০৬. যতীন একদিন পুষ্পকে বল্লে

যতীন একদিন পুষ্পকে বল্লে–কত দিন হয়ে গেল এখানে এসেচি বলতে পারিস পুষ্প? এখানে দিনরাত্রির কোনো হিসেব পাইনে।

পুষ্প বল্লে–পৃথিবীর অভ্যেস দূর হতে এখনও তোমার অনেক দিন লাগবে যতুদা। এখানে দিনরাত্রির কোনো দরকার যখন নেই, তখন ঘড়ি দেখা অভ্যেসটা ছেড়ে দাও। সময় যে অফুরন্ত, অনন্ত, যতদিন সেটা অনুভব না করবে, ততদিন মুক্তি হবে না। মনের বদ্ধ, সংকীর্ণ ভাব দূর না হোলে মুক্তি সম্ভব নয়, যতুদা।

–কি ধরনের মুক্তি?

–কি জানি, আমি এ সব বড় বড় কথা জানিনে, তোমায় আবার আমি কি বোঝাবো যতুদা, তুমি কি আমার চেয়ে কম বোঝো?

–বাজে কথা বলে আমায় ভোলাতে চাস নে পুষ্প। আমি অনেক কিছু জানতে চাই, আমাকে শেখানোর ব্যবস্থা করে দিবি? কত কি যে জানতে চাই তার ঠিক নেই। কে আমায় বলে দেবে বল তো!

–আছে, লোক আছে। তোমায় নিয়ে যাবো একদিন সেখানে। খুব উঁচু এক আত্মা আমায় বড় স্নেহ করেন। আমার স্তরে আসতে তাঁর কষ্ট হয়। তাই আমিই যাই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। তুমি যাবে। একদিন? আমি গুরুদেব বলি তাকে। বৈষ্ণব সাধু।

-কিন্তু আমি সে সব উচ্চস্তরে কি করে যাবো পুষ্প? মোটে সেদিন পৃথিবী থেকে এসেচি–তোমার দয়ায় তাই এত উঁচু স্তরে আছি, এর চেয়েও উঁচুতে কি ভাবে যাবো?

–যাওয়া ঠিক কঠিন নয়, কিন্তু থাকতে পারবে না বেশিক্ষণ। যাতে যেতে পারো তার ব্যবস্থা আমি করবো।

–আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি পুষ্প, আমার এখনও একটা সন্দেহ হয়, এ সব স্বপ্ন নয় তো?

–যাও, পাগলামি কোরো না যতুদা। তোমার একথার উত্তর অন্তত একশো বার না দিয়েছি তুমি আসা পর্যন্ত? দেখবে আর একটা জিনিস, দেখাবো? অবিশ্যি তোমায় সেখানে আজ যেতেই হবে।

–কি সেটা?

–আজ তোমার শ্রাদ্ধের দিন। তোমার ছেলে নিনু কাছা গলায় দিয়ে। শ্রাদ্ধ করচে। পিণ্ডদানের সময় তোমায় গিয়ে হাত পেতে পিন্ড নিতে হবে।

ছেলের কথা শুনে যতীন অন্যমনস্ক ও বিষণ্ণ হয়ে গেল। নিনু, আহা দুধের বালক, তাকে কাছা গলায় দিয়ে শ্রাদ্ধ করতে হচ্চে!…সে যে বড় করুণ দৃশ্য!

যতীন বল্লে–আমি যাবো না সেখানে।

পুষ্প হেসে বল্লে–ঐ যে বলছিলাম, তুমি এ জগতের ব্যাপার কিছুই জানো না। সে ছেলেমানুষ, যখন কচি হাতে ছলছল চোখে তোমার নামে পিণ্ড দেবে, সে এমনি আকর্ষণ তোমাকে টেনে নিয়ে যাবে। তোমার সাধ্য কি তুমি না গিয়ে থাকো? খুব ভালবেসে যে টানবে, তার টান এ জগতে এড়ানো যায় না! পৃথিবীর স্থূল দেহে স্কুল মন বাস করে–এখানে তা নয়। এখানে মন আপনা-আপনি বুঝতে পারবে কোটা সত্যিকার ভালবাসা, বুঝে সেখানে যাবে। আচ্ছা তুমি ব’সো, আমি একবার দেখে আসি ওদিকে কি হচ্চে।

পৃথিবীর হিসাবে মিনিট-দুই সময়ও তারপর চলে যায়নি, পুষ্প হঠাৎ কোথায় চলে গেল এবং ফিরে এসে বল্লেওখানে এখন সকাল সাতটা। শ্রাদ্ধের আয়োজন শুরু হয়েছে। নি কিন্তু এখনও ঘুম থেকে ওঠেনি। যতীনের আগ্রহ হোল জিজ্ঞেস করে–আশা কি করচে। সে ভয়ানক ব্যাকুল হয়েচে আশার খবর জানবার জন্যে। কত দিন খবর পায়নি। আশা কেঁদেছিল, চোখের জল ফেলেছিল তার মৃত্যুসংবাদে?

জানবার জন্যে সে মরে যাচ্ছে, কিন্তু লজ্জা করে পুষ্পকে এসব কথা বলতে। যতীন বুড়োশিবতলার ঘাটের রানায় চুপ করে বসে রইল। সামনে কুলু-কুলু-বাহিনী গঙ্গা, নীল আকাশের তলা দিয়ে একদল পাখী উড়ে এপার থেকে ওপারে যাচ্চে। ঘাটের ওপরে বৃদ্ধবটের শাখার নিবিড় আশ্রয়ে একটা অজানা গায়ক-পাখী অতি মধুর স্বরে ডাকছে। যতীনের মন আজ অত্যন্ত বিষণ্ণ। আশা খুব কেঁদেছিল? আশাকে সে বড় নিঃসহায় অবস্থায় ফেলে রেখে এসেচে-স্বামীর কর্তব্য স্ত্রীপুত্রকে সুখে রাখা, তার অভাবে তারা কষ্ট না পায় তার ব্যবস্থা করা। সে। অকর্মণ্য স্বামী; নিজের কর্তব্য পালন করার শক্তি তার ছিল না। আশাকে সে সুখী করতে পারেনি একদিনও।

পুষ্প এসে বল্লে–বৌদিদির কথা ভেবে যে সারা হোলে, যতুদা!

তারপর সস্নেহে ওর পাশে এসে দাঁড়িয়ে বল্লে–চল তোমাকে এক জায়গায় নিয়ে যাই। বৌদিদির কাছে নিয়ে যেতাম–কিন্তু পৃথিবীর সঙ্গে বেশি যোগাযোগ এখন তোমার পক্ষে ভাল নয়। তা ছাড়া তুমি তার কোনো উপকারও করতে পারবে না এ অবস্থায়।

–কোথায় নিয়ে যাবি পুষ্প?

–অনেক উঁচু এক স্বর্গে। নতুন এসেচো পৃথিবী থেকে, তোমরা বুঝতে পারবে না। মনে করলেই সেখানে যাওয়া যায় না। তোমার যাওয়া সম্ভব হবে শুধু আমি নিয়ে যাবো বলে। তুমি কিন্তু পৃথিবী সম্বন্ধে সকল রকম চিন্তা মন থেকে তাড়াও।

–তা আমি পারবো না পুষ্প। তোর বৌদি বড় অভাগিনী, তার কথা ভুলতে পারবো না।

–দয়া বা সহানুভূতি তোমায় নামাবে না, ওপরে ওঠাবে। তাই ভেবো যতুদা, কিন্তু সাবধান, বিষয়-সম্পত্তির কথা যেন ভেবো না– ত্রিশঙ্কুর অবস্থা হবে। এসো আমার সঙ্গে।

দুজনে শূন্যপথে নীলাভ শূন্য-সমুদ্রের বুকের ওপর দিয়ে উড়ে চললো। ডাইনে বায়ে অগণিত তারালোকে, মৃদু, নক্ষত্রজ্যোৎস্নায় ভাসানো জীবনপুলক ওদের মুক্ত দেহে এনেচে শিহরণ, প্রাণে মুক্তির আনন্দ–দূর…দূর…বহুদূর তারা চললো কত নতুন অজানা দেবলোক…

ক্রমে আর একটা নতুন লোকের ওরা সমীপবর্তী হতে লাগলো..দূর থেকে তার সৌন্দর্য্যে যতীনের সমস্ত জৈবিক চেতনা অবশ হয়ে এল বিলুপ্তপ্রায় চেতনার মধ্যে দিয়ে তার মনে হোল বহু কদম্বদ্রুম যেন। কোথায় মুকুলিত, লতানিকর বিকশিত, জ্যোৎস্নাপ্লাবিত গিরিগ্রামে বহু বিহগকণ্ঠের কাকলী, প্রেম…স্নেহ…সুগভীর স্নেহের নিঃস্বার্থ আত্মবলি… আরও কত কি…কত কি…সে সবের স্পষ্ট ধারণা ওর নেই…ওর চেতনা রইল না…পুষ্প বিব্রত হয়ে পড়লো–যতীন অতি উচ্চ স্তরে যে সচেতন থাকবে না, পুষ্পের এ ভয় হয়েছিল, তবুও তার আশা ছিল চেষ্টা করলে নিয়ে যাওয়া কি এতই অসম্ভব…একবার সে দেখবে।

না, যতীন সংজ্ঞা হারিয়ে ফেললে। যতীনের দেহটাকে নিয়ে যাওয়া। যায়, কিন্তু ওর মন থাকবে নিদ্রিত। কিছুই দেখবে না, জানবে না, শুনবে না। নিয়ে গিয়ে লাভ কি?

পুষ্প ডাকতে লাগলো–ও যতুদা…চেয়ে থাকো, কোথায় যাচ্চ ভেবে দেখো…আমি পুষ্প, ও যতুদা…চোখ চাও…

নিকটেই একটা বেগুনি রঙের শৈলশৃঙ্গ…বন্য লতাপাতার আড়ালে একটা শিলাখণ্ডে যতীনকে সে শোওয়ালে। সংজ্ঞা হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যতীনের গতি বন্ধ হয়ে গিয়েছে..নিকটের ঝরণা থেকে জল এনে ওর মুখে দিয়ে পুষ্প আঁচল দিয়ে ওকে বাতাস করতে লাগলো। পরে নিজের দেহের চৌম্বক শক্তি আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে ওর দেহে সঞ্চালিত করতে লাগলো।

এমন সময়ে পুষ্পের দৃষ্টি হঠাৎ আকৃষ্ট হলো ওই উচ্চ শিখরটার প্রান্তদেশে। সেখানে পরম সুন্দর এক তরুণ দেবতা বহুদূরে মহাশূন্যে। দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বসে আছেন আনমনে। কোনো দিকে তাঁর খেয়াল নেই, কি যেন ভাবছেন। তাঁর অঙ্গের নীলাভ জ্যোতি দেখে বহুদিনের অভিজ্ঞতার ফলে পুষ্প বুঝলে এ অতি উচ্চ শ্রেণীর আত্মা, দেবতা গোত্রে চলে গিয়েচেন–মানুষের কোনো পর্যায়ে ইনি এখন আর পড়েন না।

পুষ্প জানতো এ জগতে যে যত পবিত্র, উচ্চ, সে দেখতে তত রূপবান, তত তরুণ। তারুণ্যে এখানে নির্ভর করে না জন্মের তারিখের দূরত্ব বা নিকটত্বের ওপরে। এখানে দেহের নবীনতা ও সৌন্দর্য্য একমাত্র নির্ভর করে আধ্যাত্মিক প্রগতির ওপরে। এঁর রূপ ও নবীনতা পৃথিবীর হিসেবে যোতলা-সতর বছরের অতি রূপবান কিশোর বালকের। মত–অত্যন্ত উচ্চ স্তরের দেবতা ভিন্ন এ রকম হয় না।

দেবতার ধ্যানভঙ্গ করতে পুষ্পের সাহস হোল না। সে এত উঁচু আত্মা কখনও দেখেনি। কি করবে ভাবছে, এমন সময় দেবতার অন্যমনস্ক চক্ষু অল্পক্ষণের জন্যে ওদের দিকে পড়লো। পরক্ষণেই তিনি অতীব জ্যোতিষ্মন দুটি চোখ দিয়ে ভাল করে চেয়ে দেখলেন। একটু বিস্ময়ের সুরে বল্লেন, কে তোমরা?

পুষ্প প্রণাম করে বল্লে–সবই তো বুঝচেন, দেব।

এইবার যেন দেবতার অন্যমনস্ক একাগ্রতা কিছু ভগ্ন হোল–বর্তমান সম্বন্ধে তিনি সচেতন হয়ে উঠলেন। বল্লেন–কি বলো তো? আমার যোগ নেই এ স্তরের সঙ্গে। বুঝতে পারবো না।

পুষ্প নিজেদের পরিচয় দিয়ে তার গন্তব্যস্থানের কথা ও যতীনের অবস্থা সব বললে।

আত্মা বল্লেন–ওকে যেখানে এনে ফেলেচ, এখানেও তো ওর চৈতন্য হবে না–ওর পক্ষে এও তো অতি উচ্চ স্থান; নিচে নামিয়ে নিয়ে যাও ওকে।

পুষ্প বল্লে–আপনি কে বলুন দেবতা, আমার কত শুভদিন আজ, আপনাকে দেখলাম। এতকাল তো আছি এ জগতে, আপনার মত। আত্মা কখনও দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি। আপনি কে দেব?

আত্মা অতি মধুর প্রসন্ন হাসি হেসে বলেন–তুমি অত জানতে চাও। কেন? তুমি ভারতবর্ষের কন্যা, ভক্তি তোমার জন্মগত। বিশ্বাস কর, এই মাত্র। তুমিও খুব উচ্চস্তরের আত্মা, নইলে আমায় দেখতে পেতে না। তোমার সঙ্গীকে যদি আমি জাগিয়েও দিই, ও আমায় দেখতে পাবে না। যাও ওকে নামিয়ে নিয়ে যাও।

তবু পুষ্প সাহসে নির্ভর করে বল্লে–আপনি কে দেব? পাহাড়ের চুড়োতে বসে ছিলেন কেন? এ স্তর তো আপনার নয়।

কথাটা শেষ করেই পুষ্প বুঝলে আত্মা তখনই বড় হয়, যখন। প্রেমে সে বড় হয়। সামান্য পৃথিবীর মেয়ের এই প্রগল্‌ভ কথায় আত্মা চটে তো গেলেনই না, কৌতুকমিশ্রিত গভীর স্নেহে তাঁর সুশ্রী বিশাল জ্যোতির্ময় চোখ দুটি স্নিগ্ধ হয়ে এল। বল্লেন–দেখবে কি দেখছিলাম? এসো এখানে। তোমায় দেখাবো, তুমি তার উপযুক্ত হয়েচো।

পুষ্প আগ্রহের সঙ্গে এগিয়ে গেল। আত্মা শৈলশৃঙ্গের প্রান্তসীমার দিকে দাঁড় করিয়ে হাত দিয়ে ওকে স্পর্শ করে বল্লেন–দেখচ?

পুষ্পের সারাদেহ শিউরে উঠলো। সামনে এ এক অন্য পৃথিবী, বিশাল জলাভূমিতে বড় বড় অতিকায় জীবজন্তু কর্দমে ওলট-পালট খাচ্ছে–গাছপালার একটিও পরিচিত নয়। বাতাসে অস্বাচ্ছন্দ্যকর গরম জলীয় বাষ্প–সূর্যের তেজ অতিশয় প্রখর…তারপর ছবির পর ছবি… কত দেশ, কত যুদ্ধ, কত সৈন্যদল…কত প্রাচীন দেশের বেশভূষা পরা লোকজন প্রশস্ত রাজপথ, প্রাচীন দিনের শহর…পচা ডোবা খানা শহরের রাজপথের পাশেই… ঘোর মহামারীতে দলে দলে লোক মরচে, কী বীভৎস দৃশ্য!

আত্মা বল্লেন–বহু দূর অতীতে ফিরে চাইছিলাম। কত কল্প আগেকার আমারই বহু পূৰ্ব্ব জন্মে। কত লোককে হারিয়েচি, কত মধুর হৃদয়–আর কখনো খুঁজে পাইনি। বিশ্বের দূর প্রান্তের মোহনায় বসে তাদের কথা মনে পড়েছিল। যা দেখলে, সব আমার জীবনের। বিভিন্ন অঙ্কের রঙ্গভূমি। লক্ষ্মী মেয়েটি, এখন তোমার সঙ্গী ছেলেটিকে নিয়ে নেমে যাও।

পুষ্প তাঁকে প্রণাম করে বিনীত ভাবে বল্লে–আপনার দেখা আবার কবে পাবো?

–যখন স্মরণ করবে! একমনে স্মরণ করলেই আসবো–কিন্তু যখন তখন আমায় কষ্ট দিও না। আমার নানা কাজ, কোথায় কখন। থাকি। কল্প-পৰ্ব্বতে সঙ্গীত যেদিন বাজবে, চুম্বকের ঢেউ কম থাকবে, সেদিন আমায় ডেকো।

কল্প-পৰ্ব্বতের সঙ্গীত কি, পুষ্প তা জানতো। চতুর্থ স্তরে একটি সুনির্জন পাহাড়ে বহু শতাব্দী ধরে এক নির্দিষ্ট সময়ে আপনা-আপনি। অতি মধুর অপার্থিব সঙ্গীতধ্বনি ওঠে। কত কাল পূৰ্ব্বে জনৈক পবিত্র আত্মা ঐ স্থানটিতে বসে নূতন সুর সৃষ্টি করতেন–কোনো বড় সুরশিল্পী হবেন। ওপরের স্বর্গে উঠে গিয়েচেন বহুঁকাল, কেউ তাঁকে এখন। আর দেখে না–কিন্তু সেই নির্দিষ্ট সময়ে এখনও তাঁর সৃষ্ট সুরপুঞ্জে স্বর্গমণ্ডলের অজ্ঞাত কোণটি ছেয়ে যায়।

দেবতা বিদায় নিলেন–বহুদূরব্যাপী নভোমণ্ডল জ্যোতির্ময় হয়ে উঠলো তাঁর দেহজ্যোতিতে। তিনি অদৃশ্য হয়ে যাবার পরেও যেন। খানিকক্ষণ আকাশটা আলো হয়ে রইল।

পুষ্প অবাক হয়ে সেদিকে চেয়ে রইল। এত বড় দেবতা এতদিন এখানে থেকেও কখনো সে দেখেনি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *