ঢাকা রহস্য উন্মোচিত – পরিচ্ছেদ ১

এক

কিছুদিন হল একেনবাবু গাছ নিয়ে পড়েছেন। ওঁর মাথায় যখন একবার কিছু চাপে, তখন সেটা সরানো মুশকিল। আমাদের অ্যাপার্টমেণ্টে লাগোয়া একটা ছোট্ট বারান্দা আছে। সেখানে দুটো চেয়ার কোনও মতে বসানো যায়। অবশ্য বারান্দায় বসে মনোহর কিছু দেখা যায় না ঠিকই। তবে সামনের রাস্তা দিয়ে গাড়ি-টাড়ি প্রচুর চলে। আর যেহেতু আমরা নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির কাছে থাকি। ছাত্রছাত্রীদের ভিড় সবসময়েই লেগে থাকে। কেউ হাঁটে, কেউ জগিং করে। রাস্তার পাশে একটা স্টারবাক কফিশপ আছে – তার সামনের চত্বরে চেয়ার-টেবিল সাজানো। সেখানে দু-একজন বসে থাকে ল্যাপটপ খুলে, বেশির ভাগই হাত-পা ছড়িয়ে কফি, এস্প্রেসো, মোচা লাতে, বেগেল ইত্যাদি খায় আর প্রচণ্ড হৈচৈ করে। আটতলার উপরে বসে সেসব দেখতে মন্দ লাগে না। এখন আর সেটা সম্ভব নয়। একেনবাবু বারান্দায় গোটা পনেরো ফুল গাছের টব বসিয়েছেন। বই ঘেঁটে ঘেঁটে নানান গাছগুলোর নানান তদারকি চলছে।

বাগান সম্পর্কে আমার চিরদিনের ধারণা মাটি কুপিয়ে বীজ বা চারা লাগানো। মাঝেমধ্যে গোবর সার জাতীয় কিছু দেওয়া। আজকাল আরও হরেক রকমের কেমিক্যাল সার বেরিয়েছে জানি, কিন্তু তা কতটা ব্যবহার করতে হবে, কখন দিতে হবে, কোনও গাছে দিতে হবে – সে সম্পর্কে আমার কোনও ধারণাই নেই। কিন্তু একেনবাবুকে বইয়ের পাতা ঘন ঘন উলটে সাদা, খয়েরি, নীল, সবুজ – নানা রঙের দানা মেপে মেপে টবের উপর ফেলতে দেখে মনে হল এর থেকে কেমিস্ট্রির এক্সপেরিমেন্টও সহজ। প্রমথকে একদিন সেটা বলতে ও খ্যাঁক খেঁকিয়ে উঠলো, “রাখ তোর একেনবাবুর বারান্দা-বাগান। এখন পর্যন্ত একটা ফুলও চোখে দেখলাম না, এদিকে বারান্দায় যাবার জো নেই। দেবো একদিন সব কিছু ফেলে।”
একেনবাবুর ডিফেন্স হচ্ছে ফুল ফোটার সময় এখনও আসে নি। আমাদের আরেকটু ধৈর্য ধরতে হবে। তবে উনি যে একটু উদ্বিগ্ন সেটা বুঝলাম। একদিন বলেই ফেললেন, “সূর্যের আলো বেশি আসছে না স্যার বারান্দায়।”
প্রমথ সামনে ছিল। বলল, “তা আপনি কি করতে বলেন, বারান্দাটাকে ঘুরিয়ে পূব মুখো করে দেবো। এদিকে যে আলো বেশি আসে না – সেটাতো দুবছর ধরে দেখছেনই, কি তাহলে বাগানের এক্সপার্ট হলেন!”
“না তা নয় স্যার, ফুল আসবেই। তবে কিনা পুরো পোটেনশিয়ালটা রিয়্যালাইজ হবে না।”
“আর্টিফিশিয়াল লাইট লাগান। তবে ইলেক্ট্রিসিটির বিল আপনি দেবেন, শেয়ার করুন স্যার বলে বায়না ধরবেন না। ইনফ্যাক্ট, বারান্দাটাতো আমরা কেউ ব্যবহার করতে পারছি না, বাপী বরং বারান্দার এরিয়াটা ক্যালকুলেট করে আপনার ভাড়ার শেয়ারটা বাড়িয়ে দিক।”
প্রমথ সত্যিই একেনবাবুর পেছনে লাগতে পারে!
“কিযে বলেন স্যার, এই ফুলগুলো যখন ফুটতে শুরু করবে, কি রকম শোভা হবে বলুনতো? আমি জানি ম্যাডাম ফ্র্যান্সিস্কা ফুল ভালোবাসেন।”
ফ্র্যান্সিস্কা প্রমথর গার্লফ্রেণ্ড, যদিও প্রমথ গার্লফ্রেণ্ড কথাটা শুনলে তেলে-বেগুন হয়ে যায়। জাস্ট ফ্রেণ্ড – আগে আবার বিশেষণ যোগ করতে হবে কেন?
যাক গে ওসব কথা। একেনবাবুর এই গার্ডেন প্রজেক্ট যে পর্বতের মূষিক প্রসব সেটা আমরা দুজনেই আঁচ করছি। মনে মনে ভাবি ভাগ্যিস দেশের চাষিভাইরা বেশি পড়া-লেখা করেন না, নইলে বাজারে চাল-ডাল-সবজি পাওয়া যেত না।

আজ সকালে একেনবাবু আর প্রমথ দুজনেই বেরিয়েছে। একেনবাবুকে গাছের জন্য একটা ওষুধ কিনতে হবে। একটা গাছের পাতায় লিফ মাইনর না কি একটা অসুখ হয়েছে। ভদ্রলোক সত্যিই ক্ষেপে গেছেন। এমনিতে হাড়-কিপ্পন, কিন্তু গাছের পেছনে যা খর্চা করেছেন, তা দিয়ে উনি স্বচ্ছন্দে ওঁর পুরনো অল-ওয়েদার কোটটি বিসর্জন দিয়ে একটা নতুন কোট কিনতে পারতেন। কি আর করা ! তবে ওরা যাওয়াতে আমার সুবিধা হয়েছে। আজকে খুব রিল্যাক্স করে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনবো আর নিউ-ইয়র্ক টাইমস পড়ব। গত দু-সপ্তাহ ধরে খাতা দেখা আর একটা রিসার্চ পেপার লেখার চাপে গা ছেড়ে জীবনটা উপভোগ করা হয় নি। কিন্তু সেটা হবার কি জো আছে! ডিং ডং বেল। দরজা খুলে দেখি তারেক আলী।

“বুঝলেন বাপীদাদা, বাংলাভাষা আর সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখবে আমাদের বাংলাদেশ, আপনাদের পশ্চিমবঙ্গ নয়।”
কি খবর, কেমন আছেন দূরে থাক, হ্যালো পর্যন্ত নয়। প্রথমেই একটা যুদ্ধং দেহি ভাব!
চট করে তারেকের পরিচয়টা দিয়ে নিই। তারেক ক’মাস হল আমাদের পাশের অ্যাপার্টমেণ্টটা ভাড়া নিয়েছে। কোন একটা আই.টি ফার্মে কাজ করে। বাড়ি ঢাকাতে। কয়েক মাস হল এইচ-১ ভিসা নিয়ে আমেরিকায় এসেছে। শুধু তারেক নয়, ওর সঙ্গে মামুদ বলে আরও একটি ছেলে এসেছে – একই কোম্পানিতে চাকরি নিয়ে। কিন্তু মামুদ একটু মুখচোরা, বিশেষ আসে না। তারেকভায়া একাই একশো। একেনবাবুর সঙ্গে পাল্লা দেবার উপযুক্ত লোক। মাঝে মাঝে যখন তারেক আর একেনবাবুর বকবকানির সাঁড়াশি আক্রমণ শুরু হয়, তখন আমি কাজ আছে বলে অফিসে পালাই। তবে মাঝেমধ্যে তারেকের কথাগুলো মন্দ লাগে না। ছেলেটার মধ্যে একটা চাপা হিউমার আছে। সেই হিউমারটা পরিপূর্ণ রূপ পায় ওর বাঙ্গাল কথার টানে। সেই কথা আর সুরকে অক্ষরে তুলে ধরার ক্ষমতা আমার নেই। বাঙ্গাল পাঠকদের কাছে তাই আগেভাগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

একদিন হঠাৎ তারেক বলল, “বুঝলেন দাদা, বাংলাদেশের মতো প্রোগ্রেসিভ দেশ পৃথিবীর আর কোথাও নেই।”
প্রমথ সকালে সবার জন্য ডিমের অমলেট করছিল। রান্নাঘর থেকেই তারেকের কথা শুনে চেঁচিয়ে বলল, “হোয়াট ননসেন্স!”
“ননসেন্স কেন দাদা, ভুলতো কিছু আমি বলছি না।”
আমিও বললাম, “কি প্রোগ্রেস এতো দেখলে শুনি?”
“আচ্ছা শোনেন। আমাদের প্রথম প্রেসিডেন্টকে আমরা সবংশে নিধন করেছি, দ্বিতীয় প্রেসিডেন্টকে শুধু একা মেরেছি। তৃতীয় প্রেসিডেণ্টকে মারি নি, শুধু জেলে পুরেছি – প্রগ্রেসটা একবার দ্যাখেন?”
প্রমথ যে প্রমথ সেও বলে উঠলো, “নাহে, এবার তোমার কথাটা মানছি।”

তারেক আসা মানে নিউ ইয়র্ক টাইমস পড়া আজ মাথায় উঠলো। অন্তত: ঘণ্টা খানেক বক্তৃতা করবেই। কিন্তু বাংলাদেশের ছেলে – দুই বাংলার মিলন ঘটাতে এসেছে তাকে তো তাড়ানো যায় না।
জিজ্ঞেস করলাম, “কফি খাবে?”
“না দাদা ”, তারেক বলল, “উত্তরটা কিন্তু দিলেন না, কথাটা আপনি মানেন?”
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কোন কথাটা?”
“এই যে বাংলা ভাষা আর সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার কথা।”
“তোমার এই কথা বলার বেসিস কি?”
“আপনারা।”
“আমরা ! হোয়াই?”
“এই যে দাদা, আপনারা কথায় কথায় ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করেন। ‘যুক্তি’ অথবা ‘কেন’ না বলে বললেন ‘বেসিস’ আর ‘হোয়াই’। বাংলা যখন বলবেন, তখন শুধু বাংলা বলবেন, ইংরেজি যখন শুধু ইংরেজি।”
কথাটা তারেক ভুল বলে নি। আমার অর্ধেক কথাতেই ইংরেজি শব্দ এসে যায়। ফ্র্যাঙ্কলি অনেক কথা বাংলাতে কি হবে সেটাই মাথায় আসে না। কিন্তু সাত সকালে তারেকের এই বক্তব্য আমি মানতে রাজি নই। ভাষা নিয়ে যুদ্ধ করেছিস – বেশ করেছিস, কিন্তু তা বলে পশ্চিমবঙ্গের বাংলাকে বাংলাদেশী বাংলা হারিয়ে দেবে – এ আবার কি আবদার ! বিশেষ করে যারা জলকে পাণি বলে, আর স্নানকে গোসল – তারা বাংলা নিয়ে মাতব্বরি করবে কেন? কিন্তু ওটা একটু ডেলিকেট সাবজেক্ট। তাই বললাম, “দ্যাট্‌স লাইফ। ভাষাতো চুপচাপ এক জায়গায় বসে থাকে না। প্রয়োজনে বদলায়। ইংরেজিতেওতো অনেক অন্যান্য ভাষা এসেছে।”
“কিন্তু তা বলে দাদা হোয়াই-কে বাংলায় নিয়ে আসবেন – ‘কি’-টা কি দোষ করল?”
“তোমরাওতো বাপু দিদিকে আপা বল, পিসি না মাসিকে বুয়া।”
“আপনি দাদা রেগে তক্ক করছেন। সত্যি ভেবে দেখুন, গান বলুন , নাটক বলুন, সিনেমা বলুন – বাংলাদেশের সঙ্গে কি আপনারা পেরে উঠছেন?”
“গানে তোমরা এগিয়ে আছো?”
“আছি দাদা। বার করুন একজন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।”
“স্যাম্পল অফ ওয়ান দিয়ে তুমি তোমার থিওরি প্রুভ করতে চাও ?”
“তা নয় দাদা, আপনারাতো আমাদের অন্য আর্টিস্টদের গান শোনেন না, বন্যাই এখানে আসেন – সেটাই শোনেন। তারপর দেখুন, নাটক বা টেলি ফিল্ম – অপি করিমের মতো বুদ্ধিদীপ্ত নায়িকা আপনাদের টিভিতে কেউ আছে? তিশা, মৌসুমি বা বিপাশা হায়াতের মতো সুন্দরী?”
“যাদের কথা বলছো, তাদের কাউকেই দেখি নি।”
“তাহলে বলি দেখুন দাদা, দেখলে আপনার চোখ জুড়বে, আর আমার সঙ্গে তর্ক করবেন না।”
“তুমি পশ্চিমবঙ্গের সব অ্যাক্টর অ্যাক্ট্রেসদের দেখেছো?”
“আলবৎ দাদা, নইলে তুলনামূলক বিচার করবো কি করে? পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের লেখা আমরা পড়ি, সিনেমা দেখি, সাপ্তাহিক মাসিক পত্রিকাগুলো পড়ি। সেগুলোওতো সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখার একটা অঙ্গ। এবার আপনি বলুন, বাংলাদেশের কি কি বই আপনি পড়েছেন?”
“দেখো বাপু, আমি ফিজিক্সের বই শেষ করারই সময় পাই না। বাংলা সাহিত্যতো দূরের কথা।”
“তাইতো বলছি দাদা, বাংলাকে বাংলাদেশই বাঁচিয়ে রাখবে।”

লাকিলি এই সময়ে একেনবাবু ঢুকলেন। “এই যে, স্যার, কি মনে করে?”
“এই দাদার সঙ্গে একটু গল্প করতে এসেছিলাম।”
“বাপু সত্যি কথাটাই বল না – তর্ক জুড়তে এসেছ।”
“কিযে বলেন দাদা, তর্ক নয়, একটু আলোচনা।”
“কি নিয়ে আলোচনা স্যার, বলুন একটু শুনি?”
“আমি বলছিলাম বাংলা সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখবে বাংলাদেশ – পশ্চিমবঙ্গ নয়। কিন্তু দাদা মানতে রাজি নন।”
“কেন স্যার ?”
“আপনি তারেকের পক্ষ নিচ্ছেন?”
“পক্ষ নিচ্ছি না স্যার, আপনার পজিশনটা বুঝতে চাচ্ছি।”
“আমার কোনো পজিশনই নেই – এইসবে সময় নষ্ট করা।”
“এইটে দাদা ঠিক বলেছেন। আপনারা যাঁরা পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবী – তাঁরা বাংলা নিয়ে সময়ে নষ্ট করছেন না বলেই বাংলাভাষা পশ্চিমবঙ্গে ধ্বংস হবে।”
“চুকে যাবে, এখনতো ইংরেজি আর হিন্দিরই যুগ।”
“তা হোক দাদা, কিন্তু একেনবাবুর যে কাহিনীগুলো লিখছেন – সেগুলোওতো কেউ পড়বে না।”
“এখনও কেউ পড়ে নাকি ?” প্রমথ কখন ঘরে ঢুকেছে আমি টেরও পাই নি। “লোকে না জানে একেনবাবুকে, না জানে বাপীকে।”
“কেন দাদা, আমিতো পড়েছি।”
প্রমথ কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে ওস্তাদ। বলল, “তাই নাকি? কোত্থেকে?”
“ঐ যে আপনাদের একটা পত্রিকা বেরোয় সুখী গৃহকোণ – সেইখানে?”
“কোথায়, বাংলাদেশে যখন ছিলে?”
“না না, বাপী দাদা পড়তে দিয়েছিলেন।”
“তাহলে মোট দুজন পড়েছো – বাপী নিজে আর তুমি। কারণ আমি পড়ি নি, একেনবাবুও না।”
“কিযে বলেন প্রমথদা, মামুদও পড়েছে।”
“তাহলে তিনজন। তবে জিজ্ঞেস করে দেখো – পুরোটা পড়েছে কিনা। কারণ বাপীর লেখাটা কয়েক পাতা পরেই ঝুলে যায়।”
“তুই থামবি ”, আমি বিরক্ত হয়ে বললাম।
একেনবাবু আমার পক্ষ নিয়ে বললেন, “কিযে বলেন স্যার, সুখী গৃহকোণতো এখন অনেক সেল হয়।”
“সে নিয়ে তো আমি প্রশ্ন তুলছি না। ডিকশনারিতো প্রচুর বিক্রি হয়, আপনিওতো কিনেছেন একটা। কোনোদিন ব্যবহার করেছেন?”
প্রমথর পাঞ্চগুলো একেবারে র‍্যাণ্ডাম। সত্যি কোনো বানান জানতে হলে একেনবাবু প্রমথকেই জিজ্ঞেস করেন। না থাকলে আমাকে। ডিকশনারিটা বহুদিন ধরেই তাকের উপর অবহেলিত হয়ে পড়ে আছে।
“বই কিনলেই যদি পড়া হয়ে যেতো, তাহলে এতগুলো ছাত্রছাত্রী প্রতি বছর ফেল করতো না।”
এই রকম অদ্ভুত যুক্তির সঙ্গে পাল্লা দেওয়া কঠিন। তারওপর প্রসঙ্গটা যখন আমার লেখা নিয়ে আমি এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করলাম না।

তবে প্রসঙ্গটা তারেকই পাল্টালো। বলল, “আসলে আমি এসেছিলাম একেনবাবুর কাছে।”
“আমার কাছে স্যার ! কি ব্যাপার ?”
“মামুদকে নিয়ে একটা সমস্যা হয়েছে।”
“কি সমস্যা?”
“বলছি।” তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “দাদা, তাহলে ঐ কফিটা বানান, খেতে খেতে বলি।”

কফি খেতে খেতে তারেক যা বলল সেটা হল মামুদ কয়েকদিন হল খুব ডিপ্রেসড হয়ে আছে। মামুদ এমনিতে কথাবার্তা কমই বলে। তবে এ ক’দিন দুয়েকটা হাঁ হুঁ ছাড়া আর কিছুই বলে নি। শেষে তারেকের পেড়াপেড়িতে ও জানিয়েছে দেশ থেকে একটা চিঠি পেয়ে ওর সন্দেহ হচ্ছে যে পাঁচ মাস আগে ওর বাবার মৃত্যুটার মধ্যে হয়তো কোনও রহস্য আছে – ওটা স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। তারেক যখন জিজ্ঞেস করেছে – কার চিঠি? মামুদ উত্তর দিয়েছে, চিঠিটা ওর বাবারই লেখা। এসেছে বাবার অ্যাটর্নির কাছ থেকে। যাইহোক, তারেক আর বিশেষ কিছু জানতে চায় নি। কিন্তু মামুদকে বলেছে যে, ও একবার একেনবাবুর সঙ্গে কথা বলে দেখুক। তিনি হয়তো এ বিষয়ে একটা মতামত দিতে পারবেন। মামুদ প্রথমে উত্সাহ দেখায় নি – বোধহয় ওর সমস্যা নিয়ে আর কাউকে বিব্রত করতে চায় নি। কিন্তু পরে রাজি হয়েছে। কিন্তু নিজে এ নিয়ে অনুরোধ করতে অসোয়াস্তি বোধ করছে, তাই তারেক এসেছে একেনবাবু মামুদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হবেন কিনা জানতে।
একেনবাবু সব শুনে বললেন, “কি আশ্চর্য স্যার, এটা কি কোনও কথার কথা!”