• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • লেখক
  • My Account
  • লেখক
  • My Account
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা PDF ডাউনলোড

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

০১. রায়-দেওয়ান

লাইব্রেরি » শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় » উপন্যাস সমগ্র - শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় » ঝিন্দের বন্দী » ০১. রায়-দেওয়ান

প্রথম পরিচ্ছেদ
রায়-দেওয়ান

কলিকাতার পূর্ব-দক্ষিণ অঞ্চলে কোনো একটা নামজাদা রাস্তার উপর পদার্পণ করিলেই জমিদার রায় বংশের যে প্রকাণ্ড বাড়িখানা চোখে পড়ে, সেটা প্রায় বিঘা দশেক জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। আগাগোড়া পাথরে তৈয়ারি দুই-মহল বাড়ি, সম্মুখে মোটা মোটা থামের সিং-দরজা। সিং-দরজার ভিতর দিয়া লাল কঙ্করের চওড়া রাস্তা বাড়ির সম্মুখের গাড়িবারান্দা ঘুরিয়া আবার ফটকের কাছে আসিয়া মিলিয়াছে। বাড়ির দক্ষিণ দিকে কিছু দূরে জমিদারী সেরেস্তার একটানা ছোট ছোট কুঠুরি ও গাড়ি-মোটর রাখিবার গ্যারাজ ইত্যাদি। বাঁ-দিকে টেনিস খেলিবার ছাঁটা ঘাসের মাঠ ও ব্যায়ামের নানাবিধ সরঞ্জাম। চারিদিকে দেশী বিলাতী ফুলের বাগান এবং সর্বশেষে বসতবাটি ঘিরিয়া ঢালাই লোহার উচ্চ গরাদযুক্ত পাঁচিল।

এই বাড়ির বর্তমান মালিক দুই ভাই, শিবশঙ্কর ও গৌরীশঙ্কর রায়। জ্যেষ্ঠ শিবশঙ্করের বয়স ত্রিশ বত্রিশ বৎসর, ইনি বিবাহিত। প্রত্নতত্ত্বের দিকে খুব ঝোঁক— সর্বদাই লাইব্রেরিতে বসিয়া

পুরাতত্ত্ববিষয়ক বই পড়েন, কিম্বা নিজের বংশের পুরাতন পুঁথিপত্র ঘাঁটিয়া ঐতিহাসিক তথ্য আবিষ্কারের চেষ্টা করেন। সম্প্রতি সিরাজদ্দৌলা কর্তৃক কলিকাতা অবরোধ সম্বন্ধে কয়েকটা নূতন কথা আবিষ্কার করিয়া গুণীসমাজে খ্যাতিলাভ করিয়াছেন।

ছোট ভাই গৌরীশঙ্করের মনের গতি কিন্তু সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ উপাধিধারী হইলেও খেলাধুলা, ব্যায়াম, জিমন্যাস্টিকের দিকেই তাঁহার আকর্ষণ বেশী, দাদার মত বই মুখে দিয়া পড়িয়া থাকিতে কিম্বা পুরাতন দলিল ঘাঁটিয়া পিতৃপিতামহের দুষ্কৃতির নজির বাহির করিতে তিনি ব্যগ্র নন। গৌরীশঙ্কর অদ্যাপি অবিবাহিত, বয়স পঁচিশ-ছাব্বিশের বেশী নয়— অতিশয় সুপুরুষ। রায়বংশ ডাকসাইটে সুপুরুষ বলিয়া পরিচিত; গৌরীশঙ্কর যে তাহার ব্যতিক্রম নয় তাহা তাঁহার গৌরবর্ণ দীর্ঘ বলিষ্ঠ দেহের প্রতি একবার দৃষ্টিপাত করিলেই আর সন্দেহ থাকে না।

কিন্তু ইঁহাদের কথা পরে হইবে। প্রথমে এই রায় বংশের গোড়ার কথাটা বলিয়া লওয়া যাউক।

প্রায় দেড়শত বৎসর পূর্বে এই বংশের উর্ধ্বতন পঞ্চম পুরুষ কালীশঙ্কর রায় হঠাৎ একদিন পাঁচখানা বজরা সহযোগে আদিগঙ্গার ঘাটে আসিয়া অবতীর্ণ হইলেন এবং কালীঘাটে মহাসমারোহে সোপচারে পূজা দিলেন। অতঃপর অল্পকালের মধ্যে তিনি দক্ষিণ অঞ্চলে এক মস্ত জমিদারী কিনিয়া ফেলিলেন এবং কলিকাতার সন্নিকটে মাঠের মাঝখানে এক ইন্দ্রপুরীতুল্য প্রাসাদ নির্মাণ করাইয়া রায়-দেওয়ান কালীশঙ্কর রায় উপাধি ধারণ করিয়া মহা ধুমধামের সহিত বাস করিতে লাগিলেন। তিনি কোথা হইতে আসিলেন কেহ জানিল না; কিন্তু সেজন্য সমাজে তাঁহার গতি প্রতিহত হইল না। যাহার টাকা আছে তাহার দ্বারা সকলই সম্ভব; বিশেষ কালীশঙ্কর বহু দেশ পর্যটন করিয়া প্রচুর অভিজ্ঞতা অর্জন করিয়াছিলেন। শীঘ্রই তিনি তৎকালিক কলিকাতার বরেণ্য সমাজের অগ্রগণ্য হইয়া উঠিলেন। কলিকাতার শতাব্দীপূর্বের ইতিহাস যাঁহারা পাঠ করিয়াছেন তাঁহারা জানেন, রায়-দেওয়ান কালীশঙ্করের নাম সেই ইতিহাসের পৃষ্ঠায় অপর্যাপ্তভাবে ছড়ানো আছে।

কিন্তু এতবড় লোকের বংশরক্ষার দিকেও নজর রাখিতে হয়। বয়স পঞ্চাশ অতিক্রম করিয়া গেলেও কালীশঙ্কর অতিশয় সুপুরুষ ও মজবুত লোক ছিলেন; সুতরাং তিনি অবিলম্বে সদ্বংশজাতা একটি স্ত্রী গ্রহণ করিয়া একযোগে সংসার ধর্মও পারলৌকিক ইষ্টের দিকে মনোনিবেশ করিলেন।

রায়-দেওয়ানকে কিন্তু স্ত্রী ও সাংসারিক সুখৈশ্বর্য বেশীদিন ভোগ করিতে হইল না।

বছর পাঁচেক পরে একদিন রাত্রিকালে কোনো ধনী বন্ধুর বাড়ি হইতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করিয়া ফিরিবার পথে নিজের সিং-দরজার প্রায় সম্মুখে রায়-দেওয়ান খুন হইলেন। তিনি পালকি চড়িয়া আসিতেছিলেন, সঙ্গে হুঁকাবরদার ও দুইজন মশাচি ছিল। নির্জন রাত্রি, হঠাৎ চারজন অস্ত্রধারী দস্যু কর্তৃক আক্রান্ত হইয়া পালকির বেহারা উড়িয়াগণ পালকি ফেলিয়া দৌড় মারিল। হুঁকাবরদার ও মশালচিদ্বয়ও বোধ করি উড়িয়াদের পশ্চাদ্ধাবন করিয়াছিল, কিন্তু তাহারা পরে তাহা স্বীকার করিল না। বরঞ্চ প্রভুর রক্ষার জন্য আততায়ীর সহিত কিরূপ অমিত বিক্রমে যুদ্ধ করিয়াছিল তাহার প্রমাণস্বরূপ নিজ নিজ দেহে বহু দাগ ও ক্ষতচিহ্ন দেখাইল। সে যাহা হউক, দেউড়ি হইতে লোকজন আসিয়া যখন রায়-দেওয়ানকে পালকি হইতে বাহির করিল, তখন তাঁহার দেহে প্রাণ নাই, শুধু একটা ছোরার সোনালী মুঠ বুকের উপর উঁচু হইয়া আছে।

কলিকাতায় কোম্পানীর শাসন তখন খুব দৃঢ় হয় নাই। এরকম খুনজখম লুটতরাজ প্রায়ই শুনা। যাইত। কলিকাতা শহর তখন অর্ধেক জঙ্গল বলিলেই চলে; দিনের বেলা চৌরঙ্গীর আশেপাশে বাঘের ডাক শুনা যাইত। সুতরাং কাহারা রায়-দেওয়ানকে খুন করিল এবং কেনই বা করিল তাহার কোন কিনারা হইল না। উপরন্তু রায়-দেওয়ানের অঙ্গস্থিত হীরার আংটি, সোনার চেন কিছুই খোয়া যায় নাই দেখিয়া আততায়ীদের এই অহেতুক জীবহিংসায় সকলের মনেই একটা ধাঁধার ভাব রহিয়া গেল।

শুধু অনেক অনুসন্ধানের পর হুঁকা বরদারের নিকট হইতে এইটুকু জানা গেল যে, হত্যাকারীরা এদেশীয় লোক নয়; তবে তাহারা যে কোন্ দেশের লোক তাহাও সে বলিতে পারিল না। কারণ হত্যা করিবার পূর্বে যে ভাষায় তাহারা রায়-দেওয়ানকে সম্বোধন করিয়াছিল, তাহা তাহার সম্পূর্ণ অপরিচিত।

এ ছাড়া প্রমাণের মধ্যে সেই সোনার মুঠ-যুক্ত বাঁকা ইস্পাতের ছুরিখানা। ছুরিখানার গঠন এতই অদ্ভুত যে তাহা বাংলা দেশের তৈয়ার বলিয়া মনে হয় না। তাহার সোনার মুঠের উপর যে দুই-চারিটা অক্ষর খোদাই করা ছিল, আজ পর্যন্ত কেহই তাহার পাঠোদ্ধার করিতে পারে নাই।

এই সমস্ত প্রমাণ সাক্ষীসাবুদ একত্র করিয়া কেবল এইটুকুই অনুমান করা গেল যে, দেশ-বিদেশে পরিক্রমণের সময় কালীশঙ্কর হয়তো কোনো শক্তিশালী লোকের শত্রুতা করিয়াছিলেন— তাহারি অনুচরেরা খুঁজিতে খুঁজিতে কলিকাতায় আসিয়া তাঁহাকে হত্যা করিয়াছে। এছাড়া এই হত্যাকাণ্ড সম্বন্ধে কোনো দিক দিয়া আর কিছু জানা গেল না।

ইহাই বলিতে গেলে রায়-বংশের আদিপর্ব। তারপর কি করিয়া কালীশঙ্করের স্ত্রী একমাত্র শিশুপুত্র কোলে লইয়া দোর্দণ্ডপ্রতাপ জমিদারী শাসন করিয়া অচিরাৎ রায়বাঘিনী উপাধি অর্জন করিলেন এবং তখন হইতে আজ পর্যন্ত রায়-পরিবার কি করিয়া স্বীয় ঐশ্বর্য, প্রভুত্ব ও বংশগরিমা রক্ষা করিয়া আসিতেছে, সে সব কথা লিখিয়া গ্রন্থ ভারাক্রান্ত করিতে চাহি না। রায় বংশের ইতিহাস এইখানেই চাপা থাকুক। পরে প্রয়োজন হইলে এই ছেঁড়া পুঁথির পাতা আবার খুলিলেই চলিবে।

সন্ধ্যার পর শিবশঙ্কর তাঁহার বৃহৎ লাইব্রেরি ঘরে বিদ্যুত্বাতি জ্বালিয়া একাকী বসিয়া একখানা মোটা চামড়া বাঁধানো পুস্তক পাঠ করিতেছিলেন। ঘরের দেয়ালগুলা অধিকাংশই মেঝে হইতে ছাদ পর্যন্ত পুস্তকের আলমারি দিয়া ঢাকা। মেঝেয় পুরু কার্পেট পাতা—চলিতে ফিরিতে শব্দ হয় না। ঘরের মধ্যস্থলে প্রকাণ্ড একটা সেক্রেটারিয়েট টেল, তাহার চারিপাশে কতকগুলি গদি-মোড়া চেয়ার। ঘরে প্রবেশ করিতেই সম্মুখের দেয়ালে একখানা তৈলচিত্র টাঙানো দেখা যায় এটি বংশের প্রতিষ্ঠাতা দেওয়ান কালীশঙ্করের প্রতিকৃতি। প্রমাণ মানুষের ছবি—মাথায় পাগড়ি ও গায়ে ঘুণ্টিদার মেরজাই পরা; মুখচোখ বুদ্ধির প্রভায় যেন জ্বলজ্বল করিতেছে। দেড়শত বৎসরের পুরাতন হইলেও ছবিখানি এখনো বেশ ভাল অবস্থায় আছে—দাগ ধরিয়া বা পোকায় কাটিয়া নষ্ট হয় নাই।

শিবশঙ্কর একমনে পড়িতেছেন, এমন সময় তাঁহার স্ত্রী অচলা নিঃশব্দে ঘরে ঢুকিলেন। কিছুক্ষণ স্বামীর চেয়ারের পিছনে দাঁড়াইয়া থাকিয়া বেশ একটু শব্দ করিয়া পাশের একখানা চেয়ারে বসিলেন। প্রকাণ্ড পুরীর মধ্যে উনিশ বছরের বধূটি একেবারে একা-বাড়িতে দাসী চাকরানী ভিন্ন অন্য স্ত্রীলোক নাই। তাই দিনের বেলাটা কাজে কর্মে যদি বা কোনোমতে কাটিয়া যায়, সন্ধ্যার পর স্বামী লাইব্রেরিতে প্রবেশ করিলে আর যেন সময় কাটিতে চাহে না। দেবর গৌরীশঙ্করও কয়েকদিন ধরিয়া কি একটা খেলায় এমন মাতিয়াছেন যে, দুদণ্ড বসিয়া গল্প করা তো দূরের কথা, তাঁহার দর্শন পাওয়াই ভার হইয়া উঠিয়াছে।

শব্দ শুনিয়া শিবশঙ্কর বই হইতে মুখ তুলিয়া চাহিলেন এবং স্ত্রীর দিকে ফিকা রকম একটু হাসিয়া আবার পুস্তকে মনোনিবেশের উদ্যোগ করিলেন।

অচলা নিজের চেয়ারখানা স্বামীর দিকে একটু টানিয়া আনিয়া বলিল— বই রাখো। এস না একটু গল্প করি।

শিবশঙ্কর চমকিত হইয়া বলিলেন— অ্যাাঁ। ওঃ– হ্যাঁ, বেশ তো। তা গৌরী কোথায়?

অচলা হাসিয়া বলিল— ঠাকুরপো এখনো ক্লাব থেকে ফেরেনি। ভারি মুষড়ে গেলে–না? ঠাকুরপো থাকলে আমাকে তার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে বই পড়তে পারতে।

শিবশঙ্করও হাসিয়া ফেলিলেন–না না, তা নয়। তাকে কদিন দেখিনি কিনা তাই ভাবছিলুম, সেবারকার মত লক্ষৌ কি লাহোর পাড়ি দিল বুঝি।

অচলা বলিল–তোমাকে না বলে তোমার অনুমতি না নিয়ে তো ঠাকুরপো কোথাও যায় না।

তা বটে!–শিবশঙ্কর একটু হাসিলেন— আজকাল বুঝি তলোয়ার খেলায় মেতেছে? গোয়ালিয়র না যোধপুর থেকে একজন বড় তলোয়ার খেলোয়াড় এসেছে, তারই কাছে দেশী তলোয়ার খেলা শেখা হচ্ছে। এই তো মাস কয়েক আগে কোন একটা ইটালিয়ানকে মাইনে দিয়ে রেখে ফেন্সিং শিখছিল। তার আগে কিছুদিন বক্সিং-এর পালা গেছে। এবার গোয়ালিয়র ঘাড় থেকে নামলে আবার কি চাপে দেখ।

অচলা বলল–সত্যি বাপু, সময়ে বিয়ে না দিলে আজকালকার ছেলেরা কেমন একরকম হয়ে যায়। তুমিও তো কিছু করবে না, কেবল বইয়ের মধ্যে মুখ গুঁজে বসে থাকবে। ঠাকুরপোর বৌ এলে আমার কত সুবিধে হয় ভাব দেখি? একলাটি এত বড় সংসারে কি মন লাগে?

শিবশঙ্কর মৃদুহাস্যে বলিলেন— সেইটেই তাহলে আসল কথা! কিন্তু কি করি বল, বিয়ের কথা তুললেই সে হেসে উড়িয়ে দেয়।

অচলা বলিল— তাই বলে সারা জন্ম কি কুস্তি করে আর তলোয়ার খেলে কাটাবে নাকি? বিয়ে-থা সংসারধর্ম করতে হবে না?

বাহিরের গাড়িবারান্দায় মোটরের গুঞ্জন শব্দ শোনা গেল। শিবশঙ্কর বলিলেন— প্রশ্নটা ওকেই করে দেখ। ওই বুঝি সে এল!

হাফ-প্যান্ট-পরা কামিজের গলা খোলা গৌরীশঙ্কর সেই ঘরেই আসিয়া প্রবেশ করিল। অচলাকে দেখিয়া বলিল–ইস্, অচলবৌদি একেবারে দাদার ব্যুহের মধ্যে ঢুকে পড়েছ যে। এবারে দেখছি দাদাকে লাইব্রেরির দোরে শান্ত্রী বসাতে হবে।

অচলা ভ্রূভঙ্গি করিয়া বলিল–তুমি আমাকে অচলবৌদি বলবে কেন বল তো? শুধু বৌদি বলতে পার না?

গৌরী বলিল— বৌদি হিসাবে তুমি যে একেবারেই অচল এইটি পাঁচজনকে জানানোই আমার উদ্দেশ্য— এ ছাড়া অন্য অভিপ্রায় নেই।

শিবশঙ্কর বলিলেন–আজকাল তো তবু খাতির করে অচলবৌদি বলছে, বছর চারেক আগে পর্যন্ত যে শুধু অচল বলেই ডাকত!

বস্তুত অচলা এ সংসারে আসিয়া অবধি এই দুইটি কিশোর-কিশোরীর মধ্যে দেবর-ভ্রাতৃজায়ার সরস সম্পর্কের সহিত ভাই-বোনের মধুর স্নেহ মিশিয়াছিল। অচলা ঠোঁট ফুলাইয়া বলিল— বেশ তো, আমি যদি এতই অচল হয়ে থাকি, একটি সচল বৌদি ঘরে নিয়ে এস, আমি না হয় এক কোণে পড়ে থাকব।

গৌরী হাসিয়া বলিল— ওরে বাস রে, তাহলে কি আর রক্ষে থাকবে! দাদাকে এবং সেই সঙ্গে আমাদের সকলকে সেই কোণেই আশ্রয় নিতে হবে যে।

অচলা হাসিয়া ফেলিল, বলিল— সে যেন হল। কিন্তু আজ তিন জন ঘটক এসেছিল যে!

গৌরী বলিল— আবার ঘটক! দারোয়ানগুলোকে তাড়াতে হল দেখছি। তাদের পৈ পৈ করে বলে দিয়েছি, ঘটক দেখলেই অর্ধচন্দ্র দেবে, তা হতভাগারা কথা শোনে না!

এই সময় বেয়ারা দরজার বাহির হইতে জানাইল, একটি ভদ্রলোক মূলাকাৎ করিতে চাহেন, হুকুম পাইলে সে তাঁহাকে এখানে লইয়া আসে।

গৌরী বলিল— এই সেরেছে— ঘটক নিশ্চয়। আমাকে পালাতে হল; দাদা, তুমি লোকটাকে ভালয় ভালয় বিদেয় করে দাও।

খবরদার বলছি, ঘটক তাড়াতে পারবে না। বাড়িতে সোমত্ত আইবুড় ছেলে, ঘটক আসবে না তো কি? বলিয়া অচলা হাসিতে হাসিতে ভিতরের দরজা দিয়া প্রস্থান করিল।

গৌরীও অচলার অনুগমন করিবার উপক্রম করিতেছে দেখিয়া শিবশঙ্কর বলিলেন— পালাস্ নে, বস। হুকুম শুনলি তো?

গৌরী টেবলের একটা কোণে বসিয়া বলিল— নাঃ, এরা আর বাড়িতে টিকতে দিলে না। এবার লম্বা পাড়ি জমাতে হবে দেখছি—একেবারে কাশ্মীর, না হয় আরাকান।

শিবশঙ্কর আগন্তুক ডাকিয়া আনিবার জন্য বেয়ারাকে হুকুম দিলেন।

Category: ঝিন্দের বন্দী
পরবর্তী:
০২. ধনঞ্জয় »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