1 of 2

পদ্মাকাঁটা – গৌর মিত্র

পদ্মাকাঁটা – গৌর মিত্র

—দু-এক দিনের মধ্যে কিন্তু গ্যাস ফুরোবে। অফিসে বেরুবার আগে টাকাটা রেখে যেও।

এই তো কদিন আগে ভোলা সিলিন্ডার দিয়ে গেল। এরমধ্যেই….।

তোমার কি মনে হয় আমি গ্যাস খাচ্ছি না বাপের বাড়ি পাচার করছি? তিন জনের দু-বেলা রান্না, মেয়ের জল গরম, বিকেলে টিফিন। এসব কি হাওয়ায় হয়?

ঠিক আছে বাবা, ঠিক আছে।

না কিছুই ঠিক নেই। রোজ রোজ এসব ভ্যানড়ামি ভালো লাগে না।

তোমার যে কী ভালো লাগে এই বারো বছরে কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না নীতা।

সে কি আমার দোষ? যাক, সকালে আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। তাছাড়া কাজের বৌ-এর মেয়েকে কটা বই কিনে দেব বলেছি।

এ মাসে সম্ভব নয়, সামনের মাসে দেখা যাবে।

কাজের বৌ-এর কাছে আমাকে ছোট করে খুব মজা পাবে, না? সোসাইটিতে থাকতে গেলে স্ট্যাটাস বজায় রেখে চলতে হয়। তোমার জন্য তো পাড়ার কারো সঙ্গে মিশতেও পারিনে।

সকাল থেকে স্তোত্রপাঠ শুনতে আর ভালো লাগে না দিব্যেন্দুর। একে উদয় অস্ত খাটুনি, তার ওপর অফিস বসের নানা আব্দার, ফরমাইস। এত ঝকমারি ভালো লাগে না। মুখে কিছু বলতে না পারলেও মনে মনে বিরক্ত হয় আর কপালের দোষ দেয়।

কত আশাই না ছিল দিব্যেন্দুর! একটা ভালো চাকরি করবে, ইচ্ছেমতো ঘুরবে, দুনিয়াটাকে দেখবে। কিন্তু পোড়া কপালে তা হবার জো নেই। বি. কম. পাশ করার পর একরকম অল্প বয়সেই বাবার চাকরিটা পেয়েছিল। ওর বাবা সত্যেন মুখার্জী সজনেখালি ফরেস্ট অফিসে ডেপুটি রেঞ্জার ছিলেন। ওখানই থাকতেন একা। দিব্যেন্দু ওর মা আর ছোট বোনের সঙ্গে বাগবাজারের পুরনো বাসাবাড়িতে। দিব্যেন্দু সেবার বি.কম. পরীক্ষা দিয়েছে। হঠাৎ একদিন সকালে লোক মারফত খবর আসে সত্যেনবাবু মারা গেছেন। দেরি না করে আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে ওরা চলে গিয়েছিল সজনেখালি। ওখানেই মৃতদেহ সৎকার করে পরদিন ফিরে আসার আগে বাবার মৃত্যুর সঠিক কারণ। জানতে চেয়েছিল। স্থানীয় লোকজন বলেছিল, সত্যেনবাবুকে ভোরবেলা ফরেস্ট বাংলোর পিছনে খালধারে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। কেউ বলে হয়তো বাঘে মেরেছে, কেউ কেউ অন্য কথা। সঠিক কারণ আর জানা হয়নি। তবে ওর বাবার অফিসের লোকজনরা বলেছিল যা হবার হয়ে গেছে, এ নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি না করে বরং কী করে বাবার চাকরিটা পাওয়া যায় সেই চেষ্টা করতে। নিকট আত্মীয়রাও বোঝাল খামোখা ঝুটঝামেলায় না গিয়ে ভবিষ্যতের কথা ভাবতে। অবশেষে হেড অফিসের তৎপরতায়, সত্যেনবাবু কর্মরত অবস্থায় মারা যাবার জন্য একমাত্র ছেলে দিব্যেন্দু মুখার্জী কম্প্যাশনেট গ্রাউন্ডে চাকরি পায়, কেরানির চাকরি। কলকাতার হেড অফিসে জয়েন করে কিছুদিনের মধ্যে বাগবাজারের বাসা ছেড়ে মধ্যমগ্রামে ওর মামার বাড়ির কাছাকাছি বাসা নেয়। সেও আজ পনের বছরের কথা। এই কবছরে দিব্যেন্দু যেন যন্ত্রমানব হয়ে উঠেছে। দিন দিন জীবটা কেমন যেন পাসে হয়ে যাচ্ছে।

অনেকক্ষণ দিব্যেন্দুকে চুপ করে থাকতে দেখে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসে নীতা। কী ব্যাপার? কথাগুলো কি কানে ঢুকেছে? রেগে যায় দিব্যেন্দু, জামার বোতাম লাগাতে লাগাতে বলে—

দ্যাখো নীল, এভাবে আমাকে প্রেসার দিও না। জানোই তো পুজোর মাস। এমনিতেই হাত টানাটানি, খরচ তত কম হয়নি। মাইনের খামটাতো জানোই, ওটা তো আর রোজ রোজ মোটা হচ্ছে না।

চেষ্টা করলেই হয়। তুমি ভিতু অপদার্থ, তাই তোমার খামটা তোমার শরীরের মতোই লিকলিকে।

অন্যপথে রোজগারের ধান্দা সবার সয় না নীতা। তাছাড়া তোমাদের তো আমি অ-সুখে রাখিনি।

হ্যাঁ হ্যাঁ সুখের নমুনা তো দেখছি বারো বছর ধরে। সেই মান্ধাতা আমলের সাদাকালো ল্যাংটো টিভি। আজও একটা কভার জোটেনি। একটা নড়বড়ে খাট আর মরচে ধরা আলমারি, এই তো তোমার সুখের নমুনা।

ছিঃ নীতা ছিঃ! তুমিও দেখছি মধ্যবিত্ত মানসিকতায় ভুগছ।

থাক থাক আর জ্ঞান দিতে হবে না। আশপাশের বাড়িগুলোর দিকে বুঝি তাকানোর সময় পাও না! ঐ তো পাশের বাড়ির চম্পার বর তোমার কত পরে চাকরিতে ঢুকেছে। ঘরে কত জিনিসপত্র, প্রতিবছর বেড়াতে যায়। এ সব নিশ্চয়ই……।

থাক নীতা থাক। তোমাকে আমি বোঝাতে পারব না। সামনের মাস থেকে তুমিই বরং চালাও। আমার খরচ তো সামান্যই। ওটা না হয় টিউশনি করে জোগাড় করে নেব।

নীতা ক্রুদ্ধ হয়ে রান্নাঘরে ঢুকে যায়। দিব্যেন্দুর অফিসে যাবার সময় হয়ে গেছে। মাথার চুলে চিরুনি চালাতে চালাতে পুরনো টেবিলটায় খেতে বসে। ঐ টেবিলটা ওর বাবা কিনে দিয়েছিলেন দিব্যেন্দুর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার আগে। মাঝারি মাপের টেবিল। দিব্যেন্দু আর ওর বোন সীমা টেবিলের দু-পাশে ভাগাভাগি করে পড়তে বসত। দিব্যেন্দু চাকরি পেয়ে বছর দুয়েকের মধ্যে বাবার প্রাপ্য পাওনাগণ্ডা পাবার পর বোনের বিয়ে দিয়ে দেয় চন্দননগরে। সীমার খুব ইচ্ছা ছিল বাবার হাতে কেনা ঐ টেবিলটা সঙ্গে নিয়ে যাবে। দিব্যেন্দু দেয়নি; বলেছিল বাবার এ ছোট্ট স্মৃতিটুকু থাক না ওর কাছে। সেই থেকেই ঐ টেবিলটা দিব্যেন্দুর সঙ্গে। সকাল সন্ধ্যায় ওটায় পিঙ্কি পড়াশুনা করে আর অফিস যাবার সময় দিব্যেন্দু ওটাতে খায়। আজ বেশ দেরি হয়ে গেছে। দত্তপুকুর লোকালটা পাওয়া যাবে না বোধহয়। নীতা টেবিলে খাবার দিয়ে গেছে, কোনোমতে নাকে মুখ দিয়ে উঠে পড়ে দিব্যেন্দু। ভাবে ট্রেনটা না পেলে আজ নির্ঘাত অফিসে লেটমার্ক। হাতমুখ ধুয়ে ব্যাগটা নিয়ে বেরুবে, আবার নীতার মুখোমুখি।

কী, বেরুচ্ছে যে, টাকার ব্যবস্থা করে যাও। একঝলক তাকায় দিব্যেন্দু। পার্স থেকে টাকা বার করে নীতার হাতে গুঁজে দিয়ে তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। অন্যদিন অফিস যাওয়ার সময় নীতার মেজাজ ভালো থাকলে গেট অব্দি সঙ্গে যায়, দিব্যেন্দুও মাঝে মাঝে পিছন ফিরে হাত নাড়ে। আজ একবারও ফিরে তাকায়নি, নীতাও আসেনি।

বাড়ি থেকে বেরিয়ে রোজই স্টেশন অব্দি হেঁটে যায়, আজ যেন পা চলছে না। একটা রিক্সা নেবে কি না ভাবছে

কীরে শালা, একেবারে দার্শনিক হয়ে গেলি যে। ডাইনে বাঁয়ে তাকানোর সময় পাসনে। চকিতে ঘাড় ফিরিয়ে পিছন তাকাতেই দিব্যেন্দু দেখে ইন্দ্রকে, বাইকে বসে এক পা মাটিতে। দুপা পিছিয়ে ইন্দ্র কাছে আসতেই—কীরে শালা, অফিস যাবি তো! ওঠ পেছনে, স্টেশনে ছেড়ে দিয়ে আসি।

মনে মনে ভাগ্যকে ধন্যবাদ দেয় দিব্যেন্দু, ভাবে ভালো সময়ে এসেছে ইন্দ্র। ওর বহুদিনের বন্ধু ইন্দ্রজিৎ চৌধুরী।

বুঝলি ইন্দ্র, ভালোই হল মাইরি। আজ একটু দেরি হয়ে গেল বেরুতে, ভাবছিলাম—

রাখ তো তোর ভাবনা। শোন সকাল সকাল অফিস থেকে ফিরে নীতা আর পিঙ্কিকে নিয়ে আমার ফ্ল্যাটে চলে আয়। রাতে খাওয়া-দাওয়া ওখানে।

তা-হঠাৎ–

আরে এসব হঠাৎই হয়। একটা মারুতি বুক করেছিলাম। আজ ডেলিভারি পাব। রমা বলল, রাতে একটু ঘরোয়া ছোটখাটো পার্টি দিতে হবে। ব্যস, সকাল থেকেই ঘুরছি। তোর বাড়ি যাব বলেই বেরিয়েছি।

তা ভালোই হল, রাস্তায় পেয়ে গেলি। কী বল?

হ্যাঁ, তা ঠিক। তবু তোর বউকে বলে আসব বাবা। নইলে একেবারে আমার আদ্যশ্রাদ্ধ করে ছাড়বে।

কথায় কথায় স্টেশন এসে যায়। দিব্যেন্দুকে নামিয়ে ইন্দ্র চলে যায়। প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়ায় দিব্যেন্দু, অন্যদিনের চেয়ে আজকে মানুষের ভিড় বড্ড বেশি মনে হয় ওর। ভাবে, তবে কি ট্রেনে গোলমাল! একটা সিগারেট ধরায়। পর পর কয়েকটা টান নিয়ে পোড়া সিগারেটের শেষটুকু টোকা মেরে ফেলে দেয় ট্রেন লাইনে। দিব্যেন্দু একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে, সিগারেটটা পুড়তে পুড়তে একেবারে ফিল্টারের কাছে। হঠাৎ স্টেশনের লাউড স্পিকারে সুকণ্ঠী ললনার ঘোষণা

দত্তপুকুর স্টেশনে হকার পুলিশ সংঘর্ষে ট্রেন চলাচল সাময়িক বন্ধ আছে। যথা সময়ে পরবর্তী খবর জানিয়ে দেওয়া হবে।

ধস শালা, কপালটাই খারাপ। জানতাম কপালে আজ দুর্ভোগ আছে। মনে মনে বিরক্ত হয় দিব্যেন্দু। নাঃ আর রিস্ক নয়, চার্টার্ড বাসেই যেতে হবে। তাড়াতাড়ি প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে চৌমাথার দিকে হাঁটতে থাকে।

বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছতেই কন্ডাক্টরের চিৎকার ডালহৌসি, ডালহৌসি।

তাড়াতাড়ি উঠে একটা জায়গা নিয়ে বসে পড়ে দিব্যেন্দু। ট্রেন বন্ধ। সুতরাং ভিড় বাড়তে থাকে তরতরিয়ে। বাসের পেট ভর্তি। ড্রাইভার স্টর্ট নেয়। বাস চলতে থাকে। দিব্যেন্দুর পাশের সিটে বয়স্ক ভদ্রলোক জানলার পাশে বসে একমনে কাগজ পড়ছেন। দিব্যেন্দু একবার ভালো করে দেখে সিটে গা এলিয়ে দেয়। সকালের ঘটনা বারবার ওর চোখের সামনে ভাসছে। মনটা উদাস হয়ে যায় নিমেষে। ভাবে, নীতা ইদানিং কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। মেজাজ রুক্ষ, চালচলনে অন্যমনস্কতা। খোঁচা দিয়ে কথা বলা। নীতার এই হঠাৎ পরিবর্তন দিব্যেন্দুকে ভাবায়। অথচ বিয়ের পর কী ভালোই না লাগত নীতাকে। দিব্যেন্দুর অফিসের হেড ক্যাশিয়ার রবীনবাবুর রেফারেন্সে নৈহাটি নদীয়া জুট মিলের অ্যাকাউনটেন্ট যাদব চক্রবর্তীর একমাত্র মেয়েকে বিয়ে করে। বাড়িতে সবাই পছন্দ করত নীতাকে। এই তো কবর আগে মায়ের সেরিব্রাল অ্যাটাকের সময় কী সেবাটাই না করেছে। পিঙ্কি তখন ছোট। ও একাই সব সামলেছে। অথচ সেই নীতা ইদানিং

ভাবতে কষ্ট হয়। তবু ভাবে দিব্যেন্দু, তবে কি ওর নিজের কোনো ত্রুটি। কিন্তু তাইবা কী করে। কোনো বাজে নেশাও নেই, নেই অবাঞ্ছিত কোনো মেলামেশা। অফিস বাড়ি আর মাঝে মধ্যে অফিস ক্লাবে শখের থিয়েটার। অভাব অনটন তো সব সংসারই থাকে— ওদেরও আছে। কিন্তু না খেয়ে না পরে তো নেই। তবে কেন নীতার এই পরিবর্তন।

দিব্যেন্দুর পাশের বাড়ি অংশুদের। ওরা স্বামী-স্ত্রী আর একটা ছেলে। দিব্যেন্দুর অনেক পরে চাকরি পেয়েও বেশ গুছিয়ে নিয়েছে ও। তারপর ইন্দ্র, সেও ব্যবসাপত্র করে হঠাৎ আর্থিক স্বচ্ছলতার মুখ দেখেছে। যদিও লোকে বলে ওদের আয় নাকি সঠিক পথে নয়। কদিন আগে ইন্দ্র নীতাকে বলেছিল ওর ব্যবসার পার্টনার হতে, কিন্তু মত দেয়নি। এ নিয়ে নীতার সঙ্গে বেশ কদিন কথা বন্ধ ছিল। তবু মাথা নোয়ায়নি দিব্যেন্দু। তবে কি নীতাকে অর্থ-বিত্ত, সম্পদের সর্বনাশা নেশায় ধরেছে। বিকট শব্দে গাড়ি হঠাৎ থেমে যায়। বাসের ভিতরে সবাই একে অপরের গায়ে পড়ে। একযোগে ড্রাইভারকে গালমন্দ। এতক্ষণ চুপচাপ থাকা দিব্যেন্দুর পাশের বয়স্ক লোকটি চেঁচিয়ে বললেন কী হে পাইলট সাহেব। কাল রাতের খোঁয়াড়ি ভাঙেনি বুঝি।

পেছনের লোকটা সমর্থন করে চেঁচিয়ে বলে ঠিক বলেছেন মশাই। বড় বেয়াদপ এরা। যা খুশি তাই করে।

আরে চাপুন মশাই। আর একজন চেঁচিয়ে বলে—দেখছেন না, সামনে হঠাৎ অটোরিক্সা এসে গ্যাছে। না দেখে খালি পাঁয়তাড়া। কথা কাটাকাটির মাত্রা বাড়তেই বাসও চলতে শুরু করে। দিব্যেন্দু আবার শরীর এলিয়ে দেয় বসার সিটে। সকালের ব্যাপারটা বারবার লাটুর মতো ঘুরতে থাকে মাথায়। হঠাৎ সোজা হয়ে বসে নিজের মনেই বলেনা, না, আর কম্প্রোমাইজ নয়। প্রতিদিন এভাবে যুদ্ধ করা যায় না। মেয়েদের এত জেদ ভালো নয়। তাছাড়া পিঙ্কি বড় হচ্ছে, এভাবে দিনের পর দিন ওর সামনে সিনক্রিয়েট করে ভবিষ্যৎ নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না। এর চাইতে কোথাও চলে গেলে ভালো হয়। এ ভাবে ডিপ্রেসনে ভুগতে ভুগতে কোন দিন না পাগল হতে হয়, ভাবে দিব্যেন্দু।

এর মধ্যে বাসটা সবে কাকুড়গাছি এসে থেমেছে। দিব্যেন্দুর পিছন দিক থেকে এক ভদ্রমহিলা ধীরে ধীরে গেটের দিকে এগিয়ে যাবার জন্য ঠিক দিব্যেন্দুর সিটের পাশে এসে দাঁড়ায়। ওর শাড়ির আঁচলটা অজান্তেই দিব্যেন্দুর কোলের ওপর। দিব্যেন্দু আলতো ভাবে হাত দেয় আঁচলে। আঁচলের শেষ প্রান্তে একটু পোড়ার চিহ্ন, বেশ খানিকটা জায়গা নিয়ে। দিব্যেন্দু দু-আঙুলের মাঝখানে নিয়ে আঙুল দিয়ে পোড়াজায়গাটা ঘষে। একটু একটু করে আঁচল সরে যাচ্ছেনাগালের বাইরে। চকিতে হাত সরিয়ে নিয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে দিব্যেন্দু ভদ্রমহিলার যাওয়ার পথে। আনমনে ভাবে দুব আগের কথা। নীতা দিব্যেন্দুর সামান্য ঝগড়াতে নীতা শাড়িতে আগুন লাগিয়েছিল। পারেনি দিব্যেন্দু নিভিয়েছিল ছুটে এসে। ছ্যাৎ করে ওঠে বুকের ভিতর। আচমকা হাতের আঙুলে নজর পড়তেই দেখে দু-আঙুলের ফাঁকে শাড়ির পোড়া অংশ। ছম্‌ করে সিট ছেড়ে উঠে পড়ে মাঝপথে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। মাথাটা ঝিম ধরে আছে। ফিরতি বাসে উঠে পড়ে। সারা রাস্তা কেমন যেন আচ্ছন্ন হয়ে থাকে দিব্যেন্দু। অজানা আতঙ্কে কেমন যেন সিঁটিয়ে যায়। হঠাৎ মনে পড়ে কদিন আগেও গ্যাস ওভেনের আগুনে নীতার শাড়ির আঁচল।

চৌমাথা, চৌমাথা কন্ডাক্টরের হাঁকডাকে ভাবনার স্রোতে বাধা। ভাড়া মিটিয়ে নেমে পড়ে দিব্যেন্দু। দ্রুত বাড়ির পথ ধরে।

কলিং বেলের আওয়াজে ভিতর থেকে নীতা হাঁকে—কে? আমি, দরজা খোলো।

অসময়ে দিব্যেন্দুর গলার আওয়াজে ছুটে আসে নীতা। সদ্যস্নাতা, এলোচুল। স্লিভলেস ব্লাউজ, পরনে আকাশ নীল শাড়ি, কপালে মেরুন টিপ। তাড়াতাড়ি গ্রিল গেটখুলে সামনে দাঁড়ায় দিব্যেন্দুর। হঠাৎ গলার নিচে হাতটা বাড়িয়ে–

–কী গো, শরীর খারাপ করেনি তো?

–না, না।

—তাহলে অসময়ে অফিস না গিয়ে চলে এলে।

কথা সরে না দিব্যেন্দুর।

নীতার চোখে চোখ। কী যেন খোঁজার প্রয়াস। দিব্যেন্দু আলতো করে নীতার শাড়ির আঁচলটা হাত দিয়ে স্পর্শ করে। একটু একটু করে টেনে আনে নিজের বুকের কাছে। আরো কাছে। ভালো করে আঁচলের প্রতিটি ইঞ্চি জরিপ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস। ফেলে। নীতা বলে ওঠে–কী হল, চোখ মুখ লাল কেন। না, কিছু না। ঘরে চলো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *