১৭. আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা

আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা
সতরই অধ্যায়

১. ময়মনসিংহে সংগঠন

১৯৫০ সালের এপ্রিল মাসে আমি কলিকাতা ছাড়িয়া নিজ জিলা ময়মনসিংহে আসি। বেশ কিছুদিন ধরিয়া দুরন্ত আমাশয়ে ভুগিতেছিলাম। শরীরটা খুবই খারাপ যাইতেছিল। নিজের জন্মভূমি হইলেও মোহাজের। কাজেই রোজগারের জন্যই ওকালতিতে মনোযোগ দেওয়া দরকার। এ অবস্থায় স্থির করিয়াছিলাম সক্রিয় রাজনীতি হইতে কিছুদিন দূরে থাকিয়া অখণ্ড মনোযোগে ওকালতি করিব। রুও করিয়াছিলাম সেইভাবেই। কিন্তু কপাল-দোষে তা হইয়া উঠিল না। ঢেকি স্বর্গে গেলেও বাড়া বানে। আমার হইল তাই। মওলানা ভাসানী ও শহীদ সাহেব কয়েক দিনের মধ্যেই ময়মনসিংহে আসিয়া আওয়ামী লীগ সংগঠন কমিটি করিলেন। আমাকে তার সভাপতিত্বের দায়িত্ব গছাইলেন। বগা ফাঁদে পড়িল।

আওয়ামী লীগ বা যে-কোন সরকার-বিরোধী (অপযিশন) দল গঠন করা তৎকালে সহজ ছিল না। তার কারণ গণ-মন অপযিশন দলের জন্য প্রস্তুত ছিল না তা নয়। বরঞ্চ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে একাধিক পার্টি থাকার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে গণ-মন বিশেষতঃ পূর্ব-বাংলার জনসাধারণ খুবই সচেতন ছিল। নয়া রাষ্ট্রে অহেতুক সরকার বিরোধিতা করিয়া ফর্মেটিভ মুতে কেউ পাকিস্তানের অনিষ্ট করিয়া না বসে, সেদিকেও জনগণের সজাগ নজর ছিল। সেজন্য পাকিস্তান-আন্দোলনের যাঁরা বিরোধিতা করিয়াছিলেন, তাঁদের কেউ অপযিশন পার্টি করিলে জনগণ অবশ্যই সন্দেহের চোখে দেখিত এবং সরকার তাতে বাধা দিলে জনগণের সমর্থন পাইতেন। কিন্তু ব্যাপারটা তেমন ছিল না। পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রের আবশ্যিক প্রয়োজনে শহীদ সুহরাওয়ার্দী ও মওলানা ভাসানীর মত পাকিস্তান-সংগ্রামের প্রধান-প্রধান নেতারা যখন অপযিশন পার্টি গঠন করিতে চান, তখনও সরকার পক্ষ তাঁদের কাজে আইনী বেআইনী বাধা দান করেন। হিন্দুদের দ্বারা গঠিত অপযিশন পার্টির বিরুদ্ধে সরকার। পবু অতি সহজেই জনসাধারণের মনকে সন্দিগ্ধ করিয়া তুলিতে পারিতেন। ফলতঃ অনেক হিন্দু নেতার নিতান্ত সদিচ্ছাপ্রণোদিত সমালোচনাকেও সরকার ও সরকারী দলের লোকেরা দূরভিসন্ধিমূলক বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন। এ সম্পর্কে সরকারী দলের কার্যকলাপ শুধু গণতন্ত্র-বিরোধীই ছিল না; পরিণামে পাকিস্তানের স্বার্থ বিরোধীও ছিল।

