১৫. থামল সেলিনা

থামল সেলিনা। কি সহজ সাবলীলতায় নিজেকে মেলে ধরল ও। সুরও ছন্দে এক অনবদ্য কবিতা যেন? না এমন করে কেউ আজো হৃদয়ে দোলা দেয় নি। গর্ব ও আবেগে সত্যি তাকে বুকের কাছে টেনে নিতে চাইলো মন। কিন্তু নির্জন অন্ধকার যা দিতে পারেনি, তাই দেবে এই প্রখর আলোক ধারা? হায় ভালবাসা তোমাকে বুঝিনি কোন দিন। আজো তাই অন্ধকারে চির রহস্যে ঢাকা থাক তুমি। যদি প্রেমের প্রদীপ কোন দিন জ্বলে আমার হৃদয় মন্দিরে, সেইদিন খুঁজে নেবো। আজ তুমি থাক, গোপনতার আবরণে নিজেকে আচ্ছাদিত করে।

সেলিনা বলল, আমার কথাতো বললাম, এবার বল কি চাও তুমি আমার কাছে? বললাম যা তুমি দিতে চাও, তাই দাও নিঃস্ব করে হিংসা অথবা ভালবাসা, ঈর্ষা অথবা রাগ। বলল, দিলাম তোমাকে আমি সর্বস্ব উজাড় করে, এবার পারবে কি মেলাতে, না মেলা অংক তোমার। শুধু অপলক তাকিয়ে বললাম পারব, সেলিনা পারব।

বাস্তব যখন মিথ্যে হয়ে স্বপ্নের জগতে ডানা মেলেছে, আকবর বললো, এসে গেছি সাহেব, আর গাড়ী যাবে না, এবার হাঁটতে হবে। হঠাৎ যেন সম্বিৎ ফিরে পেয়ে নেমে এলাম ভূমিতে। বললাম তাইতো, একটু চা খেলে হয় না? আকবর বলল, আপনারা বসুন, আমি নিয়ে আসছি।

মোসলেমউদ্দীন বাড়ীতেই ছিলেন। গ্রামের বাড়ী যে রকম হয় সে রকম বাড়ী। বয়স হয়েছে ভদ্রলোকের। আকবর বললেন মোসলে চাচা, একজন সাহেব এবং একজন মেম সাহেব আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন, নিয়ে আসব? উনি বললেন, নিয়ে আসবি? আচ্ছা আয়।

সেলিনা এগিয়ে গিয়ে বলল, আদাব চাচা, আমার নাম সেলিনা, ঘোলাটে চোখ তুলে তাকালেন বৃদ্ধ। কি যেন খুঁজছিলেন সেলিনার অবয়বে। বললেন, কি নাম যেন বললি বেটি। সেলিনা। মাথা নাড়ালেন বৃদ্ধ! না সেতো নয় অস্পষ্ট উচ্চারণে মনে মনে বললেন বৃদ্ধ। সেলিনা বললেন, আমাকে চিনতে পারছেন না চাচা? আরার বৃদ্ধ তার ঘোলাটে চোখ দুটো যতটা সম্ভব বিস্ফোরিত করে তাকালেন ওর দিকে, কিন্তু কিছু না বলে আবার চুপ করে গেলেন। আকবর বললেন, চাচা মেহমানদের কিছু খাওয়াতে হবে তো, ইয়া আল্লাহ তাইতো। তা আকবর দেখতো বাপ ওদের জন্য কি করা যায়? আকবর চলে গেলেন। সেলিনা আবার ও বলল একদম চিনতে পারছেন না চাচা, সেই যে বেশ কিছুদিন আগে একবার এসেছিলাম। মোসলেমউদ্দীন কি যেন ভাবলেন। হয়তো মনে করবার চেষ্টা করলেন, সত্যি একে আগে দেখেছেন কি না। সেলিনা বলল, কি চাচা মনে পড়ছে তো! বৃদ্ধ যেন কিছু একটা খুঁজে পেয়েছেন, এই ভাবে বললেন, কি জানি বেটি। বয়স হয়েছে, সবতো আজকাল আর মনে থাকে না। আমি বরং তোমার চাচীকে ডাকছি। মোনা বলে হাক ছাড়লেন বৃদ্ধ মোসলেমউদ্দীন। মোসলেমউদ্দীন যতটা বৃদ্ধ, মোনা অর্থাৎ মনোয়ারা তা নয়, তাকে এখনো যুবতী বলে অনুমান করা ভুল নয়। সেলিনা এগিয়ে এসে বলল, আদাব চাচী, আসলামো অলাইকুম, ওয়ালাইকুম আসলাম, বললেন মনোয়ারা বেগম। তারপর বললেন, তোমাদের তো চিনতে পারলাম না মা। আমাদের চেনার কথা নয় চাচী, তারপর আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন, ওর নাম প্রান্তিক। রেহানা নামের একটি মেয়েকে খুঁজতে বেরিয়েছে, আর আমি এসেছি ডালিমের জন্য।

মনোয়ারা বেগম সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালেন আমাদের দিকে, বললেন, এ দুজনের কারো সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই আর চিনিও না। তাছাড়া এদের সম্পর্কে জানবার জন্য তোমরা আমাদের কাছে এসেছে কেন? সেলিনা বলল, কারণ ডালিমের একমাত্র পরিচিত এবং জীবিত আত্মীয় বলতে আমরা শুধু আপনাদেরই খোঁজ পেয়েছি, তাই ভাবলাম আপনারাই হয়তো দিতে পারেন কিছু তথ্য, কিছু প্রাথমিক জ্ঞান! বৃদ্ধ মোসলেমউদ্দীন বোধ হয় এতক্ষণে আমাদের আসল কারণটাও অনুধাবন করতে পেরেছেন, বললেন যা শেষ হয়ে গেছে, তা নিয়ে কেন টানাটানি করছ তোমরা। সেলিনা বলল, কারণ আমাদের বিশ্বাস রেহানা একদিন আপনার কাছেই এসেছিলেন এবং সেই নামেই একদিন ডালিমের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, সঙ্গে ছিলেন আপনি, বলুন সত্যি কি না। বৃদ্ধ চুপ করে রইলেন। সেলিনা হেসে ফেলে বললে, কি হলো চাচা, মনে পড়ছে, কথা না বলে শুধু মাথা নাড়ালেন মোসলেমউদ্দীন। আবারও হেসে ফেলল সেলিনা। বলল, এতক্ষণ তাহলে আমাকে চিনতে চাইছিলেন না কেন চাচা? না তা ঠিক নয় বেটি, তারপর ধীরে ধীরে বললেন, সেদিন সন্ধ্যার অন্ধকারে একটি মেয়ে এসে দাঁড়ালো আমাদের বাড়ীতে। বর্ষায় ভিজে একা কার। শীতে ঠক ঠক করে কাঁপছে। আমি বাইরে এসে বললাম কে বেটি তুমি? কি যেন এক উৎকণ্ঠায় হাঁফাচ্ছে ও। বড্ড মায়া হল, মনে হল সারাদিন মেয়েটির কিছু খাওয়া হয়নি। বললাম কি নাম বেটি, বলল রুকসানা, আমি তাকে ঘরে আসতে বলে মোনাকে বললাম, ওকে একটা শুকনো কিছু দাওতো। মোনা ওকে ঘরে নিয়ে গেলেন এবং শুকনো কিছু পরতে দিয়ে আমাকে এসে বললেন, কেন এই উটকো ঝামেলা বাঁধালে বলতো। আমি ওকে শান্ত হতে বলে বললাম, উটকো ঝামেলাতো জীবনে কতই লেগে থাকে, আবার তা মিটেও যায় যেমন, আসেও নতুন করে। কিন্তু একটা অসহায় মেয়ে তোমার দরজায় এসেছে, আগে ওকে সুস্থ হতে দাও, তারপর না হয় ভাবা যাবে, ঝামেলাটা উটকো কি না।

মেয়েটি ভিজে শাড়ী জামা ছেড়ে এলো আমার কাছে। আদাব জানিয়ে বলল, আমায় আপনি চিনবেন না চাচা, আমিও আপনাকে চিনি না। মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে আপনার সংবাদ নিয়ে তবেই আসছি। বললাম সেন্ট্রাল জেল থেকে? মানে তুমি এক পলাতক কয়েদী? ও শিউরে উঠে, বলল, না চাচা, আমি কয়েদী নই। আমি একজনার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম, যিনি ঐ সেন্ট্রাল জেলেই আছেন। দেখা পেলে? না পাইনি, মানে অনুমতি পাইনি। কেন? অনুমতি দেয়নি কেন? ও আর কোন উত্তর না দিয়ে বলল, তাইতো অপনার কাছে এলাম। ওখানেই জানলাম, ওর আপনি আত্মীয়, এবং একমাত্র আপনিই ওকে দেখতে যান। আমি? কি নাম তার? আমি যার সঙ্গে দেখা করতে চাই তব নাম ডালিম। ডালিম? তুমি ওকে চেন নাকি? বলল, শুধু চিনি না চাচা ভালভাবেই জানি তাকে। আর তার আজকের এই অবস্থার জন্য আমিই দায়ী। তুমিই দায়ী? বুঝতে পারছি না বেটি? বলব সেকথা সেজন্যই তো এসেছি। তার আগে আমার সম্পর্কে আপনার এবং চাচীর যে সন্দেহ দেখা দিয়েছে, তা যদি থাকে, তা হলেতো কোন কথাই বলতে পারবনা।

দেখ বেটি, বললেন সেলিনাকে, আজ পর্যন্ত ডালিমের খোঁজে কেউ আসেনি। এখান থেকে ৩/৪ টি গ্রাম পরে ডালিমের বাড়ী। ও যখন অনেক ছোট, তখন ওর বাবা মা মারা যায়। আমি ওর দুর সম্পর্কের চাচা হই। ছোট্ট তিন বছরের শিশু ডালিমকে আমি নিয়ে আসি। আমার প্রথম বিবি সন্তান হীন অবস্থায় মারা গেলে, মোনাকে বিয়ে করি। কিন্তু আল্লাহ যেখানে সহায় নন সামান্য মানুষ হয়ে আমরা সেখানে কি করতে পাবি। তাই নিঃসন্তান আমাদের বুকে ওকে মায়ের আদরে গ্রহণ করলেন ওর চাচী। ওকে লেখা পড়া আমি আমার সাধ্যমত করার চেষ্টা করেছি। বরাবর স্কুলে ও ভাল ছেলে ছিল। কোন দিন দ্বিতীয় হয়নি। এখানকার পড়া শেষ হলে, ও প্রেসিডেন্সিতে পড়তে যায়। ওখানে গিয়ে প্রথম প্রথম তার বিরুদ্ধে কিছুই শুনিনি। পরে শুনলাম, ও একটা বদসঙ্গে ভীড়ে গেছে। তাকে ২/১ বার সাবধান করানোব চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু শোনেনি। পরে ওর সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করি। তোমার চাচীকেও বলে দিই ওর সঙ্গে কোন সম্পর্ক রাখতে পারবেনা। কিন্তু যিনি ওকে সন্তান স্নেহে মানুষ করেছেন সেই মাতৃ মন কেমন করে মেনে নেবে এই কঠিন শাস্তি। মেয়েটি বলল, আপনি যা ভাবছেন তাতো সত্য নাও হতে পারে? জানিনা তুমি একথা কেন বলছ বেটি। তারপরে বলে চলেন এইখানে ও একটি মেয়েকে ভালবাসতো, আমাদেরও পছন্দ মেয়েটিকে। কিন্তু ওর অত্যাচারের শিকার হয়ে ও এখন সমাজেব বোঝ। শুধু তাই নয় কলকাতাতেও ও একটি মেয়েকে ভালবাসতো জেনেছিলাম মেয়েটিও ওকে ভালবাসতো, কিন্তু তাকেও অস্বীকার করে ওর কামনার আগুন জ্বলে উঠলো, ধাবিত হলো মেয়েটির বোনের দিকে। বাবা নই, তবু পিতৃত্বের অধিকারে তাকে মেনে নিতে পারলাম না। পারলাম না ক্ষমা করতে। ব্যথাভরা কণ্ঠে বলে চলেন, একদিন ও ওর দলবল নিয়ে ঢোকে সেই মেয়েটির বাড়ীতে। কামনার আগুনে ভস্মীভূত করতে চায় ওদের কৌমার্য। কোন বাবা তা মেনে নিতে পারে না। আমিও পারিনি। কোন উকিল পর্যন্ত। দিইনি ওর হয়ে। মনে মনে চেয়েছিলাম শাস্তি হোক ওর। কিন্তু এত বছরের সাজা হবে ভাবিনি। পরে যখন জানতে পারলাম, জেলখানায় বসেও সে বাইরের দলের সঙ্গে যোগসাজস রেখে প্রতিশোধ নিতে চাইছে। ভেবেছিলাম নিজের হাতে ওকে চরম শাস্তি দেব। মেয়েটি ডুকরে কেঁদে উঠে বলল, না চাচা এ শাস্তি আপনি দেবেন না। আমি অবাক হয়ে তাকালাম ওর দিকে। বললাম তুমি কে মা? আমি ওর এক বন্ধু। কিন্তু চাচা, যাদের জন্য ওর এই শাস্তি হয়েছে চেনেন তাদের কাউকে? না মা চিনিনা, তবে শুনেছি ওদের একজনের নাম রেহানা। আর একজন সেলিনা। আপনি ওদের কোন খোঁজ নেননি? না নিইনি, কারণ, আমিতো ওকে জানি, এই গ্রামেই তোতার সাক্ষী রয়েছে। কিন্তু মা, তুমি তার সঙ্গে দেখা করবে কেন? কারণ যাদের কথা আপনি বললেন তারাও আমার বন্ধু। তাই সকলের মঙ্গলের জন্য যদি ও ওর পথ থেকে ফিরে আসে তা হলে কয়েকটা অমূল্য জীবন বেঁচে যেতে পারে। বুঝলাম মা। বেশ, নিয়ে যাবো তোমাকে একদিন।

গিয়েছিলাম নিয়ে, আমিও সঙ্গে ছিলাম, ও বলেছিল, ডালিম এ পথ তোমার নয়, কেন এমন করছ? ফিরে এস। মানুষের ভালবাসার মাঝে খুঁজে নাও তোমার পথ। তুমি প্রেসিডেন্সির কৃতি ছাত্র, সেই পরিচয় নিয়ে মাথা উঁচু করে না দাঁড়িয়ে কেন এই ঘৃণ্য চক্রান্তের পথে এগিয়ে চলেছে। আরো অনেক কথা বলেছিল মেয়েটি। তার পর বলেছিল, কথা দাও ডালিম, এ পথ তুমি ছেড়ে দেবে, বিনিময়ে তুমি যা চাইবে আমি তোমাকে তাই দেব। ও বলেছিল পারবে না, দেওয়ার মনটাতো তোমার মরে গেছে। উত্তরে মেয়েটি বলেছিল একটা মানুষ যতদিন বেঁচে থাকে, ততদিন তার মন মরে না ডালিম, হয়তো ছাই চাপা হয়ে পড়ে থাকে, তারপর আবার কারো স্পর্শে সেই ছাই সরে গিয়ে আসল মনের সন্ধান পাওয়া যায়। তুমি পার না ফিবে আসতে? আবার নতুন করে জীবনকে সাজাতে ইচ্ছে করে না? করে বৈকি, কিন্তু কে আমাকে সেই নতুন পথের ঠিকানায় পৌঁছে দেবে? মেয়েটি বলল, আমি দেব ডালিম! ডালিম বলেছিল, কিন্তু যার মঙ্গলের জন্য আজ তুমি এসেছো, আমার নিষ্ঠুরতা থেকে যাকে তুমি বাঁচাতে এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার কি হবে? তার জন্য তোমাকে ভাবতে হবে না ডালিম, তুমি শুধু কথা দাও। এই পথ তুমি ছেড়ে দেবে! মেয়েটির চোখ ছল ছল করছিল। ডালিম বলেছিল, একটু ভাবতে সময় দাও। আমাকে তুমি বিশ্বাস করতে পারছ না? ভীষণ ইচ্ছে করছে তোমাকে বিশ্বাস করতে, কিন্তু তুমি তো আমার অতীত বা বর্তমান কোনটাই জান না। মেয়েটি বলল জানি! জান? তারপর ও বুলেছিল, জান তুমি আমারই জন্য তোমার মত আরেকটি মেযে আজ সমাজচ্যুতা। মেয়েটি বলল জানি। সবকিছু জেনেও তুমি চাইছো তুমি আমাকে পথ দেখাবে? দেখাবো ডালিম, কারণ আমার যিনি গুক, তিনি শিখিয়েছেন ভালবাসা মানুষের অন্তরের সম্পদ, ঐশ্বর্য দিয়ে হয়তো জগৎ কেনা যেতে পারে, কিন্তু হৃদয় কিনতে হলে চাই ভালবাসা। ডালিম বলেছিল, তুমি প্রান্তিকের কথা বলছো? মেয়েটি চুপ করেছিল। এদিকে জেল প্রহরী তাড়া দিচ্ছে সময় উত্তীর্ণ বলে। মেয়েটি আবারও বলল, তা হলে কি আমাকে খালি হাতে ফিরে যেতে হবে ডালিম? ডালিম বলল, এত বড় কঠিন সিদ্ধান্ত এত অল্প সময়ে নিই কি করে? তাছাড়া আমিতো একটা জীবন নষ্ট করিনি, অনেক জীবন নষ্ট করেছি, জীবনের সেই কাঠিন্য নিয়ে তোমার কথা কি ভাবে রাখবো একটু ভাবতে দাও। মেয়েটি বলল, তা হলে বল আবার কবে আসবো আমি। উত্তরে ডালিম বলেছিল, তুমি যে এসেছে এটাই আমায নতুন কিছু ভাবতে বলছে। ঠিক আছে তোমার কথা রাখতে পারবো কি না জানিনা তবু আগামী সপ্তাহে এসো। ছল ছল চোখে মেয়েটি বলল ডালিম ভাল থেকো। অনেক আশা নিয়ে তোমার কাছে এসেছিলাম, আমাকে ফিরিয়ে দিও না।

থামলেন বৃদ্ধ মোসলেমউদ্দীন। তার চোখ দুটিও বুঝি ছল ছল করে উঠেছে। সেলিনা বলল, মেয়েটি কি আপনার সঙ্গেই ফিরেছিলেন চাচা? হ্যাঁ জেলখানা থেকে এক সুঙ্গেই বেরিয়েছিলাম, বললাম চল মা আমার সাথে। ও যদি কোন দিন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে তবে তোমার জন্যই আসবে। ও বলল, আজ থাক চাচা, যদি আপনার সঙ্গে যাওয়ার মত হয়, সাতদিন পরেই যাব, ও নীচু হয়ে আমার পা স্পর্শ করলো, বললাম কোথায় যাবে? বলল, আপাতত বর্ধমান, ও চলে গেল তারপর।

সূঁচ পড়লেও শব্দ হবে, এমনি নিঃশব্দতা বিরাজ করছে। ধীরে ধীরে বৃদ্ধ বললেন সাতদিন পরে স্থানীয় থানা সংবাদ দিল, ডালিম আত্মহত্যা করেছে। হয়তো তার পাপের প্রায়শ্চিত্য করে গেছে এই ভাবে। কিন্তু বিশ্বাস কর, ওর মৃত্যু আমাকে আঘাত দেয়নি, মৃত্যুতেই যেন ওর সব দোষ স্বলন হয়ে গেছে। এক গভীর নিঃশব্দতা নেমে আসে আমাদের মধ্যে। কিছুক্ষন পরে মোসলেমউদ্দীন বলেন এর থেকে বেশী আর কিছু জানিনা আমি। সেলিনা বলল ও আর আসেনি কোনদিন। জানিনা মা। যেদিন ওর মৃত্যু সংবাদ পেলাম, সেদিনই তো মেয়েটির আসার কথা ছিল, হয়তো এসেও ছিল। ও মেয়ে কোন মিথ্যে আশ্বাস দিয়েছে বলে মনে হয় না। একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন বৃদ্ধ মোসলেমউদ্দীন। কিন্তু মা, এসব কথা জেনে তোমাদের কি লাভ? লাভ কিছু নেই চাচা। শুধু যাকে আপনারা রুকসানা বলে জানেন, ও যে রুকসানা নয় একথাটা আপনার জানা দরকার আর ওকেই খুঁজে বেড়াচ্ছি আমরা। অবাক হয়ে বৃদ্ধ বললেন রুকসানা নয়? তবে কে ওই মেয়েটি? ওইই রেহানা, আমার দিদি। হায় আল্লাহ আমি ওকে চিনতে পারলাম না। কি করে চিনবেন চাচা। ওকে তো আপনি কখনো দেখেননি। আর যে ছেলেটিকে ও পরবর্তী কালে ভালবেসে ছিল–হ্যাঁ, বৃদ্ধ বললেন, কি যেন নাম বলেছিল ডালিম। সেলিনা উত্তরে বলল প্রান্তিক, যাকে ও তার গুরু বলে পরিচয় দিয়েছিল, সেই প্রান্তিক অপনার সামনে। বৃদ্ধ ছল ছল চোখে তাকালেন আমার দিকে। বললেন তুমি প্রান্তিক? হ্যাঁ বলে বৃদ্ধের পা ছুঁয়ে প্রণাম করলাম। বৃদ্ধ কপালে করাঘাত করে বলতে লাগলেন, হায় আল্লাহ একি করলাম আমি। কেন তাকে আটকে রাখলাম না, কেন তাকে যেতে দিলাম। আল্লাহ্ কোনদিন আমায় ক্ষমা করবেন না, তারপর সেলিনার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি কে মা? আমি সেলিনা। তারপর সেলিনা জানতে চাইল, আপনাকে তো বলে গেছে ও বর্ধমান যাবে। ডালিমের কেউ কি আছে ওখানে? না মা, ডালিমের কোন বন্ধু বান্ধব থাকতে পারে কিন্তু কোন আত্মীয় স্বজন নেই। কিন্তু দুঃখ পেওনা মা, আমি চেষ্টা করবো এবং খুঁজে একদিন তাকে পাবই। পেতেই হবে আমাকে। খোদা–রহমানে রহিম, একদিন তার সাক্ষাৎ আমাকে মিলিয়ে দেবেনই। আকবর এসে ডাকল, চাচা, আপনার মেহমানদের জন্য মিষ্টি, মাছ ও মাংস এনেছি। বৃদ্ধ বললেন, যা তোর চাচীকে দিয়ে আয়।

বৃদ্ধের হৃদয় যেখানে এক অনাস্বাদিত আনন্দে ব্যাকুল হয়ে উঠেছে সেই খানে আঘাত হেনে সেলিনা বলল, চাচা আজ আর তাকে খুঁজে পেয়ে কি করবেন? উত্তেজিত হয়ে বৃদ্ধ বললেন কি করব মানে,–তাকে আমি ফিরিয়ে দেব তার গুরুর কাছে। যে মেয়ে তারই সমবয়সী কাউকে তার গুরু হিসাবে মানে–তার দামটা কি আমি হেলায় ফিরিয়ে দিতে পারি মা! সেলিনা বলল আচ্ছা চাচা, যাকে আপনি হৃদয় দিয়ে ভালবেসে নিজের সন্তানের মত মানুষ করেছেন, তার এই অকাল মৃত্যু আপনাকে কি আঘাত দেয়নি? না মা দেয়নি। আমি শিক্ষক মানুষ। আজীবন মানুষ গড়তে চেয়েছি। পারিনি যে, তার তত জ্বলন্ত প্রমাণ ডালিম। আজীবন যে মনুষত্ত্বকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এসেছি তার ঘরেই বেড়ে উঠেছে মনুষত্ত্বের কুলাংগার। তাকে যে মানবিকতায় গুণান্বিত করেছে যে আমাকে অন্তত শান্তিতে মৃত্যুর অধিকার দিয়েছে, তাকে কি খুঁজে পেতে চাইবে না। নিশ্চয়ই চাইবেন, কিন্তু আপনিতো ধর্মভীরু মুসলমান, একটি মুসলমান মেয়েকে পারবেন বিধর্মী হিন্দুর হাতে তুলে দিতে? যতটা সহজ ভাবে এ মেয়েকে বশকরা যাবে বলে ভেবেছিলেন মোসলেমউদ্দীন সাহেব, তা যে হবার নয়, সেলিনার প্রশ্নের বাঁকা গতি দেখে বুঝতে পারছেন উনি। কিন্তু আজীবন শিক্ষকতার সহজ সংযম তাকে স্থিতধি হতে সাহায্য করেছে, বললেন, ধর্ম সাধারণের আচরণের জন্য মা। আমি হয়তো আমারই মতো মনের কোন মেয়েকে কোন বিধর্মীর হাতে তুলে দিতে পারবো না, কিন্তু এ মেয়েটিতো তা নয়, তার মধ্যে মিশে আছে যে ভালবাসা আর মানবিকতার সহ-অবস্থান, কোন ধর্মের নিগড়ে তাকে বাঁধব কি করে? কথাটা আপনি কি ঠিক বলেছেন চাচা? ধর্মের সঙ্গে কি মানবিকতা ও ভালবাসার মিশ্রণ নেই? হয়তো আছে, কিন্তু মা, আমরা কি দেখতে পাই চারপাশে? আমরাই তো দেখি নিষ্পাপ ভালবাসাকে ধর্মের যুপকাষ্ঠে বলি হতে? তার জন্য কি ধর্ম দায়ী? পৃথিবীর কোন ধর্ম কি বলেছে দুটি ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের মধ্যে ভালবাসা থাকতে নেই? ধর্মের আসল সত্যকে আমরা অস্বীকার করে কতকগুলো বস্তাপচা আচরণকে আমরা ধর্ম বলে মনে করি বলে এই অসুবিধা গুলো হয়। তা না হলে পৃথিবীর কোন ধর্মের অন্তরতম সত্যের মধ্যে পার্থক্য নেই। সেলিনা বলল, তা হলে যে বিভিন্ন ধর্ম গুরুরা বলেন, তাদের ধর্মই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম? বৃদ্ধ বললেন যদি সেই সব ধর্ম গুদের মধ্যে ভালবাসা থাকে তা হলে কোন অসুবিধা নেই, কারণ আমি যা বিশ্বাস করি তাকে যদি সর্বশ্রেষ্ঠ বলে বিশ্বাস করতে না পারি তাহলে আমার বিশ্বাসটাই যে পলকা হয়ে যায়। তাই বলছি মা, সব ধর্ম ভীরু মানুষের কাছে নিজের ধর্মই শ্রেষ্ঠ। সেলিনা বলল, এই যে ইস্লাম বলে, ইস্লাম ধর্মই শ্রেষ্ঠ ধর্ম। মোসলেমউদ্দীন বললেন, এটা ঈশ্বর বলে না মা, ইলামকে যারা বিশ্বাস করেন এটা তাদের কথা। আর ঈশ্বরতো সব ধর্মের কাছেই ঈশ্বর, তিনি কেন বলবেন কোন ধর্ম শ্রেষ্ঠ, কোন ধর্ম শ্রেষ্ঠ নয়।

মোনোয়ারা বেগম এই সময় প্লেটে সাজিয়ে আলাদা আলাদা করে মিষ্টি নিয়ে এলেন আমাদের সকলের জন্য। মোসলেমউদ্দীন বললেন, কখন খেয়েছো কি জানি, এবার কিছু মুখে দিয়ে নাও। সেলিনা বলল, কিন্তু আমার যে অনেক কথা জানার আছে। খেতে খেতেই তো জানা যেতে পারে। আমরা সকলে মিষ্টির প্লেট তুলে নিলাম। সেলিনা জানতে চাইলো, আচ্ছা চাচা ইসলামের সব কিছুকেই কি আপনি চিরন্তন সত্য বলে বিশ্বাস করেন? চুপ করে রইলেন বৃদ্ধ কিছুক্ষণ, তারপর বললেন, তুমিতো নীচু ক্লাশে অংকের যোগ বিয়োগ করেছে, তাই না? সেখানেই শিখেছে যে ২ আর ২ যোগ করলে ৪ হয়, এটাকে কি তুমি অস্বীকার করতে পার? কি করে অস্বীকার করব? একে অস্বীকার করলে যে গোটা অংক শাস্ত্রকেই অস্বীকার করতে হয়। সেটাতো যুক্তির কথা নয় মা, তোমার যদি যুক্তির পরে সীমা হীন জ্ঞান থাকতো তাহলে হয়তো অস্বীকার করতে। আসলে তুমি যখন থেকে ০ থেকে ৯ পৰ্য্যন্ত সংখ্যা শিখেছো, সংখ্যা গুলোকে সংখ্যা হিসাবে মেনে নিয়েছে। যদি তুমিতা না মানতে, তাহলে সবাই যে ভাবে অংক মেলায় তুমি সেভাবে মিলাতে পারতেনা। এও সেই বিশ্বাস তাই না? তার ভালমন্দ যাইই থাকুক বিশ্বাস যদি তোমার অটুট না থাকতত প্রচলিত অংক শাস্ত্রে তুমি নিয়মিত ভুলই করে চলতে। আমি ইসলামকে বিশ্বাস করি। কোন সংখ্যার ভালমন্দের বিচার করার যেমন আমার কোন অধিকার নেই, তেমনি আমার ধর্মীয় বিশ্বাসের ও ভালমন্দের বিচার করার কোন অধিকার থাকতে পারে না।

সেলিনা বলল, আপনি যুক্তির পর যুক্তি সাজিয়ে আমার মুল প্রশ্নটাকে এড়িয়ে যাচ্ছেন চাচা, আমি জানতে চাইছি ইসলামের সবই কি চিরন্তন সত্য? যুগের প্রয়োজনে তার কি কোন পরিবর্তনই সম্ভব নয়?

বৃদ্ধ বললেন, অবিশ্বাসী মানুষকে আল্লাহর পদপ্রান্তে নিয়ে যাওয়াই ইস্লামের আদর্শ। বাদ বাকী আচরণ দিয়ে ধর্মের বিচার করা হয় তুমি কিসের পরিবর্তনের কথা জানতে চাইছে মা? সেলিনা বলল, আমি সেই আচার আচরণের কথাই বলছি। এর কি পরিবর্তন সম্ভব নয়? ইসলাম কি বলেছে এ আচরণ অপরিবর্তনীয়? মোসলেউদ্দীন বললেন মানবজীবনে আচরণের কয়েকটা দিক আছে। কিছু কিছু আচরণ আছে পৃথিবীর সব ধর্মের কাছে তা সমান সত্য। সেলিনা বলল ইলাম ধর্ম সম্পর্কে যে অভিযোগগুলি প্রায়ই করা হয় তা হলো ইলাম অসহিষ্ণু, ইলাম এক সঙ্গে এক পুরুষের চারটি বিয়েকে স্বীকৃতি দেয়। স্বামী রাগের বসে তিন তালাক উচ্চারণ করলে, স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর বিচ্ছেদ হয়ে যায়। কোন বিধর্মীকে ভালবাসলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সে যদি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তা হলে খুব একটা বাদ সাধা হয় না, অন্যথায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হয়। বিশেষত ভারীয় ইস্লামের ক্ষেত্রে দেখা গেছে এখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যা বিশ্বাস করে তার উল্টোটাকে ইস্লাম সত্য বলে গ্রহণ করে। ইলাম ধর্মাবলম্বী মানুষ সাধারণত অসাম্প্রদায়িক হয় না ইত্যাদি, এ সম্পর্কে আপনার অভিমত কি চাচা? বড় কঠিন প্রশ্ন মা, বুঝতে পারছি তুমি আমায় এ সমস্ত প্রশ্ন কেন করছ? আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধি মতো আমি তোমাকে ব্যাখা করার চেষ্টা করছি। তুমি বলেছে ইস্পাম অসহিষ্ণু কি না কিন্তু মা সহিষ্ণুতাই হচ্ছে ধর্মের মূলমন্ত্র। পৃথিবীর কোন ধর্মই অসহিষ্ণু হতে পারে না, ইসলামও নয়, কিন্তু যে দিকে তুমি অঙ্গুলি সংকেত করতে চেয়েছে, সেটা এক অর্থে সব ধর্মের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আসলে অসহিষ্ণুতা ধর্ম ব্যবসায়ীর আচরণ, ধর্মের আচরণ নয়। বাংলার মাটিতে যে প্রেমের ধর্ম বৈষ্ণব ধর্ম, তার পূর্বসূরী হিসাবে আমরা যাকে ঐতিহাসিক সত্য বলে মেনে নিয়েছি তারা কিন্তু ইসলামের সূফী সাধক। লালনের মধ্যে যার পূর্ণতা। একাধিক বিয়ের অধিকার নিয়ে যে প্রশ্ন তুলেছে তার জন্য আমার মনে হয় ইতিহাসের প্রেক্ষাপট খানিকটা দায়ী। ইস্লাম কোন জীবনের অমৰ্য্যাদা যেমন পছন্দ করে না। তেমনি যে মেলামেশায় আইনের স্বীকৃতি নেই তাও পছন্দ করে না। এই উভয় সংকট থেকে বাঁচতে হয়তো বা যাযাবর আরবীয়দের মধ্যে নারীর আধিক্য থাকায় এমন একটা প্রথা চালু হয়েছিল। ওটা কোন ধর্মীয় বিশ্বাসের ব্যাপার নয়, ওটা একটা আচরণ। আধুনিক পৃথিবীর ইতিহাসে নারী ও পুরুষের সংখ্যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রায় সমান, অনেক ক্ষেত্রে নারীর সংখ্যা পুরুষের থেকে অস্বাভাবিক কম, সেখানে এমন একটা আচরণ মানতে গেলে সামাজিক বন্ধনটাই যে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাবে। তাই হয়তো তুমি দেখবে, পৃথিবীর অনেক মুসলিম দেশেও এর আধুনিক পরিবর্তনকে স্বীকার করে নেওয়া হচ্ছে। একটু থেমে আবার আরম্ভ করলেন এর পরে এনেছে ইস্লামের তিন তালাকের প্রসঙ্গ, এক সঙ্গে উচ্চারিত তিন তালাককে যে ভাবে শরিয়তী স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে সেটা মনে হয় ঠিক নয়। কারণ ইস্লাম নীতিশাস্ত্র তিনি তালাক উচ্চারণের জন্য সুনির্দিষ্ট দিনের ব্যবধানের কথা বলেছেন। আর তাই এখানেও সেই ধর্ম ব্যবসায়ীদের কারসাজি। যদি কোরানের মূল সত্যকে মেনে নেওয়া যায়, তা হলে এই নিয়ে যে ভুল বোঝাবুঝি চলেছে তার অবসান হতে পারে। বিধর্মীকে ভালবাসার যে কথা বলেছো, সেটাও ধর্মীয় বিধান নয় লোকাঁচার। আসলে মানুষের মনে বদ্ধমূল হয়ে আছে গোষ্ঠীতন্ত্র, আর এসবই তার প্রকাশ মাত্র। মানুষ বিশ্বাস করে, নিজের আচার আচরণের সঙ্গে ভালবাসার মানুষটির আচার আচরণের বিশ্বাসগত মিল থাকলে জীবন যাত্রা সহজ হতে পারে। জীবনে যেমন ভালবাসা আছে তেমনি আছে সামাজিক অবস্থান, দুটোকে মেলাতে চাইলে কিছু আপোষতো করতেই হবে।  

সেলিনা বলল, কিন্তু চাচা দেখা গেছে, একটি বির্ধমী মেয়ে ইস্লামের কাউকে ভালবেসে তার ঘর করতে এলো, ইসলাম নির্দেশ দেয়, মেয়েটিকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে হবে, এবং সাধারণত তাই হয় সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া। বিধর্মী মেয়েদেরও দেখা যায় তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের আজন্ম লালিত ধর্ম ত্যাগ করে চলে আসে যার ঘর করতে সেখানেও সে যে সুখী হয় সব সময় তা কিন্তু নয়। ভালবাসার আবেগ যখন মিইয়ে আসে, তখন আসে দুর্বিসহ ক্লান্তিময় জীবন, কিন্তু ফিরে যাওয়ার পথও অনেক সময় বন্ধ হয়ে যায়, আবার কোন ইসলামের মেয়ে বিধর্মীকে ভালবাসলে, সমাজ তাকে প্রতি পদে পদে বাধা দেয়, যদিওবা কোন ভাবে রাজী হয় সেখানে চাপ দেওয়া হয় ছেলেটি যেন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। কেন ইস্লামের কোন মেয়ে যাকে সে ভালবাসে তার ধর্ম গ্রহণ করে তার ঘরে যাবে না। দোষটা কোথায়? তাছাড়া এমনওতো হতে পারতো। কেউ কারো ধর্ম ত্যাগ করলো না, উভয়ে তার নিজ নিজ ধর্ম অনুসরণ করে একই ছাদের নীচে বাস করল!

বৃদ্ধ বললেন, জানিনা মা, ভিতরের কোন আগুন থেকে তুমি এসব কথা বলছ? হয়তো ডালিমের অবিচার আর অত্যাচারের সঙ্গে ধর্মান্ধতার কথা বলতে চাইছো। তার ভুলের শাস্তি সে পেয়েছে। সমাজ তার নিজের গতিতেই চলে মা। যুগের প্রয়োজনে সে নিজেই বিবর্তিত হয়। তাই বলে সমাজ সংস্কারকদের কৃতিত্বকে আমি ছোট করে দেখছিনা। একটা কথা মা, ধর, তুমি একটি জিনিষ বিশ্বাস কর, তুমি কি চাইবেনা, তোমার বিশ্বাস যেন সার্বজনীন হয়, অর্থাৎ তুমি যা বিশ্বাস কর অনন্যও যেন তা বিশ্বাস করে। এই বার দেখা গেল বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠলো একটা গোষ্ঠী, আর গোষ্ঠী অধিপতিগন কখনই চাইবেনা, তার গোষ্ঠী ভেঙে যাক। একবার যদি এইভাঙনকে স্বীকার করে নেওয়া হয়, হলে দেখা যাবে ঐ গোষ্ঠীই একদিন নির্মূল হয়ে গেছে। তাই প্রাণপনে বাধা দেওয়ার চেষ্টা। তাই বলে কি কেউ বেরিয়ে যাচ্ছেনা? যাচ্ছে। আবার নতুন গোষ্ঠীও তৈরি হচ্ছে। পৃথিবীর সর্বত্র এই নিয়ম চলছে মা, তুমি আমি তার কি করতে পারবো? সেলিনা বলল, আপনি হয়তো পারবেন না চাচা, কিন্তু আমি পারবো না তা আপনি ভাবছেন কেন? একটু গভীর হলেন মোসলেমউদ্দীন। বললেন, হ্যাঁ মা তা ঠিক। তোমরা আধুনিক মনস্ক মানুষ। নিজের ধর্মে বিশ্বাস না থাকলে ছেড়ে যেতে পারই মা। আজকের যুগ ব্যক্তি স্বাতন্ত্রের যুগ। আজ সমষ্টিগত জীবনের থেকে ব্যক্তি জীবনের মূল্য অনেক বেশী। সেলিনা বলল, আমি কিন্তু আপনাকে আঘাত দিতে চাইনি চাচা, আমার এই অনিচ্ছাকৃত অপরাধ ক্ষমা করবেন, আসলে আমি বলতে চেয়েছি বিধর্মী কাউকে ভালবাসলে আমার ধর্ম ত্যাগ করতে হবে, এমন কি কোন কথা আছে? আমরা কি পাবিনা উভয়ে উভয়ের ধর্ম মেনে এক সাথে জীবন অতিবাহিত করতে। শুনেছি সম্রাট আকবরের বাজ অন্তপুরে অনেক হিন্দু মহিষী তাদের স্ব স্ব ধর্ম পালন করতেন। তাতে কোন অসুবিধা হয়েছে বলে মনে হয় না। মোসলেমউদ্দীন সাহেব বললেন, আকবর ছিলেন ইতিহাসের নিয়ন্ত্রা। তিনি আল্লাহর প্রতিনিধি, যেমন হিন্দুদের বিশ্বাস রাজা ঈশ্বরের প্রতিনিধি। কিন্তু আকবর যা করতে চেয়েছিলেন তাতে স্থায়ী হয় নি। আসলে যে কোন বিশ্বাস, জনমনে স্থায়ী হতে হবে। একই জায়গায় আযান ও শঙ্খধ্বনি, নমাজ ও প্রার্থনা ইত্যাদির কিছু গুনগত পার্থক্য আছে। যে উদার মানসিকতায় তা গ্রহণ করা যায় আগে দেখতে হবে আমাদের সেই উদারতা আছে কিনা। তারপর বললেন, এবার তোমার মূলপ্রশ্ন নিয়ে বলা যেতে পাবে, যে দুটি হৃদয় ভালবেসে কাছাকাছি এসেছে তাদের মেনে নেওয়াটাই কিন্তু সব নয়, তাকে নিয়ে তার যে ছোট্ট সংসার, এবং তার শাখা প্রশাখা সবার মধ্যে থাকতে হবে সেই একই উদার মানসিকতা তবেই শুধু সম্ভব, না হলে নয়। সেলিনা বলল আপনি কি মনে করেন না, একদিন সারা পৃথিবীর মানুষ এক হয়ে এই উদার মানসিকতার পথে তাদের যাত্রা শুরু করবে। বৃদ্ধ মোসলেমউদ্দীন তার উজ্জ্বল দুটি চোখ মেলে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকন সেলিনার দিকে, কোন উত্তর জোগায় না।

মোনায়ারা বেগম তাড়া দিলেন, কি তখন থেকে কথা বলেই চলেছো, ওরা তোমার মেহমান, কি খাবে না খাবে একটু দেখবে না? হাসলেন মোসলেউদ্দীন, বললেন তুমিতো আছো। হ্যাঁ আমি আছি। কিন্তু তার আগে একবার এদিকে এসো। মোসলেউদ্দীন মোনায়ারা বেগমের পিছুপিছু গেলে, আমি সেলিনাকে বললাম, কেন বৃদ্ধ মানুষের সেন্টিমেন্টে আঘাত দিচ্ছ সেলিনা! কে বলল আঘাত দিচ্ছি? আসলে আমি জেনে নিতে চাইছি মুসলিম সমাজ এখন কোন পথে চলছে। তাতে তোমার লাভ? লাভ লোকসানের ব্যাপার নয়, এসব আমি আমার স্বার্থের জন্য করেছি। তোমার যদি মনে হয়, এসব শুনতে তোমার ভাল লাগছেনা, তাহলে তুমি আকবরের সঙ্গে গ্রামটা ঘুরে দেখে এস। হয়তো অশ্ৰুদির ওখানকার মতো সাজানো প্রাকৃতিক পরিবেশ নেই, কিন্তু স্রষ্টার আপন খেয়ালে সৃষ্ট যে প্রকৃতি, তা তোমাকে আনন্দ দিতে পারে। তুমি আমাকে তাড়াতে চাইছো? আমার লাভ? সব কিছু কি লাভ লোকসান দিয়ে বিচার করা যায়?

মোসলেউদ্দীন সাহের ফিরে এনে, বললেন, বেটি, তোমাকে একবার তোমার চাচী ডাকছে, একবার যেতে পারবে? সেলিনা বলল আচ্ছা যাচ্ছি চাচা, সেলিনা চলে যাওয়ার আগে বলল, চাচা ভীষণ ভালো লাগছে আপনার সাথে কথা বলতে। আমি আসছি। আপনি ততক্ষণ ওর সঙ্গে কথা বলুন। ও চলে গেল। বৃদ্ধ বললেন, কিভাবে যে তোমার সঙ্গে কথা বলব বুঝতে পারছি না আমি বৃদ্ধ মানুষ, সেকালের ধ্যান ধারনাকে তো জীবন থেকে মুছে ফেলতে পারিনি, আমার সঙ্গে কথা বলতে কি তোমার ভাল লাগবে? বললাম এভাবে বলছেন কেন? এতক্ষণ কথা বলিনি কারণ আপনারা গভীর তত্ত্ব নিযে কথা বলছিলেন আমি মুগ্ধ শ্রোতার মত শুনছিলাম। উনি হাসলেন, ভদ্রলোকের সমস্ত চুল ও দাড়ি পেকে গেছে আর দাঁতগুলো মুক্তোর মত সাদা। সবকিছুতেই যেন শুভ্রতার ছোঁয়া। তারপর বললেন, তোমরা যে আসবে আমার বাড়ীতে বুঝতে পারিনি বাবা। মানুষ বুড়ো হয়ে গেলে একটু বেশী কথা বলে আমিও হয়তো একটু বেশি কথা বলব, বিরক্ত হবে না তো? ছিঃ কাকাবাবু এসব আপনি কি বলছেন? আমি তো আপনার ছেলের মতন। তাই যখন বললে বাবা, তাহলে তোমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করলে কিছু মনে করবে না তো। করুন। বৃদ্ধ বললেন কি ভাবে যে আরম্ভ করি। না, মানে, আমি রেহানার কথা জানতে চাইছি। ও তোমাকে গুরু বলে মানে, কিন্তু কেন? বড্ড কঠিন প্রশ্ন কাকাবাবু। আমি কারো গুরু নই, হতেও চাইনা। কেন? যে সমস্ত গুন থাকলে কাউকে গুরু বলা যায়, তার কোন যোগ্যতাই আমার নেই। তাহলে ও তোমাকে গুরু বলে মানছে কেন? দেখুন কাকাবাবু কেউ কি ভাবে কাকে দেখবে তাতো আমি বলতে পারবো না। রেহানাকে আমি ভালবাসি, এর বেশী কিছু নয়। তুমি তো শুধু রেহানাকে ভালবাসনা, আরো তো অনেককে ভালোবাসো। সেতো সব মানুষই ভালবাসে। তবু রেহানার ভালবাসা নিশ্চয়ই তোমার কাছে আলাদা মর্যাদা পায়। হয়তো পায়। আজ যদি মেয়েটিকে খুঁজে পাওয়া যায় তুমি গ্রহণ করবে তো। বললাম তার সঙ্গে আমার গ্রহণ বা বর্জনের সম্পর্ক নয় কাকাবাবু। আমি শুধু জানি জীবন আমার সে কানায় কানায় ভরে দিয়েছে। বেশ তাই যদি হয় আজ যদি সে তোমার কাছে কোন প্রতিদান চায়? সত্যিকারের ভালবাসা কোন দান বা প্রতিদানের জন্য অপেক্ষা করে না কাকবাবু, আমি শুধু তাকে খুঁজে পেতে চাই। তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলতে চাই জীবনের দাম তুমি এভাবে মেটালে কেন? তুমি কি ডালিমকে তার জন্য দায়ী করছ? সত্যি কথা বলতে কি কাকাবাবু ডালিমকে আমি চিনিনা, আজো পর্যন্ত তাকে আমি দেখিওনি। তবু তো সে তোমার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো। বললাম জানিনা কাকাবাবু কেন আপনি একথা বলছেন? ডালিম তার কাছে কি চেয়েছিল তা আমি জানিনা। কেন একদিন ডালিমকে ভালবেসেও তাকে সরে আসতে হয়েছিল তাও আমার অজানা। তুমি জিজ্ঞাসা করনি? প্রয়োজন মনে করিনি। ডালিমের কথা শুনেছিলাম ওর বোন সেলিনার কাছে, আসলে ভালবাসাতো কারো জীবনে বলে কয়ে আসেনা, আমাদের জীবনেও আসেনি সেভাবে। ভালবাসার যে জাগতিক পরিণতি সেই ভাবে আমরা নিজেদের কথা কারো কাছে স্পষ্ট করে বলিনি। শুধু মনে হতো, ও আছে আমার জীবনের সঙ্গে মিলেমিশে, আর আমার উপলব্ধিতে মনে হয়েছে ও-ও হয়তো এমনিই ভাবতো। বৃদ্ধ বললেন, কিন্তু বাবা ও ডালিমের সঙ্গে দেখা করতে এসে যে সব কথা বলেছিল এবং ডালিম যদি সত্যি সত্যি তার আহ্বান সাড়া দিতে কি করতে তুমি? জীবনে যে ঘটনা ঘটেইনি, তা ঘটলে কি করতাম, কি করে বলব। তবু। এর কোন উত্তরতো দিতে পারবনা কাকাবাবু। আমি শুধু বুঝি তার বেদনা তার কষ্ট তার অন্তরের শূন্যতা। সেই শূন্যতা ও কষ্টকে ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য আমার যা করণীয় তা করতে কখন পিছপা হতাম না। জীবনে আঘাত ও বেদনার মধ্যে যে ভালবাসা তার মধ্যেই নিজেকে খুঁজে পেতে চেয়েছি।–এর চেয়ে বেশী কিছু চাইনি।

সেলিনা এলো। বৃদ্ধ বললেন, তোমার চাচীর সঙ্গে কথা হয়ে গেছে মা! হ্যাঁ। তোমার চাচীর সমস্যার সমাধান হয়েছে কি? তাতো বলতে পারবো না, আমি আমার মতো করে বলেছি, তিনি তার মতো করে বুঝেছেন। সমস্যা সমাধানের আমার হাতে নেই। বৃদ্ধ আর কথা বাড়ালেন না। বললেন, তোমরা বিশ্রাম নাও, আমি একটু ঘুরে আসি।

উনি চলে গেলে আমি সেলিনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, সেলিনা তোমার আসল রূপ কোনটি। ও হাসতে লাগলো। হাসছো যে! দেখছি তোমার মনের হাঁস ফাস অবস্থা। মানে? মানে বুঝতে পারছনা? না পারছি না। তাহলে চাচীর সমস্যাও বুঝতে পারবেনা। বললাম, তুমি হেঁয়ালি রেখে খোলাসা করে বলত? বললেই বুঝতে পারবে? বলেই দেখনা। চাচী জিজ্ঞাসা করছেন, আমি যখন তোমার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছি তা হলে হিন্দু এয়োতির মতো আমার হাতে শাখা-নোয়া নেই কেন? নেই কেন সিঁথিতে সিন্দুর! ও হাসছে। আমি অবাক হয়ে বললাম, এই সব কথা বলেছেন উনি? কেন তোমার শুনতে ভাল লাগছেনা? আমিতো আরো ভাবলাম, তুমি আনন্দে গদগদ হয়ে এতক্ষণ না জানি কি না করবে আমাকে নিয়ে। বললাম তা না হয় ভেবে দেখা যাবে কি করব, কিন্তু উনি আর কি বললেন তা হলে শোনার ইচ্ছে আছে যোণ আনা অথচ মুখে সন্দেহের ফুলঝুরি। এরপরে সেলিনা বলে চলে উনি আরো বললেন, আমার শ্বশুর শাশুড়ী, আই মিন তোমার বাবা-মা আমাকে মেনে নিয়েছেন কি না। তোমাদের অন্দর মহলে আমাদের থাকতে দেওয়া হয় কি না, না বাইরের বাড়ীতে থাকতে হয়। আমি রোজ মোনাজাত বা নামাজ করি কি না। তোমাদের ঠাকুর ঘরে আমার প্রবেশাধিকার আছে কি না। যে থালা বাসনে তোমাদের সকলের খাওয়া হয়, আমাকেও তাতেই খেতে দেওয়া হয় কি না, না মাটির বাসন বা চিনা বাসনে খেতে হয়। তোমাদের রান্নাঘরে আমার ঢোকার অধিকার আছে কি না। আমার হাতের রান্না তোমরা খাও কি না। পূজোয় না ঈদের সময়ে আমাকে নতুন শাড়ী দাও? আর কিছু জানতে চাও?

আমি অবাক আর বিস্মিত হয়ে বললাম না অনেক বলেছে। আর বলতে হবে না। তারপর বললাম সেলিনা, আমি শুধু ভাবছি এসব কথা উনি ভাবলেন কি করে? সেলিনা গম্ভীর হয়ে বলল, আমাদের আচরণ যদি ভাবার মত হয়, তা হলে ওনার ভাবতে দোষ কি? আমাদের আচরণ ভাবার মত মানে? বা তুমি ভুলে যাও কেন কলকাতাটাই সারা বাংলাদেশ নয়। অসংখ্য গ্রাম বাংলার অজস্র লোকাঁচার নিয়েই এই বাংলাদেশ। তুমি কি ভাবতে পার, বাংলার গ্রাম কি সেই ভাবে প্রস্তুত হয়েছে যাতে কোন কুমারী মেয়ে কোন অনাত্মীয় পুরুষের সঙ্গে বাইরে কাটালে লিভ টুগেদারে বিশ্বাসী হয়ে তার বাহবা দেবে? তারপরতো দুই ভিন্ন ধর্মের মানুষ। তোমাকে স্বামী ছাড়া অন্য কিছুভাবা, এদের পক্ষে কল্পনারও অতীত। মুখে তার দুষ্টু হাসি, চোখে তার সীমাহীন কৌতুক। আমি বললাম, সে না হয় বুঝলাম কিন্তু তুমি কি বললে? তার আগে বলত এ প্রশ্নের মুখোমুখি হলে তুমি কি বলতে? বললাম যা সত্য তাই বলতাম। মানে তুমি বলতে, সেলিনা আমার স্ত্রী নয়, ওর সঙ্গে আমার বিয়েই হয়নি, এই সবতো। এটাইতো সত্য। সব সত্যি কি সত্যিকারের সত্যি? যে সত্য মানুষকে আঘাত দেয় যে সত্য হৃদয়ের ভালবাসাকে ভুল বুঝতে সাহায্য করে, যে সত্য মানুষকে মানুষের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেয় সে সত্যি তোমার সত্যি হতে পারে, আমার সত্যি নয়? তা হলে তোমার সত্যি কি? তোমাকে বলব কেন?

মোনায়ারা বেগম এলেন, আর তাকে দেখেই নব বধুর সলজ্জতায় সেলিনা আঁচলটা তুলে দিল মাথায়? আমার অবাক হওয়ার পালা জেড গতিতে এগিয়ে চলেছে। উনি এসে বললেন, তোমাদের তো আগে চিনতামনা বাবা। আকবর বলছিল, তোমরা বিকালেই চলে যাবে। আমি বললাম, একটু তাড়া আছে কাকিমা। তাই যেতেই হবে। উনি আকুল ভাবে বললেন, দেখ বাবা আমার কোন মেয়ে নেই। নিজের গর্ভে তো কেউ এলোনা, যাকে নিজের সন্তানের মতো মানুষ করেছিলাম নিজের পাপের ফলে, সেও হারিয়ে গেছে। আমার এ ঘর যে শূন্য সেই শূন্য রয়েই গেল। অন্তত একটা রাত যদি থেকে যেতে বাবা। নিজেকে সান্ত্বনা দিতাম অন্তত একটা রাতের জন্য হলেও আমার মেয়ে জামাই আমার বাড়ীতে এসেছিল। আমি প্রতিবাদ করে বলতে চাইলাম কিন্তু কাকীমা। সেলিনা, আমি কি বলতে চাইছি অনুমান করতে পেরে বলল, এতে তোমার এত কি অসুবিধা হবে। একটা তো রাত। চাচী যখন এত করে বলছেন, ঠিক আছে চাচী, তুমি যাও, আমি ওকে বুঝিয়ে বলবো। তাই হোক মা, বলে উনি চলে গেলেন।

আমি সেলিনাকে বললাম, একি খেলা খেলতে চাইছো তুমি। তুমি এর পরিণতি জান? কি? কোনদিন আর মুখ দেখবে না এইতো। সব সময় ঠাট্টা ভালো লাগেনা সেলিনা। ও বলল,

আসলে ঠাট্টার মধ্যে আছে যে চরম সত্য
বুঝতে চাওনা তুমি তা।
তাই নীল আকাশ যখন
স্বপ্ন ডানায় ভর দিয়ে আসে তোমার কাছে
মনে হয় মিথ্যে ওড়নায় ঢাকা পড়ে গেছে
যৌবনের উদ্ধত অভিলাষ।
কিন্তু পেজামেঘের কোনায় কোনায়
যদি খুঁজে পেতে শিশির বিন্দু
মনে হতো, হয়তো তুমি খুঁজে পেয়েছে তোমার ঠিকানা।

আমি বললাম, সেলিনা, জীবন শুধু কাব্যের নয়। ভাল করে ভেবে দেখেছে চরম পরিণতিতে কি করবে তুমি।

ও বলল,

বিপদ যে তোমার দিক থেকে আসতে পারে ভাবিনি তা।
যদি আসেও প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আছে আমার,
তুমি নিশ্চিত থেকো।
তোমার কৌমার্যের ক্ষত হোক চাইবনা কোন দিন
তবু যদি পতন আসে,
জীবনের সত্য বলে না হয় করলেই গ্রহণ।
তোমার মনে যে স্বপ্ন নেই
তাতো নয়।
না হয় বা অভিনয় হিসেবেই মেনে নিলে
হোকনা তা নিমর্ম নিষ্ঠুর।

আমি যে কি বলব বুঝতে পারছি না। মনে মনে ভাবলাম ভুলই হয়েছে ওকে নিয়ে আসা। ও আমার বুকে আগুন জ্বালাতে চায়। আর সেই আগুনে পুড়ে মরবার সাধ। বললাম, তোমার যা ভাল লাগে কর। আমি আর কিছুটি বলব না। গুম হয়ে অন্য দিকে মুখ ফেরালাম। ও বুঝি আমার রাগটুকুও বুঝতে চাইছে না, এগিয়ে এলো আমার আরো কাছে। মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল এইতো লক্ষ্মী ছেলে। তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলল, আমাকে একদম ভাল লাগছেনা তাইনা? খুবই কুৎসিত দেখাচ্ছে? আমি আরো রেগে গিয়ে বললাম, হ্যাঁ হ্যাঁ তোমাকে ভীষণ কুৎসিত লাগছে। ও হঠাৎ বলল রেহানার থেকেও। আমি বিমূঢ় হয়ে গেলাম বলে কি? তবু নিজেকে শান্ত রেখে বললাম, সেলিনা তুমি আমার কাছ থেকে যাও। ও বলল। যাচ্ছিগো যাচ্ছি, কিন্তু যাওয়ার আগে বলে যাই

যাকে তুমি ভাবছে
হাজার কল্পনাতেও আসবেনা সে,
মিথ্যে প্রহর গোনা
ফিকে রৌদ্রের মত
মিলিয়ে যাবে এক সময়
ছবির মতো ভেসে আসবো আমি
দুঃখ ও আনন্দে একাকার হয়ে।
পারবে তাড়াতে?
তার চেয়ে রাত্রিটাকে সুন্দর করতে
মায়াবী রোশনাই একে নাও চোখে
মিথ্যে করেই না হয় বোলো একবার
সেলিনা সুন্দর তুমি।
সুন্দর তোমার প্রহর গোনর প্রতীক্ষা।
হাসতে হাসতে পালিয়ে গেল আঁচলের ঝাঁপটা দিয়ে।

দুপুর গড়িয়ে গেছে বেশ কিছুক্ষণ। আমি মোসলেউদ্দীন সাহেব ও আকবর খেতে বসেছি। অভ্যেস মতো বলেছি সেলিনাকে তুমি বসবে না? বুঝতে পারিনি কখন থেকে ও আঙুল দিয়ে আমায় না করছে, মোনায়ারা বেগম বললেন, তোমরা কলকাতায় যা করবে করো বাবা এই গ্রাম বাংলায় স্বামী স্ত্রী এক সঙ্গে খাচ্ছে, কেউ দেখে ফেললে যে নিন্দা হবে বাবা। আমি এবারও তীব্র প্রতিবাদ করতে যাব তার আগেই সেলিনা আমাকে আকুল ভাবে চোখের ইশারায় না করলো। আমি চুপ করে গেলাম। কোন কথাই বললাম না।

বিকেলে মনোয়ারা বেগম বললেন, আকবরের সঙ্গে গ্রামটা ঘুরে এসো বাবা, জানিনা ভালো লাগবে কি না। এখানে পর পর কয়েকটি গ্রামে তোমাদের আপন জন মানে তোমার ধর্মের লোকজন কেউ নেই, না থাকলেও এরা তোমাকে ভালভাবে নেবে বাবা। আমি বরং এ বেলা মেয়েটাকে নিয়ে গ্রামটা চিনিয়ে নিয়ে আসি।

রাতটা থেকে যেতে হলো। সেলিনাকে কোন ভাবে রাজী করাতে পারলাম না এই নিষ্ঠুর অভিনয় না করাবার জন্য। রাতের খাওয়া-দাওয়ার পরে বৃদ্ধ এক সময় বললেন, ভেবেছিলাম, ডালিম আমার সংসার ভরে দেবে। তোমার চাচীর মাতৃত্বের ইচ্ছে, সংসারের সম্রাজ্ঞী হওয়ার ইচ্ছে সব কিছু পূর্ণ করবে ডালিমের ভালোবাসা। হলো না বাবা। খোদা না চাইলে কিছুই হয় না, আবার এই দেখ, আজ তোমরা এসেছে। এক হিসাবে তোমরা তো ডালিমের প্রতিপক্ষ। তাই তাকে ভালবাসার অধিকারে আমারও প্রতিপক্ষ, অথচ আল্লাহ তা চাননি। তাই তোমরা এলে ভালোবাসার অগ্রদূত হয়ে শত্রুকে আপন করে নেওয়ার চাবিকাঠি হাতে নিয়ে। আল্লাহ যে মঙ্গলময় তা অস্বীকার করি কি করে। ভেবেছিলাম বাবা, রেহানাকে খুঁজে বের করে তোমার হাতে তুলে দেবো, কিভাবে যে মেয়েটি তোমাদের আসার পর থেকে হৃদয়ে আসন বিছিয়ে বসেছে কি ভাবে বোঝাবো। কিন্তু এখন ভাবছি কি হবে তাকে খুঁজে কার হাতে তুলে দেবো? তোমাদের চাচী না বললে তো আমি বুঝতেই পারতাম না তুমি সেলিনাকে গ্রহণ করেছে স্ত্রী হিসাবে। হতভাগিনী মেয়েটি কোথায় আছে কে জানে? সেলিনা বলল, যে নেই তার জন্য এত ভাবছেন, আর যে মেয়ে আপনার সামনে, তাকে কেন বুঝতে চাইছেন না চাচা। না মা ব্যপারটি ঠিক তা নয়। তোমরা সুখী হও আল্লাহ তোমাদের সুখে রাখুন। এ কথা বলে বৃদ্ধ চলে গেলেন। মোনায়ারা বেগম আমাদের নিয়ে এলেন বাড়ীর সব থেকে যে ভাল ঘরটি সেখানে। তারপর সেলিনাকে বললেন, সেলিনা। রাতে তোমরা এ ঘরেই থাকবে।

ঘরে ঢুকে আমিতো অবাক হয়ে গেলাম। একি করেছেন মনোয়ারা বেগম। দামী খাট, দামী বিছানা। নতুন চাদর পাতা। পাশাপাশি ২টো বালিশ সুন্দর ওয়াড়ের পরে হাতের সুচারু কাজে অপূর্ব লতাপাতা আঁকা ঢাকনা। দুই পাশে দুটো পাশ বালিশ। ফুলদানীতে নিজেদের বাগান থেকে তুলে আনা ফুলের গুচ্ছ। দেওয়ালে মক্কার পবিত্র কাবা মসজিদের ছবি, আর এক পাশে তাজমহলের ছবি। একপাশে কাঁচ দিয়ে বানো নিজের হাতে সেলাই করা সংসার সুখের হয় রমণীর গুনে নিচেয় লেখা মনোয়ারা। ঘরটা যেন বাড়ী থেকে আলাদা।

সেলিনা বলল, এই ঘরে চাচা ও চাচী মাত্র একরাত কাটিয়েছেন। আমার কি যে হয়েছে, সেলিনার কোন কথাই ভাল লাগছেনা। নিজের মনের মধ্যে যে কিসের ঝড় বয়ে চলেছে বোঝর অগম্য। ওর কথার কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইলাম। ও বলল, তুমি রাগ করলে? না। তবে কথা বলছনা যে কি কথা বলব বলত। এই সব কিছুর জন্য নিজেকে বড় অপরাধী বলে মনে হচ্ছে। ও একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, বুঝতে পারছি তোমার কথা। আমারও যে ভাল লাগছে মনে করো না প্রান্তিক ভাই। কিন্তু কি করব চাচীকে ব্যথা দিতে মন সায় দিল না। চাচীকে ব্যাথা দিতে পারলে না, কিন্তু আমাকে দিতেতো কোন অসুবিধা হয় নি। কে বলেছে হয়নি? তুমি কি ভাবছ এসব আমি চেয়েছি? কি করে বিশ্বাস করব, বললাম আমি। ও আমার হাত ধরে বলল। তোমাকে বিশ্বাস করি বলে চাচীকে ব্যাথা দিতে পারলাম না। একটাতো রাত প্রান্তিক ভাই। খাটের দু পাশে মেঝেতে প্রচুর জায়গা। খুব কি অসুবিধা হবে? বললাম, শুধু দু পাশের প্রচুর জায়গায় সমস্যার সমাধান হবে? তোমার চাচীর স্বপ্ন যে সার্থক হয়নি, কাল সকালে বিছানার অবস্থা দেখে তিনি যখন বুঝতে পারবেন, কি উত্তর দেবে? হাসলো সেলিনা বললো, তিনি যখন আসবেন, তিনি জেনে যাবেন, বিছানার কোন অমৰ্য্যাদা হয়নি। সবইতে বললে, কিন্তু রাতটাতো কম দীর্ঘ নয়, আর সেই নিকষ কালো রাতের অন্ধকারে যদি নিজেকে রক্ষা করতে না পারি? কে তোমাকে বলেছে যে নিজেকে রক্ষা করতে হবে? মানুষের মধ্যে যে দুর্বলতা গুলো আছে, তার প্রকাশই তো মানবিকতার প্রকাশ। আজ তোমাকে বলতে হবে, সত্যি কি তুমি আমাকে চাও না? একথা উঠছে কেন? এটা আমার উত্তর নয় প্রান্তিক ভাই। আমি যা বলছি তার সরাসরি উত্তর দাও। বহুবার তো দিয়েছি। দাওনি, হেঁয়ালি করেছে মাত্র। তোমার মনের মধ্যে বেঁচে আছে তপতীদি, অশ্রুদি, আর রেহানা আছে তোমার স্বপ্নে। তোমার মনের মধ্যে নেই। কি করে বুঝলে? যারা মনের মধ্যে বেঁচে থাকে, তাদের ছেড়ে দিতে কষ্ট হয়, কিন্তু ছেড়ে দেওয়া যায়, তাই তুমি ছেড়ে দিতে পেরেছো তপতীদি বা অশ্ৰুদিকে। মাঝে মাঝে তারা তোমার মনকে দোলা দেবে আবার হারিয়েও যাবে, কিন্তু যে আছে তোমার স্বপ্নে, সে তোমার মনকে দোলা দেয় না। গভীর বেদনায় বললাম সেলিনা এ তোমার ভুল? ভুল? হা ভুল। ভুল যদি হয়, তা হলে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তুমি আমাকে কাছে টানলে কেন? আমিতো দূরেই থাকতে চেয়েছিলাম, কেন তোমার আকুল তৃষ্ণা আমার হৃদয়কে ভেঙে চুরমার করে দিল। জেনে বুঝে কতবার কত কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে তোমাকে পরীক্ষা করতে চেয়েছি কেন প্রতিবার তোমার সম্মতির কথা জানালে? একটা জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার এ অধিকার তোমাকে কে দিয়েছে? যদি জানতেই আমার কাছে নিজেকে কোনদিন সঁপে দিতে, পারবেনা, কেন আপন ভাবনায় সাজালে আমাকে বলত। শুধু তাই নয়, সেই বিকেল থেকেই আমাকে শুধু এড়িয়েই চলেছে, আমি যেন তোমার কাছে অসহ্য। একবার তাকাতে পর্যন্ত পারছ না।

সত্যি কি তাই? সত্যি কি তাকাইনি বিকেল থেকে ওর দিকে? তাকি হয়? যে ভাবে সেলিনা এগিয়ে আসছে তাতে রেহানা ভেসে যাবে। এতদিনে মনে এ বিশ্বাস দৃঢ় হতে আরম্ভ, করেছে, কিন্তু সেই মন নিয়ে, আমি কি সম্পূর্ণ ভাবে সেলিনার হতে পারবো। তবুও ব্যাথাতুর দৃষ্টি নিয়ে তাকালাম ওর দিকে। উজ্জ্বল হ্যারিকেনের আলোয় দেখতে পাচ্ছি, খাটের একটি দিকে হাত রেখে, আমার দিকে পিছন হয়ে দাঁড়িয়ে আছেও? আর আমার অবাক হওয়ার শেষ সীমায় এসে আমি আশ্চর্য হয়ে দেখলাম টকটকে লাল রঙের শাড়ী পরেছে সেলিনা, ব্লাউজটাও লাল, সুন্দর খোঁপায় গোজা লাল গোলাপ। তার হাতে এ গয়নাতো ছিল না আগে, তা হলে, কিসের গয়না ওটা।

কোনদিন দেখিনি সেলিনাকে এমনি লাল শাড়ীতে। শুনেছি যৌবন তার উদ্দামতা পায় লাল রঙে। দেখিনি কখনো। সেই উদ্দামতার ভাষা কি, তাও জানিনা। তবু সেলিনাকে এই অপরূপ রূপে দেখার আকাঙ্খা নিয়ে ডাকলাম, সেলিনা। ওকোন সাড়া না দিয়ে তেমনি দাঁড়িয়ে রইল। আমি ওর উন্মুক্ত পিঠে হাত রেখে আবারও ডাকলাম সেলিনা। তবু নিথর নিস্পন্দ যেন। বুঝতে পারছি চরম অভিমানে ও আমাকে প্রত্যাখ্যান করতে চাইছে। সেলিনা কেন বুঝতে চাইছেনা, ও যা চায় আমিও তো তাই চাই, কিন্তু তার আগে চাই রেহানার একটা খোঁজ। হয়তো সেলিনার ধারণা, রেহানা থাকলে সে আসতে পারবেনা আমার কাছে। আমিও হয়তো যেতে পারবো না তার কাছে, তাই কি রেহানাকে খুঁজে পেতে চায় না ও। কিন্তু এত স্বার্থপর তো সেলিনাকে ভাবতে চায় না মন। সেই সেলিনা যে আমাকে একটু একটু করে রেহানার দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। সেই সেলিনা, যে হাসি ঠাট্টা আর চটুলতার বেডি দিয়ে নিজেকে রক্ষা করতে চেয়েছে আমার দুর্বলতা থেকে। যে প্রতি মুহূর্তে রেহানাকে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে নিজেকে করেছে রিক্ত। সে কেমন করে হবে এমন স্বার্থপর। আমি আকুল হয়ে আবারও ডাকলাম, সেলিনা একবার তাকাও আমার দিকে। তবু নিশ্চল পাষাণ যেন, এবার আমি আর পারলমনা। জোর করে মুখটা ফিরিয়ে নিলাম আমার দিকে? চোখ দিয়ে অবিরল ধারায় গড়িয়ে পড়ছে জল, সে দিকে তাকাবার আগে চোখ চলে গেল ওর সিঁথির দিকে, আর নিজের আশ্চর্যতাকে হার মানিয়ে আমাকে যেন চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে তার রক্তিম সিঁথি। সুন্দর করে কে রাঙিয়ে দিয়েছে ওর সিঁথিকে সিন্দুর দিয়ে। কপালে দিয়েছে রক্তিম টিপ। অপূর্ব লাগছে ওকে। আর এই অপূর্ব সৌন্দর্যের বেলাভুমিতে ফোঁটা ফোঁটা চোখের জল যেন, লাল সূর্যের স্পর্শোন্মুখ ভোরের শিশির বিন্দু।

কোন রকম দ্বিধার অপেক্ষায় না থেকে ওকে সজোরে বুকের পরে টেনে নিয়ে বললাম, সেলিনা তুমি কি বুঝতে পারনা আমাকে? কি চাই অমি? কোন রকম প্রতিবাদ না করে বলল, আমি পারছি না গো, আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। আমিও তাই, আমার বুক থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, তাই যদি হয় তাহলে এই নাও, বলে নিজের ব্লাউজের মধ্য থেকে সিন্দুরের ছোট্ট কৌটটা বের করে আমার হাতে দিয়ে বলল। তোমার অধিকার স্বীকৃতি দাও। কণ্ঠ আমার কেঁপে উঠলো। বললাম সেলিনা! ও নীচু হয়ে আমার পায়ের কাছে বসে বলল, আমি হেরে গেছি, একেবারেই হেরে গেছি। আকুল প্রার্থনায় আমার তৃষ্ণাতুর নয়নের দিকে তাকিয়ে বলল, জয়ী হতে চাওনা তুমি? এখনো ভীরু মন, কিসের প্রতীক্ষায় তাকিয়ে আছো?

আমি কৌটা থেকে সিন্দুর নিলাম আঙুলে। পরম মমতায় পরিয়ে দিলাম ওর রক্তিম সিঁথিতে। আর ও? ওর খোঁপা থেকে তুলে নিয়ে লাল গোলাপটি আমার পায়ের উপর রেখে দিয়ে বলল, আরতো কিছু নেই, আমার এই ক্ষুদ্র উপহারকে ফিরিয়ে দিও না। ফুলটা তুলে নিলাম পায়ের উপর থেকে, দুহাত দিয়ে তুলে নিলাম আবার ওকে বুকের মাঝে, বললাম তোমাকে ফিরিয়ে দিতে পারি এমন সাধ্য নেই আমার, শুধু ভয়, হ্যাঁ সেলিনা ভয়, রাতের অন্ধকার যে আবেগ রচনা করেছে সাগর, সূর্যের উজ্জ্বলতায় তা যদি বাষ্প হয়ে উড়ে যায়, কেমন করে মুছে দেব জীবনের এই মধুর মুহূর্তটুকু। ও বললো, মুছতেই চাইবে যদি–

কেন আবেগ দিয়ে ভরালে আমায়?
কেন শুভ্র সিঁথিতে দিলে
রক্তিম অঙ্গীকার?
সে কি তবে পরাজয়?
আমি বললাম, কার পরাজয়? আমার। তারপর বলল,
মুহূর্তর ব্যঞ্জনা যখন
বারবার বলে যায়, আমার সত্ত্বায় তুমি আছো,
রক্তের দোলায় লাগে সাগরের ঢেউ
গর্জন থেমে যায়।
সে শান্ত রূপের লাগি
আঁধার কি নয় মধুময়?
যে চোখের তৃষ্ণা লাগি
নীল আকাশ, আপন খেয়ালে আঁকে
নক্ষত্রের ছবি,
চাঁদও কি পিছিয়ে থাকে?
পক্ষ থেকে পক্ষান্তরে
নীরব সে অভিসারে
কানে কানে বলে যায়
আনন্দের যজ্ঞভূমে যে আগুন জ্বালাতে আজকে
আমি তার সাক্ষী হয়ে রব চিরদিন।
কেউ নেই মুছে দিতে বিবর্তন আমার
আমিতো আসব ফিরে বার বার
করাঘাতে হানবো আঘাত
রুদ্ধদ্বার দুয়ারে তোমার।
পারবে কি ফিরিয়ে দিতে
মুগ্ধ রাত জোছনারে
করতে বিমুখ?

সকাল থেকে আমার শুধু বিস্ময়ের পালা জীবনেব এত আবেগ এত ভালবাসা কোথায় লুকিয়ে রেখেছিল সেলিনা এতদিন? স্পষ্টতায় কোন আড়ষ্টতা নেই। খরস্রোতা পাহাড়ী নদী যেন ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে আমায়। এতদিন তীর দিয়ে হেঁটে ছিলাম, পাশাপাশি। এবার ভেসেছি তাব স্রোতে। শুধু মনে প্রশ্ন নীলাঞ্জনা পিসি, মিনতি সেন, যদি কিছু জানতে চান কি বলব ওদের। সেলিনা বলল, কি ভাবছো? তোমার কথা। আমার কথা? হ্যাঁ তোমার কথা। কেন? তুমি কি বুঝতে পারছে না কেন ভাবছি? সবটা না হলেও কিছু কিছু যে পারছি না তা নয়, কিন্তু এসব ভেবে কি হবে? একটা বাতের অভিনয় বইতো নয়। চাচীকে আঘাত দিতে পারলাম না, নিজের হাতে পরিয়ে দিলেন সিঁদুর, কি করে বাধা দিই বলত। হাতে দিলেন এয়োতির চিহ্ন নোয়া, হিন্দু স্ত্রীরা নাকি এসব স্বামীর মঙ্গলের জন্য পরেন, আমি ওকে বললাম আমিতো হিন্দু নই। উনি বললেন তাতে কি, তুমি যখন কোন হিন্দু ছেলেকে তোমার স্বামী হিসাবে গ্রহণ কবেছো, তখনতো তার ধর্মই তোমার ধর্ম। আমি অবশ্য বলতে চেয়েছিলাম ওতো কোন ধর্ম মানে না, ও বলে মানবতাই তার এক মাত্র ধর্ম। উনি বললেন ও যা বলে বলুক, কিন্তু মা হয়ে আমি তোমাকে এভাবে ওর ঘরে পাঠাতে পারবো না। বললাম কোথায় পাবে তুমি এসব। বললেন আকরবকে দিয়ে আনিয়েছি। আমি আঁতকে উঠে বললাম, এসব কি করেছো তুমি, ও শুনলে আমাকে ভীষণ বকবে। বললেন। বকুক, স্বামীর বকুনি স্ত্রীর অতো গায়ে লাগালে চলে মা?

তুমিই বল, আমি এর উত্তরে কি বলতে পারি? তারপর ভাল করে চুল বেঁধে দিলেন আমার। হাতে দিলেন ওই শাড়ী ও ব্লাউজ। বললেন এটা পরেই ওর কাছে যাও মা। তোমরা একালের মেয়েরা যে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ককে কোন খাদে নামিয়ে এনেছো ভাবলেও অবাক লাগে। আমরা রোজ বিকালে সারদিনের ক্লান্তি দূর করতে গোসল করতাম। নিজেকে যথাসম্ভব পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে স্বামীর কাছে নিজেদের গ্রহণীয়া হয়ে ওঠার চেষ্টা করতাম। আমি লজ্জায় মুখ নীচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে রইলাম। উনি বললেন, এতে লজ্জার কি আছে। মহাভারততো শুধু হিন্দুর কাব্য নয় ভারতীয় উপমহাদেশের সব মানুষের কাব্য। সব মানুষের কথা লেখা ওতে। ওখানে দ্রৌপদী আছে একজন। পাঁচজনের মনোরঞ্জন করেও তার মনে জেগে থাকে একজনের কথা, সে অর্জুন, তাকেইতো সে চেয়েছিল জীবন ভরে। কিন্তু অর্জুন কখনো তার একার হয়নি। সুভদ্রা ছিল অর্জুনে আরেক শ্র। একদিন দ্রৌপদীকে বলেছিল দিদি পাঁচজন স্বামীর মনোরঞ্জন করেও তুমি যেমন অক্লান্ত তেমনি এত স্ত্রী থাকতেও অর্জুন শুধু তোমাকে চায় কেন? কি আছে তোমার মধ্যে যা দিয়ে তুমি বশ কর স্বামীদের। দ্রৌপদী হেসে ছিলেন উত্তর এড়িয়ে যেতে। কিন্তু নাছোড়বান্দা সুভদ্রা তা শুনবেন কেন? বললেন এড়িয়ে গেলে চলবেনা দিদি, আমাকে বলতেই হবে। নিরুপায় দ্রৌপদী বলেছিলেন আমি নিত্য নতুন রূপে হাজির হই ওদের কাছে যাতে কোন ভাবে তারা মনে করতে না পারে আমি পুরান।

লাজ লজ্জা বিসর্জন দিয়ে আমি বলেছিলাম তুমি পড়েছে মহাভারত? না তবে জানলে কি করে? তোমার চাচার কাছে শুনেছিলাম। কথাটা বলেই যেন কুমারীর সলতায় হাসলেন একটু। তারপর নিজেই বললেন, আমি তোমার চাচার দ্বিতীয় স্ত্রী। বয়সের পার্থক্য আমাদের মধ্যে অনেক। তবু তিনি আমায় শিখিয়েছিলেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কে শুধু মাত্র নিরস কর্তব্য পালনে শেষ হয় না মোনোয়ারা, শুধু ভালবাসায়ও তা পূর্ণতা পায় না যদি একে অপরকে দেখে ভালো না লাগে তবে তা ব্যর্থ। তাই বলছি মা শুধু ভালবাসা দিয়ে জীবন সব সময় বাধা যায় না যদি একে অপরকে ভাল না লাগে। তাইতো গ্রাম বাংলার সব স্ত্রীরা স্বামীর সেই মুগ্ধ দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য নিজেকে সাজাতো সযতনে। হিন্দু স্ত্রীকে সধবার এয়োতি ও সিঁথিতে সিঁদুর ছাড়া ভাল লাগতে পারে না। এ তাদের জন্ম গত সংস্কার, আর এই লাল রং এতে যৌবনের রং মা। মিথ্যে করেই বলেছিলাম, ওতো বলেনি কখনো। এনিয়ে ভাবে বলেও তো মনে হয় না। ভাবে মা ভাবে, তুমি কিছু মনে করতে পার তাই হয়তো মুখ ফুটে বলৈ না। আমি মনে করব কেন? তুমিতো সেই সংস্কারের মধ্যে বড় হওনি তাই। যদি তুমি ভেবে বসো, ভালবাসাটাকে বাদ দিয়ে সংস্কারটিই বড় করে দেখছ বলে।

বিশ্বাস কর প্রান্তিক ভাই, গ্রামের এই অল্প শিক্ষিত মহিলার মধ্যে এমন সুরুচি সম্পন্ন আভিজাত্যে আর উদার মনা বাস্তববাদী এক নারী বাস করতে পারেন ভাবিনি কখনো। সত্যি মনে হয়েছিল, যদি তোমার ঘরে সত্যি কখনো আসি, এমন ভাবনা কি তোমার অমূলক হবে? উনি আরো বলেছিলেন, সব কিছুকে বাদ দিয়ে যে ভালবাসা তা স্থায়ী হতে পারে না মা, ভালবাসতে গেলে তার দোষগুন নিয়েই তাকে ভালবাসতে হয়। তাদের আজন্ম আচরিত সংস্কারকেও ভালবাসতে হয়। দুপুরের দিকে শুনেছিলাম তুমি তোমার চাচার সঙ্গে আলোচনা করছ। বিধর্মী দুটি মানুষ ভালবেসে বিয়ে করলে একজনকে ধর্ম ত্যাগ করতে হবে কেন? তারপর বললেন সত্যি কারের ধর্ম অন্তরের জিনিষ মা। কিন্তু যে ধর্মকে আমরা চোখে দেখি, সে আমাদের আচার সর্বস্ব ধর্ম একটু আগে যে সংস্কারের কথা বললাম, তার জন্যইতো একজনকে ত্যগ স্বীকার করতে হবে। উভয়ে উভয়ের ধর্ম এক সঙ্গে ঘর করতে গিয়ে পালন করতে চাইলে, আচার সর্বস্ব ধর্মের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হতে পারে তাই হয়তো একজনকে এগিয়ে আসতে হবে। আমি বলে ছিলাম, বলল সেলিনা, কিন্তু চাচী সচরাচর দেখা যায় এই ধর্ম বর্জন গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রায় সকলকেই মুসলমান হতে হয়, এটা কেন? কারণ হয়তো একটা আছে আমি অত বলতে পারবনা মা, তবে মুসলিম ধর্ম বিশ্বাসের দিক দিয়ে বেশ কিছু স্বাতন্ত্রের দাবী করে বলেই হয়তো এই রকম হয়। আবার অন্য কিছুও হতে পারে আমি জানিনা। আমি যদি ওর ধর্মীয় আচরণ পালন না করে আমি যে আজন্ম সংস্কারে লালিত পালিত হয়েছি ওকে তাই পালন করতে বলি। সে তুমি পারবেনা মা। কেন? যদি পারতে তা হলে এতদিনই তা পারতে। তার থেকে তোমার পক্ষে সহজ ওর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া। উত্তরে বললাম তাতে যদি অস্বস্থি হয়? তার উত্তরে চাচী বললেন, হলেই বা, একজনকে না একজনকে তো মানিয়ে নিতেই হবে। এক্ষেত্রে না হয় তুমিই মানিয়ে নিলে, তাছাড়া আমার মনে হয় জন্ম তোমার ইসলামের ঘরে হলেও ইসলামের আচার আচরণ তুমি কিছুই জান না। জীবনে হয়তো কোনদিন নমাজও করোনি। আমি মৃদু হেসে বললাম একথা তোমার সত্যি চাচী। আরো বললাম যাকে তোমরা ককসানা বলে জানতে সেই রেহানা, আমার দিদি যখন ওকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালবেসেছিলেন, তখন কিন্তু ডালিম ভাইয়ের বিষ নজরে পড়ে গিয়েছিলেন। একদিন ও ডালিম ভাইকে সত্যিই ভালবেসে ছিল। কিন্তু ডালিম ভাইয়ের মধ্যে যে ধর্মান্ধতা ছিল, ওর মধ্যে তা ছিল না, তাইতো পাগলের মত ওর প্রতি প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল ডালিম ভাই, আর সেই ধর্মন্ধাতার যুপকাষ্ঠে আমাদের জীবনটাকে ধ্বংস করে দিয়েছেন উনি।

একটু থেমে বলল বুঝতে পারছি প্রান্তিক ভাই, ডালিমের কথা বলা আমার উচিৎ হয়নি। কিন্তু উনি বললেন, থাক ওর কথা মা, আল্লহ কাকেও ক্ষমা করেন না, ওকেও করেননি। রোজ কিয়ামত বলে সত্যি যদি কিছু থাকে তবে তার পাপ পূণ্যের বিচার হবে সে দিন। বিকালে ওঁর সঙ্গে ঘুরতে ঘুরতে চলে গেলাম পাশের গ্রামে। উনি এক বাড়ীতে ঢুকে গেলেন আমাকে নিয়ে। ওঁরা আমাকে দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন এ কে? চাচী নিৰ্ধিকার ভাবে বললেন, আমার এক মেয়ে? ওরা অবাক হয়ে বললেন তোমার মেয়ে? না সে ভাবে আমার মেয়ে নয় আমার এক আত্মীয়া। কলকাতায় থাকে, বেড়াতে এসেছে ওর বরকে নিয়ে। তাকেও নিয়ে এলেনা কেন? ওরা এই বেলা চলে যাবে বলেছিল, আমি জোর করে ধরে বেখেছি

একদিন। এরপরে যখন আসবে নিয়ে আসব। তা কোহিনুর কোথায়? ভদ্রমহিলা বললেন, কদিন থেকে পাগলামিটা আবার বেড়েছে। ঘরে শিকল দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে? আল্লাহর যে কি অবিচার, যার জন্য ওর আজ এই অবস্থা সেই যখন নেই, একেও তো নিয়ে যেতে পারে শেষ বিচারের অপেক্ষায়। আমি আঁতকে উঠে বললাম শিকল দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে? চাচী বললেন হা মা, মাঝে মাঝে ওকে শিকল দিতে হয়। কে উনি? ডালিমের স্ত্রী। মানে? মানে আর কিছু নয় মেয়ে। তোমাদের মত ফুটফুটে আর সুন্দর ছটফটে ছিল মেয়েটি। লেখা পড়ায়ও ভাল ছিল। তোমার চাচা ওকে পছন্দ করে ডালিমের সঙ্গে বিয়ে দিলেন। ডালিমেরও পছন্দ ছিল। ও যদি কলকাতায় না যেতো হয়তো ওকে নিয়েই ঘর সংসার করতো। কিন্তু ওখানে গিয়ে কি যে হল! থাক সে কথা, একদিন ডালিমের কয়েকজন বন্ধু ওর প্রতি অত্যাচার করে। অবশ্যি সেই সময় ডালিম ছিল না। তাই বলে,অন্যায় থেকে তো মুক্তি পেতে পারে না। না মা আর বেশী কিছু জানতে চেওনা। তোমার দিদি বোধ হয় এসব জানতোনা, তাই তাকে ভাল হতে বলেছিল। হয়তো একদিন ভালও বেসেছিল বলে, কিন্তু যাকে শুধু ঘৃণাই করা যায়, তাকে কি করে ভালবাসবে? চল ওকে দেখাবো তোমাকে। বললাম না চাচী থাক। থাকবে কেন? যদি তোমার দিদির খোঁজ কোনদিন পাওয়া যায় তারতো ব্যাপারটা জানতে হবে। জানার কি খুব প্রয়োজন চাচী? অবশ্য প্রয়োজন, এতটা জঘন্য প্রকৃতির ছেলের জন্য একটা ফুলের মত জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। মা হয়ে তা মেনে নিতে পারবো না। বুঝতে পারছি প্রান্তিক ভাই কি গভীর বেদনায় উচ্চারিত এই কথাগুলো। আমাকে তাড়া লাগিয়ে বললেন, চল দেখব ওকে। .

চাবিখুলে ভিতরে ঢুকলাম আমরা। শান্ত মেয়েটি আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে, কিন্তু হাতে পায়ে শিকল। কি করুণ সে তাকানো আর দেখতেও সত্যিই ভাল। চাচী বললেন কেমন আছ বৌমা। ও চুপ করে রইল। আপন মনে কি যেন বলতে লাগল। আমি বললাম ওর হৃত পায়ের শিকল খুলে দাওনা চাচী। বললেন না থাক, এবার চল। আমরা যখন চলে আসব, চাচীর শাড়ীর আঁচল ধরে টান দিল মেয়েটি। চাচী বললেন, কিছু বলবে বৌমা। চোখের ইশারায় কি যেন বলল, কলকাতা থেকে এসেছে, হ্যাঁ, সঙ্গে ওর বর আছে। হ্যাঁ নিয়ে আসব একদিন। তুমি তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে ওঠ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *