০৯. কিরীটী থামে না

কিরীটী থামে না।

সে বলে চলে পূর্ববৎ তীক্ষ্ণ ভাষায়। মিত্ৰাণীর চোখে চোখ রেখে।

গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে একটি অসুস্থ অসহায় ভদ্রমহিলাকে!

আ-আপনি বলতে চান, দিদিকে হত্যা করা হয়েছে? না না, আমি যে কিছুতেই ভাবতে পারছি না ব্যাপারটা

পোস্টমর্টেম রিপোর্ট তাই বলছে, মিত্ৰাণী দেবী! কিরীটী আবার বলে।

তাকে হত্যা করা হয়েছে? ব্যাপারটা যেমন অসম্ভব তেমনি অবিশ্বাস্য!

কিন্তু আমরা জেনেছি–

কী?

ব্যাকুল দৃষ্টিতে তাকায় মিত্ৰাণী কিরীটীর মুখের দিকে।

আপনার দিদির মনেও ঐরকম একটা ধারণা হয়েছিল—তাকে হত্যা করবারই চেষ্টা করা হচ্ছে।

জানি। কিন্তু সবটা তো তার অসুস্থ মনের একটা বিকৃত কল্পনা, আর…

মিত্ৰাণী বলতে বলতে থেমে যায়।

বলুন! কিরীটী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল মিত্ৰাণীর মুখের দিকে।

ডাক্তারবাবুও, যিনি বরাবর তাকে দেখছিলেন, ঐ কথাই বলতেন। তাছাড়া আর একটা কথা–

কি?

কিরীটী সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে আবার তাকায় মিত্ৰাণীর মুখের দিকে।

মিত্ৰাণী বলে, সেরকম একটা কিছু ঘটলে আমি নিশ্চয়ই জানতে পারতাম, কিরীটীবাবু।

হয়ত জানতে পারেননি, কারণ সে-রাত্রে প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি হয়েছিল।

তবু–তবু তা অসম্ভব।

অসম্ভব? হ্যাঁ। আমি–আমি জানতে পারতামই, কারণ আমিও জেগেই ছিলাম।

জেগে ছিলেন আপনি?

কথাটা হঠাৎ ঝোকের মাথায় বলে ফেলে কিরীটীর মনে হল, মিত্ৰাণী কেমন যেন একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে।

সে যেন থতমত খেয়ে হঠাৎ থেমে যায়।

স্তব্ধ হয়ে যায়।

আপনি জেগে ছিলেন সে রাত্রে?

হ্যাঁ, মানে রাহুলের খুব জ্বর ছিল, তাকে নিয়ে জেগেই আমার রাতটা কেটেছিল।

কিরীটী আবার পুনরাবৃত্তি করে বলে, তাহলে আপনি জেগেই ছিলেন সে রাত্রে?

হ্যাঁ। ক্ষীণকণ্ঠে জবাব দেয় মিত্ৰাণী।

কিরীটী অতঃপর কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে।

কী যেন সে ভাবছে মনে হয়।

আচ্ছা এবার আপনি যেতে পারেন, মিত্ৰাণী দেবী। কিরীটী অতঃপর শান্ত গলায় কথাটা বলে।

মিত্ৰাণী উঠে দাঁড়াল।

তারপর কোন দিকে না তাকিয়ে ধীরে ধীরে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

কিরীটী সেই দিকে নিঃশব্দে চেয়ে থাকে।

আবনী সাহা কিরীটীর মুখের দিকে তাকিয়ে ডাকেন, কিরীটীবাবু!

কিছু বলছিলেন?

কিরীটী প্রশ্নটা করে অবনী সাহার মুখের দিকে তাকাল।

হ্যাঁ।

বলুন কি বলছিলেন?

আমার যেন মনে হচ্ছে–

কী?

হয়ত মিত্ৰাণী দেবী নির্দোষ।

কিরীটী মৃদু হাসল। মৃদুকণ্ঠে তারপর প্রশ্ন করে, হঠাৎ ও কথা আপনার মনে হল যে?

আমাদের পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট অনুযায়ী সত্যি-সত্যিই যদি শকুন্তলা দেবীকে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েই থাকে, সেটা কি একজন মিত্ৰাণী দেবীর মত স্ত্রী লোকের পক্ষে সম্ভব?

সম্ভব নয় বুঝি?

না। মন যেন মানতে চায় না। তাছাড়া কী?

হাজার হলেও শকুন্তলা দেবী তার বোন তো! বোনকে বোন অমন নিষ্ঠুর ভাবে–

হত্যা করতে পারে না, তাই না? কিন্তু অবনীবাবু, দুজন স্ত্রীলোক যখন একই পুরুষকে ভালবাসে তখন তারা বাঘিনীর চাইতেও হিংস্র নিষ্ঠুর হতে পারে!

মানে-আপনি বলতে চান–

বলতে আমি এখনই কিছুই চাই না অবনীবাবু, আমি কেবল বলতে চাই, ওর চাইতেও নিষ্ঠুরভাবে একজন স্ত্রীলোককে অন্য এক স্ত্রীলোককে হত্যা করতে দেখেছি।

তবে–

না না, মিত্ৰাণী দেবী যে অপরাধিনী এক্ষেত্রে তা অবশ্য আমি বলছি না। কিন্তু এবারে ওঠা যাক, আজকের মত চলুন।

কিন্তু সুশান্তবাবু গেলেন কোথায়? অবনী সাহা বলেন।

ঐ সময় সুশান্ত চ্যাটার্জি এসে ঘরে ঢুকল।

দু হাতে তার দু কাপ চা।

অবনী বাধা দিয়ে বলে ওঠেন, এ কি! চা আবার আনতে গেলেন কেন?

না, না—এ আর কিকিরীটী চেয়ে ছিল সুশান্তর মুখের দিকে। তাড়াতাড়ি হাত বাড়িয়ে বলে, দিন দিন, সত্যিই পিপাসা পেয়েছিল। Thanks!

কিরীটী চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দেয়।