1 of 2

অঙ্কই ভগবান

অঙ্কই ভগবান

দু মাইলের মতো জঙ্গল। তারপর একটা মিষ্টি নদী। সুইট রিভার। তার ওপর বন্ধুর মতো একটা সেতু। সেতু পেরোলেই ছবির মতো সেই গ্রাম। কুতুবপুর। ইতিহাস। কুতুবুদ্দিন আইবক এই গ্রামের বটতলায় বসে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন আর যুদ্ধ নয়, এবার শান্তি। যুদ্ধ করবে বলবান গিয়াসুদ্দিন বলবন। মরুক বাঁচুক দেখার দরকার নেই আমার। মাথার টুপি খুলে বাতাসে উড়িয়ে দিল। অলৌকিক ব্যাপার! টুপিটা পায়রা হয়ে উড়ে গেল নীল আকাশে। সেই থেকে পায়রার নাম হল ‘কবুতর।’ সেই পায়রা দেড় মাইল দূরে যে গ্রামে গিয়ে বসল সেই গ্রামের নাম হল কবুতর গঞ্জ। যত ভালো ভালো পায়রা, বনেদি পায়রা একমাত্র ওই গ্রামে পাওয়া যায়। দেশ-বিদেশের শান্তি উৎসবে চালান যায়। অর্ডার আসে সেন্ড আস এ পেটি অফ শান্তির শ্বেত পারাবত। কুতুবুদ্দিন বিরাট একটা মসজিদ তৈরি করলেন জরির কাজ করা। নাম হল ঝিলমিল মসজিদ। সেখানে বসে বাকি জীবন শুধু গান লিখে নিজের সুরে গাইতে লাগলেন। সেই ধারার গানের নাম হল ‘কাওয়ালি’।

এমন একটা ঐতিহাসিক জায়গা অবশ্যই যাব। যাবই যাব। কেউ আটকাতে পারবে না। আমি আর শংকর রেডি। শঙ্কর শুধু সাহসী নয় দুঃসাহসী। ভূত ছাড়া কারওকে ভয় পায় না। টেরিফিক, ডেঞ্জারাস এই সব বিশেষণ ওর জন্যেই তৈরি হয়েছে। কুতুবপুরেই শঙ্করের মামার বাড়ি। বড়মামা একসময় শিকারি ছিলেন। বেজায় বড়লোক।

মাইল দুয়েক ঘুটঘুটে জঙ্গল। বাঘ আছে। থাকা উচিত। বাঘ না থাকলে জঙ্গলের ইজ্জত থাকে না। শঙ্কর বললে, কোনও ভয় নেই, আজ শুক্রবার, বাঘদের ফাস্টিং ডে।

‘কে বললে?’

‘ব্যাঘ্রপুরাণে আছে।’

হাঁটছি, হাঁটছি। বিউটিফুল লাগছে। দু-পাশে ছোলাখেত। কয়েক আঁটি ছিঁড়েছি। কাঁচা সবুজ। ছোলা। ফ্যান্টাসটিক। জঙ্গল শুরু হল। প্রথমে পাতলা। তারপর দু-পাশ থেকে চেপে এল। পথ বলে কিছু নেই। পাতা মাড়িয়ে মাড়িয়ে কচমচ করে হাঁটছি। দুঃসাহসী সব গাছ চারপাশে। রোদ পড়ে আছে বাইরে।

হঠাৎ! যাঃ পথ নেই। পাহাড়ের গুহা যেমন হয়, এ দেখি তেমন বিশাল ঝোপের গুহা। জঙ্গলের টানেল। ভেতরটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। ঢুকব কি ঢুকব না! বলের মতো বড় বড় দুটো লাল আলো পাশাপাশি। ধকধক করছে। ‘ওরে বাঘ রে!’

বাঘটা কীরকম একটা শব্দ করে বিশ্রীভাবে বেরিয়ে এল অসভ্যের মতো। পেছন ফিরে দে ছুট করতে গিয়ে অবাক। পেছনে একটা বাঘ। ডান পাশে একটা, বাঁ পাশে একটা। চারটে কেঁদো, ঘিরে ধরেছে।

প্রথম বাঘটা একটা থাবা বাড়াল। সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয়টা বুক কাঁপানো শব্দে প্রথমটার থাবাটা ঝটকা মেরে সরিয়ে দিল। নিমেষে আমাদের দুজনকে নিয়ে চারটে বাঘের মধ্যে ঝটাপটি বেঁধে গেল–রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম।

আমরা পালিয়ে এলুম।

শঙ্কর বললে, ‘কীভাবে বাঁচলুম বল তো?

‘ভগবান!’

‘ধূত! অঙ্ক! ম্যাথেমেটিক্সের জোরে বাঁচলুম। চারটে বাঘ, দুটো মানুষ। চারটে বাঘ চারটে মানুষ হলে এতক্ষণে বাঘের পেটে। একটা বাঘ একটা মানুষ। ভাগের গোলমালে বেঁচে গেলুম রে। চারটে বাঘ দুটো মানুষ। চল, এবার অন্য পথে যাব। নদী পথে।’

2 Comments
Collapse Comments

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের বিভিন্ন গল্প ও উপন্যাস দেওয়া হলে উপকৃত হব । বিশেষ করে লোটাকম্বল (উপন্যাস)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *