১৯. সরাইখানার প্রবেশ-পথ

বগ্‌গাদের এই সরাইখানার প্রবেশ-পথ খুবই সঙ্কীর্ণ। মালিক একটা ছোট গালিচার উপর উপবিষ্ট। পিছনে মোটা গের্দা। সামনে রূপার নল-সংযুক্ত হুক্কা। আনমনা ধূমপান করছিল সে।

কিন্তু এই প্রবেশ-পথ পার হয়ে গেলেই সরায়ের আসল চেহারা দেখা যায়। স্তিমিত আলোয় বিরাট হলের মধ্যে নৈশ-বিলাসীরা বসে আছে। কেউ নিঃসঙ্গ। কেউ দল-বাধা। এখানে কফি-শরাবের মজ্‌লিশ গুজার। কল-গুঞ্জনের বিভিন্ন গ্রাম সমস্ত কক্ষে নিনাদিত। মৃদু ফিসফিসানি থেকে হাহ্ হা– হৈহো রব, সবই এই জায়গায় সাজে। কোনায় কোনায় নর্তকীদের নাচ, মাঝে মাঝে ঘুঙুর ও তাম্বুরীণের আওয়াজের সঙ্গে হঠাৎ ঢেউ তুলে যায়; তা আছড়ে পড়ে নানা বিভঙ্গে। কেউ শুধু তাকিয়ে দেখে আবার জামে ঠোঁট নামায়, কেউ তালি-সংযোগে চীঙ্কার দিয়ে ওঠে, “মারহাবা, মারহাবা।” যেন কেয়ামৎ হঠাৎ দেখা দিয়ে ত্রস্ত পালিয়ে গেল। পৃথিবী আবার আনন্দে নির্বিবাদ।

অন্যান্য দিনের মত আজও সরাইখানা এতক্ষণ গুজার ছিল। তারপর আওয়াজের তোড় কমে গেছে। কিন্তু কথার সোড় থামছে না। অবিশ্যি লয় মৃদু, খাদ-অভিমুখী।

সরাইখানার মাঝখানে একটি পাথুরে-মাটির ছোট উঁচু চবুতরা। তার উপর এতক্ষণ কয়েক জন বসে বসে কফি পান করছিল। এক জন হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠলঃ সাবাস, আবু নওয়াস, সাবাস।

তারপর সমস্ত সরাইখানায় ওই একই নাম ঘুরে ঘুরে আসে। আবু নওয়াস। আবু–আবু নওয়াস। আবু নওয়াসের কি হবে?

নতুন কয়েকজন আগন্তুক এসে পড়ল। সরাইয়ের গুহায়। হয়ত এই স্তিমিত ভাবের জন্য তারা প্রস্তুত ছিল না। সরাইখানায় কি কেউ আসে গৃহোচিত নীরবতা উপভোগে? সকলের তরঙ্গে গা ঢেলে সবাই স্নানার্থী এইখানে। ম্রিয়মাণতা এখানে নিষিদ্ধ, পাপ।

আগন্তুক একজন সরাইয়ের মাঝামাঝি এসে চিৎকার দিয়ে উঠল : গোটা বগ্‌দাদ কি আজ মৃত না কোন কেয়ামত খবর পাওয়া গেছে–যার জন্যে সরাইখানা আজ ঠাণ্ডা গোরস্থান?

চারিদিক থেকে চোখ এই চ্যালেঞ্জ-দাতার উপর পড়ল।

প্রথমে অনেকে প্রশ্নটা বুঝতে পারে না। উত্তর-প্রার্থীর উদ্দেশ্য কি? কি জবাব চায় সে?

আবার শোনা গেল কর্কশ কণ্ঠস্বর, “বগ্‌দাদ কি মৃত না কেয়ামতের প্রতীক্ষার্থী?”

এইবার কয়েকজন কফির পেয়ালা ঠোঁট থেকে নামিয়ে নওজোয়ানের দিকে তাকায়। বিরক্ত হয় অনেকে। সরাইয়ের হাওয়া যেন এই তরুণ আগন্তুক বিষিয়ে দিচ্ছে।

পশ্চিম কোনা থেকে আর এক যুবক দাঁড়িয়ে জবাব দিলে, “আপনি অন্ততঃ বসে পড়ে প্রমাণ দিন যে, আপনি মরেন নি”

–কিন্তু বগ্‌দাদ মরে গেছে।

–না।

–তবে এই সুম্‌সাম ভাব কেন?

–বগ্‌দাদ তার যৌবনের উৎসব পালন করছে। বগ্‌দাদের নওরোজ আজ।

–নওয়োজ কি এইভাবে পালিত হয়? গোরস্থানের স্তব্ধতায়?

–বগ্‌দাদ মরে গিয়েছিল। আজ বগ্‌দাদ বেঁচে উঠেছে। তাই আমার হুল্লোড়ে মেতে তার পবিত্রতা নষ্ট করতে রাজি নই। আপনার ভাল না লাগে অন্য সরাই দেখুন। বাদে তার অভাব নেই।

–আমি যে কিছুই বুঝতে পারছি নে।

–বগ্‌দাদ দুনিয়ার শয়তানদের কাছে একটা ধাঁধা। আর তুমি এত সহজে বুঝে ফেলবে, নওজোয়ান?

–মেহেরবানী করুন, আপনাদের এই প্রহেলিকা আর সহ্য করতে পারছি নে।

–আজ বগ্‌দাদ বেঁচে উঠেছে।

–কবে তার মৃত্যু হয়েছিল?

–তার খোঁজ পান নি, টের পান নি?

–ব্যাপার কি, ভাই?

–আজ বগ্‌দাদ বেঁচে উঠেছে। আপনি তো জানেন, বুসায়না খুনের ইনসাফ হচ্ছিল আজ আমিরুল মুমেনীনের দরবারে। আমির-ওমরাহ-কাজী সবাই বললে, হাব্‌সী তাতারী এই খুন করেছে। খুন কা বলা খুন। গর্দান নেওয়া হোক হাব্‌সীর।

তখন সরাইয়ের আর এক কোনায় অন্য দুই নওজোয়ান চিৎকার দিয়ে উঠল, “থামুন–থামুন।” তাদের প্রসারিত করতালু আর আঙুলের দিকে সকলের দৃষ্টি আবার ধাবিত হয়।

“থামুন, থামুন”,রবে দুইজনে এগিয়ে এলো, দুই নওজোয়ান। তারপর তারা বললে, “আজ আমরা দুইজনে দরবারে ছিলাম। সব কথাই মনে আছে। আমাদের একজনকে খলিফা আর একজনকে নওয়াস মনে করলেই আপনারা গোটা দরবার চোখের সামনে দেখতে পাবেন।”

“বেসক-নিশ্চয়-নিশ্চয়,” সমর্থনের রব উঠল চারিদিক থেকে। “এতক্ষণ তো শুনছিলাম, এবার চোখেও দেখতে পাব।” জনান্তিকে একজন প্রস্তাব করলে, “চত্বরটা ছেড়ে দিন। ওখানে খলিফা বসুন। আর নওয়াস নিচে দাঁড়াক। সকলের দেখতে সুবিধা হবে।”

–নিশ্চয়, নিশ্চয়।

প্রস্তাব-মত মঞ্চ সজ্জিত হতে আর বেশি বিলম্ব ঘটে না। তারপরই সরাই দরবারে পরিণত হয়। আগন্তুক দুইজন তখন অভিনেতা।

.

নওয়াস : জাঁহাপনা—

আমিরুল : কি নওয়াস?

নওয়াস : জাঁহাপনা, বান্দার গোস্তাখি মাফ করবেন। বুসায়না-হত্যার বিচার আমি এতক্ষণ নিজের চোখে দেখলাম। কিন্তু এতে খুনের কোন প্রমাণ হয় না।

আমিরুল : প্রমাণ হয় না?

নওয়াস : না। এক জনের জান্ ‘হালাক’ (ধ্বংস) করার আগে সমস্ত নিখুঁত প্রমাণ পাওয়া উচিত। কারণ, আমরা কেউ জানের মালিক নই। প্রাণ-ধ্বংস সহজ, সৃষ্টি অনেক কঠিন কাজ।

আমিরুল : তুমি কি বলতে চাও?

নওয়াস : এই বিচার ভুল, আলম্পানা।

আমিরুল : কেন ভুল?

নওয়াস : প্রমাণ নেই। কেউ চোখে দেখে নি।

আমিরুল : সব সময় চোখে দেখার প্রয়োজন হয় না। সাক্ষীসাবুদ এবং ঘটনা থেকেই আন্দাজ করা যায়।

নওয়াস : বিচারের ক্ষেত্রে আন্দাজের কোন জায়গা নেই।

আমিরুল : বুসায়না কি আমাখা মারা গেল?

নওয়াস : খামাখা না, আলম্পানা। কিন্তু হাব্‌সী জওয়ান তাকে খুন করে নি। আর এতো খোদ্‌কসী–আত্মহত্যার ব্যাপার।

আমিরুল : কিন্তু গোলাম নিজের সাফায়ে একটা কথা পর্যন্ত বললে না, মুখ খুললে না। তা কি অভিযোগ স্বীকার নয়?

নওয়াস : না জাঁহাপনা। আর স্বীকার করলেও ক্ষেত্র অনুযায়ী অনেক সময় খুন স্বীকারকারীর উপর বর্তায় না। বেটার হত্যাপরাধ অনেক সময় কি পিতা নিজের কাঁধে তুলে নেয় না?

আমিরুল : কিন্তু এই গোলাম সব কিছু করতে পারে।

নওয়াস : না, জিল্লুল্লাহ। ও কালো গোলাম কালো পাথর। স্তব্ধ। কালো পাথর কোনদিন নকল হয় না। সাদা আর ঝলমলে পাথরই সহজে নকল করা যায়।

আমিরুল : আবু নওয়াস, তুমি কি বলতে চাও, আমার বিচার ভুল?

নওয়াস : হ্যাঁ, আলম্পানা।

আমিরুল : ভুল? আবু নওয়াস, তোমার জিভ সামলাও।

নওয়াস : জাঁহাপনা, ভুলকে ভুল বলা কবিদের ধর্ম। আমরা শুধু সুন্দরের পূজারী-ই নই।

আমিরুল : আমি ভুল বিচার করি?

নওয়াস : জিল্লুল্লাহ, ইনসান ভুল করে বসে বৈকি। আমরা জানি, আমিরুল মুমেনীন ফেরেশতা নন।

আমিরুল : নওয়াস, চুপ–চুপ! তোমার বেয়াদবি আমি ক্ষমা করব না।

নওয়াস : জাঁহাপনা, আলহাক্কো মোর্‌রুন–সত্য তিক্ত পদার্থ, তা আপনি জানেন।

আমিরুল : আবু নওয়াস, তুমি হদ্‌ ছাড়িয়ে যাচ্ছ। আমার কাজী-আমির-ওমরা–এত লোক, যারা প্রতিদিন বিচার করে তারা ত বিচারে কোন ভুল দেখল না।

নওয়াস : জাঁহাপনা, তারা যখন অপনার চোখ দিয়েই দেখে, তখন নিজেদের চোখ ব্যবহার করে না। আর যখন নিজেদের চোখও দেখার কাজে লাগায়, তখন আপনার চোখের ঝিলিক তারা আগেই দেখে নেয়।

আমিরুল : উপস্থিত এত শরীফ মানুষদের তুমি বেইজ্জৎ করছ, আবু নওয়াস।

নওয়াস : না জাঁহাপনা। নওয়াস মদ্যপ। মাতালেরা দুনিয়ার কারো উপর শক্রতা করে না–এক নিজের উপর ছাড়া। কাউকে বেইজ্জৎ করা আমার খলতের বাইরে।

আমিরুল : অর্থাৎ আমার ইন্সাফ ভুল।

নওয়াস : হাঁ, আলম্পানা।

আমিরুল : খামুস্‌, নওয়াস। তোমার বুকের পাটা আল্লার জমিন ছাপিয়ে যাচ্ছে। বেয়াদব ইনসানকে আমি মাফ করি না। তোমাকেও মাফ করব না। শুধু এক শর্তে, তুমি ক্ষমা পেতে পারো–এই উপস্থিত শরীফ ব্যক্তিদের কাছে যদি মাফ চাও। নচেৎ–

নওয়াস : নওয়াস আপনার দরবারে কোন গুনা করে নি, জাঁহাপনা।

আমিরুল : তুমি মাফ চাও।

নওয়াস : বেকসুর নিরপরাধ কিভাবে ক্ষমা চাইবে?

আমিরুল : মাফ চাও।

নওয়াস : আপনি আমাকে এই কাজ থেকে মাফ করুন।

আমিরুল : নওয়াস, তুমি বেয়াদব নও শুধু। না-ফরমান। গোলামের সঙ্গে তোমারও গর্দান ধূলায় লুটিয়ে পড়ুক–। মশ্‌রুর–

নওয়াস : জাঁহাপনা, আপনার যা মরজী। কিন্তু জাঁহাপনা মনে রাখবেন, আপনার সাধের বগ্‌দাদকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আজ আমি আমার গর্দান বাড়িয়ে দিলাম কারণ এই বহূদাদকে আমি ভালবাসি, আমার জন্মভূমি বগ্‌দাদ। ভবিষ্যতের একটি মানুষ অন্ততঃ বলবে, বগ্‌দাদ অবিচারের কাছে মাথা নোয়ায় নি। জাঁহাপনা—

আমিরুল : মশ্‌রুর একে আজ কয়েদখানায় রাখো, কাল দরবারে আবার নতুন বিচার হবে এই না-ফরমান, অবাধ্য কবির।

নওয়াস : জাঁহাপনা, একটা কথা বলবার দাবি জানাচ্ছি। বগ্‌দাদকে আপনি যেমন ভালবাসেন, তেমনি আমিও ভালবাসি। কিন্তু আপনার বগ্‌দাদের কোন ঐশ্বর্যই টিকবে না। টিকে থাকবে শুধু বগ্‌দাদের বিবেক এবং বিবেক-সাধনা। ও কেউ ধ্বংস করতে পারে না। ধ্বংসস্তৃপের নিচে পড়ে থাকলেও ওর কণ্ঠধ্বনি অনাগত মানুষ শুনবে–তারা বগ্‌দাদকে বাঁচিয়ে তুলবে। তাই আজ অবিচারের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ালুম। যে-বীজ আপনি রোপণ করেছেন, তাই একদিন বগ্‌দাদকে গ্রাস করবে। তাই আবু নওয়াস আজ বন্ধ সাজল। নিজের হাতে নিজের গর্দানকে গেন্দুয়ার মত ছুঁড়ে ফেলে দিলে যেন বগ্‌দাদের বিবেক আবার চীৎকার দিয়ে উঠতে পারে, “আমি কবি, চিরন্তনের কণ্ঠস্বর! মরুরের তলওয়ার, আমিরুল মুমেনীনের ভ্রূকুটি-দণ্ড কবির হলকুমের (গ্রীবা) নিকটে পৌঁছাতে পারেনা। বগ্‌দাদের প্রেম আমাকে বানিয়েছে কবি, বগ্‌দাদের প্রেম আমাকে করে তোলে শহীদ। কবিরা নিত্যকার শহীদ–কারণ, জীবনকে সব সময় তারা পিছনে ফেলে চলে। জীবন থেকে জীবনান্তর। কবিরা তাই মাত্র একটি বার পুনরুজ্জীবনের স্বর্গলোভী শহীদ নয়। তারা বাঁচে, আবার শহীদ হয়; শহীদ হয়, আবার বেঁচে ওঠে। জীবন-মৃত্যুর সাময়িক ফারাকে তাই তারা বিহ্বল হয় না, শঙ্কাত্রাসে ধূলায় লুটিয়ে পড়ে না। কবিমাত্রই রক্তবীজ, বিবেকের নিষ্কাম সাধক। চলো মশ্‌রুর। নিয়ে চলো। তোমার তলওয়ারের ধার এতদিন কোন মানুষ স্পর্শ করে নি। এবার অন্ততঃ সে কলঙ্ক থেকে রেহাই পাবে। আদাব, আমিরুল মুমেনীন।”

“আরো বলোম, মশ্‌রুরের সঙ্গে যেতে যেতে”–হঠাৎ সরাইখানার আর এক কোনায়। দেখা গেল, এতক্ষণ ভিড়ে দণ্ডায়মান এক ব্যক্তি প্রথম বক্তার বাক্য সমাপ্তি-মাত্র কথা। বলতে বলতে অগ্রসর হচ্ছে। ভিড় ঠেলে এগোয় সে। মুখে কথা, “বলোম, বগ্‌দাদের নর-নারীর কান্নায় আমি কাঁদি, তাদের আনন্দে আমি হাসি–তারাই আমার শ্রেষ্ঠ সান্ত্বনা, শ্রেষ্ঠ অবলম্বন। তারাই আমার কবিত্বকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তাদের জীবনযাত্রার ধারাই আমার রসের উৎস। মশ্‌রুর আমার কোন দুঃখ নেই। বগ্‌দাদের বাসিন্দা আমার ভীরু বুকে সাহস যোগায়। তাদের কথা আমার ঘুমন্ত কথাকে জাগিয়ে তোলে। তাই মৃত্যুতে আমার দুঃখ নেই। কারণ, বগ্‌দাদের বন্ধুগণ–।”

বক্তা ততক্ষণে অভিনেতা-নওয়াসের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।

সকলে আনন্দে চীঙ্কার দিয়ে ওঠে, “আবু নওয়াস, আবু নওয়াস।”

“বগ্‌দাদের বন্ধুগণ, তোমাদের ভালবাসায়, তোমাদের কবি আবার তোমাদের মাঝখানে ফিরে এসেছে। আমিরুল মুমেনীন পরে নিভৃতে মশ্‌রুরকে আমার সামনে বললেন, “একজন নিরীহ কবিকে খুন করে–বগ্‌দাদবাসীদের আমি কি জবাব দেব? তাই বন্ধুগণ, তোমাদের নিকট, তোমাদের নিঃশ্বাসের উত্তাপে চাঙ্গা আবু নওয়াস এইখানে দাঁড়িয়ে আছে। মৃত্যুর পর ফেরেশতা যদি জিজ্ঞেস করে, তুমি বগ্‌দাদে না বেহেশতে যেতে চাও? আমি জবাব দেব, বগ্‌দাদে।”

“আহ্‌লান সাহলান ইয়া আবু নওয়াস, স্বাগতম, হে আবু নওয়াস”। চারিদিক থেকে রব ওঠে।

“কিন্তু, বন্ধুগণ, সরাইখানা নীরব কেন? জল্লাদের হাতে যদি আমার গর্দান যেতো, তোমরা কি সরাইখানা জমিয়ে তুলতে না? একটি মানুষের মৃত্যু এভাবে দেখা উচিত নয়। আমি ত জীবনের কবি। তোমাদের স্তব্ধ দেখলেই আমার আত্মা বিষণ্ণ হয়ে পড়ত। আকাশের কোন নক্ষত্র খসে গেলে কি অন্যান্য তারা নিজের কর্তব্য ভুলে যায়? রবং সেই শূন্য জায়গা পূরণে এগিয়ে আসে নব উজ্জ্বলতায়।–এসো, সরাইখানা আমরা আজ ভর-পেয়ালা করে তুলি। নতুন গজল শোনাব আমি। আনন্দ কর বগ্‌দাদবাসী। মওজ-তরঙ্গ তোলো অঙ্গ-সমুদ্রে, চিত্ত অরণ্যে, রুবাব পান্থপঞ্চমে–

সুরে, সুরায়, নৃত্য চঞ্চলতায়, স্বর-মুক্তির স্বচ্ছন্দতায় সরাইখানায় আবার বন্যা ডাকল।

উচ্চ চত্বরে উপবিষ্ট নওয়াস।

আনন্দস্রোত নানা দিক থেকে ওই খানে আছড়ে পড়ছে।

নওয়াসের সম্মুখে পানপাত্র।

কিন্তু তার দুই চোখ বিবাগী। এই প্রাণ-প্রবাহে কি যেন বার বার খুঁজতে লাগল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *