অবরোধ বাসিনী – ১০

[ ১০ ]

কোন জমিদার গৃহিণী ছোট ভাইয়ের বউ আনিবার জন্য ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ী গিয়াছেন। একদিন হঠাৎ গিয়া দেখেন নববধূকে তাঁহার ভ্রাতৃবধূ ভাত খাইয়াইতেছেন। ভাতের বাসনে একটা কাঁচা মরিচ ছিল। তিনি সরল মনে জিজ্ঞাসা করিলেন, “আমাদের বউ ঝাল খাইতে ভালবাসে নাকি?” বউয়ের ভাবীজান উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ, বড্ড ঝাল খায়!”

পরে তিনি বউ লইয়া নৌকাযোগে কলিকাতায় আসিলেন। পথে তিনি চারি দিন নৌকায় থাকা হইল। এই সময়ে তিনি যাহা কিছু রান্না করাইতেন, তাহাতেই অতিরিক্ত ঝাল দেওয়াইতেন। আসল কথা এই যে, বউ মোটেই ঝাল খাইতে অভ্যস্তা নহেন। খাইবার সময় কাঁচা লঙ্কার খোশবু শুঁকিয়া ভাত খাইতেছিল। তাই ঠাট্রা করিয়া তাঁহার ভাবীজান ঝাল খাওয়ার কথা বলিয়াছিলেন। ফলে বেচারীর প্রাণ লইয়া টানাটানি।

ননদ মহাশয়া কাঁচা লঙ্কা দিয়া মুড়ি মাখিয়া ভাই-বউকে আদর করিয়া কাছে বসাইয়া খাইয়াইতেন। বউ-এর দুই চক্ষু বহিয়া টস্‌টস্‌ করিয়া জল পড়িত-মুখ জিহবা পুড়িয়া যাইত-তবু বড় ননদকে মুখ ফুটিয়া বলেন নাই যে, তিনি ঝাল খান না!! ও সর্ব্বনাশ! একে নূতন বউ,-তাতে বড় ননদ-প্রাণ গেলেও কথা কহিতে নাই।

1 Comment
Collapse Comments

হায়রে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *