১৬. বসেছে কাব্যপাঠের আসর

বসেছে কাব্যপাঠের আসর।

ঋতুরঙ্গ কাব্য। বর্ষাখণ্ড শেষ করে প্রকৃতিদেবী সবেমাত্র শরৎখণ্ডের মলাটখানি খুলে ধরেছেন, এখনও তার ভিতরের শ্লোক পড়তে বাকী এখনও কাশের বনে বনে শুরু হয় নি শ্বেতচামরের ব্যজনারতি, শুধু ভোরের বাতাসে লেগেছে অকারণ পুলকের স্পন্দন। শুধু আকাশের নীলে দর্পনের স্বচ্ছতা, পাখীদের শিষে উল্লাসের তীক্ষ্ণতা। দেবী অনন্তকাল ধরে একই কাব্য আবৃত্তি করে চলেছেন, শেষ লাইনের পরই আবার গোড়ার লাইন, তবু সে কাব্য পুরনো হয়ে যায় নি, পুরনো হয়ে যায় না। অনন্তকালের মানুষের কাছে বয়ে নিয়ে আসে আশার বাণী, প্রত্যাশার স্বপ্ন, উৎসাহের সুর।

উৎসাহের জোয়ার লেগেছে বাংলার গ্রামে গ্রামে। প্রতীক্ষার উৎসাহ।

মা দুর্গা আসছেন!

আসছেন বাপের বাড়ি। কৈলাস থেকে মর্ত্যলোকে। এ কথা গল্পকথা নয়, বাংলার অন্তরের সত্য বিশ্বাসের কথা। বৎসরান্তে মা মাতৃরূপে আর কন্যারূপের সমন্বয় সাধন করে নেমে আসেন মাটি-মায়ের কোলে, এসে মায়ের কাছে সুখদুঃখের কথা কন, বিদায়কালে চোখের জল ফেলেন, এ কথা কি অবিশ্বাসের? দেবতার সঙ্গে আত্মীয়তার বন্ধন পাতিয়ে, দেবতাকে ঘরের লোক করে নিয়েই তো বাঙ্গালির ঘরকনা। তাই তারা শিবের বিয়ে দেয়, ইতু-মনসার ‘সাধ’ দেয়, ভাদুকে সোহাগ করে আর পার্বতাঁকে পতিগৃহে পাঠাতে চোখের জলে বুক ভাসায়। আর সবাই তবু দেবদেবী, উমা যে সেই ঘরের মেয়ে। মহিমায় তার সহস্র নাম থাক, আসল নাম যে সেই উমা নামটি। শরৎ পড়তেই ভিখারী বৈষ্ণবরা সেই কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে যায় খঞ্জনীর তালে তালে। আয় মা উমাশশী, নিরখি মুখশশী, দিবানিশি আছি আসার আশায়।

হয়তো একটি গ্রামে একটি মাত্র ভাগ্যবানের বাড়িতেই কন্যারূপিণী জগন্মাতার পদার্পণ ঘটবে, কিন্তু গ্রামের প্রতিটি ঘরের অন্তরবীণায় বাজছে আগমনীর সুর।

এবারে আশ্বিনের প্রথম দিকেই পূজো, তাই ভাদ্র পড়তে পড়তেই সাজ সাজ রব। সংসারের নিত্য রান্না খাওয়া বাদে অন্য সব কিছুতেই যে করা চাই মাসখানেকের মত আয়োজন। পূজোর মাসে তো আর কেউ মুড়ি ভাজবে না, চিড়ে কুটবে না, মুড়কি মাখবে না, পক্কান্ন রাঁধবে না, মেটে ঘরের দেয়াল নিকোবে না? এমন কি সলতে পাকানো, সুপুরি কাটা, নারকেলকাঠি চাছা, সবই সেরে রাখতে হবে দেবীপক্ষ পড়ার আগে। কোজাগরীর পর আবার এসব কাজে হাত, আবার কথায় ফোড় তোলা, আর তার সঙ্গে সদ্য-বিগত উৎসবের স্মৃতি রোমন্থন।

ভাদ্র মাসে শুধু যে আগমনীর প্রস্তুতি তাও তো নয়, বর্ষার পর যে অনেক কাজ এসে জোটে গেরস্তর মেয়েদের। স্যাঁৎসেঁতে বিছানা কথা, তোরঙ্গে তোলা কাপড় চাঁদর, ভাঁড়ারের সচ্ছরের মজুত বড়ি আচার, মশলাপাতি, ডাল কড়াই,–সব কিছুকে টেনে ভাদুরে রোদ খাওয়ানো তো কম কাজ নয়।

ভুবনেশ্বরীর মা নেই, ভাজেরাই সংসারের গিন্নী, কদিন থেকে দুপুরভোর এই কর্মকাণ্ড নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে তারা। আজ পড়েছে নাড় দিয়ে। হাঁড়িভর্তি মুগের নাড়ু, নারকেলের নাড় করে মাচায় তুলে রাখতে পারলে মাসখানেকের মত জলপানের দায়ে নিশ্চিন্দি। আর পূজোর মাসে ছেলেপুলের পাতে দুটো ভালমন্দ দিতেও হয়। ভুবনেশ্বরীর বড় ভাজ নিভাননী জোর হাতে নারকেল কুরছিল আর ছোট ভাজ সুকুমারী আঁতা ঘুরিয়ে মুগ ভাঙছিল, হঠাৎ উঠোনের দরজার শিকল নড়ে উঠল।

এই দেখ কাজের গুরু কামাই, নিভাননী নিচু গলায় বলে,কে আবার এখন বেড়াতে এল কাজ পণ্ড করতে! নে ছোট বৌ, ওঠ, দুয়োর খোল্।

সুকুমারীর অবশ্য মনোভাবটা ঠিক বড় জায়ের সমর্থক নয়, একঘেয়ে কাজ করতে করতে বাইরের হাওয়া একটু ভালই লাগে তার। নিভাননী যদি একটু গল্প-গাছা করতে জানে, মুখ বুজে খালি কাজ আর কাজ।

দরজা খুলেই সুকুমারী উল্লাসধ্বনি করে ওঠে, ওমা কি আশ্চর্য, পুবের সূয্যি কি পশ্চিমে উঠেছে আজ, না যার মুখ কখনও দেখি নি তার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠেছি?

এ হেন সংলাপে নিভাননীরও ব্যাজার মুখ কৌতূহলে সরস হয়, সে মুখ বাড়িয়ে বলে, কে এলো গো, কার সঙ্গে এত রসের কথা?

এই যে ডুমুরের ফুল, ঠাকুরঝি। বলে সুকুমারী তাড়াতাড়ি ননদের পা ধোবার জল আনতে ছোটে। ভুবনেশ্বরী মুখের ঘোমটা নামিয়ে দাওয়ায় বসে পড়ে ধুলো পা ঝুলিয়ে। ভাদ্দরের কড়া রোদে তার ফর্সা মুখটা লাল-টকটকে হয়ে উঠেছে, ঘোমটা দেওয়ার দরুন চুলের গোড়ায় আর গলার খাঁজে ঘাম গড়াচ্ছে।

এমন করে ভররোদে হেঁটে আসা ভুবনেশ্বরীর পক্ষে সত্যিই অভাবনীয় ঘটনা। একে তো আসাই তার কম, তাছাড়া যদি আসার বাসনা প্রকাশ করে, পাকি করে পাঠিয়ে দেন রামকালী। যদিও এর জন্যে বাড়ির আর পাঁচজন ঠেস্-টিটকারি দিতে ছাড়ে না, পাড়ার সমবয়সী বৌরা বলে ‘বাদশার বেগম’, তবু রামকালীর নির্দেশ মেনে চলতেই হয়।

কিন্তু আজ ব্যাপারটা কি?

পা ধোবার জল আর গামছা এগিয়ে দিয়ে একখানা ঝালর-বসানো হাতপাখা নিয়ে ননদকে বাতাস করতে থাকে সুকুমারী। একে তো গুরুজন, তায় আবার বড়লোকের ঘরনী।

কার সঙ্গে এলে? নিভাননী প্রশ্ন করে।

ভুবনেশ্বরী কিন্তু সে কথার উত্তরের আগেই বলে ওঠে, পাখায় ঝালর বসিয়েছে কে গো?

কে আবার, ছোটগিন্নি! নিভাননী অগ্রাহ্যে মুখ বাঁকিয়ে বলে, রাতদিন যিনি সংসারের সব্বতাতে বাহার কাটছেন!

সুকুমারীর মুখটা চুন হয়ে যায়, ভুবনেশ্বরী তাড়াতাড়ি বলে, তা বাহার কাটা তো ভালই, কেমন খাসা দেখাচ্ছে!

হোক গে, নিভাননী আর একবার মুখ বাঁকায়, এখন অবধি তো গাই দোয়াতে শিখল না, কুলো পাছড়াতে পারল না। পেঁকিশালে গিয়ে যা রঙ্গ, যদি দেখ তো বুঝবে। না পারে ‘পাড়’ দিতে, না পারে হাতে হাতে নেড়ে দিতে, পাড়াপড়শীকে তোয়াজ করে ডেকে এনে কাজ উদ্ধার করতে হয়। আসল কাজ চুলোয় দিয়ে ভাঁড়ারের হাঁড়ি-কলসীর গায়ে চিত্তির কেটে, শিকের দড়িতে কড়ির থোপনা গেঁথে, আর পাখার ঘাড়ে শালুর ঝালর ঝুলিয়ে গেরস্তর সগৃগের সিঁড়ি হবে!

ভুবনেশ্বরী দেখে হিতে বিপরীত, এই সূত্র ধরে নিভাননী আরও কোথায় গিয়ে পৌঁছবে কে জানে! তা হলে তো আসল কাজই মাটি। ছোট ভাজকেই যে আজ তার দরকার। তবু ভুবনেশ্বরী আবার একটা ভুল চালই করে বসে। বসে এইজন্যেই যে নিচুতলাদের নিন্দাবাদ করে ওপরওয়ালাদের প্রসন্ন রাখার যে চিরন্তন কৌশল, সে কৌশলটা তার ভাল আয়ত্তে নেই বলেই। নিজের বাড়িতে তো সেই ভয়ে সে কথাই কয় না সহজে। দেখে ঘোমটা আর নীরবতা অনেক বিপদের রক্ষক। কিন্তু এটা নাকি ভুবনেশ্বরীর বাপের বাড়ি, তাই সাহসে ভর করে বলে বসে, কেন বাপু, এই তো বেশ ডাল ভাজছে। মুড়ি ভাজতেও পারে। অত বড় একখানা শহরের মেয়ে, আর কত পারবে?

তা বটে! নিভাননী একটি উত্তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বলে, শহর কখনও চোখে দেখিনি, তার মম্মও জানি নে। ঘর-সংসারই বুঝি, আর বুঝি মেয়েমানুষের সেখানে হেরে গেলে লজ্জায় মাথা কাটা যায়… বসো একটু, গুড়ের পানা করে আনি, রোদে এসেছ।

রোদের সময় ঘরে কিছু না থাক, আখের গুড় জলে গুলে তাতে পাতিলেবুর রস মিশিয়ে খাওয়ার রেওয়াজ এদিকে আছে, নিভাননীর মগজে সেই সহজটাই আসে। কিন্তু সুকুমারীর ওই গুড়ের পানা জিনিসটায় বিষম বিতৃষ্ণা, তাই সে বড়জায়ের ওপর কথা-কওয়া-রূপ অসমসাহসিক কাজটাও করে বসে ননদের প্রতি সমীহে। সসংকোচে বলে ফেলে, কেন দিদি, মিছরি নারকেল গাছের ডাব তো পাড়ানো রয়েছে ঘরে!

রয়েছে সেটা নিভাননীর মনে ছিল না, কিন্তু মনে পড়িয়ে দেওয়ায় অপদস্থের একশেষ হয়ে যায় সে। কে জানে ননদ মনে করল কিনা, ইচ্ছে করেই ডাবের কথাটা বিস্মৃত হয়েছে সে। এই ছোট বৌটা দেখতে ভালমানুষ হলে কি হবে, টিপে ডান। কিন্তু এক্ষেত্রে নিভাননীকে মনের রাগ মনে চেপে হাসতেই হয়। হেসে বলতেই হয়, অই দেখ, ভাগ্যিস মনে করলি ছোটবৌ! আমার অমনিতর ভুলো মনই হয়েছে আজকাল, বুঝলে ঠাকুরঝি! ঠাকুর-জামাইয়ের কাছ থেকে এবার একটা সিঁতিশক্তির ওষুধ খেতে হবে। যা তবে ছোটবৌ, দুটো ডাব কেটে আন্ গে।

আহা, কেন ব্যস্ত হচ্ছ বড়বৌ? ভুবনেশ্বরী অকারণে গলা নামিয়ে বলে, আমি এসেছি বিশেষ একটা দরকারে পড়ে, এখুনি চলে যেতে হবে।

ওমা শোন কথা! এখুনি চলে যেতে হবে কি গো? কি এমন বিশেষ দরকার পড়ল? এলেই বা কার সঙ্গে, যাবেই বা কার সঙ্গে? একা নাকি?

একা? ভুবনেশ্বরী হেসে ওঠে, সে আর এ কাঠামোয় হবে না। এসেছি পিসশাশুড়ির সঙ্গে। দুয়োর থেকে আমাকে ছেড়ে দিয়ে গেলেন, আবার ফিরতি মুখে ডেকে নিয়ে যাবেন। চুপিসারে চলে এসেছি, ঘরে কেউ জানে না।

ঠাকুরজামাই? নিভাননী রহস্যের হাসি হাসে।

ভুবনেশ্বরী নিভাননীর ঠাকুরজামাইয়ের প্রসঙ্গেই মাথার কাপড়টা একটু টেনে বলে, তিনি তো ভিন গাঁয়ে গেছেন রুগী দেখতে, নইলে আর এত বুকের পাটা! নিতান্ত কারে পড়েই আসা। পিসশাশুড়ী সইয়ের বাড়ি আসছেন শুনে খুব কাকুতি করলাম, বলি, ওই পথ দিযেই তো যাবে পিসীমা! তা সেদিকে ভাল আছেন মানুষটা, কেউ শরণ নিলে তাকে বুক দিয়ে আগলান।

তা কাজটা কি?

এবার ভুবনেশ্বরী থতমত খায়, কাজটা কি সেটা নিভাননীর সামনে বলা সঙ্গত কিনা এতক্ষণে খেয়াল হয়। আসলে এসেছে সে সুকুমারীর কাছে একখণ্ড লেখা কাগজ নিয়ে, যে কাগজের হিজিবিজি রেখাগুলো এক দুর্বোধ্য কুটি হেনে তার দিকে ক্রমাগত তাকিয়ে আছে আজ কদিন থেকে।

সত্যবতীর লেখা একখণ্ড কাগজ।

জিনিসটা ভুবনেশ্বরীকে ভাবিয়ে তুলেছে। ঘরের কোণে ঘাড় গুঁজে লিখছিল সত্যবতী, হঠাৎ বুঝি দালানে কুমোর এল এই বার্তা পেয়ে ছুটে চলে গিয়েছিল নেড়ু পুণ্যি আরও কুচোকাঁচাঁদের সঙ্গে, কাগজখানা চৌকিতে পাতা শেতলপাটির তলায় খুঁজে রেখে। ভুবনেশ্বরী কৌতূহলপরবশ হয়ে পাটিটি ঈষৎ উঁচু করে তুলে দেখতে গিয়েছিল কেমন আখর সত্যর হাতের কিন্তু দেখতে গিয়েই স্তম্ভিত হয়ে গেল, গোটা গোটা আখরে ঠিক পদ্যর ছাঁদে এ কি লিখছিল সত্য?

নকল করছিল?

কিন্তু নকল করবে যদি তো সামনে বই খোলা কই? সর্বনেশে মেয়ে নিজেই পয়ার বাঁধছে নাকি? ভয়ে বুকের রক্ত হিম হয়ে গিয়েছিল ভুবনেশ্বরীর, কিন্তু কাকে দেখিয়ে রহস্যের মীমাংসা হবে?

রামকালীকে তার বড় ভয়।

রাসুকে বলতে গেলে পাঁচকান হবার সম্ভাবনা। তাছাড়া বাড়িতে আর যারা লিখন-পঠনক্ষম, সকলেই তো ভুবনেশ্বরীর শ্বশুর ভাসুর, ভেবে আর কুলকিনারা পাচ্ছিল না বেচারা। তারপর সহসাই মনে পড়ল সুকুমারীর কথা।

সুকুমারী পড়তে জানে।

বামালটা সরিয়ে ফেলে সুকুমারীর কাছে আসার তাল খুঁজছিল সে দু-তিন দিন থেকে। আড়চোখে দেখেছে, সত্য কখন একসময় শেতলপাটি উল্টে লণ্ডভণ্ড করে খোজাখুঁজি করেছে, আবার ‘ধুত্তোর’ বলে নতুন কাগজ নিয়ে বসেছে! সে কাগজে আর কোন্ রহস্যের রেখা এঁকেছে সত্য, সে কথা ভুবনেশ্বরীর অজ্ঞাত, জিজ্ঞেস করতে গেলে সত্য মারমুখী হয়। বাড়ির লোকের জ্বালায় যে একদণ্ড নিরিবিলিতে বসবার জো নেই তার, এ কথা স্পষ্ট গলায় ঘোষণা করতে বাধে না সত্যবতীর।

অতএব এই টুকরোটুকুই ভরসা।

ঘাড় গুঁজে গুঁজে কি এত লেখে সে জানবার জন্যে মায়ের মন নানা কারণেই ব্যাকুল হয়। ব্যাকুল হয় কৌতূহলে, ব্যাকুল হয় আশঙ্কায়।

সত্যকে যে শ্বশুরবাড়ি যেতে হবে!

হায়, সত্য যদি ভুবনেশ্বরীর মেয়ে না হয়ে ছেলে হত! বাপের উপযুক্তই হত। কিন্তু ভুবনেশ্বরীর কপালে এক তরকারি নুনে বিষ। একটা সন্তান, তা মেয়ে!

কি গো ঠাকুরঝি, বাক্যি-ওক্যি নেই কেন? নিভাননী অবাক হয়। এত কুণ্ঠা কিসের?

গরীব ননদ নয় যে আশঙ্কা করবে ধার চাইতে এসেছে ভাজের কাছে।

আর চেপে রাখা চলে না, ঢোক গিলে বলতেই হয় ভুবনেশ্বরীকে– এসেছিলাম ছোট বৌয়ের কাছে, একটা কাগজ পড়ানোর দরকার ছিল।

কাগজ! নিভাননী আকাশ থেকে পড়ে, কাগজ কিসের? কোন পাট্টা কোবালা নাকি?

না না,ওমা সে কি? সে সব আমি কোথায় পাব? এ ইয়ে–একটু চিঠির মতন।

চিঠির মতন! সেটা আবার কি বস্তু ঠাকুরঝি? আর সে পড়ানোর লোক তোমার বাড়ি হাঁটকে একটা পুরুষ বেটাছেলে কাউকে পেলে না, সাতপাড়া ডিঙিয়ে একটা মেয়েমাগীর কাছে পড়তে এলে? কিছু গোপন বুঝি?

সুকুমারী গিয়েছে ডাব কাটতে। ভুবনেশ্বরী অসহায় ভাবে একবার এদিক ওদিক তাকিয়ে সহসাই দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে বলে, কি যে বলো বড়বৌ, গোপন আবার কি? এই সত্যর একটু লেখা। বলি অষ্টপ্রহর কি এত লেখে বসে দেখি তো! বাড়িতে কাউকে দেখালে রসাতল করবে তো মেয়ে?

নিভাননীর কানে আসতে বাকী ছিল না–সত্য লেখাপড়া করছে, তবু অজ্ঞের ভানে বলে, বল কি ঠাকুরঝি, সত্যও কি তার ছোটমামীর মতন লেখাপড়া করছে? কালে কালে হল কি? বলি মেয়ে কি তোমার শামলা এঁটে কাছারী যাবে? সবাই তো তোমার ভাইদের মতন ভালমানুষ নয় যে, যা ইচ্ছে তাই চলে যাবে, শ্বশুররা এ খবর টের পেলে?

কি করব বড়বৌ, জানোই তো তোমাদের ননদাইকে কেমন একজেদা? মেয়ে বললে পড়ব তো পড়ুক। মেয়ে আকাশের চাঁদ চাইলে চাঁদ পেড়ে আনতে যাবেন এমন মানুষ। তাই তো ভাবলাম, কি লেখে বসে দেখি! ছেলেবুদ্ধি!

বড় একটা পাথরবাটিতে ডাবের জল নিয়ে এসে দাঁড়াল সুকুমারী।

ও বাবা কত! এত পারব না ছোটবৌ, তুমি একটু ঢেলে নাও। বলে ভুবনেশ্বরী।

খাও না, রোদে এসেছ।

তা হোক, অতটা নয় বাপু।

অগত্যাই খানিকটা ঢালাঢলি করতে হল সুকুমারীকে। ভুবনেশ্বরী ইত্যবসরে ব্যাপারটাকে লঘুর পর্যায়ে ফেলবার বুদ্ধিটা এঁচে নিয়েছে, তাই ডাবের জলে চুমুক দিতে দিতে ঝট করে বাঁ হাতের মুঠো থেকে কাগজের টুকরোটা এগিয়ে দিয়ে বলে, এই নাও বিদ্যেবতী বৌ, পড় দিকিন এটা! আমরা তো চোখ থাকতে অন্ধ!

জন্ম জন্ম যেন অন্ধই থাকি বাবা- নিভাননী বিষমুখে বলে, যে জাতের দশহাত কাপড়ে কাছা নেই, তাদের আবার এত চোখ-কান ফোঁটার দরকার কি? বলে, কিন্তু জিনিসটার ওপর এমন ভাবে হুমড়ে পড়ে, দেখে মনে হয় চোখ-কান থাকলে মুহূর্তে গ্রাস করে ফেলত। ভুবনেশ্বরী যাই বলুক, জিনিসটায় যেন রহস্যের গন্ধ।

সুকুমারী কাগজখানা উল্টে-পাল্টে বলে, কি এ?

কি তা আমি বলব কেন? তুমি বলো? কৌতুকের হাসি হাসে ভুবনেশ্বরী।

একটা তো ত্রিপদী ছন্দের দেবীবন্দনা দেখছি, কার লেখা? খুব ভাল হাতের লেখা তো?

ত্রিপদী ছন্দ শব্দটা বুদ্ধিগ্রাহ্য নয়, কিন্তু দেবীবন্দনা কথাটার অর্থ জানা, তাই ভুবনেশ্বরীর বুক থেকে যেন একটা পাহাড় নেমে যায়, তবে জিনিসটা দোষণীয় নয়।

পড় তো শুনি?

সুকুমারী একটু শঙ্কিত দৃষ্টিতে বড়জায়ের দিকে তাকায়। নিভাননীর সামনে পড়া? তিনি এটাকে কোন আলোয় নেবেন? গুরুজনের প্রতি অসম্মাননা? কিন্তু নিভাননীই অভয় দেয়, নাও, পড়ই শুনি। হাবা কালা কানা অন্ধদের জ্ঞান দাও।

অতএব সুকুমারী একটু কেশে একটু ইতস্তত করে পড়ে–

এসো মা জননী                  দুর্গে ত্রিনয়নী,
        এসো এসো শিবজায়া,
        সন্তানের ঘরে                     এসো দয়া করে,
        মহেশ্বরী মহামায়া।
        তোমারে হেরিতে                 আশাভরা চিতে
        রয়েছি আকুল হয়ে,
        আসিবে মা তুমি                  এই মর্ত্যভূমি,
        পুত্র কন্যা সাথে লয়ে।
        একটি বৎসর                     শূন্য আছে ঘর
        দুঃখে আছি নিরবধি,
        দিবস রজনী                      কাটে দিন গুনি,   
        কবে দিন দেবে—

ওমা এ কি, শেষ নেই যে? সুকুমারী অবাক হয়ে বলে, এ স্তোত্তর কোথায় পেলে ঠাকুরঝি?

আর বল কেন? ভুবনেশ্বরী কুণ্ঠা দমন করতে হাতপাখাখানা তুলে জোরে জোরে নাড়তে নাড়তে বলে, সত্যর কীত্তি। লিখছিল–কুমোর এসে কাঠামো বাধছে শুনে ফেলে দিয়ে ছুটে গেল। আমি কুড়িয়ে তুলে–

তা নকল করেছে কোথা থেকে?

সকৌতূহল প্রশ্ন করে সুকুমারী।

নকল করেছে তা মনে হল না ছোটবৌ, ভুবনেশ্বরী যাকে বলে, দোনামোনা সেই সুরে বলে, ও মুখপুড়ী নিয্যস নিজেই বেঁধেছে।

কি যে বল ঠাকুরঝি, সুকুমারীর কণ্ঠে অবিশ্বাস, নিজে বাঁধবে কি? অতটুকু মেয়ে এসব কথার মানে জানে?

জানে না কি করে বলি বৌ, মুখপুড়ী লুকিয়ে লুকিয়ে তোমার ননদাইয়ের কবরেজী শাস্তরের বইগুলো পর্যন্ত টেনে পড়তে বসে।

সে কথা আলাদা। পারুক না পারুক আম্বা করে বসে কিন্তু ছন্দ বেঁধে আখর মিলিয়ে এত বড় স্তোত্তর তৈরি কি সোজা নাকি?

ছোটবৌয়ের এই অবিশ্বাসের সুর ভুবনেশ্বরীকে ঈষৎ থতমত করছিল, কিন্তু মেঘ উড়িয়ে দিল নিভাননী, যে নিজে এতক্ষণ মুখে আষাঢ়ের মেঘ নামিয়ে ছোটজায়ের অবলীলাক্রমে’র দিকে তাকিয়ে দিল। সুকুমারীর কথা শেষ হতেই হাত নেড়ে বলে উঠল নিভাননী, তা এতে আশ্চয্যি হবার কি আছে ছোটবৌ? ঠাকুরঝি মনে বেদনা পাবে তাই রেখে-ঢেকে বলা, ঠাকুরঝির ওই মেয়েটিই কি সোজা? কতদিন আগে ভোদার নামে ছড়া বাঁধে নি ও? এ নয় মা-দুগগার নামে বেঁধেছে। তবে ভাবনার কথা বটে। ঠাকুর-জামাইয়ের দবদবায় আমরা দশজনা নয় মুখে চাবি দিয়ে আছি, কিন্তু কুটুম তো তা মানবে না? একবার টের পেলে–

কথা শেষ হল না, মোক্ষদার হন্তদন্ত মূর্তি দেখা গেল খোলা দরজার সামনে। চলে এস মেজবৌমা, ঝটপট চলে এস, ওদিকে এক কাণ্ড হয়েছে।

কাণ্ড হয়েছে!

কী সেই কাণ্ড!

ভুবনেশ্বরীর মুখে কথা যোগায় না, হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। সুকুমারী তো আগেই ঘোমটা টেনে বসেছে। তবে নিভাননীর কথা আলাদা, এ বাড়ির গিন্নীর পদটা তার, এগিয়ে গিয়ে বলে, কিসের কাণ্ড মাউইমা?

আর বলো না বাছা। সইয়ের বাড়িতে বসেছি কি না-বসেছি, রাখলা ছোঁড়া রণপা নিয়ে গিয়ে হাজির। কি সমাচার? না শীগগির চল, সত্যর শ্বশুরবাড়ি থেকে লোক এসেছে। ভাগ্যিস দিদিকে বলে এসেছিলাম সইয়ের বাড়ি যাচ্ছি।

নাঃ, মোক্ষদার কথা শেষ হতে পারে না, সহসা ভুবনেশ্বরী ডুকরে কেঁদে উঠেছে।

ওমা ও কি। কাঁদছ কেন মেজবৌমা? চল চল, অপিক্ষের সময় নেই। কিন্তু চলবে কে?

ভুবনেশ্বরীর শুধু পা দুখানাই নয়, সমস্ত লোমকূপগুলো পর্যন্ত যে অবশ হয়ে গেছে।

সত্যর শ্বশুরবাড়ি থেকে লোক!

অতএব আর সন্দেহ কি যে সমস্ত জানাজানি হয়ে গেছে। তা ছাড়া আর কি অর্থ থাকতে পারে এরকম বিনা নোটিসে হঠাৎ শ্বশুরবাড়ির লোক আসার? কোথায় কে ঘরশত্রু বিভীষণ আছে সে গিয়ে পলাগিয়ে দিয়েছে সত্যর এই মারাত্মক অপরাধের আর সত্যর বাপের ওই ভয়ানক দুঃসাহসের খবর। এর পর? এর পর আর কি ভুবনেশ্বরী ভাবতে পারে না, শুধু ডুকরোনোর মাত্রাটা বাড়িয়ে বলে ওঠে, ওগো পিসীমা গো, তুমি আমাকে এখানে মেরে ফেলে রেখে যাও, বাড়ি অবধি যেতে পারবো না আমি।

আহা অধোয্য হচ্ছ কেন মেজবৌমা? মোক্ষদা দেহটাকে প্রায় উলটোমুখো ঘুরিয়ে ব্যস্ত কণ্ঠে বললেন, এখনকি অধোয্যের সময়? এক্ষুনি না যেতে পারো একটু সামলে নিয়ে ভেজের সঙ্গে যেও, আমি চললাম। পা তো আমারও কাঁপছে, কে জানে কী বার্তা নিজে এসেছে! তা বলে কোত্তব্য ত্যাগ করা চলে না। আচ্ছা, আমি এগোলাম।

‘রণপা’ ব্যতীতই রণপায়ের বেগে অদৃশ্য হয়ে যান মোক্ষদা।

.

ভুবনেশ্বরী যখন নিভাননীর সঙ্গে সন্তর্পণে খিড়কি দরজা দিয়ে ঢুকল, তখন বাড়ির চেহারা নিস্পন্দ।

যেন এইমাত্র কেউ একটা শোকসংবাদ পাঠিয়েছে।

তা হলে?

নিভাননী ফিসফিস করে বলে, বাড়ি এমন থমথমে কেন বল তো ঠাকুরঝি? মন তো ভাল নিচ্ছে না। আর পোড়া মনের স্বধৰ্ম্মই তো কু-কথা গাওয়া। জামাইয়ের কিছু দুঃসংবাদ নেই তো?

আধমরা মানুষটাকে চৌদ্দ আনা মেরে নিভাননী হৃষ্টচিত্তে উঠোনে পা দিয়ে এদিক ওদিক তাকায়।

দালানে কারা যেন নিঃশব্দে জটলা করে বসে রয়েছে, ঘোমটা দিয়ে বোধ করি সারদা ঘোরাঘুরি করছে, ছোট ছেলেমেয়েগুলোর পাত্তা নেই।

এসো ঠাকুরঝি উঠে এসো, নিয়তি যা করবে তা সইতেই হবে, এখন দেখি গে চল কার কি হল।

নিভাননী নিজে বুঝতে পারুক না-পারুক, তার অবচেতন মনের একটা ফটোগ্রাফ নিতে পারলে সেখানে একটা প্রত্যাশার ছবি দেখতে পাওয়া যেত। জামাইটির কিছু হলেই যেন প্রত্যাশাটি পূর্ণ হয়। নন্দাইয়ের দবদবা সেই গহন গভীরে যে একটি অনির্বাণ দাহ সৃষ্টি করে রেখেছে, সেটাও বুঝি কিঞ্চিৎ শীতল হয় এমন একটা কিছু হলে।

ভুবনেশ্বরী কিন্তু দাওয়ায় উঠে দালানের চৌকাঠ পার হবার সাহস সঞ্চয় করতে পারে না, উঠোনের পৈঠেতেই বসে পড়ে বলে, আমার হাত পা উঠছে না বড়বৌ, তুমি দেখ গে।

শোন কথা! তুমি এখেনে এমন করে বসে থাকলে চলবে কেন? ভীমের গদা বুকে পড়লেও তো বুক পেতে নিতে হবে ঠাকুরঝি! কণ্ঠস্বর সহানুভূতিতে কোমল হয়ে আসে নিভাননীর, চল, আমি তোমায় আগলে দাঁড়াই গে।

ভয় যতই তীব্র হোক, ভয়ের আকর্ষণটাও যে ততোধিক তীব্র। কাজে কাজেই উঠে পড়ে ভুবনেশ্বরী। আস্তে আস্তে দাওয়ায় উঠে দালানের কোণের দিকের একটা জানলায় উঁকি মারে। নিভাননী অবশ্য দরজায় পৌঁচেছে।

কিন্তু ব্যাপারটা কি হল?

ভালমন্দের মত তো কিছু দেখাচ্ছে না। অন্তত সত্যর শ্বশুরবাড়ি থেকে আগতা হৃষ্টপুষ্টাঙ্গী রমণীটির হিসেবে তো মনে হচ্ছে পুরোপুরি ভালই।

হয় কোনও দাসী, নচেৎ নাপিতমেয়ে, এ ছাড়া আর কে-ই বা আসবে? যেই হোক, আপাতত তার আদরটা প্রায় মহারাণীর মত। জল খাওয়াতে বসানো হয়েছে তাকে, চারিদিকে ঘিরে বসে আছেন দীনতারিণী, কাশীশ্বরী, মোক্ষদা, শিবজায়া, ছোটজেঠী, তা ছাড়া আশ্রিতা প্রতিপালিতার ঝাঁক।

সকলের মুখের চেহারাতেই একটি ভক্তি-বিনম্র সমীহ ভাব।

আর মধ্যমণিটির মুখচ্ছবিতে অহংবোধের দৃপ্ত মহিমা। তার সামনে কানাউঁচু বড়সড় পাথরের খোরা, তার মধ্যস্থলে মন্দিরাকৃতি শুকনো চিড়ের স্থূপ, পাশে একটি উঁচু কালো পাথরবাটি ভর্তি দই এবং সন্নিকটে একখানি অঙট কলার পাতে স্থাপিত ছড়াখানেক চাটিম কলা, গণ্ডাচারেক দেদো মণ্ডা, একরাশ ফেনী বাতাসা এবং ক্ষীরের ছাঁচ, চন্দ্রপুলি, নারকেলনাড়, বেসননাড়ু ইত্যাদি বেশ একটি বড়গোছের সম্ভার।

অর্থাৎ ঘরে সংসারে যত প্রকারের মিষ্ট বস্তু ছিল, সব কিছু দিয়ে তুষ্ট করার চেষ্টা চলছে কুটুমবাড়ির নাপতিনীকে।

হ্যাঁ, নাপতিনীই।

মালুম হয় দীনতারিণীর কথাতেই। নিতান্ত কাকুতিভরা কণ্ঠে বলছেন তিনি, আর দুটোখানি চিড়ে দিই নাও নাপিত বেয়ান, আর বেয়ানই বা কেন, হিসেবে তো মেয়ে সুবাদ হচ্ছ, মেয়ে বলি। আর দুটো চিড়ে একেবারে মেখে জব্দ করে নাও মেয়ে, দইয়ে ভিজলে ও আর কটা? সেই কোন ভোরে বেরিয়েছে। রোদে একেবারে মুখচোখ সিটিয়ে গেছে।

ভুবনেশ্বরী বোধ করি বিহ্বলতার বশেই জানলা ছাড়তে ভুলে গিয়েছিল, নিষ্পলক নেত্রে ঠায় তাকিয়েছিল সেই দেবমূর্তি আর তার নৈবেদ্যের দিকে, হঠাৎ একসময় পিছনে একটা মৃদুকণ্ঠের আভাসে চমকে ফিরে তাকাল, পিছনে সারদা।

এখানে দাঁড়িয়ে কেন মেজখুড়িমা?

দাঁড়িয়ে কেন? এমনি। ঘরে ঢুকতে পা উঠছে না। ও কেন এসেছে বড়বৌমা?

কেন আর? সারদা অস্ফুট ম্রিয়মাণ গলায় বলে, এসেছে মস্ত উদ্দেশ্য নিয়ে। বৌ নিয়ে যাবার বার্তা পাঠিয়েছেন তাঁরা। আশ্বিন পড়তেই নিয়ে যাবেন বলছে।

আশ্বিন পড়তেই! বলো কি বড়বৌমা! এই কদিন বাদ?

তাই তো বলছে। একেবারে নাকি পুরুত দিয়ে দিন দেখিয়ে পাঠিয়েছেন তাঁরা।

কিছুক্ষণ স্তব্ধ থেকে ভুবনেশ্বরীর বুক ছিঁড়ে একটা প্রশ্ন ওঠে, সত্য টের পেয়েছে?

তা আর পায় নি?

কি করছে?

তা তো জানি না খুড়িমা। ভয়ে ভয়ে ঘরে গিয়ে সেঁধিয়েছে বোধ হয়!

আমি যে বাড়ি ছিলাম না–এটা কেউ টের পেয়েছে?

এবার সারদা একটু সত্য গোপন করে, বলতে পারছি না মেজখুড়িমা, বোধ হয় পান নি কেউ। গোলেমালে ব্যস্ত আছেন সবাই।

সত্য কথা বলা চলে না।

কারণ অনুপস্থিত ব্যক্তি সম্পর্কে যে ধরনের আলোচনা হয়, সেটা যথাযথ প্রকাশ করলে লাগিয়ে দেওয়া ভাঙিয়ে দেওয়ার পর্যায়ে পড়ে।

ব্যস্ত থাকলেই বাঁচন ভুবনেশ্বরী আর একটা দীর্ঘশ্বাস-বাক্যে উচ্চারণ করে। কিন্তু এখন হঠাৎ এ কি বিপদ বড়বৌমা!

বড়বৌমা কিছু বলার আগেই নাপিত-মেয়ের মাজা-ঘষা চাচা গলাটি ধ্বনিত হয়, বাপ বাড়ি নেই বলে মত দিতে ছুতো করছ কেন মাউইমা? আমি তো আর আজই নে যাচ্ছি না। আমাকে এ মাসের কটা দিন এখেনে থেকে একেবারে আশ্বিনের তেসরা তারিখে নিয়ে যেতে বলেছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *