রিমঝিম – ১১

৩ কার্তিক।

দরশ বিনু দুখন লাগে নয়ন–শুক্লা নিজের ঘরে অলস গলায় মীরার ভজন গাইছে।

ও কেন এ গান গায়? ওর তো দরশ পাবার কোনও অসুবিধে নেই। ও কেন বিরহের গান গায়?

রাজবধু মীরা। গিরিধরকে কী ভালই বেসেছিল। কিছু চায়নি সে গিরিধরের কাছে। বলেছিল–গিরিধর যদি আমাকে বিক্রি করে দেয় আমি বিক্রি হয়ে যাব। হয়তো ভগবানকেই এত ভালবাসা যায়; মানুষকে কি মানুষ এত ভালবাসতে পারে? মানুষকে মানুষ ভালবাসে রক্তমাংস দিয়ে, যেমন দিতে চায় তেমনই পেতে চায়। ঠাকুর, তোমাকে মীরার মত ভালবাসার শক্তি আমার নেই। আমি একটা মানুষকে ভালবেসেছি, রক্তমাংস দিয়ে ভালবেসেছি। তোমার কাছে সে ভালবাসার কি কোনও দাম নেই?

পুজো এল, চলে গেল। মহাষ্টমীর দিন পিউকে সাজিয়ে গুজিয়ে ঠাকুর দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলুম, ঠাকুর দেখে কী খুশি! তাকে বললুম, পিউ, হাত-জোড় করে ঠাকুরকে প্রণাম কর; বল—ঠাকুর, আমাদের সকলের ভাল কর। সে কপালে হাত ঠেকিয়ে খুব ভক্তিভরে প্রণাম করল। বিজবিজ করে কী বলল তা কিন্তু বোঝা গেল না। ঠাকুর হয়তো বুঝেছেন।

কার্তিক মাস আরম্ভ হয়ে গেছে। দেড় মাস হয়ে গেল, একটা খবর নেই। কোথায় গেছেন, কিছু জানবার উপায় নেই। কাউকে জিগ্যেস করবার নেই। বেঁচে আছেন তো?

ভাবতে পারি না, মাথা গোলমাল হয়ে যায়। রাত্রে পিউকে বুকের কাছে নিয়ে কাঁদি। মেয়েমানুষ হয়ে জন্মেছি, কাঁদব না? কাঁদবার জন্যেই তো জন্ম।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *