২.০৬ আবার বিষের তীর

আবার বিষের তীর

কিরীটী কতকটা ইচ্ছা করেই বিকাশের ওখানে উঠেছিল। যে কাজের জন্যে ও রায়পুরে এসেছে। অজ্ঞাত বেশ ধরে, ও জানত বিকাশের ওখানে থাকলে তার বিশেষ সুবিধাই হবে। এবং কখন কি ঘটে তার সঙ্গে ওর বিকাশের মারফত একটা যোগসূত্র রাখাও সহজ হবে। তার জন্য ওর আত্মপ্রকাশ করবার কোনো প্রয়োজনই হবে না। তাছাড়া বিকাশের ওখানে থাকলে কেউ ওকে সন্দেহও করতে পারবে না। এবং সবার চাইতে বেশী সুবিধা হচ্ছে, ওর প্রয়োজনমত সর্বদাই বিকাশের সাহায্য পাবে ও যে কোনো সংবাদের লেনদেন করতে পারবে।

বিকাশও সুব্রতর অনুপস্থিতিতে কিরীটী ওর বাসায় উঠে আসায় বিশেষ খুশীই হয়েছিল, এবং কিরীটীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় রায়পুর হত্যা-মামলায়ও বিশেষ আগ্রহান্বিত হয়ে উঠেছিল ক্রমে। কিরীটীর তীক্ষ্ণ বিচারশক্তি, অদ্ভুত বিশ্লেষণ-ক্ষমতা ওকে মুগ্ধ করেছিল। কিন্তু দুদিন আগে সুব্রতর বাসায় কিরীটীকে যে কথার নেশায় পেয়েছিল, এখন যেন তার তিলমাত্রও তা ওর মধ্যে অবশিষ্ট নেই। শামুকের মত হঠাৎ যেন কিরীটী নিজেকে খোলসের মধ্যে গুটিয়ে নিয়েছে।

দিনরাত কিরীটী ঘরে বসে বসে আপন মনে চোখ বুজে হয় কিছু ভাবে, না হয় একটা কালোমোটা নোটবইতে খসখস করে কি সব লিখে চলে।

সন্ধ্যাবেলা থানার সামনে মাঠের মধ্যে দুজনে যখন মধ্যে মধ্যে ইজিচেয়ার পেতে বসে, তখনও বেশীর ভাগ সময়ই কিরীটী আজেবাজে গল্প করেই কাটিয়ে দেয়। মামলার ধার দিয়ে যায় না।

রাত্রি তখন প্রায় গোটা এগারো সাড়ে এগারো হবে। বিকাশ ও কিরীটী আহারাদির পর যেখানে গাছের তলে অন্ধকারে চেয়ার পেতে বসে গল্প করছিল, সেখানে হঠাৎ একটা তীব্র আলোর রশ্মি এসে পড়ল।

দেখুন তো বিকাশবাবু, সাইকেলে করে এত রাত্রে কে এল? কিরীটী বললে।

সত্যিই একটা সাইকেল এসে ওদের অল্পদূরে থামল, এবং সাইকেল-আরোহী নীচে লাফিয়ে পড়ল।

কে? বিকাশ প্রশ্ন করে।

আজ্ঞে, আমি সতীশ স্যার। সতীশ এগিয়ে আসে।

কি সংবাদ, এত রাত্রে?

আজ্ঞে–খুব জোরে অনেকটা পথ সাইকেল চালিয়ে এসে সতীশ বেশ হাঁপিয়ে গিয়েছিল। টেনে টেনে বলে, আজ্ঞে রাজাবাহাদুর পাঠিয়ে দিলেন, রাজাবাহাদুরের খুড়োমশাই নিশানাথবাবুকে তার শোবার ঘরের মধ্যে কারা যেন বুকে তীর মেরে, আমাদের লাহিড়ী মশায়ের মতই খুন করে রেখে গেছে। এক নিঃশ্বাসে সতীশ কথাগুলো বলে শেষ করে।

সংবাদটা শুনে বিকাশ হঠাৎ যেন লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ায়, অ্যাঁ, কি বললে সতীশ! আবার…আ…বা…র খুন!

আজ্ঞে।

তারপর একটু থেমে সতীশ বললে, আপনি একবার তাড়াতাড়ি চলুন স্যার। রাজাবাহাদুর বড্ড নার্ভাস হয়ে পড়েছেন।

আচ্ছা তুমি এগোও, বলল আমি এখুনি আসছি।

সতীশ চলে গেল।

বিকাশবাবু? কিরীটী ডাকলে মৃদুস্বরে।

বলুন?

আমিও যাব আপনার সঙ্গে রাজপ্রাসাদে।

অ্যাঁ! সে কি করে হতে পারে?

শুনুন। আপনি আমার পরিচয় দেবেন সি.আই.ডি-র ইন্সপেক্টর বলে? বলবেন, এই কেসেরই তদন্ত করতে উপরওয়ালারা আমাকে আপনার সাহায্যে পাঠিয়েছেন কলকাতা থেকে। ইন্সপেক্টার অর্জুন রায় বলে আমার পরিচয় দেবেন।

ঠিক আছে। চলুন। আপনি হয়ত অকুস্থানে গেলে নিজের চোখে পরীক্ষা করলে, অনেক কিছুই দেখতে পাবেন।

সত্যি কথা বলতে কি, বিকাশ কিরীটীর এ প্রস্তাবে যেন হাতে স্বর্গ পেল। কিরীটী সঙ্গে থাকা, শুধু বলই নয়, একটা ভরসাও।

কিরীটীকে ঐ বেশেই গমনোদ্যত দেখে বিকাশই হঠাৎ প্রশ্ন করে, আপনি কি এই বেশেই যাবেন?

হ্যাঁ, সাধারণ ড্রেসেও অনেক সময় সি.আই. ডি-র লোকদের.ঘুরতে হয়। তাছাড়া আরও একটা কথা, আমার অর্জুন রায় পরিচয় একমাত্র রাজাবাহাদুরকে ছাড়া আর কাউকেই দেবেন না। তাঁকেই শুধু আড়ালে ডেকে চুপিচুপি বলে দেবেন। এত বড় সুযোগ সহজে মেলে না। তারপরই যেন কতকটা অস্ফুট কণ্ঠে কিরীটী বলতে থাকে, আমি জানতাম, নিশানাথের দিনও ঘনিয়ে এসেছে; তবে তা এত শীঘ্র তা ভাবিনি। ভেবেছিলাম বিকৃতমস্তিষ্ক বলে হয়ত কিছুদিন সে রেহাই পাবে, কিন্তু এখন দেখছি আমারই হিসাবে ভুল হয়েছিল।

বিকাশ কিরীটীর অর্ধস্ফুট স্বগতোক্তিগুলি ভালকরে বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করে, কি বলছেন?

কিরীটী মৃদু স্পষ্ট কণ্ঠে জবাব দেয়, না, ও কিছু না। ভাবছিলাম জীবিত অবস্থায় নিশানাথের সঙ্গে একটিবার দেখা করতে পারলে তদন্তের আমাদের অনেক সুবিধা হত, কিন্তু যেমনটি চাওয়া যায় সব সময় তো তেমনটি হুবহু হয় না। হাতের কাছে যেটুকু পাওয়া গেল তারই পূর্ণ সদ্ব্যবহার করা যাক। এখন উঠুন, আর দেরি নয়…

সামান্য চেহারার অদলবদল করে নিল কিরীটী দ্রুতহস্তে ঘরের মধ্যে ঢুকে। তারপর দুজনে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়ল রাজপ্রাসাদের উদ্দেশে।

নিঃশব্দে দুজনে পথ অতিবাহিত করে চলেছে, কারও মুখেই কোনো কথা নেই। হঠাৎ একসময় বিকাশ ডাকে, কিরীটীবাবু!

উঁহু, কিরীটী নয়, বলুন অর্জুনবাবু! খুব সাবধান, কিরীটী নামটা অত্যন্ত পরিচিত। যদিও সামান্য চেহারার অদলবদল করে নিয়েছি, তবু সাবধানের মার নেই।

না, আর ভুল হবে না, চলুন।

হ্যাঁ, কি যেন বলছিলেন বিকাশবাবু?

আচ্ছা আপনার কি মনে হয়, খুনী এখনও আশেপাশেই কোথাও আছে গা-ঢাকা দিয়ে?

কিরীটী হো-হো করে হেসে ওঠে, কেমন করে বলি বলুন তো! আমি তো আর গণকঠাকুর নই!

কিন্তু অনেক সময় শুনেছি, খুনীরা খুন করবার পর অবস্থা বোঝবার জন্য অকুস্থানের আশেপাশেই কোথাও আত্মগোপন করে থাকে।

বুঝেছি, আপনি কি বলতে চান বিকাশবাবু। কিন্তু সময় না হওয়া পর্যন্ত খুনীকে ধরা যায় না; তাহলে সব কেঁচে যায়। খুনী যদি এখন ওইখানে থাকেও, তবু জানবেন এখনও তাকে ধরবার মাহেন্দ্রক্ষণটি আসেনি। ভয় নেই, লগ্ন এলেই বরকে পিড়িতে বসাব এনে। কিরীটী রায় লগ্ন বয়ে যেতে দেয় না কখনও। কিরীটী স্মিতভাবে বললে।

কিরীটী আবার বলতে থাকে, তাছাড়া ভেবে দেখুন, খুনীকে ধরে ফেলবার সঙ্গে সঙ্গেই সমস্ত রহস্যের সব উত্তেজনা বা আনন্দের সমাপ্তি ঘটল। চিন্তা করে দেখুন তো খুনী কে আপনি জানতে পেরেছেন এবং জেনেও না-জানার ভান করে আছেন, খুনীকে সহজ নিশ্চিন্ত ভাবে চলে-ফিরে বেড়াবার জন্য। সে পরম নিশ্চিন্তে আছে। একবারও সে ভাবছে না যে, একজনের চোখে সে ধরা পড়ে গেছে। একজনের সদাসতর্ক দৃষ্টি সর্বক্ষণ তার পিছু পিছু ফিরছে ছায়ার মত। তারপরই যেই সময় এল, প্রমাণগুলো সব আপনার হাতের মুঠোর মধ্যে এল, ঝাঁপিয়ে পড়ুন আপনি খুনীর উপরে।

কথা বলতে বলতে দুজনে প্রায় প্রাসাদের বড় গেটটার সামনে এসে গেছে ততক্ষণ।

গেটের বাইরে ছোষ্ট্র সিং পাগড়ী মাথায় লাঠি হাতে দাঁড়িয়েছিল, সেলাম দিল। গেটের বড় আলোটা জ্বেলে দেওয়া হয়েছে। উজ্জ্বল বৈদ্যুতিক আলোয় তীব্র দৃষ্টি বুলিয়ে ছোট্টু সিং-এর আপাদমস্তক কিরীটী দেখে নিলে একবার। সুব্রতর চিঠির বর্ণনা তার মনে ছিল, ছোষ্ট্র সিংকে চিনতে এতটুকুও তার কষ্ট হয়নি। ছোট্টু সিং-এর পাশেই সুবোধ মণ্ডলও গেটের সামনে দাঁড়িয়েছিল। ওরা কারও দিকে দৃষ্টিপাত না করে গেট অতিক্রম করে এগিয়ে চলে। খাজাঞ্জীঘরের সামনে মহেশ সামন্ত ও আর একজন দাঁড়িয়ে ফিসফিস্ করে কি সব কথাবার্তা বলছিল, ওদের এগিয়ে আসতে দেখে হঠাৎ চুপ করে গেল।

কিরীটী চাপা গলায় প্রশ্ন করলে, এরা?

প্রথমটি জানি না, দ্বিতীয়টি মহেশ সামন্ত।

ও, এরাই তারা! আর গেটের সামনে যে দাঁড়িয়েছিল, একজন তো ছোট্টু সিং, দ্বিতীয়টি?

সুবোধ মণ্ডল।

ও, যে জেগেই ঘুমোয়!

দু-চারবার আসা-যাওয়া করতে করতে বিকাশের রাজবাড়ির অন্দরমহলটা বেশ পরিচিত হয়ে গিয়েছিল, সোজা সে কিরীটীকে সঙ্গে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল।

সেদিনকার মত আজও রাজাবাহাদুরের বাসভৃত্য শম্ভ সিঁড়ির মাথায়ই দাঁড়িয়ে ছিল, বোধ করি ওদেরই অপেক্ষায়।

রাজাবাহাদুর কোথায়?

আজ্ঞে তাঁর বসবার ঘরে।

অস্থিরভাবে রাজাবাহাদুর পায়চারি করছিলেন, ওদের পদশব্দে মুখ ফিরিয়ে তাকালেন, আসুন বিকাশবাবু! পরক্ষণেই কিরীটীর প্রতি নজর পড়তে ভুরুটা ঈষৎ কুঁচকে থেমে গেলেন।

কিরীটীর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সেটা কিন্তু এড়ায়নি। সে মৃদু হেসে একটু এগিয়ে এসে বললে, আমার নাম অর্জুন রায়।

বিকাশই এব বাকি পরিচয়টুকু শেষ করে দিল, আমারই ভুল হয়েছে রাজাবাহাদুর, ইনি সি.আই.ডি-র ইন্সপেক্টর মিঃ অজুর্ন রায়, লাহিড়ীর কেসের তদন্তে সাহায্য করবার জন্য হেড কোয়াটার থেকে এখানে এসেছেন আজ দিন-দুই হল, আর ইনি মহামান্য রাজাবাহাদুর শ্ৰীযুক্ত সুবিনয় মল্লিক, রায়পুর স্টেটের।

এরপর উভয়ে উভয়কে নমস্কার ও প্রতিনমস্কার জানাল। কিন্তু কিরীটী লক্ষ্য করলে, তথাপি যেন রাজাবাহাদুরের মুখ হতে সম্পূর্ণ বিরক্তির ভাবটা যায়নি। কিরীটী সেদিকে আর বেশী নজর দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করল না। এবং বর্তমান কেস সম্পর্কে যে তার বিশেষ একটা কিছু উৎসাহ আছে সে ভাবও প্রকাশ করতে চাইল না। মুখের উপর একটা প্রশান্ত নির্লিপ্ততার ভাব টেনে এনে নিঃশব্দে একপাশে সরে রইল।

বিকাশের প্রশ্নেরই জবাবে সুবিনয় মল্লিক বলেন, মৃতদেহ নিশ্চয়ই আপনারা দেখতে চান। দারোগা সাহেব?

নিশ্চয়ই।

তবে যে ঘরে মৃতদেহ আছে সেই ঘরেই সকলকে যেতে হয়, কেননা যে ঘরে খুড়ো মশাই থাকতেন, সেই ঘরেই তিনি নিহত হয়েছেন।

বেশ, তবে তাই চলুন। মিথ্যে আর দেরি করে লাভ কি! বিকাশ বললে।

একটু অপেক্ষা করুন রাজাবাহাদুর। কিরীটী গমনোদ্যত সুবিনয় মল্লিক ও বিকাশকে বাধা দিল।

ওঁরা দুজনেই একসঙ্গে ফিরে দাঁড়াল। দুজনের চোখেই সপ্রশ্ন দৃষ্টি।

মৃতদেহ দেখার জন্য তাড়াহুড়োর কিছুই নেই, কারণ যিনি মারা গেছেন, তিনি যখন নিঃসন্দেহেই মারা গেছেন, তখন আগে সমস্ত ব্যাপারটা একবার শুনতে পারলে ভাল হত। তারপর রাজাবাহাদুরের দিকে তাকিয়ে কিরীটী বললে, একটুও কিছু বাদ না দিয়ে সব ব্যাপারটা খুলে বলুন তো!

রাজাবাহাদুর সুবিনয় মল্লিক যা বললেন সংক্ষেপে তা এই, বিকাশবাবুর মুখেই হয়ত শুনে থাকবেন, আমার কাকা নিশানাথ মল্লিক শোলপুর স্টেটের আর্টিস্ট ছিলেন, কিছুদিন হল মাথার সামান্য গোলমাল হওয়ায় স্টেটের চাকরি ছাড়িয়ে আমি তাঁকে একপ্রকার জোরজবরদস্তি করে রায়পুরে নিয়ে আসি। রাজা শ্রীকণ্ঠ মল্লিকরা ছিলেন তিন ভাই। বড় শ্ৰীকণ্ঠ, মেজ সুধাকণ্ঠ ও কনিষ্ঠ বাণীকণ্ঠ। শ্রীকণ্ঠ মল্লিকের পিতা রত্নেশ্বর মল্লিক, কোনো কারণে মধ্যম ও কনিষ্ঠ পুত্রের উপর বিরূপ হয়ে তাঁর যাবতীয় সম্পত্তি জ্যেষ্ঠ শ্রীকণ্ঠ মল্লিককেই দিয়ে যান। মধ্যম ও কনিষ্ঠের জন্য সামান্য কিছু মাসোহারার ব্যবস্থা করে দিয়ে যান মাত্র। সুধাকণ্ঠ ছিল অত্যন্ত আত্মাভিমানী, পিতার ব্যবহারে বোধ হয় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি তাঁর একমাত্র মাতৃহারা পুত্র হারাধনকে নিয়ে ভাগলপুরে চলে যান। এবং সেখানে যাবার কয়েক বৎসর পর হারাধন যেবারে এন্ট্রান্স পাস দেন সেবারে মারা যান। তখন হারাধন মোক্তারী পাস করে কিছুকাল ভাগলপুরে প্র্যাকটিস করেন, তারপর রায়পুরে এসে প্র্যাকটিস ও বসবাস শুরু করেন। এদিকে রত্নেশ্বরের মৃত্যুর দু মাস পরেই কনিষ্ঠ বাণীকণ্ঠ ও তাঁর স্ত্রী, একমাত্র পুত্র নিশানাথকে রেখে মারা যান। নিশানাথ আর্ট স্কুল থেকে পাস করে কিছুকাল পরে শোলপুরে চাকরি নিয়ে চলে গেলেন। আমার এখানে এসেছিলেন মাস পাঁচেক মাত্র। আমি যেদিন হঠাৎ আততায়ীর হাতে আহত হই, সেদিন থেকে কাকার পাগলামিটা ক্রমশই বেড়ে ওঠে, এবং সর্বদা তাঁকে দেখাশুনা করছিলেন আমার বিমাতা। আজ দ্বিপ্রহর থেকে চুপচাপই ছিলেন। অন্যান্য দিনের চেয়ে। সন্ধ্যা থেকে রাত্রি নটা পর্যন্ত মা কাকার কাছেই ছিলেন। রাত্রি নটার পর মা কাকার খাবার আনতে গেছেন, এমন সময় হঠাৎ একটা চিৎকার শোনা যায়, আমি এই ঘরে বসেই সংবাদপত্র পড়ছিলাম, আমিও চিৎকার শুনে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি আমার বিমাতাও ততক্ষণে সেই কক্ষে গিয়ে হাজির হয়েছেন। কাকা জানালার নীচে উপুর হয়ে পড়ে আছেন। তাড়াতাড়ি কাকাকে গিয়ে ধরতেই, দেখলাম বুকের কাছে জামা ও মেঝেতে রক্ত। এবং বাঁদিকের বুকে বিঁধে আছে একটা তীর। ঠিক যেমনটি বিঁধেছিল লাহিড়ীর বুকে। বুঝলাম হতভাগ্য লাহিড়ীর মতই তাঁরও মৃত্যু ঘটেছে এবং তাতে কোনো অদৃশ্য আততায়ীর হাত আছে। তখুনি আপনার কাছে লোক পাঠাই।

এবারে কিরীটী প্রশ্ন করে, চিৎকার শোনবার পর আপনি যখন ঘরে গিয়ে প্রবেশ করেন, আপনার কাকা তখনও বেঁচেছিলেন, না তার আগেই মারা গেছেন?

আমি গিয়ে আর তাঁকে জীবিত অবস্থায় দেখিনি।

আপনার এ ঘর থেকে সেই ঘরে যেতে কতক্ষণ সময় লাগতে পারে বলে আপনার মনে হয় রাজাবাহাদুর?

তা মিনিট পাঁচ-ছয় তো হবেই।

চিৎকার শুনেই আপনি ছুটে গিয়েছিলেন, বললেন না? একটুও দেরি করেননি?

হ্যাঁ।

আপনার এ ঘর থেকে সে ঘরে কোন চিৎকারের শব্দ হলে অনায়াসেই তবে শোনা যায় বলুন।

নিশ্চয়ই।

আর কে কে সেই চিৎকার শুনতে পেয়েছিল জানেন?

বোধহয় অনেকেই শুনেছিল, কেননা আমরা মানে আমি ও আমার বিমাতা সে ঘরে গিয়ে ঢোকবার পর কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়ির চাকরবাকরেরাও ছুটে এসেছিল।

রাজাবাহাদুর,আপনার যদি আপত্তি না থাকে, আমি রাণীমাকে, মানে আপনার বিমাতাকে কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই।

বিশেষ কি প্রয়োজনীয়?

হ্যাঁ। তা নাহলে অযথা তাঁকে আমি কষ্ট দিতাম না।

বেশ, তাঁকে ডাকাচ্ছি।