২. মুসলিম লীগের অদূরদর্শিতা

প্রথমতঃ, অদূরদর্শিতার ফলেই মুসলিম লীগের দরজা জনসাধারণের মুখের উপর বন্ধ করিয়া দেওয়া হয়। আমার নেতা ও তৎকালীন মনিব শহীদ সাহেবের মতের বিরুদ্ধে ‘ইত্তেহাদে’ আমি যে মুসলিম লীগ বজায় রাখিবার সুপারিশ করিয়াছিলাম, সেটা ছিল বিভাগ-পূর্ব কালের মতই প্রতিনিধিত্বমূলক মুসলিম লীগ। পাকিস্তানের আগে ও পরে একাধিক বার কায়েদে-আযম বলিয়াছিলেনপাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও রূপ পাকিস্তানের জনগণই নিজ হাতে গঠন করিবে। মুসলিম লীগ সরকারই পাকিস্তানের কস্টিটিউশন রচনা করিবেন এ কথার মানেই জনগণ করিবে। সুতরাং পাকিস্তান হাসিলের সংগে সংগেই মুসলিম লীগের দরজা জনগণের মুখের উপর বন্ধ করিয়া দেওয়া শুধু রাজনৈতিক অপরাধ ছিল না, নৈতিক মর্যাল ও এথিক্যাল অপরাধও ছিল। নেতারা শুধুমাত্র কোটারি-স্বার্থ রক্ষার জন্য মুসলিম লীগকে পকেটস্থ করিলেন। এই কাজে তাঁরা প্রথম অসাধুতার আশ্রয় নিলেন বাংলা বাঁটোয়ারা হইয়াছে এই অজুহাতে বাংলার মুসলিম লীগ ভাংগিয়া দিয়া। কাজটা করিলেন তাঁরা এমন বেহায়া-বেশরমের মত যে পাঞ্জাব ভাগ হওয়া সত্ত্বেও পাঞ্জাবের মুসলিম লীগ ভাংগিলেন না। ফলে পক্ষপাতিত্ব-দোষে বামাল গেরেফতার হইলেন। দ্বিতীয় অসাধুতা করিলেন তাঁরা নিজেদের বাধ্য-অনুগত লোক দিয়া এডহক কমিটি গঠন করিয়া। তৃতীয় অসাধু কাজ করিলেন নয়া মুসলিম লীগ গঠনের জন্য প্রাইমারি মেম্বারশিপের রশিদ বই বগলদাবা করিয়া। মুসলিম লীগ কর্মীদের পক্ষে জনাব। আতাউর রহমান খাঁ ও বেগম আনোয়ারা খাতুন প্রথমে মওলানা আকরম খাঁ ও পরে চৌধুর খালিকুয্যামানের কাছে দরবার করিয়াও রশিদ বই পান নাই। তাঁরা নাকি স্পষ্টই বলিয়াছিলেন, এখন তাঁরা আর লীগের বেশি মেম্বর করিতে চান না। তাদের যুক্তি ছিল, এখন শুধু গঠনমূলক কাজ দরকার। হৈ হৈ করিলে তাতে কাজের বিঘ্ন সৃষ্টি হইবে। এসব কথা আমি কলিকাতা বসিয়া খবরের কাগযে পড়িয়াছিলাম। নিজের কাগ্য ‘ইত্তেহাদে’ এই অদূরদর্শিতার কঠোর নিন্দা করিয়াছিলাম। বলিয়াছিলাম, যে সব দেশে একদলীয় শাসন চালু আছে, সেখানেও রুলিং পার্টির দরজা এমন করিয়া বন্ধ করা হয় নাই। লীগ-নেতৃত্বের এই মনোভাব ছিল অযৌক্তিক ও অবৈজ্ঞানিক। কায়েদে-আযমের জীবমানেই শাসকগোষ্ঠী ও তাঁদের সমর্থক এই নীতি অনুসরণ করিয়াছিলেন দেখিয়া আমার মনে কম ধান্ধা লাগে নাই। তবে কি মুসলিম লীগ নেতারা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃবৃন্দের পন্থা অনুসরণ করিতেছেন? কমিউনিস্ট বা ফ্যাসিস্ট ইত্যাদি বিপ্লবী পার্টির সাংগঠনিক জোট ঐক্য ও শক্তির জন্য এবং নেতৃত্বের নিরাপত্তার খাতিরে অনেক সময় সাবধানতা অবলম্বনের দরকার হয়। পার্টি-আদর্শের বিরোধী লোকেরা নিতান্ত গণতান্ত্রিক উপায়ে পার্টিতে ঢুকিয়া বিভীষণ পঞ্চম বাহিনীর কাজ করিতে পারে। সেজন্য পার্টির এক্সেসিভ গ্রোথের ‘অতিরিক্ত বৃদ্ধির’ বিরুদ্ধে ঐ সব পার্টি হুশিয়ার থাকে। কিন্তু মুসলিম লীগ তেমন ফ্যাসিস্ট পার্টি ছিল না। কাজেই ঐ সাবধানতার কোনও দরকারও তার ছিল না। অগত্যা মুসলিম লীগ কর্মীরা মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে প্রথমে নারায়ণগঞ্জে ও পরে টাঙ্গাইলে কমী-সম্মিলনী করিয়া নেতাদের কাজের তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং মুসলিম লীগের দরজা খুলিয়া দিবার দাবি করেন। নেতারা কর্ণপাত না করায় ১৯৪৯ সালে কর্মীরা নিজেরাই মুসলিম লীগ গঠন করেন। সরকারী মুসলিম লীগ হইতে পার্থক্য দেখাইবার জন্য তাঁদের প্রতিষ্ঠানের নাম রাখিলেন? জনগণের (আওয়ামী) মুসলিম লীগ। আমি কলিকাতা থাকিতেই এসব ঘটিয়াছিল এবং ‘ইত্তেহাদের’ পুরা সমর্থন পাইয়াছিল। কাজেই ময়মনসিংহে যখন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের কাজ হাতে নিলাম, তখন মতের ও মনের দিক দিয়া নয়া কোনও কাজ করিলাম না।

