৩. সোমনাথের ঘোড়া কেনা হয়েছে

সোমনাথের ঘোড়া কেনা হয়েছে, দুধের মত সাদা টাট্টুঘোড়া। সহিসের ব্যবস্থাও হয়েছে। ঘোড়ার পিঠে জিন চড়িয়ে মুখের লাগাম ধরে সহিস দাঁড়িয়ে আছে, আর যোধপুরী ব্রিচেস পরে চাবুক হাতে নিয়ে সোমনাথ ঘোড়ায় চড়বার চেষ্টা করছে।

ঘোড়ার পিঠে চড়া কিন্তু সহজ কাজ নয়, তা হোক না সে টাট্টুঘোড়া।

যতবারই সোমনাথ ঘোড়ার পাশে গিয়ে লাফ মেরে পিঠে চড়বার চেষ্টা করছে, ততবারই সে সরে সরে যাচ্ছে। বাড়ির কয়েকজন গোমস্তা ও চাকর দাঁড়িয়ে ঘোড়ায় চড়া দেখছে ও নানা রকম মন্তব্য করছে।

গোবর্ধন বলল–ঘোড়াটা দেখছি ভারি দুষ্টু। ছোটবাবু, আমি বরং তোমাকে কোলে করে ওর পিঠে তুলে দিই।

না, আমি নিজেই চড়ব। সোমনাথ আবার লাফ দিল, কিন্তু ঘোড়া আবার সরে গেল।

একজন গোমস্তা বুদ্ধি দিল—একটা টুল আনলে ভাল হয়, টুলে চড়ে সহজে ওঠা যাবে।

দ্বিতীয় গোমস্তা বলল-ছোটবাবুর হাতের চাবুক দেখেই ঘোড়া ভয় পাচ্ছে। ওটা ফেলে দিলেই তো ল্যাটা চুকে যায়।

সোমনাথ রাগ করে বলল—তোমাদের আর বুদ্ধি দিতে হবে না, আমি যেমন করে পারি উঠব।

গোবর্ধন বলল–আমি বলি কি, ঘোড়ার পাগুলো চেপে ধরলে হয় না?

গোমস্তা বলল-ঘোড়ার পায়ে ধরতে চাও তুমিই ধর না বাপু।

সকলে হেসে উঠল।

দোতলায় নিজের জানলা থেকে একনাথ সব দেখছেন আর অসহিষ্ণু হয়ে উঠছেন। যত সব অপদার্থ। একটা ছেলেকে ঘোড়ায় চড়াতে পারে না।

তিনি হাঁক দিয়ে বললেন— দাঁড়া সোমনাথ, আমি আসছি—

তিনি বকতে বকতে দোরের দিকে চললেন।

নীচের বারান্দায় ললিতা একটি কাঠের ঘোড়ায় চড়ে দোল খাচ্ছিল, একনাথ সিঁড়ির রেলিং ধরে আস্তে আস্তে নীচে নেমে এলেন; পা ঠিক পড়ছে না। একটু খোঁড়াচ্ছেন। বারান্দা পার হয়ে তিনি বাগানের দিকে চলে গেলেন। ললিতা হাঁ করে চেয়ে রইল। সে আগে কখনো একনাথকে নীচের তলায় নামতে দেখেনি।

ওদিকে কুসুম ঠাকুরঘর থেকে পুজোর ফুল সাজিতে নিয়ে একনাথের ঘরে গেল। বিছানার পাশে সাজি রেখে সে চারদিকে তাকিয়ে দেখল, ঘরে একনাথ নেই। সে আশ্চর্য হয়ে ভাবল— বাবা আবার কোথায় গেলেন! ঘর ছেড়ে কোথাও তো যান না। জানলা খোলা দেখে সে গিয়ে নীচে উঁকি মারল।

একনাথ বাগানে পৌঁছে গেছেন, সোমনাথকে লক্ষ্য করে তিনি বলছেন— দাঁড়া, ওরকম করে ঘোড়ায় চড়ে না—এই দ্যাখ, আমি শিখিয়ে দিচ্ছি।

কুসুম গালে হাত দিয়ে জানলা থেকে সরে এল—ওমা কি হবে, বাবা একেবারে নীচে নেমে গেছেন! মা চণ্ডী, রক্ষে করো।

কুসুম ছুটতে ছুটতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

বাগানে চাকর-গোমস্তারা একনাথকে আসতে দেখে যে-যার সরে পড়ল। একনাথের কোনদিকে দৃষ্টি নেই, তিনি গিয়ে সহিসের হাত থেকে লাগাম নিয়ে সোমনাথকে বললেন— অমন করে ঘোড়ায় চড়ে না। এদিকে আয়, আমার কাঁধে ভর দেহ্যাঁ-এবার ডান হাতে জিনের মুঠ ধরে লাফিয়ে ওঠ—এই তো ঠিক হয়েছে।

ঘোড়া মানুষ চেনে, সে এবার সরে গেল না। সোমনাথ রেকাবে পা দিয়ে ঘোড়ার পিঠে উঠে বসল। একনাথ তার হাতে লাগাম দিয়ে বললেন— লাগামে বেশি ঢিল দিস না। হ্যাঁ, এবার। বাগানের মধ্যে চক্কর দে; প্রথমেই ছুট দিস না— ধীর কদম

সন্তুষ্ট বিচারকের দৃষ্টিতে অশ্বারূঢ় নাতিকে পরিদর্শন করে একনাথ বাড়ির দিকে ফিরে চললেন।

বারান্দার সিঁড়ির মুখে ডাক্তার পাণ্ডের সঙ্গে দেখা। পাণ্ডে বাইরে ফটকের দিক থেকে আসছিলেন, একনাথকে নীচের তলায় দেখে হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে গেলেন– আরে এ কি কাণ্ড! আপনি একেবারে নীচে নেমে এসেছেন।

কেন আমি কি নীচে নামতে পারি না! তাঁর মনে যতই তেজ থাক শরীরের শক্তি কমে গিয়েছিল, তিনি ক্লান্তভাবে সিঁড়ির প্রথম ধাপে বসে মুখে বিক্রম দেখিয়ে বললেন–তুমি ভেবেছ কি? আমি অক্ষম অকর্মণ্য?

ডাক্তার তাড়াতাড়ি বললেন—না না, বাবুসাহেব, কিন্তু আপনার পায়ের ব্যথাটা

কে বলে আমার পায়ে ব্যথা। তিনি তড়াক করে উঠে দাঁড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে ওঠবার উপক্রম করলেন, কিন্তু এক ধাপ উঠেই তাঁকে দাঁড়িয়ে পড়তে হল, মুখ বিকৃত করে পায়ের যন্ত্রণা দমন করলেন। সিঁড়ি দিয়ে নামা যত সহজ, ওঠা তত সহজ নয়।

ঠিক এই সময় কুসুম দ্রুতপদে নেমে এল। সে কোন কথা না বলে একনাথের একটা বাহু তুলে নিয়ে নিজের কাঁধের ওপর রাখল, বলল–এবার আমার কাঁধে ভর দিয়ে উঠুন আস্তে আস্তে উঠুন—

একনাথ গলার মধ্যে একটা হুম শব্দ করলেন, কোন আপত্তি করলেন না। ডাক্তার পিছন থেকে বললেন–আমিও আসব নাকি? দুদিক থেকে দুজন ধরলে আরো সহজে উঠতে পারবেন।

একনাথ কড়া সুরে বললেন—না না, তোমাকে দরকার নেই।

সিঁড়ির মাথায় উঠে একনাথ দাঁড়ালেন, কুসুম তাঁকে ছেড়ে দিল। ডাক্তারও পিছন পিছন উঠছিলেন, একনাথ তাঁর পানে বিজয়গর্বিত চোখে চেয়ে বললেন–দেখলে তো, পাখির মত উড়ে চলে এলাম।

ডাক্তার মিটি মিটি হেসে বললেন–হাঁ বাবুজি, একেবারে বাজপাখির মত। এবার চলুন, বিছানায় শুয়ে একটু বিশ্রাম করবেন।

আমার পা কিন্তু ঠিক আছে।

ডাক্তার আশ্বাস দিয়ে বললেন–তাতে কোন সন্দেহ নেই। চলুন— চলুন—

নিজের ঘরে ঢুকে নিজের বিছানায় শুলেন, ডাক্তার ও কুসুম খাটের দুপাশে। একনাথের মেজাজ আবার চড়ে গেল, তিনি ডাক্তার পাণ্ডের পানে কটমট চক্ষে চেয়ে বললেন—তোমার অত্যাচার আর আমি সহ্য করব না। রাতদিন একটা ঘরের মধ্যে আমাকে আটক করে রেখেছ। আমি কি জেলখানার কয়েদী? তুমি যাও, নিজের চিকিৎসা আমি নিজেই করতে পারব— ফের যদি তুমি এসে আমার পিছনে লাগো, হুলস্থুল কাণ্ড বেধে যাবে

পাণ্ডে প্রসন্ন স্বরে বললেন-না না বাবুজি, আর আমি আপনাকে বিরক্ত করব না। কথা দিচ্ছি, আপনি ডেকে না পাঠালে আর আমি আসব না। কেমন, তাহলে হবে তো? আচ্ছা, আজ চলি। কুসুমের দিকে চেয়ে একটু হেসে তিনি বিদায় নিলেন।

ডাক্তার চলে যাবার পর একনাথ একটা হাঁটু তুলে সন্তর্পণে হাত দিয়ে অনুভব করলেন, মনে হল বাতে আক্রান্ত হাঁটুটা ফুলেছে। তিনি হাঁক ছাড়লেন—গোবর্ধন।

কুসুম খাটের আরো কাছে এসে বলল–বাবা, গোবর্ধনকে ডেকে দেব? কি দরকার আমাকে বলুন না।

মুখ গোঁজ করে একনাথ বললেন–হাঁটুর ব্যথা বেড়েছে। ডাক্তারের ওই দুর্গন্ধ ওষুধ আর লাগাব না। গোবর্ধনকে বল একবাটি তেল গরম করে এনে হাঁটুতে মালিশ করে দিক।

কুসুম বলল–আমি এক্ষুনি গরম তেল এনে মালিশ করে দিচ্ছি, আপনি চুপ করে শুয়ে থাকুন।

একনাথ উঠে বসার উপক্রম করে বললেন— কিন্তু

কুসুম তাঁকে আবার শুইয়ে দিয়ে বলল— আপনি শুয়ে থাকুন, আমাকে আপনার পদসেবা করতে দিন। সে দ্রুতপদে চলে গেল।

একনাথ বাষ্পাকুল চোখে ঊর্ধ্বে চেয়ে রইলেন।

.

বাগানে একটা গাছের ছায়ায় ঘোড়ার পিঠে বসে সোমনাথ বিশ্রাম করছে; সহিস পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সে-ও ঘোড়ার সঙ্গে সঙ্গে দৌড়েছিল।

সহিস কপালের ঘাম মুছে বলল—এইবার নামুন ছোটসাহেব। আবার বিকেলে চড়বেন।

সোমনাথ বলল— আর এক চক্কর দেব। তোমার সঙ্গে যাবার দরকার নেই, তুমি এখানেই থাকো। পনেরো মিনিটের মধ্যেই আমি ফিরে আসছি।

লাগাম নেড়ে সে ঘোড়াকে চালু করল।

.

একনাথ পূর্ববৎ বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে আছেন। একটি বাটিতে সর্ষের তেল এবং লম্বা এক টুকরো ফ্ল্যানেল কাপড় নিয়ে কুসুম ঘরে ঢুকল, তার পিছনে জ্বলন্ত কাঠকয়লার আংটা নিয়ে গোবর্ধন। কুসুম ইশারা করল, গোবর্ধন একটি টিপাইয়ের ওপর আংটা রেখে টিপাই খাটের পাশে এনে রাখল। কুসুম আঁচের ওপর তেলের বাটি বসিয়ে একটি ছোট প্যাকেট খুলে অল্প কর্পূর তেলের মধ্যে ফেলে দিল, গোবর্ধনকে বলল—গোবর্ধন, বাবুসাহেবের হাঁটুর নীচে বালিশ দাও।

একনাথ এতক্ষণ ঘাড় ফিরিয়ে দেখছিলেন, বিরক্ত মুখে বললেন—এসব কি হচ্ছে?

কুসুম বলল— গরম তেল কর্পূর দিয়ে হাঁটুতে মালিশ করব।

কী হবে মালিশ করে?

ব্যথা সেরে যাবে। খাটের কিনারায় বসে কুসুম গরম তেলে আঙুল ড়ুবিয়ে মালিশ করতে শুরু করল, অনুযোগের সুরে বলল— এই শরীরে কি বাড়াবাড়ি সহ্য হয়। আমি জানতে পারলে হরগিস্ নীচে নামতে দিতুম না। – গোবর্ধন, বাবুসাহেবের কপালে ঘাম হচ্ছে দেখতে পাচ্ছ না? পাখা দিয়ে মাথায় বাতাস কর।

একনাথ বকুনি খেয়ে চোখ বুজে শুয়ে রইলেন। গোবর্ধন তাঁর মাথায় বাতাস করতে লাগল।

কুসুম তেল মালিশ করছে আর আংটায় ফ্ল্যানেল তাতিয়ে সেঁক দিচ্ছে। সে কতকটা যেন নিজ মনেই বলতে লাগল বাতের ব্যথা কি সহজ ব্যথা, অনেক যত্ন নিলে তবে সারে। তারপর সেরে গেলে যা ইচ্ছে করা যায়। ব্যথা কি একটু কম মনে হচ্ছে?

একনাথ হাঁটু একটু নাড়াচাড়া করে বললেন–হুম, আর তেমন চিড়িক মারছে না। তুমি যাও, আর সেঁকের দরকার নেই।

কুসুম বলল— সে কি বাবা, আরো আধঘণ্টা সেঁক দিতে হবে। আজ সারা দিন বিছানা থেকে উঠতে পাবেন না। গোবর্ধন, যাও, আরো কাঠকয়লা নিয়ে এস।

গোবর্ধন চলে গেল। একনাথ মুখ গোমড়া করে বললেন—বেশ, লাগাও মালিশ, তোমারই কষ্ট, আমার কি! আমি দশদিন বিছানা থেকে উঠব না।

এই সময় গোবর্ধন ছুটতে ছুটতে এসে বলল— সর্বনাশ হয়েছে, ছোটবাবু ঘোড়া থেকে পড়ে গেছেন!

একনাথ খাড়া উঠে বসলেন কি বললি, সোমনাথ ঘোড়া থেকে পড়ে গেছে! কি করে পড়ল! কোথায় পড়ল?

গোবর্ধন বলল–তা তো জানি না হুজুর, সহিস ছুটে এসে বলল, ছোটবাবু ঘোড়া থেকে পড়ে গেছেন।

একনাথ বিছানা থেকে নামতে নামতে বললেন-যত সব অপদার্থের দল

কুসুম বাধা দিয়ে বলল— বাবা, আপনি খাট থেকে নামবেন না। আপনার পা—

চুলোয় যাক পা! ছেলেটা বাঁচল কি মরল কেউই দেখছে না, কেবল চেঁচাচ্ছে— একনাথ বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালেন।

কুসুম ছুটে এসে বাধা দিল বাবা, আপনি ঘরে থাকুন, আমি নীচে গিয়ে দেখছি কী হয়েছে। দেখেই আপনাকে খবর দেব। ছেলেরা কত পড়ে যায়, কত হাত-পা ভাঙে, তার জন্য এত ভাবনার কী আছে।

কোন কথায় কান না দিয়ে একনাথ বললেন–গোবর্ধন, লাঠিটা দে। —কোন কথা শুনতে চাই না আমি নীচে যাচ্ছি। ছেলেটার যদি কিছু হয়ে থাকে কাউকে আস্ত রাখব না লাঠি ধরে একনাথ খোঁড়াতে খোঁড়াতে ঘর থেকে বেরুলেন।

কুসুম তেলের বাটি ইত্যাদি তুলে নিতে নিতে বলল—গোবর্ধন, তুমি ওঁর সঙ্গে সঙ্গে যাও, নইলে হয়তো পড়ে যাবেন। আমি আসছি।

গোবর্ধন ছুটে বেরিয়ে গেল।

একনাথ তখন সিঁড়ির রেলিং ধরে আস্তে আস্তে নামছেন। গোবর্ধন তাড়াতাড়ি নেমে এসে তাঁর অনুগামী হল।

সিঁড়ির নীচে কাঠের ঘোড়ায় চড়ে ললিতা দোল খাচ্ছিল, একনাথ সেখানে নেমে এক গর্জন ছাড়লেন শম্ভু! গজাধর। রঘুয়া। কোথায় গেল হতভাগারা! দৌড়ে যা, দ্যাখ সোমনাথ কোথায়?

গর্জনের প্রথম ধাক্কাতেই ললিতা ঘোড়া থেকে উল্টে পড়ে গেল। একনাথের সেদিকে লক্ষ্য নেই, তিনি পা টেনে টেনে বাগানের দিকে চললেন। তিন-চার জন চাকর তাঁর দিকে ছুটে আসছে দেখে তিনি আবার চিকুর ছাড়লেন— এদিকে আসছিস কেন রে অলপ্পেয়ের দল, সোমনাথ কোথায় আগে দ্যাখ

চাকরেরা পাকসাট খেয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল।

ওদিকে কুসুম তাড়াতাড়ি নেমে এসে দেখল ললিতা কাঠের ঘোড়া উল্টে সিঁড়ির নীচে চুপটি করে পড়ে আছে, সে তাকে হাত ধরে তুলে একনাথের কাছে গিয়ে দাঁড়াল।

একনাথ হতাশ স্বরে বললেন–ভগবান জানেন কোথায় পড়ে আছে ছেলেটা! সহিসটাই বা কেমন

এই সময় ঘোড়র ক্ষুরের টগবগ আওয়াজ শোনা গেল। একনাথ কথা থামিয়ে সেইদিকে তাকালেন। কদম-চালে ঘোড়া চালিয়ে সোমনাথ আসছে। একনাথ মহা উল্লাসে দু হাত তুলে বললেন–আরে এই তো সোমনাথ। তবে যে হতভাগারা বলল ঘোড়া থেকে পড়ে গেছে!

সোমনাথ এসে একনাথের সামনে ঘোড়া থামাল, একমুখ হাসি নিয়ে ঘোড়ার পিঠ থেকে নামল, বলল–হ্যাঁ দাদু, ঘোড়াটা আমায় ফেলে দিয়েছিল। এই দ্যাখো গায়ে ধুলো লেগেছে। কিন্তু আমি তখনি আবার উঠে এক লাফে তার পিঠে চড়ে বসলাম। কি করে ঘোড়ার পিঠে চড়তে হয় এখন আমি শিখে নিয়েছি, আর আমাকে ফেলতে পারবে না।

আনন্দে আত্মহারা হয়ে একনাথ সোমনাথকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন, বললেন—শাবাশ! এই তো পুরন্দরপুরের সিংহ বংশের ছেলে। বৌমা, দেখেছ, ছেলে কাকে বলে!

কুসুম দেখবে কী, তার দুই চোখে তখন কান্নার বান ডেকেছে।

ব্যস্তসমস্তভাবে ডাক্তার পাণ্ডে এসে উপস্থিত হলেন—এ কি, আবার আপনি নেমে এসেছেন। পায়ের ব্যথাটা কি সারতে দিতে চান না?

যাও যাও ডাক্তার, তোমার ডাক্তারি আর আমার দরকার নেই। তোমার চেয়ে ঢের ভাল ডাক্তার আমি পেয়েছি। একনাথ সগর্বে কুসুমের পানে চাইলেন–হাঁটুতে অ্যায়সা গরম তেল মালিশ করেছে যে ব্যথা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।

একনাথ নাতির কাঁধে হাত রেখে প্রায় স্বাভাবিক চালে সিঁড়ির দিকে চললেন, কুসুম তাঁদের পিছন পিছন গেল। ডাক্তার কিছুক্ষণ নির্বাক দাঁড়িয়ে রইলেন, তারপর তাঁর মুখ পরম তৃপ্তির হাসিতে ভরে উঠল।

.

মানুষের জীবনে দশটা বছর অল্প কাল কী দীর্ঘ কাল তা নির্ণয় করা কঠিন। সুখী দম্পতির জীবনের দশটা বছর চক্ষের পলকে কেটে যায়, আবার কয়েদীর জীবনে দশ বছর কেটেও কাটতে চায় না। সবই আপেক্ষিক।

পুরন্দরপুরের জমিদারবাড়িতে সকলের বয়স দশ বছর বেড়ে যাওয়া ছাড়া বিশেষ কোন পরিবর্তন ঘটেনি। পুরোহিতমশাই গৃহদেবীর পূজা করেন, স্তোত্রপাঠ করেন। গোবর্ধনের কানের কাছে চুলে পাক ধরেছে, তবু সে মাঝে মাঝে তারা-ঝির হাত ধরে হঠাৎ নাচতে আরম্ভ করে, কর্তা অনেকদিন তাকে গালমন্দ করেননি।

কর্তা রোজ সকালবেলায় নীচের তলায় দপ্তরখানার চৌকিতে এসে বসেন। পিছনে ও দুপাশে মোটা-তাকিয়া, হাতে গড়গড়ার নল। নায়েব হিসেবের খাতা খুলে আয়ব্যয়ের বয়ান শোনায়। একনাথের বয়স এখন সত্তর, কিন্তু তাঁর শরীরে বার্ধক্যের শিথিলতা আসেনি; মুখের উগ্র গাম্ভীর্য যেন একটু নরম হয়েছে। দশটা বছর তাঁর শরীরের ওপর দিয়ে অতি লঘুপদে চলে গেছে, কোথাও পদচিহ্ন রেখে যায়নি। ছেলেকে হারিয়ে তিনি যে মানসাগ্নিতে দগ্ধ হচ্ছিলেন, নাতিকে পেয়ে সে-দাহ শীতল হয়েছে।

বিকেলবেলা কুসুম ললিতার চুল বাঁধতে বসে। ললিতার বয়স এখন পনেরো-যোলো; চেহারাটি ভারি স্নিগ্ধ। কৈশোরের উপকূলে দাঁড়িয়ে সে আসন্ন যৌবনের সোনার তরীর অপেক্ষা করছে।

চুলবাঁধার সময় ললিতা প্রশ্ন করে—বৌমা, বাবু কবে ফিরে আসবে?

কুসুম বলে-কলেজের ছুটি হলেই আসবে।

এবার তো একবারে ছুটি, পড়া শেষ, আর কলেজে ফিরে যেতে হবে না?

না, আর ফিরে যেতে হবে না।

ললিতা কুসুমকে বৌমা বলে বাড়ির অন্য সকলের দেখাদেখি। সোমনাথকেও ছোটবাবু বলত, এখন শুধু বাবু বলে।

চার মাস পরে পরীক্ষা দিয়ে সোমনাথ বাড়ি ফিরে এল।

ডাক্তার পাণ্ডে তাকে তিন মাইল দূরের রেলস্টেশন থেকে আনতে গিয়েছিলেন। জমিদার বাড়িতে একজন স্থায়ী রোগীর অভাবে ডাক্তার পাণ্ডে এখন আর আসেন না, তবে জরুরী ফাইফরমাস খাটায় সময় তাঁর তলব পড়ে।

ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে সোমনাথ উপস্থিত হল। একনাথ সদর ফটকের সামনে ছাতা মাথায় দিয়ে পরিজন বেষ্টিত হয়ে অপেক্ষা করছিলেন। সোমনাথ একলাফে গাড়ি থেকে নেমে একনাথকে প্রণাম করল, একনাথ তাকে বুকে জড়িয়ে নিলেন।

সোমনাথের দেহে স্বাস্থ্যভরা যৌবনের দীপ্তি, মুখে নির্ভীক আনন্দের হাসি। একনাথ তার মুখের পানে সগর্ব চোখে চেয়ে গলার মধ্যে একটা শব্দ করলেন–হুঁ। পরীক্ষা কেমন হল?

সোমনাথ প্রফুল্ল স্বরে বলল–ভাল হয়নি দাদু। তবে পাস করে যাব বোধহয়।

একনাথ আবার গলার মধ্যে শব্দ করলেন— খালি হকি আর ফুটবল খেলেছ। যাও, এখন মুখহাত ধুয়ে খাও গিয়ে, তোমার মা খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।

সোমনাথ একদৌড়ে বাড়ির দিকে চলে গেল। একনাথ ডাক্তারের দিকে ফিরে বললেন— তুমিও এস ডাক্তার। আজ এখানেই মধ্যাহ্নভোজন করবে।

.

কুসুম আর ললিতা দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়েছিল, সোমনাথ এসে মাকে প্রণাম করল। তারপর ললিতার পানে চেয়ে কেমন যেন ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেল। চার মাস আগে সে যে ললিতাকে দেখে গিয়েছিল, এ যেন সে ললিতা নয়। তার বুকের স্পন্দন একটু দ্রুত হল, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম ফুটে উঠল। কিন্তু সে চট্‌ করে নিজেকে সামলে নিয়ে কুসুমকে বলল–মা, এ মেয়েটা কে? একে তো আগে কখনো দেখিনি।

কুসুম একটু হেসে ঘরের দিকে পা বাড়াল, বলল–খাবার সাজিয়ে রেখেছি, খাবি আয়।

ললিতাও সোমনাথকে দেখে হঠাৎ জড়সড় হয়ে পড়েছিল, তার মুখে একটু ভীরু হাসি ফুটে উঠেছিল। কিন্তু সোমনাথের কথায় তার হাসিটুকুও শুকিয়ে গেল। সোমনাথ যে মনের উচ্ছাস চাপা দেবার জন্যে ঠাট্টা-তামাশার আশ্রয় নিয়েছে তা সে বুঝতে পারল না। সে ভাবল সোমনাথ সত্যিই তাকে চিনতে পারেনি।

বাবু। তুমি আমায় চিনতে পারলে না?

না। তোমার নাম কি?

ললিতার চোখ জলে ভরে উঠল, সে চোখে আঁচল দিয়ে দ্রুতপদে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে গেল।

এই ললি— ব্যগ্রভাবে সোমনাথ তার অনুসরণ করতে গেল, কিন্তু ঘর থেকে মায়ের ডাক এল-সোমনাথ।

সোমনাথ সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে থেমে গেল, মায়ের আহ্বানে খাবার ঘরে গিয়ে ঢুকল।

.

বাগানে একটা গাছের তলায় পাথরের বেদি, ললিতা সেই বেদির ওপর বসে উদাস চোখে অদূরে ফোয়ারার পানে চেয়ে আছে। অভিমানে তার বুক ফুলে উঠছে। বাবু তাকে চিনতে পারল না! চার মাসে ভুলে গেল!

পিছন থেকে সোমনাথ নিঃশব্দে এসে তার চোখ টিপে ধরল। ললিতা প্রথমে চমকে উঠল, তারপর চুপ করে বসে রইল। সাড়াশব্দ নেই।

সোমনাথ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বলল–আমি কে!

ললিতা ভারী গলায় বলল— জানি না।

চোখ ছেড়ে দিয়ে সোমনাথ ললিতার পাশে বসল, বলল—রাগ হয়েছে?

ললিতা উত্তর দিল না, অন্যদিকে চেয়ে রইল। সোমনাথ তখন বলল–সত্যিই কি আমি তোমাকে চিনতে পারিনি! তুমি এই কমাসে এতবড় হয়ে গেছ যে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম।

তবে কেন আমায় ভয় দেখালে? জল-ভরা চোখ সোমনাথের পানে ফিরিয়ে ললিতা তার কাঁধে মাথা রাখল। সোমনাথ তার কাঁধ জড়িয়ে নিয়ে স্বলিত স্বরে বলল–আর ভয় দেখাব না।

তাদের মন গঙ্গা-যমুনার মত সঙ্গমের পানে ছুটে চলেছে। ছেলেবেলার সহজ সাহচর্যের প্রীতি অন্যরূপ ধারণ করেছে। স্থির সমুদ্র সহসা উত্তাল হয়ে উঠেছে।

দপ্তরখানার চৌকিতে বসে বিকেলবেলা একনাথ তাকিয়ায় ঠেস দিয়ে তামাক খাচ্ছেন। সামনে ডাক্তার পাণ্ডে। পাণ্ডের সামনে রুপোর রেকাবিতে পান, তিনি মাঝে মাঝে পান তুলে মুখে দিচ্ছেন। অলসভাবে গাল-গল্প হচ্ছে। জল-হাওয়া চাষবাসের অবস্থা এইসব নিয়ে আলোচনা।

গোবর্ধন আফিমের কৌটো আর জলের গেলাস নিয়ে এল। একনাথ আফিমের গুলি পাকিয়ে মুখে দিলেন, একঢোঁক জল খেলেন, তারপর আবার গড়গড়ার নল তুলে নিলেন। গোবর্ধন কৌটো গেলাস নিয়ে চলে গেল।

তারপর এলেন দেওয়ান। তাঁর হাতে কয়েকটা চিঠি। একনাথ প্রশ্ন করলেন— জরুরী চিঠি কিছু আছে?

দেওয়ান বললেন–আজ্ঞে দুখানি চিঠি জরুরী বলা চলে। ছোটবাবুর জন্যে পাত্রীর খবর আছে।

একনাথ বললেন— ও…কারা খবর দিয়েছে? কেমন লোক? ইদানীং যেসব সম্বন্ধ আসছে আমার তেমন পছন্দ নয়। বংশমর্যাদা না থাকলে তো মেয়ে আনা যায় না। কারা চিঠি লিখেছে?

দেওয়ান বললেন–আজ্ঞে পড়ে শোনাচ্ছি। এটি লিখেছেন তেজপুরের নরোত্তম সিংহ, পাত্রী তাঁর তৃতীয়া কন্যা

একনাথ চিন্তা-মন্থর স্বরে বললেন-তেজপুরের নরোত্তম সিংহ…তাদের বরাবরই জানি, আমাদের সমান ঘর বলা যায়। কিন্তু জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে মামলা-মোকদ্দমায় প্রায় সবই গেছে। (দেওয়ানকে) যতদূর মনে পড়ে ওদের একটা সম্পত্তি আমাদের কাছে বন্ধক আছে, তাই না? (দেওয়ান ঘাড় নাড়লেন) বড়ই দুঃখের কথা, কিন্তু এমন ভাঙনধরা ঘর থেকে সোমনাথের বৌ আনতে পারি না।

দেওয়ান চিঠিখানা সরিয়ে রেখে অন্য চিঠি নিলেন এটি লিখেছেন রায় গোপীকিশোর, ও বি ই, কে সি আই ই।

ইনি কে? নাম তো কখনো শুনিনি।

পাণ্ডে বললেন— খুব বিখ্যাত লোক, দিল্লীর একজন বড় ব্যাংকার। অনেকগুলো কাপড়ের কলের মালিক, প্রচুর টাকা করেছেন।

একনাথ বললেন— তা না হয় হল। কিন্তু বংশ কেমন? বংশের কথা কিছু আছে?

চিঠির ওপর চোখ বুলিয়ে দেওয়ান বললেন— বংশের কথা কিছু দেখছি না। কেবল লিখেছেন মেয়েটি তাঁর একমাত্র সন্তান। জামাইকে চার লক্ষ টাকা যৌতুক দেবেন। মেয়েটি দেখতে খুব সুন্দরী, দরকার হলে ফটো পাঠাবেন।

মুখে বিরক্তিসূচক শব্দ করে একনাথ বললেন— যতসব ভূঁইফোঁড় বড়লোক। টাকা দেখাচ্ছে। বংশগৌরব নেই, বড়ঘরে মেয়ে দিয়ে জাতে উঠতে চায়। উঁহু, বাদ দাও। —পাণ্ডে, দেখছ সমাজ কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে? বনেদী ঘরের লোক যারা তাদের হাতে পয়সা নেই, আর যাদের পয়সা আছে তাদের বংশগৌরব নেই। বিদেশী রাজা রোজ নতুন আইন তৈরি করছে, সাবেক যা কিছু ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। এসব কি ভাল?

পাণ্ডে বললেন কিন্তু বাবুসাহেব, সময় বদলে যাচ্ছে, তার সঙ্গে পা ফেলে চলতে হবে তো। পরিবর্তন না হলে চলবে কেন? ভেবে দেখুন, সেকালে মানুষ গরুর গাড়ি চড়ে দেশ থেকে দেশান্তরে যেত, এখন রেলগাড়ি চড়ে যায়। এটা কি মন্দ?

একনাথ বললেন–না না, এসব তোমার বাজে যুক্তি। রেলগাড়ি চড়ে চড়ুক তাতে কিছু আসে যায় না। কিন্তু সমাজের খুঁটি হল পরিবার বংশ। সেই খুঁটি যদি উপড়ে ফেলে দাও তাহলে কী থাকবে? সব লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে। কিছুক্ষণ ভুরু কুঁচকে বসে থেকে বললেন আমার ছেলে একটা মস্ত ভুল করেছিল, তার ফল সে পেয়েছে। আমি এখন সেই ভুল শোধরাতে চাই। কালির দাগ মুখে ফেলতে হবে।

পাণ্ডে বললেন কিন্তু শুধু বংশই নয়, মানুষের ব্যক্তিগত সত্তাও তো আছে। স্বতন্ত্র সাধ আহ্লাদ, স্বাধীনতা— সবই কি বংশের জন্যে বিসর্জন দিতে হবে? সমাজ বলুন, বংশ বলুন, সবই তো মানুষের জন্যে

কড়া সুরে একনাথ বললেন-না, বংশই হল সমাজের মূল, বংশ নিয়েই সমাজ দাঁড়িয়ে আছে।

দুঃখিতভাবে মাথা নেড়ে পাণ্ডে বললেন—বাবুসাহেব, আপনার এ ধারণা বর্তমান যুগে একেবারে অচল। পৃথিবী দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে, এখন আর কেউ একা বিচ্ছিন্নভাবে থাকতে পারে না। সব মানুষ মিলিয়ে সমাজ, আমরা সবাই যেন এক পরিবারের মানুষ। নিজের বংশমর্যাদার অহংকারে কেউ যদি আলাদা থাকতে চায়, ক্ষতি তারই

একনাথ বললেন— তোমার এসব যুক্তি আমি মানি না। সিংহ চিরদিন সিংহই থাকবে, কখনো শেয়ালের সঙ্গে কুটুম্বিতা করবে না। এই হল আমার কথা। যতদিন বেঁচে থাকব, আমার বাড়িতে এই রেওয়াজ চলবে, অন্য কারুর কথা খাটবে না।

পাণ্ডে বিষণ্ণভাবে মুখ নীচু করে বসে রইলেন। একজন টেলিগ্রাফ পিওন এসে সেলাম করে দাঁড়াল। দেওয়ান প্রশ্ন করলেন—তার আছে?

রসিদ সই করে দেওয়ান তার হাতে নিলেন, একনাথের পানে চাইলেন। একনাথ বললেন— খুলে দেখ, ভাল খবর কি মন্দ খবর।

পিওন বলল–ভাল খবর হুজুর, বকশিশ দিতে হবে।

পাণ্ডে খাম ছিঁড়ে টেলিগ্রাম পড়লেন ভাল খবর। সোমনাথ এম-এ পাস করেছে, ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে।

একনাথের উৎকণ্ঠিত মুখ আনন্দে ভরে উঠল—অ্যা! পাস করেছে! আমি জানতাম পাস করবেই। দেওয়ান, যাও, পিওনকে পঁচিশ টাকা বকশিশ দাও।

পিওন বকশিশের বহর দেখে চোখ গোল করে দাঁড়িয়ে রইল। দেওয়ান পকেট থেকে পঁচিশ টাকার নোট নিয়ে পিওনকে দিলেন। পিওন আভূমি সেলাম করে চলে গেল।

একনাথ টেলিগ্রামের দিকে হাত বাড়িয়ে বললেন—দেখি, দাও।

একনাথ ইংরেজি জানেন না, তবু পরম যত্নে টেলিগ্রামটি চোখের সামনে রেখে তার রসাস্বাদন করলেন। গদগদ স্বরে বললেন–ছেলেটার বুদ্ধি আছে, কি বল?

পাণ্ডে বললেন–সে আর বলতে! কোন্ বংশের ছেলে! ওর বাপও তো এই বয়সে এম-এ পাস করেছিল।

একনাথ একটু থমকে গিয়ে বললেন—হ্যাঁ, তা বটে। সোমনাথ কোথায়? যাই, আমি নিজে গিয়ে তাকে খবরটা শোনাই। তার সঙ্গে বাজি ছিল— মুচকি হাসতে হাসতে একনাথ উঠে ঘরের বাইরে গেলেন।

পাণ্ডে একটা নিশ্বাস ফেলে গম্ভীর মুখে জানলার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন, বাইরে আকাশের দিকে চেয়ে রইলেন। দেওয়ান তাঁর কাছে এসে বললেন— আকাশের পানে চেয়ে কী দেখছেন?

ডাক্তার বললেন–সিঁদূরে মেঘ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *