাহাতে বাড়ে তাহাই করা কর্তব্য। এই মতে চলাতে তাঁহার স্বভাব-চরিত্র ও কর্মসকল উত্তর উত্তর প্রশাংসনীয় হইতে লাগিল।

সততা কখনই চাপা থাকে না –পাড়ার সকল লোকে বলাবলি করে –রামলাল দৈত্যকূলের প্রহ্লাদ। তাহাদিগের বিপদ-আপদে রামলাল আগে বুক দিয়া পড়ে। কি পরিশ্রম দ্বারা, কি অর্থ দ্বারা, কি বুদ্ধি দ্বারা, যাহার যাতে উপকার হয় তাহাই করে। কি প্রাচীন, কি যুবা, কি শিশু, সকলেই রামলালের অনুগত ও আত্মীয় হইল –রামলালের নিন্দা শুনিলে তাহাদিগের কর্ণে শেল সম লাগিত –প্রশংসা শুনিলে মহা আনন্দ হইত। পাড়ার প্রাচীন স্ত্রীলোকেরা পরস্পর বলাবলি করিতে লাগিল –আমাদিগের এমন একটি ছেলে হলে বাছাকে কাছছাড়া হতে দিতুম না –আহা ! ওর মা কত পূণ্য করেছিল যে এমন ছেলে পেয়েছে। যুবতী স্ত্রীলোকেরা রামলালের রূপ গুণ দেখিয়া শুনিয়া মনে মনে কহিত, এমনি পুরুষ যেন স্বামী হয়।

রামলালের সৎ স্বভাব ও সৎ চরিত্র ক্রমে ক্রমে ঘরে-বাহিরে নানা প্রকারে পাইতে লাগিল, তাঁহার পরিবার মধ্যে কাহারও প্রতি কোনো অংশে কর্তব্য কর্মের ত্রুটি হইত না।

রামলালের পিতা তাঁহাকে দেখিয়া এক একবার মনে করিতেন, ছোট পুত্রটি হিন্দুয়ানী বিষয় আল্‌গা আল্‌গা রকম –তিলক সেবা করে না –কোশা-কোশী লইয়া পূজা করে না। হরিনামের মালাও জপে না, অথচ আপন মত অনুসারে উপাসনা করে ও কোনো অধর্মে রত নহে –আমরা ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যা কথা কহি –ছেলেটি সত্য বৈ অন্য কথা জানে না –বাপ-মার প্রতি বিশেষ ভক্তিও আছে, অধিকন্তু আমাদের অনুরোধে কোনো অন্যায় কর্ম করিতে কখনই স্বীকার করে না –আমার বিষয়-আশয়ে অনেক জোর আছে –সত্য মিথ্যা দুই-ই-চাই। অপর বাটীতে দোল দুর্গোৎসব ইত্যাদি ক্রিয়াকলাপ হইয়া থাকে –এ সকল কি প্রকারে রক্ষা হইবে ? মতিলাল মন্দ বটে কিন্তু সে ছেলেটির হিন্দুয়ানী আছে –বোধ হয় দোষে-গুণে বড়ো মন্দ নয় –বয়েসকালে ভারিত্ব হইলে সব সেরে যাবে। রামলালের মাতা ও ভগিনীরা তাঁহার গুণে দিন দিন আর্দ্র হইতে লাগিলেন। ঘোর অন্ধকারের পর আলোক দর্শনে যেমন আহলাদ জন্মে তেমনি তাঁহাদিগের মনে আনন্দ হইল, মতিলালের অসদ্ব্যবহারে তাঁহারা ম্রিয়মাণ ছিলেন, মনে কিছুমাত্র সুখ ছিল না, –লোক গঞ্জনায় অধোমুখ হইয়া থাকিতেন, এক্ষণে রামলালের সদ্‌গুণে মনে সুখ ও মুখ উজ্জ্বল হইল। দাসদাসীরা পূর্বে মতিলালের নিকট কেবল গালাগালি ও মার খাইয়া পালাই পালাই ডাক ছাড়িত –এক্ষণে রামলালের মিষ্ট বাক্যে ও অনুগ্রহে ভিজিয়া আপন আপন কর্মে অধিক মনোযোগী হইল। মতিলাল, হলধর ও গদাধর রামলালের কাণ্ড-কারখানা দেখিয়া পরস্পর বলাবলি করিত, ছোঁড়া পাগল হল –বোধ হয় মাথায় দোষ জন্মিয়াছে। কর্তাকে বলিয়া ওকে পাগলা গারদে পাঠান যাউক –একরত্তি ছোঁড়া, দিবারাত্রি ধর্ম ধর্ম বলে –ছেলে মুখে বুড়ো কথা ভালো লাগে না। মানগোবিন্দ, রামগোবিন্দ ও দোলগোবিন্দ মধ্যে মধ্যে বলে –মতিবাবু ! তুমি কপালে পুরুষ –রামলালের গতিক ভালো নয় –ওটা ধর্ম ধর্ম করিয়া নিকেশ হবে, তারপর তুমিই সমস্ত বিষয়টা লইয়া পায়ের উপর পা দিয়া নিছক মজা মারো। আর ওটা যদিও বাঁচে তবু কেবল জড়ভরতের মতো হবে। আ মরি ! যেমন গুরু তেমন চেলা –পৃথিবীতে আর শিক্ষক পাইলেন না ! একটা বাঙালের কাছে গুরুমন্ত্র পাইয়া সকলের নিকট ধর্ম ধর্ম করিয়া বেড়ান। বড়ো বাড়াবাড়ি করলে ওকে আর ওর গুরুকে একেবারে বিসর্জন দিব। আ মরি ! টগরে ছোঁড়া বলে বেড়ায়, দাদা কুসঙ্গ ছাড়লে বড়ো সুখের বিষয় হবে –আবার বলে বরদাবাবুর নিকট গমনাগমন করিলে ভালো হয়। বরদাবাবু বুদ্ধির ঢেঁকি। গুণবানের জেঠা। খবরদার মতিবাবু, তুমি যেন দমে পড়ে সেটার কাছে যেও না। আমরা আবার শিখব কি ? তার ইচ্ছা হয় তো সে আমাদের কাছে এসে শিখে যাউক। আমরা এক্ষণে রং চাই –মজা চাই –আয়েস চাই।

ঠকচাচা সর্বদাই রামলালের গুণাগুণ শুনেন ও বসিয়া বসিয়া ভাবেন। ঠকের আঁচ সময় পাইলেই বাবুরামের বিষয়ের উপর দুই-এক ছোবল মারিবেন। এই পর্যন্ত অনেক মামলা গোলমালে গিয়াছে –ছোবল মারিবার সময় হয় নাই কিন্তু চারের উপর চার দিয়া ছিপ ফেলার কসুর হয় নাই। রামলাল যে প্রকার হইয়া উঠিল তাহাতে যে মাছ পড়ে এমন বোধ হইল না –পেঁচ পড়িলেই সে পেঁচের ভিতর যাইতে বাপকে মানা করিবে। অতএব ঠকচাচা ভারি ব্যাঘাত উপস্থিত দেখিল এবং ভাবিল আশার চাঁদ বুঝি নৈরাশ্যের মেঘে ডুবে গেল, আর প্রকাশ বা না পায়। তিনি মনোমধ্যে অনেক বিবেচনা করিয়া একদিন বাবুরামকে বলিলেন, বাবু সাহেব। তোমার ছোট লাড়কার ডৌল নেকা করে মোর বড়ো গর্মি হচ্ছে। মোর মালুম হয় ওনা দেওয়ানা হয়েছে –তেনা মোর উপর বড়ো খাপ্পা, দশ আদমির নজদিগে বলে মুই তোমাকে খারাপ করলাম –এ বাতশুনে মোর দেলে বড়ো চোট লেগেছে। বাবু সাহেব ! এ বহুত বুরাবাত –এজ এস মাফিক মোরে বললে –কেল তোমাকেও শক্ত শক্ত বলতে পারে। লেড়কা ভালো হবে –নরম হবে –বেতমিজ ও বজ্জাত হল, এলাজ দেয়া মোনাসেব। আর যে রবক সবক পড়ে তাতে যে জমিদারি থাকে এতনা মোর এক্কেলে মালুম হয় না।

যে ব্যক্তির ঘটে বড়ো বুদ্ধি নাই সে পরের কথায় অস্থির হইয়া পড়ে। যেমন কাঁচা মাঝির হাতে তুফানে নৌকা পড়িলে টল্‌মল্‌ করিতে থাকে –কুল-কিনারা পেয়েও পায় না –সেই মতো ঐ ব্যক্তি চারিদিকে অন্ধকার দেখে – ভালো-মন্দ কিছুই স্থির করিতে পারে না। একে বাবুরামবাবুর মাজা বুদ্ধি নহে তাতে ঠকচাচার করা ব্রহ্মজ্ঞান, এই জন্য ভেবাচেকা লেগে তিনি ভদ্রজংলার মতো ফেল্‌ফেল্‌ করিয়া চাহিয়া রহিলেন ও ক্ষণেক কাল পরে জিজ্ঞাসা করিলেন –উপায় কি ! ঠকচাচা বলিলেন –মোশার লেড়কা বুরা নহে, বারদাবাবুই সব বদের জড় –ওনাকে তফাত করিলে লেড়কা ভালো হবে –বাবু সাহেব। হেন্দুর লেড়কা হবে হেন্দু মাফিক পাল-পর্বণ করা মোনাসেব, আর দুনিয়াদারি করিতে গেলে ভালা-বুরা দুই-ই চাই –দুনিয়া সাচ্চা নয় –মুই একা সাচ্চা হয়ে কি করবো ?

যাহার যেরূপ সংস্কার সেইমতো কথা শুনিলে ঐ কথা বড়ো মনের মতো হয়। হিন্দুয়ানী ও বিষয় রক্ষা সংক্রান্ত কথাতেই লক্ষ্য সিদ্ধ হইবে, তাহা ঠকচাচা ভালো জানিতেন ও ঐ কথাতেই কর্ম কেয়াল হইল। বাবুরামবাবু উক্ত পরামর্শ শুনিয়া তা বটে তো তা বটে তো বলিয়া কহিলেন –যদি তোমার এই মত তো শীঘ্র কর্ম নিকেশ করো –টাকাকড়ি যাহা আবশ্যক হবে আমি তাহা দিব কিন্তু কল-কৌশল তোমার।

রামলালের সংক্রান্ত ঘষ্টি ঘর্ষণা এইরূপ হইতে লাগিল। নানা মুনির নানা মত –কেহ বলে ছেলেটি এ অংশে ভালো –কেহ বলে ও অংশে ভালো নহে –কেহ বলে এই মুখ্য গুণটি না থাকাতে এক কলসী দুগ্ধে এক ফোঁটা গোবর পড়িয়াছে –কেহ বলে ছেলেটি সর্ব বিষয়ে গুণান্বিত, এইরূপ কিছুকাল যায় –দৈবাৎ বাবুরামবাবুর বড়ো কন্যার সাংঘাতিক পীড়া উপস্থিত হইল। পিতা-মাতা কন্যাকে ভারি ভারি বৈদ্য আনাইয়া দেখাইতে লাগিলেন। মতিলাল ভগিনীকে একবারও দেখিতে আইল না। –পরম্পরায় বলিয়া বেড়াইতে লাগিল ভদ্র লোকের ঘরে বিধবা হইয়া থাকা অপেক্ষা শীঘ্র মরা ভাল, এবং ঐ সময়ে তাহার আমোদ আহ্লাদ বাড়িয়া উঠিল –কিন্তু রামলাল আহার-নিদ্রা ত্যাগ করিয়া ভগিনীর সেবা-শুশ্রূষা করিতে লাগলেন ও ভগিনীর আরোগ্যের জন্য অতিশয় চিন্তান্বিত ও যত্নবান হইলেন। ভগিনী পীড়া হইতে রক্ষা পাইলেন না –মৃত্যুকালীন ছোট ভ্রাতার মস্তকে হাত দিয়া বলিলেন –রাম ! যদি মরে আবার মেয়ে জন্ম হয় তবে যেন তোমার মতো ভাই পাই –তুমি আমার যা করেছ তাহা আমি মুখে বলিতে পারিনে –তোমার যেমন মন তেমনি পরমেশ্বর তোমাকে সুখে রাখিবেন –এই বলিয়া ভগিনী প্রাণ ত্যাগ করিলেন।

Category: আলালের ঘরের দুলাল
পূর্ববর্তী:
« ১২. বেচারামবাবুর নিকট বেণীবাবুর গমন, মতিলালের ভ্রাতা রামলালের উত্তম চরিত্র হওনের কারণ, বারদাপ্রসাদবাবুর প্রসঙ্গ— মন শোধনের উপায়।
পরবর্তী:
১৪. মতিলাল ও তাহার দলবল একজন কবিরাজ লইয়া তামাশা-ফষ্টি করণ, রামলালের সহিত বরদাপ্রসাদবাবুর দেশ ভ্রমণের ফলের কথা, হুগলী হইতে গুমখুনির পরওয়ানা ও বরদাবাবু প্রভৃতির তথায় গমন। »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