. মুসলিম লীগের ভ্রান্ত-নীতি

মুসলিম-লীগ নেতারা দ্বিতীয় ভুল করিলেন পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বন্ধ করিবার উদ্যোগ না নিয়া। শুধু উদ্যোগ নিলেন না, তা নয়। পাকিস্তানী জাতীয়তা ফুরণে বাধাও দিলেন। ঐতিহাসিক কারণেই ভারতে মুসলিম লীগ ও পাকিস্তানে কংগ্রেস বন্ধ করিয়া দেওয়া উচিৎ ছিল। রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্যও, সাম্প্রদায়িক প্রীতির জন্যও। বোম্বাই ও মালাবার ছাড়া ভারতের সর্বত্র মুসলিম লীগ ভাংগিয়া দেওয়া হইয়াছিল। পূর্ব-বাংলার কংগ্রেস নেতারাও কংগ্রেস ভাংগিয়া দিতে প্রস্তুত হইয়াছিলেন। মুসলিম লীগ ভাংগিয়া ন্যাশনাল লীগ করা হইলে তাঁরা তাতেই যোগ দিতেন। মুসলিম লীগ বজায় রাখা স্থির হওয়ার আগে পূর্ব-বাংলার শাসকগোষ্ঠীর মনে সত্যই ভয় সান্ধাইয়াছি। কারণ কায়েদে-আযমও ঐ মতের বলিয়া তাঁরা জানিতে পারিয়াছিলেন। হিন্দুরা কংগ্রেস ভাংগিয়া দিলে কায়েদে-আযম ও শহীদ সুহরাওয়ার্দীর নীতি আরও জোরদার হইয়া পড়ে। তাই পূর্ব-বাংলায় মন্ত্রীরা, বিশেষতঃ প্রধানমন্ত্রী খাজা নাযিমুদ্দিন, কংগ্রেস-নেতাদেরে একরূপ ধমকাইয়া কংগ্রেস ভাংগা হইতে বিরত রাখেন। খাজা নাযিমুদ্দিনের কথায় রাযী হওয়ায় মিঃ শ্রীশ চন্দ্র চাটাজীর সাথে মিঃ কামিনী কুমার দত্ত ও মিঃ ধীরেন্দ্র নাথ দত্তের নেতৃত্বে অনেক কংগ্রেস-নেতার, বিশেষতঃ কুমিল্লা গ্রুপের, মনোমালিন্য হইয়া যায়। এসব কথাই তৎকালে খবরের কাগযে প্রকাশিত হইয়াছিল। আজ এসব ঘটনা স্মরণ করাইবার কারণ এই যে আমি দেখাইতে চাই মুসলিম লীগ-নেতারা নিজেরা পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করিবেন বলিয়াই পাকিস্তানী হিন্দুদের অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি করিতে দেন নাই। অথচ মজা এই যে পাকিস্তান-বিরোধী ঐতিহ্য-ওয়ালা কংগ্রেস’ চালাইবার ‘অপরাধে’ পরে হিন্দুদেরে নিন্দাও করিয়াছেন মুসলিম লীগ নেতারাই। যে মনোভাবের দরুন মুসলিম লীগ-নেতারা হিন্দু নেতৃবৃন্দকে কংগ্রেস চালাইয়া যাওয়ার তাকিদ দেন, ‘ঠিক সেই মনোভাবের দরুনই তাঁরা হিন্দু-নেতৃবৃন্দকে পৃথক নির্বাচন-প্রথা দাবি কায় উস্কানি দেন। দেশের বিপুল মেজরিটি হইয়াও নিজেরা পৃথক নির্বাচন-প্রথা দাবি করাটা ভাল দেখায় না; অথচ মুসলিম লীগ-নেতারা পৃথক নির্বাচনের জন্য একেবারে উন্মাদ। কাজেই মাইনরিটি সম্প্রদায় হিন্দুদেরে দিয়া পৃথক নির্বাচন প্রথা দাবি করাইতে পারিলে কাজটা সহজ হয়। এই কারণেই মুসলিম লীগ-নেতাদের এই অপচেষ্টা। হিন্দু নেতৃবৃন্দ অসংখ্য ধন্যবাদের পাত্র এই জন্য যে নিজেরা ক্ষুদ্র মাইনরিটি হইয়াও এবং রুলিং পার্টির দ্বারা উৎসাহ প্ররোচনা এমন কি ওয়ার্নিং পাইয়াও তাঁরা পৃথক নির্বাচন-প্রথা দাবি করিতে রাযী হন নাই।

৪. কায়েদে-আযমের নীতি

এই ধরনের মনোব লইয়াই মুসলিম লীগ-নেতারা পাকিস্তান শাসন পরিচালন শুরু করেন। কাজেই যতই অযৌক্তিক হোক, নিখিল ভারত মুসলিম লীগের নাম গৌরব তার মর্যাদা ও তার জনপ্রিয়তাকে সম্বল করিয়া চলাই তাঁরা স্থির করেন। গণ-মনা কায়েদে-আযম স্পষ্টতঃই এই মতের পরিপোষক ছিলেন না। গণ পরিষদের উদ্বোধনী বক্তৃতায় তিনি তাঁর আদর্শ মতবাদ ও কার্যক্রম স্পষ্ট করিয়াই ঘোষণা করিলেন। শাসকগোষ্ঠীর তাগাদায় তিনি অবশেষে ছয় মাস পরে ১৯৪৮ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি মুসলিম লীগের বৈঠক দেন। বৈঠকটা গোপনীয় হয়। খবরের কাগযের সেখানে প্রবেশাধিকার ছিল না। বৈঠক শেষে ২৮শে ফেব্রুয়ারি গবর্নর জেনারেল-ভবন হইতে প্রচারিত পাকিস্তান সরকারের এক প্রেসনোটে বলা হয়? ২১শে ফেব্রুয়ারি ও পরবর্তী কয়েকদিন করাচিতে মুসলিম লীগ কাউন্সিলের যে গোপন বৈঠক হইয়াছে, সে সম্বন্ধে ভুল সংবাদ প্রচারিত হইতেছে। প্রকৃত অবস্থা এই যে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠাই ছিল নিখিল-ভারত মুসলিম লীগের উদ্দেশ্য। তখন মুসলিম লীগ ভারতের সমস্ত মুসলমানের প্রতিনিধিত্ব করিয়াছে। দেশ ভাগ হওয়ার পর মুসলিম লীগ এখন একটি পার্টি হিসাবে কাজ করিবে, আগের মত গোটা মুসলিম জাতির প্রতিনিধিত্ব করিবে না। তদনুসারে মুসলিম লীগের গঠনতন্ত্র ও নিয়মাবলী রচিত হইয়াছে।

প্রেসনোটে যে ‘ভুল সংবাদের’ কথা বলা হইয়াছে, তা সত্য-সত্যই লীগ নেতৃবৃন্দ তেমন ‘ভুল সংবাদ’ প্রচার করিতেছিলেন। ঐ সময় ২৫শে ফেব্রুয়ারি হইতে পাকিস্তান গণ-পরিষদের বৈঠক চলিতেছিল। সেই সমাবেশের সুযোগ লইয়া মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ দাবি করিতেছিলেন যে কায়েদে-আযম মুসলিম লীগ বজায় রাখিতে রাযী হইয়াছেন। কাজেই মুসলিম লীগ তখনও মুসলমানদের একমাত্র জাতীয় প্রতিষ্ঠান। এই দাবির রাজনৈতিক তাৎপর্য গুরুতর। পরিণামে এক দলীয় ফ্যাসিম আসিতে পারে। তাই স্বয়ং কায়েদে-আযম, মুসলিম লীগ আফিস হইতে নয়, গবর্নর-জেনারেলের দফতর হইতে, সরকারীভাবে ঐ ইশতাহার জারি করেন।

৫. কায়েদের নীতি পরিত্যক্ত

কায়েদে-আযম কর্তৃক প্রচারিত এই সরকারী প্রেসনোটে সকল বিতর্কের অবসান হওয়া উচিৎ ছিল। কন্তু হয় নাই। শাসকগোষ্ঠী মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ এবং সরকার-সমর্থক সংবাদপত্র সমূহ সকলেই এর পরেও মুসলিম লীগকেই পাকিস্তানের মুসলমানদের একমাত্র জাতীয় প্রতিষ্ঠান বলিয়া দাবি করিতে থাকেন। কাজেই মুসলিম লীগের বিরুদ্ধতা মানে পাকিস্তানেরই বিরুদ্ধতা, এ কথা বলিতে শুরু করেন। ক্রমে তাঁরা দাবি করিতে থাকেন, ইসলামের হেফাযতের জন্যই পাকিস্তানের আবির্ভাব। সুতরাং মুসলিম লীগের বিরুদ্ধতা মানে পাকিস্তানের বিরুদ্ধতা, পাকিস্তানের বিরুদ্ধতা মানে ইসলামের বিরুদ্ধতা। ঐক্য, ঈমান ও শৃংখলাই ইসলাম কায়েদে আযমেরও বাণী। কাজেই পাকিস্তানে অপযিশন পার্টি মানেই পাকিস্তান ও ইসলামের দুশমনি। কথাটা এমন জমাইয়া তোলা হইল যে শহীদ সাহেব কনস্টিটিউশন্যাল অপযিশনের কথা ভোলায় এক ছুতায় গণপরিষদ হইতে তাঁর নাম কাটিয়া দেওয়া হয় এবং প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খাঁ সাহেব সুহরাওয়ার্দী সাহেবকে ‘হিন্দুস্থানের লেলাইয়া-দেওয়া পাগলা কুত্তা’ বলিয়া গাল দেন। পাকিস্তানের তৎকালীন নেতৃত্বের মগজ কতটা খারাপ হইয়াছিল শহীদ সাহেবের মত পাকিস্তান-সংগ্রামের একজন সেনাপতিকে ‘পাগলা কুত্তা’ বলা হইতেই তার প্রমাণ পাওয়া যায়। গণতন্ত্র বিশ্বাস, জনগণে আস্থা, রাজনৈতিক সাহস ও দূরদর্শিতা একই আত্মবিশ্বাসের বিভিন্ন দিক। একটার প্রতি অনাস্থা ও সন্দেহ আসিলে বাকীগুলির প্রতিও সন্দেহ-অবিশ্বাস আসিবেই। এ সবের প্রতি সন্দেহ একটা সাংঘাতিক পিছলা ঢাল। সে ঢালে একবার বা পড়িলে সর্বনিম্নস্তরে যাইতেই হইবে। মুসলিম লীগ-নেতারা ক্রমে এবং দ্রুত এই ঢালের তলদেশে চলিয়া গেলেন। দেশবাসীকে ত বটেই খোদ মুসলিম লীগ কর্মীদেরেই অবিশ্বাস করিতে লাগিলেন। ১৯৪৮ সালে টাংগাইল উপনির্বাচনে তরুণ মুসলিম লীগ– কর্মী শামসুল হকের হাতে পরাজিত হইয়া পূর্ব-বাংলার সরকার ও সরকারী মুসলিম লীগ ঘরের কোণে আশ্রয় লইলেন। একে-একে পঁয়ত্রিশটি বাই-ইলেকশন স্থগিত রাখিলেন।

৬. আওয়ামী লীগ গঠনে বাধা

কাজেই ১৯৫০ সালে মওলানা ভাসানী ও জনাব শহীদ সাহেব আওয়ামী লীগ সংগঠনে যখন ময়মনসিংহে আসিলেন, তখন প্রধানমন্ত্রী নূরুল আমিনের ‘লাঠি’ জনাব আবদুল মোনেম খাঁর নেতৃত্বে এ শহরের মুসলিম লীগ কর্মীরা একেবারে ক্ষিপ্ত। ময়মনসিংহে নেতৃদ্বয় আসিতেছেন শুনিয়া অবধি স্থানীয় মুসলিম লীগ কর্মীরা স্বয়ং মোননম খাঁ সাহেবের ব্যক্তিগত নেতৃত্বে মাইকে পোস্টারে এই দুই বয়োজ্যেষ্ঠ শ্রদ্ধেয় নেতার বিরুদ্ধে অশ্লীল কট-কাটব্য শুরু করিলেন। শেষ পর্যন্ত গুণ্ডামি করিয়া আমাদের সভা ভাংগিয়া দিলেন। গুণ্ডামিটা করিলেন অতিশয় ভদ্রভাবে। টাউন হল ময়দানে সভা। ময়দারে একপাশে টাউন হল। অপর পাশে জিলা স্কুল বোর্ডের বিল্ডিং। টাউন হল মিউনিসিপ্যালিটির সম্পত্তি। মুসলিম লীগ-নেতা জনাব গিয়াসুদ্দিন পাঠান মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান। জিলা মুসলিম লীগের সেক্রেটারি জনাব আবদুল মোনেম খাঁ স্কুল বোর্ডের প্রেসিডেন্ট। এই দুইটি বিলডিং-এ একাধিক মাইক হইতে একাধিক লাউডস্পিকার ফিট করা হইল। সবগুলি লাউডস্পিকারের মুখ সভামুখী করা হইল। মুসলিম লীগ-কর্মীরা দুই দালানের ভিতরে বসিলেন। ভিতর হইতে দরজা-জানালা বন্ধ করিয়া দিলেন। ‘কর্ম’ রু করিলেন। সভার কাজ শুরু হইতেই তাঁরা উভয় দালানের ভিতর হইতে শিয়াল-কুত্তা, গাধা-গরু ও হাঁস-মুরগীর ডাক শুরু করিলেন। চারগুণ মাইক ও লাউডস্পিকার এবং দশগুণ ‘বক্তার’ মোকাবেলায় আমাদের বক্তৃতা কেউ শুনিতে পাইলেন না। জিলা ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সুপার সভাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। আমি নিজে তাঁদেরে বারবার অনুরোধ করিলাম সভায় শান্তি স্থাপন করিতে। আমি ব্যর্থ হওয়ায় শেষ পর্যন্ত স্বয়ং শহীদ সাহেবও তাঁদেরে অনুরোধ করিলেন। তাঁরা নন-এলাইনমেন্ট নীতি ঘোষণা করিলেন। সভাস্থ লোকের একদল দেওয়াল বাহিয়া উপরে উঠিয়া দুষ্কৃতিকারীদের লাউডস্পিকার খুলিতে গেল। অপর দল দরজা-জানালা ভাংগিয়া ভিতরে ঢুকিয়া দুষ্কৃতিকারীদেরে নিরস্ত করিতে চাহিল। এই সময় ডি, এম, ও এস. পি. তাঁদের নিরপেক্ষ-নীতি বিসর্জন দিয়া দুস্কৃতি নিরস্তকারীদেরে নিরস্ত করিলেন। আমরা সভার আশা ত্যাগ করিলাম। নেতাদ্বয় সারা শহর পায় হাঁটিয়া জিলা বোর্ডের ডাক-বাংলায় গেলেন। সতার বিরাট অংশ তাঁদের পিছনে-পিছনে ঘটিয়া তথায় জমায়েত হইল। নেতাদ্বয় সংক্ষেপে বক্তৃতা করিলেন। জিলা আওয়ামী মুসলিম লীগ সংগঠন, কমিটি গঠিত হইল।

৭. একদলীয় শাসন

পূর্ব-বাংলার তৎকালীন রাজনৈতিক আচরণের দৃষ্টান্তের হাজারের মধ্যে এটি একটি। যে সব কারণে পাকিস্তান সৃষ্টির দুই তিন বছরের মধ্যে মুসলিম লীগ ও সরকার জনগণের কাছে অপ্রিয় হইয়া উঠেন, এটি তার অন্যতম। আমি অতঃপর মুসলিম লীগের বন্ধুদেরে অনেক বুঝাইবার চেষ্টা করি। গণতন্ত্র সম্পর্কে বক্তৃতা দেই। তাঁরা হাসেন। বোধহয় আমার সরলতায় ও নির্বুদ্ধিতায়। তাঁদের কর্মীদের কর্ম তৎপরতা বাড়ে। আমার গণতন্ত্রের বুলিকে আমাদের দুর্বলতা মনে করেন জিলার নেতারা।

নেতা ও মন্ত্রীর সাথে আলাপ করিয়া আমি একটা ব্যাপারে বিস্মিত হইলাম। বুঝিলাম, ১৯৪৮ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি গভর্নর-জেনারেল কায়েদে-আযম জিন্না পাকিস্তানের মুসলিম লীগের স্ট্যাটাস ও মর্যাদা সম্পর্কে যে সরকারী প্রেস-নোট জারি করিয়া গিয়াছেন, এঁরা হয় তা জানেন না, নয় ত ভুলিয়া গিয়াছেন, অথবা ইচ্ছা করিয়া চাপিয়া যাইতেছেন।

এই প্রেস-ননটের দিকে বন্ধুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করিলাম। ইহার মধ্যে কায়েদে– আযমের দূরদৃষ্টি ও উইযডম নিহিত আছে, এটা অনুসরণ না করিলে মুসলিম-লীগ নেতাদের নিজেদের এবং পরিণামে পাকিস্তানের ক্ষতি হইবে, কত যুক্তি দিলাম। ক্ষমতাসীনরা কখনও নিজেরা না ঠকিয়া শিখেন না। আমাদের নেতারাও শিখিলেন না। মুসলিম লীগকেই একমাত্র পার্টি দাবি করিয়া চলিলেন।

১৯৫০ সালের স্বাধীনতা দিবস-উৎসবে ইন্তেযাম কমিটিতে ডি, এম. মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের সভাপতিদ্বয়কে দাওয়াত করিলেন যাঁর তাঁর প্রতিষ্ঠানের সভাপতি রূপে। আমাকে করিলেন ব্যক্তিগত ভাবে। আমি প্রতিবাদ করিলাম। ডি. এম. মুসলিম লীগ-নেতাদের দোহাই দিলেন। নেতারা বলিলেন। তাঁরা আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব স্বীকার করেন না। ফলে আমি ইন্তেযাম কমিটিতে যোগ দিলাম না।

পরবর্তী স্বাধীনতা দিবসের ইন্তেযাম কমিটিতে আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতিরূপেই ডাকা হইল। আমি গেলাম। অন্যান্য প্রস্তাবের পর আমি প্রস্তাব করিলাম : আযাদি দিবসের জনসভায় জিলা ম্যাজিস্ট্রেট সভাপতিত্ব করিবেন। বরাবর জিলা মুসলিম লীগের সভাপতি জনসভার সভাপতি হন। আমার যুক্তি এই যে আযাদি দিবসের উৎসব সরকারী অনুষ্ঠান, মুসলিম লীগ-অনুষ্ঠান নয়। সরকারী অনুষ্ঠানকে পার্টি-অনুষ্ঠানে পরিণত করিলে জাতীয় অনুষ্ঠানেরই অমর্যাদা করা হয়।

যুক্তিপূর্ণ হওয়ার দরুনই হোক, অথবা সরকারী কর্মচারিদের সুবিধার খাতিরেই হোক, অধিকাংশ সরকারী কর্মচারি আমার প্রস্তাব সমর্থন করিলেন। বলা আবশ্যক, সরকারী-অনুষ্ঠান বলিয়া ইন্তেযাম কমিটিতে সরকারী কর্মচারিরাই মেজরিটি থাকিতেন। পুলিশ সুপার মিঃ মহিউদ্দিন আহমদ আনুষ্ঠানিকভাবে আমার প্রস্তাব সেকেণ্ড করিলেন। উপস্থিত লীগ-নেতারা গর্জিয়া উঠিলেন। টেলিগ্রামে বদলি করাইবেন বলিয়া ভয় দেখাইলেন। তাঁদের কেউ-কেউ ঘাবড়াইলেনও। অতঃপর ঢাকা ও করাচির অনুষ্ঠানে যথাক্রমে লাট ও বড়লাট সভাপতিত্ব করেন, এই নযির দিয়া ব্যাপারটা গবর্ণমেন্টের কাছে রেফার করিবার সুপারিশ করিলাম। সকলে এতে রাযী হইলেন। পরদিনই সরকারী নির্দেশ আসিল। আমার মতই ঠিক প্রমাণিত হইয়াছে। স্বাধীনতা দিবস অনুষ্ঠান এইভাবে মুসলিম লীগের কবলমুক্ত হইল। জিলা মুসলিম লীগ সভাপতির বদলে জিলা ম্যাজিস্ট্রেটের সভাপতিত্বে স্বাধীনতা দিবসের জনসভা অনুষ্ঠিত হইল। আওয়ামী লীগ নেতারা বক্তৃতা করিবার সুযোগ পাইলেন। এটাকে স্থানীয় জনগণ আওয়ামী লীগের জয় বলিয়া মানিয়া নিল।

৮. রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন

এই অবস্থায় আসিল রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন। ক্ষমতাসীন দলের অন্যান্য মারাত্মক ভুলের মত এটাও ছিল একটা মারাত্মক ভুল। সম্ভবতঃ সব চাইতে মারাত্মক। গণতান্ত্রিক দেশে জনগণের মুখের ভাষা রাষ্ট্রভাষা হইবে, এটা বুঝিতে প্রতিভার দরকার ষ্ম না। সবাই এটা বুঝিয়াছিলেন। আমাদের মত ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র কর্মীরা মুখ ফুটিয়া তা বহু আগেই বলিয়াছিলাম। কলিকাতাস্থ পূর্ব-পাকিস্তান রেনেসাঁ সোসাইটি পাকিস্তান সৃষ্টির তিন বছর আগে বাংলার জনগণকে বলিয়াছিল পূর্ব-পাকিস্তানের রাষ্ট্র-ভাষা হইবে বাংলা। তখন অবশ্য লাহোর-প্রস্তাব-মত পূর্ব-পাকিস্তানকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবেই ধরা হইয়াছিল। পাকিস্তান হওয়ার পর ঢাকার শিক্ষক-ছাত্র, যুবক-তরুণরা মিলিয়া তমদুন মজলিসের পক্ষ হইতে রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে যে পুস্তিকা বাহির করেন, তাতে অন্যান্যের সাথে আমারও একটা লেখা ছিল। তাতে বাংলাকে সরকারী ভাষা করার দাবি করা হইয়াছিল। ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যখন পূর্ব-বাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাযিমের মারাত্মক ভুলে রাষ্ট্রভাষার ব্যাপারটা বিতর্কের বিষয় হইয়া পড়ে, তখনও আমার সভাপতিত্বে কলিকাতাস্থ বংগীয় মুসলমান সাহিত্য-সমিতির এক অধিবেশনে বাংলাকে সরকারী ভাষা করিবার প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রধানমন্ত্রী খাজা নাযিমুদ্দিনের প্রতিবাদে ঢাকা শহরে হরতাল হয়। ছাত্ররা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এতেও নেতাদের চোখ খুলে না। পাকিস্তানের মেজরিটির ভাষা বাংলাকে অগ্রাহ্য করিয়া উর্দুর ডবল মার্চ চলিতে থাকে। ক্ষমতাসীন দলের পূর্ব-বাংগালী মন্ত্রী ও প্রতিনিধিরা এর প্রতিবাদে বা বাংলার সমর্থনে টু শব্দটি করেন না। এতেই ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে বিক্ষোভে ফাটিয়া পড়ে। একমাত্র ‘আজাদ’-সম্পাদক ও মুসলিম লীগ দলীয় এম, এল, এ. জনাব আবুল কালাম, শামসুদ্দিন সরকারী নীতির প্রতিবাদে মেম্বরগিরিতে ইস্তাফা দিয়া ছাত্র-তরুণদের প্রশংসা অর্জন করেন।

ময়মনসিংহ জিলায় আন্দোলনকে সম্পূর্ণ অহিংস ও শান্তিপূর্ণ রাখা আমি কর্তব্য মনে করিলাম। আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি জনাব হাশিমুদ্দিন আহমদ, আনন্দ মোহন কলেজের তৎকালীন ভাইস-প্রিন্সিপাল সৈয়দ বদরুদ্দিন হোসেন ও আমি এই তিন জনের একটি কমিটি অব-এ্যাকশন গঠন করিয়া সমস্ত ক্ষমতা এই কমিটির হাতে কেন্দ্রীভূত করিলাম। এই কমিটির নির্দেশ ও অনুমোদন ব্যতীত কেউ কিছু করিতে পারিবে না, নির্দেশ দেওয়া হইল। শান্তিপূর্ণ ভাবে হরতালমিছিল ও সভা-সমিতি চলিতে লাগিল। আমলাতন্ত্র উস্কানি দিয়া শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে অশান্ত করিয়া ভোলায় উস্তাদ। আমার জিলা-কর্তৃপক্ষও সে উস্তাদি দেখাইলেন। আমি বাদে কমিটি-অব এ্যাকশনের দুইজন মেম্বরকেই তারা নিরাপত্তা আইনে বন্দী করিলেন। আমার দুই ছেলে মহবুব আনাম ও মতলুব আনাম সহ ২৭ জন কলেজছাত্রকেও ওঁদের সংগে জেলে নিয়া গেলেন। অতি কষ্টে আমি শহরের ছাত্র-জনতার ক্রোধ প্রশমিত করিতে লাগিলাম। কিন্তু মফসসলে এই সংবাদ পৌঁছা মাত্র চারদিক হইতে হাজারে-হাজার লোক শহরে জমায়েত হইল। এই মারমুখী জনতা কোট-আদালত ঘিরিয়া ফেলিল। কর্তৃপক্ষ ঘাবড়াইলেন। শান্তি রক্ষার জন্য এবং জনতাকে নিরস্ত করিবার জন্য আমাকে ধরিলেন। আমি দালানের ছাদে দাঁড়াইয়া মেগাফোন মূখে জনতার উদ্দেশ্যে গলাকাটা বক্তৃতা করিলাম। নিজের পরিচয় দিলাম। শান্তি রক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও অশান্তির বিপদের কথা বলিলাম। ধৃত নেতা-ছাত্রদেরে খালাস করিবার ওয়াদা করিলাম। আল্লার মেহেরবানিতে জনতার সুমতি হইল। প্রায় তিন-চার ঘন্টা-স্থায়ী বিক্ষোক্সে পরে জনতা শহর ছাড়িয়া চলিয়া গেল।

সরকার ও মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে গণ-মন বিক্ষুব্ধ হইল। আরও দুই বছরে গণ মনের তিক্ততা চরমে নিয়া অবশেষে ১৯৫৪ সালে লীগ-নেতারা সাধারণ নির্বাচন দিলেন। গণ-মন তিক্ত হইলেও এতটা তিক্ত যে হইয়াছে, তা আমি বুঝিতে পারি নাই। বোধ হয় মুসলিম লীগ-নেতারাও পারেন নাই। কাজেই কেন্দ্রে ও প্রদেশে ক্ষমতাসীন দলের সাথে নির্বাচন যুদ্ধে জিতা কঠিন বিবেচিত হইল। সরকার-বিরোধী প্রগতিবাদী সমস্ত শক্তির সম্মিলিত চেষ্টার প্রয়োজন অনুভূত হইল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *