1 of 2

বাঁশফুল – শিবতোষ ঘোষ

বাঁশফুল – শিবতোষ ঘোষ

এ অঞ্চলে প্রথম বাঁশফুল ফুটল অতুলদের ভালকি-বাঁশে।

অতুলের বাবা ছানিকাটা চশমা পরে সে-ই বাঁশতলায় বসে ছেঁড়া জাল সারাই করছিল আর ধানখেতে টিয়ে তাড়াচ্ছিল। আড়াই বিঘের পুরো বন্ধ পাকা সোনার রং ধারণ করেছে, বোরোধানের খেত, আই আর ছত্রিশ, পন্থনগরের বীজ, দারুণ ফলেছে। শুধু তারাই নয় পথ-চলতি যে-ই খেতের পাশ দিয়ে যায় সে মনে-মনে হিসেব করে, একেবারে স্বল্প পরিচিত পথিক, সেও কাছে এসে বলছে বাবু গো, খেতিটা তোমাদের বুঝি? এবার শুধু টিয়াগুলোকে তাড়ানোর ব্যবস্থা করো গো বাবু, বলে রাখলাম একশো পঁচিশ-তিরিশ মন ধান তোমার বেটা কাটবেই।

টিয়ে তাড়াতে হয় সকাল ছ’টা থেকে সকাল ন’টা, আর বিকেল সাড়ে তিনটে থেকে সাড়ে পাঁচটা, এখন সাড়ে ছ’টায় সূর্য ডোবে, যতক্ষণ না মুখ-আঁধারি হয়।

বুড়ো জাল সেলাই করছিল, মাছ ধরার মতো অত নেশা আর কোনও-কিছুতে নেই, পাখি ধরা, বাড়গোল-ধরা…সে যে ধরা হোক মাছ ধরার কাছে কেউ না, মাছ ধরায় বা ধরার সরঞ্জাম নির্মাণে কখনও ক্লান্তি আসে না। অতুলের বউকে দুটি দূর্বা তুলতে বললে বলে—উঃ কী রোদ! ন্যাড়াদার রাজকুলের মেয়ে, তাদের ভেতর বাইরেই কখনও রোদ পড়েনি, দাসীগণ মাথায় বাতাস করে করে তাদের চুল শুকোত, রাজবাড়ির মেয়েদের, সেই চন্দ্রা, ডাকল—লক্ষ্মী, একমুঠা দূর্বা তুলে এনে দিবি গো? কিন্তু এই রাজকুলের মেয়েও ভাত খেয়ে-না-খেয়ে খিড়কি পুকুরে ছিপ হাতে বসে যায়, পুঁটির খুটান নয়, বড় খুটান, নিশ্চয় বড় ট্যাংরা, ট্যাংরা মাছের বীজের টক দারুণ প্রিয় অতুলের বউয়ের। চন্দ্রার মাথার ওপর দিয়ে দুর্বা তোলার চেয়েও কত যে কঠিন রোদ বয়ে যায়, চন্দ্রা চোল-চোল করে জল নেয় মাথায়।

কৃপণ ছাড়া দুটো জিনিস কিছুতেই হয় না বাঁশ আর মাছ। জিনিসদুটোর ধর্মই হল কমালে দারুণ দ্রুত কমে, বাড়ালে দারুণ দ্রুত বাড়ে। অতুলের বাবা একটু কৃপণ, একটু নয়, অতুলও কৃপণ, কৃপণের বাড়িতে যেই জন্মাক সে যে কী করে কৃপণ হয়ে যায়, তাদের বাড়িটারই কৃপণ নামে একটু, একটু নয়…

কিন্তু এর ফলে তাদের বাঁশবাগান হতিহষ্কা অঞ্চলে একটি দেখবার জিনিস হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাদের একটা গোটা বাঁশ নিয়ে যেতে ছ-সাতজনের দরকার হয়। সাত ঝাড় বাঁশ অতুলদের, এর যে-কোনওটার তলায় এসে দাঁড়াল গর্বে বুক ফুলে সাত হাত হয়ে যেত তাদের সকলের।

কিন্তু মুশকিল হল অতুল বউয়ের কাছে যেদিনই তাদের এই বাঁশ নিয়ে গর্ব করেছে সেদিনই চন্দ্রা তাকে একেবারে পথে বসিয়ে ছেড়েছে, ছড়া কাটে চা—ধনের ভেতর ধন, আড়াই মুঠি শন, সেই নিয়ে ঘুরে মরে এ-কোণ সে-কোণ। সে ন্যাড়াদার রাজকন্যা, যদিও তার বাবা পরেশ কোঙারকে তিরিশ হাজার টাকায় আমবাগান বন্ধক দিয়ে তার বিবাহ দিতে হয়েছিল, তবু সে রাজকন্যা, সে অমন বাঁশের মতো তুচ্ছ। দেমাক সহ্য করতে পারে না।

অতুলের হয়েছে মহাবিপদ। বাঁশঝাড় ছাড়া গর্ব করার মতো তাদের যে আর কিছু নেই। এরই জন্য তাদের এত কৃপণ হতে হয়েছে। কৃপণের জন্য বাঁশ না বাঁশের জন্য কৃপণ…সে যাই হোক, তাদের বাঁশ আর কৃপণ-স্বভাব একসঙ্গে এমন মিশে গেছে যে একটাকে দেখলে আর-একটা দেখা হয়ে যায়। তাদের চন্দ্রাদের মতো ভাঙা হাতিশালও নেই, ভাঙা ঘোড়াশালও নেই, রাজা শচীনন্দনের সাত ভাই, সানো ভাইয়ের শাখার নৌকো হচ্ছে এই চন্দ্রার। যদিও সাত ভাই, যদিও সব ভাঙা, সব জরাজীর্ণ, ন্তু অহঙ্কারটা ঠিক বয়ে যাচ্ছে স্রেতের নৌকোর মতো। কত লোকের কত কী-বেচনবাবুর সাতশো গাছের বিশাল আমবাগান, শ্রীহরি ঘোষের যোলো সের দুধ দেওয়া জার্সি গাই, কার্তিক জানার বৈঠকখানাতেই পাঁচ হাজার টাকার বাঁধানো ফোটো দেওয়ালে পেরেক মেরে মেরে টাঙানো, কাউকে পেলে তাকে একটা-একটা করে দেখায়—এ হল গোপা বুদ্ধদেবরাহুল, এ হল—নিমাই-শচীমাতা-বিষ্ণুপ্রিয়া, এ হল রামকৃষ্ণ পরমহংস-সারদা-বিবেকনানন্দ… সত্যি ওই বাঁশ ছাড়া তাদের দেখানো মতো আর কিছু ছিল না। অথচ একটা-কিছু অহঙ্কার না নিয়ে জীবনযাপনটাও কীরকম মুহ্য-মুহ্য লাগে।

অতুলের বাবা ভেবে রেখেছে বাঁশ বেচে মেয়ের বিয়ে দেবে, ওইটাই বাড়ির শেষ কাজ, জাঁকজমক করে করবে। কিন্তু অতুলের ঠাকুমা চাপ দেয় হরিমন্দিরের জন্য। টাকা কোথা? কেন রে, বাঁশ বেচে দে, বাঁশ তো তোরা কেউ লাগাসনি, তোর বাপ লাগিয়ে রেখে গেছে। অতুলের জ্যাঠা আবার গোটা বারান্দায় টিন দিতে চায়, একবার করে ফেলতে পারলে পঞ্চাশ বছর আর দেখতে হবে না। টিনের ওপর একটা নারকেল পড়লে বেড়ে যায়, এগুলো টিন! কিন্তু কে শোনে কার কথা, জ্যাঠা স্বপ্ন দেখে যায়।

অতুলও বাঁশ বেচার স্বপ্ন দেখে, শ্বশুর সাড়ে সাত হাজার টাকা দিয়েছে, বাকি সাড়ে সাত হাজার টাকা দিয়ে…শ্বশুরের পুরোটাই দেওয়ার কথা ছিল, দিল না তো আর কী করবে, বাঁশ আছে বাঁশ বেচে দেবে, তার স্পষ্ট ছবি আয়না-টায়না দিয়ে সুসজ্জিত মোটর সাইকেলের পেছনে বসে আছে চন্দ্রা, সিনেমার মতো চন্দ্রা তার কোমর জড়িয়ে, তারা শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছে।

আস্তে-আস্তে করে পরিবারের যার যা যাবতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষার মূল উৎস বা ভিত্তিভূমি হয়ে দাঁড়িয়েছিল বাঁশ, বাঁশ থেকে তার বাঁশরি বানাচ্ছিল।

বুড়োর গায়ে তখন থেকে কী ঝরঝর করে পড়ছে, টিয়ে তাড়ানো মানে খেতের মাঝে টাঙানো টিনের দড়ি ধরে দু-চারবার একটু নেড়ে দিতে হয়, টিনের ভেতরে একটা কাঠি আছে ধাক্কা লেগে অদ্ভুত শব্দ বেরোয়, মানুষ ছাড়া আর কেউ শব্দদূষণ সহ্য করতে পারে না, টিয়া পালায়। বুড়োর এই পাখি তাড়ানো, জাল সেলাই, ভেতরে-ভেতরে মেয়ের জন্য পাত্র খোঁজা, একসঙ্গে এত সব হচ্ছিল বলে অতুলের বাবা মারিকবুড়ো বাঁশফুলের রেণুর দিকে তাকায়নি। ঠিক তার মাথার ওপরে বাঁশের ডগায় নাকে তেলেঙ্গি নাকছাবির মতো একথোকা বাঁশফুল ঝুলছিল। বুড়োর পিঠে পিপড়ে চলছিল, ফেলতে গিয়ে হঠাৎ দেখল বাঁশফুলের রেণু, অনেক মানুষের গন্ধ শোঁকার অভ্যাস আছে, গন্ধ শুকল…প্রায় চল্লিশ বছর আগের একটা ভয়ঙ্কর চেনা জিনিসকে স্মৃতির গহন অন্ধকার থেকে তুলে আনা..অতুলের মা’র মৃত্যু হল তেরো বছর, মাত্র তেরো বছর মুখটা দেখেনি বলে সবচেয়ে বেশি বা বিশেষ-দেখা মানুষটাও কেমন আবছা হয়ে গেছে, এখন বুড়িকে দেখতে চাইলে তাকে বুড়ির ফোটোর কাছে যেতে হয়।

কিন্তু তবু বাঁশফুল চিনতে ভুল হল না মারিকবুড়োর, দশমাথা কার, রাবণ, এ কখনও কেউ ভুলবে, সীতা অযযাধ্যায় ফিরে এসে বিজনে রাজবালাদের সঙ্গে গল্প করতে করতেও অন্যমনস্কভাবে ধুলোয় দশটা মাথা এঁকে বসেছিল। মারিকবুড়োও বাঁশফুল ভোলেনি, সে জাল ফেলে আ-আ করে একটা অসম্ভব জোর ছাতি-বিদারক শব্দ করে দৌড়তে লাগল।

.

২.

মারিকবুড়ো লুকিয়ে বাড়িতে নিয়ে এল বাঁশফুলের থোকা।

বাড়ির সবাই তন্ন-তন্ন করে খুঁজতে বেরোল, আর কাদেরও ঝাড়ে…এই শালা। বাঁশফুল, শালা বাঁশফুল…তা হলে কি শুধু তাদের সংসারেই…বাঁশফুল ফুটলে ধ্বংস অনিবার্য, দুর্ভিক্ষ মড়ক…প্রচণ্ড লণ্ডভণ্ড হতে লাগল অতুলদের সংসারে।

কে এমন কী পাপ করলে যে তার জন্য….

অতুলদের বাড়িতে পাপের একটা লিস্টও হয়ে গেল।

ঘোরতর পাপ ছাড়া তো এত বড় শাস্তি ধরণী দেয় না কাউকে!

চন্দ্রার অহঙ্কার বা দেমাকও এই লিস্টের অন্তর্ভুক্ত হল।

এবার যদি তার বসন্ত হয়, তার কী সুন্দর মুখ টোপাকুলের মতো গর্তে-গর্তে ভর্তি হয়ে যাবে, উঃ মা গো! আর শ্বশুরবাড়িতে যদি দুর্ভিক্ষ হয়, প্রখর রোদে তাকে যদি মাঠে ঘুঁটে-গোবড় কুড়োতে যেতে হয়।

আগের চেয়ে যত মানুষ বাড়ছে তত দীর্ঘশ্বাস বাড়ছে, দীর্ঘশ্বাসে,দীর্ঘশ্বাসে যখন ছয়লাপ হয়ে যায়, যেমন জলকণা জমাট বাঁধলে মেঘ, মেঘ থেকে বৃষ্টি, মেঘ বৃষ্টির মতো দীর্ঘশ্বাস আর পাপ—এও অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, প্রতিটি দীর্ঘশ্বাসের পেছনে কোনওনা-কোনও পাপী-হাতের আক্রমণ থাকে, এভাবে হয়তো আগামী শতাব্দীতে বাঁশফুল ফোঁটার সময় আরও কমে আসবে, দীর্ঘশ্বাস বাড়ছে, পাপ বাড়ছে, এদিকে বাঁশফুল ফোঁটার সময়ও তত কমে আসছে, চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ বছরের ব্যবধান ছিল সেটা কমে তিরিশ, হতে-হতে কুড়ি, পনেরো, দশ, তারপর হয়তো প্রতি বছরেই..না! অতুল চন্দ্রার দিকে এগোচ্ছিল মুখটা নিয়ে কিন্তু অসুস্থ লোকের গভীর কষ্টের আর্তনাদ করে বালিশে সেই জীর্ণ মুখটা গুঁজে দেয়।

দেখতে-দেখতে যখন অতুলদের বাড়ির সকলেই বাঁশফুলের ভয়ে ভীষণ আধখানা, তা অবশ্য মাত্র চারদিন ছিল, তারপর একদিন সকালে দেখা গেল অঞ্চলের সমস্ত বাঁশবন ফুলসম্ভারে সজ্জিত হয়ে সকলের নাড়ী শুকিয়ে দিয়েছে।

তেরোশো পাঁচ সালে বাঁশফুল ফুটেছিল, পাঁচ সালের ভয়ঙ্কর বন্যার ঠিক একটু আগে, তেরোশো উনপঞ্চাশে বাঁশফুল ফুটেছিল ঝড়বছর, আশ্বিনের প্রলয়ঙ্কর ঝড়ের তার-একটু আগে, এবার, ফুটল তেরোশো সাতানব্বই বা উনিশশো নব্বই সালে। আমাদের আগের শতকের বাঁশফুলের খবর জানার উপায় নেই কিন্তু এই শতকের বাঁশফুল দু-দুবার প্রমাণ করে দিয়েছে যে, সে অযথা-অযথা ফোটে না। বাঁশগাছই একমাত্র উদ্ভিদ যার ফুলের রহস্য এখনও কেউ ধরতে পারছে না, বাঁশগাছগুলো সব মরে যায়, ঝাড়তে ঝাড়, আর তাদের বিষাক্ত দীর্ঘশ্বাস সব শুষে নেয়—শস্যশ্যামল, নদী-জল,গোবৎসরা সব উলটে-উলটে পড়ে আছে নদীপাড়ে, চিল বসছে পুকুরের শুকনো পাঁকে, মরা পাকাল মাছ টেনে-টেনে বের করছে, শকুন উড়ছে আমবাগানের মাথায়, মারিকের পিসি দা দিয়ে বড় গেড়ি খুবলে বার করতে গেছল, সাপ বেরিয়ে পড়েছিল, তার পিসি সেই সাপের কামড়েই মারা যায়।

মারিকবুড়োও ভাবছিল অতুলের মা’র ওপর তারও কিছু কিছু নির্যাতনের পাপ থেকে গেছে। একবার গর্ভাবস্থায় তাকে দুডাং বসিয়ে দিয়েছিল, তা সে যেমন রি রিক বেলার সময়…কিন্তু যত যুক্তি থাক, ওটা পাপ। আচ্ছা, আজ তেরো বছর পর সেই পাপের ফলন এল। হতেও পারে, তারও তো কিছু পুণ্য ছিল, এতদিন তারই জোরে হয়তো..যাকগে আজ নিশ্চিন্তি, আজ সারা অঞ্চলের প্রত্যেকের বাঁশে ফুল ফুটেছে।

ফুল বললে একটা মায়াময়ী আকর্ষণ জাগে। কিন্তু বাঁশফুল বললে…যেন সেই ছবিটা-পার্বতীকাধে শিবের প্রলয়ঙ্কর নৃত্য, হাতিহষ্কা অঞ্চলের ছোট বড় একেবারে দুধের শিশুটি পর্যন্ত জেনে গেল একা মত্ত হাতি আসছে, পালা-পালা! যাগযজ্ঞ, খোলকীর্তন, শিব-শীতলার পুজোবলি তো হলই উপরন্তু ব্লকের মাধ্যমে নিউসেক্রেটারিয়েট বিল্ডিং-এর কৃষিবিভাগে চিঠি লেখা হল :

মহাত্মন,

আমরা হাতিহষ্কা অঞ্চলের অন্তর্গত দাসপুর, জামালপুর, ঝরিয়া, ঋষা, জগন্নাথপুর, চাকতি ধানখণ্ডি প্রভৃতি আরও অসংখ্যা গ্রামের অধিবাসীবৃন্দ হইতেছি।

মহাশয়, আমাদের অঞ্চলের সমস্ত বাঁশঝাড়গুলিতে ফুল ফুটিয়া সাদা হইয়া গিয়াছে, ঝাড়ের বাঁশগুলি দেখিতে-দেখিতে শুকাইয়া মরুভূমিপ্রাপ্ত হইতেছে। এই দুষ্ট ফুলগুলি কেবল গাছগুলিকেই মারিয়া ক্ষান্ত হইতেছে না, চারিদিকে এক ভয়ঙ্কর ভয় ও ত্রাসের সৃষ্টি করিয়াছে।

মহাভারতের ভীষ্ম কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আগে বলেছিলেন বাঁশগাছে ফুল ফুটেছে কি না দেখো তো!

— পিতামহ, ফুল ফুটেছে।

–তা হলে আর কিছু করার নেই।

অধীনগণের বিনীত প্রার্থনা, আমাদের দরিদ্র গ্রামজীবনের অন্যতম সাথী এই বাঁশগুলিকে ফুল ফোঁটার হাত হইতে রক্ষা করিয়া এবং আমাদের ভয়-সন্ত্রাস দূর করিয়া স্বাভাবিক জীবন-যাপনে সহায়তা করিয়া বাধিত করিবেন।

নিবেদন ইতি
কৃপাপ্রার্থী
হাতিহল্কা অঞ্চলের অধিবাসীবৃন্দ।

নূরপুরের বাসনাবুড়ি অর্থাৎ ছোঁচার মা, অঞ্চলে সেই একমাত্র যে নিটে বাঁশফুল ফুটতে দেখল।

-তেরোশো পাঁচ সালে আমার তেখন কিশরি বয়স, মা’র সঙ্গে ধানরুয়া, তলাভাঙা শিখছি। হু, আমরা বাঁশচাল ভাজে খেয়েছিলুম গো, কী সোন্দর সরু সরু চাল, তবে বড্ড ভুয়া বেরায়, এক ঝড়া কুড়াই আনলে একপুয়া চাল। কিন্তু কী করব, তেখন যে আর কুথাও কিছু লাই।

ফোকলা মুখে হাসে বুড়ি—তু ভাগ্য বাঁশফুল ফুটেছিল, বাঁশচাল খেয়েই টিকে গেলাম।

—কিন্তু হ্যাঁ গো ছোঁচার মা, কদ্দিন পর আবার সব ঘুরে এল, বাঁশগাছ সব সেরে উঠল, আবার কচিপাত হল, মড়ক সরে গেল, দুর্ভিক্ষ সরে গেল, নদীর জল হল, কোকিলকবুত্র ডাকতে লাগল, তুলসীচারা রোল, পুকুরে মাছ হল, পদ্মফুল ফুটল…হ্যাঁ গো কদ্দিন পর আবার ঘ ঘুরাই পাইল পিখিবি, হা গো ছোঁচার মা!

—ঠিক মনে লাই রে…এক বছর, দেড় বছর, আড়াই…সঠিক মনে হচ্ছেনি, তবে আকাল বড় খারাপ বাপ, বড় খারাপ।

বুড়ির চোখ দিয়ে জল গড়ায়, বুড়ি হাঁপাতে থাকে।

এখন সাতানব্বই-এর আষাঢ় মাস চলছে এখনও ধানবোনা কি বীজতলা ফেলার মতোও মাঝারি বৃষ্টিটুকুও মাটি পায়নি। গায়ে গামছার বাতাস খেতে-খেতে প্রতিদিন সন্ধেবেলা সত্যি-সত্যি আর বৃষ্টিটিস্টি হবে না, না কি গো?

–আর বিস্টি!

–বাঁশের খোদ্দার পেলে?

—কে কিনবে, পাইকার এসেছিল সে বলছে, বাতা-জ্বালানির দামটুকু দিতে পারে, এ বাঁশ তো আর অন্য কোনও কাজে লাগবে না। ঝাড়পিছু দাম দিয়ে গেছে আড়াই শো টাকা।

অতুলদের সাত দুগুণে চোদ্দ শো, সাত অর্ধেক সাড়ে তিন, সাড়ে সতেরো শো, ব্যস বাঁশঝাড় উধাও, এমনি একদিন নিজের বুদ্ধিমতো নাইট্রোজেন মিশিয়ে মেটাসিড ছিটিয়েছিল অতুল কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।

—আরে শুনেছু অযবপুরে তিনজন মারা গেছে? একজন তো একেবারে জুয়ান, হঠাৎ…

—সে তো নাকি দেওয়াল চাপা পড়ে মারা গেছে। —তা বল দিকি এতদিনের শক্ত দেওয়াল সে-ও আজ ধসে গেল।

যাবতীয় অভাব, যাবতীয় মৃত্যু বই বাঁশফুলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিশাল আকার ধারণ করে হাতিহায়।

পুরনো রেকর্ড বলছে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ বছরের ব্যবধানে বাঁশফুল ফোটে, তেরো শো পাঁচ, উন পঞ্চাশ, সাতানব্বই। কিন্তু একটা জিনিস লক্ষ করেছ সময়টা আগের চেয়ে কমেছে। আগের শতাব্দীর হিবে পাওয়া যায়নি, গেলে দেখা যেত যে সেব্যবধানটা ছিল ষাট-সত্তর বা তারও বেশি, এভাবেই হয়তো কমতে কমতে…

অঞ্চলের অন্দরমহলও এখন নানা রিহার্সেলে ব্যস্ত: ঘর সব ঝটিয়ে নিয়ে এলেও নাকি একমুঠো চাল থাকবেনি গো জেঠিমা, আটাও মিলবেনি একমুঠা, ছেপেনাকে কী করে বাঁচাব?

—টিপে টিপে চালা, আরও টিপেটিপে, সেই তো অনাহারে থাকতে হবে, অনাহারের চাইতে অর্ধাহার ভাল।

—হ্যাঁ গো ছোটপিসি, নাকি থইথই ব জল শুকিয়ে ঝামা ইটের মত শক্ত হয়ে যাবে? তা হলে আমাদের এই তালপুকুর?

ঘটিও ববেনি, দেখছু না কী হারে জল কমছে, কাল কাপড় কাচতে এসে দেখে গেছি বুড়া আশুদ মুড়ার কাছে জল, আর আজ পাথরের নীচে নেমে গেছে। অ্যাই, জলে কেউ ঢাপাসি করবিনি, এই একটু জলের জন্য হাহাকার পড়ে যাবে।

নদীতে জল থাকবে না, জলের জায়গায় শকুন মরা গোরু খাচ্ছে, নদীর বালি খুঁড়ে জল আনতে গিয়ে শকুন আর শকুনিদের ডানা ঝাঁপটানো, আনন্দ-বিলাস দেখে ভয়ে পালিয়ে আসছে পুরো হাতিহষ্কা অঞ্চলের কুলকামিনীরা!

মাঠে ঘাস নেই, কিন্তু নিটে ছাগল একটা বুড়ি গাই এখনও রয়ে মরেছে তিষ্টার মার। তিষ্টার জন্মানোর সময় ভীষণ পিপাসা বা তিষ্টে পেয়েছিল গোষ্টর বউয়ের, সেজন্য ছেলের নাম হয়ে গেল তিষ্টা। এখন একলার জান নয় অনেকের তিষ্টা নিবারণ করতে হবে তিস্টার মাকে। কিন্তু মাগো, আকাল হলে তো চাল-আটার আকাল, জলের আকাল হবে কেন? না রে বেটা, এ অন্য, এ হল ভগবানের দিবা আকাল, মানুষের দিবা হলে একটা দুটা কম পড়ে, এ হল তেনার দিবা, সবদিকটাই নিঙড়াই দেয়। বুড়া মরে গিয়ে ভালই বেঁচেছে, তাকে আর বাঁশফুল দেখে যেতে হলনি, তা তুমি আমাকে লও না গো তোমার কোলে তুলে, আমি যে আর বাঁশফুলের ভয়ে টিকতে পারছিনি।

বাশফুলের পায়েস বেঁধে খেতে হবে, তা হলে আর মড়ক-রোগ লাগবে না। কাগজে বেরোল। হয়তো কেউ আশ্বস্ত করার জন্য আন্দাজে বলেছে, তুব হাতিহষ্কার লোক শুনে বলল—কেন, বিজ্ঞানও হতে পারে, প্রকৃতির মধ্যেই থাকতে তার প্রতিষেধক। ফলে বাঁশতলা ঝাটিয়ে চাল কুড়নো প্রত্যেক সংসারের একটা নিয়মিত কাজ হয়ে গেল, যে যখন সময় পাচ্ছে ঝুড়ি আর ঝাটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ছে। বাঁশচালের ভালর দিক হল ওর খুব হালকা খোসা, সামান্য রোদে দিয়ে একটু ঘষে নিলেই ফরসা, বিজ্ঞানীরা নাকি বাঁশ চালের সঙ্গে ক্রশ করিয়ে সরাসরি চালগাছ তৈরির চেষ্টা করছ, এ-ও নাকি কাগজে বেরিয়েছিল। শুনে জায়ে-জায়ে টেপাটেপি হচ্ছে আর বলছে—সত্যি দিদি, চালগাছ হয়ে গেলে কী ভাল হয়, আমাদের আর তো রোদে গরমে ধানসেদ্ধ করতে হয় না, মাইরি দিদি, খেতে যাব আর ছুঁচে নিয়ে এসে সিদা হাঁড়িতে। কিন্তু নানা, বাঁশফুল কখনও ভাল স্বপ্ন দেয় না, সেই জন্মকাল থেকে আজ অবধি সে মানুষের কাছে ভয়ঙ্কর ও প্রলয়ঙ্কর হিসেবেই চিহ্নিত।

বাঁশফুলের জাউ রাঁধা হল প্রথম অতুলদের বাড়িতে। তাদের গাছে প্রথম ফুল ফুটেছে প্রথম ফল তো তারাই খাবে একটু তেতোই লাগে বাঁশজাউ, চিনি বা গুড় দিলে পায়েস, নুন দিয়ে ঘাঁটলে জাউ, দুর্ভিক্ষের মরসুমে কেউ দামি জিনস খরচ করতে চায় না। কিন্তু হায় ছোটবউ, দুর্ভিক্ষর কাছে নুন-চিনি একদর।

—তোমরা শান্ত হও, শান্ত হও।

জেলা পরিষদ থেকে ফিরে এসে অতুল সকলকে বোঝাতে লাগল।

–সরকার আর দুর্ভিক্ষ হতে দেবে না, পি এল চার শো আশির গম এনে তোমাদের খাইয়েছে আর আজ পারবে না। স্বয়ং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বলেছেন—তোমাদের কোনও ভয় নেই।

লোকে কিন্তু শুনে এই বলে হাসাহাসি করল যে, সরকার কী দুনম্বর, এমনি হাসানোর দিনে যাদের কাঁদানো অভ্যাস তারা কাদানোর দিনে হাসি এনে দেবে, ওরে বাদ দে, মাঠে বুনে দে ও কথা।

দেখতে-দেখতে বাঁশফুলের কাছে বিজ্ঞান, জেলা পরিষদ সব তুচ্ছ হয়ে যায়, অতুল নিজে বিশ্বাস করল না, কাঁচামাচা ধান কাটতে লাগিয়ে দিল পরেরদিন থেকে। উচ্চফলনশীল ধানের নিয়মই হচ্ছে একসঙ্গে সব পাকে না, কিন্তু কী আর করা, যদি

শুকনো ডাঙায় বান ডাকে, যদি ঝড়-শিলাবষ্টি এসে সব লণ্ডভণ্ড করে দেয়, বলা যায় না, শোনা যাচ্ছে রাজস্থানে পঙ্গপাল ননেমে পড়েছে ঝকঝক।

ধান সব তোলা হয়ে গেল, ঝাড়াই-মাড়াই হয়ে গেল দুদিনে, আচ্ছা তবু কেন এত ভয়, ভয় যে কিছুতেই সরছে না।

চন্দ্রা জিজ্ঞেস করছে অতুলকে—হ্যাঁ গো, আমাদের এত ধান উঠল, খামার ভর্তি, তবু আমরা খেতে পাব না?

–শনির দৃষ্টিতে গণেশের মাথা উড়ে গেছল, আর এ তো তুচ্ছ….

—ঘুরে পাশ ফিরে শুল অতুল।

–শুনছ!

চন্দ্রা পিঠে খোঁচা দিচ্ছে।

—পিঠ ঘুরে শুলে ভাল লাগে না, এই-এই! শোনো না।

হঠাৎ অতুল বলল—এসময়ে আমাদের ওটা না হলেই ভাল হত।

–কীটা?

–বাচ্চাটা।

পিঠের ওপাশে একটা বৃহৎ দীর্ঘশ্বাস পড়ল, ভীষণ গুমরানো হয়ে গেল চন্দ্রা। যেমন করে লোকে ঘাসের ওপর ভিজে সাদা ধুতি মেলে তেমনি করে চন্দ্রা নিজেকে একেবারে ফ্যাকাশে করে সে-ও পাশ ফেরে।

এর ঠিক তিনদিনের দিন কী করে যেন অব্যর্থ ফলে গেল অতুলের চাওয়াটা। অতুল যেটা চাইল সেটাই পেয়ে গেল! ইস, অতুল, তুমি বড় ব্যথার জিনিসটা চাইলে হে!

ও ঠিক মন্দারবুড়ির ওষুধ খেয়েছে। আর টিকবে কি না সন্দেহ, রাত পেরোবে কিনা…তিন মাসের পোয়াতি, এক হাতচেটো একটা ল্যাললেলে জ্যান্তো আঁথালের মতো মাংসপিণ্ড, লিচি-পাকানো আটায় বেশি জল পড়ে গেলে যেন হয়।

চন্দ্রা আছাড় খেয়েও পেট নামিয়ে নিতে পারে, ও যা মেয়ে, ওকে বলাটা ঠিক হয়নি, বলে ফেলেই অতুল বুঝে গেছল একটা মহা ভুল করলাম।

এত রক্তপাত ঘটেছে যে চন্দ্রা বিছানায় মিলিয়েই গেছে, সাতটা ডাকলে একবার চিচি করে সাড়া দেয়। ওদিকে যত বাঁশফুল ফুটছে, ফুলে-ফুলে ছেয়ে যাচ্ছে, এদিকে তত চন্দ্রার অবস্থার অবনতি হচ্ছে।

বাড়ির প্রত্যেকেই কিন্তু এক-যুক্ত-এক সমান দুই-এর মতো ধরেই নিয়েছিল চন্দ্রা মরছেই, ও যত চিকিৎসে করুক আর যাই করুক, বাঁশফুল ফুটেছে অথচ চন্দ্রা মরবে না এ হতেই পারে না।

মারিকবুড়ো অতুলের বাবা, অতুলের ডাক্তার দেখানোর জেদ দেখে রেগে। বলল—হুঁ, এভাবেই তো দুর্ভিক্ষ আসে, ধান-চাল বেচে মানুষ এভাবেই সর্বস্বান্ত হতে হতে একদিন দেখবে সব ঘর ঝাটিয়ে এলে কোথাও এক দানা খুদ নেই।

তার মা বলল—তা হলে তোর শশুরকে ডেকে পাঠা, তার কাছে তো এখনও সাড়ে সাত হাজার টাকা পাওনা আছে, মেয়ের অসুখের সময়ও যদি না দেয় তবে আর কবে দিবে!

বাবা বলল—দ্যাখ এসময় যদি আদায় করতে পারিস, না হলে তো…

না হলে মানে মেয়ে মারা যাওয়ার পরও কি আর কেউ পণের টাকা শোধ দেয়।

চন্দ্রার বাবা দেখতে এল মেয়েকে, মেয়েকে দেখল, বাঁশফুল দেখল। বনবিহারীবাবুও অভিজ্ঞ সংসারী মানুষ সে-ও জানে বাঁশফুলের ইতিহাস এবং কার্যকারিতা। মেয়েরে বিয়েতে আমবাগান বাঁধা পড়েছে এখনও ছাড়াতে পারেনি, এখন বাকি সাড়ে সাত হাজার দিতে হলে তাকে তাদের একমাত্র আয়-উপায় পান বেরোজাটাও বাঁধা দিতে হবে। সে, চন্দ্রার বাবা, বুড়োমারিকের সঙ্গে সঙ্গে একমত হয়ে যায়না বেয়াই, আমিও কোনও আশার মুখ দেখছি না।

শ্বশুরকে বাসে তুলে দিতে নিয়ে যাচ্ছে অতুল সাইকেলে চড়িয়ে। অতুল শ্বশুরকে বলল বাবা বলছিল আপনার কাছে যে টাকাটা আছে সেটা চাইতে, টাকাটা পেলে বি ডি রায়কে একবার দেখতাম।

—তোমার বাবার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আরও খানিক গিয়ে অতুল আবার জিজ্ঞেস করলনা, মানে..আর তো একদম দেরি করা উচিত নয়, তা হলে কালকেই…

সাইকেলের পেছনে বসেছিল অতুলের শ্বশুর তার মুখটা ঠিক দেখা গেল না, কিন্তু সে অত্যন্ত নিরাসক্ত গলায় বলল—কোনও লাভ নেই, বুঝলে কোনও লাভ নেই, এ হল ভগবানের মার।

অতুল শক্ত হ্যান্ডেল ধরেছিল এবার হাত দুটো নিজে নিজেই আলগা হয়ে যায়, আলরাস্তায় পেছনে ডবল নিয়ে সাইকেল চালাচ্ছে, যদি…বড্ড টাল খাচ্ছে শ্বশুরসমেত অতুল।

.

৩.

চন্দ্রা সেই রাতেই বাঁশের ধন্নাতেই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল। এখন বাঁশফুল নির্মূল হয়েছে, কচি বাঁশও বেরিয়েছে, বাঁশঝাড় আগের মতোই ঘন সবুজ বাঁশঝাড়ে পরিণত হয়েছে, মারিকবুড়ো বাঁশতলায় বসে জাল বুনছে আর বারোশো ছত্রিশ বোরোধানের পাখি তাড়াচ্ছে। কিন্তু বাঁশফুলের কুফল সম্পর্কে এখন আর হাতিহষ্কার কারও কোনও সন্দেহ নেই। দেখলে তো চেখের সামনে এমন সুন্দর বউটা…

আহা! এত ধান-চাল ঘরে ঠুস সু দেখলে তো একটা সময় খেতে পর্যন্ত পেলনি!

চন্দ্রার মৃত্যুটা বাঁশফুলের মড়ক, ধান-চাল বেচে পুলিশকে টাকা দিয়ে সর্বান্ত হয়ে যাওয়াটাও বাঁশফুলের দুর্ভিক্ষ।

চন্দ্রার বাবা পুলিশের সামনে সেদিন যা ঘটেছিল সবিস্তারে খুলে বলল—কী আর ঘটেছে দারোগাবাবু, যে গেছে সে গেছে, বাবাকে সাড়ে সাত হাজার টাকা ছাড় দিয়ে গেল মরার সময়, ওই হল, মেয়েই নেই তো তার পণ! শ্বশুর বলল—কারও কোন দোষ নেই, ওই বাঁশফুল ফোঁটার জন্য..ওই বাঁশফুল আমার মেয়েকে খেয়েছে।

কিন্তু দারোগা বাঁশফুলের কথা শুনল না অতুল ও তার বাবাকে ধরে চালান দিল, কেস চালাতে এবং এদের মুক্ত করতে বড়িতে যা ছিল থালা-ঘটিবাটি পর্যন্ত বেচতে হল।

মারিবুড়ো চমকে গিয়ে ওপর দিকে তাকায়, ঘন বাঁশ, বাঁশপাতা… না! কিন্তু গায়ে কী সরসর করছে? ও পিপড়ে। আশ্বস্ত হয়।

অতুল আবার বিয়ে করেছে, তার বউ গর্ভবতী।

এখন চন্দ্রা বাঁশফুলের গল্প হয়ে গেছে, হাতিহষ্কায় বাঁশফুলের কথা উঠলে চন্দ্রারও কথা ওঠে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *